সময়ের সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। সাংগঠনিক, পারিবারিক ও পেশাগত ব্যস্ততা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই শখের কাজগুলো কমে যাচ্ছে। আগে প্রায়ই চেষ্টা করতাম নতুন নতুন মসজিদ ভ্রমণ করতে। অনেকদিন সেই ভ্রমণ করা সম্ভব হয়নি। তবে রিসেন্টলি একটি দারুণ মসজিদে গেলাম। প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
অফিসের এক কলিগ বললেন, একটা সুন্দর মসজিদের সন্ধান পেয়েছি। চলুন। হুটহাট বেরিয়ে পড়লাম। ঢাকা থেকে বেশি দূরে নয়। এটা কেরানিগঞ্জে। বুড়িগঙ্গার ওপারে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তার পাশে। বর্তমান সরকার পদ্মা সেতুর জন্য একটি কানেক্টিং রোড তৈরি করেছে মাওয়া পর্যন্ত, যা ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে নামে পরিচিত। আর এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রাস্তা। প্রতি কিলোমিটারে ১১৫ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। রাস্তাটা দারুণ, কোনো সন্দেহ নাই। তবে ব্যয়বহুল হবার পেছনে যতটা দায়ী এর অবকাঠামো তার চাইতে বেশি দায়ী দুর্নীতি।
যাই হোক আজকে এটা আমাদের আলোচিত বিষয় নয়। মসজিদটির অবস্থান হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উল্টো পাশে। সেখানে কেরানিগঞ্জ সাউথ টাউন নামে একটি আবাসিক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন এক ব্যবসায়ি। ভবিষ্যতে ঢাকা এদিকে সম্প্রসারিত হবে এই আশায় এমন বড় আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। কারাগার ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এর চাহিদা বাড়বেই।
মসজিদটির একটি আলাদা বিশেষত্ব আছে। সাধারণত মসজিদ নির্মিত হয় মুসল্লিদের প্রয়োজনের আলোকে। অর্থাৎ আগে মানুষের আবাদ হয়, পরে মসজিদের আবাদ। কিন্তু এখানে হয়েছে উল্টো। কেরানিগঞ্জ সাউথ টাউনে মানুষের আবাদ এখনো হয়নি, তবে মসজিদের আবাদ হয়ে গেছে। আবাসন প্রকল্পটির মালিক মোস্তফা কামাল মঈনুদ্দিন বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আগেই পরিকল্পনা অনুসারে সুন্দর একটি মসজিদ স্থাপন করেছেন। ফলে অসাধারণ মসজিদটির উসিলায় তার আবাসন প্রকল্পটি পরিচিত হয়ে উঠছে।
কেরানিগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর সাউথ টাউন জামে মসজিদ। এর মাধ্যমে নয়াভিরাম সুদৃশ্য এক মসজিদ যোগ হলো আমাদের দেশে। সাউথ টাউনের এই মসজিদটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। আধ বিঘা জমির ওপর মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। চারপাশে খোলামেলা জায়গার মাঝে মসজিদটি তার সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো জনবসতি গড়ে ওঠেনি। তাই মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজির সংখ্যা নাই বললেই চলে। তবে মসজিদের নান্দনিকতার খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই এটি দেখতে আসেন এবং নামাজ পড়েন।
একতলা মসজিদটির স্থাপত্যকলা নকল করা হয়েছে ঢাকা ভার্সিটির কার্জন হল থেকে। মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ৬০০ লোক জামাতে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদটি তৈরিতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রধান ফটক আছে তিনটি। দুই পাশে আছে আরও দুটি দরজা। চারপাশে প্রচুর জানালা তৈরি করে আলো ঢোকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই স্তরের জানালার ফাঁক গলে আসা প্রকৃতির আলোয় ভেতরে চমৎকার এক পরিবেশ তৈরি হয়। জুড়িয়ে যায় চোখ। স্থপতির নন্দনভাবনার শৈলী ফুটে আছে গম্বুজের ভেতরের অংশেও। দিনের আলো ঢোকার ব্যবস্থা আছে সেখানেও।
এর পাশেই মসজিদের ইমাম ও খাদেমদের থাকার জন্যে আলাদা একটি ভবন করা হয়েছে। এই এলাকায় এলে প্রকল্পের ভেতরে মিলবে কাশবন। বিকেলে দেখা যাবে সূর্যাস্ত। ঢাকার অদূরেই এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ রয়েছে তা সেখানে না গেলে বোঝা যাবে না। সন্ধ্যার দিকে মসজিদের চারপাশের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়, তখন আরেক নান্দনিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মনে তখন মসজিদটি তার রূপ আরো মেলে ধরে।
কীভাবে যাবেন?
১. যদি আপনার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা থাকে, তবে গুগল ম্যাপে যাবেন। মসজিদের নাম লিখে সার্চ করবেন। ম্যাপের পথ ধরে চলে যাবেন।
অথবা,
২. যারা কেন্দ্রীয় কারাগার চিনেন তারা সেখানে যাবেন। রাস্তা পার হয়ে দশ-পনের মিনিট হাঁটার পথ। কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিবে। অটোরিকশা ব্যবহার করেও যেতে পারেন।
অথবা,
৩. ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে পোস্তগোলা ব্রিজ আসবেন। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে সিএনজি নিয়ে সাউথ টাউন মসিজিদে চলে যেতে পারবেন। সর্বোচ্চ ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা। এটা ঢাকা সিটির বাইরে ঢাকা জেলায়। তাই সিটির সিএনজিগুলো পোস্তগোলা ব্রিজ পার হতে পারে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন