২০ অক্টো, ২০১৫

নিখিল বোমার উপাখ্যান


মুজিবের আমলে বিরোধী দলে থাকা জাসদ মুজিবের রক্ষীবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীরকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করে নিখিল বোমার। আবিষ্কারক নিখিলের নামেই এর এমন নামকরণ হয়।

২৪ নভেম্বর যাত্রাবাড়ি ১৯৭৪, ভয়ানক বিস্ফোরন হয় নিখিল নামে আলোচিত বোমার। সে বোমার জনক নিখিল রঞ্জন সাহা। বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তরুণ লেকচারার। জাসদ করতেন। ২৬ নভেম্বর হরতালকে কেন্দ্র করে দেশকে ব্যাপক অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা গ্রহন করে জাসদ। প্রচুর বোমা দরকার। কিন্তু বোমা বানাবে কে?

সেই গুরুদায়িত্ব গ্রহন করে নিখিল। নিখিল আগে থেকেই বোমা বানায়। পদ্ধতিও ছিল স্থুল। পাতলা এক টুকরো মার্কিন কাপড় চিনি দিয়ে ভিজিয়ে এবং পরে শুকিয়ে মাড় দেয়া কাপড়ের মত করে শক্ত করা হতো। এর ভেতর ধাতব স্প্রিন্টার ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তারপর মেশানো হতো পটাশিয়াম ক্লোরেট। জ্যাকেটের মধ্যে কয়েকটা ফোকর রাখা হতো। প্রতিটি ফোকরে অ্যম্পুলের ভেতর থাকতো সালফিউরিক এসিড। এটা ডেটোনেটরের কাজ করতো।

সলতের মধ্যে আগুন লাগিয়ে ছূড়ে দিলে তৎক্ষণাৎ কাজ করতো। আর যদি টাইম বোমা বানানোর প্রয়োজন পড়তো তবে বেলুন বা কনডম ব্যবহার করা হতো। সেক্ষেত্রে অ্যম্পুলগুলো বেলুনে রাখা হতো। হিসেব করে দেখা গেল বেলুন থেকে গড়িয়ে এসিড বেরিয়ে আসতে দু'মিনিট সময় লাগে। যদি মনে করা হতো দু'মিনিট পর বিস্ফোরন করা লাগবে তাহলে একটা বেলুন যদি চার মিনিট তাহলে দুটো বেলুন ব্যবহার করা হতো।

নিখিল তার দুই সহযোগী কাইয়ুম আর নয়নকে নিয়ে বোমা তৈরী করে যাচ্ছিল। হঠাৎ ভুলবশত একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এরপর তৈরী হয়ে যাওয়া একে একে অনেকগুলো। কাইয়ুম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। মারাত্মক আহত হয় নিখিল। নয়ন নিখিলকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

মাইনুদ্দিন খান বাদল পরদিন তাকে দেখতে যায়। নিখিল জানায় পুলিশের তার ডায়েরী পেয়েছে। তাই বাদলকে সরে থাকতে বলেছেন। এর পরদিন নিখিল মৃত্যুবরণ করে। নিখিল হতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা পুলিশের কাছে চলে যাবে তাই জাসদই তাকে হাসপাতালে খুন করায় বিষ প্রয়োগ করে।

নিখিলের আলোচিত সৃষ্টি এবং যাদের জন্য সৃষ্টি তারাই হত্যা করে নিখিলকে। এভাবেই মৃত্যুবরণ করে নিখিল ও নিখিলের হতদরিদ্র খেতমজুর বাবার পরিবারের স্বপ্ন। নিখিলদের বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জিলার নবীনগর থানার বিটনগর গ্রামে। 

আরেক সহকর্মী কাইয়ুম পলাশী কলোনীতে থাকতেন। রেডিওতে খবর শুনে তার মা যাত্রাবাড়ির গফুর মেম্বারের বাড়ির কাছে যান। কাইয়ুমের বাবা সরকারি চাকুরী করতেন, থাকতেনও সরকারি কোয়ার্টারে। কাইয়ুমের মা মানুষের জটলার মধ্যে দাঁড়িয়ে তার ছেলেকে দেখেছিলেন। কিন্তু কাইয়ুমের বাবার চাকরী ও কোয়ার্টার নিয়ে ঝামেলা হতে পারে এজন্য নিজের ছেলে বলে পরিচয় দেয়ার সাহস পাননি। জাসদের পক্ষ থেকেও কেউ যে এগিয়ে আসবে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। 

অতঃপর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। এভাবেই শেষ হয় সে সময়ের স্বৈরাচারী মুজিব সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া নিখিল বোমার উপাখ্যান। 

তথ্যসূত্রঃ-
১-জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি/ মহিউদ্দিন আহমদ 
২- দৈনিক ইত্তেফাক ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন