২৯ জুন, ২০১৮

চেচনিয়া এখন কেমন আছে?

রমজান কাদিরভ, চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট


আমি যখন ছোট ছিলাম, প্রাইমারিতে পড়তাম তখন খবর পেতাম চেচনিয়ায় মুসলিম নির্যাতনের। যে কয়টি এলাকায় মুসলিম নির্যাতনের জন্য আমাদের কাছে পরিচিত ছিল এর মধ্যে চেচনিয়া অন্যতম।

বহুদিন হলো সেখানের খবর আর পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগে খবরে দেখলাম মিশরের সালাহকে নাগরিকত্ব দিয়েছে চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ। আজকের লিখা চেচনিয়াকে নিয়ে।

চেচনিয়া বর্তমানে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্গত একটি মুসলিম স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। এটি রাশিয়ার উত্তর ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত। চেচনিয়ার আয়তন ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। চেচনিয়ার অধিকাংশ জনগণ মুসলিম। চেচনিয়া বহু বছর ধরে স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসনের ইতিহাস প্রায় চারশ' বছরের।

ককেশাস অঞ্চলের স্বাধীনতার জন্য প্রথম লড়াই মনসুর উসুরমা। তিনি একজন মুসলিম নেতা। তার নেতৃত্বে ১৭৮৫ থেকে ১৭৯১ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ করেছিলেন। বিফল হয়ে ১৮৩৪ সাল থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত ইমাম শামাইলের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলো স্বাধীনতার জন্য। অল্প কিছু সাফল্য থাকলেও চূড়ান্ত সফলতা আসে নি।

শেখ নাজমুদ্দীনের নেতৃত্বে মুসলিমরা আবারো সংঘবদ্ধ হয় এবং ১৯১৭ সালে উত্তর ককেশাস ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। এটা টিকিয়ে রাখতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে মুসলিমদেরকে। ১৯৪২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আবার সমগ্র ককেশাস দখলে নিতে সক্ষম হয়।

২য় বিশ্বযুদ্ধে চেচেনদেরকে বাধ্য করা হয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুদ্ধে সৈনিকদের জন্য রশদ পরিবহন, যুদ্ধাস্ত্র পরিবহন, বাংকার তৈরি, ব্রিজ কালভার্ট মেরামত ইত্যাদি কাজে চেচেনদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হয়। বেশিরভাগ চেচেন সুযোগ পেলেই যুদ্ধ থেকে পালাতো।

বিদ্রোহ, অবাধ্যতা, নাজিদের সহায়তা করা ইত্যাদি অভিযোগে বহু চেচেনকে হত্যা করে রুশ কমিউনিস্টরা। ১৯৪৪ সালে স্টালিন প্রায় ৫ লাখ মানুষকে সাইবেরিয়া, কাজাখাস্তান ও কিরগিজস্তানে নির্বাসন দেয়। এতে বহু মানুষ নিহত হয়। কারণ যেসব স্থানে নির্বাসন দেয়া হয়েছিলো এগুলো আদতে বসবাসের উপযোগী ছিল না।

চেচনিয়ার মূল শহর গ্রোজনী সবসময় মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেখানে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার একটি ভালো স্থান ছিল। মুসলিমদের নির্বাসনে পাঠানোর পর রুশরা মুসলিমদের সব স্থাপনা ধ্বংস করে, লাইব্রেরীগুলো জ্বালিয়ে দেয়। পরিত্যাক্ত এই নগরীতে স্থান দেয় ইহুদী ও মেসখেতিয়ান তুর্কিদের।

৫৩ সালে স্টালিনের মৃত্যু হয়, ৫৭ সালে এই অধ্যাদেশের ফলে মুসলিমরা আবার তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার সুযোগ পায়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চেচেনিয়া ভাষার কোন স্কুল করতে দেওয়া হয় নি যাতে মুসলমানেরা জ্ঞানের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েন।

১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘকালের রুশ দুঃশাসনের কবল থেকে পরিত্রাণ লাভের প্রত্যাশায় চেচেনরা ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে গণভোটের আয়োজন করে। গণভোটে চেচনিয়ার অধিকাংশ জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তৎকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন চেচনিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং চেচনিয়ায় প্রেসিডেন্টের শাসন জারি করে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন।

১ম চেচেন যুদ্ধঃ
কিন্তু চেচেন স্বাধীনতাকামীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আগ্রাসী রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ অক্টোবর চেচনিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সোভিয়েত বাহিনীর সাবেক জেনারেল জওহর দুদায়েভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তিনি ২৪ নবেম্বর ১৯৯১ আনুষ্ঠানিকভাবে চেচনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দুদায়েভের এ পদক্ষেপ রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী মেনে নিতে পারেনি।

১৯৯৪ সালের ২৬ নবেম্বরের পর রাশিয়া চেচনিয়ায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। আসলান মাশখাদভ নামক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা গেরিলা অপারেশন চালাতে থাকে। তবে অল্প কিছুদিন পরই গ্রোজনী দখল করে রুশরা। গ্রোজনী দখলের দু'বছর পর ১৯৯৬ সালে দুদায়েভকে রুশ বাহিনী হত্যা করলে ১ম চেচেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

২য় চেচেন যুদ্ধঃ
১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচেন ও আরবীয়ান বিদ্রোহীগণ শামিল বাসায়েভ ও আমির খত্তাবের নেতৃত্বে যুদ্ধ-বাহিনী গঠন করেন। চেচেন বিদ্রোহীদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে তৎকালীন রাশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের ১লা অক্টোবর কঠোর সামরিক অভিযান চালায়। রাশিয়ান বাহিনী চেচনিয়াতে ঢুকে পড়ে।

২০০০ সালে সরাসরি বিদ্রোহীদের মধ্যে এক নেতা আখমাদ কাদিরভকে পুতিন তার নিজের দলে টেনে নিতে সক্ষম হয়। এরপর তাকে নেতা বানিয়ে সেখানে ডিরেক্ট রুল শুরু করে রাশিয়া। আখমাদ কাদিরভেরও অনেক সমর্থক ছিল। ফলে বিদ্রোহীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং রুশরা সেখানে সহজে জয়লাভ করে।

আখমাদ কাদিরভ ২০০৪ সালে বিদ্রোহীদের একটি আত্মঘাতী হামলায় নিহত হলে তার ছেলে রমজান কাদিরভ এখন চেচনিয়ার নেতা হন। তার নেতৃত্বে অনেকটাই শান্তি ফিরে এসেছে রাশিয়ায়।

তিনি চেচনিয়ার বিদ্রোহ দমন করতে সমর্থ হন। এর একটি জোরালো কারণ হচ্ছে চেচনিয়ায় ইসলামী আইন বাস্তবায়নের সুযোগ দিয়েছে পুতিন। বিনিময়ে শুধু অনুগত থাকতে হবে। ২০০৭ সাল থেকে রমজান কাদিরভ একই সাথে মুসলিম ও রুশ স্বার্থ দেখার পর চেচনিয়ায় শান্তি ফিরে আসে।

রমজান কাদিরভ তার এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, স্বাধীনতা আমাদের জন্য সমস্যা ছাড়া আর কিছুই সৃষ্টি করেনি। রাশিয়ার কাছ থেকে চেচনিয়া স্বাধীন হোক তা আমি চাই না। আমরা শান্তি চাই।

২৭ জুন, ২০১৮

যেভাবে একটি স্কুল মসজিদে পরিণত হলো



নোয়াখালী ছেড়ে বাসটি যাবে ঢাকা। আমি পথিমধ্যে চড়ে বসলাম। নিজের আসন বুঝে নিয়ে মাত্র আরাম করে চোখ বন্ধ করলাম। তখনি বাসটি কিছু যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়াল। কিন্তু যাত্রী তোলা বাদ দিয়ে চলছে গ্যাঞ্জাম। কৌতুহলী হয়ে দরোজার দিকে তাকালাম। দুজন নারী উঠলেন, আবার নামলেন। গ্যাঞ্জাম তখনো চলছে।

তারপর আরেকজন উঠলেন। আরে, এ যে আমারই সহকর্মী বন্ধু। বুঝলাম গ্যাঞ্জাম তার সাথেই হয়েছে। সে বাসে উঠে তখনো সমানে মুখ চালিয়ে যাচ্ছে। ভুল ছিল সুপারভাইজারের। এতক্ষণে সে ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে লাগলো।

আমার আসন ছিল বাসের একেবারে সামনের দিকেই। আমি মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। যাতে করে সে আমাকে দেখতে না পায়। একটু মজা করার চিন্তা করলাম। আড় চোখে দেখলাম সে তার সিটে গিয়ে বসেছে। হাতে মোবাইল ফোন।

আমি তাকে মেসেজ করলাম, 'বাসে উঠে এভাবে রাগ করতে হয় না'। সে সচকিত হয়ে মাথা ঘুরাতে লাগলো। কয়েক সেকেন্ড পরই বুঝতে পারলো এই বাসে আমিও আছি। আমি কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে জানালার দিকেই তাকিয়ে আছি।

সে তার সিটে বসে আমাকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। অবশেষে হেঁটে আমার সিটের সামনে আসলো। দুজনেই হেসে উঠলাম। মুহুর্তেই একটি বিরক্ত মুখ হাসিমুখে পরিণত হলো।

প্রতিটা ঈদের পর পরই বেজে উঠে বিচ্ছেদের সুর। ঈদ আমাদের জন্য বিরাট রহমত। বিশেষ করে আমরা যারা পরিবারের সাথে থাকি না। ঈদ উপলক্ষে আমাদের সুযোগ হয় প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সময় কাটাবার।

আর এবার আমার জন্য বিচ্ছেদ যে অন্যান্য বারের চাইতে অনেক বেশি সে কথা সহজেই অনুমেয়।

বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় আসার পথে সহকর্মীকে পেয়ে বিচ্ছেদ অনেকটাই বন্ধনে পরিণত হয়েছে। সহকর্মীর অনুরোধে নিজের বাসায় না গিয়ে রাতে তার বাসায় দাওয়াত নিলাম।

পরদিন সে আমাকে বললো মসজিদ দেখবে আমার সাথে। আমি যেভাবে পুরাতন মসজিদ দেখি। বললাম ঠিক আছে, তাই হবে।

কোন মসজিদে যাবো? কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করে পেয়ে গেলাম একটি নাম 'খান মুহাম্মদ মৃধা' মসজিদ। অনলাইনে ছবি দেখে দারুণ লোভ হয়েছে দেখার। সেজেগুজে বের হয়ে পড়লাম।

ফাঁকা রাস্তা। ঢাকা তখনো অবগুণ্ঠন খুলে নি। ঝিরি ঝিরি বাতাস। এমন সময়ে রিকশা ভ্রমণ খুবই আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। গল্প করতে করতে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।

দেখেই মনে হয়েছে এটা একটা দুর্গ। তিন গম্বুজঅলা এই মসজিদটির অন্যতম বিশেষত্ব হলো এটি প্রায় সতের ফুট উঁচু প্লাটফর্মের উপর নির্মিত। মসজিদটি যে যুগে নির্মিত সে যুগে দোতলা মসজিদ নির্মিত হওয়ার নজির নেই। কিন্তু মসজিদটি দোতলায় নির্মিত।

নিচের তলায় অনেকগুলো কক্ষ। সেই কক্ষগুলোকে ভিত্তি করে উপরে অনেকটা মঞ্চের মত করে স্থাপনাটি তৈরী করা হয়েছে। মঞ্চের উপর মুঘল রীতিতে নির্মিত ৪৮ ফুট বাই ২৪ ফুট ক্ষেত্রবিশিষ্ট মসজিদ। দোতলায় মানে মঞ্চে যেমন প্রশস্ত আঙিনা রয়েছে তেমনি নিচে আরো বড় আঙিনা রয়েছে।

আমরা প্রথমে ভেবে নিয়েছি পুরো স্থাপনা একটি দূর্গ। নিচের কক্ষগুলোতে সৈন্যরা থাকতো। কিন্তু আবার খটকা লাগলো লালবাগ কেল্লা এত কাছে থাকতে এখানে আবার কেন ছোট দূর্গ স্থাপনের প্রয়োজন হলো!

বাসায় ফিরে এই মসিজদ নিয়ে পড়তে লাগলাম। পরে জানতে পেরেছি এটা ছিল একটি স্কুল/ মাদ্রাসা। আগের দিনে যেখানে জ্ঞান চর্চা হতো।

মসজিদটির উত্তর-পূর্বদিকে নির্মিত কক্ষগুলো শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মঞ্চের উপর তিন গম্বুজ মসজিদ ও স্কুল ভবন ছাড়া অবশিষ্ট উন্মুক্ত অংশও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কাজে ব্যবহৃত হতো।

মঞ্চের নিম্নস্থ কক্ষগুলো মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের বাসস্থান হিসেবে নির্মিত হয়েছে। এটি খুব নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। ধারণা করা হয় খান মুহাম্মদ মৃধা এই স্কুলের প্রধান পন্ডিত ছিলেন।

বর্তমানে এটি মসজিদ হিসেবে পরিচিত হলেও মসজিদ ছিল এখানে গৌণ। মূল ব্যাপার ছিল স্কুল। এই স্কুলটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন বাংলার সুবেদার ছিলেন সম্রাট ফররুখ শীয়ার। অবশ্য তিনি তখনো মুঘল সম্রাট হননি। তখন সম্রাট ছিলেন আওরঙ্গজেব বা আলমগীর। ফররুখ শীয়ার ছিলেন আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র।

ফররুখ শীয়ার যখন বাংলার সুবেদার তখন ঢাকার প্রধান কাজী ছিলেন কাজী ইবাদুল্লাহ। কাজী ইবাদুল্লাহ ঢাকার সন্তানদের সুশিক্ষিত করার জন্য স্কুলের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি সুবেদারের কাছে আবেদন করলে ফররুখ শীয়ার তা মঞ্জুর করে ও অর্থ বরাদ্দ করেন।

কাজী ইবাদুল্লাহ সেই অর্থ পন্ডিত খান মুহাম্মদ মৃধাকে দিয়ে একটি স্কুল নির্মানের নির্দেশ দেন। পন্ডিত সাহেব তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। মসজিদটি ছিল স্কুলের মসজিদ।

ইংরেজরা ঢাকা দখল করার পর মুসলিমদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় স্কুলটি বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত স্কুলটি বন্ধই রয়েছে। এখন পুরো স্কুল মসজিদে পরিণত হয়েছে। দোতলার শেণিকক্ষগুলো এখন মসজিদের খাদেমদের থাকার জায়গা। আর নিচতলার কক্ষগুলো ব্যবহৃত হয় লালবাগ কেল্লার কর্মচারীদের হোস্টেল হিসেবে।

খান মুহাম্মদ মৃধা মসজিদ আপনার ভালো লাগবে। বিশেষ করে দোতলায় উঠার জন্য সিঁড়ির ২৩ টি ধাপ আপনাকে নিয়ে যাবে সেই মুঘল আমলে। স্মরণ করিয়ে দেবে ইসলামী ঐতিহ্যের সেই দিনগুলোর কথা।

কৃতজ্ঞতা ও মাগফেরাত কামনা করছি তাদের জন্য যারা আমাদের প্রিয় শহরকে ইসলামের শহর হিসেবে তৈরী করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাত নসীব করুন। আমীন।

১৩ জুন, ২০১৮

আফগানিস্তানে কমিউনিস্টদের শাসন ও পতন

Add caption
আফগানিস্তান মানেই আমাদের মনে হয় আগাগোড়া ইসলামী রাষ্ট্র। কিন্তু আসলে তা ছিল না। আফগানিস্তানে যেমন ইসলামপন্থীদের উত্থান হয়েছে তেমনি কমিউনিস্টদেরও উত্থান হয়েছে।

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে ছাত্রদের মধ্যে কমিউনিস্টদের প্রভাব বাড়তে থাকে। এর একটি বড় কারণ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আর অন্য কারণ ছিল সেসময় পৃথিবীব্যাপী পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে এটি ছিল একটি জনপ্রিয় আদর্শ।

আফগানিস্তানে স্বৈরশাসককে উৎখাত করে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে ১৯৭৮ সালে। মুহাম্মদ দাউদ খান ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল আফগানিস্তানে কমিউনিস্টদের শাসন। এই সময় আফগানিস্তান পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপিএ) শাসন করেছে। সাওর বিপ্লবের মাধ্যমে এই দল ক্ষমতায় আসে। এই বিপ্লবে মুহাম্মদ দাউদ খানের সরকার উৎখাত হয়।

দাউদ খানের পতনের পর পিডিপিএ প্রধান নূর মুহাম্মদ তারাকি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হন। তারাকি ও হাফিজউল্লাহ আমিন তাদের শাসনামলে বেশ কিছু সংস্কার করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে নারী অধিকার, শিক্ষা ও ভূমি সংস্কার।

ভূমি সংস্কার করতে গিয়ে তারা জনগণের বিপক্ষে চলে যায়। জনগণ তাদের এই সংস্কার কার্যক্রম ভালোভাবে নিতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে তখন জনগণ কমিউনিস্টদের অসাধুতা ও প্রতারণার সাথে পরিচিত হয়। একই সাথে তারাকী ইসলামপন্থীদের নির্মুলে গনহত্যা শুরু করে। প্রায় ২৭০০০ রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় তারাকি।

কমিউনিস্টদের একটি বড় জনসমর্থন ছিল আফগানিস্তানে। সেসময় আফগানিস্তান জামায়াতের আমীর শহীদ বুরহান উদ্দিন রব্বানী কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লিখালিখি ও বক্তব্য দিয়ে আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। যখন জনগণ তারাকী গংদের সম্পদ লিপ্সা ও রক্তলিপ্সা দেখতে পায় তখন জনসমর্থন জামায়াতের দিকে আসতে থাকে।

এদিকে আবার কমিউনিস্টরা মধ্যে দুটো দলে বিভক্ত ছিল। তারা ক্ষমতা গ্রহণের পর শীঘ্রই তারাকি ও আমিনের নেতৃত্বাধীন খালকপন্থি এবং বাবরাক কারমালের নেতৃত্বাধীন পারচামপন্থিদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব্ব শুরু হয়। খালকপন্থিরা এতে জয়ী হয় পারচামপন্থিরা দল থেকে বহিষ্কৃত হয়। অধিকাংশ উল্লেখযোগ্য পারচাম নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্বাঞ্চলীয় ব্লকে পালিয়ে যান।

খালক-পারচাম দ্বন্দ্ব্বের পর এবার খালকপন্থিদের অভ্যন্তরে তারাকি ও আমিনের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব্ব শুরু হয়। আমিন এই দ্বন্দ্ব্বে জয়ী হন এবং তার নির্দেশে তারাকিকে হত্যা করা হয়। তারাকি গণহত্যা ও ভূমি সংস্কারের ফলে দেশে অজনপ্রিয় ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নেও সে জনপ্রিয় হতে পারেনি।

ইতিমধ্যে তারাকি ও আমিনের ইসলাম বিরোধী অবস্থান ও জনগণের সম্পদ রাষ্ট্রের কুক্ষিগত করার কারণে সেনাবাহিনী থেকে ইসলামপন্থীরা ও দেশপ্রেমিকরা পদত্যাগ করে। আফগানিস্তান জামায়াতের নেতৃত্বে মুজাহিদিন বাহিনী গঠিত হয়। যারা আফগানিস্তানকে কমিউনিস্টদের হাত হতে রক্ষা করার জন্য লড়াই শুরু করে।

১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে জামায়াত নেতৃত্বাধীন মুজাহিদিন গ্রুপকে দমন করার জন্য আফগান সরকারের সমর্থনে সোভিয়েত ইউনিয়ন হস্তক্ষেপ করে। ২৭ ডিসেম্বর সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর হাতে আমিন নিহত হন। এরপর পালিয়ে যাওয়া পারচাম নেতা কারমালকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের নতুন নেতা বানায়। কারমাল ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার শাসনামল সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের জন্য পরিচিত।

১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে ৩৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ আফগানিস্তান থেকে "সোভিয়েত সৈন্যদের তাৎক্ষণিক, জরুরি এবং নি:শর্ত প্রত্যাহারের" দাবি জানিয়ে প্রস্তাব পেশ করে, অন্যদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১০৪–১৮ ভোটে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়।

যুদ্ধের ফলে সোভিয়েত সেনাদের হাতে ব্যাপক সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়। কয়েক লক্ষ উদ্বাস্তু এসময় পাকিস্তান ও ইরানে পালিয়ে যায়। ১৯৮০ সালের এপ্রিল একটি সংবিধান প্রণীত হয় এবং সমর্থন মজবুত করার জন্য দলের বাইরে থেকে সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। কারমালের কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে শান্তি আনয়ন করা যায়নি। ১৯৮৬ সালে মুহাম্মদ নজিবউল্লাহ দলের মহাসচিব হিসেবে কারমালের উত্তরসুরি হন।

নজিবউল্লাহ বিরোধীদের সাথে সমঝোতা চেষ্টা করেন। ১৯৮৭ সালে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ১৯৮৮ সালে আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুজাহিদিনরা এই নির্বাচন বয়কট করে এবং যুদ্ধ অব্যাহত রাখে।

নজিবুল্লাহ তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নানান পলিসি এপ্লাই করে। নজিবুল্লাহ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ওয়াতান পার্টিতে রূপান্তর করে। দেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র করার ঘোষণা পর্যন্ত দেয়। কিন্তু কোন কিছুই তার পক্ষে যায় নি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপে জেনেভা চুক্তিতে সাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

চুক্তি অনুসারে সোভিয়েত সেনাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় নাজিবুল্লাহ। ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নাগাদ আফগানিস্তান ত্যাগ করে সোভিয়েত সেনারা। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েতরা চলে যাওয়ার পর সরকার ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।

সোভিয়েত সেনারা চলে যাওয়ার পর খালকপন্থী কমিউনিস্টরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। নানামুখী সমস্যা ও মুজাহিদিনদের প্রবল আক্রমণে অবশেষে নজিবুল্লাহ পদত্যাগে আগ্রহী হয়। ১৯৯২ সালের মার্চে নজিবউল্লাহ তার সরকারকে পদত্যাগের প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘের সাথে এক সমঝোতার পর তার সরকারের পরিবর্তে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

নজিবউল্লাহর পদত্যাগের পর আবদুর রহিম হাতিফ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান হন। মুজাহিদিনদের হাতে কাবুলের পতনের পূর্বে নজিবউল্লাহ জাতিসংঘের কাছে ক্ষমা চাইলে তা মঞ্জুর করা হয়। নজিবউলাহ কাবুলের স্থানীয় জাতিসংঘ দপ্তরে আশ্রয় নেন।

মুজাহিদিনদের সাথে যুদ্ধে আফগান কমিউনিস্ট সরকার ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। আফগানিস্তানের সরকারি হিসেবে সোভিয়েত বাহিনীর হাতে ২,৫০,০০০ এবং আফগান সরকারের হাতে ১,৭৮,০০০ ব্যক্তি নিহত হয়।

কমিউনিস্টদের পতনের পর ১৯৯২ সালে কমিউনিস্ট বিরোধী যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ বুরহানউদ্দিন রব্বানী ইসলামী প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সরকার স্থায়ী হয়নি পশতুন জাতীয়তাবাদী নেতা গুলুবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হটকারিতা ও সিআইএ সৃষ্ট আল কায়েদা কর্তৃক ষড়যন্ত্রের কারণে

১১ জুন, ২০১৮

একটি গালি ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা



কিছুদিন আগে কাঁটাবন মোড়ে দেখলাম এক রিকশায় সাথে অন্য রিকশার ধাক্কা লাগলো। অমনি একজন রিকশাচালক চিৎকার করে উঠলো ওই ব্যাটা রোহিঙ্গা দেখে চালাইতে পারিস না?

মিরপুরে একটা ছোট হোটেলে খেতে বসেছিলাম। তখন এক ওয়েটার আরেক ওয়েটারের সাথে কী একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। খানিক পরেই একজন আরেকজনকে রোহিঙ্গা বলে গালি দিতে লাগলো। এভাবে অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি ঢাকায়।

আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা। তবে আমি ঢাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে দেখেছি এবং শুনেছি একটি গালি ভাইরাল হতে। আর সেটা হলো 'রোহিঙ্গা'। একজন অপরজনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য রোহিঙ্গা বলছে। তবে এই গালিটা শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে নয়। এটা চালু হয়েছে অশিক্ষিত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটু পরে আসছি। তার আগে অন্যদিক দিক থেকে ঘুরে আসি।

আমার জন্মসুূত্র পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের সাথে যুক্ত থাকলেও আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা হয় বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায়। এই কারণে নোয়াখালীর প্রতি সহজাত ভালোবাসা সবসময়ই কাজ করে। নিজেকে নোয়াখাইল্যা পরিচয় দেই এবং নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

এখন থেকে প্রায় একযুগ আগে আমি নোয়াখালী ছেড়ে অন্যান্য স্থানে বসবাস করা শুরু করি। সেসব স্থানে চলতে গিয়ে আমার যে জিনিসটা জানা হয় তা হলো নোয়াখাইল্যা একটি গালির নাম। খারাপ মানুষদের নোয়াখাইল্যা বলা হয়। এবং নোয়াখালীর মানুষ খারাপ হয়। তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা ঠিক নয়।

আমার ক্ষেত্রেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি কোথায় নতুন পরিচিত হচ্ছি, যখনই বললাম বাড়ি নোয়াখালী অমনি নাক সিঁটকে বললো, ও নোয়াখালী! আমি বেশ কষ্ট পেতাম। এখন অবশ্য পাই না। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।

আবার অন্য অভিজ্ঞতাও হয়েছে। যেমন একজন মানুষের কিছুদিন চলার পর যখন সে জানতে পারলো বাড়ি নোয়াখালীতে তখন সে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার বাড়ি নোয়াখালী? আমি তো নোয়াখালী সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা পোষণ করি। কিন্তু আপনি তো সেরকম না।

যাই হোক, আমি সেই থেকেই এর কারণ অনুসন্ধান করতে থাকি। কেন এরা খারাপ? 
আমি নোয়াখালীর এবং নোয়াখালীর বাইরে অনেকের সাথে আলোচনা করেছি। যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। 
১- নোয়াখালীর মানুষগুলো বেশি বুদ্ধিমান। তারা তাদের বুদ্ধি দিয়ে সবাইকে ঠকায়। 
২- তারা একতাবদ্ধ থাকে। নোয়াখালীর বাইরের মানুষকে তারা সবসময় প্রতিরোধ করে। এককথায় সিন্ডিকেট করে চলে। 
৩- নোয়াখালীর মানুষ প্রতারক, খারাপ ও নিচু মানসিকতার লোক হয়ে থাকে। 
৪- এরা নিজেদের বেশি জ্ঞানী মনে করে এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করে। সবকিছু দখল করার মানসিকতা থাকে। 
৫- এদের মধ্যে স্বজনপ্রীতির মানসিকতা খুব বেশি।

যিনি এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে যে পয়েন্টে কথা বলেছেন তাকে আমি দেখিয়ে দিয়েছি এই রকম বৈশিষ্ট্যধারী মানুষ সব জেলায় সম্ভব। তাহলে নোয়াখালী কেন খারাপ হবে? নোয়াখালীতে যেমন খারাপ মানুষ আছে তেমনি বাংলাদেশের সব অঞ্চলে খারাপ মানুষ আছে।

এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম অপরাধপ্রবণ এলাকা বলে একটা ব্যাপার আছে। বাংলাদেশে কোন জেলায় কোন অপরাধ বেশি হয় তার পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। সেই অপরাধপ্রবণ এলাকার কোন তালিকায় কোন ক্যাটাগরিতে নোয়াখালীর নাম নেই। তাহলে নোয়াখালীতে খারাপ মানুষ বেশি অথবা অপরাধপ্রবণ মানুষ বেশি এই ধারণাও ধোপে টিকছে না।

নোয়াখালীর মানুষ কেন খারাপ এই বিষয়ে আমাকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত উত্তর দিয়েছেন দিনাজপুরের একজন পৌর মেয়র।

দেশ ঘুরার অংশ হিসেবে একবার গিয়েছিলাম দিনাজপুরে। সেখানে যার আথিতেয়তা গ্রহণ করেছিলাম তিনি আবার ঐ পৌর মেয়রের পরিচিত। আমরা সফরকারীরা সেই মেয়রের বাড়িতে গেলাম।

দিনাজপুরের পৌর মেয়র আমাদের মতন না। আমাদের পৌর মেয়রকে তো জনসাধারণের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা অনেকটা মন্ত্রী-এমপিদের মতো। গাড়ির কাঁচের আড়ালে তাদের দেখতে হয়।

সেই পৌর মেয়রকে দেখলাম একেবারেই সাধাসিধে। মূল বাড়ির সামনে টিনের তৈরী একটি কাচারি ঘর আছে। তিনি সেখানেই সবার সাথে দেখা করেন। একটি লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরা সাদাসিদে চলন।

পরিচিত হতে গিয়ে যখন জানালাম আমার বাড়ি নোয়াখালী তখন তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে আরো ডিটেইল ঠিকানা জানতে চাইলেন। তারপর বললেন সেই ছোটবেলায় যে নোয়াখালী থেকে চলে এলাম আর যাওয়া হয়নি। সবাই যথারীতি অবাক। বিশেষ করে অবাক আমাদের সাথে থাকা দিনাজপুরের মানুষগুলো।

গত শতাব্দীতে উপকূলীয় এলাকা বলতে নোয়াখালীকেই বুঝানো হতো। জানেনই তো, নোয়াখালীর ইন্টারসিটি ট্রেনের নাম 'উপকূল এক্সপ্রেস'। সেই উপকূলীয় অঞ্চলে সবসময়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকতো। বন্যা, জলোচ্ছাস, নদীভাঙ্গন, ঘুর্নিঝড় ইত্যাদি নোয়াখালীকে নিয়মিত আক্রমণ করতো। বিশেষ করে নদীভাঙ্গনের কবলে পড়ে মানুষ নোয়াখালী ছেড়ে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

মেয়রের ক্ষেত্রেও সেই ঘটনাই ঘটেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নদীভাঙ্গন চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে নোয়াখালী শহর পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই থেকে নোয়াখালীর মানুষ রোহিঙ্গা স্রোতের মত পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

নোয়াখালীর মানুষ যখন বিভিন্ন জেলায় অনুপ্রবেশ করে তখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ঐসব অঞ্চলের শ্রমজীবী ও নিন্ম আয়ের মানুষ। তাদের আয়-রোজগারে ভাগ বসায় নোয়াখালীর মানুষ। সেই থেকে নোয়াখালী ধীরে ধীরে একটি গালিতে ও ঘৃণাবাচক শব্দ হিসেবে পরিচিত হতে থাকে।

এর মধ্যে যে ব্যক্তি নোয়াখালীর কোন খারাপ মানুষের সাথে পরিচিত হয় তখন তার বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। নোয়াখালীর ব্যাপারে সে আরো সতর্ক ও সমালোচনা মুখর হয়। নোয়াখালীর সেই অবস্থানটা এখন নতুন করে নিতে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

আমরা যারা সচেতন আছি আমাদের উচিত হবে নতুন কোন জাতিবিদ্বেষ তৈরী না করা। কাউকে রোহিঙ্গা বলে গালি দিতে দেখলে তাদের সাবধান ও সতর্ক করে দেব। বুঝিয়ে বলবো এই ধরণের আচরণ সঠিক নয়। রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে তাদের প্রতি যাতে কোন বিদ্বেষ সৃষ্টি না হয় সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবো।