২২ জানু, ২০২৩

হিন্দুত্ববাদের কবলে পাঠ্যপুস্তক পর্ব ০২ (৭ম শ্রেণি)

ষষ্ঠ শ্রেণির মতো ৭ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকেও রয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমস্যা। এই সমস্যাগুলো অনিচ্ছাকৃত নয় বরং টার্গেটভিত্তিক। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক সেগুলো আলোচনা করবো। ৬ষ্ঠ শ্রেণির মতো ৭ম শ্রেণীতেও সবচেয়ে বেশি সমস্যা সামাজিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইতে। সামাজিক অনুশীলন বই ১ম ১০৯ পৃষ্ঠা পড়লে মনে হবে আপনি সামাজিক বিজ্ঞান বই নয়, হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের কোনো ধর্মীয় বই পড়ছেন।


সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের প্রচ্ছদ মৌর্য সাম্রাজ্যের আমলের বৌদ্ধ সমাজের পাটলিপুত্র মন্দিরের (ভারতের বিহারে অবস্থিত) ছবি। এটা আমাদের বর্তমান সমাজ কিংবা অতীত ইতিহাস কোনোটাকেই প্রতিনিধিত্ব করে না। ধর্মীয়ভাবেও প্রতিনিধিত্ব করে না।

৭ম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে চারটি প্রধান অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ের মূল বিষয় হলো আর্যদের হরপ্পা সভ্যতা। এই সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা। এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে এই সভ্যতার ধর্ম বেদের উপর নির্ভরশীল। তারা খুবই সভ্য আর শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছিল। তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুব ভালো ছিল। আধুনিক নগর সভ্যতার সব উপাদান সেখানে ছিল। নাগরিকদের সকলের সম্মানজনক অবস্থান ছিল। সবার নাগরিক স্বাধীনতা ছিল। ছিল বিস্তৃত রাস্তাঘাট, পানি সরবরাহ, ডাস্টবিন, সূক্ষ্ম পরিমাপ পদ্ধতি, শিল্পকলা ইত্যাদি সব বিষয়ে তারা পারদর্শী ছিল। মূলত তারা ছিল উৎকৃষ্ট এক জনগোষ্ঠী। তাদের ধর্ম বেদের উপর নির্ভরশীল। বেদের প্রকারভেদ নিয়েও বেশ ভালো আলোচনা কয়েকবার এসেছে। এই জনগোষ্ঠী মূলত প্রাকৃতিক কারণে ধীরে ধীরে পতিত হয়েছে।

বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা হলো একেশ্বরবাদী দ্রাবিড় সভ্যতা। নূহ আ.-এর সন্তানদের দ্বারা এই সভ্যতার সৃষ্টি। আর্যরা দ্রাবিড়দের ওপর নির্যাতন করে, হত্যা করে, ও জুলুম করে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। দ্রাবিড়দের ব্যাপারে কোনো আলোচনা নেই। এছাড়া আর্যরা ছিল জাতভেদ ও বর্ণপ্রথার বর্বর সভ্যতা। যারা মানুষকে মানুষ মনে করতো না। সেই হিন্দুয়ানী ও ব্রাহ্ম্যণ্যাবাদী বর্বর সভ্যতাকে মহান সভ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিষয় হলো বৌদ্ধ ধর্ম ও শাসনব্যবস্থা। বৌদ্ধ ধর্ম খুবই ভালো, পরম অহিংসার ধর্ম। গৌতম বুদ্ধের জীবনীর অনেক নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আগের অধ্যায়ের মতোই এই অধ্যায়েও এই সমাজের অনেক বিস্তারিত বর্ননা এসেছে। তাদের সমূহ মূর্তি, ভাস্কর্য, উপসনালয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ধর্মগ্রন্থ নিয়েও আলোচনা রয়েছে। আপনার মনে হবে ২য় অধ্যায়ে আপনি বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ছেন।

