২ মে, ২০১৯

ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমাদের যা করতে হবে।




আমাদের প্রথমে ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলায় করণীয় কাজগুলো করতে হবে। এরপর আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে হবে। আল্লাহ যাতে আমাদের রক্ষা করেন। করণীয় কাজ ও রাসূল সা.-এর শেখানো দোয়াগুলো নিচে উল্লেখ করছি। 

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে অথবা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ঘূর্ণিঝড়ের আগেই আমাদের কিছু করনীয় আছে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করছি 


১. দূর্যোগের সময় কোন এলাকার লোক কোন আশ্রয়ে যাবে, গরু, ছাগল, মহিষ কোথায় থাকবে তা আগে ঠিক করে রাখুন এবং জায়গা চিনে রাখুন।

২. নিজের কাছে ব্যাটারীচালিত রেডিও রাখুন বা মোবাইলে রেডিও শুনুন। নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করুন।

৩. সম্ভব হলে বাড়িতে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ব্যান্ডেজ, তুলা, ডেটল প্রভৃতি) রাখুন।

৪. জলোচ্ছ্বাসের পানির প্রকোপ থেকে রক্ষায় নানারকম শস্যের বীজ উত্তমভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

৫. ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাবার সময় কি কি জরুরি জিনিস সঙ্গে নেয়া যাবে এবং কি কি জিনিস মাটিতে পুঁতে রাখা হবে তা ঠিক করে সে অনুসারে প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

৬. আর্থিক সামর্থ থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত করুন। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বে এই পাকা গর্তের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।

৭. ডায়ারিয়া মহামারীর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুদের ডায়ারিয়া হলে কিভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে পরিবারের সকলকে প্রশিক্ষণ দিন।

৮. ঘূর্ণিঝড়ের মাসগুলোতে বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট জাতীয় শুকনো খাবার রাখুন।

৯. নোংরা পানি কিভাবে ফিটকারি বা ফিল্টার দ্বারা খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন।

১০. বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করুন। মাটির বড় হাঁড়িতে বা ড্রামে পানি রেখে তার মুখ ভালভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে যাতে পোকা-মাকড়,ময়লা- আবর্জনা ঢুকতে না পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাবার পর দুর্যোগকালে করণীয় :

১. আপনার ঘরগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করুন, আরও মজবুত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যেমন মাটিতে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন অংশ বাঁধা।

২. দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

৩. বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র বাড়ির মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধাদের আগে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত হোন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশের পরে সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যান।

৪. বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার সময় অবশ্যই আগুন নিভিয়ে যাবেন।

৫. আপনার অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন- ডাল, চাল, দিয়াশলাই, শুকনো কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ঔষধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধন পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।

৬. আপনার গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচুস্থানে রাখুন। কোন অবস্থায়ই গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোন উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন, বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।

৭. আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব না হলে শক্ত গাছের সাথে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সাথে নিজেকে বেঁধে রাখুন যাতে প্রবল ঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিতে না পারে।

৮. আশ্রয় নেয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশেপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের পূর্বেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়িয়ে না যায়।

৯. রেডিওতে আবহাওয়া আপডেট নিয়মিত শুনুন। 

১০. দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন।

১১. টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালভাবে আটকে রাখতে হবে যাতে ময়লা বা লবনাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে।

দূর্যোগ পরবর্তী করণীয় :

১. রাস্তা-ঘাটের উপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।

২. আশ্রয়কেন্দ্র হতে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।

৩. অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করুন।

৪. ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে শুধু এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে যেন অন্যকে সাহায্য করে সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

৫. দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধারের কাজ শুরু করুন। 

৬. ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার সম্ভাবনা থাকে।

৭. পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় বেশি বেশি দোয়া পড়ুন ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চান :

১- আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহি, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহি’ (তিরমিজি, মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট এ বাতাসের ভালো দিক, এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা এবং যে উদ্দেশ্যে তা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার উত্তম দিকটি প্রার্থনা করছি। এবং তোমার নিকট এর খারাপ দিক হতে, এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার মন্দ দিক হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

২- সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি। (মুয়াত্তা)
অর্থ :পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা  সভয়ে পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা। 

৩- আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগজাবিকা ওয়া লা তুলহিকনা বিআ’জাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা। (তিরমিজি)
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধ দিয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও।

৪- আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা। (বুখারি)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।

৫- আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা- ওয়া খাইরা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি। (তিরমিজি)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন