৪ মে, ২০১৯

মুসলিম কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না



মুসলিম মানে আত্মসমর্পনকারী। সে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালার কাছে আত্মসমর্পন করেছে। তার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল সা.-ই শেষ কথা। একজন মুসলিম মাত্রই তাকে আল্লাহ ও তার রাসূল সা.-এর পূর্ণ আনুগত্য করতে হবে। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কুরআনে ও রাসূল সা. এর সীরাত থেকে। আমরা এই আলোচনায় বুঝার চেষ্টা করবো কেন একজন মুসলিম ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলার মতবাদে বিশ্বাসী হতে পারে না।    

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা দুধরণের, এক শ্রেণিকে ধূর্ত ও চালাক বলা চলে এবং আর এক শ্রেণির উপযুক্ত পরিচয় দিতে গেলে ‘বোকা অথবা বিভ্রান্ত’ বলাই সমীচীন। ধূর্ত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের পরিচয় অত্যন্ত স্পষ্ট। তারা ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে প্রচার করে বটে, কিন্তু তাদের অনেকেরই ব্যক্তি জীবনে ধর্মের কোন গন্ধ ও পাওয়া যায় না। তারা প্রকৃতপক্ষে ধর্মকে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় জিনিস বলে মনে করে, কিন্তু সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক সুবিধা ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনের তাকিদে ধর্মকে মৌখিক স্বীকৃতি দান করে।

বিভ্রান্ত বা বোকা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নিতান্তই করুণার পাত্র। তারা নামায, রোযা, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ যিকর ইত্যাদি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে আদায় করে, কিন্তু সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলামী বিধানকে মেনে চলার কোন তাকিদই অনুভব করে না। আল্লাহর কিতাবকে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ না করে যারা শুধু ইসলামের কতিপয় অনুষ্ঠান নিয়েই সন্তুষ্ট, তাদের প্রতি কুরআন যে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে, তা যে কোন সত্যিকার মুসলমানের অন্তরকেই কাঁপিয়ে তুলবার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহপাক বলেন, “তোমরা কি কিতাবের কতক অংশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছ এবং আর কতক অংশকে অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে তাদের জন্য এ দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ছাড়া আর কি বদলাই বা থাকতে পারে। আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। ”

প্রথমত :
সুরা আলে ইমরানের ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য জীবন বিধান একমাত্র ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশত, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।" এখানে খেয়াল করে দেখলে বুঝবেন আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ জীবন বিধান বলেননি বলেছেন একমাত্র জীবন বিধান। অর্থাৎ একজন মুসলিম ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধানকে মেনে নিতে পারে না। ইসলামই শেষ কথা। মুসলিমরা অন্য বিধর্মীদের সাথে আচরণ করবে সেভাবে যেভাবে ইসলাম নির্দেশ করে। একজন সেক্যুলার সকল ধর্মকে একইরূপে ট্রিট করে যেটা ইসলামসম্মত নয়। কোনো মুসলিম তা পারে না।

দ্বিতীয়ত :  
সেক্যুলাররা আল্লাহকে বিশ্বাস করে তবে আল্লাহর নিয়ম রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করতে নারাজ। এ বিশ্বের যদি কোন স্রষ্টা থাকেন এবং সমগ্র বস্তুজগতে যদি তার দেয়া প্রাকৃতিক বিধানসমূহ কার্যকর বলে স্বীকৃত হয়, তাহলে সেই মহাশক্তিশালী স্রষ্টাকে মানুষের জীবনে একটি কার্যকর শক্তি হিসেবে গ্রহণ করতে আপত্তি করার কি কারণ থাকতে পারে? প্রাকৃতিক জগতে কোন ক্ষুদ্রতম বিধানকে বদলীয়ে দেবার ক্ষমতা মানুষের নেই। এমনকি মানুষ তার আপন শারীরিক বিধিও ইচ্ছা মত পরিবর্তন করে সুস্থ থাকতে পারে না। এমতাবস্থায় মানব জীবনে সামঞ্জস্য ও শৃংখলা বিধানের জন্য কোন বিধি ব্যবস্থা বিশ্ব স্রষ্টার নিকট থেকে গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তকে কিরূপে যুক্তিভিত্তিক বলে মেনে নেয়া যায়? যিনি জীব জগৎ, উদ্ভিত জগৎ ও সৌরমন্ডলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিধান দিয়েছেন তাঁকে মানব জাতির জন্য বিধানদাতা হিসাবে স্বীকার করায় আপত্তি কেন? 
আল্লাহকে  বিধানদাতা মনে করতে না পারলে মুসলিম আর মুসলিম থাকে না। 

তৃতীয়ত :
আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় বলেন “হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর”। যারা কুরআনের কিছু বিধান গ্রহণ করে আবার কিছু বিধান ত্যাগ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা শাস্তির ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফেল নন”। [সূরা বাক্বারা, আয়াত ৮৫]। 

তাহলে যে আল্লাহকে আপনি ব্যক্তিজীবনে আনুগত্য করবেন। তার নিয়মে কেন রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন না? সূরা হজ্বের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা শাসকদের উদ্দেশ্যে ৪ টি দায়িত্বের কথা বলেছেন, সালাত প্রতিষ্ঠিত করা, যাকাত আদায় করা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখা। কোনটা সৎকাজ আর কোনটা মন্দকাজ এটিও নির্ধারিত হবে ইসলাম অনুযায়ী। কোনো শাসক বা কোনো শাসনব্যবস্থায় যদি উপরোক্ত দায়িত্ব পালনের ব্যপারে কঠোরতা আরোপ না করে তবে সে শাসনব্যবস্থা কোনোভাবেই বৈধ তো নয়ই উপরন্তু এটি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার শামিল। 

চতুর্থত :
প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। মুসলিম সমাজে ‘আল্লাহ নেই’ বলে ঘোষণা করবার দুঃসাহস করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় মনে করেই তারা ধূর্ততার বক্রপথ অবলম্বন করে থাকে। বাস্তব ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক শাসনকর্তার ( Constitutional head) ন্যায় প্রভাবহীন এক দুর্বল সত্তা হিসাবে আল্লাহকে স্বীকার করে তারা স্রষ্টার বিশ্বাসীদেরকে ধোঁকা দেবার অপরূপ কৌশল ফেঁদেছে। এ পন্থায় বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্মে তুষ্ট এক শ্রেণীর ভীরু লোক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে স্বীকার করেও আল্লাহকে খুশী করা যায় বলে বিশ্বাস করে। আর শাসন শক্তির ধারক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এ ভীরু ধার্মিকদের সমর্থনেই টিকে থাকার চেষ্টা করে। এ সমর্থনটুকুর জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শাসকরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করলেও মুখে স্বীকার করে থাকে।

পঞ্চমত :
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আল্লাহকে ব্যক্তিগত জীবনে আনুগত্যের অধিকারী বলে স্বীকার করে এবং সমাজ জীবনে আল্লাহ ও ধর্মকে মানার প্রয়োজন নেই বলে ঘোষণা করে। এখানে প্রশ্ন হল, কোন দলিলের ভিত্তিতে তারা আল্লাহর মতকে ব্যক্তিগত এলাকায় সীমাবব্ধ করেন? আল্লাহ কি কোথাও এ বিষয় কোন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কিছু ইবাদত ও নামায রোযার অনুষ্ঠান পালন করলেই তিনি সন্তুষ্ট হবেন এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজ বুদ্ধি অনুযায়ী যার যেরূপ খুশী জীবন যাপন করলেও আল্লাহর কোন আপত্তি নেই বলে কোন নবীর নিকট ওহী নাযিল হয়েছে কি? আল্লাহ যদি নিজে তাঁর আনুগত্যের দাবীকে মানুষের ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করে না থাকেন তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের পরামর্শে আল্লাহকে সমাজ জীবনে অমান্য করা কি কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ কাজ হবে?

ষষ্ঠত : 
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের মধ্যে যে ব্যবধানের উল্লেখ করেন তা সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চরম অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। নিতান্তই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিজ্ঞান বিরোধী মতবাদ পোষণ করে থাকেন। মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের মাঝখানে ব্যবধানের সীমারেখাটি কোথায়? সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের ব্যক্তি জীবন সমাজ থেকে কী প্রকারে পৃথক হতে পারে?

ধর্মীয় কারণে যে ব্যক্তি সত্যবাদী সে তার সত্যবাদিতা সমাজ জীবনেই প্রয়োগ করবে। কিন্তু অপর ব্যক্তির সাথে সামাজিক জীবন যাপনের বেলায় মিথ্যুক বলে সাব্যস্ত হলে ব্যক্তিগতভাবে সত্যবাদী হওয়ার উপায় কি? ব্যক্তি জীবনে চরিত্রবান ও চরিত্রহীন হওয়ার কোন উপায় নেই। কেউ ব্যক্তি জীবনে গুন্ডা হয়েও রাজনৈতিক জীবনে সৎ হতে পারবে কি? সমাজ জীবনে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি জীবনে ধার্মিক বলে স্বীকৃত হতে পারে কি? প্রত্যেকটি মানুষই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় বিষয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত। তার জীবনে এমন কোন ব্যাপারই থাকতে পারে না যা অন্য কোন মানুষের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।

সপ্তমত :
মানুষ এমন এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীব যে, তাকে সকল বিষয়েই নিজের ভাল মন্দ বাছাই করার ঝামেলা পোহাতে হয়। অন্যসব জীবের ন্যায় তার পরিপূর্ণ বিকাশ আপনা আপনিই হতে পারে না। সুতরাং আদর্শের সন্ধান করা ছাড়া মানুষের কোন উপায় নেই। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ যখন মানুষকে আদর্শহীন করে অনিশ্চিত পথে ছেড়ে দেয় তখন তার জীবনে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তার পক্ষে আদর্শ শূণ্য অবস্থায় জীবনযাপন করা বাস্তবক্ষেত্রে অসম্ভব। ফলে এ শূন্যতাকে পূরণ করার জণ্য তার সামনে অনেক বিচিত্র ও বিপরীতমুখী আদর্শের আবির্ভাব ঘটে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক ও অন্যান্য দিকে মানুষ তখন আদর্শের সন্ধান করতে বাধ্য হয়।

প্রয়োজনের তাগিদে যখন মানুষ আদর্শ খুঁজতে থাকে, তখন বিভিন্ন চিন্তাশীল মানুষ পৃথক পৃথকভাবে বিচিত্র রকমের আদর্শ আবিস্কার করে। একই মানুষের পক্ষে মানব জীবনের সর্বদিক ও বিভাগের উপযোগী সামঞ্জস্যশীল পূর্ণাঙ্গ আদর্শ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না বলে বাধ্য হয়েই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য বিভিন্ন মানুষের রচিত আদর্শ গ্রহন করতে হয়। এমতাবস্থায় সামঞ্জস্যময় জীবন কিছুতেই সম্ভবপর হতে পারে না। একজন মুসলিম এই গোঁজামিলের আদর্শ গ্রহণ করতে পারে না। 

অষ্টমত : 
শাসন শক্তি এমন এক হাতিয়ার যা দ্বারা জনসাধারণ শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগও পেতে পারে আবার চরমভাবে নির্যাতিতও হতে পারে। যে কোন রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসকগণই রাষ্ট্রের সকল ধন-সম্পদের উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমতাবস্থায় শাসক সম্প্রদায় আল্লাহর দাসত্ব ও ধর্মের বন্ধন থেকে যদি মুক্ত হয়, বিশ্ব স্রষ্টার নিকট যদি জওয়াবদিহিতার অনুভূতি শূন্য হয় এবং আখিরাতে পুরস্কার ও শাস্তির প্রতি যদি অবিশ্বাসী হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা সুবিধাবাদী নীতি অনুসরণ করে চলবে। তাদের চরিত্র কিছুতেই নির্ভরযোগ্য হবে না।

তারা নিজেদের পার্থিব লাভ লোকসানের ভিত্তিতে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। গদি রক্ষার জন্য তারা যে কোন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হবে। আত্ম-প্রতিষ্ঠার জন্য এবং নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য তারা শাসনযন্ত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহার করবে। তাদের গোটা চরিত্র মানুষের খিদমতের জন্য নিয়োজিত না হয়ে নিজেদের খিদমতেই নিযুক্ত হবে। শুধু গণ-বিপ্লব এড়াবার জন্য এবং জনসমর্থন থেকে বঞ্চিত হবার ভয়েই তারা জনসেবা করবে। এখানেও চরম উদ্দেশ্য আপন স্বার্থ।

নবমত :
আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস যাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদের শাসন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীর শাসনে যে বিরাট পার্থক্য আছে তা যেমন যুক্তিসম্মত, তেমনি তা ঐতিহাসিক সত্য। যারা ধর্মকে বাস্তবজীবনে গ্রহণ করেছে তাদের শাসন ধর্মহীনদের শাসন থেকে স্বাভাবিকভাবেই আলাদা ধরনের হবে। এমনকি মুসলিম শাসনের দীর্ঘ ইতিহাসেও ধার্মিক এবং অধার্মিক শাসকদের যুগে জনগণের জীবনে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। শাসন ব্যক্তিই সমাজের সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও সবল শক্তি। এ বিপুল শক্তিকে একমাত্র আল্লাহ ও আখিরাতের ভয়, আল্লাহ ও রাসূলের আইন এবং ধর্মীয় অনুশাসন দ্বারাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তদুপরি জনমতও আংশিকভাবে শাসন শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের আচরণ একমাত্র জনমত দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। ফলে তারা প্রচারযন্ত্রের সাহায্যে এবং ক্ষমতার যাদুমন্ত্রে জনমতকে কলুষিত করে অনেক সময়ই অন্যায়কে ন্যায় বলে চালিয়ে দিতে পারে। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ শাসন জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার সাধনাই করে। একজন মুসলিম এমন শাসন ব্যবস্থাকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারে না। 

দশমত : 
আল্লাহ তায়ালা তাঁর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে বিশ্বমানবতার জন্য এমন এক পুর্ণাঙ্গ ও ত্রুটিহীন জীবনব্যবস্থা বাস্তবরূপে প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছেন যার ঐতিহাসিক সত্যতা অস্বীকার করা কোন পথই অবশিষ্ট নেই। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলাম যে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন বিধান পরিবেশন করেছে তা কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে আজও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। চৌদ্দশত বছরেও কুরআনের মধ্যে কোন কৃত্রিমতা অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। সর্বকালে ও সর্বদেশেই এ কুরআন মানুষকে পথপ্রদর্শন করতে সক্ষম বলে ঘোষণা করেছে। আল্লাহর দেয়া বিধানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর জীবন বিধি রচনা করা কোন কালেই সম্ভব নয় বলে কুরআন বারবার চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। কোনো মুসলিম ইসলামের বিধানের বাইরে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে গ্রহণ করার অর্থ আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। 

একাদশত :
আপনি যখন আপনার আদর্শ হিসেবে ইসলামকে চিহ্নিত না করে অন্য কিছুকে নির্দিষ্ট করবেন অথবা কোনো কিছুই নির্দিষ্ট করবেন না তখন এটা সুস্পষ্ট যে আপনি ইসলাম ও আল্লাহর বিধানের উপর আস্থাশীল নন। আপনার আস্থা ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছুতে অথবা কিছুতেই না। এর মানে আপনি শিরকে আকবরের সাথে যুক্ত। ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা আল্লাহর আইনের সাথে মনগড়া আইনকে শরীক করে। 

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ সম্বন্ধে উপরোক্ত আলোচনার পর একথা সহজে অনুমেয় যে, ইসলাম বিশ্বাসী কোন মানুষের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী থাকা স্বাভাবিক নয়। মুসলমান নাস্তিক কথাটা যেমন হাস্যকর ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমান কথাটাও তেমনি কৌতুকপ্রদ। তবু একজন অমুসলিম যে পরিমাণে ধর্মনিরপেক্ষ, সে পরিমাণ ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও একজন মুসলিম নামধারী ব্যক্তি একমাত্র নামের জোরেই মুসলিম হিসাবে পরিচিত হয়। একইসাথে তারা মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিন। আমাদের ঈমানকে আরো দৃঢ় করুন। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন