১৮ অক্টো, ২০২০

বঙ্গকথা পর্ব-৫৭ : যেমন ছিল ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ


১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পাক-ভারত যুদ্ধ ছিল দুটি দেশের মধ্যে এক বছরে সংঘটিত তিনটি বিবাদমান ঘটনার ধারাবাহিক পরিণতি। এগুলো হলো: এপ্রিল মাসে কুচের রান অঞ্চলে সীমিত আকারের পরীক্ষামূলক যুদ্ধ, আগস্ট মাসে ছদ্মবেশে পাকিস্তানিদের কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ, এবং পরিশেষে সেপ্টেম্বর মাসে পরস্পরের আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রমণ। তাছাড়া ১৯৪৮ সালের কাশ্মির যুদ্ধ, পরবর্তীকালে কাশ্মিরের একাংশে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ, জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারতে অন্তর্ভুক্তি, জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে প্রতিপক্ষের কূটনেতিক আলোচনা ইত্যাদি ঘটনাবলি পাকিস্তানকে তার পছন্দ অনুযায়ী কাশ্মির সমস্যার একটি সমাধান অর্থাৎ কাশ্মিরকে পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা ব্যাহত হয়।

কুচের রান অঞ্চলের ঘটনা : 
কুচের রান অঞ্চল হচ্ছে ভারতের গুজরাট রাজ্য এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ৩২০ মাইল দীর্ঘ এবং ৫০ মাইল প্রশস্ত এক মরুময় অঞ্চল এবং জলাভূমি। দেশ বিভাগের সময় এবং রান অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে বাউন্ডারি কমিশনের ব্যর্থতার কারণে প্রায় ৩৫০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে দুটি নতুন দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ১৯৬৫ সালের ৯ এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এই এলাকায় প্রবেশ করে এবং দাবি করে যে ভারতীয় সেনাবাহিনী কাঞ্জারকোটের নিকট একটি পাকিস্তানি চৌকিতে আক্রমণ করেছে। এই যুদ্ধ অতি দ্রুত তীব্রতর হয় এবং পাকিস্তান আমেরিকা থেকে সংগৃহীত নতুন প্যাটন ট্যাংক এই যুদ্ধে ব্যবহার করা শুরু করে। পরিশেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের মধ্যস্থতায় ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

কাশ্মিরে জিব্রাল্টার অভিযান :
আইয়ুব খান তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক গণঅসন্তোষকে ধীরে ধীরে এই মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন যে, ‘বহি:শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম ও ঐক্য সৃষ্টি করে’। আইয়ুব খানের উপদেষ্টামন্ডলি তাঁকে ঘিরে একটি ছোট বলয় গড়ে তোলে। এই গোষ্ঠী আজাদ কাশ্মির গেরিলা দ্বারা গুপ্তভাবে এবং নিয়মিত সৈন্য দ্বারা প্রকাশ্যে কাশ্মির আক্রমণের পরিকল্পনা করে। ‘জিব্রাল্টার অভিযান’ নামে খ্যাত এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র কাশ্মির অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে স্থানীয় যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। কিন্তু পরবর্তীকালে তা ভিন্ন রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে একটি বড় রকমের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক গোপন অভিযান শুরু করে। এর সাংকেতিক নাম ছিল 'অপারেশন জিব্রাল্টার'। এর লক্ষ্য ছিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বাড়ানো। পাকিস্তান এজন্য 'সাদা-ই-কাশ্মীর' নামে একটি রেডিও স্টেশনও চালু করে। পাকিস্তানের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেছিল, এর মাধ্যমে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠবে; কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কিছু ঘটেনি। বরং অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশই আটক হয়েছিল বা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল। আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ 'অপারেশন জিব্রাল্টার' ফিকে হতে হতে মিলিয়ে গিয়েছিল। আর তথাকথিত মুজাহিদদের সামান্য যে কয়জন টিকে ছিল, তারা জীবন বাঁচাতে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিল।

অপারেশন জিব্রাল্টার ব্যর্থ হলেও আইয়ুব খান তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি। ওই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন ১৯৬৫ সাল পাকিস্তান শুরু করে 'অপারেশন গ্র্যান্ড স্লাম'। এর আওতায় পাকিস্তানী নিয়মিত সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি রেখা বা সিএফএল (সিজফায়ার লাইন) অতিক্রম করে এবং জম্মুর দিকে অগ্রসর হয়। পরবর্তী কয়েক দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে এবং জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলার হুমকি তৈরি করে। ওই দিন থেকেই যুদ্ধে যোগ দেয় দুই দেশের বিমানবাহিনীও। প্রথম মুখোমুখি হওয়ার সময়ই পাকিস্তান এয়ারফোর্সের (পিএএফ) ফাইটারগুলো ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) দুটি ভ্যাম্পেয়ার ফাইটারকে ভূপাতিত করে ফেলে।

সেপ্টেম্বর যুদ্ধ :
১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে সমগ্র চম্ব অঞ্চলের ওপর পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ব্যাপকহারে গোলাবর্ষণ আরম্ভ করে। পাকিস্তান পরিচালিত এই অভিযানে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ হতভম্ব হয়ে পড়ে। প্রচুর সৈন্য ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ট্যাঙ্কবহর ব্যবহার করে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী অগ্রসর হয় এবং হতচকিত ও অপ্রস্তুত ভারতীয় সৈন্যরা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ভারতীয় সরকার ভারতীয় বিমানবাহিনীকে নিযুক্ত করে। পরবর্তী দিন থেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। 

নাজেহাল ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত করতে আন্তর্জাতিক সীমানারেখা অতিক্রম দুটি আক্রমণ পরিচালনা করে। প্রথমটি ছিল ৬ সেপ্টেম্বর লাহোর অভিমুখে। অন্যটি ছিল পরদিন শিয়ালকোট শহর অভিমুখে। পাকিস্তান এই শিয়ালকোট শহরকেই কাশ্মিরের চাম্ব সেক্টরে সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য ব্যবহার করে আসছিল। ভারতীয় বাহিনী লাহোর আক্রমণ কিছু প্রাথমিক সাফল্য লাভ করে। তারা একেবারে লাহোর বিমান বন্দরের সন্নিকটে পৌঁছে যায়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লাহোরের আশে পাশে খালের উপর নির্মিত প্রায় ৭০টি সেতু বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে সেখানে পরিখার সৃষ্টি করে ভারতীয় বাহিনীকে আটকে ফেলে।

এদিকে পাঞ্জাব অঞ্চলে পাকিস্তান ভারত অধিকৃত খেমখারান নামক একটি শহরে পাল্টা আক্রমণ পরিচালনা করে। খেমখারান পাকিস্তানের দখলে চলে আসে। অন্যদিকে শিয়ালকোট রণক্ষেত্রে উভয়পক্ষের ৪০০ থেকে ৬০০টি ট্যাংক বহর নিয়ে সর্ববৃহৎ ট্যাংক যুদ্ধ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে পাকিস্তান সাফল্যলাভ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী শিয়ালকোট অভিমুখে অভিযান বন্ধ করে পিছু হটতে থাকে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইবিআর) প্রথম ব্যাটালিয়নকে মোতায়েন করা হয় লাহোর শহর ও বামবাওয়ালি-রাভি-বেদাইন ক্যানেল (বিআরবি ক্যানেল) প্রতিরক্ষার জন্য। ভারতীয় বাহিনীর দফায় দফায় হামলা সত্ত্বেও এই রেজিমেন্ট তাদের প্রতিরক্ষা দেয়াল টিকিয়ে রেখেছিল। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তারা কেবল সুরক্ষাই দেয়নি, পাল্টা জবাব দিয়ে হামলাকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতেও সক্ষম হয়েছিল। এই রেজিমেন্টের ধ্বংস করা একটি ভারতীয় ট্যাঙ্ক এখনও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে। 

১৯৬৫ সালের যুদ্ধের আকাশপথের লড়াইয়ে পাকিস্তান এয়ারফোর্স (পিএএফ) পাইলট ও বিমানের গুণগত মানের দিক থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) তুলনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল। যদিও ভারতের বিমানবাহিনী সংখ্যাগত দিক থেকে বৃহত্তর ছিল, শেষ পর্যন্ত গুণগতভাবে এগিয়ে থাকার সুবিধা পেয়েছিল পাকিস্তান। ওই সময় ভারত পূর্ব পাকিস্তানে কোনো স্থল হামলা চালায়নি। তবে ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড কুর্মিটোলা ও লালমনিরহাটের অব্যবহৃত বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের বেসামরিক বিমানবন্দরে দফায় দফায় হামলা চালায়। তেজগাঁওয়ের সামরিক বিমানঘাঁটিটি যদিও হামলার বাইরেই রয়ে যায়। এ ধরনের নিষ্ফল হামলা ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা ও সামরিক অপারেশনের গুরুতর ব্যর্থতা।

এর পাল্টা জবাব হিসেবে তেজগাঁও ঘাটি থেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতীয় বিমানবাহিনীর কালাইকুন্ডা ঘাঁটিতে হামলা চালায় এবং সেখানে মজুদ থাকা বেশ কিছু ক্যানবেরা বোমারু বিমান ধ্বংস করে। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বাঙালি পাইলটরা এ সময় ব্যতিক্রমী পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও অসম সাহস দেখাতে সক্ষম হয়। মেজর জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের ২য় সর্বোচ্চ খেতাব হিলাল-ই-জুরাত লাভ করেন, উইং কমান্ডার তোয়াব, স্কোয়াড্রন লিডার আলাউদ্দিন (মরণোত্তর), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম ও ফ্লাইং অফিসার হাসান সিরাত-ই-জুরাত খেতাব লাভ করেন। 

লিডিং এয়ারক্রাফটসম্যান আনোয়ার হোসাইন পান তমঘা-ই-জুরাত (মরণোত্তর)। স্কোয়াড্রন লিডার এম কে বাশার, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সেক্টর কমান্ডার হয়েছিলেন এবং পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন, তিনি লাভ করেন 'তমঘা-ই-বাসালাত'। এই উচ্চ সামরিক খেতাব তাকে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক বোমারু বিমান পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সব রেজিমেন্টের মধ্যে সাহসিকতার জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খেতাব ও পদক পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। তারা ভারতীয় বাহিনী থেকে লাহোরকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে। এই রেজিমেন্ট পেয়েছিল তিনটি 'সিতারা-ই-জুরাত (বাংলাদেশের বীরবিক্রম সমতুল্য), আটটি 'তমঘা-ই-জুরাত' (বাংলাদেশের বীরপ্রতীক সমতুল্য) এবং আরও বেশ কিছু পদক ও প্রশংসাপত্র। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আবির্ভূত হয়েছিল লাহোর শহরের রক্ষাকর্তা হিসেবে।

যুদ্ধে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত এগিয়ে থাকলেও এরপর তারা আক্রান্ত হতে থাকে। ওদের সর্বোচ্চ সাফল্যের বিষয় ছিল লাহোর আক্রমণ। কিন্তু লাহোরে বিশাল ভারতীয় বাহিনী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কাছে। এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানও সুবিধে করতে পারছিল না। কারণ আইয়ুব খান চেয়েছিল যুদ্ধ শুধু কাশ্মীর ফ্রন্টে রাখতে। কিন্তু যুদ্ধ কাশ্মীর, শিয়ালকোট, পাঞ্জাব ও লাহোর ইত্যাদি নানা ফ্রন্টে চালু হওয়ায় বিপাকে পড়ে পাকিস্তান। আর্থিক ক্ষতি ও রশদে সমস্যায় পড়ে পাকিস্তান। এছাড়াও আরো দুটি বড় সমস্যা ছিল পাকিস্তানের। এক. যুদ্ধে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দিকে অবস্থান নেয়। দুই. ভারত যুদ্ধক্ষেত্র কাশ্মীর থেকে সরিয়ে এনে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রতিস্থাপন করে। তাই পাকিস্তানের সম্পদ পাকিস্তানের হাতেই নষ্ট হচ্ছে। 

শুধু যুদ্ধে সৈনিকদের পারদর্শিতা ছাড়া আর কোনো লজিস্টিক সুবিধা পাকিস্তানের ছিল না। অন্যদিকে সকল সুবিধা থাকলেও ভারত যুদ্ধে পারদর্শিতা না দেখানোর ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব ২০ সেপ্টেম্বর অত্যন্ত কঠোর ভাষায় যুদ্ধবিরতির জন্য সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করলে পাকিস্তান প্রথমে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু ভারত ২১ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করলে পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান তা গ্রহণ করে। 

যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতিই বেশি হয়েছে। পাকিস্তানের ৩৮০০ সৈন্য নিহত হয় অন্যদিকে ভারতের ৩০০০ সৈন্য নিহত হয়। পাকিস্তানের ২৫০ ট্যাংক নষ্ট হয় অন্যদিকে ভারতের ২০০ ট্যাংক নষ্ট হয়। ভারতের ৭৫ টি জঙ্গী বিমান ধ্বংস হয় অন্যদিকে পাকিস্তানের ২০ টি বিমান ধ্বংস হয়। ভারত ভূমি হারায় ৫৪০ বর্গ কিমি এলাকা আর অন্যদিকে পাকিস্তান হারায় ১৭৩৫ বর্গ কিমি এলাকা। এই ডাটাগুলো পরে বিভিন্ন নিরপেক্ষ পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। কিন্তু যুদ্ধকালীন আইয়ুব খান দেশে পাকিস্তানের বিরাট বিজয় হয়েছে বলে প্রচার করতে থাকে। এতে তার প্রতি মানুষের ভক্তি বাড়ে। 

আরেকটি বিষয় সে যেটি চেয়েছিলো তা হলো সমগ্র বিরোধী দলকে তার মুখী করে ফেলা। অর্থাৎ সবাই যাতে তার নেতৃত্ব মেনে নেয়। তার এই প্রচেষ্টাও সাময়িক সফল হয়। যুদ্ধবিরতি থেকে যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে। তাসখন্দ চুক্তি হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল আইয়ুব খানের। পাকিস্তানে আইয়ুব খানের সবচেয়ে সক্রিয় ও কার্যকর বিরোধী ছিলেন জামায়াতের আমীর মাওলানা মওদূদী। সেই মওদূদীকেই কাজে লাগান আইয়ুব খান। 

১৯৬৫ সালে ৬ সেপ্টেম্বর ভারত যখন লাহোর ও শিয়ালকোট আক্রমণ করে তখন আবুল আ'লা মওদূদী ছিলেন রাওয়ালপিন্ডিতে। তিনি সেখান থেকে লাহোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তিনি সরকারি সাহায্য পাবার জন্য বসে থাকেন নি। এর আগেই তিনি জাতিকে নিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে সেনাবাহিনী আইয়ুব খান আপনার সাথে দেখা করতে চান বলে আইয়ুব খানের কাছে যেতে অনুরোধ করেন। মাওলানা মওদূদী আইয়ুবের ডাকে সাড়া দেন। 

আইয়ুব খান এই সংকট মুহূর্তে মাওলানা মওদূদীর সাহায্য চান। মাওলানাকে তিনি অনুরোধ করেন, রেডিওতে ভাষণ দিয়ে বলতে যাতে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে ও সেনাবাহিনীকে সাহায্য করে। মাওলানা রেডিওতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেসময় মাওলানার ওপর ইসলামপন্থীদের ব্যাপক সমর্থন ছিল কারণ মাওলানা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন করেছিলেন। 

এছাড়াও ১৪, ১৬ ও ১৮ সেপ্টেম্বর যুদ্ধকালীন আহত, মুহাজিরদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের জন্য জাতির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান ও জামায়াত কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। পাকিস্তান রেডিও তার এই বক্তব্য ও কর্মপন্থা ব্যাপকভাবে প্রচার করে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন