তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের জন্য ১৯৭১ সালের পরে যে তত্ত্বকথা ও যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছিল তা ছিল দু’অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দৃশ্যমান বৈষম্য ও বিভিন্নতা। পূর্ব পাকিস্তানকে দেখানো হয় পশ্চিম পাকিস্তানী জনগোষ্ঠীর শোষণের ক্ষেত্র হিসেবে।
আমরা যে পরিসংখ্যান জানি, তা মূলত ষাট-এর দশকের শেষ দিকে প্রাপ্ত কিছু সংখ্যা ও সংখ্যাতত্ত্ব। এর মধ্যে উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের তথা কেন্দ্রীয় সুপিরিয়ার সার্ভিস (সিএসএস) ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে কম থাকা। উপস্থাপিত পরিসংখ্যানে এটাও দেখানো হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় উন্নয়ন খাতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কম অর্থ বরাদ্দ করা। যদিও উপস্থাপিত ঐ পরিসংখ্যান অসত্য ছিলনা; কিন্তু জনগণের সামনে যে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং প্রচারণা সেই পরিসংখ্যান নিয়ে চালানো হয়েছে, তা মোটেই সত্যি ও বাস্তব নির্ভর ছিল না। ঐসব পরিসংখ্যানকেন্দ্রিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও প্রচারণা সর্বোতভাবে সত্যি ছিল না; হয়তো কিয়দাংশ ছিল ব্যতিক্রম এবং তাও ছিল অর্ধ সত্য।
পুরো পরিসংখ্যান সহজ হয়ে যাবে যদি আপনি কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করেন। তখন আপনার দিব্যচোখে যে বৈষম্য দেখছেন তা বৈষম্য থাকবে না। অনেকক্ষেত্রে উদারতা মনে হবে।
তৎকালীন পাকিস্তানে প্রদেশ ছিল পাঁচটি। বরাদ্দ হয়েছে প্রদেশভিত্তিক। প্রদেশভিত্তিক উন্নয়ন বরাদ্দ যদি আপনি ধরেন তাহলে আপনি আপনি মোট বরাদ্দকৃত অর্থকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করুন। তাহলে দেখা যাবে বেশী বরাদ্দ ছিল পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের জন্য।
বছর
|
পশ্চিম
পাকিস্তানের প্রাক্কলিন ব্যয়
(রুপী কোটিতে) |
পূর্ব
পাকিস্তানের প্রাক্কলিন ব্যয়
(রুপী কোটিতে) |
সমান ভাগ হলে বাংলাদেশ পাবার কথা
|
১৯৫০-৫৫
|
১১২৯
|
৫২৪
|
৩৩০
|
১৯৫৫-৬০
|
১৬৫৫
|
৫২৪
|
৪৩৫
|
১৯৬০-৬৫
|
৩৩৫৫
|
১৪০৪
|
৯৫১
|
১৯৬৫-৭০
|
৫১৯৫
|
২১৪১
|
১৪৬৭
|
মোট
|
১১৩৩৪
|
৪৫৯৩
|
৩১৮৫
|
টেবিলঃ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে অর্থনৈতিক সমীক্ষা [১]
এখানে আমি বলতে চাই না বাংলাদেশের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। সাধারণত বরাদ্দ দেয়া হয় প্রয়োজন অনুসারে। পাকিস্তানের এই অংশ আকারে ছোট হলেও এর এখানে মানুষ ছিল বেশী। পাকিস্তানের একটি প্রদেশ বাংলাদেশে ছিল অধিকাংশ মানুষ। সেই হিসেবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এখানে বরাদ্দ কিছুটা বেশী লাগবে এটাই স্বাভাবিক।
বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমান হতে হবে এই ধারণা অবান্তর। বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায় কি সমান বরাদ্দ হয়? বাংলাদেশের প্রতিটা বিভাগে কি সমান বরাদ্দ হয়? আবার কিছু কিছু বরাদ্দ আছে দূর্যোগকালীন। দূর্যোগ হলে বরাদ্দ হয়, খরচ হয়। আবার দূর্যোগ না হলে খরচ হয় না। এভাবেই চলে। এই নিয়ে প্রতিবেদন দাঁড় করানো অন্যায়, অযৌক্তিক।
দ্বিতিয়ত
যে কোন দেশের উন্নয়ন হয় রাজধানী কেন্দ্রীক। একটা পরিসংখ্যান দাঁড় করানো হয় পাট, পাটজাতীয় দ্রব্য ও অন্যান্য খাদ্যশস্য বেশী উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে। কিন্তু উন্নয়ন বেশী হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। মূল কথা হল সারা পশ্চিম পাকিস্তানজুড়ে উন্নয়ন বেশী হয় নি। উন্নয়ন হয়েছে রাজধানী কেন্দ্রীক। এটা খুবই স্বাভাবিক। এটাকে আপনি যদি বৈষম্য বলেন তাহলে বলতে হয় বর্তমান বাংলাদেশে এর চাইতেও বেশী বৈষম্য হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যে কোন উৎপাদনের দিক দিয়ে (কাঁচামাল ও শিল্পজাত) সবচেয়ে পেছনে থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের সব উন্নয়ন হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীক।
কেউ যদি বলে আমাদের প্রধান ফসল ধান সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয় দিনাজপুরে। তাই ঢাকার মত সকল উন্নয়ন দিনাজপুরেও করতে হবে। বড় বড় হোটেল করতে হবে। পিকনিক স্পট করতে হবে। ফ্লাইওভার করতে হবে। ঢাকার মত সমান করে উন্নয়ন বরাদ্দ দিতে হবে তাহলে এটাকে আপনি পাগলের প্রলাপ বলবেন নিশ্চয়ই। এটাকে যদি পাগলের প্রলাপ বলেন তবে কেন আপনি চান পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানে সমান বরাদ্দ দিতে হবে?
বাংলাদেশে সবচেয়ে সফল শিল্প ‘তৈরি পোশাক শিল্প’। এতে মানুষের কর্মসংস্থানও হয় অনেক বেশি। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গার্মেন্টস কারখানা ঢাকা বিভাগে যখন ছিল ১৫ হাজারের বেশি, তখন চট্টগ্রাম বিভাগে মাত্র এক হাজার আর রংপুর বিভাগে মাত্র তিনটি।[২] এখন এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেউ যদি বলে ঢাকা বিভাগ অন্যান্য বিভাগের সাথে বৈষম্য করেছে তা রীতিমত হাস্যকর। কারণ বাংলাদেশের যেখানে এই শিল্প কারখানা স্থাপন করা লাভজনক সেখানেই প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে নগরায়ন অনেক কম হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায়। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সবদিক দিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে। এর নানান কারণ রয়েছে। শিক্ষিতের হার, নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, ব্যবসা বাণিজ্য জন্য আগে থেকেই বিখ্যাত, যোগাযোগের সুবিধা, জলবায়ু ইত্যাদি অনেক কিছুই অবদান রেখেছে। এই ব্যাপারটিকে সামনে এনে কেউ যদি বলে উত্তরবঙ্গের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে তবে তা ভুল হবে।
তৃতীয়ত
অনেকে বলে থাকেন এদেশে বেশী মানুষের বাস ছিল। এদেশে পশ্চিম পাকিস্তানের চাইতেও বেশি বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল। এটা নিরঙ্কুশ নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন প্রয়োজন হতে পারে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি ক্ষেত্রে বরাদ্দ আসলে জনসংখ্যার উপরে নির্ভর করে না। বরাদ্দ নির্ভর করে প্রয়োজনের উপরে। ধরুন ঢাকা- চট্টগ্রামের রাস্তা সংস্কার করতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ নির্ভর করবে না এ পথ দিয়ে কত মানুষ যাতায়াত করবে বরং নির্ভর করবে এর দূরত্ব কত? পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে সাতগুণ বড়। সেক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেখানে খরচ বেশি হবে এটা স্বাভাবিক। এভাবে শুধু যোগাযোগ নয় অবকাঠামোসহ প্রায় সকল উন্নয়ন বরাদ্দের জন্য জনসংখ্যা মূল ফ্যাক্টর নয়।
চতুর্থত
আরেক সমস্যা হল আমরা মনে করে নিয়েছি পাকিস্তান সৃষ্টির সময় পূর্ব ও পশ্চিমের জীবনযাত্রা অবকাঠামো সমান ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সনে পাকিস্তান হবার সময় পূর্ব পাকিস্তান যা ব্রিটিশ আমলে পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল এবং যা তদানীন্তন ভারতের যে কোন অঞ্চলের চাইতে ছিল পশ্চাদপদ। পূর্ব পাকিস্তানের নতুন রাজধানী ঢাকার সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী, লাহোর ও অন্যান্য শহরের একটি তুলনা করতে গিয়ে এক সময়ের পূর্ব বাংলা সম্পর্কে অভিজ্ঞ সাংবাদিক লেখক এইচ.এম আব্বাসী লিখেন: ‘ঢাকা যখন রাজধানীতে পরিণত হয় তখন সেখানে মুসলমান কিংবা হিন্দু মালিকানায় একটি সংবাদপত্রও প্রকাশিত হতো না। মাত্র ৫ ওয়াটের একটি রেডিও ষ্টেশন ছিল এবং বেশ কয়েক বছর সময় লাগে সেখান থেকে বাংলা দৈনিক আজাদ ও ইংরেজী দৈনিক মনিং নিউজ প্রকাশনা শুরু হতে। আমার একটা বড় দায়িত্ব ছিল পত্রিকার ছবি ব্লক করে করাচী থেকে বিমান যোগে তা ঢাকায় প্রেরণ করা যা নতুন ইংরেজী দৈনিক অবজারভার-এ প্রকাশিত হতো অর্থাৎ ঢাকায় ব্লক বানানোর কোন মেশিনও ছিল না।[৩]
তারপরেও পূর্ব পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগেনি, এটা অবিশ্বাস্যকর। এটার একটা বড় কারণ হতে পারে পাকিস্তান শাসকরা এই প্রদেশটিকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান তার জীবন শুরু করে বলা যায় সম্পূর্ণ শূন্য থেকে, অর্থনৈতিক ও শিল্পক্ষেত্রে প্রদেশটির কোনই অবকাঠামো ছিল না। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান ছিল মোটামোটি শিল্পসমৃদ্ধ এবং ছিল সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক অবকাঠামো। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে সর্ব বিবেচনায় পশ্চিম পাকিস্তান ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় অনেক অগ্রসর।’
১৯৪৭ সালের বাস্তব চিত্র হল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের উভয় অংশের জনগনই ছিল গরীব। বৃটিশ যুগের পূর্ব বাংলায় বসতি স্থাপনকারীদের জীবনের মান ছিল অতি নিচে। এর সুস্পষ্ট কারণ ছিল পূর্ব বাংলা বৃটিশদের কলোনী হিসেবে শোষিত ও নিগৃহীত হয়েছে ১৯০ বছর তথা ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তান অঞ্চলে বৃটিশদের কলোনী ও শোষণের সময়কাল ছিল ৯০ বছর। প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৮৫৮ সালে বৃটিশ রাণী ভিক্টোরিয়া পুরো ভারতের কর্তৃত্ব গ্রহণের পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। এটা মোটেই অবিশ্বাস্য নয় যে, বৃটিশদের শাসনামলে পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অনেক বেশী শোষিত ও নিগৃহীত হয়েছিল। বিদেশী শাসন-শোষণ ছাড়াও পূর্ব বাংলার জনসাধারণ তাদের স্বদেশীদের দ্বারাও বৃটিশ শোষণ থেকে কম নির্যাতিত ও শোষিত হয়নি। জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও ভূমির প্রায় নিরঙ্কুশ মালিকানা ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দুদের। ১৯৪৭ সাল নাগাদ তারা ৮০ শতাংশ ভূমির মালিক ছিল।[৪]
পঞ্চমত
কথিত বৈষম্যের প্রমাণ হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানীদের কম প্রতিনিধিত্বের অভিযোগ একটি জনপ্রিয় শ্লোগান। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩ লক্ষ সদস্যের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার। অথচ সংখ্যায় বাঙালি ছিল বেশি। এই সংখ্যা দেশের দুই অংশের মধ্যে বৈষম্য চিত্রিত করে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবানুগভাবে বিষয়টির মূল্যায়ন করতে হলে কেহই ১৯৪৭ সালে সেনাবাহিনীতে বাংলাভাষী মুসলমান সৈনিকদের সংখ্যা কত ছিল এই হিসাবের দিকে অবশ্যই দৃষ্টিপাত করবে। পাকিস্তানের শুরুতে ফেডারেল সেনাবাহিনীতে বাংলাভাষী মুসলমান সৈনিকের সংখ্যা ছিল শ’কয়েক বা কোন অবস্থাতেই এক হাজারের বেশী নয়।
সেনাবাহিনীতে বাংলাভাষীদের সংখ্যা অতি নগণ্য হওয়ার ঐতিহাসিক কার্যকরণ রয়েছে। বৃটিশ আমলে বাংলাভাষী মুসলমানদেরকে সেনাবাহিনীতে নেয়া হতোনা। আবার বাঙালি মুসলমানরাও বৃটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে খুব একটা যেতোনা। মূল কারণ হল প্রাকৃতিক কারণে নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের মানুষগণ যোদ্ধা হয় না। সাধারণত যোদ্ধা হয় রুক্ষ অঞ্চলের মানুষগণ। সেই হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চলের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে যোদ্ধা জাতি। আগে থেকেই সেনাবাহিনীতে তাদের উপস্থিতি ছিল বেশি।
সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের এমন দূরাবস্থার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাঙালি তথা বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে সেনা সার্ভিসে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য অনুরোধ জানান। পাকিস্তানের ২৩ বছরে এক হাজার বাঙালি থেকে সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজার-এ, যার বৃদ্ধি সূচক হচ্ছে চার হাজার শতাংশ। এই তুলনায় সেনাবাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির হার ছিল অনেক কম। ঐ সময়ে ৫০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা সদস্য বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭১ সনে দাঁড়ায় ২,৬০,০০০ যার বৃদ্ধিসূচক হচ্ছে ১২০০ শতাংশ। অর্থাৎ তুলনামূলক বিবেচনায় সেনাবাহিনীতে অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ২৮০০ শতাংশ বেশী।
১৯৪৮ সালের হিসাব মতে সেনাবাহিনীতে চাকরীর জন্যে পশ্চিম পাকিস্তানী প্রার্থী ছিল ২৭০৮ জন; আর পূর্ব পাকিস্তানের আবেদনকারী প্রার্থী ছিল মাত্র ৮৭ জন; অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানী প্রার্থী ছিল ৩০০ ভাগ বেশী। ১৯৫১ সালে সেনাবাহিনীতে চাকুরী প্রার্থী পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা ছিল ১৩৪ আর পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যা ছিল ১০০৮ জন। ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা একটু বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৬৫ জনে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সংখ্যা ছিল ২০০ গুণ বেশী অর্থাৎ ৩২০৪ জন। আবেদনপত্র দাখিল কিংবা সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য কিংবা ডিসক্রিমিনেশান থাকার গালগল্প হয়তো কেউ দাঁড় করাবেন, যা কিছুতেই প্রমাণযোগ্য নয়।[৫]
এটা অবশ্যই সবার জানার কথা যে সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে দরকার কঠোর ও অব্যাহত প্রশিক্ষণ যা দিন কয়েক এবং মাস কয়েকের ব্যাপার নয়। পৃথিবীর কোন দেশের পক্ষেই জেনারেল এর চাইতে অনেক নিচের একজন সেনা অফিসারকেও ২৫ বছরের কমে তৈরী করা সম্ভব নয়। ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের দুই জন অফিসারের নাম উল্লেখ করার মত হয়ে উঠে এর একজন ছিলেন কর্ণেল ওসমানী এবং আর একজন ছিলেন মেজর গনি। অথচ ঐ সময়ের মধ্যে পাঞ্জাব ও পাঠানদের মধ্য থেকে বহু সৈনিক জেনারেল পদে পর্যন্ত উন্নীত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি পদে কর্মরত থাকাকালে আইয়ুব খান ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জনেচ্ছু ছাত্রদের এক সমাবেশে তাদেরকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হবার আহবান জানান। কিন্তু তাদের নিকট থেকে তেমন উৎসাহব্যাঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়নি। এর পরের দুই বছরের পরিসংখ্যানে তা স্পষ্ট। ১৯৫৬ সালে সেনাবাহিনীর অফিসার পদে আবেদনকৃতদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছিল মাত্র ২২ জন; অথচ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছিল ১১০ জন। ১৯৫৭ সনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আবেদন করার সংখ্যা ৮০ শতাংশ উন্নীত হয়ে দাঁড়ায় ৩৯ জনে, অথচ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আবেদনকারীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ থেকে ২৯৪-তে। [৬]
ষষ্ঠত
সরকারি চাকুরি তথা কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশ-এর সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বের চাইতে অনেক কম। এর পাশাপাশি আর একটি বাস্তবতা ছিল পাঞ্জাবী নয়, পশ্চিম পাকিস্তানীদের এমন প্রতিনিধিত্বের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা তথা বাঙালি, সিন্ধী, পাঠান ও বেলুচীদের ঐতিহাসিক অনগ্রসরতারই ফল। পাঞ্জাবে বসতি গড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম মুহাজিররা ছিল পূর্ব বাংলা, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনগোষ্ঠীর চাইতে পড়ালেখায় অনেক অগ্রসর। শিক্ষা-দীক্ষায় শেষোক্ত জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক অনগ্রসতার কারণ ছিল অর্থনৈতিক এবং কিছুটা সামাজিক। বস্তুতঃ পূর্ব বাংলা, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের মুসলমানরা উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে। কিন্তু পাঞ্জাব ও অন্যান্য অঞ্চলের জনগণ আধুনিক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের বলা যায় পর পরই। অর্থাৎ তারা পাকিস্তানের অপরাপর অঞ্চলের মুসলমানদের চাইতে শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল ৭০ থেকে ৮০ বছরের অগ্রে। এর প্রধান কারণ ছিল উনবিংশ শতাব্দীর ৭০ এর দশকে স্যার সৈয়দ আহমেদেরর নেতৃত্বে আলীগড়ে প্রতিষ্ঠিত এঙ্গলো মহামেডান কলেজ ভারতের বধিষ্ণু অঞ্চলের মুসলমানদেরকে উচ্চ শিক্ষায় আকৃষ্ট করে তোলে। পাশাপাশি লাহোর সরকারী কলেজ এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বহু আগে। ১৮৫৭ সালে স্থাপিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেগুলোতে মুসলমান ছাত্রের সংখ্যা ছিল অনুল্লেখ্য; এমনকি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও মুসলিম ছাত্র ও শিক্ষকের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা কয়েকজন। হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষকরা ছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে কেবল ১৯৪৭ সালের পর, যখন পূর্ব বাংলার মুসলমানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও শিক্ষকতার ফুরসত পায়। সত্যিকার অর্থে শিক্ষা-দীক্ষায় বাংলার মুসলমানদের অনগ্রসরতার কারণেই বৃটিশ যুগের ভারতীয় সিভিল সার্ভিস তথা আইসিএস-এ কোন বাঙালি মুসলমানের ঢোকার যোগ্যতা ছিলনা; যদিও উক্ত সার্ভিস ১৮৫৩ সালের অধ্যাদেশ বলে ১৮৫৪ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল।[৭] ফলে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের প্রশাসন পায় মাত্র ১০০ জন প্রাক্তন আইসিএস অফিসার আর ভারত পায় ৫০০ জন। প্রাপ্ত ১০০ জনের মধ্যে একজনও বাঙালি কিংবা পাকিস্তানের অন্যান্য অনগ্রসর এলাকার ছিল না।
ঐ ১০০ জনের মধ্যে কেউ কেউ ছিল বৃটিশ বংশোদ্ভুত মুসলমান, কেউ ছিল শিক্ষায় অগ্রসর ভারতের অপরাপর এলাকার মুসলিম জনগোষ্ঠীভূক্ত। সঙ্গত কারণেই তারা ছিল পাঞ্জাব বা ইউপি’র মুসলমান। পাঞ্জাব ও ইউপি’র মুসলমানদের অগ্রসরতা আর পূর্ব বাংলার মুসলমানদের অনগ্রসরতার আরো প্রমাণ আছে। ১৮৮৬ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় আইসিএস অফিসারদের মধ্যে পাঞ্জাবের ছিল তিন জন মুসলমান, শিখ ছিল দুই জন এবং হিন্দু ছিলনা একজনও; এমনকি মুসলমান সংখ্যালঘিষ্ঠ এলাকা অযোধ্যার ৫ জন মুসলমান ছিল আইসিএস আর তার বিপরীতে ছিল ছয় জন হিন্দু। অথচ বাংলা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও মাত্র দুই জন মুসলমান ছিল আইসিএস, আর ৯ জন ছিল হিন্দু। [৮]
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এক সময় আইসিএস সার্ভিসে শুধু মনোনীত একজন বাঙালি মুসলমান জনাব নুরুন্নবী চৌধুরীকে পাওয়া যায়। ফলে পাক প্রশাসনে উদ্ভূত বিশাল শুন্যতা পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের অফিসারদেরকে দিয়ে পুরণ করতে হয়েছে। তবে প্রতিযোগিতা নয় ১৯৪৯-৫০ সালে প্রবর্তিত ৪০ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সার্ভিসের পূর্ব পাকিস্তানীদের স্থান লাভ শুরু হয়।[৯] সেনাবাহিনীতেও একইভাবে পাকিস্তানের অপরাপর অঞ্চলের চাইতে পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক সার্ভিসে নিয়োগ দেয়ার জন্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে কাকেও পাওয়া যায়নি; অথচ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আট জনকে পাওয়া যায়।
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাওয়া যায় দুই জনকে, একজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাওয়া যায় ১৬ জনকে (যার মধ্যে ৭ জন ছিল পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট এবং ১০ জন ছিল ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৬ বছরের ব্যবধানে ১৯৬৪ সালে সিএসএস-এ পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ জন (১৫ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) আর পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জন (১৩ জন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের)। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের তুলনায় ১০ গুণ।[১০]
পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এত দ্রুত হারে ঘটেছিল যে তারা পশ্চিম পাকিস্তানীদের সামগ্রিক প্রতিনিধিত্বের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যায়। যার দরুণ ১৯৭০-৭১ সালে বহু বাঙালি অফিসারই পাকিস্তান প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের চীফ সেক্রেটারী ছিল সিএসএস ক্যাডারের একজন বাঙালি। যে হারে পাকিস্তান প্রশাসনে পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, আরো ১০ বা ২০ বছরের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যা অনুপাতে যথাযথ পর্যায়ে উপনীত হতো।
সপ্তমত
১৯৭০ সনে পূর্ব পাকিস্তানে যে প্রাথমিক স্কুল ছিল ২৮৩০০ আর পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ৩৯৪১৮।[১১] বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষায় পিছিয়ে রাখার জন্যই এই বৈষম্য। পূর্ব পাকিস্তানে মানুষ বেশি স্কুলও থাকার কথা বেশি। এখানে প্রচারণা এমনভাবে চালানো হয় যাতে পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে সাতগুন বৃহৎ পশ্চিম পাকিস্তানের বাস্তবতা অসচেতন পাঠকের নিকট চাপা থাকে। মূলত শিশুদের জন্য প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা বিস্তারের শুরু থেকেই প্রতিটি মহল্লায় গড়ে উঠে এবং তা প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রতিটি শিশুর পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে পারে এমন দূরত্বে। ফলে প্রতি ৪/৫ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে সন্নিহিত এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠার পর পরই। শিক্ষাবীদদের সংজ্ঞায় যাকে বলা হয় স্কুল মেপিং; এই বাস্তবতায় সাতগুণ বড় পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাইমারী স্কুলের সংখ্যা বেশী হবারই কথা। সেই হিসেবে বলা যায় পশ্চিম পাকিস্তানে আরো বেশি স্কুল হওয়া উচিত ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। পার্থক্য খুব একটা বেশি ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানে ৪৪৭২ এবং পূর্ব পাকিস্তানে ৩৯৬৪।[১১]
অষ্টমত
সবচেয়ে বড় কথা হল, পাকিস্তান যদি জাতিগতভাবে বাঙ্গালীদের ক্ষমতা থেকে দূরে অথবা শোষন করার চিন্তা করতো তবে তারা জনসংখ্যার অনুপাতে সংসদীয় আসন বিন্যাস করতো না। পাকিস্তানের মোট তিনশত আসনের মধ্যে ১৬২ আসন পূর্ব পাকিস্তানে দেয়া হত না। যার কারণে শুধু একটি প্রদেশের ভোট দিয়েই টোটাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্বৈরাচারী স্বৈরাচারীই। স্বৈরাচারী আইয়ুব খান শুধু পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর ছিলেন না। পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যও তিনি স্বৈরাচার ছিলেন। এদেশের মানুষ যেমন তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও তেমনি তার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছে। স্বৈরাচারী আইয়ুবের শাসনকে দিয়ে টোটাল পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলার যৌক্তিকতা অন্তত এদেশের মানুষের কম। কারণ গণতান্ত্রিক পাকিস্তানে শাসন বেশী করেছে বাঙ্গালীরাই। এমনকি ভাষা আন্দোলনের সময়ও পাকিস্তানের শাসক ছিল বাঙ্গালীরাই। [১২]
নবমত
বৈষম্যতত্ত্বের উদ্ভব ঘটানো হয়, পাকিস্তানে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের প্রকৃত যে পরিসংখ্যান (যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হয়) তাতে উন্নয়নের যে গতি ছিল তা অব্যাহত থাকলে বৈষম্য সত্ত্বর বিদূরিত হয়ে দুই অংশের অর্থনৈতিক অবস্থা সমান রূপই পরিগ্রহ করতো। সে হিসেবে পাকিস্তান অবিচ্ছিন্ন থাকলে এত দিনে শুধু যে পুরো মুসলিম উম্মার নেতৃত্বেই দেশটি অভিষিক্ত হতো তাই নয়; বিশ্বের অন্যতম বৃহৎশক্তি হিসেবেও পাকিস্তান আবির্ভূত হতো। পাকিস্তানের তেমন সম্ভাবনাই ছিল ভারত ও ইহুদী চক্রের (যারা পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার কাজে সর্বমূখী মদদ যুগিয়েছিল) চক্ষুশুল। তারা দ্রুত গড়ে উঠা মুসলিম শক্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য সকল ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় লিপ্ত হয়।
তথ্যসূত্র:
১। পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত চতুর্থ মেয়াদী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য উপদেষ্টা প্যানেলের রিপোর্ট। ২। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, জেলা ভিত্তিক প্রকাশনা ২০১২
৩। এইচ,এম, আব্বাসী (অনলুকার-এ জার্নালিষ্ট), ওভার এ কাপ অব টী, মাশহুর অফসেট প্রেস, করাচী, ১৯৭৪ পৃ : ৪৬২
৪। এইচ,এম, আব্বাসী (অনলুকার-এ জার্নালিষ্ট), ওভার এ কাপ অব টী, মাশহুর অফসেট প্রেস, করাচী, ১৯৭৪ পৃ: ৪৬১। পোট্রেট অব এ মার্টায়ার জাইকো পাবলিশিং হাউস, বোম্বে, ১৯৬৯ বইতে বি. মাধোক তা উদ্ধৃত করেন।
৫। এম, টি, হোসেন, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের ইতিহাস, পৃ: ১১
৬। এইচ,এ, রিজভী, মিলিটারী এন্ড পলিটিক্স ইন পাকিস্তান, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, লাহোর (পাকিস্তান), ১৯৭৬ (দ্বিতীয় সংস্করণ) পৃ: ১৮১-৮২
৭। আলী আহমেদ রোল অব হায়ার সিভিল সার্ভিস ইন পাকিস্তান, লাহোর, পৃ: ৩৫
৮। আলী আহমেদ রোল অব হায়ার সিভিল সার্ভিস ইন পাকিস্তান, লাহোর, পৃ: ৪৫
৯। আর, সায়মন্ডস, দি বৃটিশ এন্ড দেয়ার সাকসেসারস ফেবার এন্ড ফেবার, লন্ডন ১৯৬৬ পৃ: ৮৮-৯০
১০। রাল্ফ ব্রেনবান্তি (ইডি) দি ব্যুরোক্রেসী অব পাকিস্তান, এশিয়ান ব্যুরোক্রেটিক সিষ্টেম ইমার্জেন্ট ফ্রম বৃটিশ কলোনিয়াল ট্রাডিশান, ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় কমনওয়েলথ ষ্টাডি সেন্টার, ইউএসএ, ১৯৬৬ পৃ: ২৬৬-৬৭ এবং ২৭০-৭১
১১। যুদ্ধদলিল, বাংলাদেশ কেন? অনুবাদক: মাহিন বারী
১২। ভাষা আন্দোলন নাকি সংকীর্ণতা?