তৃতীয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে তৎকালীন হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতার নগরায়ন আর ধর্মীয় স্থাপনার চিত্র আর বর্ণনা। ভারত উপমহাদেশে ও বাংলায় শশাংক রাজত্ব। এখানে মুদ্রা, মন্দির, স্থাপনা, ধর্মিয় গ্রন্থ, দেব-দেবীর ছবি, বৌদ্ধ বিহার আর মন্দিরের ছবিতে সয়লাব। প্রতিমা, মূর্তি, দেব-দেবীর আলোচনাই মুখ্য এই অধ্যায়ে। ১২৪ পৃষ্ঠার বইয়ের ১০৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়লে একে সামাজিক বিজ্ঞানের চাইতে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের বই বললেই ভালো হবে।

এরপর ৪র্থ অধ্যায়। এই অধ্যায় মুসলিম শাসনের ইতিহাসের অধ্যায়। সুলতানী আমলের কথা বলার জন্য এই অধ্যায়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা মাত্র ১৫। আর তাতে সামান্য প্রশংসা দেখা গেলেও মূলত এই ১৫ পৃষ্ঠায় মুসলিম শাসনের প্রতি বিদ্বেষ উপস্থাপন করা হয়েছে। এদেরকে বিদেশী শাসক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ আর্যরা, গুপ্তরা, সেনরা ও পালরা কারো ক্ষেত্রেই বিদেশী উল্লেখ করা হয়নি। মুসলিমরা এসে তাদের ওপর শরীয়াহ চাপিয়ে দিয়েছে। অমানবিক দাসপ্রথা চালু করেছে। নারীদের ঘরে আটকে রেখেছে এই জাতীয় বহু অপবাদে জর্জরিত করেছে। আসুন আমরা এবার পয়েন্টভিত্তিক আলোচনায় আসি।

১. সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব নেই।

পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে আমাদের মুসলিম সন্তানেরা তাদের আত্মপরিচয় জানবে এবং নিজস্ব সংস্কৃতিতে গড়ে উঠবে। দুঃখজনকভাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির মতো ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকেও আমাদের মুসলিম পরিচয় অনুপস্থিত। মুসলিম পরিচয়কে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ও ইলাস্ট্রেশন নেই। উল্টো মুসলিম পরিচয়ের সাথে সাংঘর্ষিক কন্টেন্ট যুক্ত করা হয়েছে করা হয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ। অথচ আমাদের বাচ্চাদের পাঠ্যবই দেখে মনে হবে এরা মুসলিম না, সবাই মূর্তিপূজারি।

২. হিন্দুত্ববাদের প্রশংসা করা হয়েছে।

এদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্যরা এসেছে ইরান মতান্তরে জার্মানী থেকে। তারা এসে এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে। তাদের এই অত্যাচারের ভিত্তি ছিল বর্ণপ্রথা। তারা নিজেদের বড় মনে করতো। স্থানীয়দের অচ্যুত, নীচু মনে করতো। স্থানীয়দের সাথে তাদের আচরণ ছিল মানবতার জন্য চরম অপমানের। জাত পাত ও বর্ণভেদ করে তারা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিত না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এর চার ভাগে তারা মানুষকে ভাগ করেছে। শুদ্রদের তারা ঘৃণা করতো।

৭ম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইতে ১-৩১ পৃষ্ঠায় আর্যদের হরপ্পা সভ্যতাকে পজেটিভলি উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের উন্নত, সভ্য ও মানবতাবাদী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এভাবে আমাদের বাচ্চাদের কাছে মানবতাবিরোধী ব্রাহ্মণ্যবাদীদের পজেটিভলি উপস্থাপন করা হয়েছে।

৩. হিন্দুয়ানী ভাষা ও কালচারকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে।

বাংলায় মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে ভাষাগত সামান্য কিছু প্রার্থক্য রয়েছে। যদিও সেগুলো শব্দ হিসেব ইসলামী শরিয়তে ম্যাটার করে না। কিন্তু সাংস্কৃতিক দিক থেকে ম্যাটার করে। যদি কোনো শব্দ, পোষাক ও আচরণ কোনো মু*শরিক গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করে তবে সেটা ব্যবহার আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। যেমন বাংলার মুসলিমরা 'গোসল'কে 'গোসল' বলে, অন্যদিকে হিন্দুরা এটাকে 'স্নান' বলে। আমাদের ভাষাগত সংস্কৃতিতে এটা গোসল, স্নান নয়। গোসলখানাকে এই দেশের মানুষ স্নানাগার বলে না, গোসলখানা বলে। ৭ম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠায় 'গোসলখানা'কে 'স্নানাগার' বলা হয়েছে। এটা সুস্পষ্ট হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।

৭ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় আনিসুজ্জামানের একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে 'কত কাল ধরে' নামে। এই প্রবন্ধের বেসিক বিষয় হলো বাংলার মানুষ হিসেবে আমরা কেমন ছিলাম? আমাদের আচরণ কেমন ছিল? আমাদের পোষাক কেমন ছিল ইত্যাদি।


সেখানে তিনি যা উল্লেখ করেছেন তা সবই হিন্দু*য়ানী সংস্কৃতি। যেমন আমাদের পূর্বের লোকেরা সবাই ধুতি পরতো, মেয়েরা বহরে ছোট শাড়ি পড়তো। কপালে টিপ দিত ইত্যাদি। খাদ্য সংস্কৃতিতে ছাগলের গোশতের কথা আছে। গরুর গোশতের কথা নেই। যেন সবাই এদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ছিল। অথচ এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে একেশ্বরাবাদী দ্রাবিড়দের মাধ্যমে। আমাদের বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে আমরা আগে সবাই হিন্দু*য়ানী সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত ছিলাম।

৪. দেব-দেবী ও মন্দিরের পরিচয়গুলো হাইলাইট করা হয়েছে।

৭ম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞানের পুরো বইতেই খুব দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দেব-দেবীর নাম। সামাজিক বিজ্ঞান বই পড়ে একজন ছাত্রের স্বাভাবিকভাবে মাথায় যে বিষয়টা ইন্সটল হবে তা হলো, আমাদের দেশের ইতিহাস মানেই হলো মূর্তিপূজার ইতিহাস। দেব দেবীকে শুধু পরিচয় করিয়ে দেওয়া নয়, তাদের প্রতি যাতে ভক্তি আসে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান বইতে।

সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের প্রচ্ছদসহ ১ - ১০৯ পৃষ্ঠায় আমাদের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পুরো আলোচনায় হিন্দু ও বৌদ্ধদের উন্নত সভ্যতা, উন্নত সংস্কৃতি, তাদের দেব-দেবী ও নগরায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

৫. পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিদ্বেষ যুক্ত করা হয়েছে।

৬ষ্ঠ শ্রেণির মতো ৭ম শ্রেণিতেও পরিকল্পিতভাবে মুসলিম সমাজ ও ইসলামের প্রতি বিষোদগার করা হয়েছে। ৭ম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১২১ পৃষ্ঠায় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবরোধবাসিনীর কাহিনী থেকে কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে ইচ্ছেকৃতভাবে মুসলিম সমাজের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। একইসাথে ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিধান 'পর্দার' ব্যাপারেও ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে।


সেখানে পরস্পরবিরোধী ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। একবার তিনি বলেছেন সেখানে লেডিস ক্লাবের অনুষ্ঠান করছেন। যদি মেয়েরা অবরোধের মধ্যেই থাকতো তাহলে লেডিস ক্লাবের সংস্কৃতি কীভাবে গড়ে উঠলো। তিনি বলেছেন সবাই বোরকা পড়ে থাকতো। আবার তিনি গল্প করছেন, একবার এক বিয়ের অনুষ্ঠানে রোকেয়া বোরকা পরে যাওয়ায় উপস্থিত সবাই নাকি তাকে ভূত ভেবে ভয় পেয়েছে।

যদি মুসলিম সমাজে বোরকা পরার রীতি থেকেই থাকে (অবশ্যই ছিল) তবে তা দেখে মানুশ ভূত ভেবে ভয় পাবে কেন? আর যদি ভূত ভেবে ভয় পায় তবে ধরে নিতে হবে মুসলিম সমাজে বোরকা পরার রীতি ছিল না। নতুন কিছু দেখে ভয় পেয়েছে। আর বাকী যে অবাস্তব গল্পগুলো বলেছেন তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। এসব গল্প উল্লেখপূর্বক ইসলামকে কটাক্ষ করা হয়েছে। মুসলিম সমাজের সন্তানরা কেন ইসলামকে করা বিদ্রূপকে পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করবে?

৬. ইংরেজ লুটেরাদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে।

অবাক বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম সামাজিক বিজ্ঞান বইতে ইংরেজ লুটেরা ও ডাকাতদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাদের হাজারো অপকর্মের কথা আড়াল করে অনেকটা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ৭ম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১৩০ নং পৃষ্ঠায় ইংরেজ আমলের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।


অথচ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ইংরেজদের শোষণের হাতিয়ার। যেসব জমিদার প্রজাদের শোষণ করে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় করে দিতে পারবে তাদেরকেই জমিদারী স্থায়ীভাবে দেওয়া হবে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার ফলে প্রজাদরদী জমিদাররা জমিদারি হারিয়েছে। পক্ষান্তরে নব্য শোষক শ্রেণী তৈরি হয়ে এদেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে।

৭. আওয়ামী লীগের দলীয় বইয়ের রূপ দেওয়া হয়েছে।

৬ষ্ঠ শ্রেণির মতো ৭ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের ২য় পৃষ্ঠায় আওয়ামীলীগের উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে যেন এটা পাঠ্যবই নয়, আওয়ামীলীগের দলীয় বুলেটিন। নির্লজ্জ দলীয়করণের মাধ্যমে পাঠ্যবইকেও গ্রাস করেছে আওয়ামীলীগ। এমন হীনকর্ম আইয়ুব খানের মতো স্বৈরাচারও করেনি।

৮. ভ্রান্ত মুসলিম গোষ্ঠিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে

মুসলিমদের মধ্যে যারা ভ্রান্ত ও ইসলামী শরিয়ত বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরকম একটা গোষ্ঠি হলো মাইজভান্ডারি গোষ্ঠী। যাদের গান লিখে দিত রমেশ শীল নামের এক মুশ*রিক।


সেই মাইজভান্ডারিকে বলা হয়েছে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন। ৭ম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় রমেশ শীলের জীবনী বর্ণনা দিতে গিয়ে এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভ্রান্ত ও কুফরি কাজে লিপ্ত মাইজভান্ডারিদের বলা হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি।

৯. ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ

মুসলিম বিদ্বেষের ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে মুসলিম ও বৌদ্ধদের ত্রাণকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজিকে বহিরাগত লুটেরা ও ক্ষমতালিপ্সু হিসেবে দেখানো হয়েছে। সামাজিক অনুশীলন বইয়ের ৩ নং পৃষ্ঠায় আক্রমণকারী ও দখলদার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ মূল কথা হলো ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্য সেন বংশের রাজাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলার মুসলিমরা তাদের রক্ষার জন্য আহ্বান জানায়।


সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বখতিয়ার খলজি আমাদের বর্বর আর্যদের হাত থেকে উদ্ধার করে। বখতিয়ার খলজি বাংলার মুসলিমদের উদ্ধার করে নিজে শাসক বনে যাননি। তিনি দিল্লির সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেকের কাছে বাংলাকে সমর্পন করেন। ক্ষমতালিপ্সু হলে তিনি এই কাজ করতেন না। তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হয়েছে তিনি বৌদ্ধদের বিহার ও পাঠাগার ধ্বংস করেছেন। এটা সর্বৈব মিথ্যে কথা। বখতিয়ার খলজিকে ওয়েলকাম করেছে বৌদ্ধরা। বখতিয়ারের অভিযানের মাধ্যমে বৌদ্ধদের ওপর চলা বহুদিনের অত্যাচার চিরতরে বন্ধ হয়েছে।

১০. সুলতানী আমল তথা মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে

৭ম শ্রেণিতে সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো উপমহাদেশের স্বর্ণযুগ মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়েছে। সুলতানি আমল শুরুই হয়েছে এভাবে, “তোমাদের যদি জিজ্ঞেস করি, ‘বিদেশি' বলতে তোমরা কাদের বোঝাবে? তোমরা চোখ বন্ধ করে বলবে, বিদেশি হলো তারাই যারা আমাদের দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের বাইরে থেকে এই দেশে এসেছে। তোমাদের উত্তর একদম সঠিক। কিন্তু সুলতানি আমলে যদি কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো ‘বিদেশি' কে? তাহলে সে কী বলত জানো? সে বলত, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি যে আমাদের গ্রামে বা অঞ্চলে থাকে না, আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির অংশ নয়, সেই বিদেশি।” (সামাজিক বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ১১১)
অর্থাৎ, এতক্ষন পর্যন্ত যা পড়লাম সবকিছুই আমাদের দেশীয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এখন যা আসছে সব ভিনদেশি, অন্য সংস্কৃতির জিনিস। অর্থাৎ বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে আমাদের উপর “সুলতানি তথা ইসলামী সংস্কৃতি” চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।


সুলতানরা একনায়ক ছিল এটা বুঝাতে গিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “সুলতানগণ ছিলেন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। এখন মনে হতে পারে, ‘সার্বভৌম ক্ষমতা’ আবার কী? বন্ধুরা, সার্বভৌম ক্ষমতা হলো সর্বময় ক্ষমতা। যে ব্যক্তি এই ক্ষমতার অধিকারী তারা তাদের ক্ষমতার জন্য কারও কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না। তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। তিনি যেমন চান, তেমনই হয়।” এমনভাবে উপস্থাপন হয়েছে যেন সুলতানি আমলের আগে সবাই ছিল উদারপন্থী ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু সুলতানগন চা ইচ্ছা তা-ই করতো। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল তারা। অথচ বাস্তবতা হলো মুসলিম শাসকরাই সবচেয়ে বেশি জনগনের জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করেছিলেন। এই কারণেই বাংলার মানুষ দলে দলে মুসলিম হয়েছিল।


বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে, উপমহাদেশের ইতিহাসে সবসময়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসন থাকলেও বর্ণবাদের শুরু হয় সুলতানি আমল থেকে। সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “ইতিহাসবিদদের গবেষণা অনুযায়ী, এ সময়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীর মানুষ বসবাস করলেও মুসলমানগণ অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। আর এর কারণ কিন্তু একটু আগেই বলা হয়েছে। সেই কারণটা মনে আছে তো? আচ্ছা, কারণটা আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছি। সুলতানি আমলের শাসকগণ সবাই ছিলেন মুসলিম এবং সে জন্যই মুসলিমরা অন্যদের থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। মুসলমান সমাজে মূলত দুইটি শ্রেণী ছিল। একভাগে ছিল বাইরে থেকে আসা অভিজাত সম্প্রদায় … অন্যভাগে ছিল স্থানীয় ধর্মান্তরিত সাধারণ শ্রেণী। অভিজাত শ্রেণী নিজেদের আশরাফ ও অন্যদের আতরাফ মনে করতেন। আশরাফ ও আতরাফদের মধ্যে মেলামেশা, বিয়েশাদী, দাওয়াতের আদানপ্রদান একেবারেই ছিল না। বর্তমানেও এ ধরনের বিভাজন আমরা দেখতে পাই। সমাজের ‘দলিতদেরকে' অন্ত্যজ ও অপাংক্তেয় মনে করা হয়।”

সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের লেখক মুসলিম সমাজে বর্ণবাদ খুঁজে পেয়েছে। অথচ আর্যদের হরপ্পা সমাজে বর্ণপ্রথা নিয়ে তারা কোনো আলোচনা তারা করে নি। অথচ মুসলিম সমাজে সবাই একসাথে বসবাস করতো, একসাথে খাবার খেত, একসাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদন করতো।


নগ্নভাবে মিথ্যা বলে মুসলিম শাসনের দোষ বের করতে গিয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের লেখক দাবি করেছেন, “অমানবিক দাসপ্রথা” সুলতানি আমলেই চালু হয়েছিল। এই অমানবিক দাসপ্রথাও নাকি ইংরেজ লুটেরারা বন্ধ করেছিল।

সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে "ইতিহাসের এই মন্দটুকুও তোমাদের জানতে হবে। সুলতানি আমলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। তোমরা হয়তো জানতে চাইতে পারো দাসপ্রথা কী? দাসপ্রথা হলো অমানবিক একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষের কেনা-বেচা হতো। এই ব্যবস্থায় ধনীরা ব্যক্তিকে কিনে নিত এবং ক্রীত ব্যক্তি তার সম্পত্তি হিসেবে যেকোনো কাজ করতে বাধ্য থাকত। সুলতানি আমলেও এই দাসপ্রথার মাধ্যমে মানুষের কেনা-বেচা হতো। দাসগণ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করত। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না। সুলতানি আমল ও মোগল আমল শেষে ব্রিটিশ উপনিবেশের মধ্যমভাগে আইন করে এই অমানবিক প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।”

অথচ বাস্তবতা হলো সুলতানী আমলের পূর্বেও দাসপ্রথা ছিল এবং দাসদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হতো। আর মুসলিম সমাজে দাসপ্রথা চালু থাকলেও অমানবিক আচরণ করা হতো না। দাসরা যোগ্যতা অনুসারে সমাজে সম্মানিত হতেন। সেনাবাহিনী কমান্ডার হতেন, এমনকি শাসকও হতেন। দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে প্রথম কুতুব উদ্দিন আইবেকের শাসনের অধীনে আসে বাংলা। আর কুতুব উদ্দিন আইবেক নিজেই একজন দাস ছিলেন। সুতরাং পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।


সুলতানী আমলে নারীদের অবস্থা খারাপ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১২০ পৃষ্ঠায়। অথচ আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আমলে নারীদের দূরাবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়নি। বাস্তবতা হলো, বাংলার নারীরা প্রথম মানুষ হিসেবে ট্রিট হতে থাকে সুলতানী আমল থেকে। তাদের সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। আর হিন্দুদের আমলে অধিকার তো দূরের কথা গায়ে কাপড় দেয়ার অধিকার ছিল না। তারা তাদের শরীর ঢাকতে পারতো না। শরীর ঢাকতে হলে তাদেরকে ট্যাক্স দিতে হতো।

প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনব্যবস্থার অর্থনৈতিক আমলের বিস্তারিত বর্ননা থাকলেও সুলতানি আমলের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারেনি ৭ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের লেখকরা। কী আজিব! ১২০ পৃষ্ঠায় তারা এটা জানিয়েছে।

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা সুলতানী আমলে অর্থনীতি নিয়ে ভালো মন্তব্য করেছেন তার বিরুদ্ধেও যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।


সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১২১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, "যদিও ইবনে বতুতা সুলতানি আমলে বাংলার ভূয়সী প্রসংশা করেছেন। তাঁর মতে বাংলায় যত সস্তায় জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যেত, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যেত না। কিন্তু সস্তায় জিনিসপত্র কেনার মতো সামর্থ্য কতজনের ছিল তা অবশ্য কোনো পর্যটকের লেখায় পাওয়া যায় না। … সে-সময়ে সোনা, রূপা এবং তামার পয়সার প্রচলন ছিল। … তবে সাধারণ মানুষ কড়ির মাধ্যমে বিনিময় করত। সমাজে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট ছিল। সমাজের একদিকে যেমন বিত্তবানদের বিলাসী জীবন, ঠিক তেমনি উল্টো দিকে সংগামী মানুষ দুমুঠো খাবারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করত।”

এভাবে সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৪র্থ অধ্যায়ে সুলতানি আমলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ দেখিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ শেখানো হয়েছে। পক্ষান্তরে হিন্দুদের হরপ্পা সভ্যতা, বৌদ্ধদের সভ্যতা ও তাদের ধর্মীয় ইতিহাসের প্রতি মুগ্ধতা সৃষ্টির চেষ্টা করানো হচ্ছে।

১১. মুসলিমদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করা হয়েছে
ইংরেজদের বিরুদ্ধে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিল মুসলিমরা। অথচ সামজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫ নং পৃষ্ঠায় সেই ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। ফরায়েজী আন্দোলন, তীতুমীরের বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, মুসলিম কৃষকদের বিদ্রোহকে অস্বীকার করে সন্ত্রাসবাদী স্বদেশী আন্দোলনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


১২. মুসলিম লীগের স্বাধীনতার ভূমিকাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে


হিন্দুত্ববাদী কংগ্রেসের মুসলিম বিদ্বেষের ফলে ১৯০৫ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে খাজা সলিমুল্লাহর আহবানে মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছে। সেই থেকে মুসলিম লীগ মুসলিমদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিল। একইসাথে মুসলিমদের অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসলিম লীগের মাধ্যমে এদেশের মুসলিমরা একইসাথে ইংরেজ ও মুশ*রিকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। অথচ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ৭ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৭২ পৃষ্ঠায় মুসলিম লীগের সেই আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ব্রাহ্মণ্যবাদী নেহেরুকে বীরোচিত উদার নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইয়ের টেক্সট দেখে মনে হয় এই বইটা বাংলাদেশের ছাত্রদের জন্য নয়, ভারতের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়েছে।

১৩. না*স্তিকতার হাতেখড়ি


ষষ্ঠশ্রেণিতে না*স্তিকতার হাতেখড়ি হিসেবে বিবর্তনবাদ শেখানো হয়েছে। আর এখানে বলা হয়েছে প্রকৃতির সন্তান। বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১১৫ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায়ের নাম 'রুদ্র প্রকৃতি'। এখানে মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে। অধ্যায়ের শুরুতে বলা হয়েছে প্রকৃতিরই সন্তান আমরা। এটা নাস্তি*কতা শিক্ষার প্রথম ধাপ। আদম সন্তানরা নিজেদের প্রকৃতির সন্তান দাবি করবে। যাতে তারা পরবর্তীতে স্বীকার করে আদম থেকে নয়, এককোষী এমাইনো এসিড থেকে প্রাণের উৎপত্তি। এরপর ধীরে ধীরে সব প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।

১৪. ইসলামে নিষিদ্ধ ভাস্কর্যপ্রীতি শেখানো হচ্ছে
ভাস্কর্য, মূর্তি এগুলো বানানো ইসলামে নিষিদ্ধ। যেহেতু ইসলামে নিষিদ্ধ তাই এগুলোকে জনপ্রিয় করতে হবে এমন মিশন নিয়ে নেমেছে পাঠ্যপুস্তক রচনাকারী ইসলাম বিদ্বেষীরা। বাংলা বইয়ের ২০ নং পৃষ্ঠায় একটি প্রবন্ধ লেখা হয়েছে যার নাম 'কত দিকে কত কারিগর', লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক। এখানে ভাস্কর্য নির্মাতাদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের তথাকথিত শিল্পকর্মের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়েছে।


এছাড়াও বিজ্ঞান বইতে শিলা/পাথর বিষয়ে পড়ানোর সময় অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ভাস্কর্যের ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে। ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ১৩১ পৃষ্ঠা ও ১৩২ পৃষ্ঠায় শিলার আলোচনায় যথাক্রমে আব্রাহাম লিংকন ও মাইকেল এঞ্জেলোর 'ডেভিডে'র ভাস্কর্যের ছবি দেওয়া হয়েছে। পুরোটাই অপ্রাসঙ্গিক তবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত।



প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, শুধু পাঠ্যপুস্তকে নয়, সারা বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো মূর্তির হাট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনে হয় আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে মক্কাও এতো মূর্তি ছিল না যতটা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এটা নিঃসন্দেহে গর্হিত ও শরিয়তবিরুদ্ধ কাজ।

আত্মঘাতী এই শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যসূচির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। নইলে আমাদের সন্তানেরা মুশ*রিকদের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। প্রতিটি মানব জনগোষ্ঠীর পদস্থলনের ব্যাপারে লক্ষ্য করা যায় যে, তাওহীদবাদী মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে তাওহীদের চর্চা একনিষ্ঠ না করার ফলে ধীরে ধীরে মুশ*রিকে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি আমাদের পরিণতি সেরকম করতে না চাই, জাহান্নাম থেকে আমাদের ও আমাদের সন্তানদের বাঁচাতে চাই তবে এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন