১৪ অক্টো, ২০২০

বঙ্গকথা পর্ব-৫৫ : আইয়ুব খান ও তার মৌলিক গণতন্ত্র


আইয়ুব খানের জন্ম হয়েছিলো ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হরিপুর জেলায়। ১৯২৬ সালে তরুণ আইয়ুব ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা গড়ার কারিগর 'রয়েল মিলিটারি কলেজ' তে অধ্যায়ন করার সুযোগ পেয়ে যান যেটি ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের স্যান্ডহার্স্টে অবস্থিত ছিলো। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আইয়ুব দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইয়ুব কর্নেল ছিলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে আইয়ুব নবগঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে, তার সার্ভিস নম্বর ছিলো পিএ-১০। 


স্বাধীন পাকিস্তানে আইয়ুব প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োগ পেয়েছিলেন ১৪তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবে, এরপর খুব দ্রুত উপরে ওঠেন তিনি; ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন আইয়ুব। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; আইয়ুব এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইস্কান্দার মির্জার জারি করা সামরিক আইনের পক্ষে ছিলেন। ইস্কান্দার মির্জাই মূলত আইয়ুব খানের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপতিত্ব নিশ্চিত করেছিলেন।


আইয়ুব দেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদে জেনারেল মুহাম্মদ মুসা খানকে নিযুক্ত করেছিলেন। আইয়ুব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার করা সহ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে মনোযোগ দিয়েছিলেন। আইয়ুব তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি পেশোয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি বিমান ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর বৈমানিকেরা বিমান চালাতো এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে তারা অনেক সাহায্য করেছিলো। ভারতকে রুখতে গিয়ে চীনের সঙ্গেও আইয়ুব সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, ১৯৬২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক চরম বৈরিতার দিকে যায় যে বছরে ভারত চীনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলো। 


১৯৬৫ সালে আইয়ুব সরকার ভারতের সঙ্গে একটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা করেছিলো যেটি ঐতিহাসিকভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ নামে পরিচিতি পেয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির একজন গোঁড়া সমর্থক আইয়ুব পাকিস্তানেও যুক্তরাষ্ট্রর মত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন।


আইয়ুব খান জনগণের দাবির মুখে ক্ষমতা দখল করেন। স্বভাবতই তার ওপর প্রত্যাশার চাপ ছিল। তিনি পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো প্রস্তুত করেছেন। এই কাঠামো প্রস্তুতের মূল কারণ হলো পকিস্তানের রাজনীতিবিদেরা শাসনতন্ত্র তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তিনি গণতন্ত্রের নতুন একটি সংস্করণ প্রস্তুত করালেন। এর নাম দিলেন বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্র।  


পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান একটি নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ ১৯৫৯ জারি করেন। মৌলিক গণতন্ত্র ছিল একটি পাঁচ স্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থা। নিম্ন থেকে শুরু করে এ স্তরগুলো ছিল 

(১) ইউনিয়ন পরিষদ (পল্লী এলাকায়) এবং শহর ও ইউনিয়ন কমিটি (পৌর এলাকায়), 

(২) থানা পরিষদ 

(৩) জেলা পরিষদ 

(৪) বিভাগীয় পরিষদ 

(৫) প্রাদেশিক উন্নয়ন উপদেষ্টা পরিষদ


একজন চেয়ারম্যান এবং  ১৫ জন সদস্য নিয়ে একেকটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হতো। এতে নির্বাচিত এবং মনোনীত উভয় ধরনের সদস্যই থাকতেন। পরিষদের সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন নির্বাচিত এবং এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন মনোনীত সদস্য, যারা সরকার কর্তৃক নিয়োজিত হতেন। তবে, ১৯৬২ সালের এক সংশোধনী দ্বারা মনোনয়ন প্রথা বিলোপ করা হয়। ফলে পরিষদের সদস্যবৃন্দ প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে স্ব স্ব ইউনিয়নের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরোক্ষভাবে সদস্যদের দ্বারা তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হতেন। এক দিক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ছিল পূর্বেকার ইউনিয়ন বোর্ডেরই অনুরূপ, তবে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বলা হতো মৌলিক গণতন্ত্রী। সারা পাকিস্তানে সর্বমোট ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ছিল ৭৩০০।


সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিনিধি নিয়ে দ্বিতীয় স্তরের থানা পরিষদ গঠিত হতো। বেসরকারি প্রতিনিধি নিজেরা ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহর কমিটির চেয়ারম্যান। সরকারি সদস্যবৃন্দ দেশ গঠনমূলক কাজে থানার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতেন এবং এদের সংখ্যা নির্ধারণ করতেন সংশ্লিষ্ট জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট। তবে সরকারি সদস্যদের সর্বমোট সংখ্যা কোনোক্রমেই  বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যার চেয়ে বেশি হতে পারত না। থানা পরিষদের প্রধান থাকতেন মহকুমা অফিসার (এসডিও), যিনি পদাধিকারবলে থানা পরিরষদের চেয়ারম্যান হতেন। মহকুমা অফিসারের অনুপস্থিতিতে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) পদাধিকারবলে থানা পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করতেন। পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষেত্রে থানাকে তহসিল বলে অভিহিত করা হতো এবং তহসিলের সভায় সভাপতিত্ব করতেন তহশিলদার। তখন পাকিস্তানে মোট ৬৫৫টি থানা ও তহশিল ছিল।


তৃতীয় স্তরে ছিল জেলা পরিষদ। একজন চেয়ারম্যান এবং সরকারি ও বেসরকারি সদস্যদের নিয়ে এ পরিষদ গঠিত হতো। সদস্যদের সংখ্যা ৪০-এর বেশি হতো না। সকল থানা পরিষদের চেয়ারম্যানই সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের সদস্য থাকতেন এবং উন্নয়ন বিভাগের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে অন্যান্য সরকারি সদস্য মনোনীত হতেন এবং সমান সংখ্যক সদস্য মনোনীত হতেন বেসরকারি সদস্যদের মধ্য থেকে। মনোনীত সদস্যদের অন্তত অর্ধাংশ মনোনীত হতেন ইউনিয়ন পরিষদ ও শহর কমিটির চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পদাধিকারবলে এ পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন এবং পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান কর্তৃক তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেন ভাইস-চেয়ারম্যান। পাকিস্তানে ৭৪টি জেলা পরিষদ ছিল। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ছিল জেলা পরিষদ। এটি ছিল ইংরেজ আমলের জেলা বোর্ডের উত্তরসূরী প্রতিষ্ঠান। 


চতুর্থ ও শীর্ষ স্তর ছিল বিভাগীয় পরিষদ। বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকারবলে এ পরিষদের চেয়ারম্যান থাকতেন। এতে সরকারি ও বেসরকারি  উভয় ধরনের সদস্য ছিলেন। সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য ছিলেন ৪৫ জন। সরকারি সদস্য ছিলেন বিভাগের অন্তর্গত সকল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সরকারি উন্নয়ন বিভাগের প্রতিনিধিবর্গ। সর্বমোট বিভাগীয় পরিষদের সংখ্যা ছিল ১৬।


মৌলিক গণতন্ত্র আদেশবলে যে পাঁচটি পরিষদ সৃষ্টি করা হয় তাদের মধ্যে শুধু দু’টি পরিষদ অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বিভাগীয় পরিষদ এবং থানা পরিষদ প্রধানত সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করত। ইউনিয়ন পরিষদ বিভিন্ন ধরনের কার্যে নিয়োজিত থাকতো, যেমন  ইউনিয়নের কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, সমাজ উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশবাহিনীর দ্বারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতো এবং সেখানকার সালিসি কোর্টের মাধ্যমে ছোটখাটো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করতো। গ্রামের রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ, জমিতে জলসেচ ব্যবস্থা, বাঁধ নির্মান প্রভৃতি কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বভারও ন্যস্ত ছিল ইউনিয়ন পরিষদের উপর। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদকে কর ধার্য ও আদায় এবং মূল্য, টোল ও ফি আদায়ের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। 


থানা পরিষদ পরিষদ মূলত একটি সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানমূলক সংগঠন। থানা পরিষদ তার আওতাধীন সকল ইউনিয়ন পরিষদ ও শহর কমিটির কার্যক্রমের সমন্বয় বিধান করত। থানা পরিষদই চলতি প্রকল্পসমূহ তত্ত্বসাধনসহ ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহর কমিটির প্রণীত সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার সমন্বয় বিধান করত। থানা/তহশিল পরিষদ জেলা পরিষদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতো এবং ঐ পরিষদের নিকট দায়ী থাকত। জেলা পরিষদ মূলত তিন ধরনের দায়িত্ব পালন করতো : বাধ্যতামুলক দায়িত্ব, ঐচ্ছিক দায়িত্ব এবং সমন্বয়মূলক দায়িত্ব। 


বাধ্যতামূলক দায়িত্বগুলোর মধ্যে ছিল সরকারি রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট ও ব্রীজ নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষণাবেক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ, সরকারি ফেরি নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন। ঐচ্ছিক দায়িত্বগুলোর বিষয় ছিল শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক কল্যাণ এবং গণপূর্ত। এছাড়াও জেলা পরিষদের উপর কৃষি, শিল্প, সমাজ উন্নয়ন, জাতীয় পুনর্গঠনের প্রসার এবং সমবায় উন্নয়নের মত বিশাল কর্মকান্ডের দায়িত্বও অর্পিত হয়। জেলার মধ্যে স্থানীয় পরিষদসমূহের সকল কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধনও ছিল  জেলা পরিষদের অন্যতম দায়িত্ব। 


১৯৬০ সালের হ্যাঁ/না ভোট 

দুই বছর সামরিক শাসনের পর আইয়ুব খান নিজের শাসন ব্যবস্থাকে মৌলিক গণতন্ত্রের আলোকে বেসামরিক শাসন বানিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি পুরো পাকিস্তান থেকে ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী বা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচন করেন। এই মোলিক গণতন্ত্রীরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। নিজের ওপর মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থা আছে কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করেছেন আইয়ুব খান। ১৯৬০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি হ্যাঁ না ভোটের আয়োজন করেন। শতকরা ৯৫% মৌলিক গণতন্ত্রী হ্যাঁ ভোট দিয়েছে বলে জানা যায়। এভাবে আইয়ুব খান পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। যদিও অনেক রাজনীতিবিদ এই ব্যবস্থা ও হ্যাঁ/না ভোটের বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। সর্বপ্রথম আপত্তি তুলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মওদূদী।  


১৯৬২ সালে আইয়ুব খান নতুন সংবিধান তৈরি করেন। এতে সংসদীয় প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাই চূড়ান্ত বলে ঘোষিত হয়। মাওলান মওদূদীর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী ও সোহরাওয়ার্দির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে। বাকীরা কেউ মৃদু প্রতিবাদ কেউ আইয়ুবকে সমর্থন দেন। মুসলিম লীগের একটি বড় অংশের নেতাদের নিয়ে আইয়ুব তার রাজনৈতিক দল ঘোষণা করে কনভেনশন মুসলিম লীগ। আর অন্যদিকে বাকীরা নামধারণ করে কাউন্সিল মুসলিম লীগ। কাউন্সিল মুসলিম লীগ যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। 


১৯৬২ সাল থেকে জামায়াত স্বৈরশাসনের বৈধতা দানকারী আইয়ুবের সংবিধান প্রত্যাখ্যান করে এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন শুরু করে। প্রতিটি প্রদেশে মিছিল মিটিং ও সমাবেশ করতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় মামলা হামলা ও নির্যাতন চলতে থাকে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। সবশেষ ১৯৬৪ সালে ৬ জানুয়ারি আইয়ুব খান জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেন। একইদিন মাওলানা মওদূদীসহ শীর্ষ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে অনেক বাঙালি নেতাও ছিলেন, যেমন : অধ্যাপক গোলাম আযম, মাস্টার শফিকুল্লাহ, মাস্টার আব্দুল ওয়াহিদ, আব্দুর রহমান ফকির, শামসুল হক ইত্যাদি। 


এদিকে ১৯৬২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে তার রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা আতাউর রহমানের বাসভবনে সরকার বিরোধী এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী করাচি গেলে তাঁকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ ও দাঙ্গা হাঙ্গামা করে। পুলিশ বাস, থানা পুড়িয়ে দেয়।  


৭-৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় ব্যাপক পুলিশী নির্যাতন চলতে থাকে এবং এ সময়ের মধ্যে প্রায় ২২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে পূর্ববাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। মার্চ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুললে আবার আন্দোলন শুরু হয়। ১৫ মার্চ থেকে অব্যাহতভাবে ধর্মঘট চলতে থাকে। এ সময় ডাকসুর সহ-সভাপতি রফিকুল হক ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হায়দার আকবর খান প্রমুখ নেতাসহ বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়।


আইয়ুব খান হলেন ১ম পাকিস্তানী নেতা যিনি ভারতকে রুখতে গিয়ে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। যার ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান। সেজন্য মাওলানা ভাসানী আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা থেকে বিরত থাকেন।।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন