২৬ ফেব, ২০১৭

আকাশের মা


থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। খুবই ব্যস্ত সময় যাচ্ছে শাহিদের। অধিকাংশ ভার্সিটির ছেলেদের যা হয়, সারাবছর বইয়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। পরীক্ষা এলেই চোখের জল আর নাকের জল এক হয়ে যায়। শাহিদও তার ব্যতিক্রম নয়। তারই ক্লাসফ্রেন্ড রকিবের কাছে তার ছোটাছুটি এখন নিয়মিত। রকিব গ্রামের ছেলে, রাজনীতি করে না বলে হলে স্থান হয়নি। মেস ভার্সিটির আরো কিছু ছাত্রদের সাথে থাকে। অথচ ক্লাসের সেরা ছাত্রদের মধ্যে সে একজন। বৈধভাবে সিট বরাদ্দ হলে সেই সবার আগে পাবার কথা। কিন্তু হলতো এখন ক্ষমতাসীন দলের অফিস। সেখানে অরাজনৈতিক ছাত্র কিভাবে থাকবে! শাহিদ তার কাছে নিয়মিত আসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য।

এই নিয়ে চারদিন শাহিদ রকিবের মেসে এসেছে, এরমধ্যে তিনদিনই একই ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দিন থেকেই সে ভাবছে বিষয়টা রকিবকে জিজ্ঞাসা করবে। বলি বলি করেও একথা সেকথায় আর বলা হয়নি। আজতো মহিলাটা তাকে প্রায়ই ধরেই ফেলেছিল। শাহিদও ভয় পেয়েছে ভীষণ। রাস্তার মোড়ে যেখানে বাস থামে সেখানেই গত চারদিন ধরে একটি মহিলাকে দাঁড়ানো দেখেছে শাহিদ। যখনই শাহিদ বাস থেকে নামে তখনই তিনি এগিয়ে আসেন। শাহিদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন আকাশ কোথায়? তোমাদের সাথেই তো ছিল। তোমরা সবাই চলে এলে। আকাশ আসে না কেন? প্রথমদিন বিষয়টাকে পাত্তা না দিলেও প্রতিদিনের বিষয়টা শাহিদকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। 

মহিলাটির বয়স আনুমানিক ৪৫ হবে। একটু স্বাস্থ্যবান। রাস্তার মোড় থেকে গলির দিকে ঢুকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ বিদ্যমান। চোখ দুটোর দিকে একটু খেয়াল করলে বুঝা যাবে রাজ্যের ক্লান্ত তিনি। মনে হবে বহু বছর ঘুমাননি তিনি। আজ রকিবের বাসা থেকে বের হতে একটু দেরী হয়ে গেল। রাত সাড়ে দশটা। এখন গলির মুখটা প্রায় ফাঁকা। মানুষজনের চলাচল একেবারে কমে গেছে। সে হঠা দেখে সেই মহিলাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করছে দুজন। পাশেই বিলাসবহুল গাড়ি। তারা গাড়িতে উঠাতে চাচ্ছেন সেই মহিলাকে। কিন্তু ভদ্রমহিলা কোনভাবেই উঠতে চাইছেন না। তিনি এককথা বার বার বলছেন আকাশ বলেছে তো, সে ফিরবে। আরেকটু দাঁড়াই। বাচ্চা একটা ছেলে। অন্ধকার হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে ভয় পাবে তো। আরেকটু থাকি। অন্যদিকে যে দুজন লোক গাড়িতে উঠাতে চাইছেন তারা বুঝানোর চেষ্টা করছেন, আকাশের সাথে তাদের কথা হয়েছে। সে আজ ফিরবে না। চলেন মা চলেন। এক পর্যায়ে মহিলা কাঁদতে শুরু করলেন। হঠাত সেই মহিলাটি দেখতে পেল শাহিদকে। দেখা মাত্রই তার দিকে প্রায় দৌড়ে আসলেন। লোক দু’জন প্রথমে বুঝতে পারেননি কি হচ্ছে। পরে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তারা মহিলাটিকে ধরে ফেললেন। আবার সেই জিজ্ঞাসা শাহিদকে। আমার আকাশ কই। লোক দুজন শাহিদকে স্যরি বলে এবার প্রায় জোর করে গাড়িতে তুললো। গাড়ি চলতে শুরু করলো। শাহিদের খুব খারাপ লাগছে। তার খুব ইচ্ছে করছে মহিলাটার সাথে কথা বলতে। 

পরদিন রকিবের বাসায় আসতে গিয়ে খোঁজ করলো শাহিদ। না মহিলাটিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে খুঁজলো। না, কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রকিবের বাসায় গিয়ে প্রথমে মহিলাটির কথা জিজ্ঞাসা করলো রকিবকে। রকিব তুই চিনিস? 

২.
গল্প বলার নেশায় থাকা শাহিদ এতক্ষন টের পায়নি রকিবের মানসিকতা। প্রশ্ন করে তার দিকে তাকাতেই দেখলো রকিব দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে। কাছে এগিয়ে এসে তার হাত ধরলো শাহিদ। 
কি হয়েছে রকিব? চিনিস তুই ওনাকে? কি হল? কথা বলছিস না যে? 
রকিব কান্না জড়িত কন্ঠে বললো, বড় নিষ্ঠুর হয়ে গেছি রে...।

আমি তখন নতুন ভর্তি হয়েছি বিজ্ঞান কলেজে। গ্রাম থেকে এসেছি। আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। বাবাকে বলেছি আমি শহরেই পড়বো। গ্রামের কলেজে পড়লে ভালো কোন ক্যরিয়ার তৈরী হবে না। বাবাও চাইতেন আমার ক্যারিয়ার যাতে ভালো হয়। কিন্তু তিনি সামর্থের কথা চিন্তা করে আমাকে বলতেন মফস্বলের কলেজে পড়েও অনেকে মানুষ হয়েছে। বাবার সাথে অনেকটা জেদ করেই কলেজে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু বাবা যে আমাকে কিছু টাকা পাঠাবে আমার থাকা-খাওয়ার জন্য সেটাও নিয়মিত পাঠাতে পারতেন না। ভালো টিউশনিও পাচ্ছিলাম না। খুব কষ্টে যাচ্ছিল দিন। একদিন অর্থাভাবে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। সেদিন প্রায় ঠিক করে ফেললাম পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যাব। আল্লাহর উপর খুব রাগ হচ্ছিল। কত মানুষের কত টাকা। অল্প কিছু টাকার জন্য আমার পড়ালেখা হচ্ছে না। বাবা-মায়ের উপর রাগ করেও পারছি না। বয়সও তো কম ছিল। সব মিলিয়ে চাপ সহ্য করতে না পেরে চোখে পানি চলে আসছিল। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। 

এমন সময় কে যেন আমার পিঠে হাত রাখলো। আমি চমকে ফিরে তাকালাম। দেখলাম আমারই মত বয়স। হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি হয়েছে ভাই? কোন সমস্যা? প্রথম দেখাতেই আমার মনে হল এটা আমার আপনজন। কত দিনের পরিচয়। আমি আমার দুঃখের কথা বলতে গিয়েও আর বলতে চাই নি। বললাম, আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না। সে বললো আমার বাসা এখানেই। চল বাসায় চল। আমি কেন যেন সেই নিমন্ত্রন ফেলতে পারিনি। কেমন যাদুকরি কথা, সুন্দর হাসিমুখ, অপরিচিত মানুষকে আপন করে নেয়ার তীব্র ব্যকুলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি চললাম তার বাসায় তার সাথে। বিশাল বাসা। আলিশান অবস্থা। বাসায় আমাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে তার মাকে বললো, মা আমার এক বন্ধু এসেছে। খাবার দাও একসাথে খাব। সে জানতে চায় নি আমি ক্ষুদার্ত কি না। সম্ভবত দেখেই বুঝেছে আমি ক্ষুদার্ত ছিলাম। 

খাওয়া-দাওয়ার পর জানতে চাইলো আমার পরিচয়। আমি বললাম। সেও তার পরিচয় দিল। সে আরেকটি কলেজে পড়ে। আমার মতই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে। আমাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করতে আমি বৃত্তান্ত খুলে বললাম। আমাকে বসিয়ে রেখে বাসার ভেতরে গেল। কিছুক্ষণ পর এসেই তাড়াহুড়ো করে বললো, চল তোমার মেসে যাব। আমি বুঝতে পারিনি কি হতে যাচ্ছে। সে আর আমি আমার মেসে আসলাম। সে বললো তোমার জিনিস কোনগুলো? আমি আমার বেডিং তাকে দেখালাম। সে নিজহাতে সব গুছাতে লাগলো, আর বললো চল সব বেঁধে নাও এখন থেকে তুমি আমার সাথে থাকবে। আমি প্রতিবাদ করলাম, কিন্তু তার কড়া চোখ রাঙ্গানিতে কিছুই বলতে পারলাম না। এমন করে শাসন করলো যেন সে আমার বহুদিনের বন্ধু। অথচ তার সাথে পরিচয় মোটে কয়েক ঘন্টা। মেসে আমার থেকে পাওনা দুইহাজার টাকাও পরিশোধ করে আসলো। 

সেই থাকে তাদের বাসায় উঠে গেলাম। তখন বুঝতে পারলাম ও এমনই পরোপকারী। এলাকার সবাই তাকে এক নামে চিনে। সে ছাত্রদের ভালো উপদেশ দেয়। এলাকায় এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজের আয়োজন করে। আমার যাতে হাত খরচ চলে এজন্য সে একটা ভালো টিউশনির ব্যবস্থা করে দেয়। মোটকথা যেখানে আমার পড়াশোনা বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছিল সে সেখানে আমার সব সমস্যা দূর করার চেষ্টা করে। আকাশ কেন এত ভালো? এই প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছে খুব সোজা যারা আকাশের মাকে জানে। বিশাল হৃদয়ের মানুষ তিনি। আকাশের বাবার মৃত্যুর পর আর্থিক অবস্থায় কিছুটা সমস্যা হলেও সামলে নিয়েছেন তিনি। নিজেই পারিবারিক ব্যবসা দেখেন।

আকাশরা তিন ভাই। এর মধ্যে আকাশ ছিল সবার ছোট। আমার প্রায়ই মনে হত, আকাশ আমাকে বন্ধু বলে তার বাড়িতে তুলেছে। তার মধ্যে আমাকে নিয়ে কোন সমস্যা দেখিনি। কিন্তু তার ফ্যামিলির অন্যরা আমাকে কিভাবে দেখে? এইভেবে নিজের মধ্যে কুঁকড়ে যেতাম। আকাশদের বাসায় থাকা অপমান মনে হত। একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি আমার বাবা-মা। আমি তো ভীষণ অবাক। পরে জানতে পারি আকাশ আমার মায়ের মোবাইল নাম্বার তার মাকে দিয়েছে। সেই থেকে তিনিও আমার মাকে তাঁর বন্ধু বানিয়ে নিয়েছেন। তিনি আমার বাবা-মাকে একদিন দাওয়াত করলেন অথচ আমাকে জানালেন না সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। আমার মধ্যে থাকা সেই হীনমন্যতা কেটে গেল। 

আকাশ ইসলামের কথা বলতো। আল্লাহর উপর ভরসা রাখার কথা বলতো। আমাকে প্রায়ই বলতো চল, নামাজ পড়ে আসি। একদিনের ঘটনা। আমি আর সে একই রুমেই ঘুমাতাম। সকালে উঠত বলে সে একটু আগেই ঘুমাত। একদিন গভীর রাতে আমি হঠাৎ জেগে যাই। শুনতে পাই কে যেন কাঁদছে। কান খাড়া করে থাকলাম। দেখলাম সে এলাকার কিছু ছেলের কথা বলছে যাদেরকে সবাই খারাপ ছেলে হিসেবেই জানে। সে তাদের নাম ধরে দোয়া করছে তারা যেন ভালো হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে তাদের হিদায়াতের জন্য কাঁদছে সে। অবাক হলাম। আর সেই সাথে বুঝলাম, আকাশরা সাধারণ কোন মানুষ নয়। তারা জান্নাতি মানুষ। 

এইচ এস সি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। একদিন পরীক্ষা দিয়ে ফিরে এসে দেখি আকাশদের বাড়িতে থমথমে নীরবতা। দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করতেই বললো ছোট ভাইয়ারে একটা সাদা মাইক্রোবাসে করে আসা লোকেরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। সবাই থানায় খোঁজাখুঁজি করছে। আশেপাশের কোন থানাই স্বীকার করেনি তারা নিয়েছে। ডিবি অফিসে যোগাযোগ করেও কোন হদীস পাওয়া যায়নি। সেদিনই খালাম্মা আমাকে বললেন বাবা তুমি এখানে থাকলে বিপদে পড়বে। তুমি তোমার কোন বন্ধুর সাথে আপাতত থাক। তোমার কিছু হলে তোমার মাকে আমি কি জবাব দেব? আমার পরীক্ষার কথা চিন্তা করে আমি প্রয়োজনীয় কিছু বই-পত্র আর জামাকাপড় নিয়ে বের হলাম। খালাম্মা আমার হাতে বিশ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন, যাতে আমার থাকা খাওয়ার অসুবিধা না হয়। আমি নিতে না চাইলে কড়া ধমক দেন।

তখন সারাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, আকাশও সেই আন্দোলনে যোগ দেয়। স্বৈরাচারী সরকারের নাগপাশ ছিন্ন করে এদেশকে মুক্ত করার কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় আকাশ। মিছিল-মিটিং, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরকারের অন্যায় আচরনের প্রতিবাদ সে ছোট বয়সেই করা শুরু করেছে। তার মত মেধাবী ছেলে সহজেই নজর কেড়েছে পুলিশের। তাই তাকে তুলে নিয়ে গেল। আকাশের মা দিনের পর দিন থানায় থানায় ঘুরেছেন। সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কিছুতেই কিছু হয়নি। একদিন জানতে পারলেন ডিবি অফিসে আছে। দু’দিন দু’রাত বসে ছিলেন ডিবি অফিসের সামনে রাস্তায়। ছেলের দেখা পেলেন না। সারাজীবন কারো কাছে ছোট না হওয়া আকাশের মা গেলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতার বাসায়। ভিখারির মত বসে ভিক্ষা চাইলেন ছেলেকে। ঘৃণাভরে তাড়িয়ে দিলেন। 

এরপর সারাদেশের কোথাও লাশ পাওয়া গেলেই ছুটে যান আকাশের মা। এক পর্যায়ে আকাশের মা বুঝতে পারেন আকাশ আর নেই। এবার তিনি পুলিশের লোকদের পিছে পিছে ঘোরেন যাতে তার লাশটা কোথায় এটা জানায়। পুলিশের বড় অফিসারদের কাছে গিয়ে বলতে থাকেন ওর কবরটা দেখিয়ে দেন, যত টাকা লাগে দেব। শুধু ওর কবরটা দেখিয়ে দেন। নিয়মিত পুলিশের অফিসে যাওয়ায় পুলিশরা বিরক্ত হয়ে উঠে। একদিন তাকেও আটক করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। মাসখানেক পর জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু তারপরও তিনি আকাশের খোঁজ বন্ধ করেন না। এভাবে এক বছর পার হয়ে যায়। একদিন এক পুলিশ অফিসার একটা পেপার ওয়েট ছুঁড়ে মারে আকাশের মায়ের কপালে। কপাট কেটে যায় তাঁর। আকাশ বলে চিৎকার করে পড়ে যান থানার সামনে। চিকিৎসা হয়। সুস্থও হন। কিন্তু আকাশের শোক আর মাথায় আঘাত দু’টো মিলে তিনি একটু অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়েন। 

আকাশের কোন বন্ধু-বান্ধব পেলেই জানতে চান আকাশ কবে ফিরবে? আকাশ কেন ফিরে না? আকাশের জন্য তিনি এখন দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তায়। আমিও বহুদিন তাকে ঘরে এনে দিয়েছি। আমাকে দেখলেই বেশী অস্থির হয়ে পড়তেন। তিনি মনে করতেন আমার সাথেই সে আছে। আমাকে দেখলেই জিজ্ঞাসা করতেন আমিও কিছু না কিছু বুঝিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যেতাম। একদিন আমার ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। তিনি আমার হাত জড়িয়ে ধরে রাখছেন। আমি যাতে আকাশকে এখনই নিয়ে আসি এসব বলছেন। সেদিন আমার বের হতে দেরী হয়েছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার বাকী ছিল পনের মিনিট। আমি ওনার হাত হতে বাঁচার জন্য খুব কড়া করে ওনাকে একটা ধমক দেই। তিনি ভীষন শক খেলেন। আমার হাত ছেড়ে দিলেন। সেই থেকে আমাকে আর কোন দিন ডিস্টার্ব করেন নি। মাঝে মাঝে ভাবি, আমি মানুষ না, কখনোই ছিলাম না। পশু না হলে কি সেদিন খালাম্মাকে ধমক দিতে পারতাম! 

৩. 
শাহিদ ও রকিব এখন আকাশের মায়ের পাশে। আজ তিনি অসুস্থ। ১০২ ডিগ্রী জ্বর। রকিবকে দেখেই উঠে বসলেন! এতদিনে বুঝি আসার সময় হল মায়ের কাছে! শাহিদের দিকে তাকিয়ে বললেন আমার আকাশটা ঠিক এর মত না? আকাশ আমাকে ফাঁকি দেয়ার জন্য ওকে পাঠিয়েছে। আচ্ছা বলো, আমি কি আকাশকে আদর করতাম না? কেন সে আসে না? কতদিন তাকে খাওয়াই না। বলতে বলতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন, আমার আকাশের বন্ধুরা এসেছে। তাদের খাওয়াতে হবে না! হই চই করে রান্না-বান্না শুরু করলেন। 

আচ্ছা রকিব, আকাশরা যে জন্য প্রাণ দিয়েছে, গুম হয়েছে, সেই স্বৈরাচারতো এখনো আছে। তাদের প্রাণ দেয়া তো বৃথা গেল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রকিব বললো আকাশরা ছিল আমার, তোমার, সবার। সবাইকে মুক্ত করতে গিয়ে তারা মুক্ত হয়ে গেল। মুক্তি পাইনি আমরা। আকাশরা সবার জন্য হলেও আমরা কেউ আকাশদের জন্য হতে পারিনি। আমাদের মুক্তি নেই...

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন