২৬ নভে, ২০১৫

অসহিষ্ণু বাংলাদেশঃ সুন্দরের মাঝে অসুন্দরের চর্চা


ভার্সিটিতে থাকাকালে আমরা একসাথেই খাবার খেতাম। ছাত্রপ্রতিনিধি থাকার কারণে ১টা থেকে ২টা ব্রেকের সময়টা অনেকটা দৌড়ের উপরে থাকতে হতো, অমুকের এটা তমুকের সেটা ইত্যাদি দেখতে গিয়ে লাঞ্চের সময় একেবারেই পেতামনা। দু’টো বাজার দশমিনিট আগে হুড়মুড় করে সহপাঠী বন্ধুদের আড্ডায় গিয়ে দেখতে পেতাম তারা আমার জন্য কিছু খাবার রেখে দিয়েছে। এক পাতেই খাবার খেতাম হিন্দু-মুসলিম সব। কেউ কাউকে আলাদা চোখে দেখার সময়ই পেতামনা। অথচ একেকজন একেক ধর্মের একেক রাজনৈতিক মতাদর্শের। নিজেদের মধ্যে যে এসব নিয়ে মাঝে মধ্যে ঝগড়া হতো না তা নয়। মাঝে মধ্যে খুব তর্ক হত। কিন্তু কিছু সময় পর আবার সবাই একসাথে আড্ডা দিয়েছি। 

আরো ছোটবেলায় তপনদের সাথে ফুটবল খেলতাম, জগদীশের সাথে মার্বেল খেলতাম, অর্পনাদির বাগান ছিল, আমারও বাগান ছিল। কোন সমস্যায় পড়লে, গাছে কোন পোকা দেখা গেলে অথবা কোন কোন পরামর্শের জন্য অর্পনাদির কাছে ছুটে যেতাম। তিনিও আমাকে বহুদিন বলে যেতেন, ওরে আমার বাগানে আজ একটু পানি দিস আমার ফিরতে দেরী হবে। অপুদার ছিল কবুতর। আমারও অল্পস্বল্প ছিল। অপুদা ছিলেন আমার গুরু। এমন না যে আমাদের পরিবার ধর্ম-কর্ম করতোনা। বরং একটু বেশীই করতো। অথচ আমাদের পরিবারের কাউকে দেখিনি হিন্দু বলে কাউকে হিংসা করতে এবং আমার গুরুজনরা কখনোই অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে মিশতে মানা করেন নি। শুধু তাই নয় বাবার বন্ধু আমার শিক্ষক শেখর স্যার কোনদিন নামাজ পড়তে না দেখলে কান ধরে মসজিদে পাঠাতেন।

এই গল্পগুলো শুধু আমার না, বাংলায় আবহমান কাল ধরেই তা চলে আসছে। এদেশ সম্প্রীতির, সৌহার্দের। এখানে সবাই মিলেমিশে থাকা অসাধারণ একটা ব্যাপার। ভারত মহাদেশে বার বার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হলেও আমাদের অংশে ছোঁয়া ব্যাপকভাবে কখনোই ঘটেনি। শুধু ধর্মীয় সম্প্রীতি নয় রাজনৈতিক সম্প্রীতিও ছিল সুন্দর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেয়া, ব্যবসা করা, আত্মীয়তা খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল। 

কিন্তু আজকে? আজকে বিষয়টা এমন এক অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে আওয়ামীলীগের একজন বিএনপির একজনের সাথে আত্মীয়তা বা ব্যবসা করা দূরে থাক একসাথে বসে এক কাপ চা খেলে তা নিউজ হয়ে যায়। আরে, এটাও কি সম্ভব! একাসাথে বসে চা! মনে হয় যেন বিরাট অপরাধ করে ফেলেছেন তারা। নিজ নিজ দলের লোকেরা তাদের সন্দেহ করে। দালাল, গুপ্তচর ইত্যাদি উপাধি পায়। এখন কেউ কাউকে সহ্য করতে চায় না। পারে না। 

এর কারণ হিসেবে আমি প্রথমে বলবো অনলাইন জগত। অনলাইনে আমি প্রথম দেখেছি এক ধর্মের লোকজন অন্য ধর্মের সম্মানের বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্রী ও অশ্লীল কথা বলতে, এক রাজনৈতিক দলের লোক অন্য দলগুলোর সম্মানিত মানুষদের নিয়ে ব্যাঙ্গ করতে। প্রথমে শুধুমাত্র ব্লগগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তিতে ফেসবুক ও ইউটিউবের প্রসারের সাথে সাথে তা ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র মানুষের মধ্যে।

দ্বিতীয় বিষয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে একটি ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের উত্থান হয় এই দেশে, যার নাম গণজাগরণ মঞ্চ। “বিচার চাই না, ফাঁসী চাই” দাবীতে ঘৃণা আর হিংসার মাত্রা ছড়িয়েছে নতুন করে। এদের বিরুদ্ধেও গঠিত হয় হিফাযত। ঘৃণা তার সকল মাত্রা ছড়িয়ে যায়। কিছুদিন আগের কথা। এক সিনিয়র ভাইয়ের বিয়ে, সব ঠিকঠাক ছিল। এর মধ্যে আবিষ্কৃত হয় তিনি একদা শাহবাগে গিয়েছেন আর সেলফি তুলে তা ফেসবুকে আপলোড করেছেন। ব্যাস নাস্তিক উপাধি পেয়ে বিয়েটা ভেঙে গেলো। মেয়ের আত্মীয়-স্বজনকে যতই বুঝানো হলো, না, সে নাস্তিক না, নিয়মিত নামাজ পড়ে। কিন্তু কিছুই ধোপে টিকেনি। শাহবাগ মানেই নাস্তিক! অপরদিকে তারাও ছড়িয়েছে দাঁড়ি, টুপি, ইসলাম মানেই জঙ্গী, সন্ত্রাসী, বোমাবাজ।

আওয়ামীলীগ এই ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। অথচ তা করতে গিয়ে পুরো দেশে অসহিষ্ণুতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দেখা যাচ্ছে এখন পুরো সমাজে। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো হত্যা-সন্ত্রাসকে এতটাই সহজ ও স্বাভাবিক করে দিয়েছে এখন তাদের কোন সংঘর্ষে কেউ না মরলে তা নিউজ হয়না। গর্ভের বাচ্চা গুলিবিদ্ধ হওয়ার মত ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটে। কোন ছাড়াই বাচ্চা শিশুকে গুলি করে আইন প্রণেতা। এই আইন প্রণেতাদের কাছ থেকে আসলে কেমন আইন বের হবে তা সহজেই অনুমেয়। 

আইন-শৃংখলা বাহিনীকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে সরকার এখন পুলিশ র‍্যাব মানুষকে গ্রেফতার করে বিএনপি করার অপরাধে বা জামায়াত শিবির করার অপরাধে। কিছুদিন আগে DMP এর ফেসবুক পেইজে দেখলাম জামায়াতের পাঁচজনকে তারা আটক করেছে। জব্দ করেছে জামায়াতের লিফলেট, বই, চাঁদা আদায়ের রশিদ। অবস্থা বুঝেন! আগে এদের এরেস্ট করার জন্য বোমা ককটেল নাটক করলেও এখন আর তার প্রয়োজন হয়না। একটা লোক বিরোধী দল করাই অপরাধ। 

আর পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগের লোক কোন অপরাধ করলেও শুধু আওয়ামীলীগ করার জন্য তার অপরাধ মাফ। যদি একটা ঘটনা মারাত্মক মিডিয়া কাভারেজ পায় তখন কিছু লোক গ্রেফতার হয়। অসহিষ্ণুতা যে কত ভালোভাবে ছড়িয়েছে তা বুঝার জন্য খুব একটা কষ্ট করতে হবেনা। সারাদিনের খবরগুলোর উপরগুলোর উপর চোখ বুলালেই হবে। সরকার একটা জেনারেশন তৈরী করছে যারা অপেক্ষা করছে কোনভাবে সরকারের পতনের। এই কথাটা অবশ্য আওয়ামীলীগও জানে। এই পরিমান অপরাধ তারা করেছে ক্ষমতায় না থাকলে কারো পিঠের চামড়া থাকবে না। 

আমি বলছিনা এই ধরণের ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। আগেও ঘটেছে তবে এত ব্যপকতা কখনোই পায়নি। আর এর সুযোগ নিচ্ছে বিদেশী গোয়েন্দারা। বিশেষ করে “র”। একের পর এক জঙ্গীগোষ্ঠী তৈরী করছে। এটাও নতুন নয়। আগেও তারা এই দেশে জেএমবি তৈরী করেছে। কিন্তু তৎকালীন মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ও সরকারের আন্তরিকতায় ভেস্তে যায় ঐ সময়ের পরিকল্পনা। বাংলাদেশ হয় একমাত্র রাষ্ট্র যারা তাদের জঙ্গীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলো। কিন্তু এই বিষয়টার কাউন্টার এট্যাক করতেও দেরী হয়নি। ৫৭ জন আর্মি অফিসারকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এটা আপনারা সবাই জানেন। 

এখন ভারতের “র” পাশাপাশি নতুন করে যোগ দিয়েছে সিআইএ। তারাও চায় বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে। আইএস নিয়ে আসার সব পরিকল্পনাই করছে সিআইএ। নতুন নতুন সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে সবাই। বাংলাদেশ হয়তো বরণ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তান, ইরাক বা সিরয়ার মত ভাগ্য। 

আসুন আমরা একটু সহিষ্ণু হই। দেশকে গড়ি। বিদেশীদের ব্যাপারে সাবধান হই। অবশ্য এই ব্যাপারে যাদের সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখার কথা সে সরকারই অসহিষ্ণুতা কে উস্কে দিচ্ছে। আমাদের এই সুন্দর দেশে অসুন্দরের চর্চা আমরা বন্ধ করবো। আল্লাহ আমাদের দেশকে রক্ষা করুন। 

২০ নভে, ২০১৫

বাংলাদেশঃ যেখানে অবিচার হয় বিচারালয় থেকেই


এতদিন শুনেছি আইন সবার জন্য সমান, আইন অন্ধ এখন দেখি বিচারকেরাই অন্ধ। কারণ এখানে যুক্তি খাটেনা, তথ্য প্রমাণের কোন বালাই নাই, প্রসিকিউটররা নানান গল্পকারের গল্প উপন্যাস নিয়ে বিচারালয়ে হাজির করেন। আর বিচারক মহোদয় সবকিছু গম্ভীরভাবে শুনে বলেন, ওকে ডিসমিসড, ডিসমিসড। তোমাদের রিভিউ খারিজ। তোমাদের ঝুলিয়ে দেয়া হবে। 

এক নজরে কাদের মোল্লার গ্রেফতার থেকে ফাঁসি 

গ্রেফতার : ১৩ জুলাই ২০১০ সুপ্রিম কোর্ট এলাকা থেকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার।
তদন্ত শুরু : ২১ জুলাই ২০১০
তদন্ত শেষ : ৩১ অক্টোবর ২০১১
আদালতে অভিযোগ উত্থাপন : ১৮ ডিসেম্বর ২০১১
শ্যোন অ্যারেস্ট : ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
অভিযোগের সংখ্যা : ৬টি

৬ নং অভিযোগ : মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা। আর এই চার্জেই ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাহকে
অভিযোগ আমলে নেয় : ২৮ ডিসেম্বর ২০১১
চার্জ গঠন করে : ২৮ মে ২০১২
অভিযোগের ওপর সূচনা বক্তব্য শুরু হয় : ১৬ জুন ২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষ্য : ৩ জুলাই ২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের মোট সাক্ষী : ১২ জন
সাক্ষ্য শেষ হয় : ৪ নভেম্বর ২০১২
কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষীর আবেদন : ৫ নভেম্বর ২০১২
কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষী : ৬ জন
কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষ্য শুরু : ১৫ নভেম্বর ২০১২
কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষ্য শেষ হয় : ৬ ডিসেম্বর ২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক : ১৭ ডিসেম্বর
মামলা পুনর্বিচারের জন্য আবেদন : ৩ জানুয়ারি ২০১৩
পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ : ৭ জানুয়ারি ২০১৩
আসামিপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক : ৭ জানুয়ারি ২০১৩
রায় দেয়ার ঘোষণা : ১৭ জানুয়ারি ২০১৩
ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় : ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
শাহবাগেিদর দাবি অনুযায়ী সরকারকে আপিলের সুযোগ দিতে আইন সংশোধন : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
সরকারে আপিল : ৩ মার্চ ২০১৩
কাদের মোল্লার আপিল : ৪ মার্চ ২০১৩
আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ : ৯ ডিসেম্বর ২০১৩
ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি : ১০ ডিসেম্বর ২০১৩
মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত : ১০ ডিসেম্বর রাত ১০টা।
রিভিউ আবেদনের শুনানি খারিজ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৩
মৃত্যুদন্ড কার্যকর : ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ রাত ১০টা ১ মিনিট।

৬ নং চার্জের পোস্টমর্টেমঃ 
এই চার্জটি প্রমাণ করা হয় একজন মাত্র সাক্ষী দিয়ে। তিনি হলেন ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হযরত আলি লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। কথা ছিল মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন ক্যামেরা ট্রায়ালে। 

তিনি তিন জায়গায় তিন রকম সাক্ষ্য দিয়েছেন হজরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগম, ২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ছয়টায় তার বাবা-মাসহ পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রতিনিধি, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা মোহনা বেগম এবং ট্রাইব্যুনালে ক্যামেরা ট্রায়ালে সেই ঘটনার বর্ননা দেন।তার সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে আপিল বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে কাদের মোল্লার দন্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

সবাই ভালো করে নিচের দলিলটি দেখুন দেখুন, এটি মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য । যেটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে দেখা যায় মোমেনা বেগম ঘটনার দুই দিন আগে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। ফলে তিনি প্রানে বেঁচে যান এ ঘটনা থেকে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের হত্যার জন্য বিহারীদের দায়ী করেছেন।সেখানে কাদের মোল্লার কোন নাম গন্ধই নেই। 




















যে মোমেনা বেগম এতদিন কাদের মোল্লাকে চিনতেন না তিনি এখন কোর্টে এসে সাক্ষ্য দিলেন তিনি নাকি দেখেছেন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তার বাবাকে ও পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে। পর্যবেক্ষনে বুঝা যায় যিনি ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী তিনি আসল মোমেনাই না। তিনি নকল তাই ধরা পড়ার ভয়ে চেহারাসহ পুরো শরীর কালো কাপড়ে ঢেকে এসেছেন। এবার বিচারকরা এসব কাহিনী শুনে ও দেখে আচরণ করেছেন অন্ধ ও বধিরের মত। এই ধরণের ঠুনকো ও মিথ্যা সাক্ষী দিয়েই খুন করা হলো আব্দুল কাদের মোল্লাহকে। 


মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রসঙ্গঃ 
সাত অভিযোগের ভিত্তিতে কামরুজ্জামানের বিচার হয়। তার মধ্যে চুড়ান্তভাবে রায়: 
১ নং অভিযোগ - খালাস 
২ নং অভিযোগ - ১০ বছরের কারাদন্ড 
৩ নং অভিযোগ - সংখ্যাগরিষ্টের মতামতের ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ড। 
৪ নং অভিযোগ - যাবজ্জীবন 
৫ নং অভিযোগ - খালাস 
৬ নং অভিযোগ - খালাস 
৭ নং অভিযোগ - যাবজ্জীবন
অর্থাৎ ৩ নং অভিযোগের রায়ই আজ কার্যকর করা হল যাতে মাননীয় বিচারকেরা একমত হতে পারেননি। এবার আসুন দেখে নিই অভিযোগটি কি ছিল। অভিযোগটি হচ্ছে, কামরুজ্জামানের পরিকল্পনায় এবং নেতৃত্বে সোহাগপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১২০ জনকে খুন করে এবং অনেক মহিলাকে ধর্ষন করে। 

১- কামারুজ্জামানের জন্ম ১৯৫২ সালে, ১৯৭১ সালে তার বয়স ১৯ বছর। ১৯ বছরের একজন কিশোর কিভাবে এতবড় অভিযানের পরিকল্পনা করেন? কিভাবে সেনাবাহিনীর জাঁদরেল অফিসারদের সামনে নেতৃত্ব দেন? আর এমনটাও নয় যে ঐ এলাকার মানুষ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিলো। হঠাত করে ৪০ বছর পর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এই ধরণের সাজানো অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হত্যাকান্ডেরই নামান্তর। 
২- এই চার্জে তিনজন মহিলা ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে তারা বলেন তাদেরকে ধর্ষন করা হয় এবং সেখানে কামারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে তারা কামারুজ্জামানের উপস্থিতির ব্যাপারে কিছুই বলেন নি। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময়ও বলা হয়নি তিনি ঘটনার সময় ঐ গ্রামে উপস্থিত ছিলেন। 

এই মামলায় দশজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়ার পর নতুন করে তাদের দিয়ে সাক্ষ্য দেয়ানো হয়। অথচ মূল সাক্ষী তালিকার ৪৬ জনের মধ্যে তাদের নাম ছিলনা।

এর মধ্যে ১১ নং সাক্ষী হাসেন বানু বলেন, দেশ স্বাধীন হলে আমরা মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি এই আসামী বড় নেতা ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর তিনি শেরপুরে ধরা পড়েছিলেন। তিনি আদৌ কামারুজ্জামানকে চিনেন না। 

১২ নং সাক্ষী হাফিজা বেওয়া বলেছেন দেশ স্বাধীন হলে তিনি টিভিতে প্রথম কামারুজ্জামানকে দেখেছেন। হাফিজা বেওয়াও বলেছেন কামারুজ্জামানের নাম মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনেছেন। কোন মুরুব্বি ? এই জিজ্ঞাসায় তিনি কোন মুরুব্বির নাম বলতে পারেননি। এই মুরুব্বী কি সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা? 

করফুলি বেওয়া আমি যুদ্ধের আগে থেকে কামারুজ্জামানকে চিনিনা। দেশ স্বাধীনের ৩-৪ মাস পরে কামারুজ্জামান সাহেবকে চিনেছি। কিভাবে চিনেছেন এই প্রশ্নের উত্তরও বেশ মজার, তিনি বলেন, আমার বাড়ির আশে পাশে দিয়ে অনেক মানুষ নিয়ে কামারুজ্জামান হেঁটে যায়, তখন চিনেছি। অথচ স্বাধীনতার পর সোহাগপুরে গিয়ে হাঁটাহাঁটির কোন কারনই নেই। কামারুজ্জামানের বাড়ি ভিন্ন থানায়। সোহাগপুর থেকে প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরে। 

জেরায় তারা কেউই কামারুজ্জামানকে চিনেন না। সবাই মুরুব্বিদের থেকে শুনেছিলেন। তাহলে তাদের ধর্ষন ও স্বামী হত্যার দায় কামারুজ্জামানের উপর পড়বে কেন?

তারা তিনজন যে কত মিথ্যা কথা বলেছে তা তাদের তিনজনের জেরার বর্ণনা পড়লে তা বুঝতে পারবেন। একজন বলেছে আরেকজনের সাথে এসেছে। অন্যজন বলেছে তিনি একাই এসেছেন। আবার তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কত টাকা দিয়ে এসেছেন? তিনি আর তা বলতে পারেননি। সমানে মিথ্যা কথা বলা সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দিয়েছে। 

৩- সাক্ষীদের কেউই বলতে পারেননি কামারুজ্জামান কখন কোথায় কাকে এই গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন 

৪- সাংবাদিক মামুনুর রশীদ “সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা” নামে একটি গবেষনামূলক লিখেন। তিনি সেই সময়ের গণহত্যা নিয়ে ১৫ জন মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়ে বইটি লিখেন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। সেখানে হাসেন বানু, করফুলি বেওয়া তাদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তারা কেউই কামারুজ্জামানের নাম উচ্চারণ করেননি। সেই বইতে ভিকটিমদের সাক্ষাৎকার অনুসারে ১৪৮ জন রাজাকারের নাম প্রস্তুত করা হয়। সেখানেও নাম নেই কামারুজ্জামানের। কি আজিব বিষয়! যে মহিলারা ২০১০ সালে কামারুজ্জামানকে চিনতোনা তার বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ ছিলনা অথচ এখন কামারুজ্জামান ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নেই।

৫- কামারুজ্জামানের পক্ষে সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য ৬০০ জন সাক্ষী থাকলেও আদালত অনুমতি দেয় মাত্র পাঁচজনকে। 

আদালত এগুলো কিছুই বুঝার চেষ্টা করেন নি কারণ তাদের তো রায় দিতে হবে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সুত্র ধরে যদি বলতে হয় তাহলে বলতে “সরকার গেছে পাগল হইয়া তারা একটা রায় চায়”। বিচারপতিগণ অতি নিষ্ঠার সাথে সরকারের চাওয়া সেই রায়েরই বাস্তবায়ন করেছেন। যেখানে বিচার পদদলিত হয়েছে অবিচারের কাছে। 


এবার আসা যাক আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ সাহেবের প্রসঙ্গেঃ

বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী, যিনি অত্যন্ত সততার সাথে তাঁর মন্ত্রীত্ব পরিচালনা করেছেন। জনাব মুজাহিদকে আলবদরের কমান্ডার হিসাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত প্রশ্নমালার কোন সদুত্তর রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারেননি-

ক. কে কখন কোথায় কিভাবে জনাব মুজাহিদকে আলবদরের কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন?
খ. তিনিই কি আলবদরের প্রথম এবং শেষ কমান্ডার? তার আগে এবং পরে কে বা কারা এই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন?
গ. রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্যমতে ১৯৭১ সালের মে মাসে জামালপুরে মেজর রিয়াজের প্রচেষ্টায় আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ঐ সময় জনাব মুজাহিদ ঢাকা জেলার ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে ঢাকায় বসে কিভাবে তিনি জামালপুরে গঠিত আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হলেন?
ঘ. জনাব মুনতাসির মামুন সম্পাদিত “দি ভ্যাঙ্কুইশড জেনারেলস” বইয়ে রাও ফরমান আলী এবং জেনারেল এ, এ, কে, নিয়াজি স্বীকার করেছেন যে, আলবদর বাহিনী সরাসরি আর্মির কমান্ডে এবং কন্ট্রোলে পরিচালিত হতো। প্রশ্ন হলো জনাব মুজাহিদ একজন ছাত্রনেতা হয়ে কিভাবে এই বাহিনীর কমান্ডার হলেন? 
ঙ. জেরায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন যে, তার তদন্তকালে রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বা শান্তি কমিটির সংশ্লিষ্ট কোন তালিকায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম ছিল মর্মে তিনি কোন প্রমান পাননি। তিনি আরও স্বীকার করেন যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত জনাব আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলাধীন কোন থানায় বা বাংলাদেশের অন্য কোন থানায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সংঘঠিত কোন অপরাধের জন্য কোন মামলা হয়েছে কিনা তা আমি আমার তদন্তে পাইনি। তাহলে আদালত কিসের ভিত্তিতে তাকে আলবদরের কমান্ডার সাব্যস্ত করলেন?

চ. স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তীকালে (১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত) তদানিন্তন জাতীয় গণমাধ্যমে আলবদরের কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ ছাপা হয়েছে এমনকি ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। অথচ ঐসব সংবাদ ও বিজ্ঞপ্তিতে জনাব মুজাহিদের নাম কেউ উল্লেখ করেনি। সত্যিই যদি তিনি আলবদরের সারা দেশের কমান্ডার হতেন তাহলে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে তার নাম কেউ উল্লেখ করেনি কেন?

ছ. বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে দালাল আইনে ৪২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর একটিতেও জনাব মুজাহিদকে আসামী করা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলাগুলোর নথি আদালতে উপস্থাপন করেনি। অথচ ৪২ বছর পর কিভাবে এই হত্যাকান্ডের সকল দায়-দায়িত্ব তার উপর চাপানো হয়েছে?

জ. ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের তদন্তের জন্য জনাব জহির রায়হানকে আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। প্রথিতযশা সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এই কমিটির সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ এই কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তদন্ত রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়নি এবং তদন্তকালে তাঁদের কারো সাথে আলোচনাও করেনি। কেন রাষ্ট্রপক্ষ এই তদন্ত রিপোর্ট জাতির সামনে প্রকাশ করেনি?

এইসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিবেনা। কারন এদেশে এখন সবচেয়ে বেশী অবিচার হয় বিচারালয় হতেই। এখানে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী বিচারপতি নাসিমকে রায় দেয়ার জন্য বলে। সেখানে বিচার আশা করা পাপ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনালের ভাষায় “বিচারের গর্ভপাত হচ্ছে”। যে দেশে পাপীরা বিচারকের আসনে বসে আছে সে দেশে সৎ মানুষেরা শাস্তি পাবে এটাই স্বাভাবিক। একটি সুন্দর বাংলাদেশের আশা করছি মহান রাব্বুল আলামীন হয়তো সেই ব্যবস্থা করে দিবেন যেখানে বর্তমান বিচারালয় হতে অসৎ মানুষদের সরিয়ে ও শাস্তি দিয়ে বিচারালয় কলঙ্কমুক্ত হবে। 

১৬ নভে, ২০১৫

সুদ নিয়ে বিভ্রান্তি


ইদানিং সুদ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। অনেকে সুদের কিছু প্রকারকে জায়েজ বলে চালানোর চেষ্টা করেন। বিশেষ করে সূরা ইমরানের ১৩০ নং আয়াতকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও অনুরূপ কথা বলেছেন, চক্রবৃদ্ধি হলে সুদ হবে, নতুবা নয়। আসুন দেখি সুদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
সুদের বিরোধীতা করে পবিত্র কুরআনে চারটি ধাপে আয়াত নাজিল হয়।

সূরা : আর-রূম 
আয়াত ৩৯: যে সূদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে
এই আয়াতগুলো নাজিল হয় ৬১৫ খৃস্টাব্দে। তার মানে হিজরতের প্রায় ৮ বছর পূর্বে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিরুৎসাহিত করেছেন। সরাসরি কোন নির্দেশনা দেননি। যাকাত এবং দানকে উৎসাহিত করেছেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা শুধু বলেছেন, সুদের কারণে সম্পদের বৃদ্ধি হয় না, যদিও মানুষ তা মনে করে। 

সূরা : সূরা আন নিসা
আয়াত ১৬১: আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায়ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব

এই আয়াতগুলো নাজিল হয় হিজরতের প্রায় তিন বছর পর। এখানে ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে। তাদের উপর সুদ নিষিদ্ধ ছিল। আযাবের কথা উল্লেখ করে মুসলিমদের স্পষ্ট সতর্ক করে দেয়া হলো এটা নিষিদ্ধ। এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সুদ মুসলিমদের জন্যও কড়া নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে।

সূরা : সূরা আল ইমরান 
আয়াত ১৩০ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।

এরপর সূরা আলে ইমরানের এই আয়াতগুলো নাজিল হয়। এবার মুসলিমদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ আসলো সুদ গ্রহন করা যাবেনা। এখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। এখানে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াতে চায় যে, সরল সুদ জায়েজ শুধু চক্রবৃদ্ধি হারে খাওয়া নাজায়েজ। সরল সুদ মানে যেটা বছর বছর বাড়বে না। তার মানে কেউ যদি ১০০০ টাকা ঋণের বিনিময়ে ১১০০ টাকা নেয় তাহলে তা বৈধ। বস্তুত প্রকৃত কথা হলো
হুদ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের একটা বড় কারণ এই ছিল যে, ঠিক বিজয়ের মুহূর্তেই ধন-সম্পদের লোভ তাঁদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে বসে এবং নিজেদের কাজে পূর্ণরূপে শেষ করার পরিবর্তে তারা গনীমাতের মাল আহরণ করতে শুরু করে দেন তাই মহাজ্ঞানী আল্লাহ এই অবস্থার সংশোধনের জন্য অর্থলিপ্সার উৎস মুখে বাঁধ বাঁধা অপরিহার্য গণ্য করেছেন এবং সুদ খাওয়া পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন যা চক্রবৃদ্ধি হারে গ্রহন করা হয় এই সুদের ব্যবসায়ে মানুষ দিন-রাত কেবল নিজের লাভ ও লাভ বৃদ্ধির হিসেবেই ব্যস্ত থাকে এবং এই কারণে মানুষের মধ্যে অর্থ লালসা ব্যাপক ও সীমাহীন হারে বেড়ে যেতে থাকে

সূরা : সূরা আল বাক্বারাহ
 
আয়াত ২৭৫ : কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ  ব্যবসা তো সুদেরই মতো অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখাওয়া থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী সেখানে সে থাকবে চিরকাল 

আয়াত ২৭৬ :  আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন আর আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না

আয়াত
২৭৭ : অবশ্যি যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাদের প্রতিদান নিসন্দেহে তাদের রবের কাছে আছে এবং তাদের কোন ভয় ও মর্মজ্বালাও নেই

আয়াত
২৭৮ : হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো 

আয়াত
২৭৯ : কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এখনো তাওবা করে নাও ( এবং সুদ ছেড়ে দাও ) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না

চতুর্থ ধাপে এসে সূরা বাকারার ২৭৫
থেকে ২৭ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে সর্বপ্রকারের সুদকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামে দুই প্রকার রিবার কথা বলা হয়েছে। প্রথম প্রকার হলো, রিবা আন-নাসিয়াহ বা মেয়াদি সুদ। এটা হলো প্রকৃত সুদ বা প্রাথমিক সুদ। কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে এ ধরনের সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইমাম আবু বকর জাসসাস ও আল রাজি রিবা আন নাসিয়ার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হলো- যে ঋণ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ দেয়া থাকে এবং মূলধনের অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত থাকে, সেটাই রিবা আন-নাসিয়াহ।

রিবা আল ফজল হারাম হওয়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। প্রখ্যাত সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, একদা বিলাল রা: রাসূলে করিম সা:-এর সমীপে উন্নত মানের কিছু খেজুর নিয়ে হাজির হলেন। রাসূলুল্লাহ সা: তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এ খেজুর আনলে? বিলাল রা: উত্তর দিলেন, আমাদের খেজুর নিকৃষ্ট মানের ছিল। আমি তার দুই সাঃ-এর বিনিময়ে এক সাঃ উন্নত মানের বারমি খেজুর বদলিয়ে নিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ওহ! এত নির্ভেজাল সুদ। এরূপ কখনো করো না। তোমরা যদি উত্তম খেজুর পেতে চাও, তাহলে নিজের খেজুর বাজারে বিক্রি করবে, তারপর উন্নত মানের খেজুর কিনে নেবে। যেহেতু বর্তমান ব্যাংকিংয়ে ঋণের বিপরীতে সময় বেঁধে দিয়ে সুদ নেয়া হয়, সেহেতু তা রিবা আন-নাসিয়ার অন্তর্গত, যা কুরআনের আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়েছে।

আবার অনেকে মনে করেন, কুরআন ও হাদিসে যে রিবার উল্লেখ আছে, তার অর্থ ব্যক্তিগত পর্যায়ে পারিবারিক প্রয়োজন পূরণের জন্য দেয়া ঋণ, যাকে প্রচলিত ভাষায় মহাজনী সুদ বা উসারি বলা হয় কিন্তু আজকের দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কর্তৃক দেয়া ঋণ উৎপাদন ও মুনাফাভিত্তিক খাতে দেয়া হয়। এখানে ঋণগ্রহীতা ব্যাংকের টাকা দিয়ে ব্যবসায় করে নিজে লাভবান হন। তা ছাড়া এ জাতীয় সুদ হলো ব্যবসায়িক বা তেজারতি সুদ যা ব্যবসায়িক লেনদেনের মতোই উভয়ের সম্মতিক্রমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, কোনো জবরদস্তি থাকে না, সুদের হার যথেষ্ট কম, এর মাধ্যমে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, অর্থনীতির চাকা হয় গতিশীল। তাই এ জাতীয় সুদ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। তাদের এ যুক্তি একেবারেই অসার ও ভুল। কারণ, জাহেলি যুগে ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য রীতিমতো পুঁজি লগ্নি করা হতো এবং সে জন্য সুদ আদায় করা হতো। সে সময়ে অনেকেই আজকের মতো ফার্ম খুলে এজেন্ট নিয়োগ করে সুদে পুঁজি খাটাত। এদের মধ্যে রাসূল সাঃ-এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও বনু মুগিরার বিশেষ প্রসিদ্ধি ছিল। তাদের আদায়কৃত সুদকে আরবিতে রিবা বলা হতো। রাসূল সাঃ তাঁর চাচার সুদি কারবার বন্ধ করে দেন এবং গ্রাহকের কাছে প্রাপ্য বকেয়া সুদ রহিত করে দিয়েছিলেন।

সুতরাং সুদ সুদই। সুদ জায়েজ করার সকল চিন্তাই শয়তানী চিন্তা। এর থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে হবে। অনেকে সুদী ব্যাংকে চাকুরী করাকেও নানানভাবে জায়েজ করার চেষ্টা করেন। সেটাও স্পষ্টভাবে হারাম।

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে অভিশম্পাত করেছেন যারা সুদ খায়, যারা সুদ দেয়, যারা সুদের টাকার কথা লিখে রাখে এবং যারা সুদের টাকার স্বাক্ষী থাকে। তারা সবাই একই রকম
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৮, আবূ দাউদ/৩৩০০, তিরমীযী/১২০৯)
অতএব সুদী ব্যাংকে চাকুরী করা বৈধ নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন। আমাদের সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে রাখুন। আমীন।

৯ নভে, ২০১৫

একটি কঠিন প্রশ্ন


নুহার বয়স দু’ বছর। খুব পাকা পাকা কথা বলে। বাবার সাথে দুনিয়ার গল্প করে। প্রশ্ন করে জর্জরিত করে। বাবা আশিক সাহেব চা-পোষা মানুষ। অফিসের কেরানীর চাকুরি করে খুব দ্রুত ছুটে আসে মেয়ের কাছে। মেয়ের শত আবদার রক্ষা করাই যেন তার একমাত্র কাজ। ঐ কাজে এত শান্তি পান তিনি যা ভাষায় বর্ণনা করার মত না। মেয়েটিও বাবার জন্য পাগল। তিনি না খাওয়ালে সে খাবেই না। দাদী কিংবা ফুফি কারো হাতেই না। বাবা হাত না বুলালে সে খাবে না।

মেয়েটা পাশে না থাকলে মাঝে মাঝে আশিক সাহেবের মন আনচান করে উঠে। অফিসে প্রায়ই আশিক সাহেবের এমন হয়। তিনি আর টিকতে পারেন না, দৌড়ে বাসায় আসেন। এসে হয়তো দেখেন মেয়েটা দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমুচ্ছে অথবা আপন মনে খেলছে। বাবুটার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে, কপালে একটু করে চুমু দিয়ে তিনি আবার তার কাজে ফিরে যান। এই মেয়েটিই মাঝে মধ্যে আশিক সাহেবকে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন করে বসে। বাবা, আমার মা কে তুমি কি করেছ? সবার মা আছে, আমার মা নাই কেন? আশিক সাহেব কোন উত্তর দিতে পারেন না। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। কখনো অন্য কিছু বলে প্রসঙ্গ এড়াতে চান। আবার মাঝে মধ্যে নিজেকেই সান্তনা দিতে পারেন না তিনি। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদেন। মেয়েটিও বাবার সাথে কিছুই না বুঝে কাঁদে।

এখন থেকে বছর নয় আগে আশিক সাহেবের বিয়ে হয় শিরিনের সাথে। শিরিনের মামার পরিচিত ছিল আশিক সাহেব। তিনিই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। সবকিছু দেখে শুনে শিরিনের বাবা বিয়েটা নাকচই করে দিলেন। কারণ আশিক সাহেব গরিব মানুষ। সে নিজেই খেতে পায়না শিরিনকে কি খাওয়াবে? শিরিনের মামার এক কথা, মানুষটা গরিব হলেও ভালো। চরিত্রবান। এমন ছেলে এখন পাওয়া সহজ নয়। আশিক সাহেব বলেন, আমি আর্থিক দিক দিয়ে গরীব হতে পারি কিন্তু মনের দিক দিয়ে কখনোই নই। আমি ডালভাত খাই, মাস শেষে জমানো টাকা খুব একটা থাকেনা। আমাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে দু’জনের হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এ সরল কথাগুলোই মনে ধরে শিরিনের। সে গোঁ ধরে বিয়ে যেন আশিক সাহেবের সাথেই হয়।

অবশেষে সবকিছু ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হলো। সুন্দর সংসার আশিক-শিরিনের। এর মধ্যেও ছিল কিছুটা অপ্রাপ্তি। যা দুজনকেই প্রায় সময় বিষাদে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাদের কোন সন্তান ছিল না। কত ডাক্তার-কবিরাজ দেখালেন। আল্লাহর কাছে চাইলেন। কিছুতেই কিছু যেন হবার নয়। অবশেষে তাদের বিয়ের সাত বছরের মাথায় আল্লাহ তাদের দিকে মুখ তুলে চাইলেন। শিরিন জানালো, তাদের সন্তান হচ্ছে। আশিক সাহেব অতি টানাটানির সংসারে দশ কেজি মিষ্টি কিনে বিতরণ করলেন, অভাবীদের খাওয়ালেন। শত শত টাকা ফকির-মিসকিনকে দান করলেন।

আস্তে আস্তে সন্তানের জন্মের সময় ঘনিয়ে আসলো। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। হঠাৎ একদিন শিরিনের ভীষন পেইন শুরু হয়। শিরিনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। বাচ্চার হার্ট সাউন্ড পাওয়া যাচ্ছে না। ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত দিলেন, এখনি সিজার করতে হবে। দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে। আশিক সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রক্ত যোগাড় করার জন্য চারদিকে ফোন করেন। এদিকে শিরিনের অবস্থাও দ্রুত খারাপ হচ্ছে। শিরিনের রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ পরিচিত কারো কাছেই রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে অপারেশন শুরু করা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা একটি ব্লাড ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে দিলেন। সেখানে বি নেগেটিভ রক্ত পাওয়া গেলো। আশিক সাহেব গেলেন রক্ত আনতে। ডাক্তাররাও অপারেশন শুরু করে দিলেন নিশ্চিন্তে।

আশিক সাহেব স্থানীয় জামায়াতের ইউনিট সেক্রেটারী। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পুলিশ সবসময় তাকে খুঁজে বেড়ায়। আশিক সাহেবের মনে খুব আস্থা, যেহেতু তিনি কখনো কারো ক্ষতি করেন নি তাই তার কিছু হবে না। এলাকাবাসী সবসময় তার পাশে থাকবে। আশিক সাহেব যেভাবে এলাকাবাসীদের যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকেন, এলাকাবাসীও তাকে সেভাবে ভালবাসে। তাই অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মত তিনি আত্মগোপনে থাকতেন না। তাকে কয়েকবার আটক করার জন্য পুলিশ এসেছিলো। কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে তাকে আটক করা যায় নি।

পুলিশ আগে থেকে আশিক সাহেবকে ফলো করছিলো। তিনি যখন ব্লাড ব্যংক থেকে রক্ত নিয়ে বের হলেন তখনই তাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেল। আশিক সাহেব অনেক অনুনয় করলেন। তার কোন কথা শোনা হয় নি। হাসপাতাল, তার স্ত্রী, রক্ত সব কথা বললেন কিন্তু নরপিচাশ কোন পুলিশ তার কথা শুনলো না। নীতিতে অটল আশিক সাহেব কখনোই কারো সামনে মাথা নত করেন না। সেই আশিক সাহেব হঠাৎ ওসির পা জড়িয়ে ধরলেন, বললেন স্যার প্লিজ আপনি আমাকে ছাড়ার দরকার নেই, দয়া করে এই রক্তের ব্যাগটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। ওসি কষে লাথি মারে আশিক সাহেবকে। হতচকিত হয়ে ছিটকে পড়েন তিনি। পুলিশ এক ঝটকায় আশিক সাহেব থেকে কেড়ে নিল রক্তের ব্যাগ। ছুঁড়ে ফেলে দিল পাশের নর্দমায়। আশিক সাহেব স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কিছুই বলতে পারেন না। কেবল নোনা জল ছেড়ে প্রভুর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকেন তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর আর সন্তানের জন্য।

এদিকে ডাক্তাররা অত্যন্ত অবাক হচ্ছেন। শিরিনের অবস্থা খুবই খারাপ। অথচ আশিক সাহেব রক্ত নিয়ে এখনো ফিরছেন না। আশিক সাহেবের মা ওটির সামনে দৌড়াদৌড়ি করছেন, কি করবেন বুঝতে পারছেন না। একদিকে ডাক্তার তাড়া দিচ্ছে। অন্যদিকে আশিকের ফোন নাম্বার বন্ধ। ইতিমধ্যে হাসপাতাল কাঁপিয়ে নবজাতক জানান দিল সে পৃথিবীতে এসেছে। জ্ঞানহারা শিরিন হঠাৎ জেগে উঠলো, ডাক্তার কে কাছে ডেকে ফিস ফিস করে বললো, বাবুটাকে আমার কাছে দিন। শিরিন নার্স থেকে বাবুটাকে নেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। বাবুর দিকে তাকিয়ে অশ্রু ছেড়ে দিয়ে বললো, তোর বাবাকে পুলিশ নিয়ে গেছে। আমি চলে যাচ্ছি আল্লাহর কাছে। তুই ভালো থাকিস।

ব্যাস অতটুকুই। আবার জ্ঞান হারালো শিরিন। আশিক সাহেবের মা অনেক চেষ্টা করে রক্ত আবার যোগাড় করলেন। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেলো। শিরিনের ঘুম আর কখনোই ভাংলো না। ডাক্তার অবাক হলেন শিরিনের কথাগুলো শুনে। আশিককে কখন পুলিশ নিয়ে গেল কেনইবা নিয়ে গেল? কিছুই বুঝতে পারেন না তিনি। শিরিন তার বাবুটাকে যে কথাগুলো বলেছিলো সেগুলো ডাক্তার আশিক সাহেবের মাকে জানালেন। তিনি অত্যন্ত অবাক হলেন, জরুরী খবর নিয়ে জানলেন সত্যিই আশিক থানায়।

রাত এগারোটার দিকে থানায় বাবুটাকে নেয়া হল, আশিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বাবুটা সেদিন যেন কেঁদে কেঁদে বহু প্রশ্ন করেছিলো। আশিক সাহেব সেদিন কোন উত্তর দিতে পারেন নি। আজও না। আজও তিনি পারেন না নুহার কঠিন প্রশ্নটার জবাব দিতে...

#দুঃসময়ের_গল্প