পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের একাংশ ১৯৬৫ সাল থেকে ভারতীয় চক্রান্তের সাথে জড়িত হয় গোপন সংগঠন নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালিদের একটা অংশ জিয়ার আহ্বানে ক্যু করে। সেদিন জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে ক্যু হওয়ার মতো কিছু ঘটতো না। তাদের সাথে বাঙালি সৈনিকরা ক্যু করে। সেই যে সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে তা জিয়া খুনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হয় সেনাবাহিনীর একটি ক্যু এর মাধ্যমে। এরা ছিল সেই আগের ক্যু করা জাসদ প্রভাবিত বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার। সেসময় সেনাপ্রধান ছিল কে এম শফিউল্লাহ। ক্যু এর পর জিয়া সেনাপ্রধান হন। কিন্তু একচ্ছত্র ক্ষমতা তিনি পাননি। ক্যু কারীরাই ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল। ওই সময় জাসদের প্রধান নেতারা হয় জেলে, নয়তো গা-ঢাকা কিংবা দেশের বাইরে। তাহেরের হাতে জাসদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে যায়। তিনি অনেক বিষয়েই জাসদের রাজনৈতিক ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন।
৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর আওয়ামীলীগের প্রতি অনুগত অফিসাররা ক্যু করে। এই ক্যু হয় ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। খালেদ মোশাররফের সাথে ঝামেলার মধ্যেই আওয়ামীলীগের চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে বাম সেনা অফিসাররা। সেনানিবাসগুলো অস্থির হয়ে পড়ে। ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় বসলো জাসদের বিপ্লবী পার্টির ইমার্জেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা। হঠাৎ করেই সেখানে তাহের এসে উপস্থিত হন এবং ঢাকা সেনানিবাসে নিজ গৃহে অন্তরীণ জিয়ার হাতের লেখা একটা চিরকুট পড়ে শোনান। চিরকুটটা ইংরেজিতে। বাংলা তরজমা করলে তার অর্থ হবে—আমি বন্দী, নেতৃত্ব দিতে পারছি না। আমার লোকেরা তৈরি। তুমি যদি নেতৃত্ব দাও, আমার লোকেরা তোমার সঙ্গে যোগ দেবে।
তাহের প্রস্তাব দেন, জিয়াকে সামনে রেখে অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। ঘটনার আকস্মিকতায় সভায় উপস্থিত জাসদ নেতারা বেশ বেকায়দায় ছিলেন। তাঁরা একপর্যায়ে তাহেরের প্রস্তাবে সম্মতি দেন। অবশ্য তাহের জাসদ নেতাদের সম্মতির অপেক্ষায় থাকেননি। ওই দিন দুপুরেই তিনি সৈনিক সংস্থার সংগঠকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, মধ্যরাতে অভ্যুত্থান শুরু হবে।
অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য হলো
১. খালেদ মোশাররফের আওয়ামী চক্রকে উৎখাত করা;
২. বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করা;
৩. একটা বিপ্লবী মিলিটারি কমান্ড কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা;
৪. রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া;
৫. রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা;
৬. বাকশাল বাদে অন্য সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন; এবং
৭. সৈনিক সংস্থার ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা।
রাত ১২টায় শুরু হয় অভ্যুত্থান। প্রথম প্রহরেই জিয়া মুক্ত হন। ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই জিয়া-তাহেরের সমীকরণ ভেঙে যায়। ভোরে বেতারের বুলেটিনে সবাই জানতে পারেন, সিপাহি বিপ্লব হয়েছে এবং জিয়া মুক্ত হয়েছেন। ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক-লরি ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে থাকে। আমজনতা পথের পাশে দাঁড়িয়ে উল্লাস করে, হাততালি দেয় এবং অনেকে জীবনে প্রথমবারের মতো ট্যাংকে বা সেনাবাহিনীর ট্রাকে চড়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।
জনতা ও সৈনিকদের এমন সমর্থন পাওয়ার মূল কারণ ছিল মুজিবের ভয়ংকর দুঃশাসন। মানুষ সেই দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলো, সেটা যেভাবেই হোক। খালেদ মোশাররফ মুজিবের পক্ষ হয়ে পাল্টা ক্যু করার কারণে মানুষ খালেদকে ঘৃণা করতে শুরু করে। রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনও অন্যতম কারণ ছিলো।
জাসদের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি যে ছিল না, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায়। কয়েক শ সৈনিক ও জাসদ কর্মী একটি ট্যাংক নিয়ে ৭ নভেম্বর ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন জাসদ নেতা এম এ আউয়াল, মো. শাহজাহান ও মির্জা সুলতান রাজা। কারাগারে তখন শত শত জাসদ কর্মী। তাঁরা তিনজন সবাইকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘আপনারা অপেক্ষা করুন। আমরা বাইরে গিয়ে পরিস্থিতিটা দেখি।’ তাঁরা আর ফিরে আসেননি। ওই কর্মীরা অনেক দিন কারাবন্দী ছিলেন। কেউ দুই বছর, কেউ তিন বছর, কেউবা তার চেয়েও বেশি।
৭ নভেম্বর বহু খুনোখুনির মধ্যে তাহের-জিয়া পক্ষ টিকে যায়। খালেদ মোশাররফকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। জিয়া-তাহেরের এই ‘বিপ্লব’ ছিল ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে। ৭ নভেম্বর সকালে বন্দী অবস্থায় খালেদ নিহত হলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর দুজন সহযোগী কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা ও লে. কর্নেল এ টি এম হায়দারও নিহত হন। এই তিনজনই ছিলেন একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের স্মরণে ওই দিনটি অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসেবে পালন করেন। অথচ তাদের যারা খুন করে তারাও ছিল মুক্তিযোদ্ধা।
ক্ষমতার ত্রিভুজ লড়াইয়ে জিয়া-তাহেরের সম্মিলিত শক্তির কাছে খালেদ হেরে গিয়েছিলেন। পরে জিয়া-তাহেরের মধ্যকার দ্বন্দ্বে তাহের ছিটকে পড়েন। ২১ জুলাই ১৯৭৬ দেশদ্রোহী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ক্ষমতার মূল লড়াইয়ে আবেগ বা মান-অভিমানের কোনো জায়গা নেই। হেরে গেলে মূল্য দিতে হয়, এটাই চরম সত্য।
সৈনিক সংস্থার সংগঠকেরা অনেকেই গ্রেপ্তার হন, কেউ কেউ আত্মগোপন করেন। এদের সামনের কাতারের নেতা করপোরাল আলতাফের অনুপস্থিতিতে তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার একটা গ্রামে টাঙ্গাইলের গণবাহিনী কমান্ডার খন্দকার আবদুল বাতেনসহ একদল কৃষকের সঙ্গে সভা করার সময় পুলিশের অতর্কিত আক্রমণে তিনি নিহত হন। খন্দকার বাতেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। আলতাফের লাশ পাওয়া যায়নি। বাতেন পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছিলেন।
এতে ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। ধারণা করা হয় ৭ই নভেম্বরে কর্নেল তাহেরের জনপ্রিয়তা দেখে জিয়াউর রহমান শংকিত ছিলেন। আবার জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে তাহের চেয়েছে মূলত জাসদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে। সেনা অফিসার হত্যার অভিযোগে তাই তাহেরকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পেতে হয়।
মুজিবের মত জিয়াও সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশ্বাস করতেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করে তাই তিনি অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের (যারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলেন) পদোন্নতি দেন। এর মূল কারণ তারা অনুগত থাকতো। মুক্তিযোদ্ধারা কেউই চেইন অব কমান্ড মানতে প্রস্তুত ছিলেন না। এই কারণে জিয়া অমুক্তিযোদ্ধা সেনাদের ওপর নির্ভরশীল হন।
১৯৭৮ সালে অমুক্তিযোদ্ধা এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছিলেন এবং তাকে উপ-সেনাপ্রধান করেন।
মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের মধ্যে মোটাদাগে দুপক্ষ ছিল। এক পক্ষ ছিল জাসদ প্রভাবিত বাম অন্যপক্ষ ভারতের একনিষ্ঠ দালাল আওয়ামী লীগের অনুসারী। জিয়া দুপক্ষেরই শত্রুতে পরিণত হন। ধারণা করা হয় জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল হওয়ায় এরশাদেরও ইচ্ছে ছিল এভাবে ক্ষমতাবান হওয়ার। তাই এরশাদ কট্টর জিয়াবিরোধীদের নানান সময়ে পোস্টিং দিয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একত্রিত করেন। পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে তিনিই জিয়া হত্যার প্লট তৈরি করেন।
জিয়ার আমলে ক্যু হয়েছে ২২ বার। এর মধ্যে ২১ বার তিনি তা ঠেকাতে পেরেছেন। ২২ তম ক্যু তে প্রাণ হারান। এভাবে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই নিজেদের রক্ত পান করেছে প্রায় দশ বছর। ধারণা করা হয় এসব ক্যু'তে মৃত্যুবরণ করেন প্রায় দুই সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য।
জিয়া তার রাজনৈতিক দল, বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সংঘটিত একটি কোন্দলের সমঝোতা করতে চট্টগ্রামে যান। ৩০শে মে ভোরে জিয়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থান করছিলেন। ভোর ৪টায় সেনাবাহিনীর অফিসারদের তিনটি দল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ আক্রমণ করে। এ আক্রমণে ১৬ জন অফিসার জড়িত ছিলেন। তাদের এগারটি সাবমেশিন গান, তিনটি রকেট লাঞ্চার এবং তিনটি গ্রেনেড ফায়ারিং রাইফেল ছিল।
আক্রমণকারী দলের মূল হোতা লে. কর্নেল মতিউর রহমান, লে. কর্নেল মাহবুব, মেজর খালেদ, এবং লে. কর্নেল ফজলে হোসেন সার্কিট হাউজে রকেট নিক্ষেপ করে ভবনের দেয়ালে দুটি গর্ত সৃষ্টি করার মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করেন। এরপর অফিসাররা কক্ষগুলোতে জিয়াউর রহমানকে খুঁজতে থাকেন। মেজর মোজাফফর এবং ক্যাপ্টেন মোসলেহ উদ্দিন সর্বপ্রথম জিয়াকে খুঁজে পান। মোসলেহ উদ্দিন জিয়াকে জানান যে, তাকে তাদের সাথে সেনানিবাসে যেতে হবে। এরপর কর্নেল মতিউর রহমান আরেকটি দল নিয়ে উপস্থিত হন এবং জিয়াকে অনেক কাছ থেকে একটি এসএমজি দিয়ে গুলি করে।
আক্রমণকারীদের মধ্যে, লে. কর্নেল মতিউর রহমান এবং কর্নেল মাহবুবকে পলায়নরত অবস্থায় হত্যা করা হয়। মেজর খালেদ এবং মেজর মোজাফফর পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ক্যাপ্টেন মোসলেহ উদ্দিন গ্রেফতার হন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা লাভ করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব আর্মি স্টাফ লে.জে.হু.মু. এরশাদ মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মঞ্জুরের নেতৃত্বে সংগঠিত ক্যু দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। প্রথমেই কুমিল্লা সেনানিবাস মুভ করে চট্টগ্রাম দখলে নেওয়ার জন্য।
সরকার বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়ে সময়সীমা প্রদান করে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অপারেশনে অংশগ্রহণকারী অফিসাররা এবং অধিকাংশ সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। নেতৃত্ব প্রদানকারী অফিসাররা সহ জিওসি মঞ্জুর পার্বত্য চট্টগ্রামে পালানোর চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে সরকার প্রেরিত বাহিনী কর্তৃক তারা গ্রেফতার হন। কর্নেল মতিউর রহমান এবং লে. কর্নেল মাহবুব (২১ ইস্ট বেঙ্গলের প্রধান, মঞ্জুরের ভাগ্নে) মেজর মান্নান (অমুক্তিযোদ্ধা) কর্তৃক নিহত হন।
জেনারেল মঞ্জুর তার স্ত্রী ও সন্তানদের খাওয়ানো অবস্থায় ফটিকছড়ির একটি চা বাগানের জীর্ণ কুটিরে পুলিশ ইন্সপেক্টর গোলাম কুদ্দুসের হাতে ধরা পড়েন। পুলিশ ইন্সপেক্টর গোলাম কুদ্দুস তাকে গ্রেফতার করে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তিনি একজন আইনজীবীর জন্য আবেদন করলে তা নাকচ করে দেওয়া হয়। তিনি বারবার পুলিশের হেফাজতে থেকে চট্টগ্রামে জেলে প্রেরিত হওয়ার জন্য আবেদন করতে থাকেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পুলিশের হেফাজত থেকে নিষ্কৃতি পেলেই সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করবে। কিন্তু যখন তাকে পুলিশ ভ্যানে উঠানো হয়, তখন সেনাবাহিনী একটি দল থানায় উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণ বিতর্কের পর ক্যাপ্টেন্ এমদাদ জেনারেল মঞ্জুরের হাত-পা বেঁধে প্রায় টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চট্টগ্রাম অভিমুখে রওয়ানা হয়। পরবর্তীতে কী ঘটেছিল তা সরকার কখনো প্রকাশ করেনি। তবে সরকারের রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষিত হয়- চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈন্যের হাতে জেনারেল মঞ্জুর নিহত হয়েছেন।
১২ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে জিয়া হত্যাকাণ্ডে ভূমিকার জন্য সামরিক আদালতে মাত্র ১৮ দিনের দ্রুত বিচারকার্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৩তম মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে চট্টগ্রামে ৩০শে মের ঘটনাপ্রবাহে বুলেটের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় দুই বছর পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
সামরিক ট্রাইবুনালে জিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ১৮ জন অফিসারকে অভিযুক্ত করা হয়। এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। এদের মধ্যে ১৩ জন মৃত্যদণ্ড এবং বাকি ৫ জন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড লাভ করেন। এ অফিসারদের ১৯৮১ সালের ১-৩ জুনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অমুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল আবদুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ জুলাই ১৯৮১ থেকে ২৮ জুলাই ১৯৮১ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলে সামরিক আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
রায় অনুযায়ী ১২ জন অফিসারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। বিচারকারী অফিসার মেজর জেনারেল আবদুর রহমানকে পরবর্তীতে ১৯৮৩/৮৪ সালে ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানেই তিনি রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। জেনারেল রহমানের পরিবারের দাবি, তার মৃত্যুর সাথে এরশাদ জড়িত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্রিগেডিয়ার মহসিন উদ্দিন আহমেদ
কর্নেল এম আব্দুর রশীদ
লেঃ কর্নেল এওয়াইএম মাহফুজুর রহমান
লেঃ কর্নেল এম দেলোয়ার হোসেন
লেঃ কর্নেল শাহ মোঃ ফজলে হোসেন
মেজর এজেড গিয়াসউদ্দীন আহমেদ
মেজর রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া
মেজর কাজী মোমিনুল হক
মেজর এম মজিবুর রহমান
ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুস সাত্তার
ক্যাপ্টেন জামিল হক
লেঃ রফিকুল হাসান খান
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত
লেঃ মোসলেহ উদ্দীন। (যাবজ্জীবন কারাদন্ড)
বহিষ্কৃত অফিসারগণ
ব্রিগেডিয়ার আবু সৈয়দ মতিউল হান্নান শাহ
ব্রিগেডিয়ার একেএম আজিজুল ইসলাম
ব্রিগেডিয়ার গিয়াস উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী (বীর বিক্রম)
ব্রিগেডিয়ার আবু জাফর আমিনুল হক (বীর বিক্রম)
কর্নেল মোঃ বজলুল গনি পাটোয়ারী (বীর প্রতিক)
লেঃ কর্নেল এএস এনামুল হক
লেঃ কর্নেল মোঃ জয়নাল আবেদিন
লেঃ কর্নেল মোঃ আব্দুল হান্নান (বীর প্রতিক)
মেজর মঞ্জুর আহমেদ (বীর প্রতিক)
মেজর ওয়াকার হাসান (বীর প্রতিক)
মেজর মোঃ আব্দুল জলিল
মেজর রফিকুল ইসলাম
মেজর মোঃ আব্দুস সালাম
মেজর একেএম রেজাউল ইসলাম (বীর প্রতিক)
মেজর মোঃ আসাদুজ্জামান
ক্যাপ্টেন জহিরুল হক খান (বীর প্রতিক)
ক্যাপ্টেন মাজহারুল হক
ক্যাপ্টেন এএসএম আব্দুল হাই
ক্যাপ্টেন ইলিয়াস
লেঃ আবুল হাসেম
জিয়া ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে ক্যু করে যে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছেন, জিয়া হত্যা ও এই বিচারের মধ্যে মধ্য দিয়ে সেই অস্থিরতার পরিসমাপ্তি ঘটে। কারণ এরপর আর মুক্তিযোদ্ধাদের (বাম ও লীগ) পক্ষ হয়ে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ অবশিষ্ট ছিল না।