২ সেপ, ২০১৮

ঊনসত্তরে আইয়ুব খানের পতনে কি বাঙালিদের ভূমিকা ছিল?



বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় ধরণের মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সেই গণ অভ্যুত্থানের চাপ সামলাতে না পেরে আইউব ক্ষমতা ইয়াহিয়া খানের হাতে দিয়ে অবসরে চলে যায় বা পদত্যাগ করে। একই ইতিহাসে আবার শিখানো হয় আইয়ুব অত্যন্ত কঠোর স্বৈরশাসক ছিলেন।

কিন্তু তার পদত্যাগের ঘটনা দেখে তো তাকে স্বৈরশাসক বলার উপায় নেই। একজন শাসক যার বিরুদ্ধে পাঁচটি প্রদেশের একটি প্রদেশে বিক্ষোভ হয়েছে যেটা মূল ভূখন্ড থেকে দুইহাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। সেখানে বিক্ষোভের কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন যদি সত্যিই ঘটনাটা এমন হয় তাহলে তাকে স্বৈরাচারী বলার তো কারণ নেই। বরং তাকে বলা যেতে পারে তিনি জনগণের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

আসলে কি তাই? সেনাশাসক আইয়ুব কি এমন কেউ ছিলেন? না, আসলে তা নয়। আইয়ুব তেমন টাইপের কেউ ছিলেন না। আইয়ুব পূর্ব পাকিস্তান ইস্যুতে পদত্যাগ করেন নি। অথচ আমাদের বিখ্যাত বিখ্যাত ইতিহাসবিদেরা এমনভাবে এটাকে দেখিয়েছেন যেন ঢাকায় তারা আন্দোলন করে উল্টায়া ফেলেছিলো আর ঐদিকে দুইহাজার কিলোমিটার দূরে ভয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন আইয়ুব খান।

৬৯ এ ঢাকায় কী হয়েছিলো তা অল্পবিস্তর সবাই জানেন, সেদিকে আর না গেলাম। আজ আমরা আলোকপাত করবো কেন আইয়ুবের পতন হয়েছিলো। সেই ঘটনা প্রবাহ কী ছিলো?

মূলত আইয়ুবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো একত্র হয়েছিলো ৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক ভারত যুদ্ধ হয়। যুদ্ধটি স্থায়ী ছিল ১৭ দিন। কাশ্মীর সহ নানা ইস্যুতে পাকিস্তানে অতর্কিত আক্রমন করে ভারত। পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য অপ্রস্তুত থাকার থাকার কারণে প্রাথমিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। তবে ৫-৬ দিনের মধ্যেই আইয়ুব খানের রণনৈপুণ্যে ও বাঙ্গালী সৈনিকদের নজিরবিহীন আত্মত্যাগে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। ভারতের প্রায় ৬০ টি বিমান ৪৫০ ট্যাংক ধ্বংস হয়। এমতাবস্থায় ভারত যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগী হয়ে পড়ে। অপরদিকে পাকিস্তানের গোলাবারুদ সংকট ও যুদ্ধক্ষেত্র পাকিস্তান হওয়ায় পাকিস্তানের জনজীবন হুমকির সম্মুখিন। সব মিলিয়ে পাকিস্তানও যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে।

ভারতের বন্ধু রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং একটা চুক্তি হয়, যা তাসখন্দের চুক্তি বলে অভিহিত। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ জনগণ এই চুক্তি মানে নি। এটা ছিল সূবর্ণ সুযোগ কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের। কিন্তু আইয়ুবের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় তা হলো না। ক্ষেপে উঠে রাজনীতিবিদেরা ও পাকিস্তানী জেনারেলরা। আইয়ুবের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো জোট গঠনের চেষ্টা করে। এতে নেতৃত্ব দেয় মুসলিম লীগ। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে সেই মিটিঙে আরো অংশগ্রহন করে আওয়ামীলীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলাম। আওয়ামীলীগের পূর্বপাকিস্তানের সেক্রেটারী মুজিব সেই প্রোগ্রামে আ. লীগের হয়ে অংশগ্রহন করেন।     

সেই প্রোগ্রামে মুজিব আইয়ুবের হয়ে কীভাবে ভূমিকা রাখে তা নিয়ে আগেই লিখেছি। এখান থেকে পড়ে নিতে পারবেন। আইয়ুব নানানভাবে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা করলেও তখন থেকে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করতে থাকে। কিন্তু আইয়ুব ক্ষমতায় এসেছে মানুষের সমর্থনে যখন রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে এবং পাকিস্তানে একটি অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তখন জনগনের আহ্বানে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। সেনাপ্রধান হিসেবে আইয়ুব ব্যাপক সমর্থন পায় মানুষের। তাই ১৯৬৫ সালের পরে তার বিরুদ্ধে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করতে চাইলেও সেভাবে আন্দোলন জমাতে পারেনি।

১৯৬৮ সাল ছিল আইয়ুবের দশম বছর। আইয়ুব সেই সালকে 'উন্নয়নের দশক' ঘোষণা দিয়ে উৎসব পালন করতে থাকে। এই উৎসব তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে আরো উসকে দেয়। কারণ ইতিমধ্যে তার স্বৈরাচারী আচরণে মানুষ অতিষ্ঠ। রাজনৈতিকভাবে বাম ও ডান উভয় পক্ষই তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। সে একই সাথে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং কমিউনিস্ট পার্টিসহ সকল বামপন্থীর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা মানুষের অভাব হয়নি।   

একই সাথে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে খারাপ হওয়া, মুদ্রার মান কমে যাওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রসদ যুগিয়েছে।

পাকিস্তানের এই ক্রান্তিকালে পাকিস্তানে আবির্ভাব হন ক্যারিশমাটিক নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি ১৯৬৬ সালের ৩০ নভেম্বর পাকিস্তান পিপলস পার্টি গঠন করেন। পাকিস্তানি পিপলস পার্টি ছিল একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক দল যা সামাজিক উদারনীতি ও গণতান্ত্রিক নীতির সমর্থক। তার দলটি এমনছিল এতে জাতীয়তাবাদী, ডানপন্থী, বামপন্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হতে পারে।

তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন। হত্যার চেষ্টা, মিথ্যা পুলিশি মামলা, কারাবাস এবং তার বন্ধুদের এবং পরিবারের নির্যাতন সত্ত্বেও ভুট্টো সরকার বিরোধী বিক্ষোভ থেকে তাকে কেউ সরাতে পারেনি।

আইয়ুব সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে, অর্থনীতি অল্পকিছু মানুষের কাছে কুক্ষিগত করার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বেশিরভাগ নাগরিকরা প্রতিবাদ শুরু করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং প্রতিরোধের কাজটা শুরু হয় বেকার যুবক এবং শিক্ষার্থীদের দিয়ে। ছাত্ররা আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতির প্রতিবাদে তাদের ডিগ্রি সার্টিফিকেট পুড়িয়েছে।

১৯৬৮ সালে, যখন আইয়ুব খান "উন্নয়নের দশক" উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন এটিকে নিন্দা করে এবং তারা "পরিবর্তনের দশক" নাম দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের জন্য ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশনের নেতৃত্বে পাকিস্তানে বিভিন্ন শহরে যেমন করাচি, রাওয়ালপিন্ডি এবং পেশোয়ারে বিক্ষোভ শুরু হয়।

১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে, সামরিক স্বৈরশাসক উন্নয়নের দশক উদযাপন করতে লাহোরের দুর্গ স্টেডিয়ামটি নির্বাচন করেছিল। সরকার সেখানে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের থাকতে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সবাই সেখানে জড়ো হয়। স্টেডিয়াম একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে যায় ছাত্রদের দ্বারা। অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশনের নেতৃত্বে হঠাৎ একটি গান গাওয়া হয় যার শিরোনাম ছিল বিষাদের দশক। পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে সব ছাত্র কোরাস করতে লাগলো। ছাত্রদের এই বিষয়টা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আগত অন্যান্যরাসহ সরকার পুরোপুরি শকড হলো। ছাত্রদের এমন পরিকল্পনা সরকারের অজানা ছিলো। অল্প সময়ের মধ্যেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ শুরু হলো। শুরু হলো ছাত্রবিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ আগের মতো কিছু দাবী নিয়ে নয়, এখন একটাই দাবী আইয়ুবের পতন।

৭ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে সরকার বিরোধী ছাতদের আন্দোলনে পুলিশ গুলি করে তিনজন ছাত্রকে হত্যা করে। এই হত্যা ছাত্রদের সাথে সকল মানুষকে আন্দোলনে নামিয়ে দেয়। সবাই মিলে সরকারকে অসহযোগিতা করতে থাকে। তারা রেল ও বাসের ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়। প্রত্যেক নাগরিক আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভূট্টোর জ্বালাময়ী ভাষণগুলো। 

ভুট্টো তার সমর্থকদের সাথে নিয়ে বিক্ষোভ করছে।

রাওয়ালপিন্ডি হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে ছাত্ররা স্টুডেন্ট একশন কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করে। এটি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে আরো বড় ভূমিকা রাখে। এই কমিটির প্রধান আহ্বায়ক ছাত্রনেতা শেখ আব্দুল রশিদ। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এটা সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে ছাত্ররা মারাত্মক সহিংস হয়ে উঠে। তারা রাওয়ালপিন্ডিকে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে ফেলে। তারা 'হুইল জ্যাম'(চাকা বন্ধ) নামে ধর্মঘট করে।

ঠিক একই সময়ে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ভুট্টো সরকারের এই নাজুক অবস্থার সুবিধা নেয়। সে পাকিস্তানের কৃষক ও শ্রমিকদের মাঠে নামিয়ে দেয়। শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং সকল কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। বিদ্রোহ ক্রমেই শহর থেকে গ্রামে প্রসারিত হতে থাকে। কৃষকেরা স্বৈরাচারি আইয়ুবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। এই ঘটনাগুলো দ্রুত হিংস্র হয়ে ওঠে। কৃষকরা তাদের দমনকারীদের উপর হামলা করে, জমির মালিকদের এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যা করে।

বহু স্থানে ছাত্ররা কৃষকদের সহযোগিতায় নায়েব, তহশিলদার, পুলিশ, দারোগা, সার্কেল অফিসারদের বিচার করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘুরিয়েছে। ঘুষ হিসেব করে ফেরত নিয়েছে, জরিমানা করেছে, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পদত্যাগ করিয়েছে, বেশ্যাবাড়ি তুলে দিয়েছে, মদ গাঁজার দোকান ভেঙ্গে দিয়েছে, চোর-ডাকাতদের শায়েস্তা করেছে। এ ছাড়া শহরাঞ্চলে ক্ষমতা অপব্যবহারকারী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রকাশ শারীরিক আক্রমণ বা নথিপত্রাদি তছনছ এবং অফিসে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটেছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের পেশাজীবীরা তাদের দীর্ঘদিনের অপূর্ণ দাবিদাওয়া উত্থাপন করেছেন এবং রাজপথে নেমে মিছিলে উচ্চকিত হয়েছেন, হাজার হাজার শ্রমিক তাদের ন্যূনতম অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে ঘেরাও আন্দোলনকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকদের বিদ্রোহের সাথে সাথে আইয়ুব ডিসেম্বরে নতুন করে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়। বিক্ষোভকারীরা (ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবী) তখনো এক প্লাটফর্মে ছিলো না। তারা প্রত্যেকে আলাদাভাবে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলো। ভুট্টো অনেক লোকের সংগঠিত করার জন্য মূলত দায়ী, তিনি জাতির স্বার্থে সবার হয়ে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই কারণে যত দিন যেতে থাকলো ততই ভুট্টো বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসতে লাগলেন। ভূট্টো শুধু জনগণের মধ্যে নয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও আস্থা অর্জন করতে থাকে।

এভাবে কয়েক মাস বিক্ষোভ এবং সহিংসতার পর, ২৫ মার্চ, ১৯৬৯ সালে সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে। আইয়ুব খান সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। এর পরদিন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। 

যদিও আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে ও গণতন্ত্রের ব্যাপারে নাগরিকরা তখনো উদ্বিগ্ন ছিল, তবে পাকিস্তানি জনগণ আইয়ুব খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো। এটাকেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে দেখা হয়।

এবার আসি আমাদের ইতিহাসের প্রসঙ্গে। আমাদের ইতিহাস রচনাকারী লোকেরা ভীষণভাবে মিথ্যুক। বলা হয় ঢাকার গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুবের পতন হয়েছিলো। মূলকথা হলো ঢাকায় আন্দোলন করেছিলো আওয়ামীলীগ। শেখ মুজিব ভারতের সাথে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে আগরতলায়। সেসময় শেখ মুজিব জানিয়েছে এটা মিথ্যা মামলা ছিলো। পরবর্তিতে সে সহ ঐ মামলার আসামীরা স্বীকার করেছে মামলা সঠিক ছিলো।

যাই হোক ঐ মামলায় মুজিবের ফাঁসী হতে পারতো রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক মুজিবের জন্য আন্দোলন করছিলো আওয়ামীলীগ। আইয়ুব যখন দেখলো তার অবস্থা নাজুক তখন সে মুজিবকে হাতে নেয়ার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ২২ ফেব্রুয়ারি। সেদিনই মুজিবের মুক্তি মিলে। ২৩ ফেব্রুয়ারি মুজিবকে সংবর্ধনা দেয়া হয় ও বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয় সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে।

আইয়ুব খান তার গদি টেকানোর জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান করে। একমাত্র মুজিব ছাড়া আর কেউ আইয়ুবের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। মুজিব সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জনগণকে শান্ত থাকতে দেশকে স্থিতিশীল করতে আহ্বান জানায়। রাজনৈতিক দলগুলো সাড়া না দেয়ায় আইয়ুবের গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয়।

ঢাকায় বাঙালিরা আন্দোলন বন্ধ করে দেয় ২২ ফেব্রুয়ারি। তারা কীভাবে ২৫ মার্চের আইয়ুবের পতনের ক্রেডিট নেয়? আজিব!

তথ্যসূত্র
১- "Crises in Political Development" and the Collapse of the Ayub Regime in Pakistan. 
by Maniruzzaman Talukder. Vol. 5, No. 2 (Jan., 1971), pp. 221-238

২- Pakistan, the year of change. Salahuddin Ghazi

৩-  Pakistani students, workers, and peasants bring down a dictator, 1968-1969 by global nonviolent action Database

৪-  Exit stage left: the movement against Ayub Khan. Published in Dawn, Sunday Magazine, August 31, 2014

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন