২৩ এপ্রি, ২০২২

লাইলাতুল কদরের শানে নুজুল



একবার রাসূল সা. স্বপ্নযোগে দেখতে পেলেন তাঁর জন্য স্থাপিত মিম্বরে উঠে গেছে উমাইয়া বংশের লোকেরা। তিনি খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। এটা সেসময়ের ঘটনা যখন মুহাম্মদ সা. রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হননি। তিনি তখনো মক্কায়।  

মুহাম্মদ সা. বুঝতে পারলেন তাঁর স্থাপিত ইসলামী রাষ্ট্র একটি বংশের কুক্ষিগত হয়ে পড়বে। তিনি দুঃখ পেলেন। একইসাথে এও জানতে পারলেন এই বংশ ১০০০ মাস রাজত্ব করবে। 

স্বপ্ন দেখার পর বিষণ্ণ মুহাম্মদ সা.-কে পুরস্কার দিয়ে সান্ত্বনা দিলেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। তিনি সূরা কদর নাজিল করে জানালেন, আর মহিমান্বিত রাত প্রসঙ্গে আপনি কি জানেন? মহিমান্বিত রাত হাজার মাস হতেও উত্তম”। 

ইমাম তিরমিজি রহ. সূরা কদরের শানে নুজুল হিসেবে এই একটি ঘটনাকেই উল্লেখ করেছেন। 

ইউসুফ ইবনু সা’দ রহ. থেকে বর্ণিত, হাসান রা. মুআবিয়া রা.-এর নিকট বাই’আত গ্রহণের পর তাঁর সামনে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, আপনি (মুআবিয়ার নিকট বায়’আত গ্রহণ করে) মু’মিনদের চেহারা কলঙ্কিত করেছেন। এতে তিনি বললেন, তুমি আমাকে অভিযুক্ত করো না। আল্লাহ তা’আলা তোমার প্রতি রহমত করুন। 

হাসান রা. বলেন, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সা.-কে স্বপ্নে উমাইয়্যা বংশীয়দেরকে তাঁর মিম্বারের ওপর দেখানো হয়েছে। বিষয়টি তাঁর নিকট খারাপ লাগে। তখন অবতীর্ণ হয়, “আমি অবশ্যই তোমাকে কাওসার (ঝরণা) দান করেছি” (সূরাঃ আল-কাওসার-১) অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! আমি জান্নাতে তোমাকে কাওসার নামক ঝরণা দান করেছি। আরো অবতীর্ণ হয়, “নিশ্চয় আমি এ কুরআন মহিমান্বিত রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর মহিমান্বিত রাত প্রসঙ্গে আপনি কি জানেন? মহিমান্বিত রাত হাজার মাস হতেও উত্তম” (সূরাঃ আল-ক্বাদর-১-৩)। হে মুহাম্মাদ! আপনার পরে বনী উমাইয়্যা হাজার মাস শাসন করবে।    

- জামে আত তিরমিজি/ তাফসীরুল কুরআন / হাদিস নং ৩৩৫০

১৩২ হিজরিতে উমাইয়াদের পতন হয়। হাসান রা. ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া থেকে গণনা শুরু করলে বনু উমাইয়া ৯২ বছর ক্ষমতায় ছিল। বনু উমাইয়াদের ক্ষমতার সময়কাল ৯২ বছর  হলেও মক্কাতে তারা ৮৩ বছর শাসন করে। কারণ মক্কায় আবু বকর রা.-এর নাতি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ৯ বছর খলিফা ছিলেন। 

উমাইয়া শাসনের ১ম শাসক মুয়াবিয়া রা.-এর মৃত্যুর আগেই তার ছেলে ইয়াজিদকে শাসন ক্ষমতার উত্তরাধিকার করে যান। এটা হাসান রা.-এর সাথে করা চুক্তির বিপরীত। তাছাড়া এটি শুরার মাধ্যমে হয়নি বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মতামত দেন। 

উমাইয়া শাসনের ২য় শাসক ইয়াজিদ ক্ষমতা গ্রহণ করলে রাসূল সা.-এর নাতি ও জান্নাতের সর্দার ইমাম হুসাইন রা. ও আবু বকর রা. এর নাতি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. যথাক্রমে মদিনা ও মক্কা থেকে বিদ্রোহ করেন। 

ইমাম হুসাইন রা. কুফায় ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত ও শাহদাতবরণ করলেও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বিদ্রোহ চালিয়ে যান। তিনি ৯ বছর মক্কার খলিফা হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর উমাইয়া শাসনের এক সেনাপতি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে ইবনে যুবাইর রা.-এর পরাজয় ঘটে ও তিনি শাহদাতবরণ করেন।  

হিসেব করলে দেখা যায় মক্কায় উমাইয়া শাসন ৮৩ বছর ছিল। যা হাজার মাসের সমান। কাসিম ইবনে ফজল রহ. বলেছেন, আমি হিসেব করে দেখেছি পুরো হাজার মাস হয়েছে। কম বেশি হয়নি। 

মুসলিম রাষ্ট্রের ক্ষত হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য মেহেরবানী করে লাইলাতুল কদর দান করেছেন। আসুন আমরা এই ক্ষত পূরণের চেষ্টা করি। আমাদের রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। 

আল্লাহর রাসূল সা.-এর মিম্বার কোনো বংশ, কোনো গোত্র, কোনো সেক্যুলার গোষ্ঠির কাছে যেন না যায়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর মিম্বার তাঁর একান্ত অনুসারী ও তাঁর আদর্শ ধারণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

আসুন, আমরা ইকামাতে দ্বীনের জন্য ব্যস্ত হই। আমাদের ব্যস্ততার বড় অংশ যাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করেই হয়। আমাদের এই প্রচেষ্টা ও ব্যস্ততা আল্লাহ চাইলে হাজার মাসের প্রচেষ্টার বরকত দিয়ে দিবেন। ইনশাআল্লাহ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন