১০ অক্টো, ২০২১

পর্ব : ৪৫ - নবী সা.-এর মিশন কমপ্লিট

 


দশম হিজরিতে মদিনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যাতিক্রমী খিলাফত রাষ্ট্র / ইসলামিক রাষ্ট্র পূর্ণতা পেল। পুরো আরব জুড়ে ছিল সীমানা। রাষ্ট্রের প্রধান মুহাম্মদ সা. তাবলীগ ও তারবিয়াতের কাজ জোর কদমে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নতুন রাষ্ট্রের সাথে মানুষকে অভ্যস্ত করছেন। নবম হিজরিতে আবু বকর রা.-এর নেতৃত্বে হজ্ব সম্পন্ন হয়। মুসলিমরা কীভাবে হজ্বের নিয়ম-কানুন পালন করবে তা নবম হিজরিতেই মুসলিমদের শেখানো হয়। নবম হিজরিতে ঘোষণা এর পর থেকে অমুসলিমরা কা'বার কাছে আসতে পারবে না। আল্লাহর ঘরে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ মেনে নেওয়া হবে না। 

এরপর দশম হিজরিতে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সা.-এর সাকসেসফুল মিশন কমপ্লিটের ঘোষণা দিতে চেয়েছেন। আর সেটা লাখো মানুষের সমাবেশে করতে চেয়েছেন। যাতে মুহাম্মদ সা. তাঁর কষ্টের সুফল নিজে দেখতে পারেন।   

সূরা হজ্বের ২৭-২৯ আয়াত নাজিলের মাধ্যমে সকল মুসলিমকে হজ্ব করার জন্য সাধারণ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,  //লোকদেরকে হজ্জের জন্য সাধারণ হুকুম দিয়ে দাও, তারা প্রত্যেকে দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে ও উটের পিঠে চড়ে তোমার কাছে আসবে, যাতে এখানে তাদের জন্য যে কল্যাণ রাখা হয়েছে তা তারা দেখতে পায় এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিয্ক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও’। ‘তারপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের (কা'বা) তাওয়াফ করে’।//

অতঃপর রাসূল সা. মক্কার পথে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। এই সফরে তাঁর সব স্ত্রী তাঁর সাথে হজ্ব করেছেন। এটা মুহাম্মদ সা.-এর জন্য ছিল দুনিয়ার পুরস্কার গ্রহণের দিন। তিনি আরাফাতের ময়দানে একটি টিলার ওপর দাঁড়িয়ে লাখো মুসলিমের সামনে ভাষণ দেন। মাত্র দশ বছর আগে মক্কা থেকে পালিয়ে যায় হাতে গোণা কিছু মানুষ। সেই কাফেলা আজ লক্ষ লক্ষ জনতায় পরিণত হয়েছে। এতো মানুষ দেখে মুহাম্মদ সা.-এর অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে গেল। 

বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে মুহাম্মদ সা. এক দারুণ কাজ করতেন। তিনি জনসাধারণকে কোনো না কোনো প্রশ্ন করতেন? খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। কিন্তু এতে যেটা হতো জনসাধারণ পূর্ণ মনোযোগ দিতেন রাসূল এর কথার দিকে। মহাসম্মেলনের ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি তার ব্যতিক্রম করলেন না। 

জাবালে নূর টিলায় তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে প্রশ্ন করলেন, এটি কোন মাস? সাহাবারা অবাক হয়ে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। সাহাবারা ভেবেছে তিনি মাসের নাম পরিবর্তন করে দিবেন। 

মুহাম্মদ সা. আবার প্রশ্ন করলেন, এটা কি জিলহজ্ব মাস নয়? 
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই!

মুহাম্মদ সা. বললেন, এটা কোন শহর? এটা কি মক্কা নয়? 
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই!

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রশ্ন করলেন, এটা কি কুরবানীর দিন নয়? 
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই!

লাখো সাহাবা সেদিন মুহাম্মদ সা.-এর এসব প্রশ্ন শুনে থমকে গিয়েছিলেন। পিনপতন নীরবতা শুরু হলো। কেউ বুঝতে পারছে না, মুহাম্মদ সা. এসব প্রশ্নের মাধ্যমে আসলে কী বার্তা দিতে চাইছেন? 

এরপর মুহাম্মদ সা. শুরু করলেন তাঁর মূল ভাষণ....  
হে মানবসমাজ!
আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। হয়তো আমি আর কখনো এখানে তোমাদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারব না। 

হে মানব সকল! 
সাবধান! সকল প্রকার জাহেলিয়াত রহিত করা হলো। নিরাপরাধ মানুষের রক্তপাত চিরতরে হারাম ঘোষিত হল। প্রথমে আমি আমার বংশের পক্ষ থেকে রাবিয়া বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিবের রক্তের দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। সে বনি লাইস গোত্রে দুধ পান করার সময় হুযাইল তাকে হত্যা করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ’সুদ’ কে চির দিনের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। আমি আজ আমার চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের যাবতীয় সুদের দাবি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। 

হে লোক সকল! সাবধান! তোমাদের একের জন্য অপরের রক্ত, তার মাল সম্পদ, তার ইজ্জত-সম্মান আজকের দিনের মত, এই হারাম মাসের মত, এ সম্মানিত নগরীর মত পবিত্র আমানত। সাবধান! মানুষের আমানত প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে দেবে। 

হে মানব সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ একজন, তোমাদের সকলের পিতা হযরত আদম । আরবের ওপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সাদার উপর কালোর আর কালোর উপর সাদার কোন মর্যাদা নেই। ‘তাকওয়াই’ শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে। 

হে লোক সকল! পুরুষদেরকে নারী জাতীর ওপর নেতৃত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তবে নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় কর। নারীদের ওপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে তেমনি পুরুষদের উপর রয়েছে নারীদের অধিকার। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে নারীরা স্বামীগৃহে ও তার সতীত্বের মধ্যে অন্য কাউকেও শরিক করবেনা, যদি কোন নারী এ ব্যপারে সীমা লঙ্ঘন করে, তবে স্বামীদেরকে এ ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে যে, তারা স্ত্রীদের থেকে বিছানা আলাদা করবে ও দৈহিক শাস্তি দেবে, তবে তাদের চেহারায় আঘাত করবে না। আর নারীগণ স্বামী থেকে উত্তম ভরণ পোষণের অধিকার লাভ করবে, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দেবে ও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে। 

হে উপস্থিতি! মুমিনেরা পরষ্পর ভাই আর তারা সকলে মিলে এক অখণ্ড মুসলিম ভ্রাতৃসমাজ। এক ভাইয়ের ধন-সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে ভক্ষণ করবে না। তোমরা একে অপরের উপর জুলুম করবেনা। 

হে মানুষেরা! শয়তান আজ নিরাশ হয়ে পড়েছে। বড় বড় বিষয়ে সে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে সমর্থ হবে না, তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা সর্তক থাকবে ও তার অনুসারী হবে না। তোমরা আল্লাহর বন্দেগি করবে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, যাকাত আদায় করবে ও তোমাদের নেতার আদেশ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাত লাভ করবে। 

সাবধান! তোমাদের গোলাম ও অধীনস্থদের বিষয়ে আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরবে তাদেরকেও সেভাবে পরতে দেবে। 

হে লোকসকল! আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহ তা’আলার পয়গাম পৌছে দিয়েছি? 
লোকেরা বলল, “হ্যা” 
তিনি বললেন “আমার বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। সেদিন তোমরা কী সাক্ষ্য দিবে? 
সকলে এক বাক্যে বললেন, “আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আমাদের নিকট রিসালাতের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন, উম্মতকে সকল বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, সমস্ত গোমরাহির আবরণ ছিন্ন করে দিয়েছেন এবং ওহির আমানত পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন” 

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. নিজ শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশপানে তুলে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ তা’আলা আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি স্বাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন”। 

হে মানুষেরা! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সম্পদের মিরাস নির্দিষ্টভাবে বণ্টন করে দিয়েছেন। তার থেকে কম বেশি করবেনা। সাবধান! সম্পদের তিন ভাগের এক অংশের চেয়ে অতিরিক্ত কোন অসিয়ত বৈধ নয়। 

সন্তান যার বিছনায় জন্ম গ্রহণ করবে, সে তারই হবে। ব্যভিচারের শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাত। (অর্থাৎ সন্তানের জন্য শর্ত হলো তা বিবাহিত দম্পতির হতে হবে। ব্যভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই)। 

যে সন্তান আপন পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা এবং যে দাস নিজের মালিক ব্যতীত অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে, তাদের উপর আল্লাহ তা’আলা, ফেরেশতাকুল এবং সমগ্র মানব জাতির অভিশাপ এবং তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল হবে না। 

হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা দুনিয়ার মানুষের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন কিয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ না কর। কেননা আমি আল্লাহর আযাবের মোকাবিলায় তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না। তোমাদের দেখেই লোকেরা আমল করে থাকবে। মনে রেখ! সকলকে একদিন আল্লাহ তা’আলার নিকট হাজির হতে হবে। সে দিন তিনি প্রতিটি কর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন। তোমরা আমার পরে গোমরাহিতে লিপ্ত হবে না, পরস্পর হানাহানিতে মেতে উঠবনা। 

আমি সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। আমার সাথে ওহির পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে। হে মানুষেরা! আমি নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। আমাকেও আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এই দুটি বস্তু আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব ও অপরটি রাসূলের সুন্নাহ। 

হে মানব মন্ডলী! তোমরা আমির বা নেতার আনুগত্য করো এবং তার কথা শ্রবণ করো যদিও তিনি হন হাবশি ক্রীতদাস। যতদিন পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে, তাঁর নির্দেশ মানবে ও তাঁর প্রতি আনুগত্য করবে। আর যখন তিনি আল্লাহর কিতাবের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করবে, তখন থেকে তাঁর কথাও শুনবেনা এবং তাঁর আনুগত্যও করা যাবে না। 

সাবধান! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এই বাড়াবড়ির কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। 

আবার বললেন, আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি? সকলে বললেন, “নিশ্চয়ই”। হে উপস্থিতগণ! অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ পয়গাম পৌছে দেবে। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ এ নসিহতের উপর তোমাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে আমল করবে। আসসালামু আলাইকুম। বিদায়।

এই ঐতিহাসিক ভাষণকে সামারি করলে আমরা ১৯টি নির্দেশনা পাই। 

১. জাহেলী রীতি অনুসারে সকল প্রকার শিরক নিষিদ্ধ হলো।

২. প্রতিশোধের বংশানুক্রমিক ধারা রহিত করা হলো এবং নিরাপরাধ ব্যক্তি হত্যা নিষিদ্ধ হলো। 

৩. সকল প্রকার সুদ নিষিদ্ধ হলো। 

৪. মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে রক্তপাত, সম্পদ দখল, সম্মান নষ্ট করা নিষিদ্ধ হলো। 

৫. আমানত রক্ষা করে চলতে হবে। 

৬. মানুষের মধ্যে জাতিগত (ভাষা, বর্ণ, গোত্র, এলাকা) ভেদাভেদ চলবে না। শুধু তাকওয়ার ভিত্তিতে মর্যাদা নির্ধারিত হবে।

৭. স্ত্রীদের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। স্ত্রীরা সতিত্ব বজায় রাখবে। স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে। 

৮. মুমিনরা নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বজায় রাখবে। 

৯. কোনো অবস্থায়ই কারো সাথে জুলুম করা যাবে না। 

১০. ছোট-খাটো বিষয়ে মতপার্থক্য করতে গিয়ে ফিরকা সৃষ্টি করা যাবে না। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো (আল্লাহর আনুগত্য, নামাজ, রোজা, যাকাত ও নেতার আনুগত্য) যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।

১১. অধীনস্থদের সাথে ভালো আচরণ করতে ও পার্থক্য সৃষ্টি করা যাবে না। 

১২. উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে কমবেশি করা যাবে না। এক তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করে উত্তরাধিকারদের বঞ্চিত করা যাবে না। 

১৩. জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া যাবে না। 

১৪. নিজের পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা পরিচয় দেওয়া যাবে না। 

১৫. প্রত্যেককে নিজের কাজের হিসেব দিয়েই জান্নাতে যেতে হবে। এই ব্যাপারে নবী সা. দায়িত্ব নেবেন না। 

১৬. কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে। 

১৭. বৈধ নেতার আনুগত্য করতে হবে। অবৈধ নেতার আনুগত্য করা যাবে না। বৈধ/অবৈধ এর মানদণ্ড নির্ধারিত হবে কুরআন সুন্নাহ দ্বারা। 

১৮. অমুসলিমকে মুসলিম বানানোর ক্ষেত্রে জোর করা যাবে না। 

১৯. রাসূলের এই ভাষণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

ভাষণের পর আল্লাহর রাসূল সা.-এর ওপর সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াত নাজিল হয়। সেখানে খাবার সংক্রান্ত কিছু বিধি-বিধান বলার পর দ্বীন পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণা আসে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
//তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোস্ত, আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা পশু, গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু, প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু, উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু, অন্যপ্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু। তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা, এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় করো। 

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।// 

দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণায় সাহাবারা খুশি হলেন ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। কিন্তু আবু বকর রা. কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন এই ঘোষণার মাধ্যমে মুহাম্মদ সা. স্বীকৃতি যেমন দেওয়া হয়েছে তেমনি তার কাজ/ মিশন কমপ্লিট এই ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মিশন কমপ্লিট তাই মুহাম্মদ সা. আর বেশিদিন দুনিয়ায় থাকবেন না। 

সবাই আবু বকর রা.-এর অস্থিরতা দেখে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, দ্বীন পরিপূর্ণ হয়েছে। আমাদের নেতা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। সত্যিই! এই দিনের পর মাত্র একাশি দিন মুহাম্মদ সা. দুনিয়ায় ছিলেন।   


৪টি মন্তব্য: