২৭ ডিসে, ২০২০

কয়েকজন ঈমানদার যুবকের গল্প



এফিসুস শহর। এখানের মানুষ মুর্তিপূজা করে। ডায়না নামে এক দেবী ছিল এদের মূল উপাস্য। ডায়ানার পূজারীদের বিশাল এক কেন্দ্র এফিসুস। এখানে সুবিশাল ডায়ানা দেবীর মন্দিরটি সে যুগে পৃথিবীর অত্যাশ্চর্য বিষয় বলে গণ্য হতো। আনাতোলিয়া অর্থাৎ তুরস্কের লোকেরা ডায়ানার পূজা করতো। পুরো রোমান সাম্রাজ্যেও ডায়ানার পূজারীরা ছিল ক্ষমতাবান। মুশরিকদের এই শহরে ঈশা আ.-এর অনুসারী মুসলিমরা দাওয়াত নিয়ে হাজির হন। সেই দাওয়াতে সাড়া দেয় এফিসুসের কিছু মানুষ। 

হযরত ঈসা আ.-এর উদ্ধারোহন হওয়ার পর যখন তাঁর দাওয়াত রোম সাম্রাজ্যে পৌঁছতে শুরু করে তখন এফিসুস শহরের কয়েকজন যুবকও শিরক থেকে তাওবা করে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে। তাদের ধর্মান্তরের কথা শুনে এপিসুসের শাসক কাইজার ডিসিয়াস তাদের নিজের কাছে ডেকে পাঠান। তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের ধর্ম কি? তারা জানতেন, কাইজার মুসলিম বিদ্বেষী। কিন্তু তারা কোন প্রকার ভয় না করে পরিষ্কার বলে দেন, আমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব। তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদকে আমরা ডাকি না। যদি আমরা এমনটি করি তাহলে অনেক বড় গুনাহ করবো। কাইজার প্রথমে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, তোমাদের মুখ বন্ধ করো, নয়তো আমি এখানেই তোমাদের হত্যা করার ব্যবস্থা করবো। তারপর কিছুক্ষণ থেমে বললেন, তোমরা এখনো ছোট। তাই তোমাদের তিনদিন সময় দিলাম। ইতোমধ্যে যদি তোমরা নিজেদের মত বদলে ফেলো এবং জাতির ধর্মের দিকে ফিরে আসো তাহলে তো ভালো, নয়তো তোমাদের শিরশ্ছেদ করা হবে।

এ তিন দিনের অবকাশের সুযোগে কেউ কেউ ঈমান গোপন করলেন। কিন্তু হাতেগোণা কয়েকজন যুবক শহর ত্যাগ করেন। তারা কোন গুহায় লুকাবার জন্য পাহাড়ের পথ ধরেন। পথে একটি কুকুর তাদের সাথে চলতে থাকে। তারা কুকুরটাকে তাদের পিছু নেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বহু চেষ্টা করেন। কিন্তু সে কিছুতেই তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে রাজি হয়নি। শেষে একটি বড় গভীর বিস্তৃত গুহাকে ভাল আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়ে তারা তার মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। কুকুরটি গুহার মুখে বসে পড়ে। দারুন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত থাকার কারণে তারা সবাই সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়েন। খ্রিস্টানদের বর্ণনা অনুসারে এটি ২৫০ খৃস্টাব্দের ঘটনা। ১৯৭ বছর পর ৪৪৭ খৃস্টাব্দে তারা হঠাৎ জেগে ওঠেন। তখন ছিল কাইজার দ্বিতীয় থিয়োডোসিসের শাসনামল। রোম সাম্রাজ্য তখন খৃস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং এফিসুসের শহরের লোকেরাও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেছিল।

এটা ছিল এমন এক সময় যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি নাস্তিক হয়ে উঠেছিল। তারা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ও নানান যুক্তি হাজির করে মৃত্যুর পরের জীবন এবং কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে জমায়েত ও হিসেব-নিকেশ হওয়া সম্পর্কে ফিতনা তৈরি করে চলছিল। আখেরাত অস্বীকারীরের ধারণা লোকদের মন থেকে কীভাবে নির্মূল করা যায় এ ব্যাপারটা নিয়ে কাইজার নিজে বেশ চিন্তিত ছিলেন। একদিন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন তিনি এমন কোন নিদর্শন দেখিয়ে দেন যার মাধ্যমে লোকেরা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। ঘটনাক্রমে ঠিক এ সময়েই এ যুবকরা ঘুম থেকে জেগে ওঠেন।

জেগে ওঠেই তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাস করেন, আমরা কতক্ষণ ঘুমিয়েছি? কেউ বলেন একদিন, কেউ বলেন দিনের কিছু অংশ। তারপর আবার একথা বলে সবাই নীরব হয়ে যান যে এ ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন। এরপর তারা তাদের মধ্যে থাকা একজনকে রূপার কয়েকটি মুদ্রা দিয়ে খাবার আনার জন্য শহরে পাঠান। লোকেরা যাতে চিনতে না পারে এজন্য তাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন। তারা ভয় করছিলেন, লোকেরা আমাদের ঠিকানা জানতে পারলে আমাদের ধরে নিয়ে যাবে এবং ডায়নার পূজা করার জন্য আমাদের বাধ্য করবে। কিন্তু তাদের একজন শহরে পৌঁছে দেখে সবকিছু বদলে গেছে। তিনি খুবই অবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন সবাই মুসলিম হয়ে গেছে এবং ডায়না দেবীর পূজা কেউ করছে না। 

তিনি একটি দোকানে গিয়ে কিছু রুটি কিনেন এবং দোকানদারকে একটি রূপার মুদ্রা দেন। এ মুদ্রার গায় কাইজার ডিসিয়াসের ছবি খোদাই করা ছিল। দোকানদার এ মুদ্রা দেখে অবাক হয়ে যায়। সে জিজ্ঞেস করে, এ মুদ্রা কোথায় পেলে? তিনি বলেন, এ আমার নিজের টাকা, অন্য কোথাও থেকে নিয়ে আসিনি। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হয়। লোকদের ভীড় জমে ওঠে। এমনকি শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নগর কোতোয়ালের কাছে পৌঁছে যায়। কোতোয়াল বলেন, এ গুপ্তধন যেখান থেকে এনেছো সেই জায়গাটা কোথায় আমাকে বলো। তিনি বলেন, কিসের গুপ্তধন? এ আমার নিজের টাকা। কোন গুপ্তধনের কথা আমার জানা নেই। কোতোয়াল বলেন, তোমার একথা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ তুমি যে মুদ্রা এনেছো, এ তো কয়েকশো বছরের পুরানো। তুমি তো সবেমাত্র যুবক, আমাদের বুড়োরাও এ মুদ্রা দেখেনি। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন রহস্য আছে।

যুবকদের একজন যখন শোনেন কাইজার ডিসিয়াস মারা গেছে বহুযুগ আগে তখন তিনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোন কথাই বলতে পারেন না। তারপর আস্তে আস্তে বলেন, এ তো মাত্র কালই আমি এবং আমার ছয়জন সাথী এ শহর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং ডিসিয়াসের জুলুম থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তার একথা শুনে কোতোয়ালও অবাক হয়ে যান। তিনি তাকে নিয়ে যেখানে তার কথা মতো তারা লুকিয়ে আছেন সেই গুহার দিকে চলেন। বিপুল সংখ্যক জনতাও তাদের সাথী হয়ে যায়। তারা যে যথার্থই কাইজার ডিসিয়াসের আমলের লোক সেখানে পৌঁছে এ ব্যাপারটি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়ে যায়। এ ঘটনার খবর কাইজার থিয়োডোসিসের কাছেও পাঠানো হয়। তিনি নিজে এসে তাদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের থেকে বরকত গ্রহণ করেন। তারপর হঠাৎ তারা সাতজন গুহার মধ্যে গিয়ে সটান শুয়ে পড়েন এবং তাদের মৃত্যু ঘটে। এ সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখে লোকেরা যথার্থই মৃত্যুর পরে জীবন আছে বলে বিশ্বাস করে। এ ঘটনার পর কাইজারের নির্দেশে গুহায় একটি ইবাদাতখানা নির্মাণ করা হয়। 

এই ঘটনার কথা এফিসুস থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন কবিতা ও সাহিত্যে তাদের এই ঘটনা বর্ণনা হতে থাকে। এই যুবকদেরকে একত্রে গুহাবাসী বা আসহাবে কাহফ বলা হয়।  আল্লাহর রাসূল সা. যখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন তখন কাফেররা আল্লাহর রাসূলের কাছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে প্রশ্ন করে। একবার তারা মুহাম্মদ সা. কাছে আসহাবে কাহফ সম্পর্কে বলার জন্য বললো। মুহাম্মদ সা. বললেন, ঠিক আছে আমি তোমাদের আগামী কাল বলবো। মহানবী সা.-এর এই জবাবে আল্লাহ তায়ালা মনঃক্ষুণ্ণ হলেন, কারণ মহানবী সা. 'ইনশাআল্লাহ' বলেননি। এর প্রেক্ষিতে ১৫ দিন রাসূল সা.-এর কাছে ওহী আসা বন্ধ হয়ে যায়। মহানবী সা. অস্থির হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে কাফেররা তাঁকে বার বার চাপ দিতে থাকে। মহানবী সা. সিজদায় দোয়া করতে থাকেন। অবশেষে ওহী নাজিল হয় এবং গুহাবাসীদের ব্যাপারে বিস্তারিত আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দেন। সেই সাথে মহানবী সা.-কেও সতর্ক করে দেন। 

সূরা কাহফের ২৩-২৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,  
//আর কোন কিছুর ব্যাপারে তুমি মোটেই বলবে না যে, ‘নিশ্চয় আমি তা আগামীকাল করবো’, বলবে ইনশাআল্লাহ্‌। যদি বলতে ভুলে যাও, তখন তুমি তোমার রবের যিকির কর এবং বলো, আশা করা যায়, আমার রব এ ব্যাপারে সত্যের নিকটতর কথার দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে দেবেন।// 

আসহাবে কাহফের এই ঘটনার বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে দিয়েছেন। তিনি সূরা কাহফে ৯-১১ আয়াতে বলেন, 
//তুমি কি মনে করেছ যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা ছিল আমার আয়াতসমূহের এক বিস্ময়? যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল অতঃপর বলল, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকান্ড সঠিক করে দিন’। ফলে আমি গুহায় তাদের কান বন্ধ করে দিলাম অনেক বছরের জন্য।// 
তারা গুহায় আশ্রয় নিয়ে মহান রবের কাছে দোয়া করেছেন যেন আল্লাহ রহমত দান করেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করলেন ও তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। 

এরপর ১২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘুমের সময়কালের ব্যাপারে তৈরি হওয়া কনফিউশন নিয়ে কথা বলেছেন, তিনি বলেন, 
//তারপর আমি তাদেরকে উঠিয়েছি একথা জানার জন্য যে, তাদের দু’দলের মধ্য থেকে কোনটি তার অবস্থান কালের সঠিক হিসেব রাখতে পারে।//
তাদের যখন ঘুম ভাংলো তখন গুহায় অবস্থানকাল নিয়ে দু’টি দল তৈরি হয়েছিল। একদল বলেছিল, আমরা অবস্থান করেছি এক দিন অথবা এক দিনের কিছু কম সময়। অন্যদল বলেছিল, দীর্ঘ সময়। অতঃপর তারা খাদ্য কিনতে শহরে গিয়ে জানতে পারলো তারা বহু ঘুমিয়েছে। 

আল্লাহ তায়ালা ১৩-১৬ নং আয়াতে গুহাবাসী ও তাদের কথোপকথন বর্ণনা করে বলেন, 
//আমিই তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয় তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। যখন তারা উঠেছিল, আমি তাদের অন্তরকে দৃঢ় করেছিলাম। তখন তারা বলল, ‘আমাদের রব আসমানসমূহ ও জমিনের রব। তিনি ছাড়া কোন ইলাহকে আমরা কখনো ডাকব না। (যদি ডাকি) তাহলে নিশ্চয় আমরা গর্হিত কথা বলবো’। এরা আমাদের কওম, তারা তাঁকে ছাড়া অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে। কেন তারা তাদের ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না? অতএব যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রটায়, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর যখন তোমরা তাদের থেকে আলাদা হয়েছ এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা উপাসনা করে তাদের থেকেও, তখন গুহায় আশ্রয় নাও। তাহলে তোমাদের রব তোমাদের জন্য তার রহমত উন্মুক্ত করে দেবেন এবং তোমাদের জন্য তোমাদের জীবনোপকরণের বিষয়টি সহজ করে দেবেন।// 

গুহাবাসীরা ঈমানদার যুবকেরা এমনভাবে গুহায় ঘুমাতো তখন যদি কেউ তাদের দেখতো তবে তাদের ঘুমন্ত মনে হতো না। সূর্যের উদিত হওয়া অস্ত যাওয়ার সময় তারা পাশ পরিবর্তন করতেন যাতে গুহায় প্রবেশ করা আলো এড়ানো যায়। সেই প্রসঙ্গে আল্লাহ ১৭-১৮ আয়াতে বলেন, 

//তুমি যদি তাদেরকে গুহায় দেখতে, তাহলে দেখতে পেতে সূর্য উদয়ের সময় তাদের গুহা ছেড়ে ডান দিক থেকে ওঠে এবং অস্ত যাওয়ার সময় তাদেরকে এড়িয়ে বাম দিকে নেমে যায় আর তারা গুহার মধ্যে একটি বিস্তৃত জায়গায় পড়ে আছে। এ হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। যাকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখান সে-ই সঠিক পথ পায় এবং যাকে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন তার জন্য তুমি কোন পৃষ্ঠপোষক ও পথপ্রদর্শক পেতে পারো না। তোমরা তাদেরকে দেখে মনে করতে তারা জেগে আছে, অথচ তারা ঘুমুচ্ছিল। আমি তাদের ডানে বায়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলাম। তাদের কুকুর গুহা মুখে সামনের দু’পা ছড়িয়ে বসেছিল। যদি তুমি কখনো উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে তাহলে পিছন ফিরে পালাতে থাকতে এবং তাদের দৃশ্য তোমাকে আতংকিত করতো//

এরপর মহান মালিক সূরা কাহফের ১৯-২১ নং আয়াতে গুহাবাসীদের জেগে ওঠা, বাজারে যাওয়া, তৎকালীন মানুষের আছে প্রকাশিত হওয়া ও ইন্তেকাল করা ইত্যাদি নিয়ে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, 

//আর এমনি বিস্ময়করভাবে আমি তাদেরকে উঠিয়ে বসালাম১৬ যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তাদের একজন জিজ্ঞেস করলোঃ “বলোতো, কতক্ষণ এ অবস্থায় থেকেছো?” অন্যেরা বললো, “হয়তো একদিন বা এর থেকে কিছু কম সময় হবে।” তারপর তারা বললো, “আল্লাহই ভাল জানেন আমাদের কতটা সময় এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে। চলো এবার আমাদের মধ্য থেকে কাউকে রূপার এ মুদ্রা দিয়ে শহরে পাঠাই এবং সে দেখুক সবচেয়ে ভাল খাবার কোথায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে সে কিছু খাবার নিয়ে আসুক; আর তাকে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, আমাদের এখানে থাকার ব্যাপারটা সে যেন কাউকে জানিয়ে না দেয়।

আর এমনিভাবে আমি তাদের ব্যাপারে (লোকদেরকে) জানিয়ে দিলাম, যাতে তারা জানতে পারে যে, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামতের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজদের মধ্যে তাদের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করছিল, তখন তারা বলল, ‘তাদের উপর তোমরা একটি ভবন নির্মাণ কর’। তাদের রবই তাদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত। যারা গুহাবাসীদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিল, তারা বলল, ‘আমরা অবশ্যই তাদের উপর একটি মসজিদ নির্মাণ করবো’।//

উপরোক্ত আল্লাহ তায়ালা ইঙ্গিত দিলেন কীভাবে সেসময়ের কাফিরদের দেখিয়ে দিলেন, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামতের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারপর যখন আসহাবে কাহফের যুবকরা ইন্তেকাল করলেন তখন সেখানে গুহার মুখে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হলো। 

মক্কার কাফেররা আল্লাহর রাসূল সা.-এর কাছে আসহাবে কাহাফের সংখ্যা ও তাদের অবস্থানকালের বছর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক করতে চাইলে মহান রাব্বুল আলামীন এই আলোচনা থেকে রাসূল সা.-কে দূরে থাকতে বলেন। এই ইস্যুতে আল্লাহ তায়ালা ২২ ও ২৫-২৬ আয়াতে বলেন,    

//কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন আর চতুর্থজন ছিল তাদের কুকুরটি। আবার অন্য কিছু লোক বলবে, তারা পাঁচজন ছিল এবং তাদের কুকুরটি ছিল ষষ্ঠ, এরা সব আন্দাজে কথা বলে। অন্যকিছু লোক বলে, তারা ছিল সাতজন এবং অষ্টমটি তাদের কুকুর। (হে নবী) বলো, আমার রবই ভাল জানেন তারা ক’জন ছিল, অল্প লোকই তাদের সঠিক সংখ্যা জানে। কাজেই তুমি সাধারণ কথা ছাড়া তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকদের সাথে বিতর্ক করো না এবং তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করো না।

আর তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছে তিনশ’ বছর এবং এর সাথে অতিরিক্ত হয়েছিল ‘নয়’। (হে নবী) বলো, ‘তারা যে সময়টুকু অবস্থান করেছিল, সে ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জানেন’। আসমানসমূহ ও জমিনের গায়েবী বিষয় তাঁরই। এ ব্যাপারে তিনিই উত্তম দ্রষ্টা ও উত্তম শ্রোতা। তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই। তাঁর সিদ্ধান্তে তিনি কাউকে শরীক করেন না।//

সেসময় বহুল প্রচলিত ছিল আসহাবে কাহফের সংখ্যা সাত জন সাথে অষ্টম জন কুকুর। আর তারা গুহায় সৌরবর্ষ অনুসারে ৩০০ বছর ঘুমিয়ে ছিল। আর চন্দ্রবর্ষ অনুসারে অতিরিক্ত নয় বছর যুক্ত হয়ে ৩০৯ বছর ঘুমিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা আসহাবে কাহফের সংখ্যা ও তাদের ঘুমিয়ে থাকার বছর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেননি। এবং এই নিয়ে বিতর্ক করতেও নিষেধ করেছেন। আমি শুরুতে যে বর্ণনা দিয়েছি তা বর্তমানের ইউরোপিয়ানদের মধ্যে চালু থাকা ইতিহাস। এর সাথে কুরআনের বর্ণনা অনেকখানিই মিলে যায়। 

তবে আমাদের উচিত হবে না কোনো সংখ্যা অস্বীকার করা বা এই নিয়ে বিতর্ক করা। বরং আমাদের উচিত হবে ঐ যুবকদের মতো নিজের জীবন গড়ে তোলা। যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আল্লাহর আনুগত্য করবো। হাসিনা সরকারের চাপে আমরা অবশ্যই ভাস্কর্যের নামে শেখ মুজিবের মুর্তি পূজা শুরু করে দেব না। ইনশাআল্লাহ্‌।

এফিসুস শহর বর্তমানে তুরস্কের ইজমির প্রদেশে সেলকক জেলায় অবস্থিত।     

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন