একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ বা পাপকাজ দুই প্রকার। ১- কবিরা গুনাহ বা বড় গুনাহ। ২- ছগিরা গুনাহ বা ছোট গুনাহ।
কবিরা গুনাহের মধ্যেও সিরিয়াল আছে। একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো শির্কের গুনাহ।
আল্লাহ তা'আলা সূরা নিসায় ৪৮ ও ১১৬ নং আয়াতে বলেন, আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না। এছাড়া অন্যান্য যত গোনাহ হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন।
অর্থাৎ এই একমাত্র গুনাহ যা আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন। এখানে আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করা হয়। আল্লাহর মর্যাদার সাথে সমন্বয় করে অন্য কাউকে একই মর্যাদা দেওয়া হয়।
লুকমান আ. তাঁর ছেলেকে দেওয়া উপদেশে বলেছেন, প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হলো বড়ো জুলুম। আল্লাহ তায়ালা এই উপদেশকে পছন্দ করে তা কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন।
আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না। এই আয়াতের শানে নুজুল হলো, মদিনায় ইহুদিরা বসবাস করতো। তারা আহলে কিতাব ছিল। সেই হিসেবে তারা শিরক থেকে দূরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো তারা নিজেরা শিরকি কার্যক্রমে যুক্ত ছিল এবং যারা শিরকে যুক্ত ছিল না তারা তাদের জাতিকে শিরক থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে কাজ করেনি।
মাওলানা মওদূদী রহ. বলেন, //"আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না। এছাড়া অন্যান্য যত গোনাহ হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন"। এই আয়াতের অর্থ এই নয় যে, মানুষ কেবলমাত্র শিরক করবে না এবং বাদবাকি গোনাহ করে যেতে থাকবে প্রাণ খুলে।
বরং এ থেকে একথা বুঝানো হয়েছে যে, শিরকের গোনাহকে ইহুদিরা মামুলি গোনাহ মনে করে এসেছে। অথচ এটিই সবচেয়ে বড় গোনাহ। এমন কি অন্য সমস্ত গোনাহ মাফ হতে পারে কিন্তু এই গোনাহটি মাফ করা হবে না। ইহুদী আলেমরা শরীয়াতের ছোট ছোট বিধি-নিষেধ পালনের ওপর বড় বেশী গুরুত্ব দিতেন। বরং তাদের সমস্ত সময় এসব ছোটখাটো বিধানের পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাইয়ে অতিবাহিত হতো। তাদের ফকীহগণ এই খুঁটিনাটি বিধানগুলো বের করেছিলেন ইজতিহাদের মাধ্যমে। কিন্তু তাদের চোখে শিরক ছিল একটি হালকা ও ছোট গোনাহ। তাই এই গোনাহটির হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা কোন প্রকার চিন্তা ও প্রচেষ্টা চালাননি। নিজেদের জাতিকে মুশরিকী কার্যকলাপ থেকে বাঁচাবার জন্য কোন উদ্যোগও তারা নেননি। মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতাও তাদের কাছে ক্ষতিকর মনে হয়নি।//
কুরআন আমাদের হিদায়াতের জন্য এসেছে। ইহুদী আলেমরা শিরকের গুনাহকে ছোট করে দেখতো বলে আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত আমাদের জন্য নাজিল করেছেন যাতে আমরা তাদের মতো ভুল না করি।
কিন্তু দূর্ভাগ্য যে, আমরা ইহুদীদের পদাংক অনুসরণ করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরের মধ্যে অন্তত দশবছর বলে যাচ্ছে, দুর্গাপূজা নাকি শুধু হিন্দুদের উৎসব নয়, এটা সমস্ত বাঙালির উৎসব। গতকালও সে এই কথা বলেছে। সে আরো শিরকি কথা বলে, যেমন দূর্গা এবার এই বাহনে করে এসেছে অতএব, ফসল ভালো হবে/ বৃষ্টি ভালো হবে। ইত্যাদি।
আমাদের ফকীহ, মুফতিদের দিকে যদি তাকাই তাহলে ইহুদি আলেমদের চিত্রই আমাদের সামনে ফুটে উঠবে। তারা নানান বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কারো আকিদা খারাপ বলছে, ভিন্ন মতের আলেমদের বিদআতী বলছে, ঈমানহারা বলছে। অথচ শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগের প্রায় সব সিনিয়র নেতা সকল পূজাকে আমাদের উৎসব বলে চালিয়ে যাচ্ছে। এই শিরকি বিষয়ে কোনো ফতওয়া নেই আলেমদের। কাউকে বলতে শুনিনি শেখ হাসিনা শিরকি কথা বলেছেন তার আকিদা খারাপ। অথচ আমরা শুনেছি, মাসজিদুল আকসা বিজয়ী মহাবীর সালাউদ্দিন আইয়ুবির আকিদা খারাপ!
ভাইয়েরা! যার যার হিসেব সেই দিবে। আমাদের হিসেব আমাদেরই দিতে হবে। আমরা যদি শেখ হাসিনার কথার প্রতিবাদ না করি তাহলে এর জন্য আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব?
জেনে রাখবেন, এই পৃথিবী শুরু হয়েছে বিশ্বাসী মানুষদের দিয়েই। আদম আ. ও হাওয়া আ. -এর বিশ্বাসী সন্তানেরাই একটা পর্যায়ে মুশরিকে পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণ হলো,
১। শয়তানের প্ররোচনা
২। অসৎ শাসক
৩। ঈমানদারদের নিষ্ক্রিয়তা
হিন্দুদের মতে দুর্গা হলো "যে দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করে"। তারা দুর্গাকে পূজা করে যাতে দুর্গা খুশি হয়ে তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করে। তারা দুর্গার কাছে সাহায্য চায় যাতে দুর্গা তাদের বিপদে সহায় হয়। এই আকিদা বা বিশ্বাস স্পষ্ট ও প্রকাশ্য শিরক। এখানে আল্লাহর ক্ষমতার সাথে দুর্গাকে অংশী করা হয়েছে। এখানে মহান আল্লাহ তায়ালাকে খাটো করেছে মুশরিকরা।
আল্লাহ তায়ালা এসব শিরকি অনুষ্ঠানে অত্যান্ত ক্রোধান্বিত হন। এই অনুষ্ঠানকে যারা সার্বজনীন অনুষ্ঠান বলবে তারা অবশ্যই কবিরা গুনাহ করবে। আর এমন কবিরা গুনাহ যা আল্লাহ ক্ষমা করেন না। এই কবিরা গুনাহ করলে মুসলিম থাকা যায় না। এর জন্য প্রকাশ্যে ঈমান নবায়ন করতে হয়।
আমি দুর্গাপূজা নিয়ে হাসিনার করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ঈমান নবায়ন করার পরামর্শ দিচ্ছি। মুসলিম প্রধান দেশে এরকম কুফরি ও শিরকি আকিদার কোনো শাসক আমাদের ওপর চেপে বসা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের আহ্বান জানাচ্ছি হাসিনার শিরকি আক্বিদার প্রতিবাদ করুন। নইলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর ক্রোধের মুখোমুখি হতে হবে।
এই কথাগুলো যারা বলবে ও বিশ্বাস করবে তারা প্রত্যেকে ঈমানহারা হয়ে যাবে। প্রকাশ্যে তওবা করে ঈমান নবায়ন না করলে মুসলিম হওয়া যাবে না।
শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন এসব কুফরি বাক্য প্রচলনের মাধ্যমে এদেশের মানুষকে ঈমানহারা করার ইজারা শয়তান থেকে নিয়েছে।
সতর্ক হোন, প্রতিবাদ করুন, নতুবা জাহান্নামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন।
দ্রষ্টব্য : আমি দূর্গাপূজার বলার বিরোধীতা করেছি। এর মানে এই না যে, আমরা দূর্গাপূজা হতে দেব না বা তাদের মন্দিরে আক্রমণ চালাবো। ইসলামী রাষ্ট্রে বিধর্মীরা তাদের পূজা করতে পারবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মুসলিম শাসকরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।
ইসলাম কাউকে জোর করে মুসলিম বানাতে আগ্রহী না।