১৯ মার্চ, ২০২২

গুমের রাজ্যে প্রিয় স্বদেশ



বাংলাদেশে নাগরিকদের গুম করে ফেলার এক নিষ্ঠুর সংস্কৃতি চালু হয়েছে গত ১৩ বছরে। গুমের এই বিভীষিকা বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে। গত ১৩ বছরে ৬৭৯ জন মানুষ বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। এদের বেশিরভাগেরই কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায় ২০০৯ সালে ৩ জন, ২০১০ সালে ১৮ জন, ২০১১ সালে ৩১ জন, ২০১২ সালে ২৬ জন, ২০১৩ সালে ৫৪ জন, ২০১৪ সালে ৮৮ জন, ২০১৫ সালে ৬৬ জন, ২০১৬ সালে ৯৭ জন, ২০১৭ সালে ৮৬ জন, ২০১৮ সালে ১২২ জন, ২০১৯ সালে ৩৪ জন, ২০২০ সালে ৩১ জন এবং ২০২১ সালে ২৩ জন মানুষ গুম হয়েছেন। মোট ১৩ বছরে ৬৭৯ জন গুম হয়েছেন।

এর মধ্যে র‍্যাব ১৫২ জনকে, পুলিশ, ৫১ জনকে, ডিবি পুলিশ ১৫৫ জনকে, র‍্যাব-ডিবি পুলিশ যৌথভাবে ১২ জনকে, অন্যান্য সংস্থা ৯৮ জনকে এবং বাকীদের বিষয়টা নির্দিষ্ট করা যায়নি।

গুমের পর নির্যাতন ভোগ করে অল্প কয়েকজন যারা ফিরে এসেছেন তারা চুপ হয়ে গেছেন। কারা গুম করেছিল, কেন গুম করা হয়েছিল, গুম করে কোথায় তাদের রাখা হয়েছিল সে ব্যাপারে ভয়ে তারা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারছেন না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

ইসলামী বক্তা আবু ত্ব হা মোহাম্মদ আদনান তাঁর তিন সঙ্গীসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন গত ১০ জুন ২০২১। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে তার সোশ্যাল মিডিয়া টিম জানতে পারে তার মোবাইল ডিজিএফআই-এর কার্যালয়ে আছে। এই খবর মিডিয়ার আসার পরদিন ১৮ জুন তাদের পাওয়া যায় নিজ নিজ বাড়িতে। নিখোঁজের পর ফিরে আসলেও নিজ থেকে চার জনের কেউই কী ঘটেছিল এখন পর্যন্ত সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। 

একই অবস্থা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ক্ষেত্রেও। ৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত বছরের ৩ মে যশোরের বেনাপোলে ভারত সীমান্তের কাছে পাওয়া যায় শফিকুলকে। উদ্ধারের এক বছর পর গত ৩ মে এক ওয়েবিনারে সাংবাদিক শফিকুল বলেন, আমার এখনও এটি বলার সাহস নেই যে আমাকে কি জোর করে গুম করা হয়েছিল, নাকি আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে আমি আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু, কখনোই ভাবিনি যে আমাকে গুম করা হবে। কীভাবে আমি ও আমার পরিবার সেই নিষ্ঠুর সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি— তা বলা সম্ভব না। তিনি বলেন, কখনো পরিচিতজনদের মাঝে ফিরতে পারবো, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব এটা ভাবিনি।

অপহরণ, গুম বা নিখোঁজ হন চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার জানান, গত বছর নভেম্বরের ঘটনা এটা। তিনি ওই ওয়েবিনার বলেন, কীভাবে তাকে সারাক্ষণ প্রাণভয়ে থাকতে হতো এবং এক পর্যায়ে তিনি তার চট্টগ্রামের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন। ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেছিলেন, এ মুহূর্তে সরোয়ারের জন্য সাংবাদিকতা করার চেয়ে বেঁচে থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী গত ১৩ বছরে (২০২০ সালের আগষ্ট পর্যন্ত) ৬০৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে৷ ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন৷ অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনো তথ্য নাই পরিবারের কাছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও কোনো তথ্য দিতে পারছে না৷

সাম্প্রতিক আবু ত্ব–হার মতো রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা অপহরণের পর গত ১৩ বছরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন অনেকেই। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে কিছু অভিন্ন ছক বা মিল লক্ষ করা যায়। অপহৃত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশকে অপহরণের পর উদ্ভ্রান্ত’ অবস্থায় কোনো সড়কে পাওয়া যায়। কিন্তু ফিরে আসার পর অনেকে কোনো কথা মনে করতে পারেন না। বাকিরা ফিরে এসে 
মুখে কুলুপ আঁটেন। আবার অনেকে বাসায় ফিরে আসেন। তাঁরাও পরে আর কোনো কথা বলেন না।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে দেশে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের সংখ্যা আরো বেশি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ, এর সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই জড়িত। এর মধ্যে টাকার জন্যও মানুষ গুম ও খুনের শিকার হচ্ছে।

নিখোঁজ হওয়া ৫২৪ জনের নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের কেউ বাসা থেকে বা অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন। কেউ বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়ের সাথে ছিলেন। কখনো সাদা পোশাকে, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদের তুলে নিয়ে যায়।

এখানে গুমের যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা হলো রাষ্ট্র কর্তৃক অপহরণের তালিকা। যাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ফিরে এসেছেন বা তাদের পাওয়া গিয়েছে। কিছু মানুষের লাশ পাওয়া গিয়েছে। আর বাকীদের কোন খবর নেই। এদের বেশিরভাগই রাজনীতির সাথে জড়িত।

পুলিশ সদরদপ্তরের রিপোর্ট অনুসারে গত ১২ বছরে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৮২৫৩টি। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৮০০ জন, ২০১০ সালে ৮৮১ জন। ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩  সালে ৮৭০ জন করে অপহৃত হয়েছে। ২০১৪ সালে ৯২২ জন, ২০১৫ সালে ৮০৬ জন, ২০১৬ সালে ৬৩৯ জন, ২০১৭ সালে ৫০৯ জন, ২০১৮ সালে ৪৪৪, ২০১৯ সালে ৪২২ জন এবং ২০২০ সালে ২২০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে।  

বাংলাদেশে টাকার জন্য অপহৃত হওয়া বা গুম হওয়া নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রায় প্রতিদিনই অনেক মানুষ হারিয়ে যায়। কিছুদিন গুম করে রাখার পর তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এই কাজটা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেমন করছে তেমনি করছে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ। এরকম একটি অপহরণ চক্র নিয়ে প্রতিবেদন করেছে প্রথম আলো। গুম ও ক্রসফায়ার নিয়ে করা জানা যায় বাংলাদেশের এমন কোন থানা অবশিষ্ট নেই, যে থানার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ নেই।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কাউকে গ্রেফতার করে তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা। অথচ গত দশ বছরে যেসব রাজনৈতিক ব্যাক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বেশিরভাগকেই তিন-চারদিন গুম করে রেখে তারপর আদালতে হাজির করা হয়েছে। এই সংখ্যা লক্ষাধিক। আর যেসব ব্যক্তি গুম হয়েছেন বা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের কথাতো বাদই।

সরকারের পক্ষ থেকে মানুষ গুম হওয়ার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে গুম বলে কিছু নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা সঠিকভাবেই বলেছেন, অব্যাহতভাবে ঘটে চলা গুমের ঘটনা এই বার্তাই দিচ্ছে যে, দেশে আইনের শাসন বা সুশাসন বলে কিছু নেই। যে কেউ যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো জায়গা থেকে গুম হয়ে যেতে পারেন। কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি!

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ জুলাই আয়োজিত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালের পর বিভিন্ন সময় বিএনপির নিখোঁজ হওয়া ৫০০ নেতা-কর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য অনুষ্ঠানে বিএনপি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের হারিয়ে যাওয়া ২৯ নেতা কর্মীর তালিকা প্রকাশ করেছে।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ গুম হওয়ার বেশ কিছু দিন পর তাকে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার করা হয়। কে বা কারা তাকে সেখানে রেখে আসে। তিনি প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। বর্তমানে ভারতে তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশের একটি মামলা মোকাবেলা করছেন। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন বাংলাদেশের র‍্যাব তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যেতে। জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার একজন সাক্ষীর ব্যাপারেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

সুখরঞ্জন বালি নামে এক সাক্ষীকে ডিবি পুলিশ একেবারে প্রকাশ্যে একটি সাদা গাড়িতে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এর বহুদিন পর তাকে পাওয়া যায় ভারতের দমদম কারাগারে। ভারতীয় আদালত তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ১১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উপরের নির্দেশে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাকে ছাড়া হয়নি।

এমন ঘটনা বাংলাদেশের মানুষকে ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। অ্যানালাইসিস বিডির জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এদেশে রাজনৈতিক গুমের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW) জড়িত। তাদের মর্জি মতো এদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিকদের গুম, ক্রসফায়ার ও গ্রেপ্তার করা হয়।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গুম করা হয়। এটা বেশ আলোচিত গুম। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলী ও সালাহউদ্দিন আহমেদের গুম হওয়ার আগে বিএনপির মহানগর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম গুম হন। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে গুম হন সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমেদ ও জুনেদ আহমেদ। সাদা পোশাকে একদল লোক তাদের তুলে নিয়ে যায়। আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের গুমও বেশ আলোচিত ঘটনা।

তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ঢাকা সফরকালে বিভিন্ন বক্তব্যে বারবার আমিনুল ইসলাম ও ইলিয়াস আলীর গুমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। গুমের পর নিহত আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের। তাদের ভাগ্যে যে কী ঘটেছে কেউ তা জানে না।

২০১২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে ‘হানিফ পরিবহন’ বাস থেকে নামিয়ে গুম করে র‍্যাব। দুই ছাত্র ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ নেই। ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের আদাবর থানার সভাপতি হাফেয জাকির হোসেনকে পুলিশ তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত কোন খবর পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালে গুম হওয়া ৯৭টি ঘটনার মধ্যে জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে যথাক্রমে আমান আজমী, মীর আহমেদ বিন কাসেম ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীর কথা বেশ আলোচিত। এই তিনজনকে নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বহু প্রতিবেদন তৈরি করে। এর মধ্যে হুম্মাম ‘নিখোঁজ হওয়ার’ সাত মাস পর বাড়ি ফেরেন, যাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বিএনপি কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমন, যিনি ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। ২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গুম হন ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের ৫ কর্মী। তারা হলেন- সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি আনিসুর রহমান খান, একই ওয়ার্ডের সহসাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দল সম্পাদক মিঠু। ১১ দিন পর মুন্সীগঞ্জে নিয়ে আনিসুর রহমান, বিপ্লব ও মিঠুকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি সম্রাট ও খালেদের।

২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাজধানীর শিশুপার্ক এলাকা থেকে মাহফুজুর রহমান সোহেল সরকার, বংশাল থানা ছাত্রদলের সহসভাপতি হাবিবুল বাশাল জহির, ৭১নং ওয়ার্ডের সভাপতি পারভেজ হোসাইন ও ছাত্রদল কর্মী হোসাইন চঞ্চলকে সাদা পোশাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। তারা এখনও নিখোঁজ। একই বছর ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে ছয়জন নিখোঁজ হন। তারা হলেন- ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, সুমনের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম তানভীর, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মো. আল আমিন ও আসাদুজ্জামান রানা, আবদুল কাদের ভুঁইয়া মাসুম। এদের মধ্যে তিনজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই তালিকা অনেক বড়। শেষ হবার নয়।

২০১৭ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ৩ জুলাই রাজধানীর শ্যামলীর আদাবরের নিজ বাড়ি থেকে ভোর পাঁচটার দিকে প্রখ্যাত কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যশোরের অভয়নগরে একটি বাস থেকে উদ্ধার করে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায় গুমের ঘটনা ঘটছে, সেসব দেশে আদালত সবসময় ভুক্তভোগীদের পক্ষে সুবিচার করতে পারেন না। এতে করে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়। দেশগুলোতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে।

বাংলাদেশে গুম এখন এক আতঙ্কের নাম। গুমের ঘটনা এতটাই বাড়ছে যে, অনায়াসেই বলা যায় দেশ গুমরাজ্যে পরিণত হয়েছে কিংবা এখন দেশে জাহিলি বা বর্বর যুগ চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থই এর কারণ। পরিণতিতে সমাজে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি একই দেশে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এটা কোনো সভ্য নাগরিকের কাম্য হতে পারে না।

গুম অপহরণ নিয়ে কিছু পত্রিকার রিপোর্ট 

এবি সিদ্দিক ও সাত গুমের নায়ক র‌্যাব
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে র‌্যাবই অপহরণ করেছিল। ঘটনার পর যে দুটি আলামত প্রকাশ পায় তাতে পুলিশের কাছে র‌্যাবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। একইভাবে বেলার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিককেও র‌্যাব অপহরণ করেছিল। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়।
৭-৫-১৪/ যুগান্তর 
 
খুন-গুম-অপহরণ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ
সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটে যাওয়ার পথে চালকসহ অপহৃত হন যুক্তরাজ্য যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মুজিবুর রহমান ও গাড়ি চালক রেজাউল হক সুহেল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তআইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তার কোনো হদিস দিতে পারেননি কারা তাঁকে অপহরণ করেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্বাভাবিকভাবেই, যে কোনো মূল্যে তাঁকে ফেরত চেয়েছে তাঁর পরিবার এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান খুন, গুম অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা ন্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)
০৯-০৫-১৪/ ডয়েচে ভেলে

সাড়ে চার বছরে ২১৩ নিখোঁজ
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, গত চার বছর পাঁচ মাসে (২০১০ সাল থেকে) ২৯১ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ২৪ জন ছাঙা পেয়েছেন অথবা থানা হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। ২১৩ জন এখনো নিখোঁজ।
৩০-০৮-১৪/ প্রথম আলো 

গুম-অপহরণ ৯ মাসে ৮২ 
দেশে ৮২ ব্যক্তি গুম-অপহরণের শিকার হন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে এসব ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। পরে এঁদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ১০ জন ছাড়া পেয়েছেন। সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর পরে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনজনকে পরে থানায় ও কারাগারে পাওয়া গেছে। বাকি ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ।
১০-১২-১৪/ প্রথম আলো 

বিএনপির মুখপাত্র সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ
মঙ্গলবার রাতে সালাউদ্দিন আহমেদকে উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর তার সাথে কোন যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। রুহুল কবির রিজভী আটক হবার পর সালাউদ্দিন আহমেদ নিয়মিত বিবৃতি পাঠাতেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সালাউদ্দিনের অবস্থান জানার জন্য বেশ কিছুদিন যাবত অভিযান শুরু করেন। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে সালাউদ্দিনের খোজে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে পুলিশ তাকে আটকের খবর অস্বীকার করায় সালাউদ্দিনের নিখোজ বিষয়টি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। পরে তাকে ভারতের শিলং-এ পাওয়া যায়। 
১১-৩-১৫/ যুগান্তর 

আড়াই বছরে ১১০ জন নিখোঁজ: আসক
বাংলাদেশের বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, গত আড়াই বছরে এ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৭৭ জনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, যাঁদের মধ্যে এখনো ১১০ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। এসব ব্যক্তির বেশির ভাগকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আসকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বার্ষিক ও ষাণ্মাসিক প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্তছয় মাসে ৩৬ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ছয়জনের লাশ পাওয়া যায়। এ ছাড়া দুজন ছাড়া পান, তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ২৫ জন নিখোঁজ আছেন। 
৩০-৮-১৫/ প্রথম আলো  

সাড়ে তিন বছরে গুম ২২০
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৩১ এপ্রিল পর্যন্তপ্রায় সাড়ে ৩ বছরে ২২০ জন গুম হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ১৮ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ২০ জন বিভিন্ন সময়ে মুক্তি পেয়েছেন। বাকি ১৪২ জনের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। মানবাধিকার সংস্থা আসক ও অধিকারের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 
১৮-৫-১৬/ যুগান্তর 

সাকা পুত্র হুম্মাম কাদের অপহরণ
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে গোয়েন্দা পুলিশের কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি। হুম্মামকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার ব্যক্তিগত আইনজীবী চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব রাগিব। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে রায় ফাঁসের ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন হুম্মাম। আদালতের সামনে থেকেই তাকে ১০-১২ জন নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।
৪-৮-১৬/ বাংলাদেশ প্রতিদিন 

মীর কাসেম আলীর ছেলেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ
মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেমকে (আরমান) রাজধানীর মিরপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। তিনি মঙ্গলবার রাতে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, রাত ১১টার দিকে সাদা পোশাকে একটি মাইক্রোবাসে আরমানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় পাঁচ জন লোক তাদের বাসায় আসেন। তারা কলিং বেল চাপলে তিনি দরজা খুলে দেন। ওই ব্যক্তিদের দেখে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যের মতো মনে হয়েছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরমানকে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন।
১০-৮-১৬/ যুগান্তর 

গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমীকে অপহরণ 
সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার দিবাগত রাত একটার কিছু আগে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর ভাই সালমান আল-আযমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, ডিবি পুলিশের অন্তত ৩০-৩৫ জন তার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে।
২৩-৮-১৬/ যুগান্তর 

কলামিস্ট ফরহাদ মজহার ‘নিখোঁজ’
বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আজ (৩ জুলাই) ভোরে “নিখোঁজ” হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। লেখকের স্ত্রী ফরিদা আখতারের বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (তেজগাঁও বিভাগের) বিপ্লব কুমার সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে আজ বিকেলে বলেন, একটি ফোন এলে তিনি তাঁর আদাবরের বাসা থেকে ভোর ৫টার দিকে বের হন। ফরিদা জানান, ফরহাদ মজহারের বাসা থেকে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা পর তিনি তাঁর মোবাইল ফোনে ফোন দেন এবং বলেন, “আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে কিডন্যাপ করেছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।”
৩-৭-১৭/ ডেইলি স্টার 

কল্যাণ পার্টির মহাসচিব নিখোঁজ, সরকারকে দায়ী করছে বিএনপি
২০-দলীয় ঐক্যজোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ জন্য সরকারকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকার গুম-অপহরণকে রাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে গত নয় দিনে নিখোঁজ আরও চারজনের মধ্যে তিনজনের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। এরা হলেন বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত, ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কুমার রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহমেদ। ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
৩০-৮-১৭/ প্রথম আলো 

এবার নিখোঁজ সাবেক রাষ্ট্রদূত 
কলেজশিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকের পর এবার নিখোঁজ হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান। সোমবার রাতে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছোট মেয়েকে আনতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। ষাটোর্ধ্ব মারুফ জামান কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। পুলিশ মারুফ জামানের সন্ধান না পেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটি রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে উদ্ধার করেছে। তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। 
৫-১২-১৭/ প্রথম আলো 

গুম আতঙ্কে বছরজুড়ে অনেকেই নির্ঘুম 
 গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও গুম আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি। শুরুর দিকে আতঙ্কে ছিলেন চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। ক্রমে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সেই ভীতি ছড়ায়। এ বছরের শেষ ভাগে এসে গুমের তালিকায় যুক্ত হয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাষ্ট্রদূত, চিকিৎসক, শিক্ষক ও সাংবাদিকের নাম। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্তগুমের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৭৫ জন। তাঁদের মধ্যে পরে ৩৫ জনের হদিস পাওয়া যায়, উদ্ধার হয় ৭ জনের মৃতদেহ। এখনো নিখোঁজ ৩৩ জন। যে ৩৫ জনের হদিস পাওয়া গেছে তাঁদের মধ্যে আবার কমপক্ষে ১৬ জনকে পরে আদালতে উপস্থাপন করেছে পুলিশ বা র‌্যাব। আদালতকে বলা হয়েছে, এক দিন আগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
৩০-১২-১৭/ প্রথম আলো 

কোরিয়া যাওয়ার পথে পিএইচডি গবেষক ‘অপহরণ’ 
বুধবার রাত একটায় বিমান ওড়ার কথা ছিল। পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে আশকোনার বাসা থেকে রাত ১০টার দিকে বের হয়েছিলেন পিএইচডি গবেষক এনামুল হক। বন্ধুর ছোট ভাই তাঁকে রিকশায় উঠিয়ে বিদায় নেন। এরপর থেকে নাই হয়ে যান এনামুল। পরদিন বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ‘অপহরণকারী’ পরিচয়ে আসে ফোন। এনামুলের পরিবারের কাছে শুক্রবার সকাল ছয়টার মধ্যে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয়। শুক্রবার সকালে পরিবার কথিত ‘অপহরণকারীদের’ দেওয়া নম্বরে এক লাখ টাকা পাঠিয়েও নিজের স্বজনকে ফেরত পায়নি।
২৩-১১-১৮/ প্রথম আলো 

চট্টগ্রামে নিখোঁজের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে
চট্টগ্রামে অপহরণ ও নিখোঁজের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় নগরীর থানাগুলোয় ৬ মাসে অন্তত অর্ধশত সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করা হয়েছে। কারও কারও সন্ধান মিললেও অনেকেই দীর্ঘদিন নিখোঁজ রয়েছেন। এসব ব্যক্তিকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফতরে ধরনা দিচ্ছেন স্বজনরা। পাশাপাশি তাদের ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলনও করছেন স্বজনরা। অপহরণ ও নিখোঁজের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ও স্বজনদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
০৬ নভেম্বর ২০২০/ যুগান্তর 

নিখোঁজের পর ফিরে আসারা কিছুই বলেন না
কেউ বাসা থেকে বা অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন। কেউ বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলেন। কখনো সাদাপোশাকে, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁদের তুলে নিয়ে গেছে। পরে কারও কারও লাশ পাওয়া গেছে, কেউবা ফিরে এসেছেন। অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়ে গেছেন।

নিখোঁজ এসব ব্যক্তির নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুম হওয়া মানুষের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। এই তালিকায় সাবেক সাংসদ, রাজনীতিক নেতা ও কর্মীদের পাশাপাশি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুস্তক প্রকাশক, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় বক্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তা। গত ১৩ বছরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন অনেকেই। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে কিছু অভিন্ন ছক বা মিল লক্ষ করা যায়। অপহৃত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশকে অপহরণের পর উদ্ভ্রান্ত’ অবস্থায় কোনো সড়কে পাওয়া যায়। কিন্তু ফিরে আসার পর অনেকে কোনো কথা মনে করতে পারেন না। বাকিরা ফিরে এসে মুখে কুলুপ আঁটেন। আবার অনেকে বাসায় ফিরে আসেন। তাঁরাও পরে আর কোনো কথা বলেন না। 
১৯ জুন ২০২১/ প্রথম আলো 

গুম বন্ধে ব্যবস্থা চায় জাতিসংঘ, কমিটিকে ঢাকা আসতে না দেয়ার অভিযোগ
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে 'গুম' এর যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা এখনই থামাতে বলেছে জাতিসংঘ। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারকে গুরুতর ওই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলেছে গুম বিষয়ক জাতিসংঘ কমিটি। গত সপ্তাহে কমিটির সুপারিশসহ তাগিদপত্র ঢাকায় পৌঁছেছে। ঢাকা ও জেনেভার দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র রাতে মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম-বিষয়ক ওয়ার্কিং কমিটিরঅভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার রীতিমতো ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এখানে গুম-কে অনেকটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সরকার। গুমের অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘ ওয়ার্কিং কমিটির কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে জানিয়ে বলা হয়- এ নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসতে দফায় দফায় চেষ্টা করেছে, কিন্তু ঢাকার তরফে সহযোগিতা দূরে থাক, সাড়া-ই মিলেনি। বিষয়টি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের গুম-বিষয়ক ওয়ার্কিং কমিটির ১২৫তম বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার ভিত্তিতে হালনাগাদ হওয়া একটি রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর ২০২১/ মানবজমিন 

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের গুম-অপহরণ 

1. Rights Groups Criticize Enforced Disappearances in Bangladesh
Hazera Khatun says she has spent every day for the last four years praying for the safe return of her son, Sajedul Islam Sumon, a well-known leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP), who disappeared in Dhaka, along with his five friends in December 2013. 
ÒIn front of 20 or 25 witnesses from two or three vans, on which RAB (Rapid Action Battalion) was written, some men got down and picked up my son and his party co-workers. The men were in RAB uniform. Soon, we went to the headquarters of RAB, but they said my son was not in their custody, Ó Khatun, who is now 71 years old, told VOA.
29-11-17/ VOA 


2. 'Enforced disappearance' suspected in Bangladesh
A former Bangladeshi diplomat has been missing since December 4, leaving tell-tale signs of what observers here call an "enforced disappearance".
That day, Maroof Zaman, a former Bangladeshi ambassador to Qatar and Vietnam, drove to Dhaka airport to pick up his daughter, but he never arrived.
The next morning, his car was found abandoned in Khilkhet, about 3.7km away from the airport.
Tha SIM card in Zaman's mobile phone was last active about 3.8km away from there, according to the police.
9-12-17/ Al Jazeera 


3. Bangladesh disappearances 'a matter of grave concern'
An academic who went missing for over a month has returned home, saying "unidentified abductors" scooped him up in the middle of a busy road in Dhaka last month.
Mubashar Hasan, an assistant professor of political science at North South University in Dhaka, was abducted on November 7.
"If you look back, we will kill you," Hasan cited his kidnappers as telling him when they released him last Friday, dropping him off from a microbus on a highway near Bangladesh's capital.
26-12-17/ Al Jazeera 

4. Bangladeshi govt Ôusing enforced disappearances to silence critics
he disappearance of an academic, a journalist and a former diplomat over the past six months has once again highlighted the dangers faced by dissenters against the Hasina regime in Bangladesh. The state is the prime suspect in these Òenforced disappearancesÓ, which have created a culture of fear in an election year.
While enforced or involuntary disappearance is considered a Òheinous violation of human rights and an international crimeÓ by the United Nations, it is not an unusual occurrence in Bangladesh. Or thatÕs what it seems given the under-reporting on disappearances by the Bangladeshi media. According to historian Dr Anwar Hussain, most of the enforced disappearances are suspected to be state-sponsored and the government naturally ÒdoesnÕt want these to be reportedÓ.
19-2-2018/ Asia Times 

5. Without a trace: Enforced disappearances in Bangladesh
A month before the scheduled execution of Mir Quasim Ali, a member of the opposition Jamaat-e-Islami party in Bangladesh, his son and lawyer Mir Ahmad bin Quasim was preparing to appeal the death sentence in the Supreme Court.
On August 9, 2016, his wife and younger sister, who were with him at the time, reported a group of eight to nine plain-clothes men who did not identify themselves as being part of any security services, burst into his home in the capital, Dhaka, at around midnight.
6-6-18/ Al Jazeera 

6. Long wait for families of Bangladesh forced disappearance victims As more than 500 people 'disappear' in the country since 2009, a group in Dhaka seeks answers from the government. Nearly two dozen people gathered on a rooftop in Shaheenbagh, a sleepy neighbourhood in Bangladesh's capital Dhaka, have one thing in common: all of them have loved ones who have been missing, some for years. With vacant eyes that betrayed strain and weariness, each person at the gathering - mostly women and children - held a photograph of their loved ones who disappeared. The meeting on Wednesday was organised by "Mayer Daak" ('Mothers' Call' in Bengali), a group that represents the families of the victims of forced disappearance of opposition members and activists.
26-5-19/ Al Jazeera

7. বাংলাদেশঃ জোরপূর্বক ভাবে গুমের শিকার ৮৬ জন ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ
"আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভিকটিমদের উপহাস করে এবং নিয়মিতভাবে তদন্তে বাধা দিয়ে থাকে, যা ¯পষ্ট করে দেয় যে সরকারের তার নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুমের অর্থপূর্ন মোকাবিলা করার কোন উদ্দেশ্য নেই," বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক র্ব্যাড অ্যাডামস। "যেহেতু সরকারের সমালোচকরা জোরপূর্বক গুম হয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকেন, এবং গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলি সরকারের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার খুব কমই আশা করে থাকে, তাই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে তদন্ত শুরু করা উচিত।" 

জুলাই ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ এর মধ্যে পরিচালনা করা ভুক্তভোগী, তাদের পরিবারের সদস্য এবং জোরপূর্বক গুম হয়ে যাওয়ার সাক্ষীদের সঙ্গে ১১৫ টির বেশি সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করা এই প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছে যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক গুমের তদন্ত করতে এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা প্রত্যাখান করে আসছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও পেয়েছে যে কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক গুম – এবং জোরপূর্বক ভাবে গুম হওয়ার হুমকি – সমালোচকদের নীরব করার জন্য, বাকস্বাধীনতাকে ভয় দেখানো জন্য ব্যবহার করে থাকে।
১৬ আগস্ট ২০২১/ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন