১১ মার্চ, ২০২৪

মওদূদীবাদের স্বরূপ উদ্ঘাটন || পর্ব ০৩


না, কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট হতে পারে নি। ১৯৩২ সালে মওদূদী যখন ইসলামের মূল ব্যাপারটা মানুষের সামনে তুলে ধরলেন, তখন ইংরেজ, মুশরিক ও মুসলিমদের বিভিন্ন গোষ্ঠী সবার কাছেই তিনি চক্ষুশূলে পরিণত হলেন।

মওদূদী যখন ইসলামের ব্যাখ্যা দিলেন তখন আলিয়া মাদ্রাসা ও পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার অধীন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশ সাড়া পড়ে যায়। যেহেতু তিনি পত্রিকায় লিখে ও বই লিখে তাঁর চিন্তার প্রচার করতে লাগলেন সেহেতু শিক্ষিত সমাজে তার গ্রাহক বেড়ে যায়। আল্লামা ইকবালের মতো বড় ব্যক্তিরাও তাঁর লেখার ভক্ত হয়ে পড়েন।

মওদূদীর লেখায় মুসলিম ছাত্ররা হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আশা খুঁজে পায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা মাওলানা মওদূদীকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহবান করে। লেখালেখির সাথে এবার যুক্ত হলো মওদূদীর বক্তব্য। তাঁর বক্তব্যও ছিল তাঁর লেখার মতো দুর্দান্ত। ছাত্ররা মুগ্ধ হয়ে তার বক্তব্য লিখে নিতেন এবং তা ছাপিয়ে প্রচার করতেন।

ধীরে ধীরে মওদূদীর ভক্ত সংখ্যা বাড়তে থাকলো। সেই সাথে যুক্ত হলো আল্লামা ইকবালের স্নেহধন্য সাহায্য। যদিও আল্লামা ইকবাল মুসলিম লীগ করতেন তদুপরি তিনি গোড়া থেকেই মক্কায় আল্লাহর রাসূল যেই কাফেলার সূচনা করেছেন সেরকম একটি কাফেলা গঠনের তাকিদ দেন।

এরমধ্যে দেওবন্দী নেতা হুসাইন আহমদ মাদানী মুসলিমদের মিসগাইড করার জন্য ভূমির ভিত্তিতে জাতীয়তা অর্থাৎ উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম একজাতি এই ধরণের একটি ক্যাম্পেইন চালু করেন। তিনি মুশরিকদের পক্ষাবলম্বন করে এই ধরণের অবস্থান নেন। আমরা তো শোলাকিয়ার ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে দেখেছি, যিনি আল্লাহ তায়ালা ও নবী সা.-কে বিশ্রী গালি দেওয়া শাহবাগীদের সাথে কাতারবন্দী হয়েছেন। সুতরাং হুসাইন আহমদ মাদানীর চরিত্র বুঝতে আমাদের কষ্ট হওয়ার কথা না।

মওদূদী তাঁর পত্রিকায় মাদানীর ভুলভাল ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তাঁর ধারাবাহিক লেখায় হুসাইন মাদানীর পান্ডিত্যের দূর্গ ধ্বসে যায়। মাদানীর দল দুইভাগ হয়ে যায়। মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানীর নেতৃত্বে নতুন দল গঠিত হয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামে। জ্ঞানে ও বক্তব্যে না পেরে মাদানীর অনুসারীরা মওদূদীর বিরুদ্ধে ফতওয়ার কামান ছুটিয়ে দিয়েছিল। মওদূদী মুসলিমদের মধ্যে তাজদিদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। মুসলিমদের মূল টেক্সট থেকে জ্ঞান আহরণের আহবান জানিয়েছেন। মাদানীর অনুসারীরা এটাকেই মওদূদীবাদ হিসেবে ট্যাগিং করেছে এবং মওদূদী ও তার ভক্তদের কাফির ফতওয়া দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, মওদূদীকে কাফির প্রমাণের জন্য যত মিথ্যা কথা সম্ভব তত কথাই বলেছে। আমি হুসাইন মাদানীর অনুসারী মাদ্রাসা হাটহাজারীতে গিয়েছিলাম। সেখানের লাইব্রেরিতে একটা পুরো আলমিরাই ছিল জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে লেখা বই দিয়ে ভর্তি। আপনি অবাক হবেন লম্বা দাড়ি ও শুভ্র পোষাক পরিহিত লোকেরা ডা. জাকিরের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে কাফির প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে। এই পার্টি মনে হয় সওয়াবের উদ্দেশ্যে কনফিডেন্সের সাথে মিথ্যা কথা তৈরি করে ও প্রচার করে।

মওদূদী-মাদানী পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে মওদূদীর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। শিক্ষিত সমাজে মাওলানা মওদূদীর গ্রহনযোগ্যতা বাড়তে থাকে। অবশেষে ১৯৪১ সালে মওদূদীর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী গঠিত হয়। সাইয়েদ মওদূদী মুসলিমদের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে মুসলিম লীগের পক্ষে কলম ধরলেও উনি মুসলিম লীগে যুক্ত হননি। কারণ মুসলিম লীগের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তারা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন না। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে ফরজ ওয়াজিব, হালাল, হারামের বালাই ছিল ছিল না।

আমরা প্রথমেই শুরু করেছিলাম গরু দিয়ে। আবার একটু গরুতে ফিরে আসি। ১৭৫৭ সালে আমরা আমাদের সংস্কৃতি পালনের অধিকার হারিয়ে ফেলি। সেই অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয়। আমরা মুশরিক ও ইংরেজদের থেকে বাঁচার জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু করি। এই সংগ্রামের মূল নেতা ছিলেন জিন্নাহ। আর তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন মওদূদী।

১৯৪৭ সালে আমরা যুগপৎভাবে ইংরেজ ও মুশরিকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করি। প্রায় দুইশ বছর পর এদেশের মানুষ পুনরায় ভূমির মালিকানা পেয়েছিলো। জমিদারী প্রথার বিলুপ্ত হয়। আমরা প্রজা থেকে নাগরিক হয়ে উঠলাম। নিজের নেতা নিজেরাই নির্ধারণের সুযোগ পেলাম। আমরা আগে ঊনমানুষ ছিলাম। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট থেকে আমরা পরিপূর্ণ অধিকার সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত হলাম।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা তথা এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতার জন্য জিন্নাহ ও মুসলিম লীগের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকারের উপায় নেই। আমরা আমাদের পুরো জীবনের বন্দনা দিয়েও তাদের ত্যাগ ও প্রচেষ্টার উপকারের কৃতজ্ঞতা শেষ করতে পারবো না। আমার পরিবার উপমহাদেশের যে অংশে বসবাস করতেন তা মুশরিকদের অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

আমাদের পরিবার হিন্দুস্থান থেকে পাকিস্তানে চলে আসে। যারা আসেনি তারা জানে পাকিস্তান আমাদের জন্য কত বড় নিয়ামত ছিল। আমরা আবার বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে গরু কুরবানী করতে পেরেছি। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের তামাদ্দুন, আমাদের মুয়ামেলাত আমরা ফিরে পেয়েছি। আজকে হিন্দুস্তানে গরুর গোশত আছে এই সন্দেহে পিটিয়ে মুসলিমদের হত্যা করা হয়। গত শুক্রবার দিল্লীতে জুমুআর নামাজের সময়ে সিজদারত মুসল্লিদেরকে পুলিশ লাথি মারতে থাকে। আর কতবার যে গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছে মুসলিমরা তা গণনা করার অবস্থায় নেই।

১৯৪৭ সালের পরেও পাকিস্তানেও তুর্কির মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। মোস্তফা কামাল পাশা ব্রিটিশদের থেকে তুর্কি জাতিকে উদ্ধার করে। স্বভাবতই মুসলিমরা ভেবেছিল তিনি আবার প্রচলিত খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু খিলাফতের কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন তিনি। খিলাফত ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করে সেক্যুলার তুরস্ক গঠন করেন। একই ব্যাপার ঘটিয়েছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ আমলে জিন্নাহ যখন বিভিন্ন জনসভায় যেতেন তখন তিনি বুক পকেটে থাকা ছোট্ট একটি কুরআনের কপি বের দেখিয়ে বলতেন, এটিই হবে পাকিস্তানের সংবিধান। কুরআনের ভিত্তিতেই চলবে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র।

যখন থেকে পাকিস্তান প্রস্তাব হয়েছে তখন থেকেই মুসলিম লীগের নেতারা বলতেন পাকিস্তান একটি ইসলামী রাষ্ট্র হবে। পাকিস্তানের পক্ষে থেকে মুসলিম লীগের এই দাবিকে সঠিক মনে করতেন না গত শতাব্দির পৃথিবী বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী। তিনি ১৯৪০ সালে এই বিষয়ে একটি লেকচার দেন যা পরে বই আকারে ছাপা হয়েছে। বইটির নাম ইসলামী হুকুমাত কিস্তারা কায়েম হতি হ্যায়। সেখানে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। এর পরের বছর তিনি প্রস্তাবিত পাকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি সংগঠন কায়েম করেন, যার নাম জামায়াতে ইসলামী।

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের সংবিধান একটি সেক্যুলার সংবিধান হবে বলে ধারণা দেন। শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে গিয়ে তারা আলোচনা শুরু করেন পাকিস্তানের জন্য বৃটিশ পার্লামেন্টারি সিস্টেম উপযোগী, না আমেরিকান প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেম, তা নিয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয় ইসলামপন্থী মানুষরা।

১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করে ১৯৪৮ সাল থেকে। আর সেটি ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্রের দাবি নিয়ে। ১৯৪৮ সনের এপ্রিল মাসে করাচির জাহাংগীর পার্কে জামায়াতে ইসলামীর প্রথম রাজনৈতিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কথিত মওদূদীবাদের প্রবক্তা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য পেশ করেন। বক্তব্যে তিনি পাকিস্তানের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপরিষদের প্রতি চারটি দফার ভিত্তিতে 'আদর্শ প্রস্তাব' গ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

দফাগুলো হচ্ছে
১। সার্বভৌমত্ব আল্লাহর। সরকার আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে দেশ শাসন করবে।
২। ইসলামী শরীয়াহ হবে দেশের মৌলিক আইন।
৩। ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক আইনগুলো ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত করে ইসলামের সাথে সংগতিশীল করা হবে।
৪। ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গিয়ে রাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই শরীয়াহর সীমা লংঘন করবে না।

এই দাবীগুলো নিয়েই জামায়াতে ইসলামী ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন শুরু করে।

১৯৪৮ সনের ১১ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের স্থপতি মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মৃত্যুবরণ করেন। গভর্ণর জেনারেল হন ঢাকার নওয়াব পরিবারের সন্তান খাজা নাজিমুদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন লিয়াকত আলী খান। এই সময় থেকে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ শাসকের ভূমিকায় থাকেন। লিয়াকত আলী খান সরকার ১৯৪৮ সনের ৪ অক্টোবর ইসলামী শাসনতন্ত্রের মুখপাত্র সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদীকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে। প্রায় ২০ মাস জেলে রাখার পর ১৯৫০ সনের ২৮ মে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৫০ সনের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন যে দেশের আলিম সমাজ যদি সর্বসম্মতভাবে কোন শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাব উপস্থাপন করে, গণপরিষদ তা বিবেচনা করে দেখবে। প্রধানমন্ত্রী ভেবেছিলেন যে, বহুধাবিভক্ত আলিম সমাজ এই জটিল বিষয়ে কখনো একমত হতে পারবে না এবং কোন সর্বসম্মত প্রস্তাবও পেশ করতে পারবে না।

১৯৫১ সনের জানুয়ারি মাসে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে করাচিতে সারা দেশের সকল মত ও পথের ৩১ জন শীর্ষ আলিম একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে একত্রিত হন। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ সুলাইমান নদভী। সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী একটি খসড়া পেশ করেন। আলাপ-আলোচনার পর চূড়ান্ত হয় একটি মূল্যবান দলিল 'ইসলামী শাসনতন্ত্রের ২২ দফা মূলনীতি।'

দফাগুলো ছিলো নিন্মরুপ:

১. দেশের সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ।

২. দেশের আইন আল-কুরআন ও আসসুন্নাহ ভিত্তিতে রচিত হবে।

৩. রাষ্ট্র ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালার উপর সংস্থাপিত হবে।

৪. রাষ্ট্র মা‘রুফ প্রতিষ্ঠা করবে এবং মুনকার উচ্ছেদ করবে।

৫. রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সম্পর্ক মজবুত করবে।

৬. রাষ্ট্র সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গ্যারান্টি দেবে।

৭. রাষ্ট্র শারীয়াহর নিরিখে নাগরিকদের সকল অধিকার নিশ্চিত করবে।

৮. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।

৯. স্বীকৃত মাযহাবগুলো আইনের আওতায় পরিপূর্ণ দ্বীনি স্বাধীনতা ভোগ করবে।

১০. অমুসলিম নাগরিকগণ আইনের আওতায় পার্সোনাল ল' সংরক্ষণ ও পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে।

১১. রাষ্ট্র শারীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত অমুসলিমদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে।

১২. রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজন মুসলিম পুরুষ।

১৩. রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হবে।

১৪. রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি মাজলিসে শূরা থাকবে।

১৫. রাষ্ট্রপ্রধান দেশের শাসনতন্ত্র সাসপেন্ড করতে পারবেন না।

১৬. সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপ্রধানকে পদচ্যুত করা যাবে।

১৭. রাষ্ট্রপ্রধান তার কাজের জন্য মজলিসে শূরার নিকট দায়ী থাকবেন এবং তিনি আইনের ঊর্ধ্বে হবেন না।

১৮. বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন হবে।

১৯. সরকারী ও প্রাইভেট সকল নাগরিক একই আইনের অধীন হবে।

২০. ইসলামবিরোধী মতবাদের প্রচারণা নিষিদ্ধ হবে।

২১. দেশের বিভিন্ন অঞ্চল একই দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিট বলে গণ্য হবে।

২২. আলকুরআন ও আসসুন্নাহর পরিপন্থী শাসনতন্ত্রের যেই কোন ব্যাখ্যা বাতিল বলে গণ্য হবে।

এই নীতিমালা বিপুল সংখ্যায় লিফলেট আকারে ছাপিয়ে সারা দেশে ছড়ানো হয়। এর পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য সারা দেশে বহুসংখ্যক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামী শাসনতন্ত্রের পক্ষে প্রবল জনমত সৃষ্টি হতে থাকে। আবার জামায়াতের দাবির বিরুদ্ধেও কেউ কেউ অবস্থান নেন। মুসলিম লীগ নেতারা কৌশলী অবস্থান নেন। তারা ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে দেখতে চান না। তবে তারা তা স্পষ্ট করেননি।

প্রকাশ্যে ইসলামী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতারা। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের মাওলানা(!) আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও ছিল অন্যতম। তিনি তো পাকিস্তানকে সেক্যুলার হিসেবেও দেখতে চাইতেন না। তিনি মাওবাদী কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। ইসলামী শাসনতন্ত্র বাস্তবায়ন হলে কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করতেন।

আমরা প্রথম দুই পর্বে আলোচনা করেছি মওদূদী কে? আর মওদূদীবাদ কী? এই পর্বে খানিকটা আলোচনা করেছি মওদূদীবাদের প্রভাব। আগামী পর্বগুলোতে থাকলে এই অঞ্চলে কথিত মওদূদীবাদের ভূমিকা।

সাথে থাকুন। চলবে...।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন