১১ ফেব, ২০১৫

ধান্ধা

১.
-- দোস্ত দেশের যা অবস্থা ধান্ধা- মান্ধা তো সব বন্ধ।
-- শালার খালেদা যা শুরু করছে। সরকার পইড়া গেলে তো পলান লাগবো।
-- হ দোস্ত যে ক’দিন আছি আরো কিছু কামানো লাগবো
-- বিদেশ যাইবার পয়সা তো অন্তত তুলতে হইবো
-- আমার মাথায় একখান জোশ বুদ্ধি আইছে।
-- কি বুদ্ধি দোস্ত?
-- শিবির ধরায়া দিমু। লাখ টাকা পামু।
-- আরে শিবির কই থাকে এডা তার বাপেরাই জানে না, তুই ক্যামনে বাহির করবি।
-- আরে বেটা ! তোর মাথায় একটু ঘিলু কম আছে। জীবনে কোন সলিড কাম করছি বলে তো আমার জানা নাই। এটা সলিড হওনের কি দরকার?
-- বুঝলাম না।
-- আরে রাস্তা থেকে সুন্দর, দাঁড়িওয়ালা হইলে আরো ভালা। এরকম কিছু পোলারে ধইরা সুমনের কক্টেল ধরায়া দিমু। ব্যাস! ভাই পুলিশ ডাইকা দিবে।
-- ওরে জোশ মাম্মা! এমন বুদ্ধি লই ঘুমাস ক্যামনে?
-- চল! ভাইর কাছে চল।
(কথোপকোথন গুলো দুই ছাত্রলীগ কর্মীর)
২.
তিন দিন ধরে কোচিং এ যায় নি মাসুদ। মা তাকে বের হতে দেয় না। রাস্তা-ঘাটে কখন কি ঘটে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ। মাসুদ তার বন্ধুদের ফোন করে পড়ার খোঁজখবর করে। পরদিন সে তার মাকে বলে, সবাই পড়ছে। আমি এভাবে কোচিং এ না গেলে পিছিয়ে পড়বো। আর তাছাড়া গাড়ি তো সব চলছে। যা দূর্ঘটনা ঘটছে সব ঢাকার বাইরে। অবশেষে তার মা তাকে যেতে দেয়।
কোচিং থেকে বের হলেই মসজিদ। মাসুদ বের হয়েই আসরের আযান শুনলো। চিন্তা করলো, নামাযটা পড়ে যাই। যেই মসজিদ থেকে বের হলো অমনি দুইজন লোক তাকে ডেকে রাস্তার পাশে নিয়ে গেলো। হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস এসে তাকে তুলে নিয়ে গেলো।
মাসুদের মা অপেক্ষা করছেন কখন তার ছেলে ফিরবে। সন্ধ্যা হয়ে গেলো অথচ সে ফিরলো না। মোবাইলটাও বন্ধ। একটি কল আসলো মাসুদের মায়ের নাম্বারে। থানা থেকে বলা হল আপনার ছেলে ককটেল সহ ধরা পড়েছে।
পরদিন মাসুদের বাবা পত্রিকা হাতে স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। মাসুদের হাতবাঁধা ছবি আর ককটেল গুলোর দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছেন। বুঝতে পারছেন না কি থেকে কি হয়ে গেলো। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মাসুদের মা।
৩.
ছাত্রলীগ থানা সেক্রেটারী মন্টুর আস্তানায় চলছে মদের ফোয়ারা উৎসবের আমেজ। মধ্যমণি রিংকু। কারণ তার এই অসাধারণ বুদ্ধিতে নতুন ধান্ধার খোঁজ পাওয়া গেছে। আজকের ইনকামের অর্ধেকই রিংকুকে দিয়ে হল। রিংকু কৃতজ্ঞতায় মন্টুর পা ধরে সালাম করলো। উৎসব নাচগানের পাশাপাশি চলছে ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
সুমনকে বললো দুই’শ ককটেল বানাতে। সেতুকে বললো পঞ্চাশটা পেট্রোল বোমা বানাতে। রিংকু বললো, ওস্তাদ এতগুলান দিয়ে কাম কি? একটা দুইটা হলেও তো হয়। মন্টু বললো,
প্রথমে আমরা কোন এক এলাকায় প্রচুর ককটেল ফাটাবো। দুইটা বাস পোড়া দিব। তারপর পুলিশ ঐ এলাকার শিবির ধরার জন্য উইঠা পইড়া লাইগবো। তখনই আমরা গোবেচারা কাউকে আবার ধইরা পুলিশেরে দিমু। ব্যাস এলাকা ঠান্ডা হইয়া যাইবো। এই এলাকায় আমরা আর ককটেল ফাটামু না। মিডিয়া মনে কইরবো ঐ বেচারা পোলাই মূল হোতা। হেই এরেস্ট তো এলাকা ঠান্ডা।
আর প্রতিটা কাজে চেষ্টা করতে হবে, দুই একটা মানুষ যাতে মারা পড়ে। মানুষ না মরলে কাম হইবো না। মানুষ না মরলে মিডিয়া কাভারেজ পাওন যাইবো না।
শিবির-বিএনপিরাও তো ফুটায়। সেগুলাতে মানুষ মরে না। মিডিয়ায়ও আসে না।
সুমন বলে উঠলো, ভাই পুলিশ তো ঝামেলা কইরতে পারে। মন্টু অট্টহাসি দিয়ে বললো, আরে ব্যাটা পুলিশ ঝামেলা করলে আমি আছি ক্যান? পুলিশ আমার পকেটে থাকে। চিন্তা করিস না।
৪.
থানা সভাপতি মারুফের মুখ অন্ধকার। ঝাড়ছে তার সাঙ্গপাঙ্গদের। মন্টু সমানে ধান্ধা কইরা যাইতেছে। কি করস তোরা? কোন কামের না তোরা ...... পুতেরা!!
কবির হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে।
-- কি হইছেরে কবির? যে কামে পাঠাইছি, হইছে?
-- ওস্তাদ এক্কেরে পাকা খবর নিয়া আসছি।
কবির মন্টুদের সব পরিকল্পনা জানায় মারুফকে।
মারুফের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। পাইছি। ধান্ধা পাইছি। এবার শুধু ধান্ধা না। মন্টুরে ভ্যানিশ করার উপায় পাইছি। কবির তুই যা। কাল মন্টুরা কই কই ককটেল ফাটাইবো একটু খোঁজখবর কর।
৫.
পরদিন কিছু পত্রিকার নিউজ। ককটেল ফাটানো ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের সময় ছাত্রলীগ সেক্রেটারী মন্টুসহ ৫ জন হাতেনাতে ধৃত। মারুফ সব পত্রিকাকে ম্যানেজ করতে পারে নি। সরকারের এসব নিউজ চাপানোর ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন