১৩ জুন, ২০২৪

সফলতার জন্য যে দোয়া আপনাকে পড়তেই হবে!


বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় ছিল আকস্মিক ঘটনা। এই ঘটনার পর মক্কার কাফির, মদিনার ইহুদি ও মুনাফিক এবং মরুভূমির বেদুইনরা উদীয়মান শক্তি মুসলিমদের উড়িয়ে দেওয়ার উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলিমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। কারণ পরাজিতের ছোবল মারাত্মক হয়।

মাওলানা মওদূদী রহ. সেই পরিস্থিতিকে এভাবে চিত্রিত করেন, বদর যুদ্ধে ঈমানদারগণ বিজয় লাভ করলেও এ যুদ্ধটি যেন ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল মারার মতো ব্যাপার। এ প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষটি আরবের এমন সব শক্তিগুলোকে অকস্মাত নাড়া দিয়েছিল যারা এ নতুন আন্দোলনের সাথে শত্রুতা পোষণ করতো। সবদিকে ফুটে উঠছিল ঝড়ের আলামত। মুসলমানদের ওপর একটি নিরন্তর ভীতি ও অস্থিরতার অবস্থা বিরাজ করছিল। মনে হচ্ছিল, চারপাশের সারা দুনিয়ার আক্রমণের শিকার মদীনার এ ক্ষুদ্র জনবসতিটিকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলে দেয়া হবে। মদীনার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর এ পরিস্থিতির অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। মদিনা ছিল তো একটি ছোট্ট মফস্বল শহর। জনবসতি কয়েক হাজার ঘরের বেশী ছিল না। সেখানে হঠাৎ বিপুল সংখ্যক মুহাজিরের আগমন। ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তো এমনিতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর আবার এই যুদ্ধাবস্থার কারণে বাড়তি বিপদ দেখা দিল।

মুসলিমরা ভাবতে থাকলো, মক্কার কুরাইশ, মদিনার ইহুদি ও মরুভূমির বেদুইনদের যেমন লোকবল তেমনি ছিল ধন-সম্পদ। এর মোকাবেলায় মুসলিমরা ছিল দুর্বল। জনবল ও সম্পদ উভয় দিকেই দুর্বল ছিল। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আল্লাহ তায়ালা সূরা ইমরানের ১০-১৪ নং আয়াতে বলেন,

(১০) যারা কুফরী নীতি অবলম্বন করেছে, তাদের না ধন–সম্পদ, না সন্তান–সন্ততি আল্লাহ‌র মোকাবিলায় কোন কাজে লাগবে। তারা দোজখের ইন্ধনে পরিণত হবেই।
(১১) তাদের পরিণাম ঠিক তেমনি হবে যেমন ফেরাউনের সাথী ও তার আগের নাফরমানদের হয়ে গেছে। তারা আল্লাহ‌র আয়াতের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, ফলে আল্লাহ‌ তাদের গোনাহের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। আর যথার্থই আল্লাহ‌ কঠোর শাস্তিদানকারী।
(১২) কাজেই হে মুহাম্মাদ! যারা তোমরা দাওয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের বলে দাও, সেই সময় নিকটবর্তী যখন তোমরা পরাজিত হবে এবং তোমাদের জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, আর জাহান্নাম বড়ই খারাপ আবাস।
(১৩) তোমাদের জন্য সেই দু'টি দলের মধ্যে একটি শিক্ষার নিদর্শন ছিল যারা (বদরে) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। একটি দল আল্লাহ‌র পথে যুদ্ধ করছিল এবং অন্য দলটি ছিল কাফের। চোখের দেখায় লোকেরা দেখছিল, কাফেররা মু'মিনদের দ্বিগুণ। কিন্তু ফলাফল (প্রমাণ করলো যে) আল্লাহ‌ তাঁর বিজয় ও সাহায্য দিয়ে যাকে ইচ্ছা সহায়তা দান করেছেন। অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য এর মধ্যে বড়ই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
(১৪) মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহ‌র কাছে।

এখানে আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্পষ্ট করেছেন কাফেরদের অনেক সম্পত্তি ও জাঁকজমক দেখে আমরা যেন বিভ্রান্ত না হই, বরং আমরা যেন আল্লাহর ওপর আস্থা রাখি। আল্লাহ তায়ালা বদর যুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেছেন, বিজয় একমাত্র আল্লাহর সাহায্যেই আসে। আর আমরা যেগুলোকে সফলতা মনে করি এগুলো দুনিয়ার সুশোভিত বস্তু। এগুলো অর্জন করা যেতে পারে কিন্তু এগুলো যেন মূল লক্ষ্য না হয়ে যায়। মূল লক্ষ্য হবে আখিরাতের সাফল্য। দুনিয়া তো মুসাফিরের মতো অবস্থান করার জায়গা।

আমরা এমন এক সময়ে জন্ম নিয়েছি পৃথিবীতে যখন মুসলিমরা সারাবিশ্ব জুড়ে মার খেয়ে যাচ্ছে। আমাদের হতাশ হওয়ার অনেক উপাদান আছে। কিন্তু আমাদের হতাশ না হয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

দুনিয়ার এই জাঁকজমকের বিপরীতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য যা উত্তম সে সম্পর্কে বলেছেন, পরবর্তী তিন আয়াতে। আল্লাহ তায়ালা সূরা ইমরানের ১৫-১৭ আয়াতে বলেন,

(১৫) বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহ‌র সন্তুষ্টি। আল্লাহ‌ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন।
(১৬) এ লোকেরাই বলেঃ 'হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচাও।
(১৭) তারা ধৈর্যশীল, সত্যনিষ্ঠ, অনুগত, দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহ‌র কাছে গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আসল সফলতা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন এবং এর জন্য করণীয় উল্লেখ করে দিয়েছেন। আমাদের ধৈর্য ধরে ইসলামী আন্দোলনে যুক্ত থাকতে হবে, হক কথা বলতে হবে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে মুশরিকদের শেখানো কথা বলা যাবে না। আমাদের উলিল আমরের প্রতি (ইসলামী আন্দোলনের নেতা) অনুগত হতে হবে, দ্বীন কায়েমের পথে টাকা খরচ করতে হবে। যখনই আন্দোলনের জন্য সম্পদ চাওয়া হবে বিনা দ্বিধায় দান করতে হবে। এই দানকে আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে কর্জে হাসানা বলেছেন। এই ঋণ আল্লাহকে দেওয়া হচ্ছে। আল্লাহ এই দানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে ফেরত দিবেন। সর্বশেষ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য চাইতে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন। সূরা ইমরানের ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ দোয়াটি উল্লেখ করেন।

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রব্বানা ইন্নানা আ-মান্না-ফাগফিরলানা-যুনূবানা-ওয়াকিনা আযা-বান্না-র।

হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

আসুন আমরা হতাশ না হয়ে ইকামাতে দ্বীনের কাজ করি। আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং দায়িত্বশীলের আনুগত্য করি। আর আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া দোয়া বার বার পড়তে থাকি, বিশেষ করে শেষ রাতে।

#রব্বানা

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন