২৬ জানু, ২০১৬

যুগে যুগে আওয়ামী লীগের ইসলাম বিরোধিতা


১৯৪৭ সনের পূর্বেই মুসলিম লীগের ভিতর সমাজতন্ত্রী-ইসলাম বিরোধী একটি উপদল গড়ে উঠে, যারা পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম কর্মী সংঘ নামে সংগঠিত হতে থাকেন । ১৯৪৯ সনে মুসলিম লীগ ভাগ করে “আওয়ামী মুসলিম লীগ” গঠন করে । ১৯৫৪ সনের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির মধ্য দিয়ে “মুসলিম” শব্দটিরও পতন শুরু হয় । আওয়ামী মুসলিম লীগ তার দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটিকে বিদায় করে প্রকাশ্যে মুসলিম চেতনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । 

১- স্বরাজ পার্টির গঠনতন্ত্রকেই আওয়ামী লীগ গঠনের সময় তার গঠনতন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যাচ্ছে একটি হিন্দু সংগঠনের লক্ষ্য ও কর্মসূচীকেই স্বজ্ঞানে যে দল তার লক্ষ্য ও কর্মসূচী গ্রহণ করে সে দল যে ইসলাম বিরোধী হবে তাতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয় । 

২- ১৯৫৫ সনের ১৭ই ফেব্রুয়ার যুক্তফ্রন্ট পার্লামেন্টারী পার্টির সভায় যখন শেরে বাংলা কুরআন পাঠ শুরু করেন তখন আওয়ামী এম,পি, বরিশালের ফরমুজ্জল হক তাতে বাধা দেয় এবং অন্যান্য আওয়ামীগণ তার সঙ্গে চিৎকার শুরু করে, ফলে কালামে পাক পড়া সম্ভব হয় নি ।

৩- আতাউর রহমান সরকার নবী দিবসে পল্টন ময়দানে মাহফিল বন্ধ করে ১৪৪ ধারা জারী করে ।

৪- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানে ইসলামী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে বক্তব্য রাখেন। 

৫- আতাউর রহমান মন্ত্রীসভা মন্দির মেরামতের জন্য টাকা দিতে পারলেও কোন মসজিদ মেরামতে কেন পয়সা খরচ করতে পারলো না। 

৬- যে মনোরঞ্জন ধর পরিষদে কোরান পাঠে বাধা দিল তাকে নিয়েই মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়েছে।

৭- ১৯৭২ সন থেকে আওয়ামী লীগ ও তার মুক্ত চিন্তার বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করা শুরু করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইসলামী চেতনা এক নয়। ইসলামপন্থী ও মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন তাই তাদের এ প্রচারণা এ দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের মতই বিপক্ষে গেলেও তারা তাদের ঐ প্রচারণার বিপক্ষে চুপ থেকেছেন । 

৮- এ সুযোগে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোগ্রাম থেকে কোরআনের উদ্ধৃতি “রাব্বি জিদনি ইলমা”, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়। ইসলামের প্রতি রুষ্টতা এতোই বেশী ছিল যে, কবি নজরুল ইসলাম’ কলেজের নাম বদলিয়ে রাখা হয় কবি নজরুল’ কলেজ । 

৯- ১৯৭২ সনে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিমন্ডলে ধর্মীয় অনুশাসন অনুসৃতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে নিষিদ্ধ করা হয় ।

১০- ১৯৯৬ সনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে তার আসল মূর্তি প্রকাশ করতে থাকে। তাদের ঘরাণার বুদ্ধিজীবিরা ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম চেতনাকে আঘাত হেনে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে প্রদর্শন করারও সাহস দেখায়।

১১- পুলিশকে বায়তুল মোকাররমে জুতা নিয়ে প্রবেশ করানো, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হককে গ্রেপ্তারসহ অসংখ্য মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া। ক্ষণে ক্ষণে মন্ত্রীদের মাদ্রাসা নিয়ে বিষোদগার অব্যাহত থাকা   

১২- ২০০৯ সনে ক্ষমতা লাভ করে তারা পুরাপুরিভাবে ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে । সৈয়দ আশরাফ বলেন “আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।" তার কথাই সত্য; একজন ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী মুসলমানও হতে পারেন না, হিন্দু বা অন্য কোন ধমাবলম্বী হতে পারেন না ।

১৩- মাদ্রাসা শিক্ষাকে ‘জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র’ হিসেবে চিত্রায়িত করার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দালাল ও নাম সর্বস্ব মাওলানাদেরকে দিয়ে দেশের প্রথিতযশা, বরেণ্য ও গণস্বীকৃত ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার, মিথ্যাচার, চরিত্রহরণমূলক অভিযান। নিয়মিত কার্যক্রমে রূপ নিয়েছে। 

১৪- আল্লাহ রাসূল সঃ নিয়ে কটুক্তিকারী নাস্তিকদের বাঁচানোর জন্য হেফাযতে ইসলামের সমাবেশের উপর ক্র্যাকডাউন প্রমাণ করে তারা কতটা ইসলাম বিদ্বেষী।

আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ইসলাম বিরোধীতা 

১- মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে আল্লাহ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হওয়াকে আধুনিকতা ও প্রগতিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে আসছে। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা হচ্ছে আধুনিক, পুঁজিবাদ হচ্ছে বুর্জয়া প্রতিক্রিয়াশীল আর ধর্ম হচ্ছে আফিম, এমন চিত্তাকর্ষক শ্লোগান সে সময়ের তরুণদেরকে আকৃষ্ট করে। সে সময়ের অনেক তরুণই পরিণত বয়সে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বাসের দিক পরিবর্তন করে আবার ইসলামের দিকে এসেছেন। কিন্তু অনেকেই তাদের পূর্ব বিশ্বাসেই আস্থাশীল থেকে ধর্মহীনতার বিষ সমাজে ছড়াচ্ছে। 

২- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই দাউদ হায়দার ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মকে আঘাত হানলে মুসলিমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে। শেখ মুজিব তাকে সেইভ করার জন্য জার্মানীতে প্রেরণ করেন। একই ধারায় লিখতে গিয়ে তসলিমা নাসরিনকেও জনরোষে পড়তে হয় । তিনিও দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

৩- আহমদ শরীফ তার ক্লাসে বলতেন, “এতদিন তোমরা কোরআন শরীফের কথা শুনেছ, হাদীস শরীফের কথা শুনেছ; এখন শোন আহমেদ শরীফের কথা।” নামাজের আজানকালে ক্লাসে মেয়েরা মাথায় কাপড় দিলে তিনি বলতেন “আল্লাহ কি তোমাদের ভাসুর যে মাথায় কাপড় দিতে হবে?”

৪- হুমায়ুন আজাদ তার আমার অবিশ্বাস বইতে বলেন “বিশ্বাসের জগতটি পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন। বিশ্বাসের বইগুলো অন্ধকারের বই, ওগুলোর কাজ মানুষের মনকে গভীর অন্ধকারে আবৃত করা। “চারপাশের ধর্ম দেখে মনে হতে পারে যে মানুষ ধর্ম ছাড়া বাঁচতে পারে না, সত্য হচ্ছে ধর্মের মধ্যে মানুষ বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। মানুষ মৰ্মমূল ধর্মবিরোধী, মানুষের পক্ষে বেশী ধর্ম সহ্য করা অসম্ভব।

ধার্মিকেরাও যতোটা ধাৰ্মিক তার থেকে অনেক বেশি অধাৰ্মিক । মানুষের সৌভাগ্য মানুষ বেশি ধর্ম সহ্য করতে পারে না, তাই বিকাশ ঘটেছে মানুষের। বেশি ধর্মে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ধাৰ্মিক মানুষ অসুস্থ মানুষ। ধর্মের বইগুলো সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। পরলোক হচ্ছে জীবনের বিরুদ্ধে এক অশ্লীল কুৎসা, পরলোকের কথা বলা হচ্ছে জীবনকে অপমান করা। পরলোকে বিশ্বাস জীবনকে করে তোলে নিরর্থক।

৫- শামসুর রাহমান বলেন, তসলিমা নাসরিনকে তো দেশে থাকতেই দেয়া হয়নি। সে দেশে আসতে পারছে না। তার অপরাধ সে লিখেছে, সে নারী জাগরণের কথা লিখেছে। নারী স্বাধীনতার কথা লিখেছে। কতগুলো ধমান্ধ, স্বাধীনতাবিরোধী, মানবতাবিরোধী, কুপমণ্ডূক, বদমাশ এদেশকে অন্ধকারে রাখতে চায়। এদের কারণে দেশে মুক্ত সাহিত্যচর্চার জন্য পূণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত হচ্ছে না। বর্তমানে গোলটুপির সংখ্যা বেড়ে গেছে । ...মোল্লারা তো মেয়েদের মানুষই মনে করে না ।”

তথ্যসূত্র:
১- বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী
২- আমার অবিশ্বাস, হুমায়ুন আযাদ
৩- সাক্ষাৎকার, (কবি শামসুর রহমানের সাক্ষাৎকার) এম সহিদুল ইসলাম, মৃদুল প্রকাশন।
৪- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বহুমাত্রিক বিশ্লেষন, এম আই হোসেন। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন