১৪ ডিসে, ২০১৫

৭১ এর গণহত্যাঃ চাপা পড়া কিছু ইতিহাস


১৯৭০ সাল থেকেই এদেশে গণহত্যা শুরু হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা বাঙ্গালীরাই এই গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের সূচনা করেছি। এরপর পাল্লা দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানী সৈন্যদের নারকীয় হত্যাকাণ্ড। কেউ যেন কম যায়না। ইয়াহিয়া খান নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যখন গড়িমসি করছিল তখন জনগণের প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। সেই স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিবাদের উসিলায় এদেশের বামপন্থী সম্প্রদায় ও আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা সমাজতন্ত্রবাদীরা পরিবেশকে আরো অশান্ত করার জন্য সচেষ্ট ছিল। অবশ্য এতে প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করেছি “র” (RAW)।  চাপা পড়ে যাওয়া বাঙ্গালী কর্তৃক গণহত্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

বাঙ্গালীরা রংপুর, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৯৪৭ সালে ভারতের বিহার থেকে আসা মুসলিমদের হত্যা করতে থাকে। কারন এসব অবাঙ্গালী বিহারীরা কখনোই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গঠিত হতে যাওয়া কোন রাষ্ট্রকে সমর্থন জানাবে না। পয়লা মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষনা করলে মুজিব ধর্মঘট আহবান করেন। সেই থেকে ২৫ দিন চলে তান্ডবলীলা। মুজিব একদিকে উত্তেজনাকর বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন অন্যদিকে অবাঙ্গালী ও সংখ্যালঘুদের ভাই আখ্যায়িত করে তাদের জান-মাল রক্ষার আহবান করছিলেন। রাজনৈতিক সমাবেশেও আওয়ামীলীগের কর্মীরা বন্দুক, ছোরা, দা সহ সব ধরণের অস্ত্রশস্ত্রসহ হাজির হচ্ছিল। 

৩ ও ৪ মার্চ চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ কলোনীতে ও ওয়্যারলেস কলোনীতে প্রায় ৭০০ অবাঙ্গালীদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এখানে বসবাসকারী বহু শিশু, নারী, পুরুষ নিহত হয়। সে সময় সরকারি হিসেবে ৩০০ লাশ দাফন করা হয়। 

দ্যা টাইমস অফ লন্ডন ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল রিপোর্ট করেছিলো, হাজার হাজার সহায় সম্বলহীন মুসলিম উদ্বাস্তু যারা ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে এসে আশ্রয় গ্রহন করে তারা গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ বাঙ্গালীদের দ্বারা ধ্বংসাত্মক আক্রমনের শিকার হয়। বিহারী মুসলিম উদ্বাস্তু যারা সীমানা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং ভারতে প্রবেশকারী একজন বৃটিশ টেকনিশিয়ান এই খবর নিশ্চিত করেন। উত্তর পূর্ব শহর দিনাজপুরে শত শত অবাঙ্গালী মুসলিম মারা গিয়েছে। 

খুলনায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৪ মার্চ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়, ৫ মার্চ খালিশপুর ও দৌলতপুরে ৫৭ জনকে অবাঙ্গালীকে ছোরা দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সামরিক বাহিনীর কঠোর সমালোচক সাংবাদিক মাসকারেনহাসও স্বীকার করেছেন অবাঙ্গালীদের এই অসহায়ত্বের কথা। অবাঙ্গালীদের জান মাল রক্ষায় শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে বাহ্যত নির্দেশ থাকলেও কোন কার্যকর উদ্যোগ ছিলনা। আওয়ামীলীগের কর্মীরা অদৃশ্য ইঙ্গিতে হত্যা খুন লুটতরাজ করে যাচ্ছিল অবারিতভাবে। সারাদেশেই চলছিল নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। সেই হিসেবে ঢাকা অনেক ভালো ছিল। 

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অনেক দূতাবাসে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। ১২ মার্চ ও ১৫ মার্চ মার্কিন কনসুলেট লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি করা হয়। ১৯ মার্চ হোটেল ইন্টারকন্টিনালে বোমা হামলা ও গুলি করে বিদ্রোহীরা। এগুলো ছিল শান্তি আলোচনার জন্য বড় অন্তরায়। তারপরও বলা চলে ইয়াহিয়া, ভুট্টো ও মুজিব আলোচনা ফলপ্রসুই হতে যাচ্ছিল। পরিস্থিতির উপর মুজিবসহ কারোই নিয়ন্ত্রণে ছিলনা। সেনাবাহিনীও সরকারি আদেশের বাইরে কোন জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছিল না। 

আর এদিকে RAW, এদেশীয় বাম ও আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা সমাজতন্ত্রবাদীরা এদেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। ইয়াহিয়া, ভুট্টো ও মুজিবের আলোচনাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য একের পর এক অবাঙ্গালী গণহত্যা চালিয়েছে, সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অনেক বিহারীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিশেষ করে জগন্নাথ হল এবং ইকবাল হলে (বর্তমান জহুরুল হক হল) আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। 

সারাদেশে সেনাবাহিনীর উপর বিনা উস্কানীতে আক্রমন করেছিলো বাঙ্গালীদের একটা অংশ। সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে জয়দেবপুরে। গাজিপুরে সমরাস্ত্র কারখানার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবের নেতৃত্বে একদল সৈন্য সেখানে পৌঁছানোর আগে আওয়ামীলীগ কর্মীরা জয়দেবপুরে ব্যরিকেড সৃষ্টি করে। ব্যরিকেডের জন্য তারা একটি ট্রেনের বগি ব্যবহার করে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জাহানজেবের নেতৃত্বে সৈন্যদল। তারা ব্যরিকেড সরিয়ে সেখানে পৌঁছায়। নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখে জাহানজেব আরবাব আবার যখন হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন বিশৃংখলাকারীরা সৈন্যদলকে আবারো ঘিরে ফেলে। বন্দুক, শর্টগান, লাঠি, বোমা ইত্যাদি নিয়ে হামলা চালায়। জাহানজেব বাঙ্গালী অফিসার লে. ক. মাসুদকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিলেন। মাসুদ ইতস্তত করলে অপর বাঙ্গালী অফিসার মঈন তার সৈন্যদের নিয়ে পাল্টা আক্রমন চালালে কিছু মানুষ নিহত হয় বাকীরা পালিয়ে যায়। মাসুদকে পরে ঢাকায় এসে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় আরেক বাঙ্গালী অফিসার কে এম সফিউল্লাহকে। 

এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ১৯ মার্চ সকাল দশটায় তার ইউনিটকে জানানো হয় ব্রিগেড কমান্ডার মধ্যহ্নভোজে আসছেন এবং নিকটবর্তী গাজিপুর সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করবেন। কিন্তু জনতা প্রায় ৫০০ ব্যরিকেড বসিয়ে সৈন্যদের আটকে দেয়। এগুলো সরিয়ে তারা আসলেও ফিরে যাওয়ার সময় জয়দেবপুরে মজবুত ব্যরিকেড সৃষ্টি করলে লে. ক. মাসুদ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমন সময় দুজন বাঙ্গালী সৈনিক জাহানজেবকে জানায় তাদেরকে বেধড়ক পিটিয়েছে, অস্ত্র গোলাবারুদ ছিনিয়ে নিয়েছে। এবার জাহানজেব গুলি করার নির্দেশ দিলে মঈন তার সৈন্যদের গুলি করতে বলে। তবে বাংলায় বলে দেয় ফাঁকা গুলি করার জন্য। এরপরও পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রনে না এলে এবার জাহানজেব কার্যকরভাবে গুলি করার নির্দেশ দেন। তারাও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। দু’জন নিহত হয়। সফিউল্লাহ আরো জানান, গাজিপুরের পরিস্থিতিও ছিল উত্তেজনাকর। রাস্তায় ব্যরিকেড দেয়া হয়েছিল। সমরাস্ত্র কারখানার আবাসিক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাকে আটকে ফেলে বাঙ্গালীরা। আবাসিক পরিচালককে উদ্ধার করতে আমরা সেনা প্রেরণ করেছিলাম। 

এভাবে সারাদেশে সেনাবাহিনীকে নানাভাবে উস্কে দিয়ে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করেছিলো বাঙ্গালীদের একটা অংশ। ইয়াহিয়া বিদ্রোহ দমন করার জন্য টিক্কা খানকে এদেশে আনলেও সেনাবাহিনীকে শুধুমাত্র আক্রান্ত হওয়া ছাড়া কোন ভূমিকা নিতে বারণ করেন। ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই ধৈর্য্যের প্রশংসা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক সাংবাদিক মাসকারেনহাস। এসব ঘটনায় মুজিব বেশ চাপ পড়েছিলেন। সমঝোতাও পড়েছিলো হুমকির মুখে। তারপরও হয়তো সমঝোতা হত। কিন্তু একটা ছবি যা বিদেশী পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো এরপর আর কোন আলোচনাতে অংশ নিতে রাজি হয়নি ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো। সেটি ছিল ঢাকা ভার্সিটি এলাকায় যুবক ছেলে মেয়েদের যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মার্চপাস্টের ছবি।  

এই রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ও আটক বিহারীদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমূহে অভিযান চালায়। বিদ্রোহী কিছু ছাত্র প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও সেটা ছিল বালির বাঁধের মত। সেদিন হলে যারা সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চেয়েছিলো তাদের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনী। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি অবাঙ্গালী হত্যা। 

ওয়াশিংটনস্থ সানডে স্টার ৯ মে ১৯৭১ এ সংবাদ বেরিয়েছে। যার বঙ্গানুবাদ, “খুলনায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় সফরকারী এক সংবাদকর্মী গতকাল জানান যে, তিনি একটি বিহারীদের বাড়ি দেখেছেন যাকে মানুষের কসাইখানা হিসেবে বর্ণনা দেন। যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী ভারত থেকে আগত বিহারী, পশ্চিম পাকিস্তানী এবং অন্যান্য অবাঙ্গালীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাঙ্গালীদের দ্বারা নৃশংসভাবে মরতে হয়”। 

স্বাধীনতার পরপরই অবাঙ্গালী হত্যা সব ধরণের সীমা ছাড়িয়েছে যাদের অধিকাংশই ছিল নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষ। ঢাকা, খুলনা, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক স্থানে চলে গণহত্যা। এর কোন পরিসংখ্যান কোথাও নেই। আদমজী কোর্ট ও বাওয়ানী বিল্ডিঙের উর্দুভাষী দারোয়ানগুলোকে হত্যা করা হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর। যারা অধিকাংশই ছিল বৃদ্ধ এবং যাদের একমাত্র অপরাধ ছিল বাঙ্গালী না হওয়া। সাদ আহমদ তার বইতে বলেন, দারোয়ানদের সংখ্যা ১৫-১৬ জন হবে। 

মুজিব ক্ষমতা নেয়া পর্যন্ত এই ধরণের হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যেই চলতে থাকে। মুজিব সরকারের প্রাথমিক সাফল্য ছিল এই ধরণের ঢালাও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়া। যদিও মাঝে মধ্যেই সংঘবদ্ধ আক্রমন হত বিহারীদের বিরুদ্ধে। এই ধরণের একটি ঘটনা ঘটে বাহাত্তরের মার্চে। বাঙ্গালীদের দ্বারা নিহত হয় প্রায় দুইশ বেসামরিক অবাঙ্গালী নারী-পুরুষ। 

যশোর হত্যাকাণ্ডের কিছু ছবি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা প্রামণের জন্য ব্যবহৃত হয়। অথচ ব্যাপারটা ভিন্ন। সেগুলো ছিল বাঙ্গালীদের দ্বারা সংগঠিত অবাঙ্গালী হত্যাকাণ্ড। 

স্বাধীনতার পর শুধু অবাঙ্গালী নয় নির্বিচারে খুন করা হয়েছে বেসামরিক বাঙ্গালীদেরও। 

ভারতীয় মিত্র বাহিনী যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিল। তাই ১৪ই ডিসেম্বর তারা চীনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কৌশলে হত্যা করে RAW এবং এদেশীয় মার্ক্সবাদী বামপন্থীয়দের সহায়তায় এবং কৌশলে এসব দোষ চাপিয়ে দেয় রাজাকার আর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর উপর। এই বিষয়ে আরো জানতে এই লিখাটি পড়তে পারেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তারা সমস্যায় পড়ে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাদের সিদ্দিকী ও মুজিব বাহিনীর কর্মকান্ড। তারা ঠান্ডা মাথায় বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করতে থাকে স্বাধীনতা বিরোধীদের। এই ছবিগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাদের সিদ্দিকী পরিচালিত মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা পায়। যা মিত্রবাহিনীর অংশ হিসেবে ভারতীয় বাহিনীকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। 

ওরিয়ানা ফ্যালাসি ১৮ ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড নিয়ে শেখ মুজিবের সাথে দীর্ঘ বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন। তার কিছু অংশ পড়ুন। ফ্যালাসি ১৮ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে...
- ম্যাসাকার? হোয়াট ম্যাসাকার? 
- ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকান্ডটি।
- ঢাকা স্টেডিয়ামে কোন ম্যাসাকার হয়নি, তুমি মিথ্যে বলছো।
- মিঃ প্রাইম মিনিস্টার। আমি মিথ্যাবাদী নই। সেখানে আরো সাংবাদিক ও হাজার হাজার লোকের সাথে আমি হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছি। আপনি চাইলে ছবি দেখাতে পারি। আমার পত্রিকায় সে ছবি প্রকাশিত হয়েছে। 
- মিথ্যেবাদী, ওরা মুক্তিবাহিনী নয়। 
- মিঃ প্রাইম মিনিস্টার দয়া করে মিথ্যেবাদী শব্দটা আর উচ্চারণ করবেন না, তারা মুক্তিবাহিনী তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবদুল কাদের সিদ্দিকী। 
- তাহলে হয়তো তারা রাজাকার ছিল, যারা প্রতিরোধের বিরোধীতা করেছিল এবং কাদের সিদ্দিকী তাদের নির্মূল করতে বাধ্য হয়েছিলো। 
- মিঃ প্রাইম মিনিস্টার, কেউ প্রমাণ করেনি যে, লোকগুলো রাজাকার ছিল এবং বিরোধীতা করেছিল। তারা ভীতসন্ত্রস্ত্র ছিল, হাত-পা বাঁধা ছিল তারা নড়া ছড়াও করতে পারছিলোনা। 
-মিথ্যেবাদী
- শেষবারের মত বলছি, আমাকে “মিথ্যাবাদী” বলার অনুমতি আপনাকে দেবো না। 
- আচ্ছা সে অবস্থায় তুমি কি করতে? 
- আমি নিশ্চিত হতাম, ওরা রাজাকার এবং অপরাধী, তারপর ফায়ারিং স্কোয়াডে দিতাম এবং খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এভাবে ঘৃন্য হত্যাকাণ্ড এড়াতাম। 
- ওরা এভাবে করেনি, হয়তো আমার লোকেদের কাছে বুলেট ছিলনা। 
- হ্যা তাদের কাছে বুলেট ছিল। প্রচুর বুলেট ছিল, এখনো তাদের কাছে প্রচুর বুলেট রয়েছে। তা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুলি ছোঁড়ে। ওরা গাছে, মেঘে, আকাশে, মানুষের প্রতি গুলি ছোঁড়ে শুধু আনন্দ করার জন্য। 

সাদ আহমেদ বলেন, খেলাফত ভাইকে হত্যা করে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়, কুমারখালীর আজিজুল হক ভাইকে নদীর চরে নিয়ে মুখের মধ্যে বালু ভর্তি করে হত্যা করা হয়। ভেড়ামারার প্রসিদ্ধ আলেম আলহাজ্ব মাওলানা আহমদ হোসেন সাহেবকে তিন খন্ড করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এভাবে সারাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন অপরাধ ছাড়াই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মসজিদ মাদ্রাসা থেকে শত শত আলেমদের ধরে এনে উন্মুক্ত মাঠে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে আর সেই মৃত মানুষগুলোর মাথা নিয়ে পৈচাশিক আনন্দ করে মুজিব বাহিনী ও কাদের সিদ্দিকীর লোকজন। এভাবেই চলতে থাকে গণহত্যা। যার কোন সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই।

তথ্যসূত্রঃ
১- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধঃ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ, এম আই হোসেন।
২- দ্যা ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ, আর্চার ব্লাড
৩- The 1971 Indo-Pak war, A soldier's Narrative, Hakim Arshad Koreshi
৪- The Crisis in East Pakistan, Govt of Pakistan, 5 August, 1971.
৫- Anatomy Of Violence, Sarmila Bose
৬-The event in East Pakistan, 1971- International Commission of Jurists, Geneva.
৭- The Telegraph, India, March 19, 2006
৮- আমি বিজয় দেখেছি, এম আর আখতার মুকুল
৯- ওরিয়ানা ফ্যালাসির জন্মদিন ও বাংলাদেশী নেতাদের নিয়ে তার মূল্যায়ন- আবু জুবায়ের
১০- ডেড রেকনিং, শর্মিলা বসু 
১১- মুজিবের কারাগারে পৌণে সাতশ দিন। সা'দ আহমদ, ১ম প্রকাশ ১৯৯০

৩টি মন্তব্য: