২১ অক্টো, ২০১৮

শাহ নিয়ামত উল্লাহর ভবিষ্যতবাণী ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।

শাহ সুজা নির্মিত শাহ নিয়ামত উল্লাহ মসজিদ, এখানে শাহ নিয়ামত উল্লাহ নামাজ পড়াতেন।

নিয়ামত উল্লাহ সম্পর্কে আমি প্রথমে জানতে পারি আমার দাদা এবং বাবার কাছ থেকে। দাদা যেসময়ে মুসলিম লীগ করতেন ছাত্রাবস্থায় তখন নিয়ামত উল্লাহর কাসীদা পাঠ করে তারা উজ্জীবিত হতেন। ইংরেজ আমলে এটি নিষিদ্ধ থাকায় তৎকালীন মুসলিমরা এটি মুখস্ত করে নেয়। এটি ছিল মূলত ফার্সি ভাষায় লিখিত একটি কবিতা।

নিয়ামত উল্লাহ কাশ্মীরী যে বাংলাদেশের চাঁপাইতে শুয়ে আছেন একথা আমি চাঁপাই যাওয়ার পরও জানতাম না। যখন তৎকালীন গৌড় তথা চাঁপাইয়ের শিবগঞ্জে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন এক স্থানে দেখি বিখ্যাত পণ্ডিত সৈয়দ শাহ নিয়ামত উল্লাহ কাশ্মীরী শুয়ে আছেন।

শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ হলেন মধ্যযুগের একজন প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক। তিনি তৎকালীন গৌড়ে (চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থান) ইসলাম প্রচার করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মক্কার বনু আসাদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম প্রচারের জন্য তাঁরা ভারতবর্ষে আগমন করেন। তিনি সুলতান শাহ সুজার সময়ে দিল্লীর " করোনিয়ার " নামক স্থান থেকে রাজমহলে আসেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে।

শাহ সুজা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি গৌড়ের উপকন্ঠে (বর্তমানে চাঁপাইয়ের শিবগঞ্জ উপজেলায়) স্থায়ীভাবে আস্তানা স্থাপন করেছিলেন। এই অঞ্চলে তিনি দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সঙ্গে ইসলাম প্রচার করেন। শিবগঞ্জেই ১৬৬৪ / ১৬৬৯ সালে তাঁকে সমাধি  দেওয়া হয়।

তিনি বিখ্যাত ছিলেন বিভিন্ন কারণে

১- তিনি গৌড়ের মানুষের রোগমুক্তির জন্য ঔষধের ব্যবস্থা করেছেন। যার মাধ্যমে সব রোগের চিকিৎসা হতো। এই ঔষধের নাম 'দাফিউল বালা'। এটা মূলত পুকুরের পানি যে পুকুরের নাম নাম ছিলো 'তালাবে শিফা'। পুকুরটি এখনো আছে তবে গুণাগুণ আর নেই।

দাফিউল বালা সমৃদ্ধ দিঘী
২- তিনি কুরআনে যতগুলো হরফ ছিলো ততগুলো হরফ দিয়েই প্রত্যেকটি সূরা ফার্সীতে অনুবাদ করেছিলেন।

৩- তিনি মূলত একজন দায়ী ছিলেন। তাঁর হাতে দিল্লী থেকে নিয়ে বাংলা পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ মুসলিম হয়েছেন।

৪- তার ভবিষ্যতবাণী। যা তাকে আজো স্বরণ করতে বাধ্য করায়।

শিবগঞ্জে সোনা মসজিদের পাশেই শাহ সুজার ত্বহাখানা রয়েছে। ত্বহাখানা শব্দের অর্থ মেহমানখানা। শাহ সুজা এটি নিয়ামত উল্লাহ রহ: এর জন্য তৈরি করেছেন। এটি তাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর।

তৎকালীন যুগে তাপ নিয়ন্ত্রন করার জন্য বেসমেন্টে ঘর তৈরি করে তার চারপাশে ভিজিয়ে রাখার জন্য ফোয়ারা ব্যবহার করা হতো। এরকম একটি দারুণ ঘর তৈরি করে দিয়েছেন মুগল সম্রাট শাহজাহানের ৩য় ছেলে শাহ সুজা। তিনি ও আওরঙ্গজেব এই মহান পণ্ডিতের ভক্ত ছিলেন।

শাহ সুজা নির্মিত ত্বহাখানা
গৌড়ের প্রাচীন কীর্তির মধ্যে এই শ্রেণীর ইমরাত এই একটিই পরিলক্ষিত হয়। কড়িকাঠের উপর খোয়া ঢালাই করে যার ছাদ ও কোঠা জমাট করা হয়েছিল। উল্লেখিত মসজিদ ও তাহখানার নিকটস্থ সরোবর দাফেউল বালা'র তীরে অবস্থিত। এই দুই ইমারত হতে দুইটি সিড়ি সরোবরের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। 

ভবনটির উত্তর-পশ্চিমে আরও দুটি কাঠামো রয়েছে নিকটস্থটি একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং একটু উত্তরে অবস্থিত অপরটি ভল্টেড বারান্দা ঘেরা একটি গম্বুজ সমাধি। যেহেতু ভবনগুলো একই সময় একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল, সেহেতু সব ভবনকে একত্রে একটি একক ইউনিট বা একটি কমপ্লেক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ভবনটি মূলত ইট নির্মিত।

ত্বহাখানার ভিতরে কূপ
 তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ভবনটিকে দেখলে একতলা মনে হয়, পূর্বদিক থেকে অবশ্য দ্বিতল অবয়বই প্রকাশ পায়, যার নিচতলার কক্ষগুলো পূর্বদিকে বর্ধিত এবং খিলানপথগুলো উত্থিত হয়েছে সরাসরি জলাশয়টি থেকে। ভবনের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি গোসলখানা যেখানে পানি সরবরাহ হতো একটি অষ্টভুজাকৃতির চৌবাচ্চার মাধ্যমে জলাশয় থেকে। উত্তর পাশে একটি ছোট পারিবারিক মসজিদ অবস্থিত, এর পেছনে রয়েছে একটি উন্মুক্ত কক্ষ যেটি একটি অষ্টভুজাকার টাওয়ার কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এ টাওয়ার কক্ষটি সম্ভবত ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হতো। অষ্টভুজাকার টাওয়ারটি পিলারগুলোতে ভারসাম্য প্রদান করেছে। প্রাসাদটি প্লাস্টার করা এবং খোদাইকৃত। এসব অলঙ্করণ রীতি মোঘল আমলের।

এবার আসি মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিব প্রসঙ্গে

নিয়ামত উল্লাহর কাসীদা ৩৮ নং প্যারা থেকে আমাদের কথা বলা হয়েছে এমন ইঙ্গিত করেছেন অনেকে। ওনার ভবিষ্যতবাণী ব্যাখ্যা সহ উল্লেখ করছি।

(৩৮)
অনুরূপ হবে পতন একটি শহর মুমিনদের
তাহাদের ধনসম্পদ যাবে দখলে হিন্দুদের

(৩৯)
হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সেখানে চালাইবে তারা ভারি
ঘরে ঘরে হবে ঘোর কারবালা ক্রন্দন আহাজারি

ব্যাখ্যা: ৩৮ ও ৩৯ নং প্যারায় বলা হয়েছে, মুসলিমরা যখন কাশ্মির দখল নেবে এর পরই হিন্দুরা মুসলিমদের একটি এলাকা দখলে নেবে। এবং সেখানে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে।

মুসলমানদের ধন-সম্পদ ভারত সরকার লুটপাটের মাধ্যমে নিয়ে নেবে, মুসলিমদের ঘরে ঘরে কারবালার ন্যায় রুপধারন করবে। ১৯৭১ সালে এদেশে হাজার হাজার বিহারী ও বাঙালি খুন হয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বরের পর সারাদেশে মাদ্রাসাগুলোতে বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসাগুলো রক্তনদী বয়েছিলো। মুক্তিরা ও ভারতীয়রা এদেশের ইসলামপন্থীদের পাইকারি হারে খুন করেছিলো। সেই চালু হওয়া হত্যাকাণ্ড এখনো থামে নি।

(৪০)
মুসলিম নেতা-অথচ বন্ধু কাফেরের তলে তলে
মদদ করিবে অরি কে সে এক পাপ চুক্তির ছলে

(৪১)
প্রথম অক্ষরেখায় থাকিবে শীনে’র অবস্থান
শেষের অক্ষরে থাকিবে নূন’ ও বিরাজমান

ব্যাখ্যা:
যে শহর হিন্দুদের হাতে পতন হবে তার মূলে থাকবে একজন মুসলিম নেতা যিনি কাফেরের সাথে হাত মিলাবেন এবং তার নামের প্রথম অক্ষর হবে শীন এবং শেষ অক্ষর হবে নুন। শেখ মুজিবুর রহমান নামের প্রথম অক্ষর শীন, শেষ অক্ষর নুন।

অনেকে বলে থাকেন হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা হারিয়ে পুরোপুরি ভারতের একচ্ছত্র অধীনে চলে যেতে পারে। হাসিনা কোন চুক্তি করে বাংলাদেশকে ভূটান ও সিকিমের মতো করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রেও শীন আর নুন মিলে যায়।

পুরো ভবিষ্যতবাণী জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 

আমি ভবিষ্যতবাণী বিশ্বাস করি না। করতে রাজিও না। তৎকালীন গৌড়ে ঘুরতে যাওয়া প্রসঙ্গে নিয়ামত উল্লাহকে পেলাম। তাই আলোচনা করলাম।

শাহ নিয়ামত উল্লাহ রহ. সমাধিস্থল
তওনার ভবিষ্যতবাণীতে উজ্জীবিত হওয়ার মতো বিষয় আছে। বিশেষ করে গাজওয়াতুল হিন্দ নামে একটি যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এটা শুরু হবে পরাজিত অঞ্চল তথা বাংলাদেশ অথবা হায়দরাবাদ অথবা কাশ্মীর থেকে। ইরান ও আফগান সেনারা আমাদের সহায়তা করবে। পুরো ভারত ইসলামের অধীনে আসবে ইনশাআল্লাহ। এই কথা অবশ্য রাসূল সাঃও বলে গেছেন। নিয়ামত উল্লাহ রহ. কথা অনুসারে এটি এখন সামনে ঘটার মতো সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।

ওনার ভবিষ্যত পরিক্রমা

- গাজওয়াতুল হিন্দ
- গ দিয়ে শুরু এমন নামের একজন বিখ্যাত লোক ইসলাম কবুল করবে।
- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও আমেরিকার পরাজয়
- দাজ্জালের আগমন
- ইমাম মাহদীর আগমন।