আজ ১৬ জুলাই।
গতবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এই দিন ছিল হিজরি ১০ মহররম। কারবালার দিন। বাংলাদেশেও সেদিন কারবালা শুরু হয়।
১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
# রংপুরে ১ম শহীদ আবু সাঈদের শাহদাত
# সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন নিহত হয়েছেন। আহত চার শতাধিক।
# স্কুল–কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত। বিজিবি মোতায়েন
# জুলাই বিপ্লবের পক্ষে স্ট্যাটাস দেওয়ায় টেন মিনিট স্কুলের ৫ কোটি টাকার অনুদান বন্ধ করেছে পলক
# ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় অ্যামনেস্টির নিন্দা
# সরকারি হামলার প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ
রংপুরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। তিনিই জুলাই বিপ্লবের ১ম শহীদ।
১৫ জুলাই রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ দমনে লাঠিসোঁটা, কোথাও কোথাও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সক্রিয় ছিলো ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ঢাকার অন্তত ১৬ টি জায়গায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা দুইটার পর থেকে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ থেকে সায়েন্স ল্যাব, পুরান ঢাকা, নতুন বাজার ও মিরপুর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ, গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে।
১৫ জুলাই ছাত্রশিবির ব্যানার ছাড়া মাঠে নামলেও ১৬ জুলাই ছাত্রশিবির ঢাকার কয়েকটি স্থানে মিছিল করেন এবং ঢাবিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা কলেজের সামনে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা সিটি কলেজের সামনে আহত আরেকজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকায় শহীদ হওয়া দুইজনই ছিলেন শ্রমিক। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আহত ১২৬ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে আহত কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। শহরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ছাত্রশিবির নেতা ফয়সল আহমেদ শান্ত, ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম ও একজন কাঠমিস্ত্রী শহীদ হন।
গতকালও দিনভর উত্তপ্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে গতকাল ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। জঙ্গী সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল হকিস্টিক, লাঠি, স্টাম্পসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিকেল, কার্জন হল, চানখাঁরপুল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। ঢাকার বাইরে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ও পুলিশ হামলা চালায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে শিক্ষার্থীদের ওপর পেট্রলবোমা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা এবং মারধর করে স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার-পাঁচজন শিক্ষক ও সাতজন সাংবাদিক আহত হন। চোখে ছররা গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়েছেন এক শিক্ষক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর গুরুতর আহত ব্যক্তিদের সাভারের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের প্রভোস্টের কক্ষ, ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষসহ অন্তত ১০টি কক্ষে ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে তাঁরা ১৫টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ছাত্রলীগের রাবিতে ছাত্রদের ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসেন। আড়াইটায় ক্যাম্পাস থেকে লাঠি হাতে নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন তাঁরা।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে আন্দোলনকারীদের ওপর অন্তত সাতটি জেলায় ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। ফরিদপুর, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, রাজশাহী কলেজ ও নওগাঁ সরকারি মেডিকেল কলেজে সংঘর্ষে অন্তত ৬৮ জন আহত হয়েছেন।
বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে ছাত্রলীগের জঙ্গীরা হামলা চালিয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত সাতজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এ সময় আহত হয়েছেন ছয়জন আন্দোলনকারী।
রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বেলা ১১টা থেকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা কিশোরগঞ্জ শহরে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও রড নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে আন্দোলনকারীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করেন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে শহর থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে অতর্কিত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দিনাজপুরে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুজন ক্যামেরা পারসনসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নওগাঁ সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন চার শিক্ষার্থী।
বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেলা একটায় শহরের সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলার চেষ্টা করলে লাঠিসোঁটা হাতে তাঁরা ছাত্রলীগকে ধাওয়া করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। নরসিংদীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জেলখানার মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশমুখ নগরের টাউন হল মোড় এলাকা অবরোধ করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সকাল নয়টা থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস খড়খড়ি বাইপাসে ক্যাম্পাসের সামনে রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
সকাল ১০টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সময় বেসরকারি প্রাইম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
গতকাল বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলে সংহতি জানিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাভার মডেল কলেজ, মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ, সাভার ল্যাবরেটরি কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, মুন্সিগঞ্জ কলেজ ও রামপাল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। জেলার সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
#জুলাই_ডায়েরি
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন