৩ অক্টো, ২০২৪

জায়নবাদ ও এর প্রভাব



ইহুদীদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে জায়নবাদ (Zionism) নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। হিব্রু Zion শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। জায়ন হচ্ছে জেরুসালেমের একটি পাহাড়ের নাম এবং এর অর্থ হচ্ছে দাগ কাটার মতো ঘটনা বা স্মৃতি উৎসব। জায়নবাদ একক প্রস্তরের স্তম্ভ (Monolithic) ভিত্তিক আদর্শবাদী কোনও আন্দোলনের নাম নয়।

জায়নবাদীদের একটি কুমিরের সাথে তুলনা করে সাবেক তুর্কি প্রধানমন্ত্রী ড. নাজিমুদ্দিন এরবাকান বলেন, //জায়নবাদ হল একটি কুমিরের মত।এর উপরের চোয়াল হল আমেরিকা আর নিচের চোয়াল হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর জিহ্বা আর দাঁত হল ইসরাঈল। এবং এর শরীর সহ অন্যান্য অঙ্গসমূহ হল মুসলিমদেশ সমূহ সহ অন্যান্য রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী, মিডিয়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন।//

উনিশ শতকের শেষের দিকে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে জাতীয় পুনরজাগরণ আন্দোলন হিসেবে জায়নবাদের উত্থান ঘটে এবং শীঘ্রই এর অধিকাং নেতা তাদের প্রধান লক্ষ ফিলিস্তিনে তাদের কাঙ্খিত রাষ্ট্রের ব্যাপারে মনোনিবেশ করেন। এসময় উসমানীয় সাম্রাজ্য ফিলিস্তিন শাসন করত। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জায়নবাদি আন্দোলন ইহুদি রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আহাদ হাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অরাজনৈতিক সাংস্কৃতিক জায়নবাদকে জায়নবাদ বলে চিহ্নিত করা হয়। খ্রিষ্টান জায়নবাদি বলে পরিচিত একটি পদ রয়েছে যা দ্বারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে থাকা অইহুদি ব্যক্তিদের বোঝায়।

থিওডোর হার্জলকে জায়নবাদি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বলে গণ্য করা হয়। তার লেখা ডের জুডেন্সটাটে তিনি ভবিষ্যত ইহুদি রাষ্ট্রের কথা বলেন। জায়নবাদের পক্ষাবলম্বনকারীরা একে একটি সামাজিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর হাজার বছর পূর্বে ত্যাগ করা স্থানে প্রত্যাবর্তন হিসেবে অবিহিত করে। জায়নবাদের সমালোচকদের মতে এটি উপনিবেশবাদি ও বর্ণবাদি মতবাদ যা ফিলিস্তিনের স্থানীয় আদিবাসীদের অধিকার হরণ ও তাদের বহিষ্কার সমর্থন করে।

জায়নবাদের ক্রম বিকাশ

ইহুদীদের দাবী অনুযায়ী খৃস্টের জন্মের প্রায় ১২০০ বছর পূর্ব থেকেই তারা ইসরাইল ভূমিতে বসবাস করে আসছিল। মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরের সংগমস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে এই ভূমিটি মিশর, সিরিয়া ও এশিয়া মাইনর, আবিসিনিয়া, বেবিলোনিয়া, পার্সিয়া, সিলিউসিড গ্রীক ও রোমানরা দখল করে নেয়। বিজয়ী জাতিসমূহের কেউই ইসরাইল ভূমিকে তাদের জাতীয় আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেনি ও একমাত্র ইহুদীরাই তাকে মাতৃভূমির মর্যাদা দিয়েছে। 

ধর্মীয় ও বাস্তব সম্মত অন্যান্য কারণে জায়নবাদের নামে ইহুদী সংস্কার আন্দোলন বৃটিশ বুদ্ধিজীবীদের বিপুল ভাবে আকৃষ্ট করে। এই আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টতা তাদের মধ্যে বিপ্লবী হবার অনুপ্রেরণাও যোগায়। অবশ্য এক্ষেত্রে ইহুদী নারী ও নগদ নারায়নের যোগ যে ছিল না তা বলা যাবে না। কমুনিষ্ট আন্দোলন যেমন আমাদের দেশের সম্ভ্রান্ত অনেক মুসলিম পরিবারের ইংরেজী পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের ধর্মীয় ও পারিবারিক ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়ে বিপ্লবী বানিয়ে দিয়েছিল তেমনি উনবিংশ শতাব্দিতে ইহুদীবাদ পুনরুজ্জীবনের উপর ভিত্তি করে J.N Darloy প্রতিষ্ঠিত Plymouth Brethren নামক সংস্কার আন্দোলনও বিলাতের শিক্ষিত যুব শ্রেনীকে ইহুদী পুনর্বাসনে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৮৪০ এর দশকে লর্ড সভার দুজন সদস্য সাফটেসবারী এবং পালামারষ্টন এই মর্মে প্রস্তাব করেন যে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের একটি কলোনী প্রতিষ্ঠাই বিশ্ববাসী ইহুদী সমস্যার সমাধান করতে পারে। তাদের এই দর্শনও প্রস্তাবকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ইহুদী কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং নাট্যকাররা এগিয়ে আসেন। সেক্সসপিয়ার ও অন্যান্য লেখকদের ইহুদী দর্শন বিরোধী নাটক উপন্যাসের মুকাবিলায় বাজারে নতুন নতুন সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। লর্ড বায়রন, বেজ্ঞামিন ডিসরেইলী, জর্জ ইলিয়ট ও ওয়াল্টার স্কটের গল্প উপন্যাস এবং কবিতা প্রবন্ধ এরই প্রমান। বলা বাহুল্য ফিলিস্তিনের বুকে ইহুদী রাষ্ট্র ঘোষণার পেছনে বৃটিশ রাজনীতিকদের তুলনায় সে দেশের কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নাট্যকারদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে সক্রিয়।

ইহুদী ধর্ম বনাম জায়নবাদ

ইহুদী ধর্মগুরুদের সকলেই জায়নবাদী আন্দোলনের ব্যাপারে এক মত ছিলেন না। তাদের ভয় ছিল একটি ধর্মীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব কৌশলগত কারনে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনে চলে গেলে ধর্ম আর কখনো তার মর্যাদা ফিরে পেতে পারে না। প্রেসবার্গের রাববী (১৭৬২-১৮৩৯) Rabbi Moses Schreiber এই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি জায়নবাদের নামে যে কোন সংস্কার আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। রাদুনের হাফেজ চেইম Rabbi Israd Meir Ha-cohen ও এই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি Aqudath Yisrael নামক একটি সংস্থারও প্রধান ছিলেন। এদের অনেকের ধ্যান ধারনাই ছিল আমাদের দেশের তবলিগ জামায়াতের মতো। তারা মনে করতেন যে ধর্মের সাথে রাজনীতি বা জীবনের দৈনন্দিন তৎপরতা যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। এতে ধর্ম তার বিশুদ্ধতা হারায়।

অন্যদিকে ধর্মের উসুল সমূহ যদি পালন করা হয় এবং ধর্ম পুস্তককে সহিহ ভাবে পড়তে শেখা হয়, জীবনাচারে সততা নিষ্ঠা থাকে তাহলে আপনা আপনিই নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা ধর্ম প্রতিষ্ঠার অনুকূলে চলে আসবে এবং ইহুদীরা পুণ্যভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ইহুদী সমাজে এই গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা পায়নি। মসির জন্য অপেক্ষা না করে জায়নবাদীদের যে দলটি ইসরাইল ভূমি পুনরম্নদ্ধারের পক্ষে ছিল (Proto Zionism) তারাই শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করে। তারা প্রথমতঃ ইসরাইলে ভূমি ইজারা ও পরে ক্রয়ের মাধ্যমে বসতি শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত মিত্র শক্তি ও বৃটিশ সরকারকে ব্যবহার করে বালফোর ঘোষণার মাধ্যমে গোটা ভূখন্ড দখল করে নেয়। 

প্রোটো জায়নবাদের পরের অধ্যায়টি এই মতবাদের ইতিহাসে Foundational Zionism নামে পরিচিত। এই সময়ে Theodor Herzl এবং Chaim Weizmann এর নেতৃত্বে জায়নবাদ একটি সংগঠিত রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। রাজনৈতিক জায়নবাদ, সাংস্কৃতিক জায়নবাদ, ধর্মীয় জায়নবাদ, ভূখন্ডগত জায়নবাদ থেকে শুরু করে জায়নবাদী কংগ্রেস ও বৃটিশ ম্যান্ডেট আদায় পর্যন্ত সকল তৎপরতাই এই অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। এই অধ্যায়ে জায়নবাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইহুদীদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

 

ম্যান্ডেটরী জায়নবাদ

বৃটিশ ম্যান্ডেটের আওতায় ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে জায়নবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব ইউরোপ থেকে ইসরাইলে স্থানান্তরিত হয়। এই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীদের এনে ফিলিস্তিন তথা ইসরাইলে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করণ, আরবদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং তাদের প্রতিরোধ ও হলোকাষ্ট থেকে ইহুদীদের উদ্ধার প্রভৃতি জায়নবাদীদের প্রধান কাজ। ডেভিড বেন গুরিয়ন এই সময় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। 

যুদ্ধোত্তর জায়নবাদ

ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর আরবদের সাথে যুদ্ধ এবং পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক নব প্রতিষ্ঠিত এই ইহুদী রাষ্ট্রটিকে আনবিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করণের ঘটনা জায়নবাদের আদর্শিক ও ভূখন্ডগত উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আরবদের সাথে ছয়দিন মেয়াদী যুদ্ধে ইসরাইলের বিজয় জায়নবাদীদের মধ্যে নতুন উদ্যমের সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদীরা জায়নবাদীদের বিশেষ সম্মানের চোখে দেখতে শুরু করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সারা বিশ্বে জায়নবাদ পুনরুদ্ধারে আলোক ছটা ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি এর ফলে সামরিক সম্প্রসারণবাদও উৎসাহিত হয়। এর ফলে লিকুড পার্টি ও মোনাচেম বেগিন নেতৃত্বে আসেন এবং বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠে। নেতৃত্ব কট্টরপন্থী সংস্কারবাদীদের হাতে চলে যাওয়ায় আরব ভূখন্ড অগ্নিগর্ভা হয়ে পড়ে।

জায়নবাদী সংগঠনসমূহের শ্রেণীবিন্যাস

জায়নবাদী ইহুদীরা দুনিয়ার এমন কোনও দেশ নেই যেখানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেনা। আস্তিক, নাস্তিক, পৌত্তলিক সকল মতবাদের মানুষকে টার্গেট করে তারা কাজ করছে এবং সর্বত্র সাংগঠনিক নিপুণতার পরিচয় দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বব্যাপী কর্মরত জায়নবাদী সংগঠনসমূহকে কাঠামোগত দিক থেকে ১০টি ভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হচ্ছেঃ

১। আদর্শিক (Ideological)

২। রাজনৈতিক (Political)

৩। প্রশাসনিক (Administrative)

৪। সামাজিক (Social)

৫। বুদ্ধিবৃত্তিক (Intellectual)

৬। বৈজ্ঞানিক (Scientific)

৭। সাংস্কৃতিক (Cultural)

৮। ধর্মীয় (Religious)

৯। কৌশলগত (Strategic)

১০। সরবরাহ সুযোগ সুবিধাগত (logistic)

আবার কার্যক্রমের দিক থেকে তারা এগুলোকে ইতিবাচক, নেতিবাচক, সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় এই চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। তদুপরি কর্ম বিভক্তি অনুযায়ী এই সংস্থাগুলোকে সম্প্রচার ও পরিধারন এই দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যোগাযোগের দিকে থেকে ও আট প্রকারের জায়নবাদী প্রতিষ্ঠান দেখা যায়। এ গুলো হচ্ছেঃ

১। গোপন তবে সক্রিয় (Secret active)

২। গোপন তবে নিষ্ক্রিয় (Secret passive)

৩। অধিভুক্তি বহির্ভুত (Unattached)

৪। প্রত্যক্ষ (Direct)

৫। পরোক্ষ (indirect)

৬। স্বতঃস্ফূর্ত (Spontaneous)

৭। সংকট কালীন (Critical)

৮। স্ববিকশিত (Self growing)

আবার সম্পর্কের ভিত্তিতে এগুলোকে দুভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন প্রাণবন্ত এবং পরিত্যক্ত। সারা বিশ্বে জায়নবাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অগণিত সংস্থা কাজ করছে। তবে এর সাফল্য ও ক্রম বিকাশে যেসব সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং রাখছে সেগুলোর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। এরা জন্মগতভাবে ইসলাম ও মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত তৎপর। এর মধ্যে কিছু আছে প্রত্যক্ষ ইহুদী সংগঠন, কিছু পরোক্ষ সংগঠন, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এমনকি মুসলিম নামধারী সংস্থাও।

এক. প্রত্যক্ষ ইহুদী সংগঠন

১। আন্তর্জাতিক ইহুদী কংগ্রেস

২। আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট লীগ

৩। বেরিহাহ মুভমেন্ট (Berihah movement)

৪। বেনেই মোশা (Benei mosha)

৫। হা পু-এল হা মিযরাচি (Ha Poel Ha Mizrachi)

৬। হা সোমের হা যায়ের (Ha shomer Ha zair)

৭। হা নওয়ার হা জিওনী (Ha Noar Ha ziyyoni)

৮। আগুদাত ইসরাইল (Agudat Israel)

৯। বেতার (Betar)

১০। বিলু (Bilu)

১১। বান্ড (Bund)

১২। ডোরশেই জায়ন (Dorshei zion)

১৩। ইজরাত আহিম (Izrat Ahim)

১৪। হার্বোনেম (Habonem)

১৫। হাদাসাহ (Hadassah)

১৬। হাগানাহ (Haganah)

১৭। হাখশারাহ (Hakhsharah)

১৮। হ্যাসিদিজম (Hashidism)

১৯। হাসকালাহ (Haskalah)

২০। হেদের মেতুকান (Heder metukkan)

২১। হা হালুজ (He Halutz)

২২। হেরুত (Herut)

২৩। হোভেওয়াই জাইয়ন (Hovevii zion)

২৪। Helfjverein Der Deutchem Juden

২৫। Hestadrunt

২৬। Irgun zevai Leummi

২৭। Jewish Agency world zionists organisation

২৮। Jewish Colonial Trust

২৯। Jewish Legion

৩০। Jewish Natural Fund

৩১। Lohami Herul Israel

৩২। Kadumah

৩৩। Kneset Israel

৩৪। Malabi

৩৫। Mahal

৩৬। Mapam

৩৭। Migrachi

৩৮। New zionist organization

৩৯। Pioneer women

৪০। Po Alei zion

৪১। Shalia plu Shelihum

৪২। V'aad Le Ummi

৪৩। Women zionist organistion (WIZO)

৪৪। Young Judea

৪৫। Youn Aliyah

৪৬। Zeirei zion

৪৭। Zyyoni zion

দুই. পরোক্ষ ইহুদী সংগঠন

১। Anglican Church of England

২। International Communist Congress

৩। United Nations Organization

৪। International Monetary Fund

৫। World Bank

৯। International Association & Poets, Play writes, Editors Essayists and Novelists.

১০। International Free Mason Movement

১১। Oxfam

১২। The Rockfellers Institute/Centre

১৩। Amnesty International

১৪। The Loyds

১৫। Bank Luxembarg

১৬। Bank Barmuda

১৭। Bank of Grand Caymon

১৮। International Red Cross

১৯। The Group of Thirty

২০। The Chase Manhatton

২১। City Bank

২২। Clouser

২৩। Ford Foundation

২৪। The Council for Parliamet of the World Relgions

২৫। Multinational Corporations

আন্তর্জাতিক সংস্থা

১। UNDP

২। FAO

৩। UNCTAD

৪। WHO

৫। UNIDO

৬। UNICEF

৭। UNESCO

মুসলিম নামধারী সংগঠন

১। কাদিয়ানী সম্প্রদায়

২। বাহাই সম্প্রদায়

৩। দ্রুজ সম্প্রদায়

৪। ইসমাইলী সম্প্রদায়

৫। নুসাইরী সম্প্রদায়

৬। মুতাজিলা সম্প্রদায়

সমাজতান্ত্রিক  ও তথাকথিত জিহাদি গোষ্ঠী

কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন যে, বিভিন্ন মুসলিম দেশের ধর্মনিরেপক্ষতাবাদী সমাজতন্ত্রী কম্যুনিষ্ট, প্রগতিবাদী, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী ও তথাকথিত জেহাদী ও ইজতেহাদী গ্রুপ ও গ্লোবাল সংস্থাগুলো প্রকৃতপক্ষে জায়নবাদীদেরই সৃষ্টি। সমাজতন্ত্রের জন্মদাতা, কার্লমার্কস থেকে শুরু করে দুনিয়ার প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাশিয়ার সরকার পরিচালনায় যারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রায় সকলেই ছিল জায়নবাদী ইহুদী। বিপ্লব পূর্ব যুগে রাশিয়ায় সোসালিষ্ট ডেমোক্রেটিক নামক যে দল আন্দোলনের অগ্রভাবে ছিল তার ৫০ শতাংশ সদস্যই ছিল ইহুদী। বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলাম, ইসলামের সভ্যতা সংস্কৃতি, আচার আচরণ ধ্বংস ও মুসলিমদের সন্তানদের নাস্তিক্যবাদী কম্যুনিষ্ট আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য তারাই অর্থ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। চীন, পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলি এমনকি আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনও জায়নবাদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। জার্মানীকে ইহুদী মুক্ত করার জন্যই হিটলার গণহত্যার আশ্রয় নিয়ে ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জার্মানীর পূর্বাংশ ইহুদী নেতৃত্বাধীন সমাজতন্ত্রের কবলে চলে যায়।

উপমহাদেশে জায়নবাদী কার্যক্রম

জায়নবাদী ইহুদীবাদীদের উদ্যোগে, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা অর্থায়নে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলও রয়েছে। এদের মধ্যে কোন কোন দল সরাসরি জায়নবাদী স্বার্থ দেখা শোনা না করলেও পরোক্ষভাবে তাদের সহযোগিতা করে। আবার কোন কোন দল রাখ ঢাকা না করেই ইহুদী স্বার্থ আদায়ের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এর মধ্যে তাদের নিজেদের স্বার্থের সম্পৃক্ততাও রয়েছে। এই দল ও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেঃ

১। Indian National Congress.

২। Theosophical Society of India

৩। Ram Krishna Mission

৪। Brahma Samaj

৫। Hindu Mahasabha

৬। Rastria Swayang Sebak Sangha & Sangha pariber (Rss & Sangha pariber)

৭। Arjya Samaj

৮। Dalit voice

৯। Bahujan samaj parties

১০। All Socialist parties

১১। All communist parties

১২। Free Thinkers

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শুরু থেকে একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে জায়নবাদী ইহুদীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চক্রান্তের জাল বিস্তার করে এসেছে। তুর্কী খিলাফতের আমলে আরব অনারবদের মধ্যে এক দিকে বিদ্বেষ সৃষ্টি অন্য দিকে সুলতানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর আরব অফিসারদের লেলিয়ে দিয়ে বৃটিশ ও ইহুদীরা যৌথভাবে তুরষ্কের মুসলিম সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দেয়। তারা ফ্রি ম্যাসন আন্দোলনের মাধ্যমে তুরষ্কের যুব শ্রেণীকে ইসলাম ও খিলাফাতের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। মুস্তফা কামাল পাশা ইহুদীদেরই ক্রীড়নক হিসেবে মুসলিম জাহানের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের কেন্দ্রকেই শুধু ধ্বংস করেনি বরং তুরষ্কক কয়েক শতাব্দি পিছিয়ে দিয়েছে। তাদের সৃষ্ট অন্তর্বিরোধ মুসলিমরা লুফে নেয় এবং তাদের অনৈক্য জায়নবাদের লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করে। অন্যদিকে এই উপ-মহাদেশ ও তাদের চক্রান্তের থাবা থেকে নিস্তার পায়নি।

এখানে কাজ করার জন্য তারা বিশেষভাবে ইস্পাহানি ও বাগদাদী ইহুদীদের কাজে লাগায়। মেধার দিক থেকে তারা ছিল শীর্ষে। তাদের ভাষা ছিল আরবী, ফারসী ও তুর্কী যা মুসলিম শাসনামলে উপ মহাদেশের দেশ গুলোতে বহুল ব্যবহৃত ভাষা ছিল। তৎকালীন সময়ে মোঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী হওয়ায় দিল্লী ছিল সমগ্র প্রাচ্য জগতের কেন্দ্র বিন্দু। এ প্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইহুদী সংগঠন গুলো দলে দলে দিল্লীতে চলে আসতে থাকে এবং সমগ্র উপ-মহাদেশে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। মুঘল সাম্রাজ্য এক সময় অত্যন্ত বুদ্ধিমান, মেধাবী ও গভীর দৃরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধীরে ধীরে নিম্ন মানের কর্মকর্তারা তাদের স্থান দখল করে নেয় এবং আরাম আয়েশ ব্যভিচার অনাচার তাদের বৈশিষ্ট হয়ে পড়ে। তাদের দুর্বলতা ও মেধাহীনতার সুযোগে ইহুদীরা সক্রিয় হয়ে উঠে এবং ফ্রি ম্যাসন আন্দোলন মুঘল সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ঢুকে তার দুটি স্তম্ভ শিয়া ও সুন্নীদের পারস্পরিক সংঘাতে জড়িয়ে দেয়। অনেক ফ্রি ম্যাসন ইহুদী নিজেদের বিশেষ করে কিরগিজী, আমিনী, গুর্জিস্থানী ও ইস্পাহানী শিয়া হিসেবে পরিচয় দিয়ে এবং শিয়া নাম গ্রহণ করে ইহুদী স্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট হয় বলে বিশ্লেষকদের ধারনা। বিগত চার শ বছরে উপ-মহাদেশে শিয়া সুন্নীদের মধ্যে যতগুলো সংঘাত হয়েছে সেগুলোকে এ প্রেক্ষাপটে নতুন করে অনুসন্ধান পর্যালোচনা ও অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। 

আকবরের দ্বীনে ইলাহী জাহাঙ্গীরের আমলে শিয়াদের ব্যাপক প্রভাব বুদ্ধি, আলমগীরের আমলে শিয়া সুন্নী দ্বন্দ, পরবর্তী মোঘল শাসকদের আমলে উভয় সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ এর সবই এই চক্রান্তের একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ। আকবরের আমলে শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, জাহাঙ্গীরের আমলে মুজাদ্দিদ আলফেসানী, শাহজাহানের আমলে শাহ কালিম উল্লাহ দেহলভী এবং আমলগীর ও পরবর্তী মোঘল শাসকদের আমলে তিন সুফী ও মুহাদ্দিস যথাক্রমে হযরত মীর্জা মজহার জানেজানান, শাহ ফখরুদ্দিন ও শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলোভী এবং আঠারো শতকের শেষের দিকে ও উনবিশ শতকের শুরুতে শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভীর প্রচেষ্টাবলী এই সয়লাবের গতিরোধ করারই প্রচেষ্টা ছিল। ইহুদীরা শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে তাদেরকে প্রভাবিত করে এবং লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা সুন্নীদের মধ্যে এমনকি সুফিয়ায়ে কিরামদের কোন কোন শ্রেণীকে ক্রীড়নকে পরিণত করার চেষ্টা চালায়। এদের মধ্যে পীর মাশায়েখ উলামায়ে দ্বীন এবং সাধারণ মুসলিমরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। হযরত শাহ কালিমুল্লাহর পত্রাবলী এবং শাহ ওয়ালি উল্লাহর অসিয়ত নামা এই তথাকথিত সুফীদের চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে ফ্রি ম্যাসন আন্দোলনের ভূমিকা বিশেষ করে এর নেতা সারমদের অবদান এখন ঐতিহাসিকদের কাছে অত্যন্ত পরিস্কার। তার সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন নামুদ ওয়া নামুদ। শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের এক রেফারেন্স থেকে জানা যায় যে তিনি ইহুদী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।

ফ্রি ম্যাসনের নয় দফা

জায়নবাদের ক্রম বিকাশের ধারনা এই উপ-মহাদেশে ফ্রি ম্যাসন আন্দোলন ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে দুর্বল ও খন্ড বিখন্ড করার লক্ষ্যে ভারত বিভাগের আগে ও পরে একটি নয় দফা কর্ম পরিকল্পনাকে সামনে রেখে অগ্রসর হয়।

এই নয় দফার মধ্যে রয়েছে

(১) শাসক সম্প্রদায় তথা প্রভাবশালী মহলে অনুপ্রবেশ করে তাদের প্রভাবিত করা এবং তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করা।

(২) ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে তাদের প্রভাবিত করা।

(৩) মুসলিম শাসক বৃন্দ, উলামা মাশায়েখ ও আম জনতাকে পরষ্পর পরষ্পর থেকে বিছিন্ন করে দেয়া

(৪) মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা

(৫) তাদের দৃষ্টিতে অবাঞ্ছিত শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করা অথবা দুনিয়ায় বুক থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা

(৬) উলামা মাশায়েখদের খতম করে দেয়া

(৭) সচেতন ও বাধাদান করার মতো ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের খতম করে দেয়া

(৮) আলিমদেরকে নিজেদের মধ্যে এবং উলামা মাশায়েখদের পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘাত মুখর করে তোলাএবং

(৯) উলামায়ে কেরামকে গোপন পদ্ধতিতে এমন ভাবে সংঘাতে লিপ্ত করা যাতে তারা কারুর ক্রীড়নক হয়ে কাজ করছে সাধারণ মানুষ তা অনুভব করতে না পারে এবং অন্যদিকে এই সংঘাতকে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সমগ্র মুসলিম সমাজে আগুন ধরিয়ে দেয়া। 

দেশ বিভাগের আগে ও পরে তারা এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে কাজ করেছে এখনো করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হবার পর এর সাথে নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে জায়নবাদীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এর মূলে ছিল ইহুদী জে এফ আর জ্যাকব। শেখ হাসিনা সরকার তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে। 

বাংলাদেশে জায়নবাদীদের প্রজেক্ট হলো, মুসলিম জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার জন্য বাইরে থেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী গোষ্ঠির সাথে আঁতাত করে অর্ধ শিক্ষিত এবং বিভ্রান্ত কিছু আলিমের উপর ভর করে জিহাদের অপব্যাখ্যা এবং কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী জংগীবাদী ধ্যান ধারনা বিকাশের ব্যাপারে তাদের অপচেষ্টা। এ অগ্রগামী ভূমিকা পালনের জন্য অমুসলিমদের মুসলিম বেশে তারা সামনে নিয়ে এসেছে। ভারতের সংঘ পরিবার ইহুদীদের গৃহে লালিত একটি আন্দোলন। বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেসের সাথে তাদের সম্পর্ক ও যোগাযোগ প্রকাশ্য এবং জার্মানী ও পূর্ব ইউরোপীয় ইহুদীদের সংগঠনের আদলে তাদের সংগঠিত করা হয়েছে। 

বলা বাহুল্য ইঙ্গ- জায়নিষ্ট ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই উপ-মহাদেশের মুসলিমদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে তাদের উপর যে কয়টি মারাত্মক আঘাত হানা হয় তার মধ্যে তাদের ভূমি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার উপর আঘাতটিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। ১৭৭৬ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলিমরা জমি থেকে বেদখল হয়ে যায় এবং জমির মালিকানা হিন্দুদের হাতে স্থানান্তরিত হয়। এই আইন উত্তর ভারতে রায়তওয়ারী পদ্ধতি এবং পশ্চিম ভারতে মাহালওয়ারী পদ্ধতি নামে প্রবর্তন করা হয়। এভাবে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে ১৮৫০ সালের মধ্যে সমগ্র উপ-মহাদেশের জমি থেকে মুসলিমদের বেদখল করে দেয়া হয়। পরবর্তী বছর সমূহে শিক্ষা সংস্কৃতি, কৃষি শিল্প বাণিজ্য সরকারী ব্যবস্থাপনা সহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল খাত থেকে তারা উৎখাত হয়ে যায়। বাংলার গর্ব মসলীনের দুনিয়াব্যাপী বাজার থেকে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য মুসলিম তাঁতীদের বুড়ো আঙ্গুঁল কেটে দেয়া হয়।

১৯৪৭ সালে মুসলিমদের স্বতন্ত্র আবাস ভূমি হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও এই ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। এই দেশটি যাতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে স্থিতিশীল থাকতে না পারে জায়নবাদী ও হিন্দু আধিপত্যবাদী শক্তি তা নিশিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে এবং তাদের এজেন্টদের ব্যবহার করে এই দেশটির পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি করে পূর্বাঞ্চলকে অনেকটা উপনিবেশের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ফলে স্বাধীনতা আন্দোলন অবধারিত হয়ে পড়ে। এই আন্দোলনে ভারতীয় হিন্দুরা সক্রিয়ভাবে সহায়তা করে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্বাধীনতার পরও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জন মানুষের ধর্ম ও আকিদা বিশ্বাস মুছে ফেলার প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার জায়নবাদী পরিকল্পনা এখনো কার্যকর আছে। একই ভাবে পাকিস্তানও যাতে সোজা হয়ে দাড়াতে না পারে তার জন্য হিন্দু-ইহুদীবাদী চক্র সক্রিয় রয়েছে। 

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পারমাণবিক শক্তি অর্জনকে মুসলিম দেশগুলোর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ইরাক ও আফগানিস্তানের উপর হামলা এবং দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধে এই দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করণ, ফিলিস্তিনে গণহত্যা ইসরাইলের মানবতা বিরোধী কর্মতৎপরতা, কাশ্মীরের গণহত্যা পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ করার জন্য ইরানের উপর চাপ প্রয়োগ জায়ন বাদী কর্মসূচীর একটি অংশ। ভারত ইসরাইল সামরিক চুক্তি ও অস্ত্র তৈরীর জন্য যৌথ প্রকল্প গ্রহণ বারাক মিসাইল ক্ষেপনাস্ত্র সংগ্রহ প্রভৃতি এই আন্দোলনের অন্যতম মোড় যা ইসলাম বিরোধী এই দুটি জাতিকে (ইহুদী, মুশরিক) একক প্লাটফরমে এনে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনে অনুপ্রাণিত করছে। ফিলিস্তিন ভূমিতে অভিশপ্ত ইহুদীরা এখন রাষ্ট্রহীন নাগরিকের ন্যায় বিশ্বব্যাপী লাঞ্ছিত নয়, বরং তারা সর্বত্র মুসলিমদের লাঞ্ছিত করছে। খৃস্টান, মুশরিকদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা এখন সারা দুনিয়ায় কর্তৃত্ব করতে চায়।

২১ সেপ, ২০২৪

জুলাই জেনোসাইডের এক্সক্লুসিভ ভিডিও

২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে কোটা আন্দোলন শুরু হয়। ২০১৮ সালের একটি মীমাংসিত ইস্যুকে আবারো চাঙ্গা করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। সেই ঘটনাপ্রবাহ জানুন এখান থেকে । 

৫ জুন থেকে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলনে ডাইনি শেখ হাসিনা খুন করে সহস্রাধিক মানুষকে। পরবর্তীতে এই আন্দোলন হাসিনা পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনে হাসিনার বর্বরতার শত শত ছোট ক্লিপ এখানে সংরক্ষিত আছে। 

পুলিশের নৃশংসতা দেখুন

সেনাবাহিনীর একশন 

বিজিবির একশন 

গুলিবিদ্ধ আহত ও নিহতদের ভিডিও 

ছাত্রলীগের নির্যাতন

ছাত্র প্রতিরোধ 

ডকুমেন্টারি 

শিক্ষক ও পেশাজীবীদের সমর্থন 

বিদেশের খবর 

অন্যান্য  

৩১ আগ, ২০২৪

স্বাধীন বাংলাদেশ যাত্রার টাইমলাইন

স্বাধীন বাংলাদেশ যাত্রার টাইমলাইন
৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট

(শেয়ার করে রেখে দিন নিজের প্রোফাইলে)

৫ জুন
-- মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে হাইকোর্ট

৬ জুন
-- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাবি ছাত্ররা

৯ জুন
-- কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
-- দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ঢাবি ছাত্ররা।
-- বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়।
-- কোটা বাতিল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়

১ জুলাই
-- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে
-- ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহ্বান জানানো হয়
-- আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়

২ জুলাই
-- ঢাবির ছাত্ররা মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করে এক ঘন্টা
-- জাবির ছাত্ররা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন।

৩ জুলাই
-- ঢাবির ছাত্ররা শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন।
-- ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
-- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
-- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেন।
-- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন
-- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন।

৪ জুলাই
-- প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ 'নট টুডে' বলে আদেশ দেন। পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়।
-- ছাত্ররা ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে ৫ ঘণ্টা

৫ জুলাই
-- এই দিন শুক্রবারেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা।

৬ জুলাই
-- দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
-- আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’।

৭ জুলাই
-- বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা।

৮ জুলাই
-- ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ।
-- সারাদেশের ছাত্রদের নিয়ে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়।

৯ জুলাই
-- হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন করে।
-- ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি 'বাংলা ব্লকেড' পালন করা হয়।
-- পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা 'বাংলা ব্লকেড'-এর ঘোষণা দেওয়া হয়।

১০ জুলাই
-- কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ আপিল বিভাগের। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন রাখা হয়।

-- ছাত্ররা ভুল করেছে মর্মে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি। তিনি আরো বলেন, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না।

১১ জুলাই
-- পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করেন আন্দোলনকারীরা
-- ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি।
-- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীরা 'লিমিট ক্রস' করে যাচ্ছেন।

১২ জুলাই
-- শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে
-- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
-- রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

১৩ জুলাই
-- আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই।

১৪ জুলাই
-- রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন ছাত্ররা।
-- শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলেছে।
-- এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে
তুমি কে? আমি কে?
রাজাকার! রাজাকার!!
-- এই শ্লোগান এতোই জনপ্রিয় হয় যে, মুহূর্তেই দেশের সকল পাবলিক ভার্সিটিতে ছোঁয়া লাগে। সকল ভার্সিটিতেই এই শ্লোগান চলে রাতভর।
-- রাতে চবিতে ছাত্রদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়।

১৫ জুলাই
-- ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলে, আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে।
-- ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম মন্তব্য করে, যাঁরা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বো।
-- কাদের ও সাদ্দামের মন্তব্যের পর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হানাদার বাহিনী ঢাবির আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করে। ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে।
-- ভয়াবহ আক্রমণে ২৯৭ জন ছাত্র আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন।
-- হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ উভয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়।

১৬ জুলাই
-- পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান শাহদাতবরণ করেন।
-- সাদ্দাম আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলে, আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল।

১৭ জুলাই
-- ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে 'রাজনীতিমুক্ত' ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা।
-- পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পণ্ড হয়ে যায়
-- সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা।
-- রাত সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ।
-- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও অনেক ছাত্রছাত্রী হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন।
-- মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।

১৮ জুলাই
-- ছাত্রদের ঘোষণা অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়।
-- সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলে হানাদার আওয়ামী পুলিশ বাহিনীর হামলা।
-- প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা এদিন আন্দোলনের মূল হাল ধরে
-- মুগ্ধসহ মোট ৪০ জন শাহদাতবরণ করেন।
-- সংঘর্ষ বেশি হয় ঢাকায়।
-- সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন।

১৯ জুলাই
-- শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
-- দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়।
-- পুলিশ ও বিজিবির নৃশংস গুলিতে ১১৯ জন শাহদাতবরণ করেন। এদিন আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এদিন রাস্তায় ছাত্রদের চাইতেও বেশি ছিল নানান শ্রেণি পেশার মানুষ। বলাবাহুল্য সারাদেশের চেয়ে রাজধানী ঢাকা ছিল বেশি অগ্নিগর্ভ।
-- ঢাকার যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর ১ ও ১০, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, সাভার ছিল আন্দোলনের মূল হটস্পট।
-- রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন।
-- সকল ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তথ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় সারাদেশ।

২০ জুলাই
-- দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা।
-- রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি। উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর।
-- পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মোট ৭১ জন শাহদাতবরণ করেন।
-- প্রধান সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ
-- আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি পেশ।
-- সমন্বয়কদের আরেকটি অংশ ৯ দফা দাবি পেশ করে।

২১ জুলাই
-- কোটা সংস্কার করে ৭% কোটা রেখে রায় প্রদান করে আদালত।
-- এদিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
-- হানাদার পুলিশ ও বিজিবির নির্মম গুলিতে ৩১ জন শাহদাতবরণ করেন।
-- চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলেন। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা, শিক্ষার্থীদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়ে হল খুলে দেওয়া, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দেওয়া। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চারজন সমন্বয়ক।
-- নাহিদকে ব্যাপক নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় পুলিশ।

২২ জুলাই
-- কোটা সংস্কার করে প্রকাশিত রায়ের প্রজ্ঞাপনের প্রস্তুতি চলে
-- প্রতিদিন মানুষ হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। তবে আন্দোলন স্তিমিত হতে থাকে।
-- এদিনও ১০ জন শাহদাতবরণ করেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন আগের আহত হওয়া।

২৩ জুলাই
-- কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি।
-- সরকার কয়েক হাজার মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার শুরু করে।

২৪ জুলাই
-- কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
-- নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানিয়েছেন।
-- আর রিফাত আত্মগোপনে আছেন।
-- ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেপ্তার চলছেই।

২৫ জুলাই
-- আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তাঁরা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।
-ছাত্রদের বিবৃতি
-- শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের ভাঙ্গা অংশ দেখে চোখের পানি ফেলতে শুরু করেছেন।

২৬ জুলাই
-- এলাকা ভাগ করে চলছে 'ব্লক রেইড'। সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৪।
-- সাদা পোষাকে ডিবি হারুনের সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যায়।

২৭ জুলাই
-- ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার ১২১ জন। আতঙ্কে মানুষ ঘরছাড়া।
-- ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করতে থাকে ডিবি হারুন

২৮ জুলাই
-- মোবাইল ইন্টারনেট ১০ দিন পর সচল।
-- কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি হারুন।
-- ডিবি হারুন জোর করে গান পয়েন্টে ছাত্রনেতাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি আদায় করে।
-- আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসুদ অজ্ঞাত স্থান থেকে আগের বিবৃতি প্রত্যাহার ও ৯ দফা দাবী নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

২৯ জুলাই
-- ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য খুনী হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের মিটিং-এ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
-- একইসাথে ছাত্রআন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে খুনসহ অন্যান্য মামলা দিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গণহত্যাকারী ১৪ দল।
-- ডিবি হারুন কর্তৃক জোর করে বিবৃতি আদায়ের ঘটনায় ছাত্ররা আবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
-- চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, জাবি ও রাবিতে পুলিশ ছাত্রদের ওপর হামলা করে।
-- অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্রদের সাথে শিক্ষকরাও বিক্ষোভ করে

৩০ জুলাই
-- হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে ছাত্র ও শিক্ষকরা
-- জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান।
-- ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙিয়েছেন সারাদেশের মানুষ। গণহত্যাকারীরা কালো ফ্রেম দিয়েছে। তবে সেটা নিতান্তই নগণ্য।
-- নাটক ও সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষরা খুনী হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন।

৩১ জুলাই
-- ছাত্ররা 'রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস' কর্মসূচি পালন করে।
-- ৯ দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে থাকে ছাত্ররা।
-- সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
-- ঢাবির শিক্ষকরা সমন্বয়কদের ছাড়াতে ডিবি অফিসে গেলে পুলিশ তাদের হেনস্তা করে। পরিবারের সাথেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

১ আগস্ট
-- ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
-- ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি

২ আগস্ট
-- ৯ দফা আদায়ের দাবিতে সারাদেশে গণমিছিল করে ছাত্র জনতা।
-- রাজধানীসহ বিভিন স্থানে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়।
-- পুলিশের গুলিতে ৩ জন শাহদাতবরণ করেন। পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
-- ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫ হাজার মানুষ।

৩ আগস্ট
-- ৯ দফা না মেনে গণগ্রেপ্তার ও গণহত্যা চালু রাখার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র জনতা।
-- সেনাপ্রধান তার সেনা কমান্ডার নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি এই বার্তা পান যে, সেনাবাহিনী আর গুলি করতে প্রস্তুত নয়।
-- কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে নয় দফা বাদ দিয়ে ১ দফার (খুনী হাসিনার পদত্যাগ) ঘোষণা দেয় ছাত্রনেতারা।
-- হাসিনা ছাত্রদের আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। প্রয়োজনে মন্ত্রীদের কয়েকজন পদত্যাগ করার ঘোষণাও দেন। ছাত্ররা সব আলোচনা নাকচ করে দেন।
-- আবারো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।
-- শহীদ আবু সাইদের খুনী দুইজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত ও প্রেপ্তার করে পুলিশ।
-- ছাত্রজনতাকে রাস্তায় প্রতিহত করতে কড়া নির্দেশ দেয় খুনী হাসিনা।

৪ আগস্ট
-- ৩ তারিখের ঘোষণা অনুযায়ী 'সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি' পালন করে বাংলাদেশের জনগণ। সব ধরণের ট্যাক্স ও সব সরকারি- বেসরকারি অফিস বন্ধ করে দেয় জনতা।
-- রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের গুলি করে। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র ইট পাটকেল দিয়ে সন্ত্রাসী ও হানাদার পুলিশ বিজিবিকে প্রতিরোধ করে।
-- কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীও গুলি করে।
-- সারাদেশে ১৩০ জন খুন হন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও যুবলীগেরও কিছু সদস্য রয়েছে। লাখো ছাত্ররা এদিন সন্ত্রাসীদের অনেককে ভালোভাবে উত্তম-মাধ্যম দেয়।
-- পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র জনতা।
-- অনেক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অফিস ও বাড়িতে আগুন দেয় প্রতিশোধ পরায়ন ছাত্র-জনতা।

৫ আগস্ট
-- পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকামুখী লংমার্চ পালন করে ছাত্রজনতা। যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা পয়েন্টে লাখ লাখ জনতা শাহবাগ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে।
-- সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
-- সারা ঢাকা শহরে খন্ড খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় ছাত্র জনতার সাথে।
-- সকাল সাড়ে দশটার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাসিনা পালিয়ে যায়।
-- কর্মরত পুলিশরা এই খবর না জানায় তারা জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অনেক মানুষকে তারা খুন করতে থাকে।
-- ৫ আগস্ট বিজয়ের দিনেও ১১৩ জন ছাত্রজনতা শাহদাতবরণ করেন।
-- সেনাবাহিনী প্রধান দুইটায় ভাষণ দিবেন বলে ঘোষণা দেন।
-- ১২ টায় শাহবাগের পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাস্তা ছেড়ে দেয়।
-- ১ টায় মানুষ জেনে যায়, হাসিনা পালিয়ে গেছে।
-- সারাদেশের বিশেষভাবে ঢাকার মানুষ সব রাস্তায় নেমে নেচে গেয়ে উদযাপন করতে থাকে।
-- গলিতে গলিতে মিস্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ।
-- রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে।
-- দেশে বিভিন্ন মোড়ে থাকা স্বৈরাচার মুজিবের সকল মুর্তি ভেঙ্গে দেয় আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা
-- পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় ও আত্মগোপন করে। অনেকেই ছাত্রজনতার কোপানলে পড়ে খুন হয়।
-- রাজধানীর মানুষদের একটা বড় অংশ গণভবনে গিয়ে হাসিনার ওপর রাগ ক্ষোভ গণভবনের ওপর ঝাড়ে।

৬ আগস্ট
-- বাংলাদেশে উদিত হয় নতুন সূর্য। আওয়ামী হানাদার মুক্ত বাংলাদেশের নতুন রক্তিম যাত্রা শুরু হয়।