১. ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। এটা হিন্দুত্ববাদী ভারতের জন্য ছিল অসহনীয়।
২. ২০০১ সালে আমেরিকা 'ওয়ার অন টেরর' নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীতে লড়াই শুরু করে। আমেরিকান সিআইএ'র সহায়তায় তৈরি হওয়া জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার হামলাকে কেন্দ্র সারা পৃথিবীর ইসলামপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে পশ্চিমারা।
৩. ভারত ও পাকিস্তান সেই লড়াইয়ে আমেরিকার পক্ষ নেয়।
৪. বাংলাদেশ এই লড়াইয়ে যুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমেরিকা প্রথমে ভারতকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে রাজি করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
৫. ২০০২ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বাংলাদেশকে যুদ্ধে রাজি করানোর জন্য চলে আসে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি টনি ব্লেয়ারকে জানিয়ে দেন। বাংলাদেশ কারো বিরুদ্ধে কোনো লড়াইয়ে যুক্ত হবে না। বাংলাদেশ কাউকে শত্রু বানাতে চায় না।
৬. বাংলাদেশের এই অবস্থানে পশ্চিমা বিশ্ব বিরক্ত হয়। টনি ব্লেয়ার বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে যায়, যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি বাংলাদেশ, সেই সন্ত্রাসীদের আক্রমনের শিকার হতে হবে বাংলাদেশকে।
৭. এদিকে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নতি ভারতের ওপর চাপ তৈরি করে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ ১ নং পজিশনে চলে যাওয়া, সার্ক পুনঃগঠন করা ইত্যাদি। বাংলাদেশে আমেরিকার ইশারায় শুরু হয় ভারতের জঙ্গীবাদ প্রজেক্ট।
৮. আওয়ামী লীগ নেতা মীর্জা আজমের বোন জামাই শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় জঙ্গীবাদ প্রজেক্ট
৯. এই প্রজেক্ট আত্মপ্রকাশ করে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। বোমা মেরে মানুষ খুন করতে থাকে ভারতীয় জঙ্গীরা।
১০. বিএনপি - জামায়াত সরকার ১ বছরের মধ্যেই জঙ্গীবাদ কন্ট্রোল করে ফেলে। বাংলাদেশই একমাত্র রাষ্ট্র যারা আধিপত্যবাদীদের অস্ত্র হিসেবে কাজ করা জঙ্গীবাদকে পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে সক্ষম হয়েছে।
১১. না ক্রসফায়ার দিয়ে নয়, সকল জঙ্গীকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
১২. আমরা জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে জেনেছি কীভাবে তারা অস্ত্র-বোমা নিয়ে এসেছে ভারত থেকে, এবং প্রশিক্ষণও নিয়েছে ভারতের মাটি ব্যবহার করে।
১৩. তাদের প্রজেক্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভারত প্রতিশোধের চেষ্টা চালায়। তারা বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বিশ্বাসঘাতক মঈন ইউ আহমেদকে হাত করে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ করে ভারত নিয়ন্ত্রিত সেনাসরকার তৈরির চেষ্টা করে।
১৪. সেই চেষ্টা হিসেবে আওয়ামী লীগকে দিয়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তান্ডব চালায়। ২৩ জন মানুষকে খুন করে। এটা হাসিনার ১ম গণহত্যা।
১৫. অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে ভারতের নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও সেনাপ্রধান ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন বানচাল করে।
১৬. শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সেনা শাসন। তবে তারা এটা কন্ট্রোল করতে পারে না। নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
১৭. ২০০৮ সালে ভারতের মধ্যস্থতায় দায়মুক্তি পাবে এই চুক্তিতে মঈন ইউ আহমেদ নির্বাচনের নাম করে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসায়। এই তথ্য আমরা ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির 'দ্য কলিশন ইয়ার্স' বইতে পাই।
১৮. মঈন ইউ আহমেদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায়ই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কাজ করা ও ডানপন্থী সেনা অফিসারদের একত্র করে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ সেনা অফিসারসহ ৭১ জনকে হত্যা করে ভারত। ভারতকে এই গণহত্যায় সরাসরি সহায়তা করে হাসিনা ও মঈন ইউ আহমেদ। এটা হাসিনার ২য় গণহত্যা।
১৯. সেনাবাহিনীর মধ্যে ভারতীয় আধিপত্য ও র'য়ের সরাসরি এজেন্ট তৈরি হয়।
২০. ভারত এদেশে ইসলামপন্থা নির্মূলে হাসিনাকে দায়িত্ব দেয়। বিনিময়ে আজীবন হাসিনার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করে।
২১. জামায়াত নেতাদের বিচারিক হত্যার নীল নকশা করা হয়।
২২. বিচারিক হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার জামায়াত নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য পাইকারি হারে খুন করতে থাকে। আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ২ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে হাসিনা। এটা হাসিনার ৩য় গণহত্যা।
২৩. ইসলামপন্থাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য নাস্তিকদের দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের আয়োজন করে ভারত। এর বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ইসলামপন্থার পক্ষে আওয়াজ তৈরি হয়।
২৪. ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চলে গণহত্যা। শতাধিক মানুষকে খুন করে হাসিনা। এটি ৪র্থ গণহত্যা। মূলত এই ঘটনার মাধ্যমে বিরোধী দলগুলো ও ইসলামপন্থার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয় ভারতীয় আধিপত্যবাদ।
২৫. এরপর আর শক্ত আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি স্বৈরাচার বিরোধী দেশপ্রেমিক দলগুলো।
২৬. ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবলে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার গতি হারিয়ে ফেলে।
২৭. ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়া আলোতে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়
২৮. ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সেই স্ফুলিঙ্গে বারুদ জ্বালায়। হাসিনা সাময়িকভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তবে পুনরায় ভারতের সাহায্যে বিপদ কাটায়।
২৯. নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর থেকে হাসিনা আমেরিকার গুড বুক থেকে বাদ পড়ে।
৩০. হাসিনার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলতে থাকে।
৩১. ২০২১ সালে মোদির বাংলাদেশে আসা উপলক্ষে মোদি বিরোধী আন্দোলন তৈরি হয়। শুধু মোদিকে দেশে আনতে ২০ জন মানুষকে হত্যা করে হাসিনা। এটা হাসিনার ৫ম গণহত্যা।
৩২. ২০২৩ সালে আমেরিকা হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়। বিএনপির নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী দলগুলো আশার আলো দেখে। আন্দোলনের চেষ্টা চালায়। তবে হাসিনা ও ভারতীয় বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে আন্দোলন চরমভাবে ব্যর্থ হয়।
৩৩. অন্যদিকে ভারতের সাহায্যে আমেরিকাকে ম্যানেজ করে ফেলে হাসিনা। ২০২৪ সালে একপেশে নির্বাচন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে।
৩৪. স্বৈরাচারবিরোধী শক্তিগুলো চরমভাবে হতাশ হয়।
৩৫. এই সময়ই আসে আল্লাহর সাহায্য। ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনে জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্ররাজনৈতিক দলগুলোর (ছাত্রশক্তি, ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের) প্রচেষ্টায় আন্দোলন জমে ওঠে। আবাবিলের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্র ও যুবকরা আন্দোলনে অংশ নেয়। পুলিশ গুলি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সহস্রাধিক মানুষকে খুন করলো হাসিনা। এটা হাসিনার ৬ষ্ঠ গণহত্যা।
৩৬. অবশেষে এলো ৫ আগস্ট। হাসিনা পালিয়ে গেলো। জনতার মুক্তি এলো।