৩০ মার্চ, ২০২২

দুর্নীতির মহোৎসব


বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির মাত্রা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। এটি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ সমাজে বা রাষ্ট্রে লক্ষ করা যাচ্ছে না। কারণ, সরকার টিকে থাকতে রাষ্ট্রের প্রায় সব অঙ্গকেই সুবিধামতো ব্যবহারের চেষ্টা করায় এমন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গে দায়িত্বে নিয়োজিত অনেক কর্তাব্যক্তি সরকারের ছত্রছায়ায় দুর্নীতির মহাসমুদ্রে প্রবেশ করতেও ভয় পাচ্ছেন না। যারা দুর্নীতি করতে চান না, তাদের ওই প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায় পর্যন্তদুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। দিন দিন দুর্নীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির পাগলা ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই।

দুর্বল গণতান্ত্রিক সমাজে সরকার এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে চায় না। এমনকি জনগণও জবাব চাইতে সাহস করে না, এ ধরনের পরিবেশে নৈতিকতার কোনো বালাই থাকে না। ফলে রাষ্ট্রের সম্পদ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী লুণ্ঠনে প্রয়াসী হয়। দুর্নীতি দেশের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন ও সমাজ পরিবর্তনে ভয়াবহ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতির কারণে অনেক ব্যক্তি তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, যা সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের উন্নয়নসূচক নিচের দিকে নামতে থাকে। দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার দৌরাত্ম্য এতই বেশি যে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারো নেই। দুর্নীতির সর্বগ্রাসী রূপ সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলছে। রাষ্ট্রের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ সব জায়গায় দুর্নীতির শেকড় এতটাই গভীরে প্রবেশ করেছে যে, ইচ্ছা করলেই এর থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই। যার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকেও হতাশ হয়ে বলতে হয়, দুর্নীতি রোধ করা বড় কঠিন কাজ। গত ছয়বছরে আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির কিছু খন্ডচিত্র তুলে ধরা হলো 

স্থানীয় সরকারের পদে পদে অনিয়ম-দুর্নীতি
স্থানীয় সরকার খাতে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি৷ প্রকল্প ও বিশেষ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে ঘুষ দিতে হয় প্রকল্পভেদে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ পেতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা জোটের নেতা-কর্মীদের বরাদ্দের ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্তঘুষ দিতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ চলাকালে ও বিল উত্তোলনের জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে কার্যাদেশ মূল্যের ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্তঘুষ আদায় করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে এই হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যাদেশ বিক্রিতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্তকমিশন আদায় করা হয়।
নগর অংশীদারির মাধ্যমে দারিদ্র্য কমানোর প্রকল্প-ইউপিপিআরের বরাদ্দ আসার পর মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশলী ও টাউন ম্যানেজারের যোগসাজশে কেটে রাখা হয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে সহায়তার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বরাদ্দের ২ থেকে ৩ শতাংশ দিয়ে দিতে হয়। টিআর ও কাবিখার বরাদ্দ ও বিলের টাকা ছাঙ করাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ঘুষ দিতে হয় টনপ্রতি এক হাজার থেকে দেঙ হাজার টাকা। ঢাকা সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে অবহেলার সুযোগ নিয়ে জনপ্রতি গঙে ২২৫ টাকা কেটে রাখা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নিরীক্ষা কর্মকর্তাকে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্তঘুষ দিতে হয়।

পৌরসভার মেয়রদের সম্মানী বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে নিরীক্ষা কর্মকর্তাকে ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্তঘুষ দিতে হয়।
২৬ মে ২০১৪/ প্রথম আলো 

চট্টগ্রাম নগরীর ভূমি অফিস ঘুষ দুর্নীতির খোলাবাজার
ঘুষ-দুর্নীতির হাট বসেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ভূমি অফিসগুলোয়। কোনো রাখঢাক ছাড়া প্রকাশ্যে চলছে ঘুষ লেনদেন। এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নড়ে না ফাইল। টানা দুদিন নগরীর কয়েকটি ভূমি অফিসে সরেজমিন অবস্থান করে দেখা গেছে, ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র।
সব ভূমি অফিস দালাল পরিবেষ্টিত। তাদের কাছে কোনো কাজই অসাধ্য নয়। জমির বৈধ মালিক যেই হোক, চাহিদামতো টাকা এবং দাগ খতিয়ান নম্বর দিলেই তা হয়ে যায় অন্যের। আবার বৈধ কোনো কাজে গিয়েও প্রকৃত ভূমি মালিকদের হতে হয় হয়রানির শিকার। নামজারির জন্য যেখানে সরকার নির্ধারিত ফি ২৫০ টাকা, সেখানে ১৫ হাজার টাকার নিচে কোনো কাজে হাতই দেয় না কেউ। প্রত্যেকটা ভূমি অফিসে দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। দালাল-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে গড়ে তুলেছে বিরাট সিন্ডিকেট। কোনো লুকোচুরি নেই, কোনো লাজলজ্জা, ভয়ভীতির বালাই নেই। এমনভাবে ঘুষের দরদাম করা হয় যেন এ তাদের ন্যায্য পাওনা।
১২ মার্চ ২০১৭/ যুগান্তর 

ঘুষের নাম অফিস খরচ, হয়রানি দুর্নীতির মহাযজ্ঞ
চট্টগ্রাম সদর রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স। চারতলা এ ভবনের দ্বিতীয়তলায় সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও তৃতীয়তলায় সদর রেকর্ডরুম। তৃতীয়তলার ছাদে সম্প্রসারিত অংশে মসজিদ এবং টিনশেডে আরও একটি রেকর্ডরুম। এ ভবনে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা এবং বিভাগীয় গুরুত্বপূর্ণ জমির দলিলাদি সংরক্ষিত রয়েছে। ৩১ মার্চ এ অফিসে ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করে দেখা যায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের মহাযজ্ঞ। কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দালালদের ভাষায় এখানে ঘুষ বলতে কিছু নেই। যেসব টাকা নেয়া হচ্ছে সবই ‘অফিস খরচ’। কিন্তু অফিস খরচের নামে লাখ লাখ টাকা কোন আইনের আওতায় আদায় করা হচ্ছে তা বলতে পারেননি কেউই। অথচ এর জন্যই প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে অফিস খরচের নামে আদায় করা লাখ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা হয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে।
২ এপ্রিল ২০১৪/ যুগান্তর 

রংপুর পাসপোর্ট অফিস: টাকা ছাড়া কথা নেই
রংপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ফ্রিস্টাইলে চলছে দুর্নীতি। অনিয়ম আর দুর্নীতি এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের সিল স্বাক্ষর জাল, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর হয়রানির মতো ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।  ফলে পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত সব পদস্থ ব্যক্তি, আনসার সদস্য, পুলিশ সদস্য, বহিরাগত যুবক ও ব্যক্তিবিশেষ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর দিনের পর দিন পাসপোর্ট করতে আসা মানুষজন আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং সীমাহীন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
১৮ এপ্রিল ২০১৪/ ঢাকা টাইমস 

চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতির মহোৎসব
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমির অবকাঠামোগত অবস্থান নির্ণয়ের জরিপ, জমি অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জমির মূল্য নির্ধারণ এবং চেক প্রদানের সময়ই মূলত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। অহেতুক হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেকেই তাদের উৎকোচ দিতে বাধ্য হন। এলএ শাখার অধীনে এসব লুটপাটের জন্য তৈরি হয়েছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট।  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোটা অংকের ভাগ দিয়ে মোহাম্মদ নুর চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম মুরাদ নামে দুই সার্ভেয়ার এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর তাদের সহযোগী হিসেবে অন্যান্য সার্ভেয়ার, কানুনগো ও বহিরাগতদের দিয়ে শক্তিশালী দালাল চক্রও গঠন করা হয়েছে।মঙ্গলবারের (১৪ অক্টোবর) ঘটনার পর নুর চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম মুরাদকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, মেরিনার্স সড়কসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ করতে গিয়ে এ সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
১৮ অক্টোবর ২০১৪/ বাংলা নিউজ 

স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতিতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্তঘুষ
স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্তলেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই উৎকোচ গ্রহণ করে থাকেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। 

অ্যাডহক চিকিৎসক নিয়োগে তিন থেকে পাঁচ লাখ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্তলেনদেনের অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বেশি টাকার লেনদেন হয় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলায় পদায়নের ক্ষেত্রে। এ খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হয় পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সুবিধাজনক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার জন্য আঙাই লাখ বা তার চেয়েও বেশি টাকা দিয়ে থাকেন।
৬ নভেম্বর ২০১৪/ প্রথম আলো 

কাশিমপুর কারাগার দুর্নীতির কারণে নিরাপত্তাঝুঁকিতে
অনিয়ম, ঘুষ লেনদেন ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়েছে কাশিমপুর কারাগার। শুধু কারাগারে আটক স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকেই মাসে গঙে ২২ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করে থাকে সেখানকার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রধানত এর মাধ্যমেই নিরাপত্তা শৈথিল্য তৈরি হচ্ছে। 

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার গত মাসে দেওয়া প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ছয়টি গুরুতর অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্দীদের নির্যাতনের চিত্র মোবাইলে ধারণ করে তা তাদের স্বজনদের দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগও আছে। প্রতিবেদনে একে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রাহমানিয়া, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারপ্রাপ্ত আমির সাইদুর রহমানসহ দেঙ শতাধিক জঙ্গি, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ১৩ আসামি, রাজনৈতিক নেতা, ভিআইপিসহ প্রায় পাঁচ হাজার বন্দী রয়েছেন। কিন্তু নির্দেশনা থাকলেও আদালতে আনা-নেওয়ার সময় তাঁদের জন্য বাঙতি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। আর্থিক অনিয়মের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
৬ ডিসেম্বর ২০১৪/ প্রথম আলো 


ঔষধ প্রশাসনে অধিদপ্তরে ঘুষ লেনদেন ১৫ লাখ পর্যন্ত
নতুন প্রতিষ্ঠানের ছাঙপত্র দেওয়া থেকে শুরু করে ওষুধের ছাঙপত্র নবায়ন করা পর্যন্ত১৩টি খাতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫০০ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্তঘুষ নেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। রাজধানীর মাইডাস ভবনে ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওষুধ উৎপাদনকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অধিদপ্তরের বেশ কিছু কর্মকর্তার অসাধু সম্পর্ক রয়েছে। ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি আছে। রাজনৈতিক প্রভাবে কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওষুধ উৎপাদনকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দেশীয় বাজারের জন্য কম মানসম্পন্ন ও রপ্তানির জন্য বেশি মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আছে। 
১৫ জানুয়ারি ২০১৫/ প্রথম আলো 

৩২০ টাকার বই ৮৮ হাজার টাকা!
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের একটি পাঠ্যবইয়ের সিরিজ ‘ওয়ান স্টপ ডক’, যার একটি খ ন্ডের নাম মেটাবলিজম অ্যান্ড নিউট্রিশন। যুক্তরাষ্ট্রের সিআরসি প্রেস প্রকাশিত ১২৮ পৃষ্ঠার এ বইটি দেশের বাজারে এক-দেঙ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট আমাজনে দাম চার ডলার (প্রায় ৩২০ টাকা)। নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ একই বই কিনেছে ৮৮ হাজার ৫০০ টাকায়! পাতানো দরপত্রের মাধ্যমে পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ দিয়ে এমনই কয়েক গুণ বেশি দামে বই কিনেছে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ। যেসব বই কেনা যেত দেঙ কোটি টাকায়, সেসব বই কিনতে কলেজ কর্তৃপক্ষ খরচ করেছে ছয় কোটি টাকা। তিনটি সরকারি দপ্তরের প্রতিবেদনে নোয়াখালী মেডিকেলে বই কেনায় অনিয়ম এবং সরকারি ক্রয়বিধি লঙ্ঘনের এ ঘটনা প্রমাণিত হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২৬ মে ২০১৫/ প্রথম আলো 

রেলওয়েকে আঁকড়ে ধরেছে দুর্নীতি আর অনিয়ম
দুর্নীতি-অনিয়ম আঁকড়ে ধরেছে বাংলাদেশ রেলওয়েকে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রেলওয়ের লোক নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তকরছে। প্রতিনিয়ত দুদকের কাছে জমা পড়ছে রেলওয়ের বিভিন্ন খাতে অনিয়মের বহু অভিযোগ। এসব অভিযোগের কোনোটি আমলে নিচ্ছে ও কোনোটি আমলে নিচ্ছে না দুদক। সূত্র জানায়, দুদক এ পর্যন্তরেলের ২৫টি ক্যাটাগরিতে লোক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির তদন্তকরছে। যার মধ্যে ৯টি ক্যাটাগরির নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আরো ১৬টি ক্যাটাগরিতে লোক নিয়োগের জালিয়াতির অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে দুদুক। পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও লোক নিয়োগের তদন্তঅব্যাহত রেখেছে।
১৩ ডিসেম্বর ২০১৫/ নয়া দিগন্ত

পোশাক খাতে ১৬ ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম হয়: টিআইবি
টিআইবির গবেষণায় যে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে কার্যাদেশ পর্যায়ে চার ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। এগুলো হলো—ক্রেতার নির্ধারিত কমপ্লায়েন্স চাহিদা সম্পর্কে সন্তোষজনক প্রতিবেদন পাওয়ার অভিপ্রায়ে কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষককে ঘুষ দেওয়া; কার্যাদেশ পাওয়ার জন্য ছোট আকারের কারখানা কর্তৃপক্ষের মার্চেন্ডাইজারকে ঘুষ দেওয়া; কারখানার পক্ষ থেকে নকল কাগজপত্র তৈরি করা অথবা বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা এবং কারখানার মালিক বা সরবরাহকারী কর্তৃক ঘুষের বিনিময়ে ক্রেতা বা এর এজেন্টের ক্রয়ের সিদ্ধান্তেপ্রভাব বিস্তার করা, যাতে ওই কারখানার পছন্দ অনুযায়ী কার্যাদেশ পাওয়া যায়।

টিআইবি বলছে, উৎপাদন পর্যায়ে নয় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। এগুলো হলো—নির্দিষ্ট এক্সেসরিজ কারখানা থেকে তৈরি পোশাক কারখানার উপকরণ কেনার জন্য মার্চেন্ডাইজারের পক্ষ থেকে বাধ্য করা; প্রয়োজনের তুলনায় কারখানার বেশি উপকরণ আমদানি এবং বাড়তি উপকরণ খোলা বাজারে বিক্রি করা; কারখানার পক্ষ থেকে অবৈধভাবে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ভাঙানো; ন্যূনতম মজুরি, কর্মঘণ্টা এবং শ্রমিক অধিকার-সংক্রান্তআইন লঙ্ঘন; ক্রেতাদের পক্ষ থেকে চুক্তিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন চাহিদা পূরণে কারখানাকে বাধ্য করা; আবার কারখানাগুলো চুক্তিবহির্ভূতভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া; নিরীক্ষককে তাঁদের প্রাপ্ত তথ্য গোপন করার জন্য কারখানা মালিকদের ঘুষ দেওয়া; ক্রেতাদের ইচ্ছেমতো কার্যাদেশ বাতিল করা এবং ক্রেতাদের পরিদর্শন কিংবা কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন পরিবর্তন করা।

সরবরাহ পর্যায়ে তিন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। এগুলো হলো—মানের ঘাটতি ও নিম্নমানের পণ্যের বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কারখানার পক্ষ থেকে মান নিয়ন্ত্রককে ঘুষ দেওয়া; কারখানার কাছে মান পরিদর্শকের নিয়মবহির্ভূত অর্থ দাবি এবং গন্তব্য দেশের বন্দর পরিদর্শনের সময় ন্যূনতম মূল্য প্রদানের উদ্দেশ্যে ক্রেতার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন।
১৪ জানুয়ারি ২০১৬/ প্রথম আলো 

মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ : নেপথ্যে কমিশন বাণিজ্য 
বিশ্বে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশীয় বাজারে শ্রমিকের মজুরি কম থাকলেও দেশের ভেতরেই ১১ বছরে এ ক্ষেত্রে নির্মাণ ব্যয় ২৫ গুণ পর্যন্তবেড়ে গেছে। বিশ্বে সড়ক নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে আট লেন ও ছয় লেনের মহাসড়ক আছে। বাংলাদেশে ছয় লেনের মহাসড়ক পরিকল্পনার পর্যায়ে আছে। পাশের দেশ ভারতে নতুন চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে গড়ে সাড়ে ১০ কোটি টাকা, দ্রুতত গণপরিবহন ও আধুনিক সড়ক ব্যবস্থায় এগিয়ে থাকা চীনে এক কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে গড় ব্যয় ১০ কোটি টাকা। ইউরোপে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ২৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ছয়টি চার লেন প্রকল্পের কিলোমিটারপ্রতি গড় নির্মাণ ব্যয় ৫৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে সর্বশেষ নেওয়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় কিলোমিটারে ঠেকেছে ১২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের মহাসড়কের মান এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় নিচে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক আছে মাত্র ১ শতাংশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রকল্প ঝুলিয়ে প্রতি অর্থবছরেই মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প নেওয়ার আগেই বেশি ব্যয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছে কমিশন বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে চলছে কমিশন বাণিজ্য। আবার প্রকল্প ঝুলিয়ে রেখে বলা হয়, নির্মাণসামগ্রীর দাম, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ও পরামর্শকের ভাতা বাড়ছে, তাই বাড়াতে হবে ব্যয়। যেমন প্রকল্প অনুমোদনের এক মাসের মাথায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্পে আরো ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে জমির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে। মান বাড়ানোর জন্য দুই লেন থেকে চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের কিছুদিন পরই মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ সম্প্রসারণ করা হলেও কোথাও দেবে গেছে, কোথাও ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সওজ অধিদপ্তর বলছে, মহাসড়ক আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন, উড়াল সড়ক কিংবা ফুট ওভারব্রিজ রেখে নতুন নকশায় নির্মাণ করতে গিয়ে নতুন নতুন মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে।

জানা গেছে, আলাদা সার্ভিস লেনসহ বিভিন্ন সুবিধা রেখে মহাসড়ক নির্মাণে একের পর এক কাজ শুরু হয়েছে গত অর্থবছর থেকে। অথচ নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর সংস্কৃতি চলছে তারও অনেক আগে থেকে। সওজ অধিদপ্তরের অধীন বিলের ওপর নির্মাণ করা দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। তারপর মানসম্পন্ন মহাসড়ক নির্মানের উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে ওই মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছিল পাঁচ কোটি টাকা। এখন ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনে কিলোমিটারে খরচ পড়ছে ১২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ১১ বছরে ব্যয় বেড়েছে ২৫ গুণ পর্যন্ত। অথচ বনপাড়া-হাটিকুমরুল  মহাসড়কেও হালকা যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন তৈরি করা হয়েছিল।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা, হাটিকুমরুল-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ এই চার লেন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ছয়টি চার লেন প্রকল্পে কিলোমিটারে গড়ে ব্যয় পড়ছে ৫৪ কোটি টাকা।

বিশ্বে সড়ক অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয়-সংক্রান্তবিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশে নেওয়া প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ছকের (ডিপিপি) তথ্য তুলনা করে উচ্চ ব্যয়ের বিষয়টি ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী, দেশে মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি গড় ব্যয় হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ছয় কোটি টাকা, দুই লেনের মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় হবে বড় জোর ১২ কোটি টাকা। উড়াল সড়ক বা ফুট ওভারব্রিজ ও অন্যান্য সুবিধাসহ নির্মাণে কিলোমিটারে ২২ থেকে ২৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। বুয়েটের অধ্যাপক, অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ১১ বছর আগে যেখানে কিলোমিটারে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে সেখানে একই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে না। প্রকল্প ব্যয় তদারক করার যে ব্যবস্থাপনা আছে তা দুর্বল। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রস্তাবিত ব্যয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাই স্বাধীন তৃতীয় সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। অনেক সময় রাজনৈতিক চাপেও খরচ বাড়ানো হয়।

গ্রিসের ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব এথেন্সের অধ্যাপক দিমিত্রিয়স স্যামবুলাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খরচ হয় গড়ে ২৯ কোটি টাকা। ৪০টি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশের মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় বিশ্লেষণ করে তৈরি করা প্রতিবেদনে অক্সফোর্ড, কলম্বিয়া ও গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, এসব দেশে নতুন চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ১৭ কোটি টাকা। ভারতের ২০১২-১৭ সালের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে দেশে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারে খরচ পড়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ কোটি টাকা। চীনের ১২তম (২০১০-১৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সে দেশে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে গড়ে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। দুই লেনের মহাসড়ক চার লেন করতে কিলোমিটারে খরচ পড়ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

সওজ অধিদপ্তরের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প। ২০০৬ সালে অনুমোদনের পর ২০১২ সালের মধ্যে মহাসড়কের ১৯২ কিলোমিটার দুই লেন থেকে চার লেন করার কথা ছিল। পরামর্শক নিয়োগ, মালামাল আমদানি, স্থাপনা অপসারণে দেরি—এসব অজুহাতে প্রকল্পের মেয়াদ ৯ বছরে ছয় দফা বাড়ানো হয়েছে। ব্যয় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৭৯৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত১৯২ কিলোমিটার অংশ চার লেন করতে কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজ এ যাবৎ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটারের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে কিলোমিটারে ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ এখনো ১০ শতাংশ বাকি। ২০১০ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু করে প্রকল্পের কাজ ২০১৩ সালের জুনে শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০২ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। চারটি অংশে ভাগ করে কার্যাদেশ দেওয়ার পর দুটো অংশে কাজ বন্ধ থাকে টানা দেড় বছর। শেষ পর্যন্তবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে সেই দুই অংশের কাজে গতি আসে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দুই দফায় ব্যয় বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দুই দফা।

ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে যাত্রী ও পণ্যবাহী এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের নির্মাণকাজ শেষ করা হচ্ছে। অন্য তিন দেশে গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যেই ঢাকা-সিলেট ও রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়ক চার লেন করা হবে। রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়ক চার লেন হবে ১৫৭ কিলোমিটার। আট হাজার ১৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পে কিলোমিটারে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৫২ কোটি সাত লাখ টাকা। এখন তা কিলোমিটারপ্রতি ৬০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পে এরই মধ্যে কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ছয় লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর শুরুর আগেই প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা-সিলেট ২২৬ কিলোমিটার চার লেন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২ হাজার ৬৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তাতে কিলোমিটারে খরচ পড়বে ৫৬ কোটি টাকা। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে কিলোমিটারে ১২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন প্রকল্প ২০১১ সালের জানুয়ারিতে অনুমোদনকালে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় ১৩২ কোটি টাকা। এ পর্যন্তকাজ হয়েছে ৮৮ শতাংশ। এখন আবার এক কোটি ৩২ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কারণে ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২২ কোটি টাকা।

২০১০ সালের নভেম্বরে নেওয়া রংপুর বাইপাস চার লেন প্রকল্পের ব্যয় ৭৭ কোটি ৭১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২০১৩ সালেই করা হয়েছিল প্রায় ১২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ১৬ কিলোমিটারের চার লেন গত বছরের ১৪ জুলাই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা। ২০০৮ সালে নেওয়া নোয়াখালীর চৌমুহনী চার লেনের ব্যয় শুরুতে ২৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ধরা হলেও কয়েক বছরের ব্যবধানে আরো ১৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়।   
২১ জুন ২০১৬/ কালের কন্ঠ 

১০ বছরে পাচার সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা
১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এই অর্থ এবারের বাজেটের চেয়েও ১ লাখ কোটি টাকা বেশি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। এর বাইরে গত দুই অর্থবছরে সুইস ব্যাংকসমূহে বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। এই অর্থও পাচার করা। আবার মালয়েশিয়ায় ‘মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচিতে গত ১৩ বছরে ৩ হাজার ৬১ জন বাংলাদেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এর চেয়ে বেশি মানুষ গেছে চীন ও জাপান থেকে। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন অসংখ্য বাংলাদেশি।
২৪ জুন ২০১৬/ প্রথম আলো 

সেবা খাতে ঘুষ বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা
দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবা খাতে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ঘুষের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সারা দেশে ৮ হাজার ৮২২ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে। এই সংখ্যা পাওয়া গেছে ১৫ হাজার পরিবার বা খানার ওপর করা জরিপ থেকে প্রাক্কলন করে। জরিপে আরও দেখা গেছে, সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে। তবে ঘুষের পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ভূমি প্রশাসনে।
৩০ জুন  ২০১৬/ প্রথম আলো 

দুর্নীতি কি ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে? ঘুষ বিনে সেবা নেই!
সরকারি সেবা খাতে ঘুষের লেনদেনের সংস্কৃতি নতুন নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, ঘুষের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ১৫ হাজার খানা বা পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে যে প্রাক্কলিত হিসাব সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে তিন বছরে সেবা খাতে ঘুষের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

টিআইবির জরিপ বলছে, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে পাসপোর্ট অফিসে, যদিও বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই জরিপকে ‘গ্রহণযোগ্য’ নয় বলেছেন। কিন্তু সাধারণভাবে এটা সুবিদিত যে পাসপোর্ট তৈরির সময় মানুষকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়, যা এড়ানোর উপায় ঘুষ দেওয়া। এটা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। তিন বছরের ব্যবধানে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া সেই নির্দেশ করে। ভূমি অফিসের হয়রানি ও দুর্নীতির সমস্যাটি প্রাচীন। ঘুষ ছাড়া ভূমি অফিসে কোনো কাজ সমাধা করা যায় না—এমন অভিযোগ প্রচুর শোনা যায়। এখানে দুর্নীতি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। টিআইবির সাম্প্রতিক জরিপটি থেকে দেখা যাচ্ছে, ঘুষের পরিমাণের দিক থেকে এই খাত অন্য সব খাতের ওপরে আছে।
২ জুলাই ২০১৬/ প্রথম আলো 

ঘুষের হাট চট্টগ্রাম কাস্টমস
রাজস্ব আদায় নয়, নিজের পকেট ভারি করাই এখানকার ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য পণ্য শুল্কায়নে পদে পদে হয়রানি এখানে নৈমিত্তিক ঘটনা। চলছে বহুমুখী অনিয়ম, দুর্নীতি আর জালিয়াতি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাহিদা মেটাতে পণ্য আমদানির পর খালাস পর্যন্তপুরো প্রক্রিয়ায় আমদানিকারকদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। যে কোনো ধরনের পণ্য খালাসে গুনতে হয় লাখ লাখ টাকার ঘুষ। কাস্টমসের ভাষায় যা ‘স্পিড মানি’। বিশেষ করে আমদানি শাখায় প্রকাশ্যে চলে ঘুষের লেনদেন। প্রতিটি বিল অব অ্যান্ট্রির জন্য দিতে হয় নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ। তা না হলে নথি নড়বে না। পণ্য খালাস জটিল হবে। আবার পণ্য চালানের একটি বড় অংশ আমদানি হয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগে থেকে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে। কিছু বড় চালানে কায়িক পরীক্ষায় অনিয়ম-জালিয়াতি ধরা পড়লেও তা অর্থের বিনিময়ে বৈধ হয়ে যায়। আর এভাবে অবৈধ পণ্য খালাসের সুযোগ দিয়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা আয় করেন মাসে কমপক্ষে ৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা। আর ক্যাডার কর্মকর্তারা পদ ও দায়িত্বভেদে আয় করেন সর্বনিু ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঘুষ ছাড়া কাস্টম হাউসে কোনো কাজ হয় না। ঘুষ নেই, নথিতে স্বাক্ষরও নেই, পণ্য থাকবে পণ্যের জায়গায়। ঘুষ ছাড়া পণ্য খালাসের চিন্তা করাও যেন এখানে অপরাধ!
২৫ জানুয়ারি ২০১৭/ যুগান্তর 

ঘুষের টাকা নেন গুনে গুনে
সিলেটের বিয়ানীবাজার সাবরেজিস্ট্রি অফিসে চলছে অনিয়ম-ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব। প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলার লোকজনের জমি রেজিস্ট্রিতে রোজ লাখ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। কাঁড়ি কাঁড়ি অবৈধ টাকা পকেটে পুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা হচ্ছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। ঘুষের টাকা প্রকাশ্যে গুনে গুনে নেন খোদ সাব-রেজিস্ট্রার লোকমান হোসেন। দলিলপ্রতি ১০ হাজার টাকা ঘুষ না দিলে জমি রেজিস্ট্রি করেন না, নানা অজুহাতে আটকে দেন দলিল। শুধু তাই নয়, ঘুষ-দুর্নীতির বরপুত্র এ কর্মকর্তা ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নিয়ে আসেন অফিসে। খাস কামরার পেছনের দিকের দেয়াল ভেঙে একটি দরজা তৈরি করেছেন। ওই দরজা দিয়ে দালালরা ঢুকে সাব-রেজিস্ট্রারকে দিয়ে জাল দলিল, রকম পরিবর্তনসহ নানা অনিয়ম করিয়ে নিচ্ছেন। প্রভাবশালী এ কর্মকর্তার ভয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্তকরতে পারেন না ভূমির মালিকরা।
১২ জুন ২০১৭/ যুগান্তর 

শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি
রাঙ্গামাটিতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৭৭ শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৮০ শিক্ষক। অভিযোগের তথ্য মতে, নজিরবিহীন এ অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে ঘুষ-বাণিজ্য, দলীয় ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোটা সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন না করার অভিযোগে নিয়োগের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। এ শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে বঞ্চিত সাধারণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নিয়োগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন। 
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ যুগান্তর 

পরচা তুলতে ৫৬ শতাংশ ব্যক্তিকে ঘুষ দিতে হয়
জমির পরচা তুলতে আবেদনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ের সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশকে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। আর থাকা-খাওয়া-যাতায়াত বাবদ গড়ে ৪৪৯ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে এবং তিনবার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৭৩৭ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। অন্যদিকে ইউডিসি থেকে জমির পরচা আবেদনের ক্ষেত্রে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে, থাকা-খাওয়া-যাতায়াত বাবদ কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি এবং দুবার ইউডিসিতে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া জরিপভুক্ত সেবাগ্রহীতাদের কেউ আর্থিক অনিয়ম, ঘুষ বা আর্থিক লেনদেনের শিকার হননি।
৩ ডিসেম্বর ২০১৭/ প্রথম আলো 

শিক্ষায় ঘুষ-দুর্নীতি ‘ওপেন সিক্রেট’
শিক্ষা প্রশাসনে অনিয়ম-দুর্নীতি, হয়রানি, ভোগান্তিও ঘুষবাণিজ্য অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরেই ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ‘উপুরি’ না দিলে যেমন উন্নয়ন কাজ বা এ সংক্রান্তপ্রতিবেদন সঠিকভাবে মেলে না, তেমনি এমপিওভুক্তি, সরকারি স্কুল-কলেজে বদলি-পদায়ন, জাতীয়করণের কাজ, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈধ ও যৌক্তিক সেবাও পাওয়া যায় না। বরং ঘুষ না দিলে উল্টো সেবা প্রার্থীদের সীমাহীন হয়রানি-ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৩৯ দফা সুপারিশে ইঙ্গিত মিলেছে এসব দুর্নীতির। শুধু তাই নয়, রোববার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এক বক্তব্যেও পরোক্ষভাবে উঠে এসেছে শিক্ষা খাতের এসব অনিয়মের চিত্র।
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭/ যুগান্তর 

ডিএসসিসির কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম
ডিএসসিসির ২১টি বিভাগের ব্যবহৃত মালামালের কমবেশি জোগান দেয় সংস্থাটির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগ। এ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজই হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব মালামাল ক্রয়, মজুদ রাখা ও সময়মতো চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা। এ জন্য ডিএসসিসির বাজেটে প্রতি অর্থবছরের জন্য ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের বিনিময়ে ওই বিভাগটি প্রায় তিন শতাধিক আইটেমের মালামাল সংগ্রহ করে।

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মালামাল বা পণ্য কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে লুটপাটে মেতেছেন সংশ্লিষ্ট দু-একজন। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা কয়েকবার অভিযোগ দিলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি ডিএসসিসির প্রশাসন। উল্টো সহজ সরল দু-চারজনকে সন্দেহের তালিকায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দিয়ে হয়রানিসহ বরখাস্তের নজির রয়েছে।
এ ছাড়া ডিএসসিসির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠলেও তারা বহালতবিয়তেই আছেন সংস্থাটির শীর্ষপর্যায়ের কারো কারো আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে। যার কারণে ওই বিভাগে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
৩০ জানুয়ারি ২০১৮/ নয়া দিগন্ত

পে-অর্ডারে মহীউদ্দীন আলমগীরের হিসাবে ঘুষ লেনদেন
অনিয়ম করে বরাদ্দ পাওয়া ঋণ গ্রহীতার হিসাব থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ গেছে পদত্যাগী চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও অডিট কমিটির পদত্যাগী চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর ব্যাংক হিসাবে। এটি সুস্পষ্ট। তাদের বিরুদ্ধে লোকবল নিয়োগে অনিয়মের সুস্পষ্ট প্রমাণও মিলেছে। পে-অর্ডারে ঘুষ লেনদেনের বিরল এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যায়ন হচ্ছে- ‘গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা বের করে নিজস্ব প্রয়োজনে পে-অর্ডার ইস্যু করার মাধ্যমে মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং মাহবুবুল হক চিশতীর নৈতিক স্খলন ঘটেছে। এভাবে তারা ঋণ মঞ্জুরে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে পরিলক্ষিত হয়েছে।’
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ যুগান্তর 

নয় বছরে দুই লাখ কোটি টাকা লুট
জবাবদিহিতার অভাব ও দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ- ৯ বছরে ব্যাংকিং খাতে ঋণের নামে ও বিভিন্ন কারসাজি করে গ্রাহকের প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও তাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠী। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধীরা নানা কৌশলে ব্যাংকের অর্থ লুট করেই যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা অচিরেই অর্থনীতিকে রক্তশূন্য করে ফেলবে
১১ মে ২০১৮/ যুগান্তর

কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে
এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই সময় অভিযোগ ছিল, নয়টি প্রতিষ্ঠান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীকে নির্দিষ্ট হারে ঘুষ দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিভিন্ন উন্নয়নকাজে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ সোমবার দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো আলাদা দুই নোটিশে তাঁকে ১০ ও ১২ জুন সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
৪ জুন ২০১৮/ প্রথম আলো 

ঋণ-দেনা, অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে খাবি খাচ্ছে বিমান
বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। মূলধনের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ এখন আড়াই গুণের বেশি। নতুন চার উড়োজাহাজ কিনতে নেওয়া ঋণ যুক্ত করলে এটা বেড়ে প্রায় পাঁচ গুণে দাঁড়াবে। অঙ্কের হিসাবে ৯ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে বিমানের দেনা রয়েছে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক এই দুরবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অব্যবস্থাপনা-অপচয়, অনিয়ম-দুর্নীতি। এমনকি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিপুল অঙ্কের আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
২৪ জুলাই ২০১৮/ যুগা র 



তিতাসে ‘কেজি মেপে’ ঘুষ লেনদেন
‘তিন কেজি দেওয়া হয়েছে সেক্রেটারি মোশতাককে, টেপাকে ১৫’; ‘সবুর ও জাহাঙ্গীর ৪ কেজি নিয়েছে’; ‘আপনার ৬ কেজি কবে নেবেন?’ এই কেজি কিন্তু ওজনের পরিমাপক না, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের সাংকেতিক ভাষা। এক কেজি মানে এক লাখ টাকা।

গাজীপুর, সাভার, ভালুকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে এই ঘুষ খাওয়ার জন্য তিতাসের কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে এই সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করেছেন। নিজেরা ঘুষ খাওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ এনে দিতে মাঝখানে একটি দালালশ্রেণিও তৈরি করেছেন তাঁরা। দালালেরা ঘুষের টাকা সরাসরি পৌঁছে দিয়েছেন তিতাসের বড় কর্মকর্তাদের কাছে।

সরকারি একটি নজরদারি সংস্থা থেকে পাওয়া তিতাসের কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনের খুদে বার্তা, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা এবং প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এই লেনদেন ও ঘুষ-দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। খুদে বার্তাগুলো ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ততিন মাসের। তিন মাসের চিত্র পাওয়া গেলেও ঘুষের ঘটনা মাসের পর মাস ধরে চলছে বলে তিতাসের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে পরে অনুসন্ধান করেছে প্রথম আলো। তাতে দেখা গেছে, চলতি দায়িত্বের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ঘুষের একটি চক্র গড়ে উঠেছে তিতাসে। আর এমডির প্রধান সহযোগী হচ্ছেন তিতাসের পাইপলাইন ডিজাইন বিভাগের একটি শাখার ব্যবস্থাপক সাব্বের আহমেদ চৌধুরী।

চক্রে আরও আছেন তিতাসের ইলেকট্রিক্যাল কোরেশন কন্ট্রোল (ইসিসি) বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান, গাজীপুরের চলতি দায়িত্বের মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে জিএম, ভিজিল্যান্স) এস এম আবদুল ওয়াদুদ এবং সাবেক কোম্পানি সচিব ও বর্তমানে সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি মোশতাক আহমেদ।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ প্রথম আলো 

তিতাসে দুর্নীতির মহোৎসব
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান হলো তিতাস কোম্পানি। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত১৩ হাজার ৫৬ কিলোমিটার পাইপলাইন থাকা কোম্পানিটির মোট শিল্পগ্রাহক ৪ হাজার ৬১০। তবে ঘুষ নিতে প্রধানত ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর অঞ্চলের শিল্পকারখানার মালিকদের বেছে নিয়েছে চক্রটি। তিতাসের গ্যাস-সংযোগ পাওয়া বেশির ভাগ কারখানা গাজীপুর অঞ্চলেই।

টেলিফোনে বা খুদে বার্তায় ঘুষের অর্থের পরিমাণ ও ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয়ে যায়, সে জন্য তাঁরা সাংকেতিক ভাষা ‘কেজি’ ব্যবহার করেছেন। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে ঘুষ খাওয়ার জন্য তিতাসের কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে এই সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করেন। ঘুষ আদান-প্রদানকারীর মধ্যে একটি দালাল চক্র গড়ে উঠেছে, যারা অর্থ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়। তিতাসের দুর্নীতি এতটাই প্রকট যে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) গত ২৩ এপ্রিলের সভায় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কেননা, সব ব্যবসায়ী তো তিতাসের গোপন লেনদেনে যুক্ত হননি।

এর আগে পেট্রোবাংলার এক অনুসন্ধানে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৭৫ কোটি টাকার বেশি গ্যাস নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের তাগিদ দিলেও এখনো পর্যন্ততা কার্যকর হয়নি। যেখানে সবাই না হলেও অধিকাংশ চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, সেখানে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, তা আশা করা যায় না।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ প্রথম আলো 

মোংলায় বছরে ঘুষ লেনদেন ৩০ কোটি টাকা
মোংলা কাস্টমসে আমদানি পণ্য খালাসে বিল অব এন্ট্রিপ্রতি ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। মূলত রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এ দুই কাস্টমস-বন্দরে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। আমদানি-রফতানি পণ্যের কাগজপত্র সঠিক থাকলেও কাস্টমস-বন্দর কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র, বন্দর শ্রমিক, ক্রেন অপারেটর, পরিবহন শ্রমিকসহ ঘাটে ঘাটে টাকা না দিলে পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়। বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয় এই দুই বন্দর ও কাস্টমসে। গত এক বছর গবেষণা চালিয়ে এই ঘুষ-দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্তসংগৃহীত তথ্য ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংক্রান্তএকটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ যুগান্তর 

ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না, নড়ে না কোনো ফাইল- এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, পিয়ন-দারোয়ান থেকে শুরু করে এসি-ডিসি পর্যন্তঘুষের টাকা লেনদেনের বিষয়টি অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। কোনো পণ্যের চালান খালাসের জন্য একজন এসি বা ডিসিকে পর্দার আড়ালে কত টাকা দিতে হয়, তা-ও সবার মুখে মুখে। শুধু তা-ই নয়, কোন কর্মকর্তা ‘ঘুষখোর’, কোন কর্মকর্তা কীভাবে কোন ফাঁদে ফেলে আমদানিকারক বা তার প্রতিনিধির কাছ থেকে ঘুষ নেন- সেটিও কারও কাছে অজানা নয়। তাদের আরও অভিযোগ, অসাধু আমদানিকারকরা সিন্ডিকেটবদ্ধ হয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্যের চালান খালাস করে নিলেও প্রকৃত ও সৎ ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা ঘুষও দিতে পারছেন না, পণ্যও ছাড়াতে পারছেন না। এক্ষেত্রে নানা অজুহাতে আটকে দেয়া হচ্ছে তাদের পণ্য। এতে অহেতুক অন্তহীন হয়রানির শিকার হচ্ছেন এসব ব্যবসায়ী।
১২ মে ২০১৯/ যুগান্তর 

রূপপুরে কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় যে বড় দুর্নীতি হয়েছে, তা গণপূর্ত অধিদপ্তরের তদন্তপ্রতিবেদনেই প্রমাণিত। গত মে মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক ভবনের কেনাকাটায় ‘বালিশ কেলেঙ্কারির’ বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ দেখে মনে হয় না, তাঁরা দুর্নীতির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। 
প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। কভারসহ কমফোর্টারের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একইভাবে বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৬ টাকায়। এর বাজারমূল্য অবশ্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

এটি একটি সরকারি কেনাকাটার চিত্র। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদেশিদের আবাসিক ভবনের জন্য এসব কেনাকাটায় অস্বাভাবিক মূল্য ধরা হয়েছে। পাঁচটি ২০ তলা ভবনের জন্য এসব কেনাকাটা হয়েছে। প্রতিটি তলায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য কমফোর্টার শুধু বেশি দামে কেনাই হয়নি, কেনার পর দোকান থেকে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে আলাদা ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছে। মাত্র ৩০টি কমফোর্টারের জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দেখানো হয়েছে। আর একেকটি কমফোর্টার খাট পর্যন্ততুলতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ১৪৭ টাকা। কমফোর্টার ঠিকঠাকমতো খাট পর্যন্ততোলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য তত্ত্বাবধানকারীর পারিশ্রমিক দেখানো হয়েছে প্রতিটির ক্ষেত্রে ১৪৩ টাকা। ঠিকাদারকে ১০ শতাংশ লাভ ধরে সম্পূরক শুল্কসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি কমফোর্টারের জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ২২ হাজার ৫৮৭ টাকা। শুধু কমফোর্টার নয়, চাদরের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। ৩০টি চাদর আনতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। আর ভবনের নিচ থেকে খাট পর্যন্ততুলতে প্রতিটি চাদরের জন্য মজুরি দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা।

এভাবে ফ্রিজ, ইলেকট্রিক কেটলি, ওয়াশিং মেশিন, ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাব ও পণ্য ক্রয়ে অস্বাভাবিক মূল্য দেখানো হয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রতিটি কেনাকাটায়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। গত কয়েক দিনে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে পাবনায় অবস্থিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবনে ১৪৬ কোটি টাকার পণ্য কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেনাকাটার প্রতিটিতে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দেখানো হয়েছে।
২৩ মে ২০১৯/ প্রথম আলো 

ঘুষ না দেওয়ায় হয়রানি, দুদকের অভিযান
রাজধানীর মিরপুর ভূমি অফিসে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলেও আলাদা দুটি অভিযান চালায় সংস্থাটি। আজ মঙ্গলবার অভিযান তিনটি চালানো হয় বলে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দুদক জানায়, সংস্থার অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইন-১০৬) অভিযোগ আসে, ২০১৭ সালে মিউটেশনের জন্য আবেদন করা সত্ত্বেও চাহিদামতো অনৈতিক অর্থ না দেওয়ায় এক সেবাপ্রার্থীকে হয়রানি করা হচ্ছে। খবর পেয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল মিরপুর ভূমি অফিসে অভিযান চালায়। সরেজমিন অভিযানে দুদক দল দুই বছর আগে করা আবেদনপত্রের ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ (ডিসিআর) উদ্ধার করে। তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, ঘুষ না দেওয়ায় সেবাপ্রার্থীর কাছে এটা সরবরাহ করা হয়নি। দুদকের দলটি অবৈধ অর্থ লেনদেনের কাছে ব্যবহার করা একটি রেজিস্ট্রার উদ্ধার করে। এ ধরনের কর্মকা ন্ডে র বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয় দুদক দল। এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুমোদন চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেবে দুদক দল।
১০ জুলাই ২০১৯/ প্রথম আলো 

ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি
দুদকের প্রতিবেদনে ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পসহ অন্তত ১১ খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই শতকোটি টাকার বিল তুলে নেয়া, অযৌক্তিক কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি। জানা গেছে, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, প্রকল্প পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ একটি সিন্ডিকেট জড়িত। দুদক অবশ্য ওয়াসার দুর্নীতি ঠেকাতে ১২ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে।

তবে এতে কাজ কতটা হবে, বলা মুশকিল; পদ-পদবি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যারা আসন অলংকৃত করে আছেন, তারা যে ধোয়া তুলসি পাতা নন, দেশে ক্রমপ্রসারমান দুর্নীতির চিত্র তার বড় প্রমাণ। বস্তুত কেবল সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নয়, দেশের সর্বত্র দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে লুটপাটের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার মূলোৎপাটন করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে ন্যায়-নীতিবোধ, সততা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দুর্নীতির তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে
২০ জুলাই ২০১৯/ যুগান্তর 



ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতি: টিআইবি
দলিলের নকল তোলার জন্য সেবাগ্রহীতাদের ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। দলিল নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি দলিলে দলিল লেখক সমিতিকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্তচাঁদা দিতে হয়। জমির দাম, দলিল ও দলিলের নকলের ধরন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা না থাকার ওপর এবং এলাকাভেদে নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের পরিমাণ কমবেশি হয়।

ভূমি দলিল নিবন্ধন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গুণগত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের ঘাটতি ব্যাপক, এ খাত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে হয়রানি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ভূমি নিবন্ধন আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে। এখানে নিয়োগ–পদোন্নতিতেও দুর্নীতি ব্যাপকতা পেয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ প্রথম আলো 

লুটপাট : এক সাইনবোর্ডে ব্যয় ৫ লাখ টাকা, স্টাম্প ও সিল বানাতে খরচ সাড়ে ৩ লাখ
লাগামহীন লুটপাটেরই যেন আয়োজন। নদী একটা, এলাকাও একটাই, কিন্তু তার তীর সংরক্ষণ ব্যয় তিন ধরনের। আর এই ব্যয় ব্যবধান ৯ থেকে ১৫ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটারে। প্রতিটি সাইনবোর্ড বানাতে ব্যয় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। স্ট্যাম্প ও সিল বাবদ খরচ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর এই খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সন্দ্বীপ চ্যানেলের ভাঙনরোধে ৪.৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে। উন্নয়ন প্রকল্পে মন্ত্রণালয়গুলোর খরচের প্রস্তাবনায় কোনো ধরনের লাগাম নেই। ব্যয়ের মাত্রা বছর অতিক্রম করলেই বৃদ্ধি পায়। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিপালন করা হচ্ছে না। কোনো কোনো খাতের ব্যয় অযৌক্তিক হিসেবে বাদ দেয়ার জন্য বলা হলেও তা কিছু কমিয়ে বহাল রেখে আবারো প্রস্তাব করা হয়। আবার বিভিন্ন চাপে প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের সুপারিশও করতে হয় বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১৮ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে তীর সংরক্ষণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটি হলো নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সন্দ্বীপ চ্যানেলের ভাঙন থেকে মুসাপুর ক্লোজার, রেগুলেটর এবং সংলগ্ন এলাকা রক্ষার জন্য মুসাপুর রেগুলেটরের ডাইভারশন চ্যানেল ও সন্দ্বীপ চ্যানেলের বাম তীর প্রতিরক্ষা। এখানে ৪.৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ১.৩ কিলোমিটার রোড নির্মাণ ও কার্পেটিং খরচ ৩ কোটি ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রকল্পের পাঁচটি সাইনবোর্ড তৈরিতে ব্যয় হবে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। সিল ও স্ট্যাম্প খাতে ব্যয় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

পিইসির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, গড়ে প্রতি কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার টাকা। একই নদীর একই এলাকায় তীর সংরক্ষণে ব্যয় হচ্ছে তিন ধরনের। মুসাপুর রেগুলেটরের ডাইভারশন চ্যানেলের ভাটিতে ১.৩ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ২২ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আর একই চ্যানেলের উজান তীরে ৬০০ মিটার বা আধা কিলোমিটারের একটু বেশির জন্য ব্যয় ১১ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অন্য দিকে চ্যানেলের ভাটির বাম তীরে আড়াই কিলোমিটারের জন্য খরচ ৬৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ নয়া দিগন্ত

মহাসড়ক মেরামতে ব্যয়-উল্লাস
ভারত, চীন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোয় মহাসড়ক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণের ফলে টেকেও নির্ধারিত আয়ুর সমান। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকৌশলী-ঠিকাদারদের চক্র নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় বাদ দিয়ে নিয়মিত মেয়াদি প্রকল্প নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে কয়েক বছরে মেরামতে যে ব্যয় করা হচ্ছে তা দিয়ে নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করা যায়। নিজেদের চোখের সামনে ছোট গর্ত বড় হলে জনগণের দুর্ভোগকে পুঁজি করে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধপত্র কাজে লাগিয়ে প্রকৌশলী-ঠিকাদাররা এই চক্র জিইয়ে রাখছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এখনো জমে আছে সংসদ সদস্যদের এ কাজের অনুরোধ তথা ডিও লেটার-আধাসরকারি পত্র।   

সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানান, নতুনভাবে নির্মাণের পর ২০ বা ১০ বছর, পুনর্র্নিমাণের পর ১০ বছর, মেরামতের পর পাঁচ বছর টেকে মহাসড়ক।

২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত১০ বছরে সওজ অধিদপ্তর মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও প্রশস্ত করতে ৫৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা খরচ করেছে। এক হাজার কিলোমিটার বাদ দিয়ে সব মহাসড়কে মেরামত বা উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু এত অর্থ খরচের পরও মেরামতকাজ টিকছে না। প্রতিবছরই মেয়াদি প্রকল্প বা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মেয়াদি মেরামতের জন্য ৫৪ জেলায় কিলোমিটারপ্রতি গড়ে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছরে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় চার গুণ বেড়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, দু-তিন বছর পর হালকা মেরামত, ৫-১০ বছর পর ভারী মেরামত ও দুর্যোগের পর জরুরি মেরামত—এই চার ধাপে সড়ক মেরামত করার বরাদ্দ থাকে। তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী-ঠিকাদাররা। তাতে ব্যয় বাড়ছে মন্তব্য করে বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ছোট গর্ত বড় না হলে এ দেশে মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ হয় না।

দেখা গেছে, সামান্য বিটুমিন দিয়ে গর্ত ভরাট না করে বা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে প্রকৌশলীরা প্রতিবছর মেরামতের পেছনে সরকারের টাকা খরচ করতে চাইছেন। তার বড় কারণ প্রকৌশলীদের কমিশন বাণিজ্য। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তদুপরি চলতি অর্থবছরে মহাসড়কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তাতে এক দফায়ই মেরামতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে প্রায় চার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধনের পর সওজ অধিদপ্তর বলেছিল, ১০ বছরের আয়ুষ্কাল থাকবে এ মহাসড়কের। চার লেন প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই মহাসড়কে ১০ বছরে ওজন বহনের মাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৮০ লাখ এক্সেল, কিন্তু দেড় বছরেই এই পরিমাণ ওজন মহাসড়কের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ায় এটি ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়তে শুরু করেছে। জানা গেছে, ৯ বছরে ছয় দফা ব্যয় বাড়িয়ে মহাসড়কটি দুই লেন থেকে চার লেন করা হয়েছে। মহাসড়কের স্থায়িত্ব ধরে রাখার জন্য নতুন প্রকল্পের আওতায় সড়ক বাঁধ, ওয়্যারিং কোর্স, র‌্যাট কারেকশন করা হবে।

স্থায়িত্ব ধরে রাখতে এ মাসে প্রকল্প অনুমোদন হলেও একই মহাসড়কের কাজলা থেকে শিমরাইল পর্যন্তসাত হাজার ৬০০ মিটার সংস্কারে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রগ্রামের (পিএমপি) আওতায় প্রায় ২১ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে, এ অংশে প্রতি কিলোমিটার সংস্কারে খরচ হবে দুই কোটি টাকার বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটার সংস্কারে পাঁচ বছরে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা, প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি। এ সড়ক মেরামতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চার লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কে ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বিটুমিনের গভীর আস্তরণ দিলেও সওজ অধিদপ্তরই প্রতিবেদনে বলেছিল, নিম্নমানের কাজের ফলে বছর না যেতেই ছয় কিলোমিটার অংশে গর্ত ও সরু ফাটল দেখা দেয়। এভাবে প্রতিবছর মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পর কাজ হচ্ছে, কিন্তু সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে বা গর্ত তৈরি হচ্ছে।

হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের অংশ পড়েছে সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে। গত ঈদুল ফিতরের আগে এসব মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়ক মেরামত করা হয়। তার পরও বাস্তবে ‘মেরামত’ শেষ হয়নি। এবার বন্যায় দেশে যে ২৬ জেলার মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিরাজগঞ্জ জেলার। এর দৈর্ঘ্য ১৮৫ কিলোমিটার। সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ বলেন, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৬ কিলোমিটারের মেরামত এক বছর আগে শেষ হয়েছে। এ অর্থবছরে বাকি ৯ কিলোমিটারের মেরামত করতে ২৮ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্তসাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৫ কিলোমিটার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। ব্যয় হয় কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ছয় কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, এই মহাড়কের খালকুলা থেকে মান্নাননগর পর্যন্ত৯ কিলোমিটার অংশ প্রতিবছর যান চলাচলের অনুপযোগী থাকছে। এই অংশ মেরামতেই অংশটুকুর নির্মাণ ব্যয়ের চেয়ে এ পর্যন্ততিন গুণ বেশি অর্থ খরচ হয়ে গেছে। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ বলেন, মাছবাহী গাড়ির পানিতে এ মহাসড়ক নষ্ট হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবার এক বছরের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে।

যশোর-খুলনা মহাসড়কে মেরামতে ধীরগতিতে সম্প্রতি একনেক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যশোরের পালবাড়ী থেকে অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট পর্যন্ত৩৪ কিলোমিটার মেরামতে ২০১৩ সালে ২২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সময়মতো কাজ হয়নি। একপর্যায়ে ২০১৪ সালে সড়কমন্ত্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেন। পরে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামতকাজ শেষ করে। গত অর্থবছর থেকে ৩২১ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে।

বগুড়া সড়ক বিভাগের ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়ক মেরামতে কয়েক বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সাল পর্যন্ত১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এ অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১৮ কোটি টাকা। পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রগ্রামের (পিএমপি) আওতায় এবারও এ সড়ক বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ অর্থবছর যশোরে ক্যান্টনমেন্ট-স্বাধীনতা সরণি সড়কের এক কিলোমিটার মেরামতেই ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা, যা অন্যান্য মহাসড়কের মেরামতকাজের চেয়ে তিন গুণের বেশি। রাজশাহী শহর বাইপাসের মেরামতে কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে গড় ব্যয়ের দ্বিগুণের বেশি।

সওজ অধিদপ্তর ৫৪টি জেলায় ৮৭০ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক স্থায়ীভাবে মেরামত করতে প্রায় এক হাজার ২৪৫ কোটি টাকার বরাদ্দ পাচ্ছে। গত ২৯ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বরাদ্দসংক্রান্তনির্দেশ দিয়েছে সওজ অধিদপ্তরে। তাতে গড়ে প্রতি কিলোমিটার মহাসড়ক মেরামতে ব্যয় হবে প্রায় এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের পিএমপির আওতায় এসব বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের প্যাকেজ (অংশ) করাসহ ২৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সওজকে। দেখা গেছে, সম্প্রতি নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে এমন মহাসড়কও মেরামত করা হবে এ কর্মসূচির আওতায়। সবচেয়ে বেশি মহাসড়কের অংশ মেরামত করা হবে চট্টগ্রাম জোনে—১১৩ কিলোমিটার, সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ জোনে—৫৮ কিলোমিটার।

চার লেনে ব্যয় আরো বাড়ছে : ভারতে নতুন চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় সাড়ে ১০ কোটি টাকা, চীনে তা ১০ কোটি টাকা, ইউরোপে তা ২৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কসহ ছয়টি প্রকল্পেই নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল কিলোমিটারে ৫৪ কোটি টাকা, তা তিন বছরে আরো বেড়েছে। যেমন ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়কে ব্যয় ধরা হয়েছে কিলোমিটারে ৫৩ কোটি টাকা। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেনে কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৫৮ কোটি আট লাখ ১৪ হাজার টাকা। এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পে কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা।

ভূমি অধিগ্রহণ, যানবাহনের আলাদা সার্ভিস লেন, উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে বলে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হাসান ইবনে আলম দাবি করেছেন। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী, চার লেন মহাসড়কের কিলোমিটার প্রতি নির্মাণ ব্যয় ১২ কোটি টাকা হওয়ার কথা।

দ্বিগুণ ওজনে ১৬ গুণ ক্ষতি : সওজ অধিদপ্তরের ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘মহাসড়কে একটি গাড়ি সর্বোচ্চ ২২ টন ওজন বহন করতে পারবে। শেষ পর্যন্তমন্ত্রণালয় তা ৩০ টন পর্যন্তঅনুমোদন দিয়েছে। এখন বালু ও পাথরবাহী গাড়ি ৫০ টন বা এর চেয়েও বেশি ওজন পরিবহন করছে। নির্ধারিত ওজনের দ্বিগুণ ওজন বহন করলেই মহাসড়কের ১৬ গুণ ক্ষতি হয়। এ নিয়ে আমরা বড় সমস্যায় আছি।’ 

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে বেশি ওজনবাহী গাড়ি চলছে। তার ওপর এর দেড়-দুই কিলোমিটারের মাটির নিচের অংশ নাজুক উল্লেখ করে সবুজ উদ্দিন খান স্বীকার করেন, ‘মেরামতে অর্থ খরচ হলেও তা টিকছে না। এ জন্য সড়কটি নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।’

সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গাড়ির অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন মহাসড়কে ২১টি ওজন স্কেল স্থাপনের জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে একনেক বৈঠকে। এগুলো স্থাপন করা হবে গাজীপুর সদর, কেরানীগঞ্জ, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, বুড়িচং, ফেনী সদর, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম সদর, সীতাকুন্ড, নবীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, রামপাল, সাতক্ষীরা সদর, দামুড়হুদা, শিবগঞ্জ, হাকিমপুর, রৌমারী, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, শিবচর ও কালিহাতী উপজেলায়।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ কালের কন্ঠ 

লুটপাট অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় অস্থির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
পাঠ্যক্রম পরিচালিত দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব ক’টিতেই চলছে কোনো না কোনো অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগবাণিজ্য, অব্যবস্থাপনা এবং লুটপাটের মতো অস্থির ও উত্তাল সব ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি করানো নিয়ে চলছে বিতর্ক। এ নিয়ে গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ব্যবসায় অনুষদের ডিনের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ ঘেরাও কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। সাধারণ ছাত্রসহ আন্দোলনকারী ছাত্র সংগঠনগুলো বৃহস্পতিবার ঢাবির ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণকাজকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। শেষ পর্যন্তকেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। শিক্ষকরা ভিসির নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহঃ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সলরের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনজন শিক্ষক। তাদের অভিযোগ ভিসির আদেশে তাদের প্রত্যেকের বেতন থেকে ২১৭ টাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে বহিষ্কার নিয়েও দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা ওই ছাত্রীকে অশোভন ভাষায় ভিসির গালিগালাজের একটি অডিও সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করছে। দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় অডিটোরিয়ামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বসানো বাবদ এক কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এর পুরো টাকাই লোপাট করে দিয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা ন্ডে নানা-অনিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে নানা স্তরে নিয়োগবাণিজ্য, ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বসহ নানা ইস্যুতে অস্থিরতা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির নানা অনিয়ম-স্বেচ্ছারিতা এবং আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। অস্থিরতা চলছে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও।

গত কয়েকদিন ধরে পরীক্ষা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের অবৈধ ভর্তির সুযোগ নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ নেতাকর্মীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছিল। অবৈধভাবে ভর্তি হওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ঘেরাও কর্মসূচিতে দুই সহকারী প্রক্টরের উপস্থিতিতেই হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলর অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান ও অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের পদত্যাগ, সেই ৩৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ তাদের মধ্যে ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত আট নেতার পদত্যাগ এবং রোকেয়া হলে নিয়োগবাণিজ্যের ঘটনায় জড়িত হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা ও হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান, জিএস সায়মা প্রমির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা মানববন্ধন করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্তএ আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে হল ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। এই উন্নয়ন কর্মকা ন্ডে বরাদ্দকৃত এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার মধ্য থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা কমিশন বা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজে জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের দুই কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছেন।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি প্রথমে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। টাকা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তারপর হঠাৎ করেই তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেÑ ভিসি জাবি ছাত্রলীগকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। অপরিকল্পিত নির্মাণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত-বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আবার এই আন্দোলনের বিরুদ্ধেও ভিসির অবস্থানকে সমর্থন করছেন কিছু সংখ্যক শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশ। এ নিয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশের একমাত্র আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে সাক্ষাৎ করেন জাবির ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেননি তিনি। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।

অপর দিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনের মুখে কোনোভাবেই পদ থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন ভিসি।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তার পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় সব ভবনে ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।

কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছেন, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলর অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। এবার আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং একটি সংবাদমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা ফাতেমা-তুজ-জিনিয়ার সাথে তার অশোভন ভাষায় কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিওতে শোনা যায়, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত’ শিরোনামে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে শিক্ষার্থী জিনিয়াকে বকাঝকা করছেন ভিসি নাসির উদ্দিন। ফাতেমার সাংবাদিকতা ও ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে গতকাল তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক দামে কেনাকাটা
ডিপিপিতে পৃথক বিভাগের জন্য কেনার প্রস্তাব করা একই যন্ত্রপাতির দামের পার্থক্য রয়েছে। প্যাথলজি বিভাগের জন্য চারটি স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের দাম প্রতিটি দেঙ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ল্যাব মেডিসিন বিভাগের জন্য একই মাইক্রোস্কোপের প্রতিটি সাঙে ৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত দাম ধরা হয়েছে। এতে ব্যবধান দাঁঙায় ৫০০ গুণ। আবার পৃষ্ঠা ১১৫–তে একই মাইক্রোস্কোপের দাম দেখানো হয়েছে ৫ কোটি টাকা। বৈঠকে বলা হয়, হুবহু একই ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামাদির দামে বঙ ধরনের অসংগতি রয়েছে।
আসবাবের ব্যয় প্রাক্কলনেও অসামঞ্জস্য ও অসংগতি রয়েছে। একই ফার্নিচারের প্রাক্কলিত মূল্য একেক জায়গায় একেক রকম রয়েছে।

৩০ গুণ বেশি বালিশ ও কভারের দাম
সভায় ১২টি আইটেমেই প্রস্তাবিত মূল্যের সঙ্গে আনুমানিক বাজারমূল্যের পার্থক্য ব্যাপক বলে উল্লেখ করা হয়। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, বালিশের দাম দেখানো হয় ২৭ হাজার ৭২০ টাকা। কভারের দাম ২৮ হাজার টাকা। বাজারমূল্য থেকে প্রায় ৩০ গুণ বেশি ধরা হয় প্রাক্কলিত দাম। সার্জিক্যাল ক্যাপ ও মাস্ক প্রতিটি ৮৪ হাজার টাকা দেখানো হয়। গাউন দেখানো হয় প্রতিটি ৪৯ হাজার টাকা। এ ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাক্কলন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়।

১৬ হাজার টাকায় ২ টন এসি
প্রকল্পে কিছু কিছু যন্ত্রপাতির প্রাক্কলিত মূল্য অস্বাভাবিক রকম কম ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ প্রায় ১ হাজার ৫০টি দুই টন এসির প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৭৩ টাকা। এ রকম একটি এসির বাজারমূল্য আনুমানিক ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে।

পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলনে অসামঞ্জস্য
প্রস্তাবিত ভবনটি ২০ তলার হলেও ডিপিপিতে ১০ তলা ফাউন্ডেশন ধরে প্রাক্কলন করা হয়েছে। সভায় বলা হয়, নির্মাণ ও পূর্ত খাতে প্রায় ১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর যৌক্তিকতা নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম গণপূর্ত সার্কেল–৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রপাতির বিষয়ে ডিপিপি করার ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতা থেকে এই অসংগতি হতে পারে।

বইপত্রের মূল্যে অসামঞ্জস্য
বইপত্র কেনার জন্য মোট ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বইয়ের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে বইয়ের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল হেমাটোলজি বইটির দাম ২০১৫ সালের ১৩ নম্বর সংস্করণের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে, যার তিন কপির মূল্য ধরা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিটির দাম ৩৪ হাজার টাকা। 
৩ অক্টোবর ২০১৯/ প্রথম আলো 

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘুষের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ২০০টি দেশের ২০১৯ সালের চিত্র নিয়ে সম্প্রতি করা একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে থাকে।
১৫ নভেম্বর ২০১৯/ প্রথম আলো 

হাসপাতালে ‘পর্দা কা ন্ডে’ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধভাবে প্রাক্কলন ব্যতীত উচ্চমূল্যে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার সকালে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

এ মামলায় ঠিকাদার ও চিকিৎসকসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্তবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গণপতি বিশ্বাস, গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মিনাক্ষী চাকমা, সাবেক প্যাথলজিস্ট এ এইচ এম নুরুল ইসলাম, অনিক ট্রেডার্সের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন, আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মুন্সী ফররুখ হোসাইন ও ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে আইসিইউ না থাকলেও সেখানকার জন্য অন্তত ৪০ গুণ বেশি দামে রোগীকে আড়াল করে রাখার ওই এক সেট পর্দা কেনা হয়েছে। ২০১৪ সালে ফরিদপুর মেডিকেলের জন্য অনিক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি কার্যাদেশের মাধ্যমে ১০টি পণ্য সরবরাহের জন্য ১০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় ওই সব সরঞ্জামের দাম বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি ধরে ১০ কোটি টাকা বিলও জমা দেওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় বিল অনুমোদন না করায় তা আটকে যায়। ওই সব সরঞ্জাম সরবরাহের পর যে বিল জমা দেওয়া হয়, এতে আইসিইউতে ব্যবহৃত একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়। একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্যান্ট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি বিএইইস মনিটরিং প্যান্ট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার, একটি হেড কার্ডিয়াক স্টেথিসকোপের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা।
২৭ নভেম্বর ২০১৯/ প্রথম আলো 

নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি
ঋণ বিতরণে মহাকেলেঙ্কারির পর এবার বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে লোক নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। ন্যূনতম যোগ্যতা ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে দেয়া হয়েছে ৮৭১ জনের নিয়োগ। অনেকের ক্ষেত্রে অবতীর্ণও হতে হয়নি নিয়োগ পরীক্ষায়, দিতে হয়নি জীবনবৃত্তান্ত ও আবেদনপত্র। পত্রিকায় ছিল না কোনো নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। এমনকি মানা হয়নি সরকারি চাকরির বয়সসীমা। শুধু তাই নয়, কোনো ক্ষেত্রে ছিল না যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও। এসব নিয়োগের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার পদ। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নজিরবিহীন এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য। প্রতিবেদনটি প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এটি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হবে।
৩০ আগস্ট ২০২০/ যুগান্তর

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর আজ ১০০ দিন পুরো হচ্ছে। এই সমযো সরকারের ব্যস্থাপনা এবং সুশাসন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি। সংস্থাটি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের ঘাটতি নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। অনিয়ম এবং দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হযোছে এই প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রভাব পড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হযোছে, এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেজন্য এসব কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হযোছে এই প্রতিবেদনে। টিআইবি অভিযোগ করেছে যে, একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সব ধরণের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালযোর কর্মকর্তাদের একাংশ এতে জড়িত রযোছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করার বিষয়কে তুলে ধরা হযোছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার রক্ত সংগ্রহের টিউব, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে পিসিআর মেশিন কেনাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে নানা ধরণের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হযোছে। এর এতটাই খারাপ প্রভাব তারা দেখতে পেযোছে যে, নমুনার দূর্বলতা এবং অদক্ষতার কারণে ৩০ শতাংশ টেস্টের ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। টিআইবি বলেছে, শুরুতেই দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তা বেড়ে গেছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত কার্যক্রমে। অন্যদিকে বেসরকারি সব হাসপাতালের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হযোছে।
১৫ জুন ২০২০/ বিবিসি বাংলা

ওয়াসায় এমডির শাসন, দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ
প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পদ সৃষ্টি করে পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দের লোককে ওএসডি করাসহ বিস্তর অভিযোগ ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে। গত বছর ওয়াসার ১১টি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াসার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। নানা প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের নকশা ও বিবরণ অনুযায়ী কাজ করা হয় না। প্রকল্পে পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়, যাতে নির্দিষ্টসংখ্যক ঠিকাদার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। এ ছাড়া ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ঘুষ লেনদেন বর্তমানে একটি প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুদকের প্রতিবেদন বলছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়।
২৩ জুলাই ২০২০/ প্রথম আলো

সরকারি হাসপাতালে কেনাকাটায় দুর্নীতি: ১৫০ জনের তালিকা দুদকের হাতে
সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের কেনাকাটায় দুর্নীতিতে জড়িত ১৫০ জনের তালিকা ধরে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওই তালিকার অনেকের নাম যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির বিস্তার ঘটায় বলে দুদকের অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটা ও নিয়োগসহ ১১টি খাতের দুর্নীতি থামাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে দুদক।
১২ জানুয়ারি ২০২০/ যুগান্তর 

গৃহহীনদের ৫৬টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের ৫৬টি ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘর নির্মাণে নিুমানের ইট, বালু ও রড ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘরের নকশাও পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
১৮ ফেব্র“য়ারি ২০২০/ জাগো নিউজ 

ওসমানী হাসপাতালে 'অনিয়ম ও দুর্নীতি' বন্ধে দুদকে অভিযোগ
দীর্ঘদিন ধরে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার নামে চলছে ব্যবসা। অসহায় ও সাধারণ রোগীদের সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবাসহ বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে তা দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিনে সিট খালি থাকার পরও রোগীদের নিচে রাখা হচ্ছে। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওসমানী হাসপাতালের ল্যাব ব্যবহার করা হয় না। রোগীদের বাধ্য হয়ে বাহির থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। অপ্রয়োজনীয়ভাবে ডেলিভারিসহ বিভিন্ন রোগীদের রক্ত সংগ্রহের চাপ সৃষ্টি করা হয়।
২০ ফেব্র“য়ারি ২০২০/ সমকাল 

দুর্নীতি খেয়ে ফেলছে স্বাস্থ্যখাতকে
গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করে৷ তার মধ্যে বেশি দুর্নীতি হয়: কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহ খাতে৷ সাদা চোখে দেখা দুর্নীতির বাইরে একটি অভিনব দুর্নীতির কথাও তখন বলে দুদক৷ আর তা হলো, দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা। 

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৮৬ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়েছে৷ এক সেট পর্দার দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা৷ ১৭৫ কোটি টাকার নিুমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য৷ রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চার কোটি টাকার সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা কখনোই ব্যবহার করা হয়নি৷

২০১৭ সালে টিআইবির খানা জরিপে স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ জরিপে অংশ নেয়া ৪২.৫ ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে ঘুস দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ এই করোনার মধ্যে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা সবার জানা৷ এখনো তদন্তই চলছে, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
১৯ জুন ২০২০/ ডয়েচে ভেলে 

৪ লাখ টাকার ক্যানুলা কিনতে সাড়ে ৯ লাখ!
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থাপনার জন্য ৫০০টি হাই ফ্লো নজেল ক্যানুলা কেনার ক্ষেত্রেও বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দরে ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছিল।
১৪ জুলাই ২০২০/ কালের কণ্ঠ 


তিতাস-ওয়াসার দুর্নীতি
২০১৯ সালে তিতাস ও ওয়াসার ৩৩ খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুঃখজনক হল, এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের গরজ দেখায়নি সেবাধর্মী এ দুই প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, গত বছর দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম অনুসন্ধান চালিয়ে তিতাসে দুর্নীতির ২২ উৎস চিহ্নিত করে বলেছিল, তিতাসে গ্যাস সংযোগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না; অবৈধ সংযোগ, মিটার টে¤পারিং, কম গ্যাস সরবরাহ করেও সিস্টেম লস দেখানো হয় ইত্যাদি।
১০ আগস্ট ২০২০/ যুগান্তর 

শত কোটি টাকার মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক
মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়।

জানা গেছে, মালেক ড্রাইভার দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তর পাশে ছয় কাঠা জায়গার ওপর সাততলার ( হাজী কমপ্লেক্স ) দুটি আবাসিক বিল্ডিং রয়েছে। যাতে মোট ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে । এছাড়া আনুমানিক আরও ১০/১২ কাঠার প্লট রয়েছে । বর্তমানে সপরিবারে এই ভবনেরই তৃতীয়তলায় বসবাস করেন মালেক। বাকি ফ্ল্যাটগুলোর কয়েকটি ভাড়া দেয়া রয়েছে। ড্রাইভার মালেকের মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়া, ৭০, রাজাবাড়ী হোল্ডিংয়ে প্রায় ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ‘ইমন ডেইরি ফার্ম’ নামে একটি গরুর খামার রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০টি বাছুরসহ গাভী রয়েছে।
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০/ বাংলা ট্রিবিউন 

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের আরো অবনতি
সিপিআই ২০২০ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নীচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে। যেটা সিপিআই-২০১৯ এর তুলনায় দুই ধাপ নীচে নেমেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৯ সালে নিুক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪ তম। এর পেছনে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টিকে অন্যতম কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারহীনতা, মতপ্রকাশ ও জবাবদিহিতার অভাবকে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।
২৮ জানুয়ারি ২০২১/ বিবিসি বাংলা 

গচ্চা ৩৪৩ কোটি টাকা
করোনাভাইরাসকে হাতিয়ার বানিয়ে স্বাস্থ্য খাতে চলছে একের পর এক দুর্নীতি। আর এসব অনিয়ম-দুর্নীতি হালাল করতে করা হচ্ছে সব আয়োজন। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে সারা দেশের মানুষকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৬টি প্যাকেজে এক হাজার ২২৫ কোটি টাকার স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনে। এর মধ্যে ৫৭টি প্যাকেজে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। এতে অর্থের পরিমাণ 
৩৪৩ কোটি টাকারও বেশি। এসব পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রয়কারী কার্যালয়প্রধানের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আনুষ্ঠানিক দর-কষাকষি, দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদন—কোনো কিছুই নেওয়া হয়নি। উপরন্তু অনুমোদিত বাজেটের অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে।      
১০ এপ্রিল ২০২১/ কালের কন্ঠ 

আবার আলোচনায় উপাচার্যদের দুর্নীতি 
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। কিছু কিছু অভিযোগের তদন্তও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। গত দুই বছরে ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান তুহিন বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারি। কিন্তু নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। আইনের সীমবাদ্ধতা আছে৷’’

সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে ১৪১ জনকে একযোগে নিয়োগ দিয়ে আলোচিত হয়েছেন। এই ঘটনা তদন্ত করছে ইউজিসি। অভিযোগ রয়েছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে এবং সরকার দলীয় লোকজনকে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্যের বিরুদ্ধে এর আগেও নিজের মেয়ে ও জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। তার বিরুদ্ধে আরো ২৩টি অভিযোগেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও  উপাচার্য পদে তাকে বহাল রাখা হয়।

এর আগে আলোচনায় আসেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)-র উপাচার্য ড. নজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নমূলক  কাজে অনিয়মের একটি অভিযোগের তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। আরো কিছু অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। উল্টো তদন্তের জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রীর ‘ উসকানিকে' দায়ী করেছেন।

(বেরোবি)-র উপচার্য কোনো অনুমোদন ছাড়াই ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজের খরচ বাড়িয়ে করেছেন ২১৩ কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ আরো ৪৫ ধরনের অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।

এছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে নিয়োগে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির দুইটি অভিযোগের একটির তদন্ত শেষ হয়েছে এবং আরেকটির তদন্ত চলছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচর্যের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষ হয়েছে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এছাড়া অভিযোগ আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে। 
১৪ মে ২০২১/ ডয়েচে ভেলে 

করোনাভাইরাস মহামারিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির মহোৎসব, বলছে টিআইবিবাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অনেক আলোচিত প্রতিবেদনের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। কিন্তু দুনীতির এসব অভিযোগের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা কি নিয়েছে?

স্বাস্থ্যখাতে গত তিনমাসে নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, কেনাকাটায় দুর্নীতি আর অনিয়মের অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেসব খবরের কোন প্রতিবাদও আসেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে। কিন্তু মহামারির সময়ে এই খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে বলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি 
ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি গত বছর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। টিআইবি বলছে, করোনাভাইরাস মহামারিকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির মহোৎসব হচ্ছে।
১৯ মে ২০২১/ বিবিসি বাংলা 

২৫০ টাকার সুই ২৫ হাজার
দেশের বাজারে যার প্রতিটির মূল্য ২৫০ টাকা। অথচ এই সুচই প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায় কিনেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিষ্ঠান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টাকার অঙ্কে যা বাজারদরের চেয়ে গুনে গুনে ১০০ গুণ বেশি। আর শুধু সুচই নয়, এমন অস্বাভাবিক দামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে আরও বেশ কিছু এমএসআর (মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকুজিটি) পণ্য কিনেছে সরকারের এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। এমন দামে  যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, যা পৃথিবীর কোথাও এ দামে বিক্রি হয় না।

অস্ত্রোপচারের সময় চামড়া আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয় একধরনের বিশেষ যন্ত্র, যার নাম টিস্যু ফরসেপস। দেশের বাজারে যা প্রতিটি পাওয়া যায় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এটি কেনা হয়েছে প্রতিটি ২০ হাজার টাকায়। রোগীর প্রস্রাব ধরে রাখার ইউরিনারি ব্যাগের প্রতিটির বাজারমূল্য ৬০ টাকা, কিন্তু এই ব্যাগই প্রতিটি কেনা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মাত্র এক মাসে এই কেনাকাটা করেছে নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকার এমএসআর পণ্য অস্বাভাবিক দরে কেনাকাটার তথ্য পাওয়া গেছে।
৩০ মে ২০২১/ দেশ রূপান্তর 

আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি: ৫ কর্মকর্তা ওএসডি
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে ২২ জেলায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কোথাও নিুমানের উপকরণের ঘর ধসে গেছে, কোথাও স্থান নির্ধারণে হয়েছে দুর্নীতি। প্রকল্পে অনিয়মের সাথে সরকারি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৮০ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
৬ জুলাই ২০২১/ যমুনা টিভি 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৭ নথি গায়েব
২৭ অক্টোবর অফিস করে নথিগুলো ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ফাইলগুলো কেবিনেটের মধ্যে নেই। যে নথিগুলো খোয়া গেছে, সেগুলোর সিংহভাগই স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা–স¤পর্কিত। এগুলোর বেশিরভাগ কেনাকাটা নিয়েই দুর্নীতির অভিযোগ আছে।  

জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটাসংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা র্ট্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, নিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়সংক্রান্ত নথি।
৩০ অক্টোবর ২০২১/ প্রথম আলো

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন