৭ জুন, ২০২২

জামায়াত কী ধরণের কাজ করে?

জামায়াতের কার্যক্রম নিয়ে অনেকের জানার বিষয় থাকে। অনেকে মনে করেন জামায়াত মানেই হলো কিছু রাজনৈতিক মিটিং মিছিল। কিন্তু আসলে তা নয়। জামায়াত কী কাজ করে তা জানার জন্য প্রথমেই আমাদের জানতে হবে জামায়াতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী?

লক্ষ্য উদ্দেশ্য জানা থাকলে তাদের কার্যক্রমের আইডিয়া সহজেই পাওয়া যায়। জামায়াতে ইসলাম তাদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে বলেছে, বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানব জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা. প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। জামায়াত মনে করে ইসলামী জীবন বিধান কায়েম করাই ইকামাতে দ্বীনের বেসিক অর্থ। তাই তারা এই কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে চায়। দ্বীন কায়েম বলতে শুধু নামাজ রোজা যাকাত দেওয়া ইত্যাদি ইবাদত বুঝায় না। বরং পুরো জীবন পদ্ধতি পরিচালনাকেই বুঝায়। মুমিন ব্যক্তি শুধু মসজিদে অথবা ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী অনুশাসন মানবে না। বরং সর্বস্তরে ও সবস্থানে আল্লাহর দেওয়া বিধান প্রতিষ্ঠাই দ্বীন কায়েম। এজন্য জামায়াত চারটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ১. দাওয়াতের মাধ্যমে চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পুনর্গঠনের কাজ : জামায়াত কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক শিক্ষাকে বলিষ্ঠ যুক্তির সাহায্যে তুলে ধরে জনগণের চিন্তার বিকাশ সাধন করছে। তাদের মধ্যে ইসলামকে অনুসরণ ও কায়েম করার উৎসাহ ও মনোভাব জাগ্রত করছে। ২. সংগঠন ও প্রশিক্ষণের কাজ : ইসলাম কায়েমের সংগ্রামে আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে সুসংগঠিত করে উপযুক্ত জ্ঞানগত ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দিয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার যোগ্য করে গড়ে তুলছে। ৩. সমাজ সংস্কার ও সেবার কাজ : ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সমাজের সংশোধন, নৈতিক পুনর্গঠন ও সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে জামায়াত সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করছে। ৪. সরকার সংশোধনের কাজ : জামায়াত শাসন ব্যবস্থার সকল স্তরে অযোগ্য ও অসৎ নেতৃত্বের বদলে আল্লাহভীরু, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব কায়েমের জন্য আল্লাহর রাসূল ও সাহাবাদের প্রদর্শিত পন্থায় চেষ্টা চালাচ্ছে। এই চারটি কর্মসূচি জামায়াত কোনোটাই নিজ থেকে আবিষ্কার করেনি। বরং এগুলো গ্রহণ করেছে রাসূল সা.-এর সীরাত থেকে। রাসূল সা. প্রথমে মক্কার মানুষদের দাওয়াত দিয়েছেন। তারপর যারা তাঁর কথা মেনে নিয়েছেন তাদেরকে তার নেতৃত্বের অধীনে সঙ্ঘবদ্ধ করেছেন। এরপর দারুল আরকামে তাদের জ্ঞানগত ও আচরণগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। সবশেষ শক্তি কিছুটা অর্জন হওয়ার পর সমাজ থেকে অসৎ নেতৃত্ব দূর করার চেষ্টা করেছেন। অবশেষে মক্কায় প্রাথমিকভাবে সফল না হয়ে মদিনায় জনগণের সাপোর্ট নিয়ে সৎ নেতৃত্বের কাঙ্খিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতের তিনটি স্থায়ী কর্মনীতি রয়েছে। কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই নীতি অনুসরণ করা হবে। ১। যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আল্লাহর বিধান ও রাসূলের নির্দেশিত বিধান অনুসারে করবে। ২। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জামায়াত এমন কোনো পন্থা অবলম্বন করবে না, যা সততার পরিপন্থী ও ফিতনা তৈরি করবে। ৩। জামায়াত তার কাঙ্খিত বিপ্লব করার জন্য নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করবে। ইসলামী সমাজের উপযোগী বলিষ্ঠ ঈমান ও চরিত্র সৃষ্টির জন্য ইসলামী আন্দোলনই একমাত্র উপায়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমেই উপযুক্ত লোক তৈরি হয়। তাই জামায়াত এ পন্থায় লোক তৈরি করছে। ত্যাগী ও নিঃস্বার্থ কর্মী এভাবেই তৈরি হয়ে থাকে। হুজুগ, সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে খারেজিদের মতো করে জাতিগঠনমূলক ও সমাজ পরিবর্তনের কাজ হতে পারে না। তাই জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও জনগণের রায় নিয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায়। ইসলামী আদর্শ জোর করে জনগণের উপর চাপাবার বিষয় নয়। জনসমর্থন নিয়েই ইসলামের সত্যিকার বিজয় সম্ভব। জামায়াত মানুষকে দাওয়াত দিয়ে, সংগঠিত করে, প্রশিক্ষণ দিয়ে ও তাদের মন জয় করে সমাজে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি আপনারা জামায়াতের এসব কর্মসূচি ও কর্মনীতির সাথে একমত হবেন। এটাই ইসলাম কায়েমের নববী পদ্ধতি। জামায়াত নববী পদ্ধতির বাইরে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করে না। যারা এখনো জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত হননি তাদের যুক্ত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা হাতে হাত রেখে দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব পালন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন, আমাদের সঠিক পথ অনুসরণের তাওফিক দান করুন।
#গণসংযোগ_পক্ষ

1 টি মন্তব্য:

  1. গণতন্ত্র হারাম এটা স্পষ্ট। তাহলে জামায়াত কেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে? তাদের নীতি অনুযায়ী তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কুরআন সুন্নাহ অনুসরণ করে!
    এক্ষেত্রে তাদের নীতি পরিবর্তন এর কারণ কি?

    উত্তরমুছুন