ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মদ সা.-এর বন্ধু আবু বকর রা. তাবলীগের কাজ শুরু করেন। তিনি উসমান ইবনে আফফান, তালহা ইবন উবাইদিল্লাহ, যুবাইর ইবনুল আওয়াম ও সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা সকলে সাথে সাথে এ দাওয়াত কবুল করেন। এতে তিনি অত্যন্ত উৎসাহ বোধ করেন। এরপর তিনি উসমান ইবনে মাজউন, আবু উবাইদা এবং আল আরকাম ইবনে আবিল আরকামকে নিয়ে মুহাম্মাদের খিদমতে হাজির হন। তারা মুহাম্মদ সা.-এর সাথে কথা বলেন এবং সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
অনেক আগ থেকেই ইসলামের শিক্ষাগৃহ ছিল মসজিদ। আদম আ. দুনিয়াতে এসে বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেন। এটিই মানব জাতির প্রথম তারবিয়াতী সেন্টার। তারবিয়াতী সেন্টার বলতে বুঝিয়েছি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নূহ আ.-এর সময়ে ঘটে যাওয়া মহাপ্লাবনে কা'বা ঘর ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ইবরাহীম আ. তাঁর পুত্র ইসমাঈল আ.-কে সাথে আবার একই স্থানে কা'বা ঘর নির্মাণ করেন। তখন থেকে এটি মক্কার শিক্ষা-দীক্ষা ও ইবাদতের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়।
আল্লাহর রাসূল সা. নবুয়্যত পাওয়ার পর প্রায় তিন বছর গোপন দাওয়াত দিয়েছিলেন। দাওয়াত গ্রহণের পর মুসলিমদের তারবিয়াত প্রশিক্ষণ দেওয়াটা জরুরি বিষয় হয়ে পড়ে। প্রথম তিন বছর খুব বেশি আদেশ ছিল না বলে বেশি প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন হয়নি। তবে আল্লাহর রাসূল সা. নিজ গৃহে এই নসীহত ও প্রশিক্ষণের কাজ আঞ্জাম দিতেন।
প্রকাশ্য দাওয়াতের সাথে সাথে বিরোধীতাও বাড়তে থাকে। এসময় রাসূল সা. বিভিন্ন স্থানে নসীহত ও তারবিয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন। আদি মাদ্রাসা কা'বা ঘরেই বেশি বেশি জমায়েত হতেন মুসলিমদের নিয়ে। তিনি ভালো কাজের উপদেশ দিতেন ও নামাজ শিক্ষা দিতেন। একবার তাঁরা একত্রিত হয়ে নামাজ পড়ছিলেন। এমন সময় একদল মুশরিক সাহাবাদের গালাগাল দেয়। এতে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. একজন মুশরিককে এমনভাবে পেটালেন যে, তার রক্ত গড়িয়ে পড়লো। এভাবে নিয়মিত সংঘর্ষ হতে থাকলো। অন্যাদিকে দুই সাহাবী ইয়াসির রা. ও সুমাইয়া রা. শাহদাতবরণ করলেন।
অত্যাচারের এবং নির্যাতনের ভয়াবহ এ অবস্থায় কৌশল হিসাবে রাসূলুল্লাহ সা. মুসলমানদের বলেছিলেন যে, প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের কথা নতুন মুসলমানরা যেন প্রচার না করেন, তাছাড়া দেখা সাক্ষাত এবং মেলামেশার ব্যাপারে মুসলমানরা যেন গোপনীয়তার আশ্রয় নেন, কেননা আল্লাহর রাসূলের সাথে মুসলমানদের দেখা সাক্ষাতের কথা যদি অমুসলিমরা শোনে তাহলে তারা ইসলামের শিক্ষা দীক্ষার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করবে, ফলে উভয়ের পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠবে।
আর এ ধরনের সংঘর্ষ বারবার ঘটলে এবং দীর্ঘায়িত হলে মুসলমানদের এই ছোট দলটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। এ কারণে গোপনীয়তার কৌশল অবলম্বন করা ছিলো অত্যাবশ্যক। কৌশল অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরামরা তাদের ইসলাম গ্রহণ, ইবাদত বন্দেগী, তাবলীগ, পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ মেলামেশা সবই গোপনভাবে করতেন। তবে শুধু রাসূলুল্লাহ সা. তাবলীগে দ্বীন এবং ইবাদত সব কিছুই প্রকাশ্যে একা করতেন।
এই গোপনীয়তার কারণে মুসলিমরা আল্লাহর রাসূল সা. থেকে শিক্ষা নেওয়াটা বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল। এই সমস্যা সমাধানে আল্লাহর রাসূল সা. সাহাবাদের সাথে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসলেন। তিনি আল আরকাম ইবনে আবিল আরকামের ঘরকে তারবিয়াতের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেন। হিলফুল ফুযুল গঠনের সময়েও আরকাম রা. মুহাম্মদ সা.-কে সাহায্য করেছিলেন। আরকাম রা.-এর ঘর ছিল সাফা পাহাড়ের পাদদেশে। তিনি তাঁর ঘরকে মুসলিমদের প্রশিক্ষণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। নবুয়্যতের ৫ম বছর থেকে এখানে ইসলামের গোপন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ সা. ও অন্যান্য সাহাবীরা গোপনে এখানে মিলিত হতেন ও মিটিং করতেন। এখানেই মুসলিমদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হতো।
ইসলাম প্রচারের সূচনা থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. মানব জাতির মহান শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ইসলামী শিক্ষার নিয়মনীতি প্রবর্তন করেন। তিনি নবুয়ত লাভের পর কাবাকে প্রথম শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। পরে তিনি মক্কা নগরীর সাফা পাহাড়ের পাদদেশে আরকাম বিন আবুল আরকামের বাড়িতে ‘দারুল আরকাম’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
দারুল আরকামই ইসলামের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাসূলুল্লাহ সা. নিজে এখানে শিক্ষা দানে নিয়োজিত ছিলেন। আবু বকর সিদ্দিক রা., হজরত উমর ইবনে খাত্তাব রা., হজরত উসমান ইবনে আফফান রা., হজরত আলী ইবনে আবি তালিবসহ রা.সহ প্রথম শ্রেণীর সাহাবায়ে কেরাম এখানকার উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন। মদিনায় হিজরতের আগে আকাবার শপথের মাধ্যমে যারা ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তাদের প্রশিক্ষিত করতে তিনি হজরত মুসআব ইবনে উমাইরকে মদিনায় পাঠান। মহানবী সা.-এর হিজরতের সময় দারুল আরকামে শিক্ষাদানের জন্য হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম ও মুসআব ইবনে উমাইরের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। হিজরতের পর মক্কায় অবশিষ্ট মুসলমানদের মধ্যে দারুল আরকামের মাধ্যমেই দাওয়াতে ইসলামের কর্মকাণ্ড জারি রাখা হয়। এর মানে রাসূল সা. হিজরত করলেও দারুল আরকামের অফিস ও মাদ্রাসা তিনি ক্লোজ করেন নি।
মক্কার এই বেসরকারি ও গোপন সেন্টার থেকে শুরু করে ইসলামের প্রশিক্ষণের নিমিত্তে আল্লাহর রাসূল সা. হিজরতের পর মদিনায় অনেকগুলো তারবিয়াতী সেন্টার তৈরি করেন। মদিনার তারবিয়াতি সেন্টারগুলো প্রকাশ্য ও সরকারি তত্ত্বাবধানে। তবে দারুল আরকামের শিক্ষার্থীরাই ছিলেন আল্লাহর রাসূল সা.-এর বেশি প্রিয় ও উঁচু মর্যাদার সাহাবী। ইসলামের জন্য যারা ত্যাগ-কুরবানীর নজির বেশি দেখাতে সক্ষম হয়েছেন ও ইসলামকে যারা নিজের মধ্যে ও সমাজে ভালোভাবে কায়েম করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরাই দারুল আরকামের ছাত্র।
মুহাম্মদ সা.-এর তারবিয়াতী মিশন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই সেই পবিত্র সত্ত্বা। যিনি নিরক্ষর লোকদের মধ্য থেকে একজনকে নবী করে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে তার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে পবিত্র করবেন, তাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও প্রজ্ঞা। যদিও ইতোপূর্বে তারা ভ্রান্তিতে (অজ্ঞতায়) মগ্ন ছিলো। ’ (সূরা জুমআ- ০২)
রাসূল সা. নিজেই বলেন, ‘নিশ্চয় আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ - ২২৯)
মুয়াবিয়া রা. বলেন, ‘তার জন্য আমার বাবা ও মা উৎসর্গিত হোক। আমি তার পূর্বে ও পরে তার চেয়ে উত্তম কোনো শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহর শপথ! তিনি কখনো কঠোরতা করেননি, কখনো প্রহার করেননি, কখনো গালমন্দ করেননি। ’ -সহিহ মুসলিম
রাসূলুল্লাহ সা. পাঠদানের সময় থেমে থেমে কথা বলতেন। যেন তা গ্রহণ করা শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ হয়। খুব দ্রুত কথা বলতেন না যেনো শিক্ষার্থীরা ঠিক বুঝে উঠতে না পারে আবার এতো ধীরেও বলতেন না যাতে কথার ছন্দ হারিয়ে যায়। বরং তিনি মধ্যম গতিতে থেমে থেমে পাঠ দান করতেন।
রাসূলুল্লাহ সা. কোনো বিষয়ে আলোচনা করলে, তার দেহাবয়বেও তার প্রভাব প্রতিফলিত হতো। তিনি দেহ-মনের সমন্বিত ভাষায় পাঠ দান করতেন। কারণ, এতে বিষয়ের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে শ্রোতা শিক্ষার্থীগণ সঠিক ধারণা লাভে সক্ষম হয় এবং বিষয়টি তার অন্তরে গেঁথে যায়। যেমন, তিনি যখন জান্নাতের কথা বলতেন, তখন তার দেহে আনন্দের স্ফূরণ দেখা যেতো। জাহান্নামের কথা বললে ভয়ে চেহারার রঙ বদলে যেতো। যখন কোনো অন্যায় ও অবিচার সম্পর্কে বলতেন, তার চেহারায় ক্রোধ প্রকাশ পেতো এবং কণ্ঠস্বর উঁচু হয়ে যেতো। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. যখন বক্তব্য দিতেন- তার চোখ লাল হয়ে যেতো, আওয়াজ উঁচু হতো এবং ক্রোধ বৃদ্ধি পেতো। যেনো তিনি (শত্রু) সেনা সম্পর্কে সতর্ককারী। ’ -সহিহ মুসলিম : ৪৩
শিক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষককে অনেক সময় গল্প-ইতিহাস বলতে হয়। রাসূল সা.ও পাঠদানের সময় গল্প বলতেন। তিনি গল্প বলতেন অত্যন্ত মিষ্টি করে। এমন মিষ্টি ভঙ্গি গল্প-ইতিহাস স্বপ্রাণ হয়ে উঠতো। জীবন্ত হয়ে উঠতো শ্রোতা-শিক্ষার্থীর সামনে। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি (মুগ্ধ হয়ে) রাসূল সা.-এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তিনি আমাকে শিশুদের কাজ সম্পর্কে বলছিলেন। তিনি তার মুখে আঙুল রাখলেন। এবং তাতে চুমু খেলেন। ’অর্থাৎ তিনি শিশুদের মতো ঠোঁট গোল করে তাতে আঙুল ঠেকালেন। -মুসনাদে আহমদ : ৮০৭১
রাসূল সা. পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের নিকট প্রশ্ন করতেন। যেনো তারা প্রশ্ন করতে এবং তার উত্তর খুঁজতে অভ্যস্ত হয়। কেননা নিত্যনতুন প্রশ্ন শিক্ষার্থীকে নিত্যনতুন জ্ঞান অনুসন্ধানে উৎসাহী করে। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. জিজ্ঞেস করেন, হে মুয়াজ! তুমি কী জানো বান্দার নিকট আল্লাহর অধিকার কী? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। রাসূল সা. বলেন, তার ইবাদত করা এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা।’ -সহিহ বোখারি : ৭৩৭৩
নবী করিম সা. অনেক সময় কোনো বিষয় স্পষ্ট করার জন্য উপমা ও উদাহরণ পেশ করতেন। কেননা উপমা ও উদাহরণ দিলে যে কোনো বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যায়। হজরত সাহাল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করবো। হজরত সাহাল (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) তার শাহাদত ও মধ্যমা আঙুলের প্রতি ইঙ্গিত করেন।’ (সহিহ বোখারি : ৬০০৫) এরকম বহু হাদিস আছে। যেমন তাকওয়া অন্তরে থাকে এটা বুঝাতে তিনি অন্তরের দিকে ইঙ্গিত করেন।
শিক্ষার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো প্রাক্টিক্যাল বা প্রয়োগিক শিক্ষা। রাসূল সা. অধিকাংশ বিষয় নিজে আমল করে সাহাবিদের শেখাতেন। শেখাতেন হাতে-কলমে। এজন্য হজরত আয়েশা রা. বলেন, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো কোরআন। রাসূল সা. বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় কর, যেমন আমাকে আদায় করতে দেখো। ’ -সুনানে বায়হাকি : ৩৬৭২
মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার একটি সহজ উপায় হলো- মানুষের বিবেক ও মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলা। রাসূল সা. বিবেক ও মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলার মাধ্যমেও মানুষকে শিক্ষাদান করেছেন। যেমন- এক যুবক রাসূল সা. কে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ব্যভিচারের অনুমতি দিন। তার কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা মারমুখি হয়ে উঠলো এবং তিরস্কার করলো। রাসূল সা. তাকে কাছে ডেকে নিলেন এবং বললেন, তুমি কী তোমার মায়ের ব্যাপারে এমনটি পছন্দ কর? সে বললো, আল্লাহর শপথ না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। রাসূল সা. বললেন, কেউ তার মায়ের ব্যাপারে এমন পছন্দ করে না। এরপর রাসূল সা. একে একে তার সব নিকট নারী আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেন এবং সে না উত্তর দেয়। এভাবে রাসূল সা. তার বিবেক জাগ্রত করে তোলেন। -মুসনাদে আহমদ : ২২২১১
কখনো কখনো কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য রাসূল সা. রেখাচিত্র ও অঙ্কনের সাহায্য নিতেন। যেন শ্রোতা ও শিক্ষার্থীর সেটা বুঝতে সহজ হয়। হজরত আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. একটি চারকোণা দাগ দিলেন। তার মাঝ বরাবর দাগ দিলেন। যা তা থেকে বের হয়ে গেছে। বের হয়ে যাওয়া দাগটির পাশে এবং চতুষ্কোণের ভেতরে ছোট ছোট কিছু দাগ দিলেন। তিনি বললেন, এটি মানুষ। চতুষ্কোণের ভেতরের অংশ তার জীবন এবং দাগের যে অংশ বের হয়ে গেছে সেটি তার আশা। ’ (সহিহ বোখারি : ৬৪১৭) এভাবে রাসূল সা. রেখাচিত্রের সাহায্যে মানুষের জীবন ও জীবনের সীমাবদ্ধতার বিষয় স্পষ্ট করে তুললেন।
রাসূলে আকরাম সা. শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের অনাগত জীবন সম্পর্কে যেমন আশাবাদী করে তুলতেন, তেমনি তার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন। যেমন- হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. একটি ভাষণ দিলেন। আমি এমন ভাষণ আর শুনিনি। তিনি বলেন, আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে অল্প হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। ’ (সহিহ বোখারি : ৪৬২১) হজরত আবু জর গিফারি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ বললো এবং তার ওপর মৃত্যুবরণ করলো, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদি সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে? রাসূল সা. বলেন, হ্যাঁ। যদি সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে।’ (সহিহ বোখারি : ৫৪২৭)
রাসূলুল্লাহ সা. ভুল সংশোধনের মাধ্যমে শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতেন। হজরত আবু মাসউদ আনসারি রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট অভিযোগ করে যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কারণ অমুক ব্যক্তি নামাজ দীর্ঘায়িত করে ফেলে। তখন রাসূল সা. বলেন, ‘হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমরা অনীহা সৃষ্টিকারী। সুতরাং যে মানুষ নিয়ে (জামাতে) নামাজ পড়াবে, সে তা যেনো হাল্কা করে (দীর্ঘ না করে)। কেননা তাদের মধ্যে অসুস্থ্য, দুর্বল ও জুল-হাজাহ (ব্যস্ত) মানুষ রয়েছে। (সহিহ বোখারি : ৯০)
গুরুতর অপরাধের জন্য রাসূলুল্লাহ সা. কখনো তার শিষ্য ও শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান করে সংশোধন করতেন। তবে রাসূল সা. অধিকাংশ সময় শারীরিক শাস্তি এড়িয়ে যেতেন। ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেন। যেমন উপযুক্ত কারণ ব্যতীত তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় হজরত কাব ইবনে মালেক রা.-সহ তিনজনের সঙ্গে রাসূল সা. কথা বলা বন্ধ করে দেন। যা শারীরিক শাস্তির তুলনায় অনেক বেশি ফলপ্রসূ ছিলো।
রাসূল সা. বেদুইন একটি জাতিকে তার কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করান। তার শিক্ষা ও সাফল্য শুধু ইহকালীন সাফল্য বয়ে আনেনি বরং তার পরিব্যপ্তি ছিলো পরকালীন জীবন পর্যন্ত। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর রাসূল সা.-এর তারবিয়াতী মিশন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আমরা যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি তার সম্পর্কে যদি আমাদের পূর্ণ জ্ঞান না থাকে তবে কীভাবে আমরা সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করবো? এজন্য ইকামাতে দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার হলো তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন