২২ ডিসে, ২০২২

খিলাফত পর্ব-৪১ : যেভাবে খুন হলেন উসমান রা.

 

মারওয়ান ইবনে হাকাম মদিনাবাসীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করলো। ক্ষমতার গরম ও দাম্ভিকতা দেখালো। উসমান রা.-এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও তিনি এটাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হননি। এই ঘটনা তাঁকে খাদের কিনারে ফেলে দিয়েছে। মারওয়ানের ক্ষুব্ধ আচরণের ফলে আলী রা. রাজনৈতিক বিষয়ে আর হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি উসমান রা.-এর সাথে অভিমানমূলক কথা বললেও তিনি উসমান রা.-কে রক্ষায় সব চেষ্টা করেছিলেন।

বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাগণের কাছে মারওয়ানের দাম্ভিক আচরণের খবর পৌঁছে গেছে। তার সাথে আরো রঙচঙও যুক্ত হয়েছে। যা স্বাভাবিকভাবেই হয়। এই কারণে হযরত উসমান রা.-এর প্রতি হযরত আলী রা-এর রাগের খবরও পৌঁছে গেছে। কথা ছিল উসমান রা. পূর্ববর্তী দুই খলিফার নীতি অনুসরণ করবেন। অতএব জনগণ ধারণা করেছিল তিনি নিকটাত্মীয়দের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু তা তো হয়ই নাই বরং উসমান রা.-এর আত্মীয়রা তাঁকে আরো বেশি পরিবেষ্টিত করে ফেললো।

ইত্যাদি বিষয়ে সারারাষ্ট্রে উসমান রা.-এর বিরুদ্ধে কেউ কেউ জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুললো। মিসর, কুফা ও বসরার বাসিন্দারা খলীফার বিরুদ্ধে পরস্পর যোগাযোগ করতে লাগলো। এখানেও ষড়যন্ত্র ছিল, যা রাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। মদিনায় অবস্থানরত তিনজন সাহাবী যেমন আলী রা., তালহা রা., যুবাইর রা.-এর লিখিত জাল পত্রাদির মাধ্যমে জনগণকে উত্তেজিত করা হয়েছে। জাল চিঠির মাধ্যমে উসমান রা.-এর হত্যার আহ্বান ও দ্বীনের সাহায্যের জন্য আহ্বান জানানো হয়। এটাকে হাল যমানার শ্রেষ্ঠ জিহাদ বলে ঘোষণা করা হয়। অথচ সিনিয়র সাহাবারা এসব বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

৩৫ হিজরীর ঈদুল ফিতরের পর শাওয়াল মাসে মিসরের বাসিন্দারা ৪জন নেতার নেতৃত্বে ৪ ভাগে মদিনায় রওয়ানা হয়। তারা ছিলেন প্রায় এক হাজার জন। একইভাবে কুফাবাসী ও বসরাবাসীরাও চার নেতার অধীনে আসতে লাগলো। মিসরের বাসিন্দারা হযরত আলী ইব্ন আবূ তালিব রা.-কে আমীর বানানোর প্রতি আগ্রহী। কুফার বাসিন্দারা হযরত যুবাইর রা.-কে আমীর নির্বাচন করতে চায় এবং বসরার বাসিন্দারা হযরত তালহা রা.-এর আমীর হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। তবে তারা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা মূলত উসমান রা.-এর অপসারণটাই মূখ্য দাবি হিসেবে বিবেচনা করেছে।

তাই প্রতিটি দল তাদের শহর থেকে রওয়ানা হয় এবং মদিনার আশপাশ পর্যন্ত পৌঁছে। তিনটি দলই চিঠির মাধ্যমে একে অন্যের সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিল। সেই মুতাবিক শাওয়াল মাসে একদল যুখাশাব -এ অবতরণ করেন। অন্য একদল আল আওয়াসে এবং অধিকাংশ লোক যুল মারওয়াতে তাঁবু করেন। তারা মদিনাবাসী হতে ভীত ছিল বিধায় পৌঁছার পূর্বেই তারা গুপ্তচর প্রেরণ করে লোকজনের খবরাখবর নেয়। কিন্তু মদিনায় তাদের বাধা দেওয়ার জন্য কেউ ছিল না। উসমান রা.-এর কঠোর নিষেধে তাঁর আত্মীয়দের কেউ অর্থাৎ উমাইয়া বংশের লোকেরাও কোনো প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়নি।

মিসরিয়রা আলী রা.-এর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। আলী রা. সেই সুযোগ গ্রহণ করে তাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেন এবং তাদের কাছে পাঠানো জাল চিঠির বিষয় অস্বীকার করলেন। তাদেরকে কিয়ামতের ভয় দেখালেন। মিসরিয়দের ফিরে যেতে বললেন। তিনি তাদের বললেন, মহান আল্লাহ্ যেন তোমাদেরকে ভোরের আলো না দেখায়।” তাঁরা বলেন, 'জি হ্যাঁ' এ বলে তারা তাঁর কাছ থেকে চলে গেল।

বসরাবাসীরা তালহা রা.-এর কাছে আগমন করলো। বসরাবাসীরা হযরত তালহা রা.-কে সালাম দিলেন। তখন তিনি তাদের সাথে উচ্চ স্বরে কথা বললেন এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দিলেন। কুফাবাসীদের ক্ষেত্রেও হযরত যুবাইর রা. অনুরূপ আচরণ করলেন। তারপর প্রত্যেকটি দলই তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফেরত রওয়ানা হলো এবং তারা প্রকাশ করতে লাগল যে, তারা তাদের শহরে ফিরে যাচ্ছে। ফেরত পথে কয়েক দিন ভ্রমণ করার পর তারা পুনরায় পবিত্র মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মদীনাবাসীরা তাদের তাকবীরের আওয়াজ শুনতে পেল। তিনদল বিদ্রোহী মদিনা ঘিরে ফেললো।

বিদ্রোহীরা ঘোষণা দিল, যে অস্ত্র থেকে বিরত থাকবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। মদিনার প্রায় সব লোকজন বিরত রইল। তারা তাদের ঘরে অবস্থান করতে লাগলো। এভাবে কয়েকদিন চলে গেল। এসব ঘটনা ঘটছে কিন্তু সাধারণ লোকজন জানে না বিদ্রোহীরা কি করছে এবং কাকে তারা লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করছে। এর মধ্যে আমীরুল মু'মিনীন হযরত উসমান রা. ঘর থেকে বের হন এবং মসজিদে নামায পড়ান। মদিনাবাসীগণ তাঁর পেছনে নামায পড়েন। অন্যান্য সাহাবী বিদ্রোহীদের কাছে যান এবং তাদেরকে ফেরত চলে যাবার জন্যে বার বার অনুরোধ করেন। এমনকি আলী রা. মিসরীয়দেরকে বললেন, “তোমাদের চলে যাওয়ার পর, অভিমত পাল্টানোর পর তোমরা আবার কেন ফিরে এসেছো?”

উত্তরে তারা বলল, 'আমরা একটি দূতের কাছে একটি পত্র পেলাম সে পত্রে আমাদেরকে হত্যা করার জন্যে বলা হয়েছে। মিসরিয়রা তাদের পাশে দ্রুতগতিতে একটি উটকে যেতে দেখে তাদের সন্দেহ হয়। তখন তারা তাকে ধরে ফেলল এবং তারা তার দেহ ও মালপত্র তল্লাশি করল। একটি পাত্রের মধ্যে একটি পত্র পাওয়া গেল। পত্রে দেখা গেল হযরত উসমান রা. তাদের মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরসহ কয়েকজন মিসরিয় নেতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, কয়েকজনকে শূলে চড়াবার হুকুম দিয়েছেন ও অন্য কয়েকজনের উল্টো দিক থেকে হাত-পা কেটে ফেলার আদেশ দিয়েছেন। পত্রের মধ্যে উসমান রা.-এর সীলমোহর ছিল। আর দূতটি ছিল হযরত উসমান রা.-এর একজন গোলাম। আবার উটটিও ছিল হযরত উসমান রা.-এরই । যখন বিদ্রোহীরা ফেরত আসল তারা তখন পত্রটি সঙ্গে নিয়ে আসল এবং ঘুরে ঘুরে লোকজনকে তা প্রদর্শন করতে লাগল।

এ সম্পর্কে মদিনার জনগণ আমীরুল মু'মিনীনকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি এটা লিখিও নাই কিংবা হুকুমও করি নাই। আর এ ব্যাপারে আমি কোন প্রকার অবহিতও নই। সীলমোহর কোন কোন সময় জালও হয়ে থাকতে পারে। মদিনাবাসীদের সবাই উসমান রা.-কে বিশ্বাস করেননি। সত্য বলে ধারণাকারীরা এটাকে সত্য ও সঠিক বলে গণ্য করল। আর জাল বলে ধারণাকারীরা চিঠিকে জাল বলে আখ্যায়িত করল।

ইবনে জারীর র. বলেন, মিসরের গভর্নর আব্দুল্লাহ বিন সা'দের প্রতি হযরত উসমান রা.-এর পক্ষ থেকে লিখিত পত্রটি যার কাছে পাওয়া গিয়েছিল তার নাম ছিল আবুল আওয়ার আস-সালামী আর উটটি ছিল হযরত উসমান রা.-এর। উসমান রা. অবশ্য আগেই জানিয়েছেন তাঁর উট হারানো গিয়েছে। বিদ্রোহীদের কাছ থেকে শক্ত অভিযোগ পাওয়ার পর মদিনাবাসীরা যার যার গৃহে ফেরত গেল। তারা উসমান রা.-কে তাঁর নিজের ওপর ছেড়ে দিল।

এ দিনগুলোতে হযরত উসমান রা. লোকজনদেরকে নিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করছিলেন। এরপর এক জুমার দিন খলীফা হযরত উসমান রা. মিম্বরে দণ্ডায়মান ছিলেন। বিদ্রোহীরা তাঁকে লাঞ্চিত করলো। মিম্বার থেকে নামিয়ে দিল। আমর ইবনুল আস রা., যার প্রত্যাহার নিয়ে এতো কাহিনীর জন্ম হলো তাঁর হস্তক্ষেপে বিদ্রোহীরা সরে গেল। উসমান রা. নামাজ পড়ালেন। কিছু বর্ণনায় এমনও পাওয়া গেছে নামাজ শেষে বিদ্রোহীরা পাথর নিক্ষেপ করেছে। এতে উসমান রা. আহত হয়েছেন। আলী রা. ঢাল হয়ে তাঁকে রক্ষা করে সরিয়ে নিলেন। সাথে তালহা রা. ও যুবায়ের রা.ও ছিলেন।

সাহাবায়ে কিরামের মধ্য হতে একটি দল যেমন আবূ হুরায়রা রা., ইবন উমর রা. এবং যায়িদ ইবন সাবিত রা. হযরত উসমান রা.-এর পক্ষ হতে যুদ্ধ করার জন্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসেন। হযরত উসমান রা. তাদের কাছে লোক প্রেরণ করলেন এবং তাদের থেকে ওয়াদা নিলেন যাতে আল্লাহ্ তা'আলার ফয়সালায় হস্তক্ষেপ থেকে তাঁরা বিরত থাকেন ও চুপ থাকেন। জুমআর দিনের এই ঘটনার পর থেকে উসমান রা. ঘরে নামাজ পড়তে বাধ্য হলেন। বিদ্রোহীরা তাঁকে ঘর থেকে বের হতে বাধা দিয়েছিল।

বিদ্রোহীরা তাঁকে গৃহে অবরুদ্ধ থাকতে বাধ্য করে, তাঁর জীবন সংকীর্ণ করে তোলে এবং গৃহের অভ্যন্তরে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে। অনেক সাহাবী নিজ নিজ গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করতে লাগলেন। সাহাবীদের সন্তানদের একটা দল তাদের নিজ নিজ পিতার নির্দেশে উসমান রা.-এর দিকে ছুটে যায়। তাঁদের মধ্যে হাসান-হুসাইন রা., আবদুল্লাহ্ ইবন যুবাইর রা.ও ছিলেন। আরো ছিলেন আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আমর রা.। এরা উসমান রা. পক্ষ নিয়ে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, যাতে অপরাধী চক্রের কেউ খলিফার কাছে পৌঁছতে সক্ষম না হয়। তবে বেশিরভাগ মদিনাবাসী মনে করেছিলেন খলিফা অবরোধকারীদের কিছু দাবি মেনে নিবেন এবং এই সমস্যার অবসান হবে।

বিদ্রোহীরা কেউই উসমান রা.-এর কথাকে বিশ্বাস করেন নি। এছাড়াও মদিনার অনেক প্রবীণ সাহাবীও ধারণা করেন যে, এ চিঠির ঘটনা হযরত উসমান রা.-এর নির্দেশক্রমেই ঘটেছে। মিসরীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার পর এমন ঘটনা মোটেই সমীচীন ছিল না। এ সব কিছুই তো সমঝোতার পরিপন্থী। উসমান রা. বিদ্রোহীদের অভিযোগ অস্বীকার করলে, বিদ্রোহীরা বললো, 'পত্রে তো আপনার সীলমোহর আছে!' তিনি বললেন, 'কোন ব্যক্তি এ সীলমোহর জাল করতে পারে।' তখন তারা বললো, পত্রতো ছিল আপনার উটের উপর সওয়ার আপনার সেবকের নিকট। তখন তিনি বললেন : 'আল্লাহর কসম! এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।'

এ সমস্ত কথার পর বিদ্রোহীরা তাঁকে বলে, আপনি এ পত্র লিখে খিয়ানত তথা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন; আর যদি আপনি না লিখে থাকেন বরং আপনার অগোচরে অন্য কেউ লিখে থাকে তাহলে তো আপনি অক্ষম প্রমাণিত হলেন। আর আপনার মতো অক্ষম ব্যক্তি তো খিলাফতের যোগ্য নয়। এই ঝামেলার জন্য আপনার খিয়ানত তথা বিশ্বাসহীনতা অথবা অক্ষমতাই প্রধান কারণ। অন্যদিকে আমীরুল মুমিনিন উসমান রা. ও তাঁর সঙ্গীরা ভেবেছে বিদ্রোহীরাই ষড়যন্ত্র করে জাল পত্র লিখেছে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য।

আমীরুল মু'মিনীন-এর নিকট তাদের দাবি ছিল হয় তিনি পদত্যাগ করবেন অথবা মারওয়ান ইবনুল হাকামকে তাদের নিকট সমর্পণ করবেন। কারণ ইতোমধ্যে পত্রসহ আটক ব্যক্তি থেকে জানা গেছে মারওয়ান তাকে আব্দুল্লাহ বিন সা'দের নিকট পত্রসহ পাঠিয়েছে। বিদ্রোহীরা স্বয়ং খলিফাকে হত্যা করবে এমন চিন্তা আসলে কেউ করতে পারেনি। খলিফার অবর্তমানে সা'দ ইব্ন হারব লোকদের নিয়ে নামায আদায় করেন। কোনো কোনো সময় তালহা রা., আবু আইয়ুব রা., সাহল বিন হুনাইনও নামাজের ইমামতি করেছেন। তবে জুমআর নামাজ পড়িয়েছেন আলী রা.। খলিফা উসমান রা. পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছিলেন না। তাঁর পক্ষে কাউকে দাঁড়াতেও দিচ্ছিলেন না। অবরোধ এক মাসের বেশি অব্যাহত থাকে। কারো কারো মতে তা ছিল চল্লিশ দিনব্যাপী।

যিলকদ মাসের শেষের দিক থেকে ১৮ই যিলহজ্জ পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত ছিল। সেদিন ছিল জুমআর দিন। উসমান রা.-কে বিপদ থেকে রক্ষার জন্য প্রায় সাতশত জন তার গৃহের পাশে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় সাহাবী ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর, হাসান ইবনে আলী, হুসাইন ইবনে আলী, মারওয়ান এবং আবূ হুরায়রা। উসমান রা.-এর মুক্ত করা অনেক দাসও উপস্থিত ছিল।

তিনি তাদের বলেছিলেন, "যার উপর আমার অধিকার আছে, যে আমার আনুগত্যের মধ্যে আছে, আমি কসম দিয়ে বলছি সে যেন হাত গুটিয়ে নিজ গৃহে ফিরে যায়। তিনি তাঁর দাসদেরকে বললেন, যে তরবারি কোষবদ্ধ রাখবে, সে আজ থেকে মুক্ত। ফলে ভেতর থেকে লড়াইয়ে ভাটা পড়ে গেল। কিন্তু বাইরে থেকে বিদ্রোহীরা উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি হয়ে উঠে তীব্রতর। উসমান রা. স্বপ্নে দেখেন, যা থেকে তাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে বলে বোঝা যায়। গৃহ ত্যাগ করার জন্য তিনি কড়া নির্দেশ দানের পর উসমান রা.-এর গৃহ ত্যাগকারী সর্বশেষ ব্যক্তিটি ছিলেন হাসান ইব্ন আলী রা.। তিনিও বেরিয়ে আসেন।

১৩ জন লোক সঙ্গে নিয়ে হযরত আবূ বকর রা.-এর ছেলে মুহাম্মদ আগমন করে তাদের দাবি পুনরায় পেশ করে। কিন্তু উসমান রা. কোনো দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেন। মুহাম্মদ বিন আবু বকর আমিরুল মু'মিনিন উসমান রা.-এর সাথে বিতর্ক জুড়ে দিলেন। অনেকগুলো সূত্র মতে তিনি আব্দুল্লাহ বিন সা'দের কাছে লেখা চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। কুরাআনের পরিবর্তনকারী হিসেবে অভিযোগ করেছেন। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন। উসমান রা. সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই সময় হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোলের মধ্যে কয়েকজন লোক উসমান রা.-কে তীরের ফলা/ খঞ্জর / ছুরি দ্বারা আঘাত করে পালিয়ে যায়। এই আঘাতে উসমান রা. রক্তাক্ত হন এবং শাহদাতবরণ করেন।

মারওয়ান ইবনুল হাকাম উসমান রা.-এর নামে আব্দুল্লাহ বিন সা'দের নিকট এ পত্র লিখে এবং এ সম্পর্কে যুক্তি হিসাবে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াত উপস্থাপন করে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়, এটাই তাদের শাস্তি যে তাদেরকে হত্যা করা হবে, শূলীবিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হস্তপদ কর্তন করা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়াতে এটাই তাদের লাঞ্ছনা, অবমাননা, আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা মায়িদা ৫; আয়াত ৩৩)।

মারওয়ান ইবনুল হাকামের মতে যারা উসমান রা.-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, তারা সকলেই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। অথচ সেই ছিল বিপর্যয়কারী! বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার পরও খলিফার সীলমোহর ব্যবহার, তাঁর উট ব্যবহার ও তাঁর গোলামকে পত্র প্রেরণের জন্য ব্যবহার করে মারওয়ান বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন