৪ জুন, ২০২০

বঙ্গকথা পর্ব-৪০ : বাংলার ইতিহাসে প্রথম নির্বাচন ও তার ফলাফল



১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত 'ভারত শাসন আইনে'র ভিত্তিতে সমগ্র ভারতের ১১টি প্রদেশে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন হয় ১৯৩৭ এর ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৩৬ সালের শেষভাগে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টো ঘোষণা করে। উভয় মেনিফেস্টোর সামাজিক পলিসি ছিল প্রায় একই রকমের। রাজনৈতিক ইস্যুতেও কেউ একে অপর থেকে বেশী দূরে অবস্থান করছিল না।

শুধু দুটি বিষয়ে উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্য ছিলো। একটি এই যে, মুসলিম লীগ ওয়াদাবদ্ধ ছিল উর্দু ভাষা ও বর্ণমালার সংরক্ষণ এবং সমৃদ্ধি সাধন করতে। পক্ষান্তরে কংগ্রেস বদ্ধপরিকর ছিল হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে। অপরটি হলো মুসলিম লীগ অটল ছিল পৃথক নির্বাচনের উপর। কিন্তু কংগ্রেস ছিল তার চরম বিরোধী। ১৯১৬ সালে কংগ্রেস পৃথক নির্বাচন মেনে নিয়ে মুসলিম লীগের সাথে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যা লক্ষ্ণৌ চুক্তি নামে খ্যাত ছিল। অনেক কংগ্রেস নেতা লক্ষ্ণৌ চুক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং এটাকে হিন্দু-মুসলিম মিলনের সেতুবন্ধন মনে করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে কংগ্রেস এ চুক্তি অমান্য করে পৃথক নির্বাচনের বিরোধিতা শুরু করে।

হিন্দু-মুসলিম মিলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কোন কথা মুসলিম লীগ মেনিফেস্টোতে ছিলনা। বরং তাদের ছিল সহযোগিতার সুস্পষ্ট আহবান। কংগ্রেস মুসলিম লীগের এ সহযোগিতার আহবান ঔদ্ধত্য সহকারে প্রত্যাখ্যান করে। কংগ্রেসের দাবী ছিল যে, সকল ভারতবাসী এক জাতি এবং ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কংগ্রেস। সুতরাং মুসলিম লীগ নামে আরেকটি সংগঠনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু ১৯৩৭ সালের নির্বাচন তাদের এ দাবিকে ভুল প্রমাণিত করে।

নির্বাচনের যে ফল প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায় সর্বমোট ১৭৭১টি প্রার্থীর মধ্যে কংগ্রেস লাভ করে মাত্র ৭০৬ টি যা অর্ধেকেরও কম। মুসলিম লীগ ৪৮২ টির মধ্যে পায় ১০৬ টি। মুসলিম লীগের ফলাফল খারাপ হলেও মুসলিমদের ফলাফল খুব একটা খারাপ হয়নি। কংগ্রেস ৬টি প্রদেশে জয়লাভ করে, ৪টি তে মুসলিমরা ও ১টি তে ননকংগ্রেস হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

এই নির্বাচনে কংগ্রেস নিজেদের একমাত্র দল হিসেবে যে দাবী করতো তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সাড়ে তিন কোটি ভোটারের মধ্যে তারা ভোট পেয়েছে দেড় কোটি। আর কোনো প্রদেশেই মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বলে এটা নিশ্চিত হয়েছে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়নি। আর এই অনৈক্যের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে দেওবন্দি আন্দোলন ও আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ। দেওবন্দি আন্দোলনের ফলে বহু মুসলিম কংগ্রেসের পক্ষাবলম্বন করেছে।

মুসলিমরা যে কয়টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা। বাংলায় ২৫০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৫৪, মুসলিম লীগ ৪০, কৃষক প্রজা পার্টি ৩৬, স্বতন্ত্র মুসলিম ৪৭, স্বতন্ত্র হিন্দু ৪২, অন্যান্য ৩১। বাংলায় মুসলিম লীগের বাইরে দলীয়ভাবে সফলতা লাভ করেছে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি। বাংলায় কোয়ালিশন ব্যতীত মন্ত্রীসভা গঠনের অন্য কোন পথ ছিলনা। অতএব ১৯৩৭ সালের এপ্রিল মাসে মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, তফসিলী সম্প্রদায় এবং স্বতন্ত্র মুসলিম ও হিন্দুদের নিয়ে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়, যার নেতা ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তিনি দশ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রীসভা গঠন করেন যার মধ্যে পাঁচজন মুসলমান এবং পাঁচজন হিন্দু ছিলেন। ফজলুল হক হিন্দু ও মুসলিমদের সহযোগে সম্প্রীতির সাথে বাংলা প্রদেশ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

ফজলুল হক কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা সহজে কাজ করতে পারেনি। কারণ কংগ্রেস পদে পদে এ মন্ত্রীসভার চরম বিরোধীতা করে। কিন্তু এর ফলে সংসদের ভেতরে ও বাইরে মুসলিম ঐক্য সংহত ও সুদৃঢ় হয়। কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পর কৃষক প্রজা পার্টি এবং মুসলিম লীগের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়। ১৮৩৭ সালের সেপ্টেম্বরে লক্ষ্ণৌতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অধিবেশনে ফজলুল হক যোগদান করে ঘোষণা করেন যে, তাঁর দলের সদস্যগণ মুসলিম লীগে যোগদান করবেন। তাঁর মন্ত্রীসভায় খাজা নাজিমুদ্দীন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্থান পেয়েছিলেন।

ফজলুল হক সাহেবের সাড়ে চার বছরের প্রধানমন্ত্রীত্ব অবিভক্ত বাংলার মুসলিম রাজনৈতিক শক্তিতে বিপ্লব এনে দেয়। তাঁর মন্ত্রীসভা জনগণের মধ্যে বিরাট আশার সঞ্চার এবং মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। তাদের এতদিনের হীনমন্যতা দূরীভূত হয় এবং হিন্দুদেরকে তারা সমকক্ষ মনে করে। সংসদে ফজলুল হক-সোহরাওয়ার্দীর ভাষন, প্রতিপক্ষের কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দান এবং তাঁদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব কংগ্রেস ও হিন্দু সহাসভা নেতৃবৃন্দের তুলনায় অধিকতর উচ্চমানের ছিল। তাঁদের প্রাণশক্তি ও প্রজ্ঞা, জ্ঞানবুদ্ধির প্রখরতা, অনর্গল বাগ্মিতা ও সাংগঠনিক যোগ্যতা এবং কঠোর পরিশ্রম ও ধীশক্তির দ্বারা তাঁরা সংসদে হিন্দু সদস্যদের উপর তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন।

বাংলার মুসলিমদের এই অগ্রগতি শুধু রাজনৈতিকভাবেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তা সাহিত্য সংস্কৃতিতেও প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্রিটিশ শাসনের সুবাদে বাংলা সাহিত্যের উপর হিন্দু কবি সাহিত্যিক তাঁদের প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিলেন। বাংলায় মুসলিমদের বিজয়ের ফলে মুসলিম সাহিত্যিকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হন। কাজী নজরুল ইসলামের, কবি জসিম উদ্দীন, গোলাম মোস্তফা, বেনজীর আহমদ প্রমুখের সাহিত্যাঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণা মুসলিমদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে তুলে। সংগীত সম্রাট আব্বাস উদ্দীনের মনমাতানো সুরে গাওয়া ইসলামী, মুর্শেদী, ভাটিয়ালী সংগীত মুসলমানদের মনে ইসলামী প্রেরণা সঞ্চার করে।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভা বাংলার সংসদীয় সরকারের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। এ সময়ে তিনি বিহার, উড়িষ্যা ও আসাম প্রদেশগুলোতে সফর করে মুসলিম লীগ সংগঠিত করেন এবং একে একটি শক্তিশালী সংগঠনে রূপান্তরিত করেন। তিনি ১৯৩৭ সালে লক্ষ্ণৌতে, ১৯৩৮ সালে করাচীতে এবং ১৯৩৯ সালে কটকে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ সম্মেলনগুলোতে ভাষণ দান করেন। ১৯৪০ সালে কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে ২২, ২৩ ও ২৪ মার্চ মুসলিম লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার ২৩শে মার্চের অধিবেশনে তিনি ঐতিহাসিক পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন।
শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ফজলুল হক তাঁর কোয়ালিশন মন্ত্রীসভায় নিজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানদের উন্নতির জন্যে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন। কলকাতায় লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ, ঢাকায় ইডেন গার্লস কলেজ, তেজগাঁওতে কৃষি কলেজ, ঢাবিতে ফজলুল হক মুসলিম হল, বরিশালে ফজলুল হক কলেজ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষায় হিন্দুদের আধিপত্য ও অধকতর হস্তক্ষেপ তিনি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রবেশিকা এবং মাধ্যমিক পরীক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। অতএব উচ্চশিক্ষার উপর তার প্রভাব ছিল শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর বিভাগ অপেক্ষা অনেক বেশী। এ প্রভাব থেকে পরীক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্যে তিনি সেকেন্ডারী এডুকেশন বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যে আইন পরিষদে একটি বিল উত্থাপনের চেষ্টা করেন। ফলে গোটা হিন্দু সম্প্রদায় ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং পারস্পরিক সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে উক্ত প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পরে এরকম সম্মিলিত প্রচণ্ড বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি।

১৯৪০ সালে কলকাতায় প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতো এক বিদ্বান ব্যক্তির সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র প্রদেশ থেকে প্রায় দশ হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এতদসত্ত্বেও তিনি উক্ত সম্মেলনে তাঁর নাম ও মর্যাদা ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করেন। সম্মেলনে তিনি যে বাণী পাঠান তার শেষাংশে বলেন, আমার বার্ধক্য এবং স্বাস্থ্য আমাকে সম্মেলনে যোগদানে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু যে বিপদ আমাদের প্রদেশের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে ভয়ানক বিচলিত করেছে। সে জন্যে আমি আমার রোগশয্যা থেকে সম্মেলনে একটি কথা না পাঠিয়ে পারলাম না।

হিন্দুদের চরম বিরোধিতার কারণে বাংলার প্রধানমন্ত্রী সেকেন্ডারী এডুকেশন বোর্ড গঠনের যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা কার্যকর করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেরে বাংলা ফজলুল হক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণযে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা এই যে, প্রদেশের সকল সরকারী চাকুরি শতকরা পঞ্চাশ ভাগ হিন্দু ও পঞ্চাশ ভাগ মুসলমান লাভ করবে। সরকারী চাকুরী ক্ষেত্রে হিন্দুদের চিরাপরিত একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার ফলে মুসলমানদের প্রতি যে চরম অবিচার করা হচ্ছিল, উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে মুসলমান শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। নিশ্চয়ই এটি ছিল মুসলিম জাতির জন্য বড় খেদমত।
বাংলা ছাড়া যে কয়টি প্রদেশে মুসলিমরা মন্ত্রীসভা গঠন করেছে তার মধ্যে ছিল পাঞ্জাব, সিন্ধু ও আসাম। পাঞ্জাবে ১৭৫টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৮, মুসলিম লীগ ১, ইউনিয়নিস্ট পার্টি ৯৫, খালসা বোর্ড ১৪, হিন্দু বোর্ড ১১, অন্যান্য ১৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসন লাভ করে।

ইউনিয়নিস্ট পার্টি ছিলো পাঞ্জাবের মুসলিমদের একটি দল যার প্রধান ছিলে সিকান্দার হায়াত খান। খালসা ন্যাশনালিস্ট শিখ দলও স্যার সেকেন্দার হায়াতের প্রতি তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করে। তাদের সহযোগে তিনি মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ১৯৪২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর মালিক খিজির হায়াত খান প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৪৫ সালে সকল প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত এ মন্ত্রীসভা বলবৎ থাকে।

সিন্ধুতে ৬০ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৮, অকংগ্রেসী হিন্দু ১৪, মুসলিম স্বতন্ত্র ৯, অন্যান্য মুসলমান দল ৭, সিন্ধু ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি ১৮, ইউরোপিয়ান ৪ জন নির্বাচিত হন।  এখানে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় কোয়ালিশন করে মন্ত্রীসভা গঠন করতে হয়। ফলে এই মন্ত্রীসভা স্থিতিশীল হতে পারেনি। ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়েই এখানে মন্ত্রীসভাগুলো চলতে থাকে। প্রথমে স্যার গোলাম হোসেন হেদায়েতুল্লাহ মন্ত্রীসভা গঠন করেন। পরে আল্লাহ বখশ ও মীর বন্দে আলী খানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীত্বের পালাবদল হতে থাকে। উল্লেখ্য সিন্ধুতে মুসলিম লীগ কোনো আসন পায়নি।

আসামে ১০৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৩৩, মুসলিম লীগ ১০, আসাম মুসলিম পার্টি ২৪, ননকংগ্রেস হিন্দু ১৪, মুসলিম স্বতন্ত্র ২৭ টি আসন লাভ করে। এখানেও কোন স্থিতিশীল সরকার গঠিত হতে পারেনি। স্যার মুহাম্মদ সা’দুল্লাহ মন্ত্রীসভা গঠন করেন এবং ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। অতঃপর গভর্ণরের আমন্ত্রণে কংগ্রেস নেতা গোপীনাথ বারদলই মন্ত্রীসভা গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গোপীনাথ মন্ত্রীসভাও পদত্যাগ করে। অতঃপর পুনরায় স্যার মুহাম্মদ সা’দুল্লাহ মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ পান। কিন্তু ১৯৪১ সালের শেষভাগে তাঁর মন্ত্রীত্বের পতন ঘটে এবং গভর্নর ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের ৯৩ ধারার বলে প্রদেশের শাসনভার নিজহস্তে গ্রহণ করেন।

বিহারে ১৫২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৯২, মুসলিম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি ২০, মুসলিম ইউনাইটেড পার্টি ৫, আহরারে ইসলাম ৩ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২ টি আসন লাভ করে। এখানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। বোম্বেতে ১৭৫টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৮৬, মুসলিম লীগ ১৮, অন্যান্য দল ২৯, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪২টি আসন লাভ করে। মধ্য প্রদেশে ১১২ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৭০, মুসলিম লীগ ৫, মুসলিম বোর্ড ৮, অন্যান্য দল ৮ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২১টি আসনে জয়লাভ করে।

মাদ্রাজে ২১৫টি আসনের মধ্যে ১৫৯টি কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ৯টি, জাস্টিস পার্টি ২১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৬টি আসন লাভ করে। উত্তর পশ্চিম প্রদেশে ৫০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৯টি, হিন্দু-শিখ কোয়ালিশন ৭টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৪টি আসন লাভ করে। উড়িষ্যাতে ৬০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৩৬টি, মুসলিম লীগ ১৪টি এবং স্বতন্ত্র ১০টি আসন পায়। সর্বশেষ যুক্তপ্রদেশে ২২৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৩৩টি, মুসলিম লীগ ২৬টি, এগ্রিকালাচারিস্টরা ২২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৭টি আসন লাভ করে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন