মদিনায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল সা.-এর সবচেয়ে দুর্বিষহ বছর গেছে ৪র্থ হিজরিতে। ৩য় হিজরির শাওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের বিপর্যয় হয়। যদিও এই বিপর্যয় হয় একটি তীরন্দাজ দলের আনুগত্যহীনতার জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা এর জন্য আল্লাহর রাসূল সা.-এর দূরদর্শিতাকে দায়ি করে। বিশেষ করে যেসব মুসলিম শুরার সিদ্ধান্ত অস্বীকার করে উহুদ যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছিল তারা জোর গলায় বলে তাদের কথা শুনলে এই বিপর্যয় হতো না। তারা এর জন্য শহীদ হামজা রা.-কে দায়ি করে। উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়ের কারণে আরবের মুশরিক সম্প্রদায়, ইহুদি ও মুনাফিকদের স্পর্ধা ও দুঃসাহস বেড়ে গিয়েছিল। তাদের মনে আশা জেগেছিল, তারা ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নির্মূল করতে সক্ষম হবে।
উহুদের পরের বছরে যেসব ঘটনা ঘটে তা থেকেই তাদের এ ক্রমবর্ধমান স্পর্ধা ও ঔদ্ধত্য অনুমান করা যেতে পারে।
উহুদ যুদ্ধের পরে দু’মাসের মাথায়ই নজদের বনী আসাদ গোত্র মদিনা ওপর আক্রমন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নবী সা. আবু সালামা রা.-এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠান। এরপর সফর মাসে আদাল ও কারাহ গোত্রদ্বয় তাদের এলাকায় গিয়ে লোকদেরকে ইসলামের শিক্ষা দেবার জন্য নবী সা.-এর কাছে কয়েকজন লোক চায়। নবী সা. ৬ জন সাহাবীকে তাদের সংগে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রাজি নামক স্থানে পৌঁছে তারা হুযাইল গোত্রের কাফেরদেরকে এ নিরস্ত্র ইসলাম প্রচারকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। তাঁদের মধ্য থেকে চারজনকে তারা হত্যা করে এবং দু’জনকে (হজরত খুবাইব ইবনে আদী রা. ও হযরত যায়েদ ইবনে দাসিন্নাহ রা.) নিয়ে মক্কায় শত্রুদের হাতে বিক্রি করে দেয়। তাদেরকে আবু সুফিয়ান রা. এর নেতৃত্বে কুরাইশরা নির্মমভাবে হত্যা করে।
রাজির ঘটনার কিছুদিন পর ঘটে বিরে মাউনার ঘটনা। বনু আমের গোত্রের এক সরদারের আবেদনক্রমে মুহাম্মদ সা. আরো একটি প্রচার দল পাঠান। এ দলে ছিলেন ৭০ জন আনসারি যুবক। তাঁরা নজদের দিকে রওনা হন। কিন্তু বিরে মাউনা নামক স্থানে পৌঁছালে তাদের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। বনী সুলাইমের ‘উসাইয়া, বি’ল ও যাক্ওয়ান এই তিনটি গোত্র বিরে মাঊনাহ নামক স্থানে অকস্মাত তাদেরকে ঘেরাও করে সবাইকে হত্যা করে ফেলে।
এই ঘটনার রেশ ধরে মদিনার বনী নাদির নামক ইহুদি গোত্র সাহসী হয়ে ওঠে এবং একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভংগ করতে থাকে। তারা আল্লাহর রাসূল সা.-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এর প্রেক্ষিতে রাসূল সা. তাদের অবরোধ করেন এবং মদিনা থেকে বের করে দেন। এরপর জমাদিউল আউয়াল মাসে বনু গাত্ফানের দু’টি গোত্র বনু সা’লাবাহ ও বনু মাহারিব মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি চালায়। তাদের গতিরোধ করার জন্য স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই তাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয়। যাতুর রিকা নামক স্থানে তিনি বনু গাতফানকে প্রতিহত করেন। এভাবে উহুদ যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে মুসলমানদের ভাবমূর্তি ও প্রতাপে যে ধ্বস নামে, ক্রমাগত সাত আট মাস ধরে তার আত্মপ্রকাশ হতে থাকে।
এখানে এই ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষনে দেখা যায় ৪র্থ হিজরিতে আল্লাহর রাসূল সা. ও মুসলিমদের বেশি কষ্ট দিয়েছে মুসলিমদের মিত্র গোষ্ঠী ইহুদীরা এবং মুসলিমদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মুনাফিকেরা। রাজির ঘটনা ও বিরে মাউনার ঘটনায় মুনাফিকরা শহীদ পরিবারদের উস্কে দেয়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সিন্ধান্ত ভুল ছিল, তিনি দূরদর্শী ছিলেন না, তার কাছে মুসলিমদের জান মালের নিরাপত্তা নেই এমন অভিযোগ আনতে থাকে। মোট কথা আল্লাহর রাসূল সা. তাদের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ এই বিষয়টা তারা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে মদিনার ইহুদি গোত্রগুলো যাদের সাথে মুসলিমরা মদিনা সনদের চুক্তির মাধ্যমে মিত্র হয়েছে তারা মুহাম্মদ সা.-এর শক্তি খর্ব হয়েছে ভেবে নিয়েছে। তাই তারা একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতা করে আল্লাহর রাসূল সা.-কে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
কিন্তু মুহম্মাদ সা.-এর বিচক্ষণতা এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবন উৎসর্গের জজবায় মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই আবস্থার গতি পাল্টে দেয়। আরবদের অর্থনৈতিক বয়কট মদীনাবাসীদের জন্য জীবন ধারণ কঠিন করে দিয়েছিল। আশেপাশের সকল মুশরিক গোত্র হিংস্র ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিল। মদীনার মধ্যেই ইহুদী ও মুশরিকরা ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে উঠছিল। কিন্তু এ মুষ্টিমেয় সাচ্চা মু’মিনগোষ্ঠী আল্লাহর রসূলের নেতৃত্বে একের পর এক এমন সব পদক্ষেপ নেয় যার ফলে ইসলামের প্রভাব প্রতিপত্তি কেবল বহাল হয়ে যায়নি বরং আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়।
উহুদ যুদ্ধে আবু সুফিয়ান রা.-এর বাহিনী মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়ে পিছু হটে। মুসলিম তীরন্দাজরা তাদের পাহারা ছেড়ে দিলে সেই পথে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. পাল্টা আক্রমণ করে মুসলিমদের ওপরে। এতে মুসলিমরা বিপর্যস্ত হয়। কিন্তু অজানা কারণে খালিদ মক্কার দিকে ফিরে যায়। এরপর আবু সুফিয়ান রা. আবারো মুসলিমদের হত্যা করে মদিনা আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসেন। মুহাম্মদ সা. ভায়ানক আহত অবস্থায় থেকেও অনুমান করতে পারেন মুশরিক বাহিনী আবারো আসবে আক্রমণ করার জন্য। তাই তিনি আবু সালামা রা.-এর নেতৃত্বে তৎক্ষণাৎ ১৫০ জনের একটি বাহিনী তৈরি করে মক্কার দিকে ধাওয়া দিতে বলেন। আবু সুফিয়ান যখন পুনরায় সংগঠিত হয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনই দেখলেন মুসলিম বাহিনী উড়ে আসছে। তখন তারা মাল সামানা ছাড়াই পালিয়ে গেল। যাওয়ার আগে ঘোষণা দিয়ে গেল আগামী বছর একই সময়ে বদরের মাঠে আমরা আবার মিলিত হবো।
আল্লাহর রাসূল সা. এতো ঝামেলার ও বিপর্যয়ের মধ্যেও ৪র্থ হিজরির সফর মাসে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তিনি বদরে তার সাহাবীদের নিয়ে অবস্থান নিলেন। আটদিন সেখানে আবু সুফিয়ান রা.-এর জন্য অপেক্ষা করলেন। কিন্তু মুশরিক নেতা আবু সুফিয়ান নিজের চ্যালেঞ্জে নিজেই হেরে গেলেন। তিনি যুদ্ধ করতে আসলেন না। এই ঘটনা এবং তার আগের গাতফানদের তাড়িয়ে দেওয়া ও বনু নাদিরকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করে দেওয়ার ঘটনা মুসলিমদের প্রভাব বাড়িয়ে দেয় ও আল্লাহর রাসূল সা.-এর দক্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত তৈরি হয়।
আহযাব যুদ্ধের পটভূমি :
এরপরই শুরু হয় ইহুদিদের ষড়যন্ত্র। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জোট গঠন করে। খন্দকের যুদ্ধের আরেক নাম আহযাবের যুদ্ধ বা জোটের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের জন্য একটি সূরার নাম করা হয় সূরা আহযাব। ৬২৭ সালের শুরুর দিকে বনু নাদির ও বনু ওয়াইল গোত্রের একটি সম্মিলিত প্রতিনিধিদল মক্কার কুরাইশদের সাথে সাক্ষাত করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বনু নাদিরের সালাম ইবনে আবু হুকাইক, হুয়াই ইবনে আখতাব, কিনানা ইবনে আবুল হুকাইক এবং বনু ওয়াইলের হাওজা ইবনে কায়েস ও আবু আম্মার। তারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য কুরাইশদের উদ্বুদ্ধ করে এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা যুক্তি দেখায় যে কুরাইশরা মুসলিমদেরকে উহুদের পর পুনরায় বদরে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পালন করতে না পারায় যোদ্ধা হিসেবে কুরাইশদের সম্মান নষ্ট হয়েছে। কুরাইশরা তাদের প্রস্তাব মেনে নেয়।
কুরাইশদের সাথে সাক্ষাতের পর তারা নজদের বিভিন্ন গোত্রের সাথে সাক্ষাত করে। বনু গাতাফান গোত্রের কাছে গিয়ে তাদেরকেও যুদ্ধের জন্য রাজি করায়। পাশাপাশি তারা অন্যান্য গোত্রগুলির কাছে গিয়েও যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। মদিনায় অবশিষ্ট ইহুদি গোত্র বনু কুরাইজার সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু বনু কুরাইজার নেতারা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম হয়নি। এদিকে কুরায়েশরাও এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে সারা আরবে আলোড়ন সৃষ্টি করলো এবং আরো কিছু গোত্রকে সংগঠিত করে নিলো। পুরো জোটের নেতা নির্বাচিত হলেন আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব। গাতফান গোত্রের নেতা নির্বাচিত হলো উয়াইনা ইবনে হাসান ইবনে বদর। এভাবে নানাবিধ চেষ্টা চালিয়ে তারা দশ হাজার যোদ্ধা একত্রিত করলো এবং মদীনার দিকে ধাওয়া করলো।
মুসলিমদের প্রস্তুতি :
এদিকে রাসূলুল্লাহ সা. এ সংবাদ পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীদের নিয়ে পরামর্শ সভা করলেন। সভায় বদরের মত খোলা ময়দানে লড়াই এবং উহুদের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শহরের ভেতর থেকে প্রতিরক্ষা উভয় প্রকার মতামত উঠে আসে। সালমান ফারসি পারস্যে থাকাকালীন অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে পরিখা খনন করে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণের মত দেন। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত এই মত গৃহিত হয়। প্রতি দশজন ব্যক্তির উপর ৪০ হাত পরিখা খননের দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরিখা দ্রুত তৈরীর জন্য হযরত মুহাম্মদ সা.-সহ মদিনার প্রতিটি সবল পুরুষ এই খননকার্যে যোগ দিয়েছিলেন। এই সময় পরিখা খনন কাজ দ্রুত হওয়ার জন্য মুসলিমরা সারা দিনের নামাজ একসাথে পড়েছেন। শুধুমাত্র শহরের উত্তর অংশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। মদিনার বাকি অংশ পাথুরে পর্বত ও গাছপালা আবৃত হওয়ার কারণে সুরক্ষিত ছিল। নারী ও শিশুদেরকে শহরের ভেতরের দিকে প্রেরণ করা হয়। যুদ্ধকালীন অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে মদিনার দায়িত্ব দেয়া হয়। আর আল্লাহর রাসূল সা. যুদ্ধের নেতৃত্বে থাকেন।
সালা পাহাড়কে পেছনে রেখে মুসলিমদের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করা হয় এবং সেনারা সেখানে জমায়েত হয়। প্রতিপক্ষ পরিখা অতিক্রম করতে সফল হলে এই অবস্থান মুসলিমদেরকে সুবিধা প্রদান করতো। শহর রক্ষার জন্য গঠিত বাহিনীতে সৈনিক ছিল ৩,০০০।
বনু কুরাই্জার বিশ্বাসঘাতকতা :
আবু সুফিয়ান বাহিনী মদিনাকে ঘিরে ফেলে। মুসলিম বাহিনী যখন মদিনার উত্তর দিকে সম্মিলিত বাহিনীকে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত তখন দক্ষিণ দিক থেকে মুসলিমদের ওপর আক্রমণের ষড়যন্ত্র করে ইহুদিরা। বহিষ্কৃত বনু নাদির গোত্রের নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব জোটের পক্ষে ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বনু কুরাইজার কাছে সহায়তা চান। হুয়াই ইবনে আখতাব বনু কুরাইজার এলাকায় যাওয়ার পর কুরাইজা নেতা কাব ইবনে আসাদ দরজা বন্ধ করে দেন। হুয়াই বুঝতে পেরে ফোঁড়ন কেটে বলেন যে, তিনি খেতে চান মনে করে কাব দরজা বন্ধ করেছেন। একথা শুনে কাব বিব্রত বোধ করে তাকে ভেতরে আসতে দেন। বনু কুরাইজা প্রথমে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছিল এবং মদিনা সনদে তারা সম্মতি দিয়েছিল বলে জোটে যোগদানের ব্যাপারে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে চায়নি।
হুয়াই জানান যে অন্যান্য গোত্রগুলি মুসলিমরা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যাবে না এমন অঙ্গীকার করেছে। জোটের ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে ও তাদের সংখ্যা ও শক্তির কারণে বনু কুরাইজা নিজের মত বদলায় এবং জোটে যোগ দেয়। এর ফলে মুসলিমদের সাথে বনু কুরাইজার চুক্তি ভঙ্গ হয়ে যায়। নিশ্চয়তা হিসেবে হুয়াই অঙ্গীকার করেন যে কুরাইশ ও গাতাফানরা যদি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা না করে ফিরে যায় তবে তিনি কুরাইজার দুর্গে প্রবেশ করবেন এবং কুরাইজার ভাগ্যে যাই ঘটুক না কেন তিনি নিজেও সেই পরিণতি বরণ করবেন।
কুরাইজার এই চুক্তিভঙ্গের কথা হযরত মুহাম্মাদ সা. জানতে পারেন। তাদের এরূপ কর্মকাণ্ডের ফলে তিনি শঙ্কিত হন। মদিনা সনদ অনুযায়ী বনু কুরাইজার ইহুদিরা মুসলিমদের মিত্র ছিল তাই তাদের এলাকার দিকে মুসলিমরা কোনো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। হযরত মুহাম্মাদ সা. প্রকৃত খবর সংগ্রহের জন্য সাহাবি সাদ বিন মুয়াজ, সাদ বিন উবাদা, আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা ও খাওয়াত বিন জুবায়েরকে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের বলেন যে বনু কুরাইজা যদি মিত্রতা বহাল রাখে তবে তা যেন প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয় যাতে মুসলিম সৈনিকদের মনোবল বজায় থাকে। কিন্তু মনোবল হ্রাসের আশঙ্কা থাকায় সম্ভাব্য চুক্তি লঙ্ঘনের সংবাদ ইঙ্গিতে তাকে জানানোর নির্দেশ দেন।
প্রেরিত সাহাবিরা বনু কুরাইজার দুর্গে গিয়ে দেখতে পান তারা আল্লাহর রাসুল সা.-কে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বনু কুরাইজা প্রতিনিধি দলের কাছে চুক্তি লঙ্ঘন ঘোষণা দিয়েছে। কুরাইজার লোকেরা শত্রুতা প্রদর্শন করে বলে যে মুহাম্মাদ সা.-এর সাথে তাদের কোনো চুক্তি হয়নি। রাজির ঘটনার আদাল ও কারাহ গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার কথা অনুসারে প্রতিনিধি দল মুহাম্মদ সা.-এর কাছে এসে শুধু বলেন আদাল ও কারাহ। এতে রাসূল সা. বুঝে যান, ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এতে মুসলিমদের মনোবল নষ্ট হয়। এই প্রসঙ্গে সূরা আহযাবের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
// যখন তারা তোমাদের ওপর দিক থেকে এবং তোমাদের নিম্ন দিক থেকে তোমাদের ওপর আক্রমণ করেছিল, এবং যখন তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল, প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা করতে শুরু করেছিলে।//
এখানে আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের দূরাবস্থার কথা প্রকাশ করেন। চারদিক থেকে আক্রমণের শিকার হয়ে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এছাড়া মুসলিমদের সাথে মুনাফিকরা তো ছিলই। তারাও মনোবল ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত ছিল। অনেকেই আসন্ন পরাজয় দেখে আল্লাহর রাসূলের প্রতি ও আল্লাহর প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়েছে।
আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা. ও মুসলিমদের কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়ে পরীক্ষা করলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি ১১ নং আয়াতে বলেন,
// তখন মু’মিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।//
একইসাথে আল্লাহ তায়ালা সেসময় মদিনায় থাকা মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন সূরা আহযাবের ১১-২০ নং আয়াতে। মুনাফিকদের সম্পর্কে তিনি ১২-১৩ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
//আর যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে তারা বলেছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর স্মরণ করো! যখন তাদের মধ্য থেকে এক দল বলেছিল: হে ইয়াসরিববাসী! এখানে তোমাদের কোন স্থান নেই, অতএব তোমরা ফিরে যাও আর তাদের মধ্যে এক দল নবীর কাছে অব্যাহতি চেয়ে বলেছিল, আমাদের বাড়ি-ঘর অরক্ষিত। প্রকৃতপক্ষে তা অরক্ষিত ছিল না। বরং তাদের পালাবারই ইচ্ছা ছিল।//
মুনাফিকরা আল্লাহর রাসূল সা.-কে প্রতারক বলেছিল। তারা ভয় পেয়ে যুদ্ধ থেকে পালানোর অজুহাত খুঁজে বের করেছে। তারা মুসলিমদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে মুসলিমদের কাবু করতে চেয়েছে এবং আগের জাহেলি ধর্মে ফিরে যেতে চেয়েছে।
এরপর আল্লাহ তায়ালা ১৪ নং আয়াতে বলেন, // আর যদি শত্রুরা নগরীর চারদিক থেকে প্রবেশ করে কুফরীর জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করত, তবে তারা তৎক্ষণাৎ তাই করত; এবং তারা সেথায় খুব অল্পই বিলম্ব করত।//
যদি আবু সুফিয়ান বাহিনী মদিনায় প্রবেশ করতো তবে তারা সবাই কাফের হয়ে যেত।
১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, //অথচ এরাই পূর্বে আল্লাহর সাথে শপথ করেছিল যে, তারা পিছু হটে ফিরে যাবে না। অবশ্যই আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারের জবাবদিহি করতেই হবে তাদেরকে।//
তারপর নবী সা.-কে উদ্দেশ করে আল্লাহ ১৬-১৭ নং আয়াতে বলেন, //তুমি বলে দাও, তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পালায়ন করো, তবে পলায়ন তোমাদের কোনই উপকারে আসবে না এবং তখন তোমাদেরকে অল্পই ভোগ করতে দেয়া হবে। আরো বলে দাও সে কে, যে তোমাদেরকে আল্লাহর (শাস্তি) থেকে রক্ষা করতে পারে, যদি তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদের কোন ক্ষতি করতে? অথবা (সে কে, যে রোধ করতে পারে তাঁর অনুগ্রহকে,) যদি তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন? আর তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের জন্য কোন বন্ধু ও কোন সাহায্যকারী পাবে না।//
তাদের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ ১৯ নং আয়াতে বলেন, //তারা তোমাদের প্রতি কার্পণ্য করে। আর যখন কোন ভয়ের কারণ সামনে আসে, তখন তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির ন্যায় চোখ উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকায়। অতঃপর যখন সে ভয় চলে যায়, তখন তারা ধন-সম্পদের লোভে তীব্র ভাষায় তোমাদেরকে আক্রমণ করে। তারা ঈমান আনেনি। অতএব আল্লাহ তাদের কার্যসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আর এরূপ করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।//
অর্থাৎ তারা যুদ্ধের সময় দানের ক্ষেত্রে খুব দান করবে। মুসলিমরা যখন যুদ্ধের মুখোমুখি তারা তারা অচেতন ব্যাক্তির মতো চোখ উল্টিয়ে যুদ্ধ থেকে পালাতে চাইবে। কিন্তু যখন যুদ্ধ জয় হবে তখন গনিমতের সম্পদ পাবার ক্ষেত্রে তাদের দাবি খুব উচ্চস্বরে করবে। সেক্ষেত্রে মুসলিমদের আক্রমণ করবে।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের ২১-২৪ নং আয়াতে মুমিনদের কথা বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২৩ নং আয়াতে বলেন, //মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি//
আল্লাহর রাসূল সা.-এর কূটনীতিক পদক্ষেপ :
হযরত মুহাম্মদ সা. বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতার কথা গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বনু কুরাইজার দিক থেকে মদিনার উপর আক্রমণ আসবে দ্রুত এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য হযরত মুহাম্মদ সা. কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেন। প্রথমে নারী ও শিশুদের রক্ষার জন্য শহরের ভেতরের দিকে ১০০ জন সেনা প্রেরণ করা হয়। এরপর আরো ৩০০ অশ্বারোহী প্রেরণ করা হয়। তারপর তিনি তার কূটনৈতিক পদক্ষেপ শুরু করেন। তিনি জোটের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চেয়েছেন যাতে তাদের মনোবল দূর্বল হয়।
প্রথমে রাসূল সা. বনু গাতাফানদের দুই নেতা উয়াইনা বিন হিসন ও হারিস বিন আউফের কাছে বার্তা পাঠান। সেখানে উল্লেখ করেন, তারা যদি জোট বাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করলে মদিনায় উৎপন্ন খেজুরের এক তৃতীয়াংশ তাদের দেয়া হবে। তারা এই শর্তে সন্ধিতে রাজি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে তিনি সাদ ইবনে মুয়াজ ও সাদ বিন উবাদার কাছে তাদের পরামর্শ চান। তারা জানান যে যদি এটি আল্লাহর নির্দেশ হয় তবে তাদের আপত্তি নেই কিন্তু যদি মদিনাবাসীর দুরবস্থার কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নেয়া হয় তবে তার প্রয়োজন নেই। হযরত মুহাম্মদ সা. জানান যে সমগ্র আরব অস্ত্র ধারণ করেছে বলে তিনি তাদের জন্যই এই পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন। অভিজ্ঞ সাহাবীরা নিষেধ করায় তিনি এ বিষয়ে আর আগান নি।
এই অবস্থায় হযরত মুহাম্মদ সা. নুয়াইম ইবনে মাসুদ রা.-কে গোপনে ডেকে পাঠান। তিনি ছিলেন গাতফানের একজন নেতা ও জোটবাহিনীর কাছে সম্মানিত। তিনি মুসলিম ছিলেন তবে ছিল গোপন। আল্লাহর রাসূল সা. তাকে জোট ভাঙার দায়িত্ব দেন যাতে তারা পরস্পরের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে।
নুয়াইম রা. এরপর একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেন। তার সাথে বনু কুরাইজার সুসম্পর্ক ছিল। তাই তিনি প্রথমে বনু কুরাইজার কাছে যান এবং জোটের বাকিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের সতর্ক করেন। তিনি তাদের বলেন বনু কুরাইজার সাথে কুরাইশ ও গাতাফানের পরিস্থতির কোনো মিল নেই। এখানে দুই গোত্রের ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ বলতে কিছু নেই। তারা তাদের স্বার্থ দেখলে গ্রহণ করবে আর না দেখলে চলে যাবে। কিন্তু এই এলাকা বনু কুরাইজার নিজস্ব, যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন তাদেরকে এখানেই থাকতে হবে এবং যদি তারা মুসলিমদের শত্রুর সাথে হাত মেলায় তবে অবশ্যই মুসলিমরা এর প্রতিশোধ নেবে। এই কথা শোনার পর বনু কুরাইজা ভীত হয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চায়। নুয়াইম রা. মত দেন যে যতক্ষণ কুরাইশদের মধ্য থেকে কিছু লোককে জামিন হিসেবে বনু কুরাইজার জিম্মায় না দেয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত যাতে তাদের সহায়তা করা না হয়।
এরপর নুয়াইম রা. কুরাইশদের শিবিরে যান। তিনি বলেন যে ইহুদিরা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে লজ্জিত। তাই তারা কুরাইশদের কিছু লোককে জামিন হিসেবে গ্রহণ করে মুসলিমদের সমর্পণ করতে চায় যাতে অঙ্গীকার ভঙ্গের ক্ষতি পূরণ হয়। তাই ইহুদিরা যদি জামিন হিসেবে কিছু লোক চায় তবে তা যাতে মেনে নেয়া না হয়। নুয়াইম একইভাবে বনু গাতাফানের কাছে গিয়ে একই বার্তা দেন।
নুয়াইম রা.-এর কৌশল কার্যকর প্রমাণিত হয়। আলোচনার পর কুরাইশ নেতারা বনু কুরাইজার নিকট বার্তা পাঠিয়ে জানায় যে তাদের নিজেদের অবস্থা প্রতিকূল। উট ও ঘোড়াগুলিও মারা যাচ্ছে। তাই যাতে দক্ষিণ দিক থেকে বনু কুরাইজা এবং উত্তর দিক থেকে জোট বাহিনী আক্রমণ করে। কিন্তু এসময় শনিবার ছিল বিধায় ইহুদিরা জানায় যে এই দিনে কাজ করা তাদের ধর্মবিরুদ্ধ এবং ইতিপূর্বে তাদের পূর্বপুরুষদের যারা এই নির্দেশ অমান্য করেছিল তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়। তাছাড়া কুরাইশ পক্ষের কিছু লোককে জামিন হিসেবে বনু কুরাইজার জিম্মায় না দেয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধে অংশ নেবে না। এর ফলে কুরাইশ ও গাতাফানরা নুয়াইমের কথার সত্যতা পায় এবং জামিন হিসেবে লোক প্রেরণের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ফলে কুরাইশ ও গাতাফানের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে কুরাইজাও নুয়াইমের কথার সত্যতা পেয়ে শঙ্কিত হয়। ফলে জোটে ভাঙ্গন ধরে যায়। সবাই সবার প্রতি সন্দেহ পোষণ করতে থাকে।
কুরাইশ বাহিনীর পরাজয় :
আবু সুফিয়ানের বাহিনী প্রায় একমাস ধরে অবরোধ অব্যাহত রাখলো মদিনার উত্তর দিকে। যদিও মুশরিকরা খন্দক অতিক্রম করতে সক্ষম হলো না তবে তারা মাসাধিককাল ধরে মুসলমাদেরকে ঘিরে বসে থাকলো। এতে মুসলমানরা ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লো। আমর ইবনে আবদে উদ, যে ছিল আরবের বিখ্যাত বীর পুরুষ, সেনাপতিত্ব বিষয়ে যে ছিল অদ্বিতীয়, একবার সে নিজের সাথে কয়েকজন দুঃসাহসী বীরপুরুষকে নিয়ে সাহস করে অশ্বচালনা করলো এবং খন্দক পার হয়ে গেল। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সা. নিজের অশ্বারোহীদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু তাদের প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তাদেরকে তিনি প্রস্তুত না পেয়ে হযরত আলী রা.-কে তাদের মুকাবিলা করার নির্দেশ দিলেন। অল্পক্ষণ ধরে উভয় পক্ষের বীরপুরুষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলতে থাকলো। অবশেষে হযরত আলী রা. শত্রুদেরকে তরবারীর আঘাতে হত্যা করে ফেললেন। এতে মুসলমানরা খুবই খুশি হলো এবং তাঁদের সাহস ও উৎসাহ বেড়ে গেল।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে ভীষণ বেগে ঝড় তুফান ও ঘূর্ণিবার্তা প্রবাহিত হতে শুরু করলো। এর ফলে কাফিরদের সমস্ত তাঁবু মূলোৎপাটিত হলো। কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। অগ্নি জ্বালানো কঠিন হয়ে গেল। কোন আশ্রয়স্থল তাদের দৃষ্টিগোচর হলো না। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের ৯ নং আয়াতে বলেন,
//হে মুমিনগণ, তোমরা স্মরণ করো! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে। যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের ওপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের ওপর প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচণ্ড বায়ু এবং এমন এক সৈন্যদল যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখেন।//
সেই রাতের বর্ণনা দেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা.। তিনি বলেন, “আমার মামা হযরত উসমান ইবনে মাযউন রা. খন্দকের যুদ্ধের রাত্রে কঠিন শীত ও প্রচণ্ড বাতাসের সময় খাদ্য ও কম্বল আনার জন্যে আমাকে মদিনায় প্রেরণ করেন। ভীষণ জোরে বাতাস বইতেছিল। বাতাস আমার ঢালে ধাক্কা দিচ্ছিল এবং আমি তাতে আঘাত পাচ্ছিলাম। এমনকি ঢাল থেকে লোহা খুলে আমার পায়ে পড়ে গেল। আমি ওটাকে ফেলে দিয়ে চলে গেলাম।
এই ভয়ংকর অবস্থায় আবু সুফিয়ান দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে সকলকে সম্বোধন করে বললেন, হে কুরায়েশের দল! আল্লাহর কসম, আমাদের আর কোথাও দাঁড়াবার স্থান নেই। আমাদের গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুগুলো এবং আমাদের উটগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বনু কুরাইজা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা আমাদেরকে খুব কষ্ট দিয়েছে। অতঃপর এই ঝড়ো হাওয়া আমাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। আমরা রান্না করে খেতে পারছি না। তাঁবু ও থাকার স্থান আমরা ঠিক রাখতে পারছি না। তোমরা বিরক্ত হয়ে উঠেছে। আমি তো ফিরে যাবার কথা চিন্তা করছি। আমি তোমাদের সকলকেই ফিরে যাবার নির্দেশ দিচ্ছি।” এ কথা বলেই পাশে যে উটটি বসিয়ে রাখা হয়েছিল তার উপর তিনি উঠে বসলেন।
খন্দকের যুদ্ধ বা আহযাবের যুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়াই পরাজয় হলো সম্মিলিত জোট বাহিনীর।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন