১৭ জুন, ২০১৬

জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং আমেরিকায় সমকামী হত্যা


জামায়াত একটা মুনাফিক টাইপ দল। কারণ জামায়াত একবার জোট বাঁধে আওয়ামীলীগের সাথে আন্দোলন করে বিএনপির বিরুদ্ধে। আবার কিছুদিন পর বিএনপির সাথে ঘর সংসার করে আন্দোলন করে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে। এদের চরিত্রের ঠিক নাই। এরা নিজেদের মত করে ইসলামকে ব্যবহার করে। এরা ধর্মব্যবসায়ী। এই ধরণের অভিযোগ আপনি করতেই পারেন। কারণ আপনার ইনফো সঠিক, তবে সকল ইনফো আপনার জানা নেই অথবা আপনি জানা থাকলেও গোপন করেছেন। তাই ইনফরমেশনের যে ব্যাখ্যা আপনি করেছেন তা সম্পূর্ণ ভুল। 

১৯৮৪ সালে জামায়াত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলার প্রস্তাব দেয় রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে। কারন সে সময়ের ধূর্ত শাসক লে জে হু মু এরশাদের অধীনে নির্বাচন কারো পক্ষে মানা সম্ভব ছিল না। জামায়াতের এই ফর্মুলা সেসময় সরকারি দলতো গ্রহন করেইনি। বিরোধী দলের মধ্যেও কেউ গ্রহন করেনি। একই ফর্মূলা সকল বিরোধী দল গ্রহন করেছে ১৯৮৯ সালে। সকল বিরোধী দল তখন এই ফর্মূলা বাস্তবায়নের জন্য যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। তারই প্রেক্ষিতে গণঅভ্যুত্থান হয় এরশাদের পতন হয়। 

১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক ফর্মুলাতে নির্বাচন হয়। বিএনপি অল্পের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা মিস করে। জামায়াত ১৮টি সিট পায়। জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দেয়, বিএনপির সরকার গঠন করে। এর কিছুদিন পরই সংসদে দাবী উঠে এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার। আওয়ামীলীগ এই দাবী উত্থাপন করে। বিএনপি এই দাবী প্রত্যাখ্যান করে। এই নিয়ে জামায়াত বিএনপিকে রাজী করানোর চেষ্টা করে। সেই সময় সংসদে মাওলানা নিজামী খালেদাকে বলেন আমরা মোটেই আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে ইচ্ছুক নয়। আমরা দেশগঠনে আপনাকে সহায়তা করতে রাজী। কিন্তু আপনি জোর করে আমাদের আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বাধ্য করবেন না। কিন্তু সেই সময়ের অহংকারী খালেদা জিয়া সেটা মেনে নিতে অসম্মত হয়। জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে আওয়ামীলীগের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু যতটা না আওয়ামীলীগের তার চাইতে বেশী জামায়াতের। 

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মানতে বাধ্য হয় বিএনপি। ১৯৯৬ তে দু'বার নির্বাচন হয়। ১ম বার সকল বিরোধী দল বয়কট করে। পরবর্তিতে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হয়। আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামীলীগ তার পূর্বের আচরণ মতই ধর্মনিরপেক্ষ হতে গিয়ে ইসলাম বিরোধী হয়ে উঠে। ভারতকে খুশি রাখার জন্য একের একের পর এক কালো অসম চুক্তি করতে থাকে। কয়েকটি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়। দাড়িটুপি নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মত মানুষও তাদের হাতে লাঞ্চিত হয়। 

এই পরিস্থিতিতে জামায়াত আওয়ামীলিগের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এর মধ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তির মত দেশকে ভাগ করে দেয়ার চুক্তি করে সরকার। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখে বিএনপি ও জামায়াত। এই আন্দোলনই দুই শক্তিকে আবার একই মঞ্চে আনে। সেখানে এরশাদও ছিল। পরবর্তিতে চার দলীয় জোট গঠন হয়। প্রথমে এরশাদ জোটে ছিল, পরবর্তিতে সে বের হয়ে যায়। জোটের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের ভারতপন্থীদের অত্যাচার হতে রক্ষা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। সেই জোট এখনো বিদ্যমান। এখনো এই জোটের মূল দাবী তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ঘটনা কি দাঁড়ালো? জামায়াত তার প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবীতে সবসময় অটল ছিল। কোন কোন রাজনৈতিক দল তাদের ইচ্ছেমত জামায়াতের সাথে আন্দোলন করেছে বা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি নিশ্চয়ই জামায়াতকে এই ইস্যুতে মুনাফিক বলতে চাইলেও বলতে পারবেন না।

এবার আসুন সমকামী ইস্যুতে। জামায়াত আমেরিকায় সমকামী হত্যায় নিন্দা জানিয়েছে। এতে উৎপুল্ল হয়ে আপনি জামায়াতকে সমকামী আখ্যা দিতে আপনার বাধে না। আপনি জামায়াতকে গে জামায়াত বলে উল্লাস করছেন আর বলছেন দেখ দেখ আগেই বলেছিলাম জামায়াত ইহুদী-নাসারা কওমে লুতের অনুসারী। এখন তো প্রমাণ হলো। 

এখানেও আপনার সমস্যা ওটাই। আপনার যে তথ্যের উপর ভিত্তি করে জামায়াতকে দোষারোপ করছেন সেটা সত্য। তবে হয় সব তথ্য আপনার কাছে নেই অথবা আপনি কিছু তথ্য গোপন করেছেন। 

আমেরিকায় এই ধরণের সাইকো হামলা নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে জামায়াতের বিবৃতি প্রদানের প্রয়োজন পড়ে নি। কারণ আগের প্রত্যেকটি ঘটনায় খুনী ছিল অমুসলিম। আর বিষয়টা নিয়ে রাজনীতিও হয়নি। সবাই ঐসব খুনীকে অপ্রকৃতস্থ বলেছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে আলোচনা হয়েছে তা হয়েছে অস্ত্র আইন সংশোধন করা দরকার। যারা প্রায়ই মাতাল হয় তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবী উঠেছিল। কোন পক্ষ থেকেই দাবী জানানো হয় নি এটি একটি সাম্প্রদায়িক হত্যা। 

কিন্তু সমকামীদের হত্যাকারী হিসেবে যখনই একজন মুসলিম নাম এসেছে তখনই সারা বিশ্বে হইচই শুরু হয়েছে। তখন আর কেউ উমর মতিন নামে লোকটিকে কেউ মাতাল বলতে রাজী না, সমকামী বলতে রাজী না এখন তার পরিচয় সে একজন মুসলিম। ব্যাস সকল সন্ত্রাসী ঘটনার দায় নিতে হচ্ছে ইসলামকে। পুরো বিশ্বের মিডিয়া ইসলামকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। আর এই ঘটনায় তাল দেয়ার জন্য আছে CIA এবং মোসাদের যৌথ প্রযোজনার আই এস। কোন কিছু বিবেচনা করার আগেই তারা এই ঘটনার দায় স্বীকার করে। শুধু এই ঘটনা নয় সারা পৃথিবীর আনাচে কানাচে যে কোন যায়গায় কোন মুসলিম নামধারী কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলেই তারা সেই ঘটনার দায় স্বীকার করে ইসলামকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে। এটা তাদের এজেন্ডা। 

এই ধরণের প্রতিটি ঘটনায় বিপদে পড়েন মুসলিমরা। তারা অমুসলিম দেশে তাদের স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। অযথা হয়রানির শিকার হন। সবচেয়ে বড় কথা হলো ক্ষতিগ্রস্থ হয় ইসলাম। ইসলাম তখন বিবেচিত হয় সন্ত্রাসীদের ধর্ম হিসেবে। অনেক নালায়েক আছেন যারা ভুল প্রয়োগের মাধ্যমে কুরআন হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন। 

জামায়াত সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারা নিয়োজিত। সাধারণত তারা যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার সেটা যদি তাদের শত্রুর সাথেও হয়ে থাকে। আর সেই অন্যায় যদি ইসলামের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে তবে সেখানে জামায়াত সবসময় সোচ্চার। এটা জামায়াত ঈমানের দাবী মনে করে। জামায়াতের বিবৃতি যতটা না ছিল নিহতদের প্রতি সংহতি বরং তার চাইতেও বেশী হচ্ছে ইসলামকে সমুন্নত করা। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা। জামায়াত তার বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে এমন কোন হত্যাকান্ডকে ইসলাম সমর্থন করে না, করতে পারে না। এই হত্যাকান্ডের সাথে ইসলামপন্থীদের সংযোগ নেই। 

অবশ্যই ইসলামে সমকাম একটি ফৌজদারি অপরাধ। তবে এটা অবশ্যই ইসলামিক রাষ্ট্রে, যেখানের অধিকাংশ মানুষ সতঃস্ফুর্তভাবে ইসলামকে গ্রহন করবে। ইসলামিক কানুন মেনে চলবে। তবে ইসলাম কখনোই কোন ব্যক্তিকে কোন শাস্তি বিধানের অনুমতি দেয় না। বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড মেনে নেয় না। কুরআনে মুশরিকদের হত্যা করার জন্যও বলা হয়েছে তাই বলে কি আপনার অনুমতি আছে পাশের বাড়িতে শিরক করা কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বি মানুষকে হত্যা করা? অথচ শিরক করা আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় অপরাধ। হাদীসে সমকামীদের হত্যা করার জন্য বলা হয়েছে এর মানে এই নয় যে আপনি কোন সমকামীকে হত্যা করতে পারবেন বরং এই হাদীসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো সমকাম ঘৃণিত জিনিস, প্রকৃতি বিরুদ্ধ এবং ফৌজদারী অপরাধ। রাষ্ট্র শাস্তির ব্যবস্থা করবে, সাধারণ নাগরিকদের সেই অধিকার ইসলাম দেয়নি। 

এজন্য কুরআন, হাদীস যাই ব্যখ্যা করবেন সাবধানে করবেন। কোন সময় কি পরিস্থিতিতে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা এবং মুহাম্মদ সঃ এই কথাগুলো বলেছেন সেটা বিবেচনা করবেন। আর জামায়াতের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বললাম না। জামায়াত সবসময় প্রস্তুত আপনাদের সমালোচনা গ্রহন করার জন্য। এটলিস্ট জামায়াত এই কাজটা ভালো পারে :)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন