২০১৯ সালের ১৭ জুন তিনি কারাগারে শাহাদাতবরণ করেন।
শহীদ মুরসি : মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট
২০১৯ সালের ১৭ জুন তিনি কারাগারে শাহাদাতবরণ করেন।
আহমেদ আফগানীর ব্লগ
এদেশে তো প্রায় সবাই মুসলিম। তো মুসলিমদেরকে আবার কীসের দাওয়াত দেয় জামায়াত? জামায়াতে ইসলামের প্রতি এটি একটি কমন প্রশ্ন। এই ব্যাপারে আমাদের কথা হলো আমরা বেসিক্যালি তিনটি বিষয়ে দাওয়াত দেই। আমাদের দাওয়াতকে সহজ ও সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাইলে নিম্নলিখিত তিনটি পয়েন্টে বলা যায়। ১. আমরা সাধারণত সকল মানুষকে এবং বিশেষভাবে মুসলমানদেরকে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করার আহবান জানাই। ২. ইসলাম গ্রহণ করার কিংবা ইসলাম মেনে নেওয়ার কথা যারাই দাবী করেন, তাদের সকলের প্রতি আমাদের আহবান এই যে, আপনারা আপনাদের বাস্তব জীবন হতে মুনাফিকী ও কর্ম-বৈষম্য দূর করুন এবং মুসলমান হওয়ার দাবী করলে খাঁটি মুসলমান হতে ও ইসলামের পূর্ণ আদর্শবান হতে প্রস্তুত হোন। ৩. মানব-জীবনের যে ব্যবস্হা আজ বাতিলপন্থী ও ফাসিক কাফিরদের নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন করতে হবে এবং নেতৃত্ব আদর্শ ও বাস্তব উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর নেক বান্দাহদের হাতে সোপর্দ করতে হবে। খেয়াল করুন প্রিয় ভাই, আমরা মুসলিম অথচ আমাদের দেশ ইসলামী বিধান অনুসারে পরিচালিত হয় না। আমরা মুসলিম দাবি করি অথচ আমাদের চরিত্র দেখে সেটা বুঝা যায় না। এটাই আমাদের আন্দোলনের বেসিক কারণ। আমরা প্রথমত একজন মানুষকে আল্লাহর পূর্ণ অনুগত হতে আহবান জানাই। এই আনুগত্যের মানে হলো নামজের মধ্যে আমরা যেভাবে আল্লাহকে পূর্ণভাবে মানি সেভাবে সবসময় আল্লাহর অনুগত থাকা। আল্লাহর বিধানকে পুরোপুরি অনুসরণ করা। সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। সকল ফরজ কাজ অবশ্যই করা। এতটুকু মেনে নেয়ার পর আমাদের দ্বিতীয় আহবান হলো মুনাফিকি তথা কর্মীয় বৈসাদৃশ্য দূর করুন। আপনি যা মানেন তার বিপরীত কিছু দেখলে আপনার শরীরে গা-জ্বালা করাটাই স্বাভাবিক। যদি গা-জ্বালা না করে তাহলে বুঝা যায় আপনার আপনার মেনে নেওয়াটা সঠিকভাবে হয় নি। পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা পরিবেশ দেখলে আপনার ঘৃণা হওয়া উচিত, তেমনি সুদ, ঘুষ, মজুতদারি, জুলুম ইত্যাদিতে আপনার ঘৃণা হওয়া উচিত। যদি ঘৃণা না হয়ে ঐসব কাজে আপনি জড়িত থাকেন তবে এটাই কর্মীয় বৈসাদৃশ্য। আবার আল্লাহ তায়ালা বিধান দিয়েছেন এবং দায়িত্ব দিয়েছেন সেই বিধান অনুসারে সমাজ/ রাষ্ট / পরিবার পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু আপনি এমন একটি সমাজে বাস করেন এখানে ৯০% মুসলিম হলেও সেই সমাজে ইসলাম অনুসারে পরিচালিত হয় না। আপনি আল্লাহকে মানেন, নামাজ-রোজা করেন অথচ সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না দেখেও যদি আপনার অন্তর না পুড়ে তবে এটা মুনাফিকি। আমরা এই মুনাফিকি আচরণ থেকে সরে আসার জন্য আহবান জানাই। আমরা আপনাকে সেভাবে বলতে চাই, আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বলেছেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। এই সমাজের মুসলিমদের প্রতি আমাদের সর্বশেষ আহবান হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার আহবান। এই সমাজের নেতৃত্ব আমরা এমন লোকদের হাতে তুলে দিতে চাই যারা এই সমাজকে আল্লাহর বিধান অনুসারে পরিচালিত করবে। এজন্য তাকওয়াবান লোকদের আমরা নির্বাচিত করবো আমাদের নেতা হিসেবে। মুসলিমদের নেতা হবে মুসলিমদের পছন্দ অনুসারে। কেউ জোর করে মুসলিমদের নেতা হলে তার পরিণতি ভালো নয়। আমরা এই সমাজের মুসলিমদের তাদের নেতা বাছাইয়ের সুযোগ করে দিতে চাই। জোর করে মুসলিমদের নেতা হওয়া জালিমদের ব্যাপারে মুহাম্মদ সা. বলেন, আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন কওমের লোকদের অনুমোদন ছাড়াই তাদের নেতা হয় তার উপর আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। তার কোন ফরয বা নাফ্ল ‘ইবাদাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। [আবু দাউদ ২০৩৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের মাথার এক বিঘত উপরেও উঠে না : যে ব্যক্তি জনগণের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্ব দেয়, যে নারী তাঁর স্বামীর অসন্তুষ্টিসহ রাত যাপন করে এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী দু’ ভাই। [ইবনে মাজাহ ৯৭১] আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তিন ব্যক্তির নামায তাদের কান অতিক্রম করে না; প্রথম হল, পলাতক ক্রীতদাস; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। দ্বিতীয় হল, এমন মহিলা যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে এবং তৃতীয় হল, সেই জাতির নেতা যাকে ঐ লোকেরা অপছন্দ করে।” (তিরমিযী ৩৬০, সহীহ তারগীব ৪৮৭ নং) এই হচ্ছে আমাদের দাওয়াতের কারণ। আশা করি আপনারা এসব বিষয়ের সাথে একমত হবেন। যারা এখনো জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত হননি তাদের যুক্ত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। #গণসংযোগ_পক্ষ
জামায়াতের বয়স তখন মাত্র ৫ বছর। ১৯৪৬ সাল। লাহোরে একটি সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মাওলানা মওদূদী রহ.। বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি কিছু অভিযোগের জবাব দেন। এর মধ্যে একটি ছিল, জামায়াতে ইসলাম নতুন ফিরকা তৈরি করছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর উত্তরে মাওলানা বলেন, //বলা হয় যে, আমাদের জামায়াত মুসলমানদের মধ্যে একটি নতুন ফিরকার গোড়া পত্তন করেছে। এ ধরনের কথা যারা প্রচার করে থাকেন, সম্ভবত ফিরকা সৃষ্টির মূল কারণগুলোই তাদের জানা নেই, মুসলমানদের মধ্যে যেসব কারনে ফিরকা বা উপদলের সৃষ্টি হয়, সেগুলোকে মোটামুটি চার, ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমতঃ দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন কোন বস্তুকে আসল দ্বীনের মধ্যে শামিল করে নিয়ে তাকেই কুফর ও ঈমান অথবা হিদায়াত ও গোমরাহীর মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা। দ্বিতীয়তঃ দ্বীনের কোন বিশেষ মাসয়ালাকে কুরআন ও সুন্নাহর চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তাকেই উপদল সৃষ্টির ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা। তৃতীয়তঃ ইজতিহাদী বিষয়াদিতে বাড়াবাড়ি করা এবং ভিন্ন মত পোষনকারীদের ওপর ফাসিক ও কুফরীর অপবাদ চাপিয়ে দেয়া কিংবা অন্তত তাদের সাথে স্বতন্ত্র আচার পদ্ধতি অবলম্বন করা। চতুর্থতঃ নবী করীম (স.) এর পর কোন বিশেষ ব্যক্তি সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারণা পোষণ করা এবং তার সম্পর্কে এমন কোন মর্যাদা দাবী করা যা মানা বা না মানার উপর লোকদের ঈমান কিংবা কুফর নির্ভরশীল হতে পারে অথবা কোন বিশেষ দলে যোগদান করলেই সত্যপন্থী হওয়া যাবে এবং তার বাইরে অবস্থানকারী মুসলমানরা হবে বাতিলপন্থী এমন কোন দাবী উত্থাপন করা। এখন আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, উপরোক্ত চারটি ভুলের কোনটি আমরা করেছি? কোনো ভদ্রলোক যদি দলিল-প্রমাণসহ স্পষ্টভাবে বলে দিতে পারেন যে, আমরা অমুক ভুলটি করেছি তবে তৎক্ষণাৎ আমরা তওবা করবো এবং নিজেদের সংশোধন করে নিতে আমরা মোটেই দ্বিধাবোধ করবো না। কেননা-আমরা আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার উদ্দেশ্যেই সংঘবদ্ধ হয়েছি, দলাদলি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু আমাদের কার্যকলাপ দ্বারা যদি ভুল প্রমাণিত না হয়, তবে আমাদের সম্পর্কে ফিরকা সৃষ্টির আশংকা কীভাবে করা যেতে পারে? আমরা শুধু আসল ইসলাম এবং কোন কাটছাঁট না করে পূর্ণ ইসলামকে নিয়েই দাড়িয়েছি, আর মুসলমানদের কাছে আমাদের আবেদন শুধু এই যে, আসুন আমরা সবাই মিলে একে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করে দুনিয়ার সামনে এর সত্যতার সাক্ষ্য দান করি। বস্তুত দ্বীনের কোন একটি বা কয়েকটি বিষয়কে নয় বরং পরিপূর্ণ দীন ইসলামকে আমরা সংগঠন ও সম্মিলনের বুনিয়াদ হিসেবে স্থির করে নিয়েছি।// নতুন একটা কথা পাওয়া যায়, এটা মূলত মাদখালীদের প্রচারণায় তৈরি হয়েছে। তারা ইসলামী আন্দোলন থেকে মানুষকে দূরে রাখার ব্যাপারে সদা তৎপর। আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন। নতুন কথাটি হলো, আমরা মুসলিমরা এক জামায়াত। কেউ মুসলিম হলে তাকে আলাদা করে দল করার দরকার নেই। কথাটা ঠিক। তবে এর সাথে বাস্তবতার মিল নেই। কারণ আমরা মুসলিমরা কেউ সংঘবদ্ধ নই। আমাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নেই। অতএব নেতা বিহীন এই দলকে জামায়াত হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এজন্যই মুহাম্মদ সা. বলেছেন, মেষের পাল থেকে আলাদা একটি মেষকে যেমন নেকড়ে বাঘ সহজেই ধরে খায়, তেমনি জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন একজন মুসলিম সহজেই শয়তানের খপ্পরে পড়ে যায়। যদি মুসলিম মানেই জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত হতো তাহলে মুহাম্মদ সা.-এর এই কথার দরকার ছিল না। উমার রা. বলেন, لا إسلام الا بجماعة ولا جماعة الا بإمارة ولا إمارة إلا بطاعة জামায়াত ছাড়া ইসলাম হয়না এবং নেতৃত্ব ছাড়া ইসলাম হয় না এবং আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্ব হয় না। অতএব নেতৃত্বহীন একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জামায়াতবদ্ধ রয়েছে বলে যে ধারণা দেওয়া হচ্ছে এটা ভুল। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি এসব কথা বললেও এগুলো অসার কথা। আমরা আসলে ব্যক্তি বিবেচনায় কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। যদি নেই তাহলে তা ঘুরে ফিরে ফিরকায় পরিণত হবে। ইসলামকে তার বিধান অনুসারেই মানতে হবে। জামায়াতে ইসলাম এমন একটি দল বা জামায়াত যারা মাজহাবগত পার্থক্য, আমলগত মতপার্থক্য ও ইজতেহাদী পার্থক্যকে একেবারেই ইগ্নোর করে। এসব ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো বক্তব্য নেই। জামায়াত কর্মীরা তাদের পছন্দমত মতামতকে অনুসরণ করতে পারে। জামায়াতে ইসলাম মূলত মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করে তাদের দায়িত্ব পালনে তাকিদ করে। যারা অভিযোগ দাতা তারা এসব অভিযোগ আগেও করেছে এখনো করছে। এর দ্বারা মুসলিমদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করি তারা ধীরে ধীরে হক উপলব্ধি করতে পারবেন এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনে শামিল হবেন। ইনশাআল্লাহ। যারা এখনো জামায়াতে ইসলামে যোগ দেননি, আমরা তাদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা হাতে হাত রেখে দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব পালন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন, আমাদের সঠিক পথ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। #গণসংযোগ_পক্ষ