৩০ জানু, ২০১৬

কেন আমি ছাত্রশিবির করি?


তখন ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। হলে রুমমেট দুজনই ছিল সিনিয়ার। আমি পুরোদস্তুর ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হওয়ায় আমাদের রুমে বেশীরভাগ আড্ডা রাজনৈতিক আড্ডায় পরিণত হতো। রুমমেটদের একজন ছিল বিএনপি ঘেঁষা অন্যজন কট্টর লীগ সমর্থক। একদিন লীগ সমর্থক সিনিয়ার ভাইটি বললেন “তুমি বেশী ফাল পাইড়ো না, তোমার আর কিসের ইসলামী আন্দোলন, তুমি বাপ-দাদার গোলামীই করতাছো। তোমার বাপ-মাও জমাতি তুমিও জমাতি।”

ঐ কথা শুনে আমি থমকে গিয়েছিলাম। চিন্তা করে দেখলাম, আমি তো অন্য কোন ইসলামী সংগঠন করার নিয়তে কখনো ভাবি নি। শুধু তাদের দোষ খুঁজেছি। নতুন ভাবনার দুয়ার খুলে গেলো। অন্যকোন সংগঠন শিবিরের চাইতেও সহীহ হতে পারে। প্রথমে দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা করলাম। তারা কিছু ইনফরমেশন দিলেন অন্য ইসলামী দল সম্পর্কে। সব নেগেটিভ ইনফরমেশন।

সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম ইনফরমেশন গুলোতো ভুলও হতে পারে। অতঃএব ঐ দলগুলোর সাথে মিশতে হবে। তাদের বই পড়তে হবে তাদের জানতে হবে। একটি নোটবুক ক্রয় করলাম। একে একে সব দলগুলোর নাম লিখলাম। ঘুরতে লাগলাম জেলায় জেলায়। টার্গেট সত্যানুসন্ধান। প্রতিটি দলের বৈশিষ্ট্য লিখি। সর্বশেষ মন্তব্য করি কেন আমি এই দলের সাথে যুক্ত হবো না।

মোটামুটি সব দল সম্পর্কে নোট করা শেষ। ২০১১ সালে অনুসন্ধান মোটামুটি শেষ বলে ঘোষনা করি। আলহামদুলিল্লাহ সারা বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের চাইতে অধিকতর ভালো কোন সংগঠন পাই নি। সেই সাথে প্রশান্তি অনুভব করি। অন্তত আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা আমাকে এইমর্মে পাকড়াও করবেন না যে, আমি বাপ-দাদার গোলামী করেছি। প্রত্যেকটি সংগঠনের ব্যাপারে উত্তর তৈরী করেছি কেন আমি তাদের সাথে নেই।

এই কাজটি করতে গিয়ে শিবির সম্পর্কে আস্থা আরো বেড়েছে। দারূন একটি ব্যাপার আবিষ্কৃত হয়েছে। শিবির আসলে একটি মধ্যমপন্থী দল। তাই বলে আমি এই দাবী করছি না শিবিরই একমাত্র সহীহ দল কিংবা শিবিরের কোন ভুল নাই।

আমি আমার গবেষনায় তিনটি বিষয় কে সামনে রেখেছি। 
১. আকীদা। 
২. বিপ্লবের পদ্ধতি। 
৩. নেতৃত্ব কাঠামো।

আকীদার ক্ষেত্রে আমার বিবেচনায় পাশ করেছে অনেকগুলো সংগঠন। যাদের আকীদা আমার কাছে সহীহ মনে হয় নি, তাদের পরবর্তী দুটো বিষয় নিয়ে আমি আর জানার চেষ্টা করি নি।

বিপ্লবের পদ্ধতি মানে ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে নির্মিত হবে এই প্রশ্নে আমি আদর্শ হিসেবে গ্রহন করেছি রাসূলের (সঃ) সীরাতকে। রাসূল (সঃ) তিনটি কাজ করেছেন।

১. অগ্নি পরীক্ষার মাধ্যমে ১৩ বছর ধরে সেক্টর ভিত্তিক লোক তৈরী করেছেন যারা ইসলামী রাষ্ট্রকে ইসলামী আদর্শ মোতাবেক চালাতে পারবেন।

২. দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে গনমানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন, যাতে তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়। ইসলামের সুমহান আদর্শ মেনে নেয়।

৩. নেতা হিসেবে নিজেকে আদর্শের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। অর্থাৎ নিজেকে ইসলামের জীবন্ত রুপ দিয়েছেন।

এই বিপ্লবের পথের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অন্যান্য দলগুলো কোন না কোন অংশে চরমপন্থা অবলম্বন করেছে। যেমন কেউ শুধু দাওয়াত নিয়ে চরমপন্থি হয়ে আছে, কেউ সেক্টর গুলোর মধ্যে সেনাবাহিনী নিয়ে চরমপন্থা করছে, কেউ সামাজিক কাজ নিয়ে চরমপন্থা করছে। কেউ আবার নেতা নিয়ে চরমপন্থা করছে। একমাত্র ভারসাম্য দল পেলাম জামায়াত, যে সব সেক্টর নিয়ে কাজ করছে।

নেতা আদর্শের মডেল হবেন, এই ব্যাপারে সব দলেই ঘাটতি আছে, এমনকি জামায়াতেও এই ঘাটতি আমার চোখে পড়েছে।

তৃতীয় যে বিষয় নেতৃত্ব কাঠামো। অসাধারণ একটা সিস্টেম ডেবেলপ করেছে জামায়াত-শিবির। যাতে নেতৃত্বের প্রতি লোভীদের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর অন্যান্য দলের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে একেবারেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। সর্বস্তরের নেতৃত্ব নিয়ে আস্থাহীনতা জামায়াত-শিবির ছাড়া প্রায় সব দলেরই প্রধান সমস্যা।

শিবিরের আছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য যা শিবিরকেকে তার লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করে দিচ্ছে।

১. শিবিরের বিপ্লবী দাওয়াত। 
শিবির দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মানুষকে আহ্বান করে না। দুনিয়ার কোন সফলতার লোভ দেখায় না। একান্ত পরকালীন সাফল্যের কথা সামনে নিয়ে আসে, যেভাবে আল্লাহর রাসূল দাওয়াত দিয়েছেন।

২. ইসলামী সমাজ গঠনের উপযোগী ব্যক্তিগঠন পদ্ধতি। 
শিবির মনে করে ব্যক্তিগঠনের জন্য তিন ধরণের যোগ্যতা লাগবে। এক, ঈমানী যোগ্যতা। দুই, ইলমী যোগ্যতা। তিন, আমলী যোগ্যতা। যোগ্যতা হাসিলে কঠোর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি।

৩. ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি তাকওয়া ভিত্তিক সংগঠন। শিবির কোন লোককে দায়িত্ব প্রদানকালে তাকওয়ার বিষয়টি সামনে রাখে।

৪. শিবিরের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “নেতৃত্ব সৃষ্টির পদ্ধতি”। অসাধারণ এই পদ্ধতিতে নেতৃত্ব বা পদলোভীদের কোন স্থান নেই।

৫. শিবিরের অর্থের উৎস শিবিরের দায়িত্বশীল, কর্মী এবং শুভাকাংখীরা। শিবির বাইরের অন্য কারো অর্থে চলে না। কারো ক্রীয়ানক হিসেবে কাজ করে না।

৬. বিরোধীদের প্রতি শিবিরের আচরণ। 
শিবির তার বিরোধীদের মধ্যে যারা অশালীন ও অভদ্র ভাষা প্রয়োগ করে তাদের করুণার পাত্র মনে করে। শিবিরের দাওয়াত আদর্শ ও কর্মসুচীর বিরুদ্ধে বেচারাদের কিছু বলার সাধ্য নেই বলে বেসামাল হয়ে গালাগালি করে মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। শিবির তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করে।

আর যারা মিথ্যা সমালোচনা করে অপবাদ দেয়, শিবির প্রয়োজন মনে করলে সেই সমালোচনা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করে।

আর তাছাড়া শিবির এও বিশ্বাস করে, মুমিনের দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থতা হল আল্লাহর আনুগত্য করতে না পারা। আর কোন কিছুকেই ব্যর্থতা মনে করে না। দুনিয়ার জীবনের কষ্ট, নির্যাতন, অত্যাচার অথবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অনুকূলে থাকা সবগুলোকেই শিবির পরীক্ষা বলেই গণ্য করে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে রাখুন। আমিন।

২৬ জানু, ২০১৬

যুগে যুগে আওয়ামী লীগের ইসলাম বিরোধিতা


১৯৪৭ সনের পূর্বেই মুসলিম লীগের ভিতর সমাজতন্ত্রী-ইসলাম বিরোধী একটি উপদল গড়ে উঠে, যারা পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম কর্মী সংঘ নামে সংগঠিত হতে থাকেন । ১৯৪৯ সনে মুসলিম লীগ ভাগ করে “আওয়ামী মুসলিম লীগ” গঠন করে । ১৯৫৪ সনের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির মধ্য দিয়ে “মুসলিম” শব্দটিরও পতন শুরু হয় । আওয়ামী মুসলিম লীগ তার দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটিকে বিদায় করে প্রকাশ্যে মুসলিম চেতনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । 

১- স্বরাজ পার্টির গঠনতন্ত্রকেই আওয়ামী লীগ গঠনের সময় তার গঠনতন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যাচ্ছে একটি হিন্দু সংগঠনের লক্ষ্য ও কর্মসূচীকেই স্বজ্ঞানে যে দল তার লক্ষ্য ও কর্মসূচী গ্রহণ করে সে দল যে ইসলাম বিরোধী হবে তাতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয় । 

২- ১৯৫৫ সনের ১৭ই ফেব্রুয়ার যুক্তফ্রন্ট পার্লামেন্টারী পার্টির সভায় যখন শেরে বাংলা কুরআন পাঠ শুরু করেন তখন আওয়ামী এম,পি, বরিশালের ফরমুজ্জল হক তাতে বাধা দেয় এবং অন্যান্য আওয়ামীগণ তার সঙ্গে চিৎকার শুরু করে, ফলে কালামে পাক পড়া সম্ভব হয় নি ।

৩- আতাউর রহমান সরকার নবী দিবসে পল্টন ময়দানে মাহফিল বন্ধ করে ১৪৪ ধারা জারী করে ।

৪- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে বক্তব্য রাখেন। 

৫- আতাউর রহমান মন্ত্রীসভা মন্দির মেরামতের জন্য টাকা দিতে পারলেও কোন মসজিদ মেরামতে কেন পয়সা খরচ করতে পারলো না। 

৬- যে মনোরঞ্জন ধর পরিষদে কোরান পাঠে বাধা দিল তাকে নিয়েই মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়েছে।

৭- ১৯৭২ সন থেকে আওয়ামী লীগ ও তার মুক্ত চিন্তার বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করা শুরু করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইসলামী চেতনা এক নয়। ইসলামপন্থী ও মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন তাই তাদের এ প্রচারণা এ দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের মতই বিপক্ষে গেলেও তারা তাদের ঐ প্রচারণার বিপক্ষে চুপ থেকেছেন । 

৮- এ সুযোগে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোগ্রাম থেকে কোরআনের উদ্ধৃতি “রাব্বি জিদনি ইলমা”, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়। ইসলামের প্রতি রুষ্টতা এতোই বেশী ছিল যে, কবি নজরুল ইসলাম’ কলেজের নাম বদলিয়ে রাখা হয় কবি নজরুল’ কলেজ । 

৯- ১৯৭২ সনে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিমন্ডলে ধর্মীয় অনুশাসন অনুসৃতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে নিষিদ্ধ করা হয় ।

১০- ১৯৯৬ সনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে তার আসল মূর্তি প্রকাশ করতে থাকে। তাদের ঘরাণার বুদ্ধিজীবিরা ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম চেতনাকে আঘাত হেনে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে প্রদর্শন করারও সাহস দেখায়।

১১- পুলিশকে বায়তুল মোকাররমে জুতা নিয়ে প্রবেশ করানো, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হককে গ্রেপ্তারসহ অসংখ্য মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া। ক্ষণে ক্ষণে মন্ত্রীদের মাদ্রাসা নিয়ে বিষোদগার অব্যাহত থাকা   

১২- ২০০৯ সনে ক্ষমতা লাভ করে তারা পুরাপুরিভাবে ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে । সৈয়দ আশরাফ বলেন “আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।" তার কথাই সত্য; একজন ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী মুসলমানও হতে পারেন না, হিন্দু বা অন্য কোন ধমাবলম্বী হতে পারেন না ।

১৩- মাদ্রাসা শিক্ষাকে ‘জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র’ হিসেবে চিত্রায়িত করার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দালাল ও নাম সর্বস্ব মাওলানাদেরকে দিয়ে দেশের প্রথিতযশা, বরেণ্য ও গণস্বীকৃত ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার, মিথ্যাচার, চরিত্রহরণমূলক অভিযান। নিয়মিত কার্যক্রমে রূপ নিয়েছে। 

১৪- আল্লাহ রাসূল সঃ নিয়ে কটুক্তিকারী নাস্তিকদের বাঁচানোর জন্য হেফাযতে ইসলামের সমাবেশের উপর ক্র্যাকডাউন প্রমাণ করে তারা কতটা ইসলাম বিদ্বেষী।

আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ইসলাম বিরোধীতা 

১- মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে আল্লাহ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হওয়াকে আধুনিকতা ও প্রগতিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে আসছে। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা হচ্ছে আধুনিক, পুঁজিবাদ হচ্ছে বুর্জয়া প্রতিক্রিয়াশীল আর ধর্ম হচ্ছে আফিম, এমন চিত্তাকর্ষক শ্লোগান সে সময়ের তরুণদেরকে আকৃষ্ট করে। সে সময়ের অনেক তরুণই পরিণত বয়সে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বাসের দিক পরিবর্তন করে আবার ইসলামের দিকে এসেছেন। কিন্তু অনেকেই তাদের পূর্ব বিশ্বাসেই আস্থাশীল থেকে ধর্মহীনতার বিষ সমাজে ছড়াচ্ছে। 

২- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই দাউদ হায়দার ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মকে আঘাত হানলে মুসলিমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে। শেখ মুজিব তাকে সেইভ করার জন্য জার্মানীতে প্রেরণ করেন। একই ধারায় লিখতে গিয়ে তসলিমা নাসরিনকেও জনরোষে পড়তে হয় । তিনিও দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

৩- আহমদ শরীফ তার ক্লাসে বলতেন, “এতদিন তোমরা কোরআন শরীফের কথা শুনেছ, হাদীস শরীফের কথা শুনেছ; এখন শোন আহমেদ শরীফের কথা।” নামাজের আজানকালে ক্লাসে মেয়েরা মাথায় কাপড় দিলে তিনি বলতেন “আল্লাহ কি তোমাদের ভাসুর যে মাথায় কাপড় দিতে হবে?”

৪- হুমায়ুন আজাদ তার আমার অবিশ্বাস বইতে বলেন “বিশ্বাসের জগতটি পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন। বিশ্বাসের বইগুলো অন্ধকারের বই, ওগুলোর কাজ মানুষের মনকে গভীর অন্ধকারে আবৃত করা। “চারপাশের ধর্ম দেখে মনে হতে পারে যে মানুষ ধর্ম ছাড়া বাঁচতে পারে না, সত্য হচ্ছে ধর্মের মধ্যে মানুষ বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। মানুষ মৰ্মমূল ধর্মবিরোধী, মানুষের পক্ষে বেশী ধর্ম সহ্য করা অসম্ভব।

ধার্মিকেরাও যতোটা ধাৰ্মিক তার থেকে অনেক বেশি অধাৰ্মিক । মানুষের সৌভাগ্য মানুষ বেশি ধর্ম সহ্য করতে পারে না, তাই বিকাশ ঘটেছে মানুষের। বেশি ধর্মে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ধাৰ্মিক মানুষ অসুস্থ মানুষ। ধর্মের বইগুলো সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। পরলোক হচ্ছে জীবনের বিরুদ্ধে এক অশ্লীল কুৎসা, পরলোকের কথা বলা হচ্ছে জীবনকে অপমান করা। পরলোকে বিশ্বাস জীবনকে করে তোলে নিরর্থক।

৫- শামসুর রাহমান বলেন, তসলিমা নাসরিনকে তো দেশে থাকতেই দেয়া হয়নি। সে দেশে আসতে পারছে না। তার অপরাধ সে লিখেছে, সে নারী জাগরণের কথা লিখেছে। নারী স্বাধীনতার কথা লিখেছে। কতগুলো ধমান্ধ, স্বাধীনতাবিরোধী, মানবতাবিরোধী, কুপমণ্ডূক, বদমাশ এদেশকে অন্ধকারে রাখতে চায়। এদের কারণে দেশে মুক্ত সাহিত্যচর্চার জন্য পূণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত হচ্ছে না। বর্তমানে গোলটুপির সংখ্যা বেড়ে গেছে । ...মোল্লারা তো মেয়েদের মানুষই মনে করে না ।”

তথ্যসূত্র:
১- বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী
২- আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আযাদ
৩- সাক্ষাৎকার, (কবি শামসুর রহমানের সাক্ষাৎকার) এম সহিদুল ইসলাম, মৃদুল প্রকাশন।
৪- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বহুমাত্রিক বিশ্লেষন, এম আই হোসেন। 

২১ জানু, ২০১৬

রাজাকার কি এবং রাজাকার কমান্ডারদের তালিকা

চিত্রঃ একজন রাজাকার সদস্যের পরিচয়পত্র

বাংলাদেশে সাধারণত ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজাকার বলা হয়। যদিও রাজাকার ছিল একটি আধাসামরিক বাহিনীর নাম। 

“রাজাকার” শব্দটির অর্থ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক। বেসিক্যালি শব্দটা হচ্ছে “রেজাকার”। যেহেতু আমাদের দেশে রাজাকার বেশী ব্যবহৃত তাই আমিও রাজাকার শব্দটা ব্যবহার করছি। ১৯৭১ সনে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার “আনসার আইন ১৯৪৮” বাতিল করে “রাজাকার অধ্যাদেশ ১৯৭১” অনুযায়ী এ বাহিনী গঠন করে। জেনারেল নিয়াজী এক সাক্ষাৎকারে মুনতাসীর মামুনকে বলেছিলেন যে, রাজাকার বাহিনীর তিনিই স্রষ্টা। বিলুপ্ত আনসার বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা সয়ংক্রিয়ভাবে নবগঠিত রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ও রাজাকার সদস্য হিসেবে গণ্য হন। জেনারেল রাও ফরমান আলীর সঙ্গে ১৩ মার্চ ২০১০ তারিখে প্রফেসর মুনতাসির মামুন ও মহিউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক গ্রহণ করা সাক্ষাৎকারের অংশ তুলে দেয়া হলো”
-Can you elaborate on the formation of the civil armed forces saying that you formed the Razakars? 
-I think it had been formed by the Martial Law Head Quarter.
-Whose brainchild was the Force?
-Must have been the Core Commandant's 
-Who was at that time?
-Niazi. 
-You had no control over the Razakars?
-It was done by the Martial Law Headquarters.

এর বাইরে রাজনৈতিক কর্মী, স্থানীয় বখাটে, বেকার যুবকদের মধ্য থেকে প্রায় ৩৭০০০ জনকে এ বাহিনীতে রিক্রুট করা হয়। এ বিপুল সংখ্যায় রাজাকার রিক্রুট হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করেছিল। বাংলাদেশের সবগুলো ইসলামপন্থী ও মুসলিম জাতীয়তাবাদী দলের কোনটিই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি । ফলে তাদের সমর্থকদের মধ্য থেকে একটা অংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজাকার বাহিনীতে শামিল হয় । তবে এ বাহিনীতে আদর্শবাদী লোকদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। প্রকৃত পক্ষে নিয়মিত ভাতা, রেশন, স্থানীয় ক্ষমতার ব্যবহার এবং সর্বোপরি হিন্দু সম্প্রদায় ও স্বাধীনতার পক্ষের সদস্যদের ঘরবাড়ী ও বিষয়-সম্পত্তি অবাধে লুটপাট ও ভোগ দখল করার লোভে সমাজের সুযোগ-সন্ধানী এক শ্রেণীর লোক ব্যাপকহারে রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। 

কামরুদিন আহমদ তার “স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়” বইতে এ বিষয়ের একটা প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন । তিনি লিখেছেন, বাঙ্গালীদের রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হবার কতকগুলো কারণ ছিল, তা হলঃ 

১. দেশে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিল । সরকার সে দুর্ভিক্ষের সময় ঘোষণা করল, যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেবে, তাদের দৈনিক নগদ তিন টাকা ও তিন সের চাউল দেয়া হবে । এর ফলে বেশ কিছু সংখ্যক লোক, যারা এতদিন পশ্চিমা সেনার ভয়ে ভীত হয়ে সন্ত্রস্ত দিন কাটাচ্ছিল, তাদের এক অংশ এ বাহিনীতে যোগদান করল। 

২. এতদিন পাক সেনার ভয়ে গ্রামে-গ্রামাঞ্চলে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, আত্মরক্ষার একটি মোক্ষম উপায় হিসেবে তারা রাজাকারদের দলে যোগ দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাচলো। 

৩. এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী জোর করে মানুষের সম্পত্তি দখল করা এবং পৈতৃক আমলের শক্রতার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ গ্রহণের জন্যেও এ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।

রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হবার পর তাদের বুঝানো হলো যে, যুদ্ধে পাক সেনারা হারলে, পাক সেনাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার অপরাধে মুক্তি বাহিনী তাদের সকলকে হত্যা করবে। সুতরাং জীবন রক্ষা করার জন্য মুক্তি বাহিনীর গুপ্ত আশ্রয়স্থলের সংবাদ তারা পাক সেনাদের জানিয়ে দিতে শুরু করে। 

খন্দকার আবুল খায়ের তার বই "১৯৭১-এ কি ঘটেছিলো, রাজাকার কারা ছিলো” এ লেখেন আমি যে জেলার লোক সেই জেলার ৩৭ টি ইউনিয়নের থেকে জামায়াত আর মুসলীম লীগ মিলে ৭০ এর নিবাচনে ভোট পেয়েছিল দেড়শতের কাছাকাছি আর সেখানে রাজাকারের সংখ্যা ১১ হাজার যার মাত্র ৩৫টি জামায়াতে ইসলামের ও মুসলিম লীগারদের। 
আমার কিছু গ্রামের খবর জানা আছে, যেখানে ৭১ এর ত্রিমুখী বিপর্যয়ের হাত থেকে বাচার জন্য গ্রামে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, দুই দিকেই ছেলেদের ভাগ করে দিয়ে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে । এই সিদ্ধান্ত মুতাবিক যে গ্রামের শতকরা ১০০ জন লোকই ছিল নৌকার ভোটার, তাদেরই বেশ কিছু সংখ্যক ছেলেদের দেয় রাজাকারে। যেমন কলাইভাঙা গ্রামের একই মায়ের দুই ছেলের সাদেক আহমদ যায় রাজাকারে আর তার ছোট ভাই ইজহার যায় মুক্তিফৌজে। 

রাজাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদের মূল্যায়ন প্রায় একই; তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রমাণাদি হতে একথা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, রাজাকার রাজাকারই; তবে সব রাজাকার এক মাপের ছিলো না । প্রাথমিকভাবে রাজাকার বাহিনীতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের যুবক অন্তৰ্ভূক্ত হলেও তাদেরকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়

১. যারা নিজেদের ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষা করার লক্ষ্যে পাক সামরিক বাহিনীকে সহায়তা, বাঙালী হত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করাকে কর্তব্য মনে করেছিলো। যারা পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ বা মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলো। 

২. যারা হিন্দু সম্পত্তি দখল লুটপাট, ব্যক্তিগত গ্রামীণ রেষারেষিতে প্রাধান্য বিস্তার ও প্রতিশোধ গ্রহণ এবং নানান অপকর্ম করার সুযোগ গ্রহণ করেছিলো, এবং দেশ ছেড়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল তাদের বেশিরভাগ পেটের তাড়নায় কর্মসংস্থানের জন্য এবং একই সাথে ভয়ভীতি এবং প্রলুব্ধ হয়ে রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখাতে বাধ্য হয়।

রাজাকার বাহিনী সুশৃঙ্খল বাহিনী ছিলো না। বরং এদেরকে পাক বাহিনী দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। অধিকাংশই হয়েছে বলির পাঠা। তাদেরকে সামনে রেখেই পাকবাহিনী সর্বত্র অগ্রসর হয়েছে 

রাজাকার বাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলেন পুলিশের DIG আবদুর রহিম যাকে শেখ মুজিব স্বাধীনতা যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান ও পরবর্তীতে সচিব করেছিলেন। রাজাকার বাহিনীর অন্যান্য কমান্ডারদের নাম-পরিচয় নিচে দেয়া হলঃ

রাজাকার বাহিনীর কমান্ডের সদস্যদের নাম-পরিচয়
১. এ এস এম জহুরুল হক, পরিচালক, সদর দপ্তর 

২. এম ই মৃধা, সহপরিচালক, সদর দপ্তর 

৩. মফিজুদ্দিন ভূইয়া, সহপরিবালক, পশ্চিম রেঞ্জ 

8. এম এ হাসনাত, সহ পরিচালক, কেন্দ্রীয় রেঞ্জ 

৫. ফরিদ উদ্দিন, এডজুডেন্ট, সদর দপ্তর 

৬. মোস্তাক হোসেন চৌধুরী, কমান্ডার, চট্টগ্রাম জেলা 

৭. শামসুল হক, কমান্ডার, সিলেট জেলা 

৮. এ এস এম জহিরুল হক, কমান্ডার, ঢাকা জেলা 

৯. এম মুজিবুর রহমান, কমান্ডার, বরিশাল জেলা 

১০. সিরাজুদ্দিন আহমেদ খান, কমান্ডার, খুলনা জেলা 

১১. আব্দুল হাই, কমান্ডার, যশোর জেলা 

১২. আরিফ আলী সরদার, কমান্ডার, পটুয়াখালী জেলা 

১৩. আসাদুজ্জামান তালুকদার, কমান্ডার, কুষ্টিয়া জেলা 

১৪. এ কে এম আব্দুল আজিজ, কমান্ডার, পাবনা জেলা 

১৫. এম হাবিবুর রহমান, কমান্ডার, রাজশাহী জেলা 

১৬. শামসুজ্জামান, কমান্ডার, বগুড়া জেলা 

১৭. আব্দুল ওয়াদুদ, কমান্ডার, দিনাজপুর জেলা 

১৮. আফতাব উদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার, রংপুর সদর 

১৯. মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার, মেহেরপুর মহকুমা 

২০. ফজলুল কবির, কমান্ডার, কুষ্টিয়া সদর মহকুমা 

২১. সাইফউদ্দিন চৌধুরী, কমান্ডার, কুষ্টিয়া সদর মহকুমা 

২২. এ টি এম ফজলুল করিম, কমান্ডার, কুষ্টিয়া সদর মহকুমা

২৩. ওয়াসিউদ্দিন তরফদার, কমান্ডার, চুয়াডাঙ্গা মহকুমা 

২৪. সাইফউদ্দিন চৌধুরী, কমান্ডার, বরগুনা মহকুমা 

২৫. মকবুল আলী খান, কমান্ডার, বরিশাল সদর(দক্ষিণ)মহকুমা 

২৬. তৈয়বুর রহমান, কমান্ডার, বরিশাল সদর (দক্ষিণ)মহকুমা 

২৭. খান জহিরুল হক, কমান্ডার, যশোর সদর মহকুমা 

২৮. আব্দুস সোবহান, কমান্ডার, যশোর সদর মহকুমা 

২৯. তৈয়বুর রহমান, কমান্ডার, কুড়িগ্রাম মহকুমা 

৩০. নূর আহমেদ, কমান্ডার, গাইবান্ধা 

৩১. আফজাল উদ্দিন সিকদার, কমান্ডার, জয়পুরহাট মহকুমা 

৩২. সোহরাব আলী মন্ডল, কমান্ডার, বগুড়া সদর মহকুমা 

৩৩. মাহমুদ জং, কমান্ডার, নবাবগঞ্জ মহকুমা 

৩৪. আব্দুল কাদির, কমান্ডার, নওগা মহকুমা 

৩৫. খাজা ফকির মোহাম্মদ, কমান্ডার, সিরাজগঞ্জ মহকুমা 

৩৬. তৈয়বুর রহমান, কমান্ডার, নড়াইল মহকুমা 

৩৭. আশরাফউদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার, নড়াইল মহকুমা 

৩৮. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার, বাগেরহাট মহকুমা 

৩৯. মারুফ হোসেন, কমান্ডার, খুলনা মহকুমা 

৪০. জয়নুদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার, সাতক্ষীরা মহকুমা 

৪১. তৈয়বুর রহমান খান, কমান্ডার, বরিশাল সদর মহকুমা 

৪২. আব্দুল সোবহান, কমান্ডার, ভোলা মহকুমা 

৪৩. দেওয়ান আক্তারউদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার, ঝালকাঠি মহকুমা 

৪৪. আব্দুল মালেক খান, কমান্ডার, টাঙ্গাইল মহকুমা 

৪৫. শমসের আলী, কমান্ডার, টাঙ্গাইল মহকুমা 

৪৬. আনোয়ার উদ্দিন, কমান্ডার, জামালপুর মহকুমা 

৪৭. শমসের আলী, কমান্ডার, ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) মহকুমা 

৪৮. সৈয়দ মোঃ শাজাহান, কমান্ডার, ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) মহকুমা 

8৯. এ মালেক খান, কমান্ডার, ময়মনসিংহ সদর (উত্তর) মহকুমা 

৫০. খসরুজ্জামান, কমান্ডার, কিশোরগঞ্জ মহকুমা 

৫১. মতিউর রহমান খান, কমান্ডার, মানিকগঞ্জ মহকুমা 

৫২. আব্দুল কাইয়ুম খান, কমান্ডার, মানিকগঞ্জ মহকুমা

৫৩. খলিলুর রহমান, কমান্ডার, মুন্সীগঞ্জ মহকুমা

৫৪. এন এ হাসনাত, কমান্ডার, ঢাকা সদর (উত্তর) মহকুমা 

৫৫. চান্দ মিয়া, কমান্ডার, ঢাকা সদর (উত্তর) মহকুমা 

৫৬. কাজী জহরুল হক, কমান্ডার, ঢাকা সদর (দক্ষিণ) মহকুমা 

৫৭. মুস্তাফিকুজ্জামান, কমান্ডার, ঢাকা সদর (দক্ষিণ) মহকুমা 

৫৮. ফরিদউদ্দিন, কমান্ডার, ঢাকা সদর (দক্ষিণ) মহকুমা 

৫৯. মোহাম্মদউল্লাহ, কমান্ডার, নারায়ণগঞ্জ মহকুমা 

৬০. আবুল কাসেম খান, কমান্ডার, গোয়ালন্দ মহকুমা 

৬১. আবুল কাসেম খান, কমান্ডার, ফরিদপুর সদর মহকুমা 

৬২. আব্দুল লতিফ মিয়া, কমান্ডার, ফরিদপুর সদর মহকুমা 

৬৩. মুনসুর আলী, কমান্ডার, গোপালগঞ্জ মহকুমা 

৬৪. রুহুল আমিন খান, কমান্ডার, মাদারীপুর মহকুমা 

৬৫. এ বি এম আশরাফ উদ্দিন, কমান্ডার, সিলেট সদর মহকুমা 

৬৬. এ টি এম মহিউদ্দিন, কমান্ডার, হবিগঞ্জ মহকুমা 

৬৭. সাঈদুর রহমান, কমান্ডার, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমা 

৬৮. এস ইসমাইল চৌধুরী, কমান্ডার, কুমিল্লা সদর (উত্তর) মহকুমা 

৬৯. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান, কমান্ডার, কুমিল্লা সদর (দক্ষিণ) মহকুমা 

৭০. সাঈদ আলী, কমান্ডার, চাঁদপুর মহকুমা 

৭১. আব্দুল হালিম চৌধুরী, কমান্ডার, ফেনী মহকুমা 

৭২. সিরাজুল হক, কমান্ডার, নোয়াখালী মহকুমা 

৭৩. সিরাজুল হক, কমান্ডার, চট্টগ্রাম সদর (উত্তর) মহকুমা 

৭৪. এ এস এরশাদ হোসেন, চট্টগ্রাম সদর (দক্ষিণ) মহকুমা

পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অধ্যাদেশ ১৯৭১ঃ



তথ্যসূত্রঃ
১- শাস্তি কমিটি, মুনতাসির মামুন । 
২- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ; বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ
৩- মূলধারা, ‘৭১, মঈদুল হাসান
৪- স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর, কামরুদ্দিন আহমদ 
৫- ১৯৭১-এ কি ঘটেছিলো রাজাকার কারা ছিলো, খন্দকার আবুল খায়ের  
(মুক্তিযুদ্ধকালে শেখ মুজিবের ভাই শেখ নাসের ৩৫ দিন লুকিয়ে ছিলেন এবং অনেক ন্যাপ ও আওয়ামী লীগ নেতা আশ্রয় নিয়েছিলেন জামায়াত নেতা ও লেখক খন্দকার আবুল খায়েরের যশোরের বাড়িতে)
৬- সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আযাম, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
৭- মুক্তিযোদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, এ এস এম সামছুল আরেফিন
৮- দি ঢাকা গেজেট, ২ সেপ্টেম্বর

১৬ জানু, ২০১৬

"৬ দফা" তোমার মালিক কে? আইয়ুব না মুজিব?


৬ দফা নিয়ে শুরু করার আগে সামান্য প্রেক্ষাপট আলোচনা করি। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক ভারত যুদ্ধ হয়। যুদ্ধটি স্থায়ী ছিল ১৭ দিন। কাশ্মীর সহ নানা ইস্যুতে পাকিস্তানে অতর্কিত আক্রমন করে ভারত। পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য অপ্রস্তুত থাকার থাকার কারণে প্রাথমিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। তবে ৫-৬ দিনের মধ্যেই আইয়ুব খানের রণনৈপুণ্যে ও বাঙ্গালী সৈনিকদের নজিরবিহীন আত্মত্যাগে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। ভারতের প্রায় ৬০ টি বিমান ৪৫০ ট্যাংক ধ্বংস হয়। এমতাবস্থায় ভারত যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগী হয়ে পড়ে। অপরদিকে পাকিস্তানের গোলাবারুদ সংকট ও যুদ্ধক্ষেত্র পাকিস্তান হওয়ায় পাকিস্তানের জনজীবন হুমকির সম্মুখিন। সব মিলিয়ে পাকিস্তানও যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে।

ভারতের বন্ধু রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং একটা চুক্তি হয়, যা তাসখন্দের চুক্তি বলে অভিহিত। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ জনগণ এই চুক্তি মানে নি। এটা ছিল সূবর্ণ সুযোগ কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের। কিন্তু আইয়ুবের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় তা হলো না। ক্ষেপে উঠে রাজনীতিবিদেরা ও পাকিস্তানী জেনারেলরা। আইয়ুবের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো জোট গঠনের চেষ্টা করে। এতে নেতৃত্ব দেয় মুসলিম লীগ। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে সেই মিটিঙে আরো অংশগ্রহন করে আওয়ামীলীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলাম। আওয়ামীলীগের পূর্বপাকিস্তানের সেক্রেটারী মুজিব সেই প্রোগ্রামে আ. লীগের হয়ে অংশগ্রহন করেন।

সেই মিটিঙে মুজিব হঠাৎ করে ৬ দফা ঘোষনা করে বসেন। কিন্তু অন্যান্য বিরোধী দল তা মেনে নেন নি। তারা বলেন, আমরা আজ একত্রিত হয়েছি কাশ্মীর, তাসখন্দ ও আইয়ুব খান কে নিয়ে। ফলে মিটিঙের কার্যসূচী থেকে ছয় দফা বাদ পড়ে। মুজিব সভাস্থল ত্যাগ করে। মজার বিষয় হল নিখিল পাকিস্তানের আ. লীগ প্রেসিডেন্ট নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান এতে বিস্মিত হয়ে পড়েন। কারণ তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এই ছয় দফা নিয়ে আ. লীগে ভাঙ্গন দেখা দেয়। শুধু তাই নয় যারা সেই মিটিঙে আ. লীগের অন্যান্য নেতা যারা মুজিবের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তারাও আগে থেকে কিছুই জানতেন না ৬ দফার ব্যাপারে।

দুঃখজনক ও বিস্ময়কর হলেও সত্য মূলত এই ছয় দফার কারিগর ছিলেন আইয়ুব খান। কারণ তিনি চেয়েছিলেন সেনা অফিসার ও রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি তাসখন্দ থেকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে। এবং ৬ দফার বিরোধী হয়ে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ প্রভাব বজায় রাখতে সবাই যেন তার হাতকেই শক্তিশালী করে। পরিশেষে কিন্তু তাই হয়েছিলো। আইয়ুব ৬ দফাকে হাতিয়ার করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। আইয়ুব তথ্য সচিব আলতাফ গওহরকে দিয়ে ৬ দফা প্রনয়ন করেন। আলতাফ সাহেব কর্মসূচীটি রুহুল কুদ্দুসকে দেন। রুহুল কুদ্দুস ছিলেন মুজিবের ইনার সার্কেল। তিনি সেটা কৃষি ব্যংকের এম ডি খায়রুল বাশারকে দিয়ে টাইপ করিয়ে বিমানে উঠার আগ মুহুর্তে মুজিবের হাতে গুঁজে দেন।

বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে এই কারণে যে, আলতাফ গওহর পাকিস্তানের সমস্ত পত্র-পত্রিকাকে নির্দেশ দেন এই মর্মে যেন তারা ৬ দফার বহুল প্রচার করে। এভাবেই ছয় দফা আলোচিত হয়। নতুবা বিরোধীদের মিটিঙে যেই ছয় দফা নিয়ে কোন আলোচনাই হয় নি সেই ছয় দফা নিয়ে মাতামাতি করার কোন কারণ নেই। লাহোরে ৫ তারিখ ৬ দফা উত্থাপন না করতে পেরে মুজিব ১০ ফেব্রুয়ারী সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে পত্রিকাগুলো আরো রসদ পায়। মানুষ ভুলে যায় তাসখন্দ কিংবা কাশ্মীর সমস্যা। রাজনীতিবিদ ও সামরিক অফিসারদের মাথা ব্যাথার কারণ হয় ৬ দফা।
এদিকে মুজিবের অবস্থাও ভালো নয়। আওয়ামী লীগের অধিকাংশই ৬ দফা মানে নি। দফা গুলোর সাথে তাদের বিরোধ না হলেও তাদের মূল বিরোধ মুজিবকে নিয়ে। মুজিবের কারো সাথে পরামর্শ না করে এহেন ঘোষনা কেউ মেনে নিতে পারে নি। ১৯৬৬ সালের ১৮-১৯ মার্চ ঢাকায় পূর্ব-পাকিস্তানের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শুরু হয়। এতে অন্যান্য মেম্বার সহ লীগ সভাপতি আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের প্রবল আপত্তির মুখে মুজিব ছয় দফা পাশ করাতে ব্যর্থ হয়। এর মাধ্যমে ছয় দফার সাথে আ. লীগের আর কোন সম্পর্ক থাকে না। হতাশ মুজিব তার শেষ অস্ত্র ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেন।

এই প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন। দুঃখভরা মন নিয়ে শেখ মুজিব আমাদের(ছাত্রলীগ) ডাকলেন। বললেন, আমি তো বিপদে পড়ে গেছি। আমারে তোরা কি সাহায্য করবি না? ছয় দফা বলার পর থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে আমার অপর এটাক আসছে। আমার তো এখন ঘরে বাইরে শত্রু। আমরা তখন বললাম নিশ্চয়ই আপনার পাশে থাকবো। যাই হোক ফ্যসিবাদী মুজিব ছাত্রলীগের গুন্ডাদের সহযোগিতায় সভাপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এবং নিজে পূর্ব পাকিস্তান আ. লীগের সভাপতি হন। ছয় দফার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান।

এভাবেই আইয়ুব-মুজিব ষড়যন্ত্রে নষ্ট হয়ে যায় কাশ্মীরের মুসলমানদের ভাগ্য। হয়তো তখন পাকিস্তানী জেনারেলরা তাসখন্দ চুক্তিকে বাতিল করে ভারতকে চাপ দিয়ে কাশ্মীর অধিকার করে নিতে পারতো।

ড: আনিসুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলেন,
"ছয় দফার প্রণেতা কে, এই নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছিল। কেউ কেউ বলেছিলেন সিভিল সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য এটা তৈরি করে শেখ মুজিবকে দিয়েছিলেন, কেউ কেউ সে কৃতিত্ব কিংবা দোষ দিয়েছিলেন কয়েকজন সাংবাদিককে। তাদের পেছনে কোন শক্তি কাজ করছিল, সে বিচারও হয়েছিল। প্রথমে উঠেছিল ভারতের নাম। কিন্তু পাকিস্তান হওয়া অবধি তো দেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ভারতের প্ররোচনা বলে। পরে বড়ো করে যে নাম উঠলো, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্টের বন্ধুত্বের কারণে পাকিস্তান ভাঙার উদযোগ নিচ্ছে মার্কিনরা, এমন একটা ধারণা খুব প্রচলিত হয়েছিল। আমরা যারা একটু বামঘেঁষা ছিলাম, তারা এই ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছিলাম। ফলে, ফেডারেল পদ্ধতি ও স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষপাতী হলেও ছয় দফাকে আমরা তখন গ্রহণ করিনি। আমরা আরো শুনেছিলাম যে, পাকিস্তান ভাঙতে পারলে পূর্ব পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করতে দেওয়া হবে; সুতরাং এ কাজে মার্কিনদের উৎসাহ তো থাকবেই। যদি প্রশ্ন উঠতো যে, পাকিস্তান তো সেনটো-সিয়াটোর সদস্য, তাহলে জবাব পাওয়া যেতো যে, পাক-ভারত যুদ্ধের পরপ্রেক্ষিতে ওসব জোটের অসারতা প্রমাণ হয়ে গেছে এবং পাকিস্তান যে কোন সময় তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। পাকিস্তান কখনোই এসব সামরিক জোট ছাড়েনি, তবে আইয়ুব খানের ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্সে’র প্রচারিত নীতি কিছুটা এ ধারণাকে পুষ্ট করেছিল।”


আতাউর রহমান খান (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) বলেন,
"(তাসখন্দে) কয়দিন আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও লালবাহাদুর শাস্ত্রী একটি যুক্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলেন। সিদ্বান্ত হল, শান্তিপূর্ণভাবে উভয় পক্ষ নিজেদের ছোট বড় সমস্যার সমাধান করবে। আশ্চর্যের কথা, যা নিয়ে যুদ্ধ, অর্থাৎ কাশ্মীর, তার নামগন্ধও এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রইল না। এত কান্ড করে, এত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে, সারা পাকিস্তানকে প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি ঠেলে দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হল, ওম্ শান্তি।

পশ্চিম পাকিস্তানে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য শহর বাজার গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেরা সৈনিক নিহত হয়েছেন। পৃথিবীর কোন যুদ্ধে নাকি এত অল্প সময়ে এত অফিসার নিহত হয় নাই। তাদের স্থান পূরণ সম্ভব হবে না। তাই, পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিরুপ ছিল। এত ক্ষয়ক্ষতির পর আয়ুব খাঁ সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে অপমান-জনক একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করলেন। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। এই চুক্তি অপরাধ স্বীকৃতির শামিল বলে তারা মনে করে।

যে সব সৈনিক কর্মচারী শহীদ হয়েছেন তাদের বিধবা স্ত্রী ও পরিবারবর্গ এক মিছিল বার করল লাহোর শহরে। ধ্বনি তুলল, আমাদের স্বামী পুত্র ফেরত দাও। তারা শাহাদাত বরণ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন নাই। অনর্থক আপনি তাদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছেন। অকারণে তাদের অমূল্য জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। যদি দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য হতো, তা হলে আপনি এমন চুক্তি কেন স্বাক্ষর করলেন? ইত্যাদি –

পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি আলোচনা করার জন্য ফেব্রুয়ারী মাসের পাঁচ-ছয় তারিখে নিখিল পাকিস্তান জাতীয় কনফারেন্স আহ্বান করলেন। এই উপলক্ষে চৌধুরী মহম্মদ আলি ও নবাবজাদা নসরুল্লাহ খাঁ ঢাকা এসে সব দলের সাথে আলাপ আলোচনা করে কনফারেন্সে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ করলেন। বললেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক এই মূহুর্তে আমাদের কর্তব্য নির্ধারণ করা উচিত।

জামাত, নিজামে ইসলামীও কাউন্সিল লীগ যোগদানে সম্মতি দিল। আওয়ামী লীগেরও দোমনাভাব। শেখ মুজিবের মতামতই দলের মত। প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন অভিমত নাই। শেখ মুজিব কনফারেন্সে যোগদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন। এন-ডি-এফ সভা করে মত প্রকাশ করল যে, কনফারেন্সের পক্ষে আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে, তবে বর্তমান অবস্থায় কোন সদস্য এতে যোগদান করতে পারছেনা। শেখ মুজিব আমাকে টেলিফোনে বললেন, আপনারা ঠিকই করেছেন। আমরাও যাবনা।

পরদিন সংবাদপত্রে দেখি, শেখ মুজিব সদলবলে লাহোর যাচ্ছেন। প্রায় চৌদ্দ পনেরো জন এক দলে। ব্যাপার কি? হঠাৎ মত পরিবর্তন। মতলবটা কি?

লাহোর কনফারেন্স শুরু হল গভীর উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে।

অধিবেশন চলাকালে হঠাৎ একটি বোমা নিক্ষেপ করলেন – ‘ছয় দফা’। প্রস্তাব বা দাবীর আকারে একটা রচনা নকল করে সদস্যদের মধ্যে বিলি করা হল। কোন বক্তৃতা বা প্রস্তাব নাই, কোন উপলক্ষ নাই, শুধু কাগজ বিতরণ। পড়ে সকলেই স্তম্ভিত হয়ে গেল। জাতীয় কনফারেন্সে এই দাবী নিক্ষেপ করার কি অর্থ হতে পারে? কনফারেন্স ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সম্মিলিত হয়েছে। এই দাবী যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, এই সম্মেলন ও এই সময় তার উপযোগী নয় – সম্পূর্ণ অবান্তর।

তারপর দলবলসহ শেখ মুজিব ঢাকা ফিরে এসে মহাসমারোহে ‘ছয় দফা’ প্রচার করলেন সংবাদপত্রে। শেখ মুজিবের দাবী ও নিজস্ব প্রণীত বলে ছয়-দফার অভিযান শুরু হয়ে গেল।

ছয় দফার জন্মবৃত্তান্ত নিম্নরুপ : কিছুসংখ্যক চিন্তাশীল লোক দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দূরাবস্থার কথা আলাপ আলোচনা করেন। আমাদের ইঙ্গিত ও ইশারা পেয়ে তারা একটা খসড়া দাবী প্রস্তুত করলেন। তারা রাজনীতিক নয় এবং কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টও নয়। তারা ‘সাতদফার’ একটা খসড়া আমাদের দিলেন। উদ্দেশ্য, এটা স্মারকলিপি হিসাবে আয়ুব খাঁর হাতে দেওয়া, কিংবা জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবাকারে পেশ করার ব্যবস্থা করা।

এই খসড়ার নকল বিরোধীদলীয় প্রত্যেক নেতাকেই দেওয়া হয়। শেখ মুজিবকেও দেয়া হয়। খসড়া রচনার শেষ বা সপ্তম দফা আমরাও সমর্থন করি নাই। শেখ মুজিব সেই দফা কেটে দিয়ে ছয়দফা তারই প্রণীত বলে চালায়ে দিল। তারপর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা ছয় দফার দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক মর্ম ও তাৎপর্য লেখায়ে প্রকাশ করা হয়। ইংরেজী ও বাংলায় মুদ্রিত হয়ে পুস্ত্কাকারে প্রচারিত হয় সারা দেশব্যাপী।

লাহোর কনফারেন্স বানচাল হয়ে গেল। নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবকেই এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী করেন। তারা অভিযোগ করেন, শেখ মুজিব সরকার পক্ষ থেকে প্ররোচিত হয়ে এই কর্ম করেছেন। লাহোরে পৌঁছার সাথে সাথে আয়ুব খাঁর একান্ত বশংবদ এক কর্মচারী শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করে কি মন্ত্র তার কানে ঢেলে দেয় যার ফলেই শেখ মুজিব সব উলটপালট করে দেয়। তারা এও বলে যে আওয়ামী লীগের বিরাট বাহিনীর লাহোর যাতায়াতের ব্যয় সরকারের নির্দেশে কোন একটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা বহন করে। আল্লাহ আলীমূল গায়েব।”

বিঃ দ্রঃ অনেকে মনে করেন ছয় দফা বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলো। তা মোটেই নয়। কারণ আইয়ুবের পতনের সাথে সাথেই মুজিব ভুলে যায় ছয় দফার কথা। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। ইশতেহারে উল্লেখ করেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ অখন্ডতা রাখবেন, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন করবেন না। ছয় দফা তার ৭০ এর নির্বাচনী মেনিফেস্টোতো ছিল না।

তথ্যসূত্রঃ
১. ছয় দফা থেকে বাংলাদেশ
২. বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ, প্রামান্য চিত্র।
৩. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে 'র' ও সিআইএর ভূমিকা, মাসুদুল হক। 
৪. আব্দুল মালেক উকিলের সাক্ষাতকার, সাপ্তাহিক মেঘনা, ১৯৮৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর
৫. কাল নিরবধি, ড: আনিসুজ্জামান
৬. স্বৈরাচারের দশ বছর, আতাউর রহমান খান 

১১ জানু, ২০১৬

হাজার বছরের আর্তনাদ


- ও বাবা বাইর হও না, আর কতক্ষন?
- মা'রে একটু শান্তিমত গোসল কইরতে দাও 
- এই এক্কান কতা দুই ঘন্টা ধরি কইতে আছস। 
- গত সাত মাসে এত হানি হাই ন গোসল কইরবার লাই। আইতেছি আর দুই মিনিট 
- কত আগে খানা বাড়ি রাখছি, অন বেক জুড়াই গেছে

মা জাহানারা বেগমের আনন্দের সীমা নাই। তার আদরের ছোট ছেলে রফিক গত পরশু জেলখানা থেকে বের হয়েছে। না, কোন দাগী আসামী নয় রফিক। ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্র। স্থানীয় সরকারি কলেজে পড়ে। অভাবের সংসারে সবকিছু ছাপিয়ে এসএসসি-তে সে A+ পেয়েছিল। তার অপরাধ সে ইসলামী আন্দোলন করে। স্বৈরাচারীর নাগপাশ ছিন্ন করতে চায়। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক সমাজ চায়। কিন্তু তার চাওয়াতো স্বৈরাচারী সরকারের কাছে পছন্দ হবেনা, হয়ও নি। একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে একদল পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়।

তারপর সে কি কান্ড। তারা তো স্বীকারই করেনা। রফিকের বাবা নেই। বড় ভাই বিদেশ। জাহানারা বেগম অসহায় হয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। কেউ জানেনা তার ছেলে কোথায়। পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের সাহায্যে তিনি আবিষ্কার করেন তার ছেলে থানায়ই আছে। তবে পুলিশ স্বীকার করছেনা। সবার কথা শুনে বুঝতে পারলেন তার আদরের ছেলে রফিককে তারা আর বাঁচতে দিবেনা। খুন করবে ক্রসফায়ারের নামে।

সহসা জাহানারা বেগম চিৎকার করে উঠেন। ওসির পা ধরে ভিক্ষা চাইতে থাকেন তার ছেলেকে। তার করুণ আকুতিতে বরফ গলতে শুরু করলো বর্বর ওসির। জাহানারা বেগম বলতে থাকেন “আঁর হোলা যদি অপরাধ করি থায় তয় জেল দেন আজীবন জেল, তবুও হোলা আঁর চোখের সামনে থাক। হেতেরে মারিয়েন না”। পুলিশ মায়ের কথায় রাজী হয় তবে এজন্য বিসর্জন দিতে হয় বড় ছেলে শফিকের বিয়ের জন্য একটু একটু জমানো সব টাকা। ঘরের একমাত্র দুধেল গাই। বন্ধক দিতে হয় সব জমি। এরপরেও জাহানারা বেগমের ওই বর্বর ওসির প্রতি সে কি কৃতজ্ঞতা।

সাত মাস আগের কথাগুলো মনে হলো জাহানারা বেগমের। আজ তার খুশির সীমা নাই। অথচ এই খুশির মধ্যেও যেন মনে কিছু একটা খচ খচ করছে। রফিক কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে পরশুদিন। বের হয়ে সে বাড়িতে আসেনি। বাড়িতে আসা নিরাপদ না। স্বৈরাচারী পুলিশেরা তাকে বাড়িতে থাকতে দিবেনা এই কথা সে জানতো। কিন্তু জাহানারা বেগম তাকে ডেকেছে শুধু একবেলা খাবার তাকে খাওয়াবে প্রাণভরে। এজন্য কতদিন থেকে কত আয়োজন করে রেখেছে।

রফিকের প্রিয় গরুর গোশত কিনেছে। মুরগীর বাচ্চা, কবুতরের বাচ্চা, বড় কাতল মাছ, সন্দেশ কত কিছুর যে আয়োজন হয়েছে। ঘাটের সামনের দোকান থেকে আধাসের সুগন্ধি চাল এনেছে। পাশের ঘর থেকে দু’সের দুধ এনেছে। এটা সেটা করে প্রায় বিশ পদ খাবার তৈরী করেছেন জাহানারা। এত খুশির দিন তার জীবনে খুব কমই এসেছে। রফিক তো আসতেই চায় নি, বলেছে আর ক’টা দিন সবুর কর। পরিস্থিতি ভালো হলে আসবো। কিন্তু মায়ের মন তর সয়নি। রফিককে আসতে বলে কেঁদেই দিয়েছে। অগত্যা রফিকও চলে এসেছে মায়ের কাছে একবেলা খাবার খেতে।

- হ্যাঁ রে তোদের ওখানে খুব মাইরতো না?
- না মা মারতো না, তবে অন্য বিষয়ে কষ্ট হতো, যেমন ধরো গোসলের পানি নেই, ওযুর পানি খুব কম, খাবারগুলো বিস্বাদ। ওখান মানুষগুলো সব ভালো না। মদ গাঁজা খায়, খারাপ কথা বলে। অপরিষ্কার।

ছেলে মন দিয়ে খাবার খাচ্ছে। এটা ওটা তুলে নিচ্ছে। যে কোন মায়ের কাছে এর চাইতে তৃপ্তিদায়ক দৃশ্য আর হতে পারেনা। জাহানারা বেগম সেই দৃশ্য থেকে একটুও বঞ্চিত হতে চাননা। পাশে বসে রফিকের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এমন সময় ঘরের সামনে গাড়ির শব্দ। জাহানারা বেগম একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন। অতটুকুই।

ততক্ষণে সব পুলিশ গট গট করে নেমে ঘিরে ফেলেছে ওদের মা-ছেলেকে। জাহানারা বেগম কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু গুলির শব্দে তা গুলিয়ে গেলো। জাহানারা তাকিয়ে দেখেন গোশতের বাটির উপর লুটিয়ে পড়েছে রফিক। মুখে এক চিলতে হাসি।

ঘন লাল রক্তে উপচে উঠেছে গোশতের বাটি। কাতল মাছের বড় মাথাটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে খাবার প্লেটের উপর। ঘটনার আকস্মিকতায় সেও ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে।

আবারো গাড়ির শব্দ। হানাদাররা চলে যাচ্ছে। কয়েক মুহুর্ত কাঁদতে ভুলে গেছেন জাহানারা। গাড়ির শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলেন। আর্তনাদ করে উঠলেন। সহস্র বছরের আর্তনাদ। এই আর্তনাদ চলে আসছে রাসূল সঃ এর যুগ থেকে। বেলাল রাঃ, সুমাইয়া রাঃ, ইয়াসির রাঃ তারও আগে গর্তওয়ালাদের আর্তনাদ। হযরত যাকারিয়া আঃ সহ অনেকের আর্তনাদ।

বাংলাদেশেও এই আর্তনাদ নতুন নয়, মালেক, সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব......

৩ জানু, ২০১৬

ঐক্যের পথে হাঁটছে শিয়া মুসলিমরা, সুন্নিদেরও এগিয়ে আসা দরকার।


প্রশ্ন : আমি অনেকের কাছে শুনি যে, হযরত আলী ছাড়া বাকি তিন খলিফাদের নাকি শিয়ারা কাফের বলে? আর এটাও অনেকের কাছে শুনেছি যে, শিয়ারা নাকি আলীকে রাসূলের থেকেও শ্রেষ্ঠ মানে? অনেক শিয়া নাকি এটা বিশ্বাস করে যে, কুরআনের আয়াত ১১ হাজারের বেশি? আর রাসূলের (সা) হাদিস নাকি শিয়ারা মানে না? আমি শিয়াদের মধ্যে রাফেজি ও আলাভী গোত্র সম্পর্কেও জানতে চাই। পরিশেষে আমি জানতে চাই যে, মূলধারার শিয়া মাজহাব এ ব্যাপারে কী বলে? 
-মো. রকিবুল ইসলাম মাহীন, ঢাকা- বাংলাদেশ।

উত্তর:
‘সুন্নি মাযহাবের সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননা হারাম’
প্রথম তিন খলিফাকে মূল ধারার শিয়ারা তথা ১২ ইমামে বিশ্বাসী বা ‘ইসনা আশারা’ শিয়ারা কাফির মনে করেন না বরং তাদের অবমাননাকে হারাম মনে করেন। বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের স্বার্থে হযরত আলী (রাঃ) এই তিন সাহাবির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি বলেও তারা বলে থাকেন। তাদের সম্পর্কে বা সুন্নিদের কাছে সম্মানিত সাহাবিদের ব্যাপারে অশোভন উক্তি করা বা গালি দেয়াকে (শিয়া মুসলমানদের জন্য) নিষিদ্ধ করে গেছেন মূল ধারার শিয়া নেতৃবৃন্দ ও আলেম। মূল ধারার শিয়া নেতারা সুন্নি মুসলমানদেরকে মুসলমান বলেই মনে করেন। এ সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া উল্লেখযোগ্য।

২০১০ সালে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এক ফতোয়ায় মহানবী (স.)’র স্ত্রী হযরত আয়েশাসহ সুন্নি মাজহাবের সকল সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননাকে হারাম ঘোষণা করেন। এ ঐতিহাসিক ফতোয়া বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া জাগায়। বিশেষ করে কুয়েতের দৈনিক ‘আল আম্বিয়া',বার্তা সংস্থা মুহিত,লেবাননের দৈনিক আস সাফির,লন্ডনে থেকে প্রকাশিত আল হায়াত এবং মিশরের বেতার ও টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ফতোয়াটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়।

কুরআন অবিকৃতঃ
শিয়া মুসলমানরা মনে করেন কুরআন অবিকৃত রয়েছে এবং বর্তমানে প্রচলিত কুরআন ও আদি কুরআনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে কোরানের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ আছে এবং এ বিষয়টি ইসলামের নানা মাজহাব সৃষ্টি ও মুসলমানদের মধ্যে মতভেদের অন্যতম বড় কারণ।

আপনি কিছু প্রশ্ন বা অভিযোগের ব্যাপারে শিয়াদের মূল ধারার বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। শিয়াদেরকেই সামগ্রীকভাবে রাফেজি বলে থাকেন বিভিন্ন মাজহাব বা ধারার মুসলমানরা। কারণ, শিয়া মুসলমানরা মনে করেন একমাত্র হযরত আলীই (তাঁর ওপর সালাম) ছিলেন বিশ্বনবী (স.)’র ঘোষিত ও মহান আল্লাহর মনোনীত প্রথম ইমাম বা খলিফা। তারা আবুবকর, ওমর এবং ওসমানকে ন্যায়সঙ্গত খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন বলেই এই শব্দটি তথা রাফেজি (অর্থাৎ ‘অস্বীকারকারী’) ব্যবহার করা হয় তাদের সম্পর্কে।

আলাভীদের ব্যাপারে মূল ধারার শিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
‘অ্যালাভাইট’ বা ‘আলাভী’ বলতে এক সময় হযরত আলী (আ.)’র বংশধর ও তাঁর সমর্থকদেরকে বোঝাত। এখনও প্রাচীন বইয়ে ব্যবহৃত এই শব্দকে সেই অর্থেই ব্যবহার করা যায়। তবে আলাভী বলতে একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ও ছিল প্রাচীন যুগে এবং বর্তমান যুগেও এ সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এরা আলী (আ)-কে আল্লাহর সমতুল্য বলে মনে করে। মূল ধারার শিয়ারা তাদেরকে কাফির বলে মনে করেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর এইসব বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই মূল ধারার শিয়ায় পরিণত হয়েছেন।

শিয়াদের দৃষ্টিতে বিশ্বনবী ও হাদিসঃ
শিয়ারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে মনে করেন। বিশ্বনবীর নাম শুনা মাত্র তারা উচ্চস্বরে দরুদ পড়াকে অনেকটা ওয়াজিবের মতই পালন করে থাকেন। তাদের মত এত বেশি দরুদ পাঠ অন্যরা করে না।

হাদিস প্রসঙ্গে কথা হল, শিয়ারা মনে করেন সুন্নি ভাইরা যেসব হাদিস মেনে চলেন তার মধ্যে অনেক হাদিসই অনির্ভরযোগ্য বা জাল তবে সব হাদিস নয়।

আসলে সুন্নিদের মধ্যে পথভ্রষ্ট ও অনাচারী বা বেদাআতী মুসলমানদের দোষ-ত্রুটিকে যেমন সমস্ত সুন্নি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য বলা যায় না, তেমনি শিয়াদের কোনো বিচ্যূত বা পথভ্রষ্ট ধারাকে সব শিয়াদের চিন্তাধারা বলে প্রচার করার বা মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিয়া মুসলমানদের নামে নানা অপপ্রচার যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ইসলাম ধর্মের শত্রুদের বড় ষড়যন্ত্র। তারা এ ধরনের বিষয়গুলোকে অপব্যবহার করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য জিইয়ে রাখতে চায়।
রেডিও তেহরান বাংলার ওয়েবসাইট থেকে হুবুহু তুলে ধরা হলো। 

শিয়া মাজহাব কি এবং ওদের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায়? তাদের কে কি মুসলিম বলা যায়? তাদের সাথে কি মুসলিম হিসেবে ঐক্য স্থাপন করা যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর তাদের থেকেই শুনি।  শিয়া সুন্নীর মূল বিরোধ কোথায় জানতে এই লিখাটা পড়তে পারেন।