১৯ মার্চ, ২০২২

ক্রসফায়ারের শাসনামল



বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও ক্রসফায়ারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে গত বছরগুলোতে। বিগত দিনগুলোতে ক্রসফায়ারের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে যদি বলা হয় গত ১৩ বছর ছিল বিচার বহির্ভূত হত্যার বছর তাহলে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না। কারণ গত ১৩ বছরে র‍্যাব-পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হন ২৮৬৪ জন। এটা একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বিশাল হুমকি।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রায়ই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ কুখ্যাত অপরাধী, সন্দেহভাজন বা চিহ্নিত অপরাধী মারা যায়। ২০০২ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনের জন্য স্বল্পমেয়াদি অপারেশন ক্লিনহার্ট চালু হয়েছিল। ২০০৪ সালে পুরোদমে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনাকালে ‘ক্রসফায়ার’ ব্যবহার শুরু করা হয়। এর পর পরই আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের শুরু হয়।

ঐ বছরই বাংলাদেশ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় চাঞ্চল্যকর জঙ্গি ও বেশকিছু দাগি অপরাধীদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় র‍্যাব। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার, অপহরণ বা গুমের অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারা। এখন এই বাহিনীকেই তুলে দেওয়ার দাবি তুলছেন অনেকে।

সাম্প্রতিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড। এটি একমাত্র হত্যাকাণ্ড যার বিচার করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। আর কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিচার তো দূরের কথা মামলাই নেওয়া হয়নি। মেজর সিনহা সেনাবাহিনীর পদস্থ সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় এর বিচার হয়েছে। 

বিচার হয়েছে ক্রসফায়ার কিং খ্যাত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের। সে ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে ১৬১ জন মানুষকে হত্যা করেছে। মেজর সিনহা হত্যা মামলায় তার ফাঁসীর আদেশ হয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন।

৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টা ২৫ মিনিটে মেজর মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী ৪ টি গুলি করে তাকে হত্যা করেন। লিয়াকত আলী পুলিশের বিশেষ দল সোয়াটের সদস্য। তাকে গুলি করার আদেশ দেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন মেজর সিনহা। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরবর্তীতে ওসি প্রদীপ কুমারও ২টি গুলি করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর একটি ট্রাকে করে তাকে হাসপাতাল নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। খুন করার পর টেকনাফ থানা পুলিশ মেজর সিনহাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে এবং পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধ করে খুন হয়েছে বলে জানায়।

হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এটি লক্ষ্য করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বোন টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং উপ-পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালত ১৫ জন অভিযুক্তের রায় ঘোষণা করে। রায়ে প্রদীপ এবং লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস প্রদান করে।

বর্তমান আওয়ামী সরকার শুধু দাগী আসামী নয় এই ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করছে রাজনৈতিক বিরোধীদের উপরে। নিহত ২৮৬৪ জনের মধ্যে অধিকাংশই রাজনৈতিক কর্মী। তাই ক্রসফায়ার নিয়ে মানুষ বেশ আতঙ্কিত। এটা গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিনষ্ট করেছ। রাজনৈতিক নেতারা সরকার কর্তৃক গুম ও খুনের শিকার হওয়ায় বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতির চর্চা এখন প্রায় থেমে গিয়েছে। বিএনপিসহ বেশিরভাগ নেতা কর্মীরা এখন নিজের বাড়িতে থাকতে পারে না।

২০১৭ সালে এমন একটা অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য লিস্ট ধরে ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। ঢাকা-১৯ আসনের (সাভার) সাংসদ এনামুর রহমান নির্বাচনী এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্প্রতি একটি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সাভারে অনেক ক্যাডার আর মাস্তান ছিল। এখন সব পানি হয়ে গেছে। কারো টুঁ শব্দ করার সাহস নেই। পাঁচজনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছি আরো ১৪ জনের লিস্ট করেছি। সব ঠান্ডা। লিস্ট করার পর যে দু-একজন ছিল, তারা আমার পা ধরে বলেছে, আমাকে জানে মাইরেন না আমরা ভালো হয়ে যাব।’

একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাভার এলাকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ অনেকেই। এটা শুধু সাভারের বিষয় নয়। ক্রসফায়ারের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের যোগসূত্র রয়েছে এমন অসংখ্য নজির সারা বাংলাদেশেই রয়েছে।

বিরোধী দলের লোক খুন করার নির্দেশ সরাসরি সরকার দিয়ে থাকে বলে সে ঘটনার বিচার তো দূরস্থান মামলাই নেয়া হয় না। গতবছর হানিফ মৃধা নামে একটি সাধারণ ব্যবসায়ীকে এরেস্ট করে তার থেকে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয় ছেড়ে দেবে বলে। টাকা নিয়ে তারা ছেড়ে তো দেয়নি উল্টো জঙ্গী দেখিয়ে তাকে খুন করে। এরকম একটি দু’টি নয় শত শত ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনার পর র‌্যাব-১১’র তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক সাঈদ, মেজর (বরখাস্ত) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (বরখাস্ত) এম এম রানাসহ ২৫ সদস্যের নাম উঠে আসার পর দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। র‌্যাবের ভাবমর্যাদা সংকটে পড়ে। পরে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোয়েন্দা শাখা তদন্তে নামে। তদন্তে জানা যায়, তারা নিরপরাধ লোকজন ধরে র‌্যাব অফিসে এনে নির্যাতন চালিয়ে অর্থ আদায় করতেন। যারা নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের গুম করা হয়েছে। এভাবে অন্তত ২০ জনকে তারা গুম করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে

মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ‘অধিকারের’ তথ্য মতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ২০০৯ সালে ২২৯ জন, ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ৮৪ জন, ২০১২ সালে ৭০ জন, ২০১৩ সালে ৪৫৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭২ জন, ২০১৫ সালে ১৯২ জন, ২০১৬ সালে ১৯৫ জন, ২০১৭ সালে ১৬২ জন, ২০১৮ সালে ৪৭৫ জন, ২০১৯ সালে ৩৭৬ জন, ২০২০ সালে ২২০ জন এবং ২০২১ সালে ১০৭ জন খুন হন। এছাড়াও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের সংখ্যাও অনেক। আর পঙ্গু বা নির্যাতন হিসেব ছাড়া।

গত বছর র‍্যাব যাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে খুনী বানায় তাদের একটি প্রশিক্ষণের অডিও রেকর্ড পেয়েছে সুইডিশ রেডিও। যার খুব অল্প অংশ তারা প্রচার করেছে। তারা বলেছে যে ব্যক্তি এই রেকর্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে সে অস্থির হয়ে গিয়েছিল। বারবার সে প্যানেল থেকে বের হয়ে পানি খাচ্ছিল।

অডিও রেকর্ডটিতে র‌্যাব কর্মকর্তা বর্ণনা করেন কীভাবে পুলিশ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়। এমনকি তারা অবৈধ অস্ত্র কিনে মানুষকে খুন করে সেই অস্ত্র তার পাশেই রেখে দেয়। আসলে সাধারন মানুষ কখনো অবৈধ অস্ত্র রাখে না। কিন্ত পুলিশ যাকে হত্যা করছে তারও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল এই ধরনের বিষয় প্রমানের জন্য, বলতে গেলে আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি ছোড়ল, এই বক্তব্যের যথার্থতার জন্য নিহতের পাশে অস্ত্র রেখে দেয়া হয়।

দুইঘণ্টাব্যাপী এই গোপন রেকর্ডিং খুবই স্পর্শকাতর। আর র‌্যাব যে হত্যা এবং জোরপূর্বক গুম করে এই বিষয়টি এই কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বার বার উল্লেখ করেন।
গুমের ক্ষেত্রে তিন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে থাকেন-
(১) টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অপহরন
(২) তাকে হত্যা করা
(৩) তার লাশ চিরতরে গুম করে ফেলা।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঐ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আরো বলেন, কোন লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার আগে তারা লাশের সাথে ভারি ইট বেঁধে দেয়। সেই কর্মকর্তা আরো কথা বলে যা অনেকেটা সিনেমার মত- যেসব অফিসার এই ধরনের অপারেশনে যায়,তারা অনেকে নিখুঁতভাবে এই কাজ করে। এটাও সত্য গুম এরপর হত্যা, এই ধরনের কাজে সব পুলিশ দক্ষ না। তাই এই ধরনের অপারেশনে কোন প্রকার ক্লু বা সামান্য চিহ্নও যাতে না থাকে, এমনকি আমাদের আইডিকার্ড, আমাদের গ্লাভস পরতে হয় যাতে আংগুলের ছাপ পাওয়া না যায়। এমনকি জুতার মধ্যেও আলাদা আবরন লাগানো হয়। পুরো কথোপকথনটি অ্যানালাইসিস বিডিতে প্রকাশিত হয়েছে।

এই কর্মকর্তার মতে, রাজনীতিতে বিরোধীদলের বিশাল একটা অংশকে নিশ্চিহ্ন করাই এই ধরনের অপারেশনের লক্ষ্য।
এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আসলে র‌্যাব যাদেরকে ধরে নিয়ে আসে, তাদের ভাগ্য আসলে উপরের নির্দেশের উপর নির্ভর করে। তিনি এই গোপন রেকর্ডিংয়ে গুমকৃত ব্যক্তিদের উপর কিভাবে অত্যাচার করা হয় এই বিষয়গুলোও বলেন। আসলে একটা অন্ধকার কক্ষের ঠিক মাঝখানে একটি হালকা আলোর বাতি দিয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নগ্ন অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখা হয়, আর তার অন্ডকোষে ইট বেঁধে দেয়া হয়। ইটের ওজনের কারনে তার অন্ডকোষ অনেকেটা মুছড়িয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে এই ধরনের ব্যক্তি অবচেতন হয়ে যায়, আর বুঝাই যায় না সে কি মৃত না জীবিত।

অ্যানালাইসিস বিডির গবেষণায় দেখা গিয়েছে নির্বাচনের বছরগুলোতে ক্রসফায়ার বেড়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২২৯ জন মানুষকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল বিএনপি’র নেতা কর্মী। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে নিহত সবচেয়ে বেশি মানুষ। ১৩ সালে নিহত হওয়া ৪৫৫ জনের মধ্যে অধিকাংশ ছিল জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মী। আবার ২০১৮ সালে খুন হন ৩৭৬ জন। বিশ্লেষকেরা মনে করেন মূলত নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া ও বিরোধী দলগুলোকে ভয়ের মধ্যে রাখার জন্যই সরকার নির্বাচনের সময়গুলোতে ক্রসফায়ার বাড়িয়ে দেয়।

এই বছর সরকার মাদক বিরোধী অভিযানের নাম করে প্রচুর মানুষ হত্যা ও হয়রানী করে। আলোচিত ক্রসফায়ারগুলোর মধ্যে ছিলো টেকনাফের কাউন্সিলর একরামের ক্রসফায়ারটি। র‍্যাব ২৬ মে কাউন্সিলর একরামকে ডেকে নিয়ে খুন করে। এসময় একরাম তার স্ত্রী ও মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। ফোন কলে থাকা অবস্থায় খুন হন তিনি। তার আর্তচিৎকার তার স্ত্রী ও মেয়ে যেমন শুনেছে তেমনি শুনেছে সারা বাংলাদেশ।

৩১ মে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার স্বামীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। এরপর তিনি গণমাধ্যমে উপস্থিত করেন মৃত্যুর একেবারে শেষ সময়ে একরামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার ও কিশোরী কন্যার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ। 

রক্ত হিম করা এই অডিও ক্লিপ এখন ভাইরাল হয়ে নড়িয়ে দিয়েছে এদেশের মানবিক রাষ্ট্রের ধারণাকে। লাইভ অডিও ক্লিপটিতে শোনা যায়, একটি টেলিফোন কলে মেয়েটি বাবার কাছে জানতে চাইছে, আব্বু, তুমি কখন আসবে? একরাম কান্না ভেজা গলায় বলছেন, চলে আসবো মা, মেজর সাব (র‌্যাব অধিনায়ক) ডেকেছেন, হ্নিলা যাচ্ছি। মেয়েটির প্রশ্ন, কেন? একরাম কান্না ভেজা গলায় বলছেন, জরুরি কাজে যাচ্ছি।… মেয়েটি বলে, আব্বু, তুমি কান্না করতেছ যে?…

এরপর এ প্রান্তে টেলিফোন ধরেন স্ত্রী আয়েশা। বলেন, হ্যালো, আমি কমিশনারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।আমি উনার মিসেস বলতেছি, হ্যালো? হ্যালো? …অপরপ্রান্তের স্বর অনুচ্চ। এর খানিক পর গুলির শব্দ, উহ্…গোঙানি…একটু পর আবার গুলির শব্দ। এপারে স্ত্রীর আর্ত চিৎকার, ও আল্লাহ!…’

চাল-ডাল-তেল-নুন-যানজট-জলজট ইত্যাদি নিত্য সমস্যাকে ছাপিয়ে এখন লোকমুখে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এই ‘ক্রসফায়ার‘। কাউন্সিলর একরামের এই ‘ক্রসফায়ার’ অনেক দেরীতে হলেও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকেই যেন জাগ্রত করেছে জনতার বিবেক।

অ্যালাইসিস বিডির গবেষণায় আরো দেখা যায় যেসব এলাকায় আওয়ামীলীগের প্রভাব কম বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন বেশি সেসব এলাকায় ক্রসফায়ারের ঘটনা বেশি ঘটেছে। যেমন ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ইত্যাদি স্থানে ক্রসফায়ার বেশি হয়েছে। ঝিনাইদহে ২০১৬ সালে তিন মাসে ১১ জন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র সোহানও রয়েছে।

১ জুন ভারত সফর শেষে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে চলমান ‘ক্রসফায়ারের’ পক্ষেই কথা বলেছিলেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি। তিনি খানিকটা দৃঢ় কণ্ঠেই তখন বলেছিলেন, আপনারা দেখান, একজনও নিরীহ ব্যক্তি এর (‘ক্রসফায়ারের‘) শিকার হচ্ছে কি না?’


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন