১৩ জুল, ২০২১

বিষয়ভিত্তিক আয়াত হাদিস

 


উলুমুল কুরআন

আল কুরআনের পরিচয়


আভিধানিক অর্থ :

আল-কুরআন ((اَلْقُرْاٰنُ শব্দটি আরবি, যা قَرْأٌ কিংবা  قَرْنٌ  শব্দ থেকে উৎপন্ন।  قَرْأٌ  (পড়া) শব্দ থেকে আসলে قُرْاٰنُ শব্দের অর্থ হয় অধিক পঠিত। আর قَرْنٌ (মিলিত থাকা) শব্দ থেকে আসলে قُرْاٰنُ শব্দের অর্থ হয়; পরিপূর্ণভাবে মিলিত ও সংযুক্ত। যেহেতু কুরআন মাজিদ সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ এবং এর আয়াত অর্থ ও বিষয়বস্তুর মাঝে পরিপূর্ণ মিল রয়েছে, তাই এর নাম اَلْقُرْاٰنُ। 


পারিভাষিক অর্থ : 

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির হেদায়াতের জন্য জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে মুহাম্মাদ  #   -এর নবুওয়াতের দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে যে কিতাব নাজিল হয়েছে তার সমষ্টি আল কুরআন।

اَلْمَنَارِ  গ্রন্থকার বলেন-

هُوَ الْكِتَابُ الْمَنَزَّلُ عَلٰى الرَّسُوْلِ ﷺ الْمَكْتُوْبُ فِيْ الْمَصَاحِفِ الْمَنْقُوْلُ عَنْهُ نَقْلًا مُتَوَاتِرًا بِلَا شُبْهَةٍ-

কুরআন হচ্ছে সে গ্রন্থ যা রাসূল #   -এর ওপর অবতীর্ণ যাকে মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং সন্দেহমুক্ত প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে রাসূল  #     থেকে বর্ণিত হয়েছে।

মহান আল্লাহর বাণী :  هٰذَا بَيَانٌ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ“এটা মানুষের জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং আল্লাহভীরুদের জন্য পথপ্রদর্শক ও উপদেশ।” (আলে ইমরান : ১৩৮)

আল কুরআনের কয়েকটি নাম

১।  اَلْهُدٰى (আল হুদা) পদপ্রদর্শক : هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ  

২।  اَلْكِتَابُ  (আল কিতাব) গ্রন্থ  : هُوَ الَّذِيْ أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ  

৩।  اَلْفُرْقَانُ  (আল ফুরকান) পার্থক্যকারী :

 اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلىٰ عَبْدِه  

৪।   اَلْنُوْرُ(আন নূর) আলো : قَدْ جَائَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ  

৫।)  اَلْذِّكْرُ আয্-যিকর) উপদেশ   : وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ  

৬।  كِتَا بٌ مُّبِيْنٌ(কিতাবুম মুবিন) সুস্পষ্ট কিতাব : حٰم وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ  

৭। اَلْكَلَامُ  (আল কালাম) কথাবার্তা : حَتّىٰ يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ  

৮।  اَلْحِكْمَةُ (আল হিকমাহ) প্রজ্ঞা : وَيُعَلِّهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ  

৯।  اَلْبَيَانُ (আল বায়ান) বর্ণনা: هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ  

১০।  بُشْرٰى (বুশরা) সুসংবাদ : هُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ  

১১।  حَبْلِ اللهِ(হাবলিল্লাহ) আল্লাহর রজ্জু : وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا  

১২।  الْحَقَّ (আল হাক্কু) সত্য : فَيَعْلَمُوْنَ اَنَّهُ الْحَقَّ مِنْ رَّبِّهِمْ  

১৩।  الْمَوْعِظَةٌ (আল মাওইযাহ) উপদেশ :

 قَدْجَائَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ 

১৪।اَلْوَحْيُ   (আল ওহি) প্রত্যাদেশ : اِنْ هُوَ إِلَّا وَحْىٌ يُّوْحٰى  

১৫।   اَلشِّفَاءُ (আশ শিফা) উপশমকারী : وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ  



আয়াতের প্রকারভেদ  

হুকুমের দিক থেকে ৩ প্রকার: ১. হালাল ২. হারাম ৩. আমসাল।

অর্থের দিক থেকে ২ প্রকার: ১. মুহ্কামাত ২. মুতাশাবিহাত।

هُوَ الَّذِیْۤ أَنْزَلَ عَلَیْكَ الْكِتٰبَ مِنْهُ اٰیٰتٌ مُّحْكَمٰتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتٰبِ وَ اُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌ (اٰلِ عِمْرَانَ : ৭)

হাদীসের আলোকে আয়াতের প্রকার

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ (رض) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ نَزَلَ الْقُرْآنُ عَلى خَمْسَةِ اَوْجُهٍ حَلاَلٍ وَحَرَامٍ وَمُحْكَمِ وَمُتَشَابِهٍ وَ أَمْثَالٍ فَأَحِلُّوْا الْحَلَالَ وَحَرِّمُوْا الْحَرَامَ وَاعْلَمُوْا بِالْمُحْكَمِ وَآمِنُوْا بِلْمُتَشَابِهِ وَاعْتَبِرُوْ بِالْاَمْثَالِ- (بُخَارِيْ، مُسْلِمْ)


সূরাসমূহকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে

সূরা ২ প্রকার। ১. মাক্কি সূরা ও ২. মাদানি সূরা

মাক্কি সূরা : যে সমস্ত সূরা রাসূল  #    এর মাক্কি জীবনে অর্থাৎ হিজরতের পূর্বে নাজিল হয়েছে, সেগুলোকে মাক্কী সূরা বলা হয়। মাক্কী সূরা ৮৬টি।

মাদানি সূরা :  যে সমস্ত সূরা রাসূল  #    এর মাদানি জীবনে অর্থাৎ হিজরতের পরে নাজিল হয়েছে, সেগুলোকে মাদানী সূরা বলা হয়। মাদানী সূরা ২৮টি।


মাক্কি সূরার বৈশিষ্ট্য

১.  সাধারণত সূরা ও আয়াতগুলো ছোট ছোট ও ছন্দময়। 

২. তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সংক্রান্ত আলোচনা।

৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রে  يَا اَيُّهَا اَلنَّاسُ   (হে মানবজাতি) বলে সম্বোধন।

৪. মাক্কি সূরা ব্যক্তিগঠনে হিদায়াতপূর্ণ

৫. আল-কুরআন সত্যতার প্রমাণ ও ঈমান আকিদার আলোচনা।

৬. মানুষের ঘুমন্ত বিবেক ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে চিন্তাশক্তিকে সত্য গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করা।

৭.ভবিষ্যৎকালীন ক্রিয়ার শুরুতে  س ও سوف শব্দের ব্যবহার বেশি।



মাদানি সূরার বৈশিষ্ট্য

১.  সাধারণত সূরা ও আয়াতগুলো বড় ও গদ্যময়।

২. অধিকাংশ ক্ষেত্রে  يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا  (হে ঈমানদারগণ) বলে সম্বোধন।

৩. সামাজিক বিধি-বিধান, ফৌজদারি আইন, উত্তরাধিকারী আইন, বিয়ে তালাক ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা।

৪. যুদ্ধ, সন্ধি, গনিমত, জিজিয়া ইত্যাদির বিবরণ।

৫. ইবাদত, আহকামে শরিয়ত ও হালাল-হারামের বর্ণনা।

৬. মুনাফিক ও কাফিরদের সাথে আচরণ সংক্রান্ত আলোচনা।

৭. জাকাত ও ওশরের নিয়ম-কানুন আলোচনা।


কুরআন অধ্যয়নে সমস্যা

১. অন্যান্য সাধারণ গ্রন্থের ন্যায় মনে করা।

২. একই বিষয়ের বারবার উল্লেখ।

৩. কোন বিষয়সূচি না থাকা।

৪. নাজিলের প্রেক্ষাপট না জানা।

৫. নাসিখ-মানসুখ না জানা।

৬. আরবি ভাষা না জানা।

৭. রাসূল  #    -এর বিপ্লবী জীবন সম্পর্কে ধারণা না থাকা।


সমাধানের উপায় 

১. অধ্যয়নের সময় নিরপেক্ষ মনমগজ নিয়ে বসা।

২. আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট ও রাসূল  #   -এর আন্দোলনের বিভিন্ন অবস্থা ও পর্যায় সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভ করা।

৩. নাসিখ- মানসুখ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। 

৪. আরবি ভাষা শেখার চেষ্টা করা।

৫. কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হওয়া।

৬. ঘরে বসে কুরআন বুঝার চেয়ে কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হওয়া।




ওহি নাজিলের পদ্ধতি ৭টি

১. সত্য স্বপ্নযোগে   اَوَّلُ مَا بُدِئَ بِه رَسُوْلُ اللهِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةِ فِي النَّوْمِ

২. ঘন্টাধ্বনির ন্যায়  اَحْيَانًا يَأْتِيْنِىْ مِثْلَ صَلْصَلَةِ الْجَرَسِ

৩. জিবরাইল (আ) এর নিজস্ব আকৃতিতে।

৪. জিবরাইল (আ) কর্তৃক মানুষের আকৃতিতে।

 وَاَحْيَانًا يَتَمَثَّلُ لِىَ الْمَلَكُ رَجُلًا

৫. ইসরাফিল (আ) এর মাধ্যমে।

৬. পর্দার অন্তরাল থেকে।

৭. অন্তকরণে ঢেলে দেয়া/ইলহামের মাধ্যমে।

 وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِىَ بِاِذْنِه مَا يَشَاءُ (اَلشُّوْر : ٥١)


আল-কুরআন সংকলনের ইতিহাস :

তিন যুগে বিভিন্নভাবে আল-কুরআন সঙ্কলিত হয়েছে।


রাসূল  #    এর যুগ : এ যুগে দুভাবে হয়েছে :

১. মুখস্থ করার মাধ্যমে : হাফিজে কুরআনগণের মধ্যে প্রধানত ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, সালেম ইবনে মাকাল, মুয়ায ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা’ব, যায়িদ বিন সাবিত, আবু যায়িদ, আবু দারদা "     প্রমুখ।

২. লেখার মাধ্যমে : কাতেবে ওহিগণের মধ্যে প্রধানত ছিলেন আলী ইবনে আবু তালিব, মুয়ায ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা’ব, যায়িদ বিন সাবিত ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ "   প্রমুখ। তারা পাথর, খেজুরের ডাল, চামড়া ইত্যাদির ওপর আল-কুরআনের আয়াতসমূহ লিখে সংরক্ষণ করতেন।


হজরত আবু বকর "    এর যুগ

ভণ্ডনবি মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে সংঘটিত ইয়ামামার যুদ্ধে অসংখ্য হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন। এতে আল-কুরআন বিলুপ্তির আশঙ্কায় হজরত ওমর "   -এর পরামর্শক্রমে খলিফা আবু বকর "    হজরত যায়েদ বিন সাবিতের নেতৃত্বে আল-কুরআন সংকলন বোর্ড গঠন করেন। এ বোর্ডের সদস্যগণ কঠোর সাধনা করে আল-কুরআনের লিখিত বিভিন্ন অংশকে হাফেজে কুরআনের সাথে সমন্বয় করে একত্র করেন। যার নাম রাখা হয় মুসহাফে সিদ্দিকী। হজরত আবু বকর "    এর মৃত্যুর পর এ কপিটি হজরত ওমরের কাছে এবং তাঁর ইন্তিকালের পর হজরত হাফসা "    একে সংরক্ষণে রাখেন।


হজরত উসমান (রা) এর যুগ

হজরত ওমর "    ও উসমান "    এর খেলাফতকালে ইসলামী রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ঘটায় আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা আল-কুরআন মাজিদকে তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ করতে থাকেন। এতে আল-কুরআন বিকৃতির আশঙ্কায় হজরত উসমান (রা) আল-কুরআনের বিকৃত অংশগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে দেন এবং মুসহাফে সিদ্দিকী এর অনুরূপ সাতটি কপি করে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে দেন। আজ পর্যন্ত আল-কুরআন মাজিদ সে অবয়বেই বিদ্যমান। এর মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয়নি। কেননা আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ

“নিশ্চয়ই আমি এ উপদেশবাণী নাজিল করেছি, আমিই এর সংরক্ষণ করব। (সূরা হিজর : ০৯)


কয়েকটি প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থের নাম 

১. তাফসির ইবনে আব্বাস- আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)

২. তাফসিরুল কুরআনিল আযীম (তাফসীরে ইবনে কাসীর) ইমাদুদ্দীন ইসমাঈল ইবনে আমর ইবনে কাসীর।

৩. ফাতহুল কাদীর- ইমাম শাওকানী।

৪. তাফসীরে কাশশাফ-জারুল্লাহ যামাখশারী।

৫. মাফাতীহুল গাইব-ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী।

৬. তাফসির জালালাইন- জালালুদ্দীন মহল্লি ও জালালুদ্দীন সুয়ুতি।

৭. আনওয়ারুত তানজিল ওয়া আসরারুত তাবী- নাসিরুদ্দীন বায়যাব।

৮. তাফহীমুল কুরআন- সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী।

৯. ফি জিলালিল কুরআন- সাইয়েদ কুতুব শহীদ।

১০. আল জামে লি আহকামিল কুরআন- ইমাম কুরতুবী।

১১. মায়ারেফুল কুরআন- মুফতি মোহাম্মদ শফী।

১২. জামেউল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন- ইবনে জারির তাবারি।

১৩. ঞযব গবংংধমব- গঁযধসসধফ অংধফ



প্রথম অতবীর্ণ আয়াত ও সূরা :

সূরা আলাকের ১ম পাঁচ আয়াত-

 اِقْرَأ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ، خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ .....مَا لَمْ يَعْلَمْ

* পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসাবে ১ম নাজিল হয় সূরা ফাতেহা-

 اَلْحَمْدُ لِـلّـهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ............. غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ


সর্বশেষ অতবীর্ণ আয়াত ও সূরা : এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়-

১। বাকারা-২৭৮ (সুদ সংক্রান্ত আয়াত)- يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْ اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِىَ مِنَ الرِّبى-

২। বাকারা-২৮২ (ঋণ সংক্রান্ত আয়াত)- يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا تَدَايَنْتُمْ بِدَيْنٍ اِلى اَجَلٍ مُسَمَّى فَاكْتُبُوْه

৩। বাকারা-২৮১  وَاتَّقُوْا يَوْمًا تُرْجَعُوْنَ فِيْهِ اِلى اللهِ 

৪। নিসা-১৭৬ - يَسْتَفْتُوْنَكَ قُلِ اللهُ يُفْتِيْكُمْ فِيْ الْكَلَالَةِ

৫। সর্বশেষ নাজিলকৃত পূর্ণাঙ্গ সূরা : সূরা নাসর।

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ................. إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا


দারসুল কুরআনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ

১. বিশুদ্ধ তিলাওয়াত।

২. সরল অনুবাদ।

৩. সূরার নামকরণ।

৪. নাজিলের সময়কাল।

৫. শানে নুজূল/অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট।

৬. নির্বাচিত অংশের বিষয়বস্তু।

৭. ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও তাফসীর।

৮. বর্তমান যুগে আয়াতের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন।

৯. আয়াতের শিক্ষা।

১০. প্রশ্নোত্তর।


সিজদার আয়াতসমূহ :

নং পারা সূরার নাম আয়াত রুকু

আল আরাফ ২০৬ ২৪

১৩ আর রাদ ১৫

১৪ আন নাহল ৪৯-৫০

১৫ বাণী ইসরাইল ১০৭-১০৯ ১২

১৬ মারইয়াম ৫৮

১৭ আল হজ্ব ১৮

১৯ আল ফুরকান ৬০

১৯ আন নামল ২৫-২৬

২১ আস সিজদাহ ১৫

১০ ২৩ আস সোয়াদ ২৪-২৫

১১ ২৪ হা-মীম সিজদাহ ৩৭-৩৮

১২ ২৭ আন নাজম ৬২

১৩ ৩০ আল ইনশিক্বাক্ব ২১

১৪ ৩০ আল আলাক্ব ১৯


ইমাম আবু হানিফার মতে সিজদার আয়াত ১৪টি

ইমাম শাফেয়ীর মতে সিজদার আয়াত ১৫টি, অপরটি হচ্ছে

১৫. পারা-১৭, সূরা-হজ্জ্ব, আয়াত-৭৭, রুকু-১০


এক নজরে আল-কুরআন

১. সূরা -১১৪।

২. মাক্কি সূরা- ৮৬, মতান্তরে  ৮৯।

৩. মাদানি সূরা- ২৮, মতান্তরে ২৫।

৪. আয়াত সংখ্যা- ৬৬৬৬, মতান্তরে ৬২৩৬।

৫. রুকু ৫৫৪, মতান্তর ৫৬১।

৬. সিজদার আয়াত ১৪টি মতান্তরে ১৫টি । 

৭. পারা ৩০।

৮. আল কুরআনের আলোচ্য বিষয় মানুষ (সূরা আহযাব : ৭২)।

৯. ১ম নাজিলের সময়: হিজরি পূর্ব ১৩ সনে, ৬১০ ঈসায়ী।

১০. নাজিলের শেষ সময়: হিজরি ১১ সনে, ৬৩২ ঈসায়ী। 

১১. পূর্ণাঙ্গ আল-কুরআন সর্বপ্রথম গ্রন্থবদ্ধ হয় হিজরি ১২ সনে (৬৩৩ ঈসায়ী), হজরত আবু বকর "    এর পৃষ্ঠপোষকতায়।

১২. আল-কুরআনে হরকত সংযোজন করেন- হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, হিজরি ৭৫ সালে (৬৯৪ ঈসায়ী)। 

১৩. মনজিল সংখ্যা -৭টি। 

১৪. আল-কুরআনে (আল্লাহ) শব্দটি ২৫৮৪/২৬৯৯ বার এসেছে । 

১৫. আল-কুরআনে (মুহাম্মাদ) শব্দটি ৪ বার এসেছে।

১৬. আল-কুরআনে (লা ইলাহা ...) শব্দটি ২ বার এসেছে। 

১৭. সূরা “আত-তওবার” শুরুতে বিসমিল্লাহ নেই । 

১৮. সূরা “আত-তওবার” অপর নাম ‘আল-বারাআত’

১৯. সূরা “আন-নামলে” দুইবার  বিসমিল্লাহ উল্লেখ আছে । 

২০. সূরা “মুহাম্মাদ”এর অপর নাম সূরা “কিতাল”। 

২১. সূরা “আল-মু’মিন”এর অপর নাম সূরা “গাফির ”

২২. সূরা “হামিম সিজদাহ ”এর অপর নাম সূরা “ফুসসিলাত”।

২৩. সাহাবাগণের "    মধ্যে হজরত যায়িদ বিন হারিসের "    নাম কুরআনে এসেছে। (সূরা আহযাব- ৩৭)

২৪. আল-কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন (আংশিক) মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া । 

২৫. আল-কুরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন- মৌলভী নঈম উদ্দীন ১৮৩৬ সালে।

২৬. আল-কুরআনে ২৫ জন নবি-রাসূলের নাম উল্লেখ আছে ।


বিষয়বস্তুর আলোকে আয়াত সংখ্যা :

১. আদেশ সংক্রান্ত আয়াত-১০০০

২. নিষেধ সংক্রান্ত আয়াত-১০০০

৩. সুসংবাদ সংক্রান্ত আয়াত-১০০০

৪. সতর্কবাণী সংক্রান্ত আয়াত-১০০০

৫. উদাহরণ সম্বলিত আয়াত-১০০০

৬. ঘটনাবলী সম্বলিত আয়াত-১০০০

৭. হালাল হারাম সংক্রান্ত আয়াত-৫০০

৮. তাসবীহ সংক্রান্ত আয়াত-১০০

৯. বিবিধ প্রসঙ্গের আয়াত-৬৬


সূরা ফাতিহার কয়েকটি নাম

১. উম্মুল-কুরআন  (اُمٌّ الْقُرْاٰنِ) (আল-কুরআনের জননী)

২. উম্মুল কিতাব (اُمٌّ الْكِتَا بِ )  (কিতাবের জননী)

৩. ফাতেহাতুল কিতা (فَاتِحَةُ الْكِتَا بِ )  (কিতাবের ভূমিকা)

৪. সূরাতুল হামদ (سُوْرَةُ الْحَمْدِ )  (প্রশংসার সূরা)

৫. সূরাতুশ শুকর (سُوْرَةُ الشُّكْرِ )  (কৃতজ্ঞতার সূরা)

৬. সূরাতুশ শিফা  ( سُوْرَةُ الْشِفَا ءِ ) (আরোগ্য লাভের সূরা)

৭. সূরাতুদ দোয়া  ( سُوْرَةُ الدُّعَاءِ ) (প্রার্থনার সূরা) 

৮. সূরাতুল মোনাজাত ( سُوْرَةُ الْمُنَاجَا ةِ )  (মুক্তির দোয়া) 

৯. সূরাতুস সালাত ( سُوْرَةُ الصَّلَا ةِ )    (নামাজের সূরা)

১০. সূরাতুস সুয়াল (سُوْرَةُ السُّوَالِ)  (চাওয়া/প্রশ্নের সূরা)

১১. সূরাতুল কানয (سُوْرَةُ الْكَنْزِ)  (সম্পদের সূরা)

১২. আসসাবউল মাছানী (اَلسَّبْعُ الْمَثَانِىْ)  (অভিনব সাতটি আয়াত)

১৩. সূরাতুস শাফিয়া (سُوْرَةُ الشَّافِيَةِ)  (সুস্থতার সূরা)

১৪. সূরাতুল কাফিয়া (سُوْرَةُ الْكَافِيَةِ )  (যথেষ্ট/যথার্থ সূরা)

১৫. সূরাতুল ওয়াফিয়া (سُوْرَةُ الْوَافِيَةِ)  (পরিপূর্ণ সূরা)


উলুমুল হাদিস

হাদিস কী?

হাদিস আরবি শব্দ। অর্থ নতুন কথা বা কাজ। পরিভাষায়, মহানবি  #   এর কথা, কাজ, অনুমোদন ও মৌনসম্মতিই হাদিস। হাদিসের অপর নাম খবর। হাদিস শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস এবং দলিল। মান জীবন পরিচালনার জন কুরআনের পরেই হাদিসের স্থান। হাদিসও এক ধরনের অহী। দুই প্রকার অহির মাঝে হাদিসের অবস্থান দ্বিতীয় অর্থাৎ অহিয়ে গায়রে মাতলু।

হাদিস হচ্ছে কুরআনুল কারিমের ব্যাখ্যা।

কুরআনের বাণী; وَمَا آتَاكُمْ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا

“ তোমরা তা গ্রহণ কর যা রাসূল  #    নিয়ে এসেছেন এবং তা থেকে বিরত থাক, যা তিনি নিষেধ করেছেন। (আল হাশর : ০৭)

হাদিস মূলত অহি, কুর আনের বাণী :

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى اِنْ هُوَ إِلَّا وَحْىٌ يُّوْحىٰ

“তিনি (রাসূল) অহি ব্যতীত কোন কথাই বলেন না। (আন নজম : ৩-৪)


কুরআনের বাণী :

فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِیْ شَیْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ ذٰلِكَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا.

অতপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসুলের দিকে প্রত্যার্পণ করাওÑ যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা : ৫৯)


রাসূল   #     এর বাণী :

وَعَنْ مَالِكٍ ابْنِ أَنَسٍ قَال قَال رَسُوْلُ اللهِ ﷺ تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْ مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابُ اللهِ وَسُنَّةُ نَبِيِّهِ.

আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন তা ধরে রাখবে ততদিন বিপথগামী হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব, অপরটি তাঁর নবির সুন্নাত (কর্মপদ্ধতি, কর্মকৌশল)। (মুয়াত্তা মালেক)


সনদের দিক থেকে হাদিস তিন প্রকার :

১. মারফু (مَرْفُوْعٌ) : যে হাদিসের বর্ণনা সূত্র রাসূলুল্লাহ  #    পর্যন্ত পৌঁছেছে।

২. মাওকুফ (مَوْقُوْفٌ) : যে হাদিসের বর্ণনা সূত্র সাহাবি পর্যন্ত পৌঁছেছে। 

৩. মাকতু (مَقْطُوْعٌ) : যে হাদিসের বর্ণনা সূত্র তাবেয়ি পর্যন্ত পোঁছেছে।


মতনের দিক থেকে হাদিস তিন প্রকার :

১. কাওলি (قَوْلِىْ) : রাসূল  #    এর কথা সংবলিত হাদিসকে কাওলি হাদিস বলে। আদেশ, নিষেধ অথবা অন্যান্য যত প্রকার মৌখিক বর্ণনা তাকে ‘কাওলি’ বলে।

২. ফেলি (فِعْلِىْ) : রাসূল  #    এর বাস্তব জীবনের কর্মমূলক হাদিসকে ফেলি হাদিস বলে। কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহার, উঠা-বসা, লেন-দেন সম্পর্কীয় কথাগুলোকে ফেলি হাদিস বলে।

৩. তাক্বরিরি (تَقْرِيْرِىْ) : সাহাবিগণের যে সব কথা ও কাজের প্রতি রাসূল  #    সমর্থন প্রদান করেছেন তাকে তাক্বরিরি হাদিস বলে। 




বর্ণনাকারী তথা রাবিদের সংখ্যা অনুযায়ী হাদিস চার প্রকার :

১. মুতাওয়াতির (مُتَوَاتِرٌ) : ঐ হাদিস, প্রত্যেক যুগে যার বর্ণনাকারীদের সংখ্যা এত বেশি যে, যাদের মিথ্যাচারে মতৈক্য হওয়া স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব।

২. মাশহুর (مَشْهُوْرٌ) : যে হাদিসের বর্ণনাকারী কোন যুগেই বর্ণনাকারীর সংখ্যা তিনের কম ছিল না।

৩. আযীয (عَزِيْزٌ) : যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোন যুগেই দুই এর কম ছিল না।

৪. গরিব (غَرِيْبٌ) : যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোন কোন যুগে একজনে পৌঁছেছে।

 (শেষোক্ত তিন প্রকার হাদিসকে একসাথে ‘খবরে আহাদ’ বলে )।


রাবি বাদ পড়ার দিক থেকে হাদিস দুই প্রকার :

১. মুত্তাসিল (اَلْمُتَّصِلُ)  : শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে হাদিসের রাবি সংখ্যা অক্ষুন্ন রয়েছে, কখনো কোনো রাবি উহ্য থাকে না, এরূপ হাদিসকে মুত্তাসিল হাদিস বলে । 

২. মুনকাতি (اَلْمُنْقَطِعُ) : যে হাদিসের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন না থেকে মাঝখান থেকে উহ্য রয়েছে এরূপ হাদিসকে মুনকাতি হাদিস বলে।


মুনকাতি হাদিস তিন প্রকার :

১. মুয়াল্লাক (مُعَلَّقٌ) : যে হাদিসের সনদের প্রথম থেকে কোন বর্ণনাকারী উহ্য হয়ে যায় কিংবা গোটা সনদ উহ্য থাকে।।

২. মু‘দাল (مُعْضَلٌ) : যে হাদিসে ধারাবাহিকভাবে দুই বা তদোর্ধ্ব বর্ণনাকারী উহ্য থাকে।

৩. মুরসাল (مُرْسَلٌ) : যে হাদিসের বর্ণনা সূত্রে তাবেয়ি এবং এবং রাসূল  #     এর মাঝখানে সাহাবি রাবির নাম উহ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ সনদের শেষাংশর রাবির নাম বাদ পড়ে যায়।


রাবির গুণ অনুযায়ী হাদিস তিন প্রকার

১. সহীহ (صَحِيْحٌ) : যে হাদিস মুত্তাসিল সনদ (অবিচ্ছিন্ন বর্ণনা সুত্র), রাবি, বিশ্বস্ত, ন্যায়পরায়ণ, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ স্মরণ শক্তিসম্পন্ন এবং হাদিসটি শায ও মুয়াল্লাল নয়।

২. হাসান (حَسَــنٌ) : স্বচ্ছ স্মরণ শক্তি ব্যতীত সহীহ হাদিসের সমস্ত বৈশিষ্ট্যই যার মধ্যে বিদ্যমান।

৩. দ্বঈফ (ضَــعِيْفٌ) : যে হাদিস উপরোক্ত সকল কিংবা কোন কোনটার  উল্লেখযোগ্য ত্রুটি থাকে তাকে দয়িফ হাদিস বলে।



বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা অনুযায়ী রাবি ৪ প্রকার

১. মুকসিরিন (مُكْثِرِيْنَ): যাদের বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ১০০০ এর উপরে।

২. মুতাওয়াস্সিতিন (مُتَوَسِّطِيْنَ): যাদের বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৫০০ এর উপরে ১০০০ এর নিচে।

 ৩. মুকিল্লিন (مُقِلِّيْنَ): যাদের বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৪০ এর উপরে ৫০০ এর নিচে। 

৪. আকাল্লীন (أَقَلِّيْنَ): যারা ৪০ এর কম হাদিস বর্ণনা করেছেন।


ইলমে হাদিসের কিছু পরিভাষা 

সনদ (سَنَدٌ) : হাদিস বর্ণনার ধারাবাহিকতাকে ‘সনদ ’বলে।

মতন (مَتَنٌ) : হাদিসের মূল বক্তব্যকে ‘মতন’ বলে।

সুনান (سُنَنٌ) : যে হাদিস গ্রন্থ ফিকহের তারতীব অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।

মুসনাদ (مُسْنَدٌ) : যে হাদিস গ্রন্থ সাহাবিদর তারতীব অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।

সহীহাইন (صَحِيْحَيْنِ) : বুখারি ও মুসলিম হাদিস গ্রন্থদ্বয়কে একত্রে বলা হয় সহীহাইন।

মুত্তাফাকুন আলাইহি (مُتَّفَكٌ عَلَيْهِ) : একই রাবী কর্তৃক বর্ণিত একই হাদিস বুখারি ও মুসলিম শরীফে যা বর্ণনা করা হয়েছে।

যে হাদিস বুখারি ও মুসলিম শরীফে রয়েছে তাকে বলা হয় মুত্তাফাকুন আলাইহি।

হাফেজ  ( حَافِظْ)  : সনদ ও মতনসহ ১ লক্ষ হাদিস মুখস্থকারী ।

হুজ্জাত (حُجَّةٌ) : সনদ ও মতনসহ তিন লক্ষ হাদিস মুখস্থকারী। 

হাকেম( حَاكِمٌ )  : সনদ ও মতনসহ সমস্ত হাদিস মুখস্থকারী।

রেওয়ায়াত (رِوَايَةٌ) : হাদিস বর্ণনার পদ্ধতিকে ‘রেওয়ায়াত’ বলে।

দেরায়াত (دِرَايَةٌ) : হাদিস বাছাইয়ের পদ্ধতিকে ‘দেরায়াত’ বলে। 

রিজাল ( رِجَالٌ) : হাদিস বর্ণনাকারীর সমষ্টিকে ‘রিজাল’ বলে । 

জামে (اَلْجَامِعْ) : যে গ্রন্থে হাদিসসমূহকে বিষয়বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং তার মধ্যে নিম্নোক্ত আটটি অধ্যায়ও রয়েছে যেমন-

ছিয়ার, তাফসির, আকাঈদ, ফিতান, আদাব, আশরাত, আহকাম, মানাকিব।

সুনানে আরবায়া (اَلسُّنَنُ الْاَرْبَعَةُ) : আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিজি এবং ইবনে মাজাহ এ চারখানা গ্রন্থকে এক সাথে সুনানে আরবায়া বলা হয়।

সিহাহ সিত্তাহ (اَلصِّحَاحُ السِّتَّةُ) : ৬ খানা বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ।

হাদিসে কুদসি (اَلْحَدِيْثُ الْقُدْسِىُّ) : যে হাদিসের ভাব আল্লাহর আর ভাষা রাসূল  #    এর তাই হাদিসে কুদসি।

রাবি (اَلرَّاوِىْ) : হাদিসের  বর্ণনাকারীকে ‘রাবি’ বলে।

আছার (اَثَرٌ ) : সাহাবায়ে কেরামের কথা ও কাজকে আছার বলে । 

শায়খ (اَلشَّيْخُ) : হাদিসের শিক্ষককে শায়খ বলে।

মুহাদ্দিস (اَلْمُحَدِّثُ): সনদ মতনসহ হাদিস চর্চা ও গভীর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি। 

রিসালাহ (اَلرِّسَالَةُ): মাত্র একটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই যে হাদিস গ্রন্থ রচিত হয়েছে তাকে রিসালাহ বলে। ইবনে খোযাইমা রচিত আল্লাহর একত্ববাদ বিষয়ক গ্রন্থ।

ফকিহ (فَقِيْه) : যারা হাদিসের আইনগত দিক পর্যালোচনা করেছেন তাদেরকে ‘ফকিহ’ বলে।

* পুরুষদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনা করেন হজরত আবু হুরায়রা "     ৫৩৭৪টি।

* মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনা করেন হজরত আয়েশা "     ২২১০টি।

* সর্বপ্রথম হাদিস সংকলনকারীর নাম : ইবনে শিহাব যুহরী।

* বুখারি শরিফের পূর্ণ নাম :

 اَلْجَامِعُ الْمُسْنَدُ الصَّحِيْحُ الْمُخْتَصَرُ مِنْ اُمُوْرِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  وَسُنَنِهِ وَاَيَّامِهِ


হাদিসে কুদসি ও আল-কুরআনের মধ্যে পার্থক্য

১. হাদিসে কুদসির ভাব আল্লাহর আর ভাষা রাসূল  #   এর, পক্ষান্তরে আল-কুরআনের ভাব, ভাষা দুটিই আল্লাহ তাআলার।

২. আল-কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন আল্লাহ, যা তিনি ঘোষণা করেছেন, কিন্তু হাদিসে কুদসির ক্ষেত্রে তা বলা হয়নি।

৩. নামাজে আল-কুরআন তেলাওয়াত করা বাধ্যতামূলক, কিন্তু নামাজে হাদিসে কুদসি পড়ার সুযোগ নেই।

৪. আল-কুরআন তেলাওয়াতে প্রতি অক্ষরে ১০ নেকি কিন্তু হাদিসে কুদসির ব্যাপারে এমন কোন ঘোষণা নেই।


হাদিসে কুদসি ও হাদিসে নববীর মধ্যে পার্থক্য

১. যে হাদিসের ভাব আল্লাহর, ভাষা রাসূলের  #    তাকে বলা হয় হাদিসে কুদসি। আর যে হাদিসের ভাব ও ভাষা দুটোই রাসূলের  #   , তাকে বলা হয় হাদিসে নববী।

২. যে হাদিসে আল্লাহ বলেছেন/আল্লাহ নির্দেশ করেছেন ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে তাকে বলা হয় হাদিসে কুদসি।

পক্ষান্তরে রাসূল  #    এর কথা কাজ ও মৌনসম্মতিই হাদিসে নববী।


আশারায়ে মুবাশশারাহ : একসাথে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবি

১. হজরত আবু বকর ইবনু আবি কুহাফা "

২. হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব "

৩. হজরত উসমান ইবনু আফফান "

৪. হজরত আলী ইবনু আবি তালিব "

৫. হজরত তালহা বিন ওবায়দিল্লাহ "

৬. হজরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম "

৭. হজরত আবদুর রহমান ইবনু আওফ "

৮. হজরত আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ "

৯. হজরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস "

১০. হজরত সাঈদ ইবনু যায়িদ "


অধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিগণ

১. হজরত আবু হুরায়রা "    - ৫৩৭৪

২. হজরত আয়িশা "    - ২২১০

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    - ১৬৬০

৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর "    - ১৬৩০

৫. হজরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ "    - ১৫৪০

৬. হজরত আনাস ইবনে মালিক "    - ১২৮৬

৭. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "    - ১১৭০



উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস

১. শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহ.)

২. শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী (রহ.)

৩. হোসাইন আহমাদ মাদানি (রহ.)

৪. মুফতি আমিমুল ইহসান (রহ.)

৫. আল্লামা আযিযুল হক (রহ.)

























বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও হাদিস


১. তাওহিদ/ اَلتَّوْحِيْدُ

اَلتَّوْحِيْدُ অর্থ একত্ববাদ। জীবনের সবকিছু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করাই তাওহিদের মূলমন্ত্র।

شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةُ وَ اُولُوا الْعِلْمِ قَآىِٕمًۢا بِالْقِسْطِ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ.

আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (আলে ইমরান-১৮)

إِنَّمَا اِلٰهُكُمْ اِلٰهُ وَّاحِدٌ.

নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক একক সত্তা। (কাহাফ : ১১০)


আল-কুরআন

 وَ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُ.

১. তোমাদের ইলাহ একই ইলাহ। ঐ রহমান ও রাহিম ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। (সূরা বাকারা- ২:১৬৩)

 وَ هُوَ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ  لَهُ الْحَمْدُ فِی الْاُوْلٰی وَ الْاٰخِرَةِ وَ لَهُ الْحُكْمُ وَ اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ.

২. তিনিই এক আল্লাহ, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। শাসন কর্তৃত্ব তাঁরই হাতে এবং তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা কাসাস- ২৮:৭০)

قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌۚক্স  اَللّٰهُ الصَّمَدُۚক্স لَمْ یَلِدْ ۙ۬ وَ لَمْ یُوْلَدْۙক্স وَ لَمْ یَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ۠ক্স

৩. (হে রাসূল!) আপনি বলে দিন। তিনিই আল্লাহ, (যিনি) একক (অদ্বিতীয়) আল্লাহ সবার কাছ থেকে অভাবমুক্ত (আর আল্লাহর কাছে সবাই অভাবী)। তাঁর  কোনো সন্তান নেই, তিনিও কারো সন্তান নন। কেউই তাঁর সাথে তুলনার যোগ্য নয়। (সূরা ইখলাস- ১১২:১-৪)

 لَوْ كَانَ فِیْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ إِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحٰنَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا یَصِفُوْنَ.

৪. যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত, সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র। (সূরা আম্বিয়া - ২১:২২)

وَ هُوَ الَّذِیْ فِی السَّمَآءِ اِلٰهٌ وَّ فِی الْاَرْضِ اِلٰهٌ ؕ وَ هُوَ الْحَكِیْمُ الْعَلِیْمُ

৫. আর তিনিই আসমানে ইলাহ এবং তিনিই যমীনে ইলাহ; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা যুখরূফ- ৪৩:৮৪)

هُوَ الْحَیُّ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِیْنَ لَهُ الدِّیْنَ ؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ.

৬. তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা দীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করে তাঁকে ডাক। সকল প্রশংসা আল¬াহর যিনি সৃষ্টিকুলের রব। (সূরা মুমিন-৪০ : ৬৫)

قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ قُلِ اللّٰهُ ؕ قُلْ اَفَاتَّخَذْتُمْ مِّنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِیَآءَ لَا یَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ نَفْعًا وَّ لَا ضَرًّا ؕ قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الْاَعْمٰی وَ الْبَصِیْرُ ۙ۬ اَمْ هَلْ تَسْتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوْرُ ۚ۬ اَمْ جَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَ خَلَقُوْا كَخَلْقِهٖ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَیْهِمْ ؕ قُلِ اللّٰهُ خَالِقُ كُلِّ شَیْءٍ وَّ هُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ.

৭. বল, ‘আসমানসমূহ ও যমীনের রব কে’? বল, ‘আল্লাহ’। তুমি বল, ‘তোমরা কি তাঁকে ছাড়া এমন কিছুকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছ, যারা তাদের নিজদের কোন উপকার অথবা অপকারের মালিক না’? বল, ‘অন্ধ ও দৃষ্টিমান ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? নাকি অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে? নাকি তারা আল্লাহর জন্য এমন কতগুলো শরীক নির্ধারণ করেছে, যেগুলো তাঁর সৃষ্টির তুল্য কিছু সৃষ্টি করেছে, ফলে তাদের নিকট সৃষ্টির বিষয়টি একরকম  মনে হয়েছে’? বল, ‘আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি  এক, পরাক্রমশালী’। (সূরা রা‘দ-১৩ : ১৬)

اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ  لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّ لَا نَوْمٌ  لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ ؕ مَنْ ذَا الَّذِیْ یَشْفَعُ عِنْدَهْۤ إِلَّا بِاِذْنِهٖ یَعْلَمُ مَا بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَ مَا خَلْفَهُمْ ۚ وَ لَا یُحِیْطُوْنَ بِشَیْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ إِلَّا بِمَا شَآءَ وَسِعَ كُرْسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ۚ وَ هُوَ الْعَلِیُّ الْعَظِیْمُক্স

৮. আল্লাহ ঐ চিরজীবী ও চিরস্থায়ী সত্তা, তিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। তিনি ঘুমান না, এমনকি তাঁর ঘুমের ভাবও হয় না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর দরবারে সুপারিশ করতে পারে? যা কিছু বান্দাদের সামনে আছে তাও তিনি জানেন, আর যা তাদের অগোচরে আছে তাও তিনি জানেন। যা কিছু তাঁর জ্ঞানের মধ্যে আছে তা থেকে কিছুই তাদের আয়ত্তে আসতে পারে না। অবশ্য কোনো বিষয়ের জ্ঞান যদি তিনি নিজেই কাউকে দিতে চান তাহলে আলাদা কথা। তাঁর শাসন আসমান ও জমিন জুড়ে আছে এবং এসবের দেখাশোনার কাজ তাঁকে ক্লান্ত করতে পারে না। তিনি মহান ও শ্রেষ্ঠতম। 

(সূরা বাকারা- ০২:২৫৫)

هُوَ اللّٰهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ ۚ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُক্স  هُوَ اللّٰهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَیْمِنُ الْعَزِیْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ؕ سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یُشْرِكُوْنَক্স هُوَ اللّٰهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰی ؕ یُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ۚ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ۠ক্স

৯. তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি জানেন। তিনিই রাহমান ও রাহিম। তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। তিনিই বাদশাহ, অতি পবিত্র, স্বয়ং শান্তি, নিরাপত্তাদাতা, রক্ষক, সবার ওপর বিজয়ী, নিজ হুকুম জারি করায় শক্তিমান এবং অহঙ্কারের অধিকারী। মানুষ তাঁর সাথে যে শিরক করছে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টির পর পরিকল্পনাকারী, তা বাস্তবায়নকারী ও সে অনুযায়ী রূপদাতা। সব ভালো নাম তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর তাসবিহ করছে। তিনি মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা হাশর- ৫৯:২২-২৪)

تَبٰرَكَ الَّذِیْ بِیَدِهِ الْمُلْكُ ؗ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرُ- ِ۟الَّذِیْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَیٰوةَ لِیَبْلُوَكُمْ اَیُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ؕ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْغَفُوْرُ.

১০. বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। (মুলক : ১-২)

وَ عِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَیْبِ لَا یَعْلَمُهَاۤ إِلَّا هُوَ ؕ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْبَرِّ وَ الْبَحْرِ ؕ وَ مَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ إِلَّا یَعْلَمُهَا وَ لَا حَبَّةٍ فِیْ ظُلُمٰتِ الْاَرْضِ وَ لَا رَطْبٍ وَّ لَا یَابِسٍ إِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ.

১১. আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং যমীনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে। (আনআম : ৫৯)

وَ هُوَ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بِالْحَقِّ ؕ وَ یَوْمَ یَقُوْلُ كُنْ فَیَكُوْنُ ؕ۬ قَوْلُهُ الْحَقُّ ؕ وَ لَهُ الْمُلْكُ یَوْمَ یُنْفَخُ فِی الصُّوْرِ ؕ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ ؕ وَ هُوَ الْحَكِیْمُ الْخَبِیْرُ.

১২. আর তিনিই, আসমানসমূহ ও যমীন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ তখন হয়ে যাবে। তাঁর কথাই যথার্থ। আর তাঁর জন্যই রয়েছে সেদিনের রাজত্ব, যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তিনি গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, অধিক অবহিত।

(আনআম : ৭৩)

إِنَّ اللّٰهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَ النَّوٰی ؕ یُخْرِجُ الْحَیَّ مِنَ الْمَیِّتِ وَ مُخْرِجُ الْمَیِّتِ مِنَ الْحَیِّ ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ فَاَنّٰی تُؤْفَكُوْنَ.

১৩. নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বেরকারী। তিনিই আল্লাহ, সুতরাং (সৎপথ থেকে) কোথায় তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?

(আনআম : ৯৫)


আল হাদিস

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ أَتِيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى الله ﷺ  وَهُوَ نَائِمٌ عَلَيْهِ ثَوْبٌ أَبْيَضُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ فَإِذَ هُوَ نَائِمٌ ثُمَّ أَتَيْتُهُ وَقَدْ إِسْتَيْقَظَ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لَا اِلهَ إِلَّا الله ثُمَّ مَاتَ عَلى ذلِكَ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ. قُلْتُ وَاِنْ زَنى وَاِنْ سَرَقَ قَالَ وَاِنْ زَنى وَاِنْ سَرَقَ قُلْتُ وَاِنْ زَنى وَاِنْ سَرَقَ قَالَ وَاِنْ زَنى وَاِنْ سَرَقَ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ فِيْ الرَّبِعَةِ عَلى رَغْمِ أَنْفِ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ فَخَرَجَ أَبُوْ ذَرٍّ وَهُوَ يَقُوْلُ وَاِنْ رَغِمَ أَنْف أَبِيْ ذَرٍّ (بُخَارِيْ : بَابُ الثِّيَابِ الْاَبْيَضِ) 

১. হজরত আবু যর "     হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন নবি  #    এর নিকট আসলাম তখন তিনি ঘুমন্ত ছিলেন এবং তাঁর ওপর সাদা কাপড় ছিল, অতপর আমি আবার তাঁর কাছে আসলাম তখন ও তিনি ঘুমন্ত ছিলেন। অতপর আবার আসলাম এতক্ষণে তিনি জাগ্রত হয়েছেন, অতপর আমি তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। অতপর তিনি বলেছেন, যে বান্দাই বলবে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই আর এটার ওপরই মৃত্যুবরণ করবে তাহলে নিশ্চিত সে জান্নাতে যাবে। আমি বললাম, যদি সে যিনা করে, চুরি করে, রাসূল  #    বলেছেন, হ্যাঁ যদিও সে যিনা করে চুরি করে এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। অতপর রাসূল  #    চতুর্থবার বলেছেন, আবু যরের নাক ধুলায় মলিন হোক। অতপর আবু যর "     এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যদি আবু যরের নাক ধুলায় মলিন হয়ে যায়। 

(বুখারি, বাবুস সিয়াবিল বীদি : ৫৩৭৯)

عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللهِ الثَّقَفِي قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قُلْ لِىْ فِيْ الْاِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا بَعْدَكَ قَالَ قُلْ آمَنْتُ بِاللهِ فَاسْتَقِمْ (مُسْلِمْ : بَابُ جَامِعِ أَوْصَافِ الْاِسْلَامِ)

২. হজরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ সাকাফী  "     হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল  #    আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু বলুন যে, আমি আপনার পরে আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করব না। রাসূল  #    বলেছেন, তুমি বল আল্লাহর প্রতি ঈমান গ্রহণ করেছি অতপর এটার ওপর অবিচল থাক। (মুসলিম : বাবু জামে‘ আওসাফিল ইসলামি : ৫৫)

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّ اللهُ ﷺ  مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَّا اِلهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ-

৩. ওসমান ইবনে আফ্ফান "     থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  #     বলেছেন, যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। (মুসলিম : বাবুল ইমান, পৃ. ১০৮)



















২. রিসালাত/اَلرِّسَالَةُ

اَلرِّسَالَةُ অর্থ পৌঁছানো। রিসালাতের মূল কথা হলো নবি রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহর বিধি-বিধানকে মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেয়া।


আল-কুরআন

وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ ۚفَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَی اللّٰهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ ؕ فَسِیْرُوْا فِی الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَیْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِیْنَ.

১. আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাঁর মাধ্যমে সমাধান করে েিয়ছি যে, আল্লাহর দাস্তব কর এবং তাগুতের দাসত্ব থেকে দূরে থাক। এরপর তাদের মধ্যে কাউকে আল্লাহ হেদায়াত দিয়েছেন এবং কারো ওপর গোমরাহি চেপে বসেছে। কাজেই পৃথিবীতে একটু চলে ফিরে দেখে নাও, মিথ্যা আরোপকারীদের কী পরিণাম হয়েছে। (সূরা নাহল-১৬:৩৬)

هُوَ الَّذِیْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰی وَ دِیْنِ الْحَقِّ لِیُظْهِرَهٗ عَلَی الدِّیْنِ كُلِّهٖ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیْدًاؕক্স

২. তিনিই ওই সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রাসূল) ঐ দ্বীনকে অন্য দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন। আর এ বিষয়ে আল্লাহই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ্-৪৮:২৮)

وَ مَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُوْلٌ ۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ ؕ اَفَاۡىِٕنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰی اَعْقَابِكُمْ وَ مَنْ یَّنْقَلِبْ عَلٰی عَقِبَیْهِ فَلَنْ یَّضُرَّ اللّٰهَ شَیْـًٔا ؕ وَ سَیَجْزِی اللّٰهُ الشّٰكِرِیْنَ.

৩. আর মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্ল¬াহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্ল¬াহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৪৪)

وَ مَاۤ اَرْسَلْنٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِیْرًا وَّ نَذِیْرًا وَّ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَক্স

৪. (হে নবি!) আমি আপনাকে গোটা মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি। কিন্তু বেশির ভাগ লোকই তা জানে না। 

(সূরা সাবা- ৩৪:২৮)

ياَیُّهَا النَّبِیُّ إِنَّاۤ اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیْرًا-وَّ دَاعِیًا اِلَی اللّٰهِ بِاِذْنِهٖ وَ سِرَاجًا مُّنِیْرًا.

৫. হে নবি, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে আর আল্ল¬াহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে।  (সূরা আহযার- ৩৩ : ৪৫-৪৬)

فَلَا وَ رَبِّكَ لَا یُؤْمِنُوْنَ حَتّٰی یُحَكِّمُوْكَ فِیْمَا شَجَرَ بَیْنَهُمْ ثُمَّ لَا یَجِدُوْا فِیْۤ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیْتَ وَ یُسَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا

৬. না, হে রাসূল  #   ! আপনার রবের কসম, এরা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না; যে পর্যন্ত এরা নিজেদের মতবিরোধের বিষয়ে আপনাকে বিচারক হিসেবে মেনে না নেয়, তারপর যে ফয়সালাই আপনি দিন তা মেনে নিতে তাদের মন খুঁত খুঁত না করে এবং তা মনে-প্রাণে গ্রহণ না করে। (সূরা নিসা-০৪: ৬৫)

لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ أَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ ۚ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ

৭. অবশ্যই আল্ল¬াহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৬৪)

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ

৮. দেখ! তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, যিনি তোমাদের মধ্য থেকেই একজন। যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর তাতে তিনি কষ্ট পান। তিনি তোমাদের হিতকাঙ্খী। ঈমানদারদের জন্য তিনি বড়ই স্নেহশীল ও রহমদিল। (সূরা তাওবা- ০৯:১২৮)

قُلْ یٰاَیُّهَا النَّاسُ اِنِّیْ رَسُوْلُ اللّٰهِ اِلَیْكُمْ جَمِیْعَا ِ۟الَّذِیْ لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ۚ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا هُوَ یُحْیٖ وَ یُمِیْتُ ۪ فَاٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهِ النَّبِیِّ الْاُمِّیِّ الَّذِیْ یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ كَلِمٰتِهٖ وَ اتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ.

৯. বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবির প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে। (সূরা আ‘রাফ-৭ : ১৫৮)

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللّٰهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللّٰهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللّٰهَ كَثِیْرًؕا

১০. আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে সুন্দর আদর্শ রয়েছে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও শেষদিনের আশা করে এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সূরা আহযাব- ৩৩ঃ২১)

رُسُلًا مُّبَشِّرِیْنَ وَ مُنْذِرِیْنَ لِئَلَّا یَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَی اللّٰهِ حُجَّةٌۢ بَعْدَ الرُّسُلِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیْزًا حَكِیْمًا 

১১. আর (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৪ঃ১৬৫)

رَبَّنَا وَ ابْعَثْ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ یُزَكِّیْهِمْ ؕ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ.

১২. হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (বাকারা : ১২৯)

یٰاَیُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ مِنْ رَّبِّكَ وَ اِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗ وَ اللّٰهُ یَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّٰهَ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْكٰفِرِیْنَ.

১৩. হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (মায়েদা : ৬৭)


আল হাদিস

عَنْ جاَبِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَال كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  اِذَ خَطَبَ اِحْمَرَّتْ عَيْنَاهُ وَعَلَا صَوْتُهُ وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ حَتّٰى كَاَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ يَقُوْلُ صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ وَيَقُوْلُ بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ وَيَقْرُنُ بَيْنَ اِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوْسْطى وَيَقُوْلُ أمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَ خَيْرُ الْهُدى هُدى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْاُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ثُمَّ يَقُوْلُ اَنَا أُوْلى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ مَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِاَهْلِهِ وَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيَاعًا فَاِلَىَّ وَعَلَىَّ (مسلم : بَابُ تَخْفِيْفِ الصَّلَاةِ وَالْخُطْبَةِ)

১. হজরত  জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "    হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  #    যখন ভাষণ দিতেন তখন তাঁর দু‘চোখ লাল হয়ে যেত এবং তার আওয়াজ উচ্চ হত এবং তাঁর রাগ বৃদ্ধি পেত মনে হয় যেন তিনি কোনো সৈন্য বাহিনীকে সতর্ক করছেন। তিনি বলতেন, আমি এবং কিয়ামত এই দুই আঙুলের মত প্রেরিত হয়েছি এবং তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল একত্র করে দেখালেন। আর বলেছেন, অতপর নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম পথপ্রদর্শন হলো মুহাম্মদ  #    এর পথ প্রদর্শন। আর কাজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো প্রত্যেক নবসৃষ্ট তথা বিদয়াত। আর প্রত্যেক বিদয়াত গোমরাহি। অতপর বললেন, আমি প্রতেকটি মুমিনের জন্য তার নিজের চেয়েও বেশি কল্যাণকামী, দয়াদ্র। যে ব্যক্তি (মৃত্যুবরণের সময়) কোনো সম্পদ রেখে যায়, তা তার পরিবার পরিজনের জন্য। আর যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ঋণ বা অবুঝ শিশু রেখে যায়, অতপর তার দায় দায়িত্ব আমারই উপরে। (মুসলিম : বাবু তাখফীফিস সলাতি ওয়াল খুতবাতি : ১৪৩৫)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  اَنَّهُ قَالَ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِىْ اَحَدٌ مِنْ هذِهِ الْاُمَّةِ يَهُوْدِىٌّ وَ لَا نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوْتُ ولَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِيْ اُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِ-(مسلم : بَابُ وَجُوْبِ الْاِيْمَانِ بِرِسَالَةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ اِلى جَمِيْعِ النَّاسِ وَنَسْخِ الْمِلَلِ بِمِلَّتِهِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "    রাসূল  #   থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল  #    বলেছেন, মুহাম্মদের প্রাণ যে সত্তার হাতে, তাঁর কসম দিয়ে বলছি উম্মতের ইয়াহুদি কিংবা নাসারা যেই হোক না কেন, আমার ব্যাপারে শুনবে অতপর সে মৃত্যুবরণ করবে অথচ আমি যে বিষয় নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তার ওপর ঈমান আনবে না তাহলে নিশ্চিত সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।  (মুসলিম : বাবু উজুবিল ঈমানি বিরিসালাতি নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ সা. জামিয়িন নাসি ওয়া নাসখিল মিলালি বিমিল্লাতিহি : ২১৮)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى يَـكُوْنَ هَوَاهُ تَبْعًا لِمَا جِئْتُ بِه (اَلْاِبَانَةُ الْكُبْرٰى لِاِبْنِ بَطَّةَ، صَحَّحَهُ الْاَلْبَانِىْ)  

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  # বলেছেন, তোমাদের কেহই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রবৃত্তি আমার আনীত দ্বীনের অনুগত না হবে। (ইবানাতুল কুবরা লিইবনি বাত্তাহ : ২১৯)

 عَنْ جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  وَالَّذِيْ نَفسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ وَلَوْ بَدَأَ لَكُمْ مُوْسى فَاتْبَعْتُمُوْهُ وَتَرَكْتُمُوْنِىْ لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَاَدْرَكَ نُبُوَّتِىْ لَاتَّبَعَنِىْ (سُنَنُ الدَّارِمِىُّ : بَابُ مَا يُتَّقى مِنْ تَفْسِيْرِ حَدِيْثِ النَّبِيِّ، صَحَّحَهُ الْاَلْبَانِى) 

৪. জাবির "   হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম  #    ইরশাদ করেছেন, সে মহান সত্তার শপথ যার মুঠিতে মুহাম্মদে প্রাণ রয়েছে, মূসা (আ.) ও যদি তোমাদের সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তোমরা তার অনুসরণ করো আর আমাকে পরিত্যাগ করো তবে তোমরা নিশ্চিতরূপে সঠিক ও সত্য পথ হতে ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। বাস্তবিক মূসা (আ.) যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবুওয়াতের সময় পেতেন, তবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন। (সুনানু দারেমী, বাবু মা ইয়ুত্তাক্বা মিন তাফসীরে হাদীসিন নাবিয়্যি (সা.), ৪৪৩)

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِهِ وَ وَلَدِهِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ-

৫. আনাস "     থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  #     বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি ও সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হই। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত : হাদিস নং ৬)










৩. আখেরাত الْآخِرَةُ : 

الْآخِرَةُ  অর্থ পরিণাম, পরকাল, শেষফল/ শেষ পরিণতি। মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকে যে অনন্ত জীবন শুরু হয়, যার শুরু আছে শেষ নেই তাকেই আখেরাত বলে।


আল-কুরআন

وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ إِلَّا لَعِبٌ وَّ لَهْوٌ وَ لَلدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَیْرٌ لِّلَّذِیْنَ یَتَّقُوْنَ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ.

১. আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না? (সূরা আনআম -৬ : ৩২)

إِنَّ الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ زَیَّنَّا لَهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَهُمْ یَعْمَهُوْنَ.

২. আসলে যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের আমলকে আমি তাদের চোখে সুন্দর বানিয়ে দিয়েছি। তাই তারা দিশেহারা হয়ে ফিরছে। (সূরা নামল-২৭:৪)

فَمَنْ یَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَیْرًا یَّرَهٗؕক্স  وَمَنْ یَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا یَّرَهٗ.

৩. অতপর যে বিন্দু পরিমাণ ভালো কাজ করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে বিন্দু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে, সে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল-৯৯:৭-৮)

اَلْیَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى اَفْوَاهِهِمْ وَ تُكَلِّمُنَاۤ اَیْدِیْهِمْ وَ تَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ.

৪. আজ আমি তাদের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছি। তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সাক্ষ্য দিবে যে, তারা দুনিয়াতে কী কামাই করে এসেছে। (সূরা ইয়াসিন- ৩৬:৬৫) 

تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِیْنَ لَا یُرِیْدُوْنَ عُلُوًّا فِی الْاَرْضِ وَ لَا فَسَادًا وَ الْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِیْنَ

৫. এই হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারিত করি, যারা যমীনে ঔদ্ধত্য দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা কাসাস-২৮ : ৮৩)

وَ اتَّقُوْا یَوْمًا لَّا تَجْزِیْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَیْـًٔا وَّ لَا یُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَّ لَا یُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّ لَا هُمْ یُنْصَرُوْنَ

৬. আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাকারা-২ : ৪৮)

یَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَیْـًٔا ؕ وَ الْاَمْرُ یَوْمَىِٕذٍ لِّلّٰهِ۠ক্স

৭. এটা সেই দিন, যেদিন কেউ কারো জন্য কিছু করতে পারবে না এবং সেদিন ফয়সালার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে থাকবে। (সূরা ইন্ফিতার- ৮২:১৯) 

ثُمَّ لَتُسْـَٔلُنَّ یَوْمَىِٕذٍ عَنِ النَّعِیْمِ

৮. তারপর সেদিন অবশ্যই তোমরা নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা তাকাসুর-১০২ : ৮)

یَوْمَ یَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِیْهِۙক্স   وَ اُمِّهٖ وَ اَبِیْهِۙক্স  وَ صَاحِبَتِهٖ وَ بَنِیْهِؕক্স لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ یَوْمَىِٕذٍ شَاْنٌ یُّغْنِیْهِؕক্স

৯. সেদিন মানুষ তার ভাই, মা, বাপ ও বিবি-বাচ্চাদের থেকে পালাতে থাকবে। সেদিন প্রত্যেককে একটি চিন্তা ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। (সূরা আবাসা- ৮০:৩৪-৩৭)

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِیْ تَفِرُّوْنَ مِنْهُ فَإِنَّهٗ مُلٰقِیْكُمْ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰی عٰلِمِ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ۠

১০. বল যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তারপর তোমাদেরকে অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে। (সূরা জুমুআ-৬২ : ৮)



আল হাদিস

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّيْظُرَ اِلى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَاَنَّهُ رَأْىُ عَيْنٍ فَلْيَقْرَأْ إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ وَإِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ وَإِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ- (سُنَنُ التِرْمِذِيْ : بَابُ وَمِنْ سُوْرَةِ إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল  #   ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি স্বচক্ষে কিয়ামতের দৃশ্য দেখার আনন্দ উপভোগ করতে চায়, তাহলে তার সূরা তাকভীর, সূরা ইনফিতার, সূরা ইনশিক্বাক পড়া উচিত। (সুনানু তিরমিজি : বাবু ওয়া মিন সূরাতি ইযাশ শামছু কুব্বিরাত, ৩২৫৬)

عَنْ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  وَاللهِ مَا الدُّنيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَ يَجْعَلُ اَحَدُكُمْ اِصْبَعَهُ هذِهِ وَأَشَارَ يَحْى بِالسَّبَّابَةِ فِيْ الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ-(مسلم : بَابُ فَنَاءِ الدُّنْيَا وَبَيَانِ الْحَشْرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)

২. হজরত মুস্তাওরিদ বিন শাদ্দাদ "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হজরত নবি করী  #    বলেছেন, পরকালের তুলনায় দুনিয়া শুধু ততটুকু যে, তোমাদের কেহ যদি তার আঙ্গুলি (হাদীসের এক বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া অনামিকা আঙুলে ইশারা করলেন অর্থাৎ কেহ যদি তার অনামিকা আঙুলি) সমুদ্রে ডুবিয়ে বের করে আনে, অতপর সে দেখবে যে, সেই আঙুলি কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে। (মুসলিম : বাবু ফানাইদ দুনিয়অ ওয়াবায়ানিল হাশরি ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি, ৫১০১)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيْعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ اِلى بَعْضٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا عَائِشَةُ اَلْاَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ اِلى بَعْضٍ –(بُخَارِيْ : بَابُ كَيْفَ الْحَشْرُ، مُسْلِمْ : بَابُ فَنَاءِ الدُّنْيَا وَبَيَانِ الْحَشْرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)

৩. হজরত আয়েশা "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল  #    কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষকে নগ্ন পায়ে, উলঙ্গ, খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ #    নাবী-পুরুষ এক সাথে? পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকাবে। রাসূল #     বলেছেন, হে আয়েশা! সেদিনকার অবস্থা এত ভয়াবহ যে একজন অন্যের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। (বুখারি : বাবু কাইফাল হাশর-৬০৪৬, মুসলিম : বাবু ফানাইদ দুনিয়া ওয়া বায়ানিল হাশরি ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি, ৫১০২)

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ لَا تَزُوْلُ قَدَمُ ابْنِ اٰدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّه حَتّٰى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمُرِه فِيْمَ أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيْمَ أَبْلَاهُ وَمَالِه مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَه وَفِيْمَ أَنْفَقَه وَمَاذَا عَمِلَ فِيْمَا عَلِمَ ـ (اَلتِرْمِذِيْ: بَابُ مَاجَاءَ فِيْ شَاْنِ الْحِسَابِ وَالْقِصَاصِ حَسَّنَهُ الْاَلْبَانِىْ)

৪. হজরত ইবনে মাসউদ "    নবি  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন কোন আদম সন্তানের পা এক কদমও নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পাঁচটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা না হবে।

(ক) নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? (খ) যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে? (গ) ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে? (ঘ) কোথায় তা ব্যয় করেছে? (ঙ) এবং সে (দ্বীনের) যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে?

(তিরমিজি : বাবু মাজা’আ ফি শানিল হিসাবি ওয়াল ক্বিসাসি, ২৩৪০)

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ النَّقِىِّ لَيْسَ فِيْهَا عَلَمٌ لِاَحَدٍ- (بخارى : بَابُ يَقْبِضُ اللهُ الْاَرْضَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ الْبَعْثِ وَالنُّشُوْرِ وَصِفَةِ الْاَرْضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)

৫. হজরত সাহাল বিন সায়াদ "    থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানব জাতিকে স্বচ্ছ আটার রুটির ন্যায় লালিমাযুক্ত শ্বেবর্ণ জমীনে একত্রিত করা হবে, যেখানে কারও কোন ঘর বাড়ির চিহ্ন থাকবে না। (বুখারি : বাবু ইয়াক্ববিদুল্লাহুল আরদা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি, ৬০৪০, মুসলিম : বাবুন ফিল বা‘সি ওয়ান নুশুরি ওয়া সিফাতিল আরদি ইয়াওমালা ক্বিয়ামতি : ৪৯৯৮)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَال رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَالَ اللهُ أَعْدَدْتُ لِعِبَادِىَ الصَّالِحِيْنَ مَالَا عَيْنٌ رَأَتْ وَ لَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلى قَلْبِ بَشَرٍ فَاقْرَئُوْا اِنْ شِئْتُمْ "فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا اُخْفِي لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ اَعْيٌنٍ-(بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ الْجَنَّةِ، مُسْلِمْ : كِتَابُ الْجَنَّةِ وَصِفَةِ نَعِيْمِهَا وَاَهْلِهَا)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমি আমার সালেহ বান্দাহদের জন্য এমনসব নিয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কখনো কল্পনাও করতে পারেনি, যদি তোমরা ইছ্ছা করো, নিম্নের আয়াতটি পড়তে পারো। “ কোনো মানুষই জানে না আমি তাদের জন্য কী সব চক্ষু শীতলকারী পরম নিয়ামত গুপ্ত রেখেছি। (বুখারি : বাবু মা জা আ ফি সিফাতিল জান্নাতি : ৩০০৫, মুসলিম : বাবু ন  ফিল বা‘সি ওয়ান নুশুরি ওয়া সিফাতিল আরদি ইয়াওমালা ক্বিয়ামতি : ৪৯৯৮)









৪. ঈমান : الْاِيْمَانُ

الْاِيْمَانُ অর্থ বিশ্বাস করা, আনুগত্য করা, স্বীকৃতি দেয়া, অবনত হওয়া। নবি করিম #    যা কিছু নিয়ে এসেছেন সবকিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকে ঈমান বলে।


আল-কুরআন

اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ  كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓىِٕكَتِهٖ وَ كُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ  لَا نُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهٖ وَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا  غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَ اِلَیْكَ الْمَصِیْرُ

১. রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্ল¬াহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের ওপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা বাকা-২ : ২৮৫)

لَاۤ اِكْرَاهَ فِی الدِّیْنِ ۙ۫ قَدْ تَّبَیَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَیِّ ۚ فَمَنْ یَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَ یُؤْمِنْۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰی ۗ لَا انْفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ

২. দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয়ই হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্ল¬াহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্ল¬াহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা-২ : ২৫৬)

إِنَّ اللّٰهَ یُدْخِلُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ یُحَلَّوْنَ فِیْهَا مِنْ اَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَّ لُؤْلُؤًا ؕ وَ لِبَاسُهُمْ فِیْهَا حَرِیْرٌ

৩. যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। (সূরা হজ্জ-২২ : ২৩)

إِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ الَّذِیْنَ هَادُوْا وَ النَّصٰرٰی وَ الصّٰبِـِٕیْنَ مَنْ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ عَمِلَ صَلِحًا فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۪ۚ وَ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ

৪. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, যারা ইয়াহূদী হয়েছে এবং নাসারা ও সাবিঈরাÑ (তাদের মধ্যে) যারা ঈমান এনেছে আল্ল¬াহ ও আখিরাতের দিনের প্রতি এবং নেক কাজ করেছে Ñ তবে তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান । আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা বাকারা-২ : ৬২)

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ ثُمَّ لَمْ یَرْتَابُوْا وَ جٰهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ أَنْفُسِهِمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الصّٰدِقُوْنَ

৫. মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজদের সম্পদ ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা হুজুরাত - ৪৯ : ১৫)

قُلْ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنْزِلَ عَلَیْنَا وَ مَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤی اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ وَ الْاَسْبَاطِ وَ مَاۤ اُوْتِیَ مُوْسٰی وَ عِیْسٰی وَ النَّبِیُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ ۪ لَا نُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ ؗ وَ نَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ

৬. বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্ল¬াহর প্রতি এবং যা নাজিল করা হয়েছে আমাদের ওপর, আর যা নাজিল হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের ওপর। আর যা দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবিকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী’। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ৮৪)

اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ

৭. যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আনআম-৬ : ৮২)

وَ لَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤی اٰمَنُوْا وَ اتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَیْهِمْ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الْاَرْضِ وَ لٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنٰهُمْ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ

৮. আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতপর তারা যা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। (সূরা আরাফ-৭ : ৯৬)

اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِیَآءَ الشَّیْطٰنِ إِنَّ كَیْدَ الشَّیْطٰنِ كَانَ ضَعِیْفًا۠ক্স

৯. যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর যারা কুফরি করেছে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে। তাই শয়তানের সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও। জেনে রাখ, শয়তানের চাল আসলে বড়ই দুর্বল। (সূরা নিসা- ০৪:৭৬)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ إِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌ.

১০. হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু। (বাকারা : ২০৮)

إِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنّٰتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا-خٰلِدِیْنَ فِیْهَا لَا یَبْغُوْنَ عَنْهَا حِوَلًا.

১১. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে চাইবে না। (কাহাফ : ১০৭-১০৮)

اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوْرِ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَوْلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوْتُ یُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ اُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

১২. যারা ঈমান এনেছে আল্ল¬াহ তাদের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরি করে, তাদের অভিভাবক হল তাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (বাকারা : ২৫৭)

مَاۤ اَصَابَ مِنْ مُّصِیْبَةٍ إِلَّا بِاِذْنِ اللّٰهِ وَ مَنْ یُّؤْمِنْۢ بِاللّٰهِ یَهْدِ قَلْبَهٗ وَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ.

১৩. আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ, তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (তাগাবুন : ১১)


আল হাদিস

عَنْ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ اَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهِ ﷺ  يَقُوْلُ ذَاقَ طَعْمَ الْاِيْمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا- (مُسْلِمْ : بَابُ الدَّلِيْلِ عَلى أنَّ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ ربًّا)

عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى يُحِبَّ لِاَخِيْهِ مَا يُحِبَّ لِنَفْسِه ـ (بُخَارِيْ)

১. হজরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব "    থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল  #  কে বলতে শুনেছেন, যে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ  #    কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্টি লাভ করেছে সেই ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ করেছে।

(মুসলিম, বাবুদ দালিলি আলা আন্না মান রাদিয়া বিল্লাহি রাব্বা : ৪৯)

عَنْ عَمْرٍو بْنِ عَبَسَةَ قَالَ : قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَا الْاِيْمَانُ؟ قَالَ الصَّبْرُ وَالسَّمَاحَةُ-(ذَكَرَهُ الْاَلْبَانِىْ فِي السِّلْسِلَةِ الصَّحِيْحَةِ)

২. হজরত আমর বিন আবাসা "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবি করিম  #   কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঈমান কী? তিনি বললেন, সব তথা ধৈর্য ও সহনশীলতা, সামাহাত তথা দানশীলতা ও উদারতাই হচ্ছে ঈমান। (আলবানী ছিলছিলা সহীহায় তা উল্লেখ করেছেন, ৫৫১)

عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى يُحِبَّ لِاَخَيْهِ مَا يُحَبُّ لِنَفْسِهِ-(بُخَارِيْ : بَابُ مِنَ الْاِيْمَانِ أَنْ يُّحِبَّ لِأَخِيْهِ مَا يُحَبُّ لِنَفْسِهِ، مسلم : بَابُ الدَّلِيْلِ عَلى أَنَّ مِنْ خِصَالِ الْاِيْمَانِ)

৩. হজরত আনাস "   নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, নবি করিম #   ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্য হতে কেহই ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন পছন্দ করে। (বুখারি : বাবু মিনাল ঈমানি আন ইউহিব্বা লি আখিহী মা ইউহিব্বু লিনাফসিহি : ১২, মুসলিম : বাবুদ দালিলি আলা আন্না মিন খিছালিল ঈমান : ৬৪)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو  قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى يَكُوْنَ هَوَاهُ تَبْعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ (اَلْاِبَانَةُ الْكُبْرٰى لِاِبْنِ بَطَّةَ، صَحَّحَهُ الْاَلْبَانِىْ) 


৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  # বলেছেন, তোমাদের কেহই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রবৃত্তি আমার আনীত দ্বীনের অনুগত না হবে। (ইবানাতুল কুবরা লিইবনি বাত্তাহ : ২১৯)

عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَا الْاِيْمَانُ قَالَ إِذَا سَرَّتْكَ حَسَنَتُكَ وَ سَائَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ، قَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَا الْاِثْمُ؟ قَالَ : إِذَا حَاَكَ فِيْ صَدْرِكَ شَيْئٌ فَدَعْهُ- (ذَكَرَهُ الْاَلْبَانِىْ فِي السِّلْسِلَةِ الصَّحِيْحَةِ)

৫. হজরত আবু উমাম "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল  #   কে জিজ্ঞেস করল, ঈমান কী? তিনি বললেন, যখন তোমার ভালো কাজ তোমাকে আনন্দিত করবে এবং খারাপ কাজ তোমাকে কষ্ট দেবে তথা অনুতপ্ত করবে তখন তুমি বুঝবে তুমি ঈমানদার ব্যক্তি। ঐ ব্যক্তি বলল, অতপর গুনাহ কী? রাসূল #   বললেন, যখন তোমার হৃদয়ে কোন বিষয় সংশয় সৃষ্টি করে, তখন তা তুমি ছেড়ে দাও। (আলবানী হাদিসটিকে ছিলছিলা সহীহায় উল্লেখ করেছেন : ৫৫০)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىْ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهُ قَالَ مَثَلُ الْمُؤْمِنِ وَ مَثَلُ الْاِيْمَانِ كَمَثَلِ الْفَرَسِ عَلى أَخَيْهِ يَجُوْلُ ثُمَّ يَرْجِعُ  اِلى أَخِيَّتِهِ وَإِنَّ الْمُؤْمِنَ يَسْهُوْ ثُمَّ يَرْجِعُ اِلى الْاِيْمَانِ، فَاَطْعِمُوْا طَعَامَكُمْ الْأَتْقِيَاءَ، وَوَلَوْا مَعْرُوْفَكُمْ الْمؤْمِنِيْنَ-(صَحِيْحُ ابْنِ حِبَّانٍ : بَابُ التَّوْبَةِ)

৬. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "    রাসূল  #   থেকে বর্ণনা করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তি ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হচ্ছে খুঁটির সাথে (রশি দিয়ে বাঁধা) ঘোড়া, যা চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত খুঁটির দিকেই ফিরে আসে। অনুরূপভাবে ঈমানদার ব্যক্তিরাও ভুল করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ঈমানের দিকেই ফির আসে। অতএব তোমরা মুত্তাকি লোকদেরকে তোমাদের খাদ্য খাওয়াও এবং ঈমানদার লোকদে সাথে ভালো ব্যবহার কর। (সহীহ ইবনে হিব্বান : বাবুত তাওবাহ : ৬১৮)

عَنْ عَبَّاسٍ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ذَاقَ طَعْمَ الْاِيْمَانِ مَنْ رَّضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَّ بِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا-

৭. আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল #    বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ #    কে নবি হিসেবে মেনে নিয়েছে সে ব্যক্তি ঈমানের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করল। (বুখারি, মুসলিম : বাবুল ঈমান, পৃ. ১১৭)

عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَنْ اَحَبَّ للهِ وَ اَبْغَضَ للهِ وَاعْطٰى للهِ وَ مَنَعَ للهِ فَقَدْ اِسْتَكْمَلَ الْاِيْمَانَ-

৮. আবু উমামাহ "     থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম #     বলেছেন, যে বক্তির ভালোবাসা, শত্রুতা, দান করা এবং না করা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়ে থাকে প্রকৃতপক্ষে সেই পূর্ণ ঈমানদার। (বুখারি শরীফ)




























৫. জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : اَلْهَدَفُ وَالْغَايَةُ


আল-কুরআন

اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.

১. আমি তো একমুখী হয়ে তাঁর দিকেই আমার মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আন’আম- ০৬:৭৯)

قُلْ إِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ.

২. (হে রাসূল!) বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার সবরকম ইবাদত, আমার হায়াত, আমার মওত সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। (সূরা আন’আম- ০৬:১৬২)

وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّشْرِیْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ رَءُوْفٌ بِالْعِبَادِ.

৩. অপরদিকে মানুষের মধ্যে কেউ এমনও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রি করে দেয় এবং এমন বান্দাদের ওপর আল্লাহ বড়ই মেহেরবান। (সূরা বাকারা- ০২:২০৭)

إِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ أَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىةِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ وَ مَنْ اَوْفٰی بِعَهْدِه مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِكُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِه وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.

৪. (আসল ব্যাপার হলো) আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল বেহেশতের বদলে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, (দুশমনকে) মারে এবং (নিজেরাও) নিহত হয়। তাদেরকে (বেহেশত দেয়ার ওয়াদা) আল্লাহর দায়িত্বে একটি মজবুত ওয়াদা-যা তাওরাত, ইনজিল ও কুরআনে (করা হয়েছে)। ওয়াদা পালনে আল্লাহর চেয়ে বেশি যোগ্য আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে যে বেচা-কেনার কারবার করেছ, সে বিষয়ে খুশি হয়ে যাও। এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা (সূরা তাওবাহ- ০৯:১১১)

وَ مَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَ الْاِنْسَ إِلَّا لِیَعْبُدُوْنِ.

৫. আমি জিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদত করা ছাড়া আর কারো গোলামির উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। (সূরা যারিয়াত- ৫১:৫৬)

وَ مَاۤ اُمِرُوْۤا إِلَّا لِیَعْبُدُوا اللّٰهَ مُخْلِصِیْنَ لَهُ الدِّیْنَ ۙ۬ حُنَفَآءَ وَ یُقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ یُؤْتُوا الزَّكٰوةَ وَ ذٰلِكَ دِیْنُ الْقَیِّمَةِ.

৬. আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং  যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন। (সূরা বায়্যিনাহ-৯৮ : ৫)

إِنَّاۤ أَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللّٰهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّیْنَ.

৭. নিশ্চয় আমি তোমার কাছে যথাযথভাবে এই কিতাব নাজিল করেছি; অতএব আল্লাহর ‘ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। (সূরা যুমার-৩৯ : ২)

إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْاَعْلٰیۚ - -وَ لَسَوْفَ یَرْضٰی.

৮. কেবল তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। আর অচিরেই সে সন্তোষ লাভ করবে। (সূরা লাইল-৯২ : ২০-২১)


আল হাদিস

عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  اَنَّه قَالَ مَنْ أَحَبَّ لِلّٰهِ وَأَبْغَضَ لِلّٰهِ وَ أَعْطٰى لِلّٰهِ وَمَنَعَ لِلّٰهِ فَقَدْ اِسْتَكْمَلَ الْاِيْمَانَ ـ (اَبُوْ دَاؤُدَ: بَابُ الدَّلِيْلِ عَلٰى زِيَادَةِ الْاِيْمَانِ وَنُقْصَانِهِ)  

১. হজরত আবু উমামা "    রাসূল  #    থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, যে (কাউকে) ভালোবাসল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, শত্রুতা পোষণ করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিছু দান করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আর দান থেকে বিরত থাকল তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেই ঈমানের পূর্ণতা লাভ করল। (আবু দাউদ, বাবুদ দালিলি আলা যিয়াদাতিল ঈমানি ওয়া নুকসানিহি : ৪৬৮১) 

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لِأَبِيْ ذَرٍّ : اَىُّ عُرَى الْاِيْمَانِ اَوْثَقُ : قَالَ : اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ الْمُوَالَاةُ فِيْ اللهِ، وَالْحُبُّ فِي اللهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللهِ ( الْبَيْهَقِىْ : شُعَبُ الْاِيْمَانِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে অব্বাস "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  #    হজরত আবু যর "   কে প্রশ্ন করেন, বল ঈমানের কোন রশিটি অধিক মজবুত? তিনি বললেন, আল্লা ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ    #    বললেন, আল্লাহরই জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা স্থাপন এবং আল্লাহরই জন্য কারো সাথে ভালোবাসা এবং আল্লাহরই জন্য কারো সাথে শত্রুতা ও মনোমালিন্য করা। (বায়হাকি : শুয়াবুল ঈমান, ৯১৯৩) 

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْاِيْمَانِ أَنْ يَّكُوْنَ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَحَبَّ اِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَأَنْ يَّكْرَهَ أَنْ يَعُوْدَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُّقْذَفَ فِي النَّار- ( بُخَارِيْ : بَابُ حَلَاوَةِ الْاِيْمَانِ)

৩. হজরত আনাস বিন "    থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল  #     থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, তিনটি জিনিস তেমাদের যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ লাভ করতে পারবে, তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকলের অপেক্ষা অধিক প্রিয় হবেন, সে কাউকে ভালোবসবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই এবং সে কখনো কুফরির মধ্যে পুনরায় ফিরে যেতে রাযি হবে না, যেমন রাজি হবে না আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে। (বুখারি : বাবু হালাওয়াতিল ঈমানি, ১৫) 

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ يَقُوْلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلَالِىْ الْيَوْمَ أَظِلُّهُمْ فِيْ ظِلِّىْ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّىْ- (مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ فَضْلِ الْحُبِّ فِي اللهِ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, যারা আমার খাতিরে পরস্পরকে ভালোবাসতে, তারা কোথায়? আজ তোমাদেরকে আমার (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিব, আজ আমার (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন ্য কোন ছায়ায় নেই। (মুসলিম : বাবুন ফী ফাদলিল হুব্বি ফিল্লাহি : ৪৬৫৫)

عَنْ أَبِيْ اِدْرِيْسَ الْخَوْلَانِىِّ اَنَّهُ قَالَ اَنَّهُ قَالَ جِئْتُ اِلى مُعَاذِبْنِ جَبَلٍ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ قُلْتُ وَاللهِ إِنِّيْ لَاُحِبُّكَ لِلَّهِ فَقَالَ أاللهُ فَقُلْتُ أاَللهِ فَقَالَ أاَللهُ فَقُلْتُ أَاَللهِ فَقَالَ أَاللهِ فَقُلْتُ أَاَللهِ قَالَ فَأَخَذَ بِحُبْوَةِ رِدَائِىْ فَجَبَذَنِىْ اِلَيْهِ وَقَالَ اَبْشِرْ فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَ وَجَبَتْ مُحَبَّتِىْ لِلْمُتَحَبِّيْنَ فِي وَالْمُتَجَالِسِيْنَ فِي وَالْمُتَزَاَوِرِيْنَ فِي وَالْمُتَبَاذِلِيْنَ فِي-(مُؤَطَّاْ مَالِكٍ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الْمُتَحَابِّيْنَ فِي اللهِ)

৫.  হজরত আবু ইদরীস খাওলানী "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  আমি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল "   এর নিকট গিয়ে তাকে সালাম দিলাম। অতপর বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি বললাম, হ্যাঁ আল্লাহর শপথ! তিনি আবার বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি বললাম, হ্যা আল্লাহর শপথ! তিনি আবার বললেন, আল্লাহর শপথ! বর্ণনাকারী বলেন, অতপর তিনি আমার চাদর ধরে তার দিকে আমাক টান দিলেন এবং বললেন, একটি সুসংবাদ শোন। কেননা আমি রাসূল  #   কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অনিবার্য, যারা আমার উদ্দেশ্য পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার উদ্দেশ্যে একত্রে বসে, আমার খাতিরে পরস্পর সাক্ষাতে মিলিত হয় এবং আমার খাতিরে একে অন্যের জন্য ব্যয় করে। (মুয়াত্তা মালেক : বাবু মা জাআ ফিল মুতাহাব্বিনা ফিল্লাহ : ১৫০৩)

عَنْ عَبَّاسٍ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ذَاقَ طَعْمَ الْاِيْمَانِ مَنْ رَّضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَّ بِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا-

৬. আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল #    বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ #    কে নবি হিসেবে মেনে নিয়েছে সে ব্যক্তি ঈমানের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করল। (বুখারি, মুসলিম : বাবুল ঈমান, পৃ. ১১৭)

৬. দাওয়াত : اَلدَّعْوَةُ

اَلدَّعْوَةُ অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, আমন্ত্রণ জানানো। ইহকালীন কল্যাণ, পরকালীন তথা আখিরাতের মুক্তির জন্য মানব জাতিকে আল্লাহর বিধানের দিকে আহ্বান করাকে দাওয়াত বলে। অথবা ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান পালনের জন্য আহ্বান করাকে দাওয়াত বলে।


আল-কুরআন

اُدْعُ اِلٰی سَبِیْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِیْلِه وَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِیْنَ.

১. (হে নবি!) হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে ডাকুন। আর তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে হলে সুন্দরভাবে করুন। আপনার রবই বেশি জানেন যে, কে তাঁর পথ থেকে সরে আছে, আর কে সঠিক পথে আছে। (সূরা নাহ্ল- ১৬:১২৫)

وَ مَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ إِنَّنِیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ.

২. তার চেয়ে আর কে উত্তম কথার অধিকারী হতে পারে যে (মানুষকে) ডাকে আল্লাহর পথে, সৎকর্ম করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত (হা-মিম আস-সাজদাহ- ৪১:৩৩)

یٰاَیُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ مِنْ رَّبِّكَ ؕ وَ اِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ یَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ؕ إِنَّ اللّٰهَ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْكٰفِرِیْنَ

৩. হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সূরা মায়েদা-৫ : ৬৭)

كُنْتُمْ خَیْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ ؕ وَ لَوْ اٰمَنَ اَهْلُ الْكِتٰبِ لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ ؕ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ اَكْثَرُهُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

৪. তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল¬াহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১১০)

وَ لْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ یَّدْعُوْنَ اِلَی الْخَیْرِ وَ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ؕ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৫. আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১০৪)

یٰاَیُّهَا النَّبِیُّ إِنَّا اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیْرًاক্স وَّ دَاعِیًا اِلَی اللّٰهِ بِاِذْنِه وَ سِرَاجًا مُّنِیْرًا.

৬. হে নবি! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সুখবরদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে, আল্লাহর অনুমতিতে তাঁর দিকে দাওয়াতদাতা বানিয়ে এবং উজ্জ্বল বাতি হিসাবে। (সূরা আহযাব- ৩৩: ৪৫-৪৬)

قُلْ هٰذِهٖ سَبِیْلِیْۤ اَدْعُوْۤا اِلَی اللّٰهِ ؔ۫ عَلٰی بَصِیْرَةٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیْ ؕ وَ سُبْحٰنَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ

৭. বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’। (সূরা ইউসুফ-১২ : ১০৮)

یٰاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُক্স  قُمْ فَأَنْذِرْক্স  وَ رَبَّكَ فَـكَبِّرْ.

৮. হে কম্বল মুড়ি দিয়ে শায়িত ব্যক্তি! ওঠ এবং সাবধান কর এবং তোমার রবের বড়ত্ব প্রচার কর। (সূরা মুদ্দাস্সির-৭৪:১-৩)

فَلِذٰلِكَ فَادْعُ ۚ وَ اسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَ ۚ وَ لَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ ۚ وَ قُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ مِنْ كِتٰبٍ ۚ وَ اُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَیْنَكُمْ ؕ اَللّٰهُ رَبُّنَا وَ رَبُّكُمْ ؕ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَ لَكُمْ اَعْمَالُكُمْ ؕ لَا حُجَّةَ بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمْ ؕ اَللّٰهُ یَجْمَعُ بَیْنَنَا ۚ وَ اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ.

৯. এ কারণে তুমি আহবান কর এবং দৃঢ় থাক যেমন তুমি আদিষ্ট হয়েছ। আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না এবং বল, ‘আল্লাহ যে কিতাব নাজিল করেছেন আমি তাতে ঈমান এনেছি এবং তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের রব এবং তোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে’। (সূরা শূরা-৪২ : ১৫)

إِنَّا اَرْسَلْنٰكَ بِالْحَقِّ بَشِیْرًا وَّ نَذِیْرًا وَ اِنْ مِّنْ اُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِیْهَا نَذِیْرٌ.

১০. নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্য সহকারে সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে পাঠিয়েছি। আর এমন কোন উম্মত গত হয়নি, যাদের মধ্যে কোনো সতর্ককারী আসেনি। (সূরা ফাতির- ৩৫:২৪)

وَ قُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ ۫ فَمَنْ شَآءَ فَلْیُؤْمِنْ وَّ مَنْ شَآءَ فَلْیَكْفُرْ ۙ إِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلظّٰلِمِیْنَ نَارًا ۙ اَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ؕ وَ اِنْ یَّسْتَغِیْثُوْا یُغَاثُوْا بِمَآءٍ كَالْمُهْلِ یَشْوِی الْوُجُوْهَ ؕ بِئْسَ الشَّرَابُ وَ سَآءَتْ مُرْتَفَقًا.

১১. পরিষ্কার বলে দিন, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এটাই সত্য। এখন যার ইচ্ছা ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা কুফরি করুক। আমি (অস্বীকারকারী) যালিমের জন্য আগুন তৈরি করে রেখেছি, যার শিখা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। সেখানে তারা যদি পানি চায় তাহলে এমন পানি দেয়া হবে, যা তেলের মতো এবং যা তাদের চেহারাকে ঝলসিয়ে দেবে। (সেটা) কতই না মন্দ পানীয় এবং বড়ই মন্দ বাসস্থান। (সূরা কাহাফ- ১৮:২৯)





আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ ايَةً وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِىْ اِسْرَائِيْلَ وَلَا حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدً افَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَه مِنَ النَّارِ- ــ (بُخَارِيْ: بَابُ مَاذُكِرَ عنْ بَنِىْ اِسْرَائِيْلَ)

১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর "    থেকে বর্ণিত, নবি করিম  #    ইরশাদ করেন, একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে প্রচার কর। আর বনি ইসলাইল সম্পর্কে আলোচনা কর, তাতে কোন দোষ নেই। যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করে, তার নিজ ঠিকানা জাহান্নামে সন্ধান করা উচিত। (বুখারি, বাবু মা যুকিরা আন বানি ইসরাইল, ৩২০২)

عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ يُحَدِّثُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَقُوْلُ نَضَّرَ الله اِمْرً سَمِعَ مِنَّا شَيْئًا فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعى مِنْ سَامِعٍ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الْحَثِّ عَلى تَبْلِيغْ السَّمَاعِ)

২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সভহমংষ "    থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি নবি করিম  #   কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন হাদিস শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে, সেভাবেই তা অপরের নিকট পৌঁছিয়েছে। কেননা অনেক সময় যার কাছে দাওয়াত পৌঁছানো হয় সে যার নিকট থেকে শুনেছে তার চেয়ে বেশি রক্ষণাবেক্ষণকারী হয়ে থাকে। (তিরমিজি, বাবু মা জাআ ফিল হাসসি আলা তাবলিগী সামাঈ, ২৫৮১)

عَنِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ يَسِّرُوْا وَلَا تُعَسِّرُوْا  وَبَشِّرُوْا وَلَا تُنَفِّرُوْا ـ (بُخَارِيْ: بَابُ مَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى الله ﷺ  يَتَخَوَّلُهُمْ بِالْمَوْعِظَةِ وَالْعِلْمِ كَـىْ لَا يَنْفِرُوْا)

৩. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেছেন, নবি করিম  #    ইরশাদ করেছেন, তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না, সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ করো না। (বুখারি, বাবু মা কানান নাবিয়্যু #   ইয়াতাখাওয়ালুহুম বিল মাওইযাতি ওয়াল ইলমি কায় লা ইয়ানফিরু- ৬৭) 

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ عَنِ النَّبِيِّ  صَلَّى الله ﷺ  قَالَ وَالَّذِيْ نَفْسِىْ بِيَدِه لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَه  فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ ــ (ترمذى : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْاَمْرِ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهْىِ عَنِ الْمُنْكَرِ)

৪. হজরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান "    নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেছেন, নবি করিম  #   এরশাদ করেছেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে লোককে বিরত রাখবে নতুবা তোমাদের ওপর শিগগিরই আল্লাহর গজব নাজিল হবে। অতপর তোমরা (তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য) দোয়া করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে না। (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফিল আমরি বিল মারুফি ওয়ান নাহি আনিল মুনকারি- ২০৯৫) 

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ مَن رَأى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِه فِاِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فِبِلِسَانِه فِاِنْ لَّمْ يَسْتَطِع فَبِقَلْبِه وَذٰلِكَ اَضْعَفُ الْاِيْمَانِ ــ (مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ كَوْنِ النَّهْىِ عَنِ الْمُنْكَرِ مِنَ الْاِيْمَانِ)

৫. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে। যদি সে এ ক্ষমতা না রাখে তবে যেন মুখের কথার দ্বারা (জনমত গঠন করে) তা প্রতিরোধ করে। যদি সে এ ক্ষমতাটুকু না রাখে তবে যেন অন্তরের দ্বারা (পরিকল্পিত উপায়ে) এটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। (বা এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে) আর এটা হলো ঈমানের দুর্বলতম (নিম্নতম) স্তর। (মুসলিম : বাবু বায়ানি কাওনিন নাহি আনিল মুনকারি মিনাল ঈমানি, ৭০)



عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  رَضِيَ الله عَنْهُ  اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ مَنْ دَعَا إِلٰى هُدًى كَـانَ لَه مِنَ الْاَجْرِ مِثْلُ اُجُوْرِ مَنْ تَبِعَه لَا يَنْقُصُ ذٰلِكَ مِنْ اُجُوْرِهِمْ شَيْئًا، وَ مَنْ دَعَا إِلٰى ضَلَالَةٍ كَـانَ لَه مِنَ الْاِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَه لَا يَنْقُصُ ذٰلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا- (مُسْلِمْ : بَابُ مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً اَوْ سَيِّئَةً وَ مَنْ دَعَا اِلى هُدًى اَوْ ضَلَالَةٍ)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "    হতে বর্ণিত। রাসূল  #    বলেছেন, যে হেদায়াতের (সত্য ও সঠিক পথ) দিকে ডাকে, তার জন্য প্রতিদান রয়েছে তাদের সমপরিমাণ, যারা তার অনুসরণ করেছে। এতে তাদের সাওয়াবের একটুও কমবে না। আর যে ভ্রষ্টতার ( গোমরাহী) দিকে ডাকে তার ওপর গুনাহ বর্তাবে তাদের সমপরিমাণ, যারা তার অনুসরণ করেছে। এতে তাদের গুনাহ একটুও হ্রাস পারবে না। (মুসলিম : বাবু মান সান্না সুন্নাতান হাসানাতান আও সায়্যিআতান ওয়ামান দাআ ইলা হুদান আও দলালাতিন, ৪৮৩১)

عَنْ سَهْلِ ابْنِ سَعْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ وَاللهِ لَانْ يَهْدِىْ الله بِكَ رَجُلَا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ -(اَبُوْ دَاود : بَابُ فَضْلِ نَشْرِ الْعِلْمِ)

৭. হজরত সাহল ইবনে সা‘দ  "    হতে বর্ণিত, নবি করিম  #    বলেছেন, আল্লাহর শপথ! তোমার ডাকে আল্লাহ তাআলা একজন ব্যক্তিকেও হেদায়াত দিয়ে থাকলে তা তোমার জন্য লাল উট (প্রাপ্তি) অপেক্ষা উত্তম। (আবু দাউদ : বাবু ফাদলি নাশারিল ইলমি, ৩১৭৬)

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ  قَالَ يَسِّرُوْا وَ لَا تُعَسِّرُوْا بَشِّرُوْا وَ لَا تُنَفِّرُوْا-

৮. হজরত আনাস "     হতে বর্ণিত, রাসূল #    বলেছেন, সহজ করো, কঠিন করো না, সুসংবাদ দাও বীতশ্রদ্ধ করো না। (বুখারি : বাবুল ইলম, পৃ.৫৭)



৭. সংগঠন : اَلْجَمَاعَةُ

اَلْجَمَاعَةُ অর্থ সাধারণত সংবদ্ধকরণ, দলবদ্ধ জীবন।


আল-কুরআন

وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللّٰهِ جَمِیْعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوْا ۪ وَ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ عَلَیْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا ۚ وَ كُنْتُمْ عَلٰی شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِّنْهَا ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمْ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ

১. আর তোমরা সকলে আল্ল¬াহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্ল¬াহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্ল¬াহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্ল¬াহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। (সূরা আল ইমরান - ৩ : ১০৩)

إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیْنَ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِه صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْیَانٌ مَّرْصُوْصٌ

২. নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐসব লোককে পছন্দ করেন, যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে, যেন তারা সীসা গলানো মজবুত দেয়াল। (সূরা আস্ সাফ্- ৬১: ০৪)

وَ كَیْفَ تَكْفُرُوْنَ وَ أَنْتُمْ تُتْلٰی عَلَیْكُمْ اٰیٰتُ اللّٰهِ وَ فِیْكُمْ رَسُوْلُهٗ ؕ وَ مَنْ یَّعْتَصِمْ بِاللّٰهِ فَقَدْ هُدِیَ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ۠

৩. আর কিভাবে তোমরা কুফরি কর, অথচ তোমাদের কাছে আল্ল¬াহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। আর যে ব্যক্তি আল¬াহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে তাকে অবশ্যই সরল পথের দিশা দেয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৩ : ১০১)

وَ لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ تَفَرَّقُوْا وَ اخْتَلَفُوْا مِنْ بَعْدِ مَا جَآئَتْهُمُ الْبَیِّنٰتُ وَ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِیْمٌ

৪. তোমরা যেন ঐ লোকদের মতো হয়ে না যাও, যারা বহু দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে এবং অত্যন্ত স্পষ্ট হেদায়াত পাওয়ার পরও যারা মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। যারা এমন আচরণ করেছে তারা সেদিন কঠোর শাস্তি পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ০৩: ১০৫)

كُنْتُمْ خَیْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ لَوْ اٰمَنَ اَهْلُ الْكِتٰبِ لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ  مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ اَكْثَرُهُمُ الْفٰسِقُوْنَক্স

৫. তোমরাই দুনিয়ার ঐ সেরা উম্মত যাদেরকে মানবজাতির হেদায়াত ও সংশোধনের জন্য আনা হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। আহলে কিতাবগণ যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের জন্যই তা ভাল ছিল। যদিও তাদের কিছু লোক ঈমানদারও পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই নাফরমান। (সূরা আলে ইমরান-০৩: ১১০)

وَ لْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ یَّدْعُوْنَ اِلَی الْخَیْرِ وَ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَক্স

৬. তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক তো অবশ্যই থাকা উচিত, যারা নেকি ও কল্যাণের দিকে ডাকবে, ভালো কাজের হুকুম দেবে এবং খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই সফল হবে। (সূরা আলে ইমরান-০৩: ১০৪)

وَ إِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ اَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ

৭. তোমাদের এই দীন তো একই দীন। আর আমি তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমাকে কর। (সূরা মুমিনূন-২৩ : ৫২)

شَرَعَ لَكُمْ مِّنَ الدِّیْنِ مَا وَصّٰی بِهٖ نُوْحًا وَّ الَّذِیْۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْكَ وَ مَا وَصَّیْنَا بِهٖۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ مُوْسٰی وَ عِیْسٰۤی أَنْ اَقِیْمُوا الدِّیْنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوْا فِیْهِ ؕ كَبُرَ عَلَی الْمُشْرِكِیْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ اِلَیْهِ ؕ اَللّٰهُ یَجْتَبِیْۤ اِلَیْهِ مَنْ یَّشَآءُ وَ یَهْدِیْۤ اِلَیْهِ مَنْ یُّنِیْبُ

৮. তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহি পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহবান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি  হিদায়াত দান করেন। (সূরা শুরা-৪২ : ১৩)


আল হাদিস

عَنِ الْحَارِثِ الْاَشْعَرِىِّ  اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ أَنَا امُرَنَّكُمْ بِخَمْسٍ اَلله أَمَرَنِىْ بِهِنَّ بِالْجَمَاعَةِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فِإِنَّه  مَنْ خَرَجَ مِنَ الْجَمَاعَةِ قِيْدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْاِسْلَامِ مِنْ عُنُقِه إِلَّا أَن يَّرجِعَ وَمَنْ دَعَا بِدَعْوٰى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَاءِ جَهَنَّمَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَاِنْ صَامَ وَصَلّٰى قَالَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّٰى  وَزَعَمَ أَنَّه مُسْلِمْ فَادْعُوْا ا لْمُسْلِمِيْنَ بِمَا سَمَّاهُمْ الْمُسْلِمِيْنَ الْمُؤْ مِنِيْنَ عِبَادَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ـ ( مُسْنَدِ اَحْمَدَ : حَدِيْثُ الْحَارِثِ الْاَشْعَرِىِّ عَنِ النَّبِيِّ )

১ . হজরত হারিসুল আশয়ারী "    থেকে বর্ণিত, নবি করিম  #    বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ১. জামায়াতবদ্ধ হবে ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে ৩. তার আদেশ মেনে চলবে ৪. আল্লাহর পথে হিজরত করবে ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, আর তোমাদের মধ্য হতে যে সংগঠন হতে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল তবে যদি ফিরে আসে তা ভিন্ন কথা। আর যে ব্যক্তি (মানুষদেরকে) জাহেলিয়াতের দিক আহবান জানায় সে জাহান্নামি। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ #   ! সে যদি রোজা রাখে, নামাজ পড়ে, এরপরও? রাসূল #    বললেন, যদি রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে এরপরও জাহান্নামি হবে। তবে তোমরা মুসলমানদের ডাকো যেভাবে তিনি (আল্লাহ) তাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম, মু’মিন এবং আল্লাহর বান্দা হিসেবে। (মুসনাদে আহমাদ: হাদিসুল হারিসিল আশয়ারী আনিন নাবিয়্যি, ১৬৫৪২)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ إِذَا كَانَ ثَلَاثَةٌ فِيْ سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوْا اَحَدَهُمْ ـ (اَبُوْ دَاؤدَ: بَابٌ فِي النِّدَاءِ عِنْدَ النَّفِيْرِ يَا خَيْلَ اللهِ ارْكَبِىْ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, যখন কোন তিনজন ব্যক্তি সফরে থাকে, তখন যেন একজনকে আমির বানিয়ে নেয়। (আবু দাউদ: বাবুন ফিন নিদাই ইনদাল নাফিরি ইয়া খাইলাল্লাহির কাবী, ২২৪২)

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ  قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْاِسْلَامِ مِنْ عُنُقِه ـ اَبُوْ دَاؤدَ: بَابٌ فِيْ قَتْلِ الْخَوَارِجِ)

৩. হজরত আবু যর "    বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, যে সংগঠন থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সে তার ঘাড় থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল (আবু দাউদ: বাবুনফী ক্বাতলিল খাওয়ারিজি- ৪১৩১)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَهَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمِ أَنَّهُ قَالَ مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً وَ مَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عِمِيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُوْ اِلى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلى اُمَّتِىْ يَضْرِبُ بِرَّهَا وَ فَاجِرَهَا وَلَا يَتَحَاشى مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلَا يَفِيْ لِذِىْ عَهْدٍ عَهْدَهُ فَلَيْسَ مِنِّىْ وَلَسْتُ مِنْهُ-(مُسْلِمْ : بَابُ وُجُوْبِ مُلَازَمَةِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِيْنَ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেলা এবং সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল অতপর সে মারা গেল তাহলে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর গোমরাহীর পতাকাতলে (শামিল হয়ে) যে লড়াই করে বংশপ্রীতির দরুন ক্রুদ্ধ হয়ে কিংবা জাতির দিকে আহ্বান করতে গিয়ে কিংবা জাতিকে সাহায্য করতে গিয়ে। অতপর নিহত হল, এট জাহেলিয়াতের হত্যা (মৃত্যু)। আর যে আমার উম্মতের ভাল-মন্দ লোকদের মারা জন্য বের হয়, এতে সে মুমিনদেরও পরওয়া করে না এবং চুক্তিবদ্ধদের সাথে কৃত প্রতিশ্রুতিও পূরণ করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়, আমিও তার দলভুক্ত নই। (মুসলিম : বাবু উজুবি মুলাযামাতি জামাআতিল মুসলিমীন, ৩৪৩৬)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ إِنَّ اللهَ لَا يَجْمَعُ اُمَّتِىْ اَوْ قَالَ اُمَّةَ مُحَمَّدٍ ﷺ عَلى ضَلَالَةٍ وَ يَدُ اللهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ وَ مَنْ شَذَّ شَذَّ اِلى النَّارِ-(تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ لُزُوْمِ الْجَمَاعَةِ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    হতে বর্ণিত, রাসূল করিম  #    ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতকে গোমরাহির ওপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না। আর আল্লাহর হাতে রয়েছে সংঘবদ্ধতা তথা জামায়াতের সাথে। আর যে সংগঠন থেকে একা হয়ে পড়বে, সে জাহান্নামে পতিত হবে। (তিরমিজি, বাবু মা জাআ ফি লুযুমিল জামায়াতি, ২০৯৩)

عَنْ تَمِيْمٍ الدَّارِىْ قَالَ : تَطَاوَلَ النَّاسُ فِيْ الْبِنَاءِ فِيْ زَمَنِ عُمَرَ، فَقَالَ عُمَرَ : يَا مَعْشَرَ الْعُرَيْبِ الْاَرْضِ إِنَّهُ لَا اِسْلَامَ إِلَّا بِجَمَاعَةٍ وَ لَا جَمَاعَةَ إِلَّا بِامَارَةٍ وَلَا اِمَارَةَ إِلَّا بِطَاعَةٍ، فَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلى الْفِقْهِ كَانَ حَيَاةً لَهُ وَلَهُمْ، وَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهً عَلى غَيْرِ فِقْهٍ كَانَ هَلَاكًا لَهُ وَلَهُمْ (سُنَنُ الدَّارِمِىِّ : بَابٌ فِيْ ذِهَابِ الْعِلْمِ)

৬. হজরত তামীম দারী "    হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর "    এর যুগে মানুষ সকল অট্টালিকা বানানোর প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হল। অতপর ওমর "      বললেন, হে আরবের অধিবাসীগণ নিশ্চয়ই সংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই, নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন নেই আর আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্বের অস্তিত্ব নেই।  কোনো জাতি যাকে সঠিক ও গভীর জ্ঞানের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত করে, সে তার নিজের জন্য এবং তার জাতির জন্য জীবনীশক্তি হিসেবে ভুমিকা রাখে আর যাকে তার জাতি সঠিক ও গভীর জ্ঞানের ওপর ভিত্তি না করেই নেতা বানায়, সে তার নিজের জন্য এবং তার জাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হয়। (সুনানে দারেমী, বাবুন ফী যিহাবিল ইলমি-২৫৭)
























৮. প্রশিক্ষণ : اَلتَّعْلِيْمُ

اَلتَّعْلِيْمُ অর্থ জানা, জ্ঞান, বিদ্যা।


আল-কুরআন

هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِه وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ

১. তিনিই সেই সত্তা, যিনি সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝ থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যে তাদেরকে তাঁর (আল্লাহ) আয়াত শোনান, তাদের জীবন পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে পড়ে ছিল। (সূরা জুমুআ-৬২ : ২)

رَبَّنَا وَ ابْعَثْ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ یُزَكِّیْهِمْ ؕ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ.

২. হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।

كَمَا اَرْسَلْنَا فِیْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ یَتْلُوْا عَلَیْكُمْ اٰیٰتِنَا وَ یُزَكِّیْكُمْ وَ یُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ یُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ.

৩. যেমন (তোমরা এভাবে সফলতা লাভ করেছ) আমি তোমাদের নিকট তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শোনান, তোমাদের জীবনকে সঠিকভাবে গড়ে তোলেন, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন এবং তোমাদের ঐসব কথা শেখান, যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা- ০২: ১৫১)

وَ یُعَلِّمُهُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ التَّوْرٰىةَ وَ الْاِنْجِیْلَ.

৪. (ফেরেশতারা আগের কথার জের টেনে বলল) আল্লাহ তাঁকে কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দিবেন এবং তাওরাত ও ইনজিলের ইলম শেখাবেন। (সূরা আলে ইমরান-০৩: ৪৮)

اَلرَّحْمٰنُক্স عَلَّمَ الْقُرْاٰنَক্স خَلَقَ الْاِنْسَانَক্স عَلَّمَهُ الْبَیَانَ.

৫. অতি বড় মেহেরবান আল্লাহ এ আল-কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। (সূরা আর-রাহমান-৫৫: ১-৪)

وَ عَلَّمَ اٰدَمَ الْاَسْمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَی الْمَلٰٓىِٕكَةِ فَقَالَ أَنْبِـُٔوْنِیْ بِاَسْمَآءِ هٰؤُلَآءِ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ.

৬. এরপর আল্লাহ আদমকে সব জিনিসের নাম শেখালেন। তারপর এসব জিনিসকে ফেরেশতাদের সামনে পেশ করে বললেন, যদি তোমাদের এ ধারণা সঠিক হয়ে থাকে (যে খলিফা নিয়োগ করলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে) তাহলে এসব জিনিসের নাম বল দেখি। (সূরা বাকারা-০২: ৩১)

وَ لَوْ لَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَیْكَ وَ رَحْمَتُهٗ لَهَمَّتْ طَّآىِٕفَةٌ مِّنْهُمْ أَنْ یُّضِلُّوْكَ ؕ وَ مَا یُضِلُّوْنَ إِلَّاۤ أَنْفُسَهُمْ وَ مَا یَضُرُّوْنَكَ مِنْ شَیْءٍ ؕ وَ أَنْزَلَ اللّٰهُ عَلَیْكَ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ عَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ ؕ وَ كَانَ فَضْلُ اللّٰهِ عَلَیْكَ عَظِیْمًا.

৭. আর তোমার ওপর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না হত তবে তাদের মধ্য থেকে একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করার সংকল্প করেই ফেলেছিল! আর তারা নিজদের ছাড়া কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তারা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাজিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান। (সূরা নিসা-৪ : ১১৩)

وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ وَ یُعَلِّمُكُمُ اللّٰهُ ؕ وَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ.

৮. আর তোমরা আল্ল¬াহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আল্ল¬াহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন। আর আল্ল¬াহ সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী। (সূরা বাকারা-২ : ২২৮)

اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ- خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ- اِقْرَاْ وَ رَبُّكَ الْاَكْرَمُ-الَّذِیْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ-عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ یَعْلَمْ.

৯. পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক থেকে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সূরা আলাক : ১-৫)


আল হাদিস

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  تَعَلَّمُوا الْقُرْاٰنَ وَالْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوْا النَّاسَ فَإِنِّيْ مَقْبُوْضٌ ـ (تِرْمِذِيْ: بَابٌ مَا جَاءَ فِيْ تَعْلِيْمِ الْفَرَائِضِ، ضَعَّفَهُ الْاَلْبَانِىْ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    এরশাদ করেছেন, আল-কুরআন এবং ফারায়েজ শিক্ষা গ্রহণ কর এবং মানুষকে শিক্ষা দাও। নিশ্চয়ই আমাকে উঠিয়ে নেয়া হবে। (তিরমিজি: বাবু মা জা’আ ফি তালিমিল ফারায়েযে, আলবানী একে দুর্বল বলেছেন, ২০১৭)

عَنْ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ أَنَّه بلَغَه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّ اللهِ ﷺ  قَالَ بُعِثْتُ مُعَلِّمًا لِاُتَمِّمَ حُسْنَ الْاَخْلَاقِ ـ (مُؤْطَّا مَالِكِ : باب مَاجَاءَ فَى حُسْنِ الْخُلْقِ) 

  ২. হজরত ইমাম মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার কাছে এই সংবাদ পৌঁছেছে, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, আমাকে সুন্দর, বলিষ্ঠ চরিত্রের পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। (মুয়াত্তা মালেক, বাবু মা জা আফি হুসনিল খুলকি)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَرَّ بِمَجْلِسَيْنِ فِيْ مَسْجِدِهِ فَقَالَ : كِلَاهُمَا عَلى خَيْرٍ وَاَحَدُهُمَا اَفْضَلُ مِنْ صَاحِبِهِ أَمَّا هؤُلَآءِ فَيَدْعُوْنَ اللهِ وَيُرَغِّبُوْنَ اِلَيْهِ فَاِنْ شَاءَ اَعْطَاهُمْ وَاِنْ شَاءَ مَنَعَ هُمْ، وَاَمَّا هؤُلَآءِ فَيَتَعَلَّمُوْنَ الْفِقْهَ وَالْعِلْمَ وَيُعَلِّمُوْنَ الْجَاهِلَ فَهُمْ اَفْضَلُ، وَاَنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا قَالَ ثُمَّ جَلَسَ فِيْهِمْ-(سُنَنُ الدَّارِمِىْ : بَابٌ فِيْ فَضْلِ الْعِلْمِ وَالْعَالِمِ، ضَعَّفَهُ الْاَلْبَانِىْ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ  #    মসজিদে নববীতে দুটি মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, অতপর বললেন, তারা উভয় মজলিসই কল্যাণের মধ্যে আছে, তবে একটি অপরটির চেয়ে অধিক ভালো। একটি মজলিস আল্লাহকে ডাকছে এবং তার কাছে প্রাপ্তির আশা করছে। আল্লাহ চাইলে তাদেরকেক দিতে পারনে আবার চাইলে নাও দিতে পারনে। অপর মজলিস ফিকহ ও ইলম শিক্ষা লাভ করছে এবং অশিক্ষিতদেরকে তা শিক্ষা দিচ্ছে। আর এরাই উত্তম মজলিস। আর আমি তো শিক্ষকরূপেই প্রেরিত হয়েছি। অতপর তিনি তাদের মাঝে বসে পড়লেন। (সুনানে দারেমী, বাবুন ফি ফাদলিল ইলমি ওয়ালা আলেমি, ৩৫৭, আলবানী একে দুর্বল বলেছেন)

عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ الله عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْاٰنَ وَعَلَّمَه ـ (بُخَارِيْ: بَابُ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْاٰنَ وَعَلَّمَه)

৪. হজরত উসমান "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই হচ্ছে সর্বোত্তম ব্যক্তি যে, নিজে আল-কুরআন মাজিদ শিক্ষা গ্রহণ করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (বুখারি, বাবু খায়রুকুম মান তায়াল্লামাল আল-কুরআন ওয়া আল্লামাহু: ৪৬৩৯)

عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ ذُكِرَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّ اللهُ ﷺ  رَجُلَانِ اَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالْآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّ اللهُ ﷺ  فَضْلُ الْعَالِمِ عَلى الْعَابِدِ كَفَضْلِىْ عَلى اَدْنَاكُمْ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّ اللهُ ﷺ  إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَاَهْلَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِيْنَ حَتّٰى النَّمْلَةَ فِيْ جُحْرِهَا وَ حَتّٰى الْحُوْتَ لَيُصَلُّوْنَ عَلى مُعَلَّمِ النَّاسِ الْخَيْرِ-(تِرْمِذِيْ : بَابُ مَ جَاءَ فِيْ فَضْلِ الْفِقْهِ عَلى العِبَادَةِ)

৫. হজরত আবু উমামা আল বাহেলী "    থেকে বর্ণিত। একদা নবি করিম  #    এর নিকট এমন দুই ব্যক্তির বিষয় আলোচনা করা হল, যাদের একজন ছিলেন আবেদ, অন্যজন ছিলেন আলেম। অতপর রাসূল #     বললেন, তোমাদের একজন সাধারণ মুসলমানের তুলনায় আমি যে মর্যাদার অধিকারী, উক্ত আলেম ব্যক্তিও ঐ আবেদের তুলনায় সে মর্যাদার অধিকারী। অতপর রাসূল #     বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতাগণ আসমান যমীনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও মাছ পর্যন্ত সে ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে লোকদেরকে কল্যাণের (ইলম) শিক্ষা দান করে। (তিরমিযি : বাবু মা জা আ ফী ফাদলিল ফিকহি আলাল ইবাদাতি-২৬০৯) 



























৯. ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন : حَرَكَةُ التَّعْلِيْمِ الْاِسْلَامِى

আল-কুরআন

اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَক্স خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍক্স  اِقْرَاْ وَ رَبُّكَ الْاَكْرَمُক্স الَّذِیْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِক্স  عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ یَعْلَمْ.

১. পড়ুন (হে রাসূল!) আপনার রবের নাম নিয়ে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি জমাট রক্তের পিণ্ড (ভ্রুণ) থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আপনি পড়ুন, আপনার রব বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে তিনি এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সূরা আলাক- ৯৬:১-৫)

اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیْلِ سَاجِدًا وَّ قَآىِٕمًا یَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَ یَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّهٖ قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الَّذِیْنَ یَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ ؕ إِنَّمَا یَتَذَكَّرُ اُولُوا الْاَلْبَابِ.

২. যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা যুমার -৩৯ : ৯)

وَ مِنَ النَّاسِ وَ الدَّوَآبِّ وَ الْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَ ؕ إِنَّمَا یَخْشَی اللّٰهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمٰٓؤُا ؕ إِنَّ اللّٰهَ عَزِیْزٌ غَفُوْرٌ.

৩. আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল¬াহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল¬াহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৩৫ : ২৮)

هُوَ الَّذِیْۤ أَنْزَلَ عَلَیْكَ الْكِتٰبَ مِنْهُ اٰیٰتٌ مُّحْكَمٰتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتٰبِ وَ اُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌ ؕ فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَ ابْتِغَآءَ تَاْوِیْلِهٖ ؔۚ وَ مَا یَعْلَمُ تَاْوِیْلَهٗۤ إِلَّا اللّٰهُ ؔۘ وَ الرّٰسِخُوْنَ فِی الْعِلْمِ یَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ ۙ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَا ۚ وَ مَا یَذَّكَّرُ إِلَّاۤ اُولُوا الْاَلْبَابِ.

৪. তিনিই তোমার ওপর কিতাব নাজিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল¬াহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ৭)

وَ مَا كَانَ الْمُؤْمِنُوْنَ لِیَنْفِرُوْا كَآفَّةً ؕ فَلَوْ لَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآىِٕفَةٌ لِّیَتَفَقَّهُوْا فِی الدِّیْنِ وَ لِیُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوْۤا اِلَیْهِمْ لَعَلَّهُمْ یَحْذَرُوْنَ.

৫. আর মুমিনদের জন্য সংগত নয় যে, তারা সকলে একসঙ্গে অভিযানে বের হবে। অতপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে। (সূরা তাওবা -৯ : ১২২)

فَتَعٰلَی اللّٰهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۚ وَ لَا تَعْجَلْ بِالْقُرْاٰنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ یُّقْضٰۤی اِلَیْكَ وَحْیُهٗ ؗ وَ قُلْ رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا.

৬. সুতরাং আল্লাহ মহান যিনি সত্যিকার অধিপতি; তোমার প্রতি ওহি সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং তুমি বল, ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ (সূরা ত্বাহা -২০ : ১১৪)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا إِذَا قِیْلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوْا فِی الْمَجٰلِسِ فَافْسَحُوْا یَفْسَحِ اللّٰهُ لَكُمْ ۚ وَ إِذَا قِیْلَ انْشُزُوْا فَانْشُزُوْا یَرْفَعِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ ۙ وَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجٰتٍ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ.

৭. হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সূরা মুজাদালাহ -৫৮ : ১১)

اَفَمَنْ یَّعْلَمُ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ اَعْمٰی إِنَّمَا یَتَذَكَّرُ اُولُوا الْاَلْبَابِ.

৮. যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাজিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মত, যে অন্ধ? বুদ্ধিমানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা রাদ -১৩ : ১৯)


আল হাদিস

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ ـ (بَيْهَقِىْ: شُعَبُ الْاِيْمَانِ)

১. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল # বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম (নর-নারীর) ব্যক্তির ওপর ফরজ (বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান: ১৬১৪)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ (رضـ)  قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ خَرَجَ فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ كَـانَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ حَتّٰى يَرْجِـعَ ـ (تِرْمِذِيْ: بَابُ فَضْلِ طَلَبِ الْعِلْمِ)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল # বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অšে¦ষণে বের হয়, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই থাকে। (তিরমিযি বাবু ফাদলি তলাবিল ইলমি-২৫৭১)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ لَنْ يَّشْبَعَ الْمُؤْمِنُ مِنْ خَيْرٍ يَسْمَعُهُ حَتّٰى يَكُوْنَ مُنْتَهَاهُ الْجَنَّةُ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ فَضْلِ الْفِقْهِ عَلى الْعِبَادَةِ ، ضَعَّفَهُ الْاَلْبَانِىْ)

৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "    থেকে বর্ণিত। রাসূল #   বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি জ্ঞানের কথা শুনে কখনোই পরিতৃপ্ত হয় না, যে পর্যন্ত তার চুড়ান্ত ঠিকানা জান্নাতে সে না পৌঁছে। (তিরমিযি : বাবু মা জাআ ফি ফাদলি ফিকহি আলাল ইবাদাতি, ২৬১০, আলবানী একে দুর্বল বলেছেন)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا مَاتَ الْاِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُه اِلّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوِ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِه أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْ عُوْ لَه ــ (مُسْلِمْ : بَابُ مَا يَلْحَقُ الْاِنْسَانَ مِنَ الثَّوَابِ بعْدَ وَفَاتِه )

৪. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, মানুষ যখন মারা যায় তখন তিন প্রকার আমল ব্যতীত তার সকল আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ১. সদকায়ে জারিয়াহ। ২. এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকার লাভ করা যায়। ৩. এমন নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, বাবু মা ইয়ালহাকুল ইনসানা মিনাছ সাওয়াবে বা-দা ওফাতিহি : ৩০৮৪)

عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَقُوْلُ لَا حَسَدَ إِلَّا فِيْ اِثْنَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الْحَقِّ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهِ حِكْمَةً فَهُوَ يَقْضِىْ بِهَا وَيُعَلِّمُهَا- (بُخَارِيْ : بَابُ اِنْفَاقِ الْمَالِ فِيْ حَقِّهِ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি করিম #    কে বলতে শুনেছি, দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারোর প্রতি ঈর্ষা করা যায় না। যাকে আল্লাহ ধন সম্পদ দিয়েছেন, তারপর তাকে ঐ ধন সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করার তাওফিকও দান করেছেন এবং যাকে আল্লাহ (দ্বীনের) জ্ঞান দান করেছেন সে উহা দ্বারা ফয়সালা করে এবং লোকদেরকে তা শিখায়। (বুখারি, বাবু ইনফাক্বিল মালি ফি হাক্কিহী : ১৩২০)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ  اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهَ وَسَلَّمَ مَنْ سَلَكَ طَريْقًا يَلْتَمِسْ فِيْهِ عِلْمًا سَهَّلَ الله لَه لَه طَرِيْقًا اِلَى الْجَنَّةِ ــ (تِرْمِذِيْ : بَابُ فَضْلِ طَلْبِ ا لْعِلْمِ

৬. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে যাবার পথ সহজ করে দেন। (তিরমিজি, বাবু ফাদলি তলাবিল ইলমি: ২৫৭০)




























১০. জিহাদ/ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ : اَلْجِهَادُ

اَلْجِهَادُ অর্থ কঠোর পরিশ্রম, সর্বশক্তি নিয়োগ, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।


আল-কুরআন

وَ جَاهِدُوْا فِی اللّٰهِ حَقَّ جِهَادِهٖ هُوَ اجْتَبٰىكُمْ وَ مَا جَعَلَ عَلَیْكُمْ فِی الدِّیْنِ مِنْ حَرَجٍ مِلَّةَ اَبِیْكُمْ اِبْرٰهِیْمَ هُوَ سَمّٰىكُمُ الْمُسْلِمِیْنَ مِنْ قَبْلُ وَ فِیْ هٰذَا لِیَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِیْدًا عَلَیْكُمْ وَ تَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِ فَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اعْتَصِمُوْا بِاللّٰهِ هُوَ مَوْلٰىكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰی وَ نِعْمَ النَّصِیْرُ.

২. আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে এবং এ কিতাবেও। যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক।  আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী। (সূরা হাজ্জ-২২ : ৭৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰی تِجَارَةٍ تُنْجِیْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِیْمٍক্স  تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِه وَ تُجَاهِدُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَ أَنْفُسِكُمْ  ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

২. হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! আমি কি তোমাদেরকে ঐ ব্যবসায়ের কথা বলব, যা তোমাদেরকে কষ্টদায়ক আজাব থেকে বাঁচাবে? তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ঈমান আন এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর। এটাই তোমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো, যদি তোমরা তা জান। (সূরা সাফ্-৬১:১০-১১)

وَ مَنْ جَاهَدَ فَإِنَّمَا یُجَاهِدُ لِنَفْسِه إِنَّ اللّٰهَ لَغَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ.

৩. যে চেষ্টা-সাধনা করবে, সে তা নিজের ভালোর জন্যই করবে। নিশ্চয়ই গোটা সৃষ্টি জগতে কারো কাছে আল্লাহর কোনো ঠেকা নাই। (সূরা আনকাবূত-২৯: ৬)

وَ الَّذِیْنَ جَاهَدُوْا فِیْنَا لَنَهْدِیَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَ إِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِیْنَ.

৪. আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। (সূরা আনকাবুত -২৯ : ৬৯)

اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّ ثِقَالًا وَّ جَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَ أَنْفُسِكُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ  ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

৫. তোমরা বের হও, হালকা অবস্থায়ই হোক আর ভারী অবস্থায়ই হোক এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর। তোমরা যদি জানো তাহলে এটাই তোমাদের জন্য ভালো। (সূরা তাওবা-০৯: ৪১)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ابْتَغُوْۤا اِلَیْهِ الْوَسِیْلَةَ وَ جَاهِدُوْا فِیْ سَبِیْلِهٖ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

৬. হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা মায়েদা -৫ : ৩৫)

وَ قٰتِلُوْهُمْ حَتّٰی لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّ یَكُوْنَ الدِّیْنُ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَی الظّٰلِمِیْنَ.

৭. আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল¬াহর জন্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা যদি বিরত হয়, তাহলে যালিমরা ছাড়া (কারো ওপর) কোন কঠোরতা নেই। (সূরা বাকারা-২ : ১৯৩)

مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ إِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ أَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلّٰهِ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا إِلَّاۤ اِیَّاهُ ؕ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ.

৮. তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাজিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে ছাড়া আর করো ইবাদাত করো না’। এটিই সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না’। (সূরা ইউসুফ -১২ : ৪০)

إِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ فِیْ سِتَّةِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰی عَلَی الْعَرْشِ ۫ یُغْشِی الَّیْلَ النَّهَارَ یَطْلُبُهٗ حَثِیْثًا وَّ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ وَ النُّجُوْمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمْرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَمْرُ تَبٰرَكَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَ.

৯. নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব। (সূরা মায়েদা-৭ : ৫৪)

وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِی الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَ لَیُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِیْنَهُمُ الَّذِی ارْتَضٰی لَهُمْ وَ لَیُبَدِّلَنَّهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ اَمْنًا یَعْبُدُوْنَنِیْ لَا یُشْرِكُوْنَ بِیْ شَیْـًٔا ؕ وَ مَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

১০. তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরি করবে তারাই ফাসিক। (সূরা নুর-২৪ : ৫৫)

لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَیِّنٰتِ وَ أَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْمِیْزَانَ لِیَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۚ وَ أَنْزَلْنَا الْحَدِیْدَ فِیْهِ بَاْسٌ شَدِیْدٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ یَّنْصُرُهٗ وَ رُسُلَهٗ بِالْغَیْبِ ؕ إِنَّ اللّٰهَ قَوِیٌّ عَزِیْزٌ.

১১. নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড নাজিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরো নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হাদিদ- ৫৭ : ২৫)

وَ مَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الْمُسْتَضْعَفِیْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الْوِلْدَانِ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْیَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا  وَ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّا وَّ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِیْرًا.

১২. তোমাদের কি হলো যে, তোমরা ঐসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের খাতিরে আল্লাহর পথে লড়াই করছ না, যাদেরকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে এবং যারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালিমদের এ জনপদ থেকে উদ্ধার করো। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারীর ব্যবস্থা কর। (সূরা নিসা-০৪: ৭৫)

اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْا اَوْلِیَآءَ الشَّیْطٰنِ إِنَّ كَیْدَ الشَّیْطٰنِ كَانَ ضَعِیْفًا.

১৩. যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর যারা কুফরি করেছে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে। তাই শয়তানের সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও। জেনে রাখ, শয়তানের চাল আসলে বড়ই দুর্বল। (সূরা নিসা-০৪: ৭৬)

وَ قُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِیْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّ اَخْرِجْنِیْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّ اجْعَلْ لِّیْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطٰنًا نَّصِیْرًا.

১৪. আর দোয়া করো, হে আমার রব! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে নাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত ব্যক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। (সূরা বানি ইসরাইল-১৭:৮০)

وَ قٰتِلُوْهُمْ حَتّٰی لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّ یَكُوْنَ الدِّیْنُ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَی الظّٰلِمِیْنَ.

১৫. আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল¬াহর জন্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা যদি বিরত হয়, তাহলে যালিমরা ছাড়া (কারো ওপর) কোন কঠোরতা নেই। (সূরা বাকারা-২ : ১৯৩)


আল হাদিস

عَنْ اَبِيْ ذَرٍّ (رضـ) قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَىُّ الْاَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ اَلْاِيْمَانُ بِاللهِ وَالْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِه ـ (مُسْلِمْ: بَابُ بَيَانِ كَوْنِ الْاِيْمَانِ بِاللهِ تَعَالٰى أَفْضَلُ الْاَعْمَالِ)

১. হজরত আবুযর গিফারী "    বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল  #, সবচেয়ে উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান  এবং তার পথে জিহাদ। (মুসলিম : বাবু বায়ানি কাওলিন ঈমানি বিল্লাহি তাআলা আফদালুল আ’মালি- ১১৯)

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  أَوَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى رَأْسِ الْاَمْرِ وَعُمُوْدِهِ وَذَرْوَةَ سَنَامِهِ أَمَّا رَأْسُ الْاَمْرِ فَالْاِسْلَامُ فَمَنْ أَسْلَمَ سَلِمَ وَأَمَّا عُمُوْدُه فَالصَّلَاةُ وَأَمَّا ذَرْوَةَ سَنَامِهِ فَالْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ـ (مُسْنَد اَحْمَدَ: حَدِيْثُ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ الله عَنْهُ) 

২. হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, আমি কি তোমাকে দ্বীনের মূল সূত্র, তার খুঁটি এবং সর্বোচ্চ চূড়ার সন্ধান দিব না? রাসূল  #    তার ইতিবাচক সাড়া পেয়ে বললেন, দ্বীনের মূল হলো ইসলাম, সুতরাং যে ইসলাম গ্রহণ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে, খুঁটি হলো সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। (মুসনাদে আহমাদ: হাদিস মুয়ায ইবনে জাবাল "    : ২১০৫৪)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِه نَفْسَهُ مَاتَ عَلى شُعْبَةِ مِنْ نِفَاقٍ- (مُسْلِمْ : بَابُ ذَمِّ مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِالْغَزْوِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, যে ব্যক্তি মারা গেল অথট সে জিহাদ করেনি এবং জিহাদ করার মানসিকতাও রাখেনি সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম : বাবু যাম্মি মান মাতা ওয়ালাম ইয়াগযু : ৩৫৩৩)

عَنْ أَنَسٍ (رضـ) عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى  الله ﷺ  قَالَ جَاهِدُوْا الْمُشْرِ كِيْنَ بِأَمْوَا لِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ ــ (اَلنَّسَائِىْ : بَابُ وُجُوْبِ الْجِهَادِ)

৪. হজরত আনাস "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, তোমরা তোমাদের সম্পদ, হাত ও মুখ দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো। (নাসায়ী: বাবু উজুবিল জিহাদি: ৩০৪৫)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ الله عَنْهُ عَنِ النَّبِىّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ لَغَدْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ رَوْ حَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا ــ (بُخَارِيْ : بَابُ الْغَدْوَةِ و الرَّوْحَةَ فَىْ سَبِيْلِ اللهِ)

৫. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, আল্লাহর পথে একটি সকাল ও একটি বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও এর সমস্ত সম্পদ থেকে উত্তম। (বুখারি, বাবুল গাদওয়াতি ওয়ার রাওহাতি ফি সাবিলিল্লাহি: ২৫৮৩)

عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِىَّ صَلَّى الله ﷺ  وَقَدْ وَضَعَ رِجْلَه فِي الْغَرْزِ اىُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ قَالَ كَلِمَةُ حَقٍ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ (نَسَائِى : بَابُ فَضْلِ مَنْ تَكَلَّمَ بَالْحَقِّ عِنْدَ اِمَامٍ جَائِرٍ)

৬. হজরত তারেক ইবনে শিহাব "    থেকে বর্ণিত যে, রাসূল  #    ঘোড়ার জিনে পা রাখার সময় এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল, উত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বললেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা। (নাসায়ী, বাবু ফাদলি মান তাকাল্লামা বিল হাক্কি ইনদা ইমামিন জায়িরিন : ৪১৩৮)

عَنْ أَبِيْ مُوْسى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرى مَكَانُهُ فَمَنْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُوْنَ كَلِمَةُ اللهِ هِىَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيْلِ اللهِ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُوْنَ كَلِمَةُ اللهِ هِىَ الْعُلْيَا)

৭. হজরত আবু মূসা "    থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবি করিম  #    এর নিকট এসে বলল, কোন ব্যক্তি লড়াই করে গনীমতের জন্য, আর কেউ লড়াই করে খ্যাতির জন্য, আবার কেউ লড়াই করে বীত্ব প্রদর্শনের জন্য, এদের মধ্যে কার লড়াই আল্লাহর পথে গণ্য হবে? রাসূল  #    বললেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে-ই আল্লাহর পথে। (বুখারি : বাবু মান কাতালা লি তাকুনা কালিমাতুল্লাহি হিয়াল উলইয়া : ২৫৯৯)

عَنْ عَبَايَةَ بْنِ رِفَاعَةَ قَالَ اَدْركَنِىْ أَبُوْ عَبْسٍ وَأَنَا أَذهَبُ اِلَى الْجُمُعَةِ فَقَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صَلَّى الله عَلَيْهْ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنِ اغْبَرَّتْ قَدَمَاهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ حَرَّمَهُ اللهِ عَلَى النَّارِ ــ (بُخَارِيْ : بَابُ الْمَشْىِ اِلَى الْجُمُعَةِ)

৮. হজরত আবায়া ইবনে রিফায়া "    বলেন, আমি জুময়ার দিকে যাওয়ার সময় আবু আবছের সাথে সাক্ষাৎ হলো। অতপর তিনি বললেন, আমি রাসূল  #   কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথে যার পদযুগল ধুলোয় মলিন হলো আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। (বুখারি, বাবুল মাশয়ি ইলাল জুময়াতি: ৮৫৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ مَكْلُوْمٍ يُكْلَمُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَكَلْمُهُ يَدْمَى اللَّوْنَ لَوْنَ دَمٍ وَالرِّيْحُ رِيْحُ مِسْكٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْمِسْكِ)

৯. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল  #   বলেছেন, যে কেউ আল্লাহর পথে আঘাতপ্রাপ্ত হলে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে আসবে, তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে এবং রং হবে রক্তের মতো আর ঘ্রান হবে মিশকের মতো। (বুখারি : বাবুল মিশকে : ৫১০৭)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلىَ اللهِ أَنْ يُّدخِلَهُ الْجَنَّةَ جَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ جَلَسَ فِيْ اَرْضِهِ الَّتِىْ وُلِدَ فِيْهَا فَقَالُوْ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَفَلَا نُبَشِّرُ النَّاسَ قَالَ إِنَّ فِيْ الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ اَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ فَإِذَا سَاَلْتُمْ اللهَ فَاسْاَلُوْه الْفِرْدَوْسَ فَإِنَّهُ اَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَاَعْلَى الْجَنَّةِ اُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمنِ وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ- (بُخَارِيْ : بَابُ دَرَجَاتِ الْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ)

১০. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল  #   বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং রোযা রাখে, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক বা জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাত দান করা আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি এ সুসংবাদ লোকদের জানাবো না? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য জান্নাতে একশ‘টি মর্যাদার স্তর তৈরি করে রেখেছেন। যে কোনো দুটি স্তরের মাঝখানে আসমান ও যমীনের ব্যবধান। কাজেই তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে ফেরদাউসের জন্য প্রার্থনা করো। কেননা সেটিই জান্নাতের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম অংশ। এরই উপরিভাগে মহান করুনাময় আল্লাহর আরশ, যেখান থেকে জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারি : বাবু দারাজাতিল মুজাহিদীনা ফী সাবীলিল্লাহ : ২৫৮১)

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا اَوْ خَلَفَهُ بِخَيْرٍ)

১০. হজরত যায়েদ ইবনে খালেদ "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল  #   বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোন মুজাহিদকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে তাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিল, সে নিজেই যেন জিহাদে অংশগ্রহণ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোন মুজাহিদের অনুপস্থিতে তার পরিবার পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশুনা করে সেও যেন জিহাদ করল। (বুখারি : বাবু ফাদলি মান জাহ্হাযা গাযিয়ান আও খালাফাহু বিখাইরিন : ২৬৩১)





















১১. সালাত : اَلصَّلَاةُ

আল-কুরআন

وَ اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِ وَ إِنَّهَا لَكَبِیْرَةٌ إِلَّا عَلَی الْخٰشِعِیْنَ. الَّذِیْنَ یَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلٰقُوْا رَبِّهِمْ وَ اَنَّهُمْ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ.

১. সবর ও নামাজ দ্বারা তোমরা সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই নামাজ খুব মুশকিল কাজ। কিন্তু ঐসব অনুগত লোকদের জন্য মুশকিল নয়, যারা মনে করে যে, শেষ পর্যন্ত তাদেরকে আপন রবের সাথে দেখা করতেই হবে এবং তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাকারা, ০২:৪৫-৪৬)  

حٰفِظُوْا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوةِ الْوُسْطٰی ۗ وَ قُوْمُوْا لِلّٰهِ قٰنِتِیْنَ.

২. তোমরা সালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর এবং আল¬াহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে। (সূরা বাকারা, ০২ : ২৩৮)

اُتْلُ مَاۤ اُوْحِیَ اِلَیْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ ؕ إِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ وَ لَذِكْرُ اللّٰهِ اَكْبَرُ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ.

৩. তোমার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর। (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৪৫)

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِأَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ إِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ.

৪. আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্ল¬াহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্ল¬াহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা বাকারা-২ : ১১০)

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ ارْكَعُوْا مَعَ الرّٰكِعِیْنَ.

৫. সালাত কায়েম কর, জাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে নত হয় (রুকুকারী) তাদের সাথে তোমরাও নত হও (রুকু কর) (সূরা বাকারা-০২:৪৩)  

اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.

৬. তারাই ঐ সব লোক, যাদেরকে যদি আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা দিই, তাহলে তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে, ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই হাতে। (সূরা হাজ-২২ : ৪১)

فَإِذَا قَضَیْتُمُ الصَّلٰوةَ فَاذْكُرُوا اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوْدًا وَّ عَلٰی جُنُوْبِكُمْ فَإِذَا اطْمَاْنَنْتُمْ فَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ إِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا.

৭. অতপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয। (সূরা নিসা-০৪ : ১০৩)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا إِذَا قُمْتُمْ اِلَی الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَ اَیْدِیَكُمْ اِلَی الْمَرَافِقِ وَ امْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَ اَرْجُلَكُمْ اِلَی الْكَعْبَیْنِ ؕ وَ اِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ؕ وَ اِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤی اَوْ عَلٰی سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآىِٕطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ اَیْدِیْكُمْ مِّنْهُ ؕ مَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیَجْعَلَ عَلَیْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّ لٰكِنْ یُّرِیْدُ لِیُطَهِّرَكُمْ وَ لِیُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَیْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

৮. হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা-৫ : ৬)

وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ طَرَفَیِ النَّهَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیْلِ إِنَّ الْحَسَنٰتِ یُذْهِبْنَ السَّیِّاٰتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰی لِلذّٰكِرِیْنَ.

৯. আর তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ। (সূরা হুদ -১১ : ১১৪)

اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیْلِ وَ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا.

১০. (হে নবি!) সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত নামাজ কায়েম করুন। আর ফজরের (নামাজে) আল-কুরআন পড়ুন, কেননা ফজরে আল-কুরআন পড়ার সময় (ফেরেশতারা) হাজির থাকে। (সূরা বনি ইসরাইল-১৭:৭৮) 

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا إِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الْبَیْعَ ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ. فَإِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِی الْاَرْضِ وَ ابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللّٰهِ وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِیْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

১১. হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাÑকেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। অতপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। (সূরা জুমুআ-৬২ : ৯-১০)

وَ اْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَ اصْطَبِرْ عَلَیْهَا لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَ الْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰی.

১২. আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোন রিয্ক চাই না। আমিই তোমাকে রিয্ক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য । (সূরা ত্ব হা -২০ : ১৩২)


আল হাদিস

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بُنِىَ الْاِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَّا اِلهَ إِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ- (بُخَارِيْ : بُنِىَ الْاِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ اَرْكَانِ الْاِسْلَامِ وَدَعَائِمِهِ الْعِظَامِ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি  #    বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর স্থাপিত। ১. এই সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ #    আল্লাহর রাসূল। ২. নামা কায়েম করা। ৩. যাকাত দেয়া। ৪. হজ্জ করা। ৫. রমজানের রোজা রাখা। (বুখারি : বাবু বুনিয়াল ইসলামু আলা খামছিন : ৭, মুসলিম : বাবু বায়ানি আরকানিল ইসলামি : ২১)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا اَمَانَةَ لَهُ، وَلَا صَلَاةَ لِمَنْ لَا طُهُوْرَ لَهُ، وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَهُ، إِنَّمَا مَوْضِعُ الصَّلَاةِ مِنَ الدِّيْنِ كَمَوْضِعِ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ- (اَلْاَوْسَطُ للطَّبْرَانِ : مِنْ اِسْمِهِ اَحْمَد، ضعَّفَهُ الْاَلْبَانِىْ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি  #    বলেছেন, যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। যার পবিত্রতা নেই তার নামাজ নেই, যার নামাজ নেই তার দীন নেই। গোটা শরীরের মধ্যে মাথার যে মর্যাদা, দীন ইসলামে নামাজের সে মর্যাদা। (আল আওসাতু লিত তাবরানী : মিন ইসমিহী আহমাদ, ২৩৮৩, আলবানী হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ اَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ فَاِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ اَفْلَحَ وَ أَنْجَحَ وَ اِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ فَاِنْ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيْضَتِهِ شَىْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ اُنْظُرُوْا هَلْ لِّعَبْدِىْ مِنْ تَطَوَّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيْضَةِ ثُمَّ يَكُوْنُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى ذلِكَ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ أَنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلَاةُ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #   কে বলতে শুনেছি কিয়ামতের দিন বান্দার আমর পর্যায়ে সর্বপ্রথম তার নামাজ সম্পর্কে হিসেব নেয়া হবে। তার নামাজ যদি যথাযথ প্রমাণিত হয়, তবে সে সাফল্য লাভ করবে, আর যদি নামাজের হিসেবই খারাপ হয় তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরজ ইবাদাতে কোনরূপ ঘাটতি হয়, তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা দেখ আমরা বান্দাহর কোন নফল ইবাদাত আছে কি না? যদি থাকে তাহলে উহার দ্বারা ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতপর তার অন্যান্য আমলও অনুরূপ বিবেচিত হবে। (তিরমিজি, বাবু মা জা আ আন্না আউয়ালা মা ইউহাসাবু বিহিল আবদু : ৩৭৮)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍوَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَاتَنْ لَهُ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظُ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُوْرًا وَلَا بُرْهَانًا وَلَانَجَاةً وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَىْ بْنِ خَلْفٍ- (رَوَاهُأَحْمَدْ:مُسْنَدُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو)

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    নবি কারীম #    থেকে বর্ণনা করেন, একদা তিনি নামাজের প্রসংগ নিয়ে আলোচনা করলেন অতপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এই নামাজ যথাযথভাবে ও সঠিক নিয়মে বআদায় করতে থাকবে, তাদের জন্য কিয়ামতের দনি একটি নূর অকাট্য দলিল এবং মুক্তি নির্ধারিত হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজ সঠিকভাবে আদায় করবে না, তার জন্য নূর অকাট্য দলিল এবং মুক্তি কিছুই হবে না বরং কিয়ামতের দিন তার পরিণতি হবে কারুন, ফেরাউন, হামান, উবাই ইবনে খালফের সাথে। (মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    , ৬২৮৮)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ اَرَاَيْتُمْ لَوْ اَنَّ نَهْرًا بِبَابِ اَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاةٍ هَلْ يَبْقى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءً قَالُوْا لَا يَبْقَى مِنْ دَرْنِهِ شَىْءٌ قَالَ فَذلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُوْ اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا- (مُسْلِمْ : بَابُ الْمَشْىِ اِلى الصَّلَاةِ تُمْحى بِهِ الْخَطَايَا وَ تُرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتُ)

৫. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি প্রবাহমান নদী থাকে এবং সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। তার শরীরে কোন ময়লাই থাকতে পারে না। রাসূল #    বললেন, এই হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর সাহায্যে আল্লাহ তাআলা যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন। (মুসলিম : বাবুল মাশয়ি ইলাস সালাতি তুমহা বিহিল খাতায়া, ১০৭১)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله ﷺ  اَبْرِدُوْا بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ ـ (بُخَارِيْ : بَابُ صِفَةِ النَّارِ)

৬. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি  #    বলেছেন, (গরমকালে জোহরের নামাজ গরমের প্রচন্ডতা কমলে) নামাজ ঠান্ডার সময় পড়। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের শ্বাস থেকেই উৎসারিত। (বুখারি: বাবু ছিফাতিন নারি, ৩০১৯)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ مَنْ غَدَا اِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ اَعَدَّ اللهُ لَهُ نُزْلَةً مَّنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا اَرْوَاحَ- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ غَدَا اِلَى الْمَسْجِدِ وَمَنْ رَاحَ)

৭. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। নবি  #    বলেছেন, কোনো ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যাতায়াত করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ততোবার মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরি করে রাখেন। (বুখারি : বাবু ফাদলি মান গাদা ইলাল মাসজিদি ওয়ামান রাহা, ৬২২)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ مَنْ تَطَهَّرَ فِيْ بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى اِلَى بَيْتٍ مِّنْ بُيُوْتِ اللهِ لِيَقْضِىَ فَرِيْضَةً مِّنْ فَرَائِضِ اللهِ كَانَتْ خَظْوَاتَاهُ اِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيْئَةً وَالْاُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً- (مُسْلِمْ : بَابُ الْمَشْىِ اِلَى الصَّلَاةِ تُمْحَى بِهِ الْخَطَايَا وَتُرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتُ)

৮. হজরত আবু হুরায়রা "  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করল, অতপর আল্লাহর কোন একটি ফরজ (নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে রওয়ানা হলো, এটি তার পদচারণার প্রতি এক কদমে একটি গুনাহ মাফ এবং পরবর্তি কদমে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে। (মুসলিম : বাবুল মাশয়ি ইলাস সালাতি তুমহা বিহিলি খাতায়া, ১০৭০)

عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ بَشِّرِ الْمَشَّائِيْنَ فِي الظُّلْمِ اِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّوْرِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- (اَبُوْ دَاودَ  : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْمَشْيِ اِلَى الصَّلَاةِ فِي الظَّلَامِ)

৯. হজরত বুরাইদা "   থেকে বর্ণিত। নবি  #    বলেছেন, যারা অন্ধকারে মসজিদের দিকে (নামাযের উদ্দেশ্যে) বেশী পদচারণ করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিন। (আবু দাউদ : বাবু মা জাআ ফিল মাশয়ি ইলাস সালাতি ফিযযালামি, ৪৭৪)

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى قَالَ قَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ اَعْظَمُ النَّاسِ اَجْرًا فِيْ الصَّلَاةِ اَبْعَدُهُمْ فَاَبْعَدُهُمْ مَشًى وَالَّذِيْ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ حَتّٰى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْاِمَامِ اَعْظَمُ اَجْرًا مِنَ الَّذِيْ يُصَلِّىْ ثُمَّ يَنَامُ- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ فِيْ جَمَاعَةٍ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ كَثْرَةِ الْخَطَا اِلَى الْمَسَاجِدِ)

১০. হজরত আবু মুসা "   থেকে বর্ণিত। নবি  #    বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে দূরে বাস করে লোকদের মধ্যে (দূর থেকে এসে জামাআতে নামাজ পড়ার কারণে) তারই সাওয়াব বেশীহয়। আর এর চাইতে যে আরো দূরে থাক তার সাওয়াব আরো বেশি হয়। যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার চাইতে ঐ ব্যক্তির সাওয়াব বেশি যে ইমামের সাথে নামাজ পড়ার জন্য অপেক্ষা করে। (বুখারি : বাবু ফাদলি সালাতিল ফাজরি ফী জামাআতিন, ৬১৪, মুসলিম : বাবু ফাদলি কাসরাতিল খুতা ইলাল মাসাজিদে, ১৪৬৪)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلَاةَ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِيْنَ دَرَجَةً ـ (بُخَارِيْ بَابُ فَضْلِ صَلَاةِ الْجَمَاعَةِ، (مُسْلِمْ: بَابُ فَضْلِ صَلَاةِ الْجَمَاعَةِ وَبَيَانِ التَّشْدِيْدِ فِي التَّخَلَّفِ عَنْهَا)

১১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর "   থেকে বর্ণিত। রাসূল #   বলেছেন, একাকী নামাজ পড়ার চাইতে জামাআতে নামাজ পড়ার ফজিলত সাতাশ গুণ বেশি। (বুখারি: বাবু ফাদলি সালাতিল জামাআতি, ৬০৯; মুসলিম: বাবু ফাদলি সালাতিল জামাআতি, ১০৩৮)   

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ اَلَا اَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاةِ قَالُوْا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ اِسْبَاغُ الْوَضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا اِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذلِكُمْ الرِّبَاطُ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ اِسْبَاغُ الْوَضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ)

১২. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। রাসূল  #    বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয়ের কথা বলব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহ মোচন করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবিগণ বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও অজু করা, মসজিদে (নামাজের উদ্দেশে) অধিক পদচারণা এবং এক নামাজের পরে অন্য নামাজের অপেক্ষা করা। আর এটিই হচ্ছে সুদৃঢ় বন্ধন। (মুসলিম : বাবু ফাদলি ইসবাতিল উদু আলার মাকারিহি, ৩৬৯)

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنَ الْعَبْدِ وَ بَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ-

১৩.  হজরত জাবের "    থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল  #     বলেছেন, বান্দা ঈমানদার ও কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা। (তিরমিজি : ২৬১৮)

১২. জাকাত : اَلزَّكَاةُ

اَلزَّكَاةُ অর্থ পবিত্র হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া।


আল-কুরআন

خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ إِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ.

১. তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দুআ কর, নিশ্চয় তোমার দুআ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা ৯ : ১০৩)

وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ.

২. যারা জাকাতের ব্যাপারে কর্মতৎপর হয়। (সূরা মুমিনূন- আয়াত: ২৩:৪)

وَ مَاۤ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَاۡ فِیْۤ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اٰتَیْتُمْ مِّنْ زَكٰوةٍ تُرِیْدُوْنَ وَجْهَ اللّٰهِ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ.

৩. আর তোমরা যে সূদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলতঃ আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত। (সূরা রূম-৩০ : ৩৯)

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ.

৪। সালাত কায়েম কর জাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে নত হয় (রুকুকারী) তাদের সাথে তোমরাও নত হও (রুকু কর)। (সূরা বাকারা- আয়াত: ০২:৪৩)

الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ.

৫। যারা জাকাত আদায় করে না, তারাই আখেরাত অস্বীকারকারী। (সূরা হামিম আস সাজদাহ- আয়াত: ৪১:৭)

إِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْعٰمِلِیْنَ عَلَیْهَا وَ الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الْغٰرِمِیْنَ وَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ فَرِیْضَةً مِّنَ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ.

৬. নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্ল¬াহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ  মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা-৯ : ৬০)

یَمْحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَ یُرْبِی الصَّدَقٰتِ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیْمٍ.

৭. আল¬াহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন। আর আল¬াহ কোন অতি কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না। (সূরা বাকারা -২ : ২৭৬)

فَاِنْ تَابُوْا وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِی الدِّیْنِ وَ نُفَصِّلُ الْاٰیٰتِ لِقَوْمٍ یَّعْلَمُوْنَ.

৮. অতএব যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই। আর আমি আয়াতসমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য যারা জানে। (সূরা তাওবা-৯ : ১১)

اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.

৯. তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে। (সূরা হাজ : ৪১)

فَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اعْتَصِمُوْا بِاللّٰهِ هُوَ مَوْلٰىكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰی وَ نِعْمَ النَّصِیْرُ.

১০. অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক।  আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (সূরা হাজ : ৭৮)

رِجَالٌ لَّا تُلْهِیْهِمْ تِجَارَةٌ وَّ لَا بَیْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوةِ وَ اِیْتَآءِ الزَّكٰوةِ یَخَافُوْنَ یَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِیْهِ الْقُلُوْبُ وَ الْاَبْصَارُ.

১১. সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিক্র, সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। (সূরা নুর : ৩৭)

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

১২. আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার। (সূরা নুর : ৫৬)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا أَنْفِقُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا كَسَبْتُمْ وَ مِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَ لَا تَیَمَّمُوا الْخَبِیْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَ لَسْتُمْ بِاٰخِذِیْهِ إِلَّاۤ أَنْ تُغْمِضُوْا فِیْهِ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ حَمِیْدٌ.

১৩. হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি যমীন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্তুর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্ল¬াহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত। (সূরা বাকারা : ২৬৭)

وَ مَاۤ أَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَإِنَّ اللّٰهَ یَعْلَمُهٗ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ أَنْصَارٍ.

১৪. তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোন মান্নত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা বাকারা : ২৭০)







আল হাদিস

عنْ جَرِيْرِبْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ  بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  عَلٰى اِقَامِ الصَّلَاةِ وَ اِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَ النُصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ ـ (بُخَارِيْ: بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ- (مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ اَنَّ الدِّيْنَ النَّصِيْحَةُ)

১. হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ "    বলেন, আমি নবি করিম  #   এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করার জন্য, জাকাত দেয়ার জন্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার জন্য। (বুখারি: বাবু ক্বাওলিন নাবিয়্যি আদ দ্বীনু আন নাসিহাতু, ৫৫; মুসলিম: বাবু বায়ানি আন্নাদ দ্বিনা আননাসিহাতু, ৮৩)।

عنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيْبَتَانِ يُطُوِّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِىْ بِشِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ اَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ثُمَّ تَلَا : (لَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ)- (بُخَارِيْ : بَابُ اِثْمِ مَانِعِ الزَّكَاةِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে উহার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে একটি ন্যাড়া সর্পে পরিণত করা হবে। তার থাকবে দুটি কালো দাগ। এই সর্প সেই ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। অতপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে আমি-ই তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। অতপর তিনি সূরা আলে ইমরানের ১৮০ নং আয়াত তেলাওয়াত করলেন। (বুখারি, বাবু ইসমি মানিয়িয যাকাতি, ১৩১৫)

عنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَمَّا تُوُفِي النَّبِيُّ صَلَّى الله ﷺ  وَاسْتُخْلِفَ أَبُوْ بَكْرٍ وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ الْعَرَبِ قَالَ عُمَرَ : يَا اَبَا بَكْرٍ كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسِ وَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ ﷺ  اُمِرْتُ أَنْ اُقَاتِلُ النَّاسَ حَتّٰى يَقُوْلُوْا لَا اِلهَ إِلَّا اللهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّىْ مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ قَالَ اَبُوْ بَكْرٍ وَاللهِ لَاُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فَإِنَّ الزَّكَاةِ حَقُّ الْمَالِ وَاللهِ لَوْ مَنَعُوْنِىْ عَنَاقًا كَانُوْ يُؤَدُّوْنَهَا اِلى رَسُوْلِ اللهِ صَلِّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلى مَنْعِهَا قَالَ عُمَرُ فَوَاللهِ مَا هُوَ إِلَّا أَنْ رَاَيْتُ أَنْ قَدْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَ أَبِيْ بَكْرٍ لِلْقِتَالِ فَعَرَفْتُ اَنَّهُ الْحَقُّ - (بُخَارِيْ : بَابُ قَتْلِ مَنْ اَبى قَبُوْلَ الْفَرَائِضِ وَ مَا نُسِبُوْ اِلىَ الرِّدَّةِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম  #    যখন ইন্তেকাল করলেন তখন আবু বকর "    খলিফা নিযুক্ত হলেন। অতপর আরবদের মাঝে (যারা কুফরি করবে তারা) কিছু লোক কুফরি করল। ওমর "    হজরত আবু বকর "   কে বললেন, আপনি এই লোকদের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে পারেন অথচ নবি করিম #     বলেছেন, লোকেরা যতক্ষণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মেনে না নিবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। যদি কেহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ স্বীকার করে অবশ্য উহার ওপর ইসলামের হক কখনো ধার্য হলে অন্য কথা। আর উহার হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত। তখন হজরত আবু বকর "    বলেন, আল্লাহর শপথ! যে লোকই নামায ও যাকাতের পার্থক্য সৃষ্টি করবে তারই বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করব। কেননা যাকাত হচ্ছে মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি রাসুলের সময় যাকাত বাবদ দিত এমন একটি উটের বাচ্চাও দেয়া বন্ধ করে তবে অবশ্যই আমি উহা দেয়া বন্ধ করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। তখন হজরত ওমর "    বললেন,  আল্লাহর শপথ করে বলছি, উহা আর কিছু নয়, আমার মনে হলো, আল্লাহ যেন আবু বকরের অন্তর যুদ্ধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং বুঝতে পারলাম যে উহাই ঠিক। (বুখারি, বাবু ক্বাতলি মান আবা কুবুলাল ফারায়িজি, ৬৪১৩)

عَنْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ اِقَامِ الصَّلَاةِ وَ اِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَ النَّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ-

৪. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "    হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবি কারীম  #   -এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি সালাত কায়েম করার, যাকাত দেয়ার এবং প্রতিটি মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার জন্য।


























১৩. সাওম : اَلصَّوْمُ

اَلصَّوْمُ অর্থ সংযম, বিরত থাকা, কঠোর সাধনা করা।


আল-কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَক্স

১. হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের নবিগণের উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। এর ফলে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ পয়দা হবে। (সূরা বাকারা ০২:১৮৩)

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰی وَ الْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْیَصُمْهُ وَ مَنْ كَانَ مَرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَ یُرِیْدُ اللّٰهُ بِكُمُ الْیُسْرَ وَ لَا یُرِیْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ ؗ وَ لِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَ لِتُكَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ وَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

২. রমজান ঐ মাস, যে মাসে আল-কুরআন নাজিল করা হয়েছে; যা মানুষের জন্য পুরোটাই হেদায়াত, যা এমন স্পষ্ট উপদেশে পূর্ণ যে, তা সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। তাই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাস পায় তার অবশ্য কর্তব্য, সে যেন পুরো মাস রোজা রাখে। আর যে অসুস্থ বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য সময় ঐ দিনগুলোর রোজা করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা-ই চান, যা কঠিন তা তিনি চান না। তোমাদেরকে এ জন্যই এ নিয়ম দেয়া হয়েছে, যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূর্ণ করতে পার, আর যে হেদায়াত আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছেন এর জন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করতে পার এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পার। (সূরা বাকারা-০২:১৮৫)

اُحِلَّ لَكُمْ لَیْلَةَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآىِٕكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَ أَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَیْكُمْ وَ عَفَا عَنْكُمْ فَالْـٰٔنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَ ابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمْ وَ كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَكُمُ الْخَیْطُ الْاَبْیَضُ مِنَ الْخَیْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیْلِ وَ لَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَ أَنْتُمْ عٰكِفُوْنَ فِی الْمَسٰجِدِ تِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَا كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ اٰیٰتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ یَتَّقُوْنَ.

৩. সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল¬াহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্ল¬াহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল¬াহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে। (সূরা বাকারা-২ : ১৮৭)

اَیَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَ وَ عَلَی الَّذِیْنَ یُطِیْقُوْنَه فِدْیَةٌ طَعَامُ مِسْكِیْنٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا فَهُوَ خَیْرٌ لَّه وَ أَنْ تَصُوْمُوْا خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

৪. কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের রোজা। যদি তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তাহলে সে অন্য সময় যেন এ দিনগুলোর রোজা আদায় করে নেয়। এরপরও যাদের ওপর রোজা একান্ত কষ্টকর হবে তারা যেন ‘ফিদ্ইয়া’ দেয়। এক রোজার ফিদইয়া হলো একজন মিসকিনকে খাওয়ানো। তবে যদি কেউ এর চাইতে বেশি দিয়ে ভাল করতে চায় তাহলে এ অতিরিক্ত কাজ তার জন্য হবে কল্যাণকর অবশ্য তোমরা যদি রোজা রাখতে পার তাহলে সেটাই তোমাদের জন্য ভালো। যদি তোমরা রোজার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে। (সূরা বাকারা-০২:১৮৪)


আল হাদিস

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  رضـ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  مَنْ صَامَ رَمَضَانَ اِيْمَانًا وَاِحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه ـ (بُخَارِيْ: بَابُ صَوْمِ رَمَضَانَ اِحْتِسَابًا مِنَ الْاِيْمَانِ، مسلم: باب التَّرْغِيْبِ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ وَهُوَ التَّرَاوِيْحُ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে তার পূর্ববর্তী সকল গুনা ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি: বাবু সাওমি রামাদানা ইহতিসাবান মিনাল ঈমান, ৩৭; মুসলিম বাবুত তারগিব ফি ক্বিয়ামি রামাদানা, ১২৬৮)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  رضـ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  اَتَكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُّبَارَكٌ فَرِضَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيْهِ اَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيْهِ اَبْوَابُ الْجَحِيْمِ وَتُغَلُّ فِيْهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِيْنِ لِلّهِ فِيْهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حَرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ- (نَسَائِىْ : ذِكْرُ الْاِخْتِلَافِ عَلى مَعْمَرِ فِيْهِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, তোমাদের নিকট রমজান উপস্থিত। এটি অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তাআলা এ মাসে তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর অবাধ্য শয়তানগুলো আটক করে রাখা হয়। আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক রাত্রির কল্যাণ হতে বঞ্চিত হল, সে সত্যই বঞ্চিত ব্যক্তি। (নাসায়ী : যিকরুল ইখতিলাফি আলা মা মারিন ফিহি, ২০৭৯)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  رضـ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ فَإِذَا كَانَ اَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلَا يَرَفَثُ وَلَا يَجْهَلْ فَاِنِ امْرُؤُ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّيْ صَائِمٌ إِنِّيْ صَائِمٌ- (مُوَطَّا : بَابُ جَامِعِ الصِّيَامِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, রোযা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনদিন রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন খারাপ কথা বের না হয়, সে যাতে মূর্খতাসুলভ আচরণ না করে। যদি কেউ তার সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় কিংবা গালমন্দ করে সে যেন বলে আমি রোজাদার। নিশ্চয়ই আমি রোজাদার। (মুয়াত্তা মালেক, বাবু জামেয়েস সিয়ামি, ৬০২)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمرٍو اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُوْلُ الصِّيَامُ اَىْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ وَيَقُوْلُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِىْ فِيْهِ قَالَ فَيُشْفَعَانِ- (مُسْنَدِ اَحْمَدَ : مُسْنَدُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو)

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, রোজা ও কুরআন রোজাদার বান্দাহর জন্য (আল্লাহর নিকট) কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতপর আল্লাহ তাদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। (মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, ৬৩৩৭)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  رضـ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  مَنْ لَّمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلّٰهِ حَاجَةٌ فِيْ أَنْ يَّدَعَ طَعَامَه وَ شَرَابَه ـ  (بُخْارِىْ: بَابُ مَنْ لَّمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ)

৫. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারল না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারি, বাবু মান লাম ইয়াদা’ ক্বাওলায যূরি: ১৭৭০)

عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ  صَلَّى الله ﷺ  قَالَ إِنَّ فِيْ الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مِنْهُ اَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ اَيْنَ الصَّائِمُوْنَ فَيَقُوْمُوْنَ لَا يَدْخُلُ مِنْهُ اَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوْا اُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلُ مِنْهُ اَحَدٌ- (بُخَارِيْ  : بَابُ الرَّيَّانِ لِلصَّائِمِيْنَ، مُسْلِمْ  : بَابُ فَضْلِ الصِّيَامِ)

৬. হজরত সাহল ইবনে সাদ "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে যাকে বলা হয় রাইয়ান। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র রোজাদার লোকেরাই প্রবেশ করবে। তারা ব্যতীত অন্য কেউ এ পথে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন এ বলে ডাক দেয়া হবে রোজাদার লোকেরা কোথায়? তারা যেন এ পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল রোজাদার ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। অতপর আর কেউ এ পথে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি; বাবুর রাইয়ান লিস সায়িমীনা, ১৭৬৩, মুসলিম : বাবু ফাদলিস সিয়ামি, ১৯৪৭)

عَنْ اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ رضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صَلَّى الله ﷺ  يَقُوْلُ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعَّدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ الصَّوْمِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ الصِّيَامِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ)

৭. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি করিম  #   কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারি : বাবু ফাদলিস সাওমি ফী সাবিলিল্লাহ, ২৬২৮, মুসলিম : বাবু ফাদলিস সিয়ামি ফী সাবিলিল্লাহ, ১৯৪৯)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  رضـ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ اَمْثَالِهَا اِلَى سَبْعِمِائِةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِىْ وَاَنَا اَجْزِىْ بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ اَجْلِىْ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ وَلَخُلُوْفُ فِيْهِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ الصِّيَامِ)

৮. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব ১০ গুন হতে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোজা এ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম, কেননা তা কেবল আমারই জন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। রোজা পালনে আমার বান্দা আমারই সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে স্বীয় ইচ্ছা, বাসনা ও নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ ১. একটি ইফতারের সময় ২. অপরটি তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। নিশ্চয়ই জেনে রেখ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরির সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম। (মুসলিম, বাবু ফাদলিস সিয়ামি : ১৯৪৫)













১৪. হজ : اَلْحَجُّ

اَلْحَجُّ অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা পোষণ করা।


আল-কুরআন

فِیْهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبْرٰهِیْمَ وَ مَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا وَ مَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ.

১. তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্ল-াহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরি করে, তবে আল্ল¬াহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান-০২ : ৯৭)

اَلْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمٰتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِیْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوْقَ وَ لَا جِدَالَ فِی الْحَجِّ وَ مَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ یَّعْلَمْهُ اللّٰهُ وَ تَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَیْرَ الزَّادِ التَّقْوٰی وَ اتَّقُوْنِ یٰۤاُولِی الْاَلْبَابِ.

২. হজের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের ওপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশ¬ীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। আর তোমরা ভাল কাজের যা কর, আল¬াহ তা জানেন এবং পাথেয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় তাকওয়া। আর হে বিবেক সম্পন্নগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর। (সূরা বাকারা-২ : ১৯৭)

وَ اَتِمُّوا الْحَجَّ وَ الْعُمْرَةَ لِلّٰهِ فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ وَ لَا تَحْلِقُوْا رُءُوْسَكُمْ حَتّٰی یَبْلُغَ الْهَدْیُ مَحِلَّهٗ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِیْضًا اَوْ بِهٖۤ اَذًی مِّنْ رَّاْسِهٖ فَفِدْیَةٌ مِّنْ صِیَامٍ اَوْ صَدَقَةٍ اَوْ نُسُكٍ ۚ فَإِذَاۤ اَمِنْتُمْ فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَی الْحَجِّ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ فَمَنْ لَّمْ یَجِدْ فَصِیَامُ ثَلٰثَةِ اَیَّامٍ فِی الْحَجِّ وَ سَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذٰلِكَ لِمَنْ لَّمْ یَكُنْ اَهْلُهٗ حَاضِرِی الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ.

৩. আর হজ ও উমরা আল্ল¬াহর জন্য পূর্ণ কর। অতপর যদি তোমরা আটকে পড় তবে যে পশু সহজ হবে (তা যবেহ কর)। আর তোমরা তোমাদের মাথা মুণ্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে তবে সিয়াম কিংবা সদাকা অথবা পশু যবেহ এর মাধ্যমে ফিদয়া দেবে। আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি উমরার পর হজ সম্পাদনপূর্বক তামাত্তু করবে, তবে যে পশু সহজ হবে, তা যবেহ করবে। কিন্তু যে তা পাবে না তাকে হজে তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন সাত দিন সিয়াম পালন করবে। এই হল পূর্ণ দশ। এই বিধান তার জন্য, যার পরিবার মাসজিদুল হারামের অধিবাসী নয়। আর তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্ল¬াহ আজাবদানে কঠোর। (সূরা বাকারা-২ : ১৯৬)

وَ اَذِّنْ فِی النَّاسِ بِالْحَجِّ یَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰی كُلِّ ضَامِرٍ یَّاْتِیْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِیْقٍ.

৪. আর আপনি সকল মানুষের হজের জন্য ডাক দিন। তারা (এ ডাকে সাড়া দিয়ে) দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে ও উটে চড়ে আসবে। (সূরা হাজ- ২২ : ২৭)

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَیْتَ اَوِاعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیْهِ أَنْ یَّطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا  فَإِنَّ الله شَاکِرٌ عَلِیْمٌ.

৫. নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে গণ্য। তাই যে আল্লাহর ঘরের হজ বা উমরা করে, তাদের জন্য এ দুটো পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানো কোনো গুনাহের কাজ নয়। আর যে নিজের মর্জি ও আগ্রহে কোনো ভালো কাজ করবে, আল্লাহর তা জানা আছে এবং তিনি এর মূল্য দেবেন। (সূরা বাকারা- ২ : ১৫৮)

وَ اَذَانٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖۤ اِلَی النَّاسِ یَوْمَ الْحَجِّ الْاَكْبَرِ اَنَّ اللّٰهَ بَرِیْٓءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِیْنَ وَ رَسُوْلُهٗ فَاِنْ تُبْتُمْ فَهُوَ خَیْرٌ لَّكُمْ وَ اِنْ تَوَلَّیْتُمْ فَاعْلَمُوْۤا اَنَّكُمْ غَیْرُ مُعْجِزِی اللّٰهِ وَ بَشِّرِ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِعَذَابٍ اَلِیْمٍ.

৬. আর মহান হজ্জের দিন মানুষের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে ঘোষণা, নিশ্চয় আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও। অতএব, যদি তোমরা তাওবা কর, তাহলে তা তোমাদের জন্য উত্তম। আর যদি তোমরা ফিরে যাও, তাহলে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না। আর যারা কুফরি করেছে, তাদের তুমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা -৯ : ৩)

  اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ کَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَجٰهَدَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ لَا یَسْتَونَ عِنْدَ اللهِ وَالله لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ .

৭. তোমরা কি হাজিদের পানি পান করানো ও মসজিদে হারামের খেদমত করাকে ঐ লোকদের কাজের সমান মনে করে নিয়েছো, যে ঈমান এনেছে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি এবং যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে? আল্লাহর কাছে তো এরা দুজন সমান নয়। আর আল্লাহ জালিম কাওমকে হেদায়াত করেন না । (সূরা তাওবা-৯ : ১৯)


আল হাদিস

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺمَنْ حَجَّ هٰذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْه أُمُّه ـ (بُخَارى: بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰى  (فَلَا رَفَثَ) مُسْلِمْ: بَابُ فَضْلِ الْحَجِّ وَ الْعُمْرَةِ وَ يَوْمِ عَرَفَةَ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, যে ব্যক্তি এ ঘরে হজ করতে এলো, অতপর স্ত্রী সংগম করেনি, কোন প্রকার অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হয়নি, তবে সেখান থেকে তেমন পবিত্র হয়ে) ফিরে আসে, যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করেছিল। (বুখারি: বাবু ক্বাওলিল্লাহি “ফালা রাফাছা’’ ১৬৯০; মুসলিম: বাবু ফাদলিল হাজ্জি ওয়াল উমরাতি: ২৪০৪)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺفَقَالَ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللهُ عَلَيْكُمْ الْحَجُّ فَحُجُّوْا فَقَالَ رَجُلٌ اَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ، فَسَكَتَ حَتّٰى قَالَهَا ثَلَاثًا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوْجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ ثُمَّ قَالَ ذَرُوْنِىْ مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّامَ هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا اَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَاْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوْهُ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَرْضِ الْحَجِّ مَرَّةً فِيْ الْعُمُرِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    আমাদের সম্মুখে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, হে লোক সকল নিশ্চয়ই! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ্জ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা হজ্জ কর। অতপর এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল #   , প্রতি বছরই কি হজ্জ পালন করতে হবে? রাসূল #     কিছু বলা থেকে বিরত রইলেন। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করার পর রাসূলুল্লাহ #     বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তাহলে প্রতিবছর হজ্জ পালন আবশ্যক হয়ে যেত। আর তখন তোমরা সক্ষম হতে না। অতপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে যা বলি তার ওপর আমাকে ছেড়ে দাও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে অধিক প্রশ্ন করার কারণে এবং তাদের নবিদের সাথে মত পার্থক্য করার কারণে। অতএব আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দেই তোমরা সাধ্যমত তা পালন কর। আর যখন কোন বিষয় থেকে নিষেধ করি তা তোমরা বর্জন কর। (মুসলিম : বাবু ফারদিল হাজ্জি মররাতান ফিল উমুরি, ২৩৮০)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺأَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ اِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ قِيْلَ ثُمَّ مَذَا قَالَ الْجِهَادُ فِيْ سِبِيْلِ اللهِ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجُّ مَبْرُوْرٌ ـ (بُخَارِيْ: بَابُ مَنْ قَالَ إِنَّ الْاِيْمَانَ هُوَ الْعَمَلُ، مُسْلِمْ: بَابَ بَيَانِ كَوْنِ الْاِيْمَانِ بِاللهِ تَعَالٰى أَفْضَلُ الْاَعْمَالِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল অধিক উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান। আবার  জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন কবুল হওয়া হজ। (বুখারি: বাবু মান ক্বালা ইন্নাল ঈমানা হুয়াল আমালু, ২৫; মুসলিম: বাবু বায়ানি কাওনিল ঈমানি বিল্লাহি আফদালুল আ’মালি: ১১৮)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِيْ الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ- (تِرِمِذِىُّ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ ثَوَابِ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ)

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, তোমরা হজ্জ ও ওমরা পরপর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর। কেরনা এ দুটি কাজ দারিদ্র্য ও গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয় যেমন, রেত লোহার মরিচা ও স্বর্ণ রৌপ্যের জনজাল দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজ্জের সাওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (তিরিমিযি : বাবু মা জাআ ফী সাওয়াবিল হাজ্জি ওয়াল উমরাতি, ৭৩৮)











১৫. শাহাদাত : اَلشَّهَادَةُ

اَلشَّهَادَةُ অর্থ সাক্ষ্য দেয়া, যিনি উপস্থিত হয়েছেন।


আল-কুরআন

وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ یُّقْتَلُ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ اَمْوَاتٌ بَلْ اَحْیَآءٌ وَّلٰکِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ.

১. যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বল না। এরা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা হয় না। (সূরা বাকারা-০২:১৫৪)

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ قُتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللهِ اَمْوَاتًا بَلْ اَحْیَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ یُرْزَقُوْنَ.

২. যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না। তারা তো আসলে জীবিত। তারা তাদের রবের কাছে রিজিক পাচ্ছে। (সূরা আলে ইমরান-০৩:১৬৯)

فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّیْ لَاۤ اُضِیْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰی بَعْضُكُمْ مِّنْۢ بَعْضٍ فَالَّذِیْنَ هَاجَرُوْا وَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ وَ اُوْذُوْا فِیْ سَبِیْلِیْ وَ قٰتَلُوْا وَ قُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَیِّاٰتِهِمْ وَ لَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ.

৩. অতপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিলেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন পুরুষ অথবা মহিলা আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে এবং যাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং যাদেরকে আমার রাস্তায় কষ্ট দেয়া হয়েছে, আর যারা যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের ত্রুটিÑবিচ্যুতিসমূহ বিলুপ্ত করে দেব এবং তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ; আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্ল¬াহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৯৫)

وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖۤ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الصِّدِّیْقُوْنَ وَ الشُّهَدَآءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ لَهُمْ اَجْرُهُمْ وَ نُوْرُهُمْ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ كَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ.

৪. আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে, তারাই তাদের রবের নিকট সিদ্দীক ও শহীদ। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিফল এবং তাদের নূর। আর যারা কুফরি করে এবং আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। (সূরা হাদীদ-৫৭ : ১৯)

وَمَنْ یُّطِعِ الله وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِیْنَ أَنْعَمَ الله عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّنَ وَالصِّدِّیْقِیْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصّٰلِحِیْنَ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِیْقًا. 

৫. যারা আল্লাহ ও রাসূলের কথা মেনে চলবে তারা ঐসব লোকের সাথেই থাকবে, যাদের ওপর আল্লাহ নিয়ামত বর্ষণ করেছেন। তাঁরা হলেন-নবি, সিদ্দিক, শহীদ ও সালিহ (নেক) লোকগণ। তাঁরা কতই না ভালো সাথী। (সূরা নিসা-০৪:৬৯)

وَ الَّذِیْنَ هَاجَرُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ثُمَّ قُتِلُوْۤا اَوْ مَاتُوْا لَیَرْزُقَنَّهُمُ اللّٰهُ رِزْقًا حَسَنًا وَ إِنَّ اللّٰهَ لَهُوَ خَیْرُ الرّٰزِقِیْنَ.

৬. আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করে, অতপর নিহত হয় কিংবা মারা যায়, তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ উত্তম রিয্ক দান করবেন। আর নিশ্চয় আল্লাহই সর্বোৎকৃষ্ট রিয্কদাতা। (সূরা হাজ্জ-২২ : ৫৮)

اِنْ یَّمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهٗ وَ تِلْكَ الْاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیْنَ النَّاسِ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَآءَ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَ.

৭. যদি তোমাদেরকে কোন আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্ল¬াহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৪০)

فَإِذَا لَقِیْتُمُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتّٰۤی إِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَاِمَّا مَنًّۢا بَعْدُ وَ اِمَّا فِدَآءً حَتّٰی تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا ذٰؔلِكَ وَ لَوْ یَشَآءُ اللّٰهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَ لٰكِنْ لِّیَبْلُوَاۡ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ وَ الَّذِیْنَ قُتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَلَنْ یُّضِلَّ اَعْمَالَهُمْ.

৮. অতএব তোমরা যখন কাফিরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের ঘাড়ে আঘাত কর। পরিশেষে তোমরা যখন তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করবে তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেঁধে নাও। তারপর হয় অনুগ্রহ না হয় মুক্তিপণ আদায়, যতক্ষণ না যুদ্ধ তার বোঝা রেখে দেয়। এটাই বিধান। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তিনি কখনো তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করবেন না। (সূরা মুহাম্মদ -৪৭ : ৪)


আল হাদিস

عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَا اَحَدٌ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يُحِبُّ اَنَّ يَّرْجِعَ اِلَى الدُّنْيَا وَلَهُ مَا عَلَى الْاَرْضِ مِنْ شَيْءٍ اِلَّ الشَّهِيْدُ يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ اِلَى الدُّنْيَا فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الْكَرَامَةِ- (بُخَارِيْ : بَابُ تَمَنَّى الْمُجَاهِدِ يَرْجِعَ اِلَى الدُّنْيَا)

১. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। রাসূলে করিম  #    বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পরে একমাত্র শহীদ ব্যতীত আর কেউ দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাবে না। যদিও তার জন্য দুনিয়ার সবকিছুই নিয়ামত হিসেবে থাকবে। কিন্তু শহীদ সে দুনিয়ায় ফিরে এসে দশবার শহীদি মৃত্যুবরণের আকাক্সক্ষা করবে, কেননা বাস্তবে সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখতে পাবে। (বুখারি : বাবু তামান্নাল মুজাহিদি আন ইয়ারজেয়া ইলাদ দুনিয়া, ২৬০৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَقُوْلُ وَالّذِىْ نَفْسِىْ بَيَدِهِ لَوْ لَا اَنَّ رِجَالًا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ لَا تَطِيْبُ أَنْفُسَهُمْ أَنْ يَّتَخَلَّفُوْا عَنِّىْ وَلَا اَجِدُ مَ اَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُوْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ اَنِّىْ اُقْتَلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ اُحْيَا ثُمَّ اُقْتَلُ ثُمَّ اُحْيَا ثُمَّ اُقْتَلُ ثُمَّ اُحْيَا ثُمَّ اُقْتَلُ- (بُخَارِيْ : بَابُ تَمَنَّى الشَّهَادَاةِ)

২. হজরত  আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি  #    কে বলতে শুনেছি, সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি কিছু সংখ্যক মুসলমান এমন না হত যারা আমার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করাকে আদৌ পছন্দ করবে না এবং যাদের সবাইকে আমি সাওয়ারী জন্তু ও সরবরাহ করতে পারব না বলে আংশকা হত, তাহলে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত কোন ক্ষুদ্র সেনাদল থেকেও আমি দূরে থাকতাম না। সে মহান সত্তার শপথ। যার হাতে আমার প্রাণ! আমার নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় হচ্ছে আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই অতপর জীবন লাভ করি এবং আবার শহীদ হই, পুনরায় জীবন লাভ করি এবং আবার শহীদ হই। (বুখারি : বাবু তামান্নাশ শাহাদাতি, ২৫৮৮)

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ اَنَّ اُمَّ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ الْبَرَاءِ وَهِىَ اُمُّ حَارِثَةَ بْنِ سُرَاقَةَ اَتَتِ النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَتْ يَا نَبِىَّ اللهِ اَلَا تُحَدِّ ثُنِىْ عَنْ حَارِثَةَ وَكَانَ قُتِلَ يَوْمَ بَدْرٍ اَصَابَهُ سَهْمٌ غَرْبٌ فَاِنْ كَانَ فِيْ الْجَنَّةِ صَبَرْتُ وَاِنْ كَانَ غَيْرَ ذلِكَ اِجْتَهَدْتُ عَلَيْهِ فِي الْبُكَاءِ قَالَ يَا اُمَّ حَارِثَةَ إِنَّهَا جِنَانٌ فِيْ الْجَنَّةِ وَإِنَّ ابْنَكَ اَصَابَ الْفِرْدَوْسَ الْاَعْلَى- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ اَتَاهُ سَهْمٌ غَرْبٌ فَقَتَلَهُ)

৩. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। বারা ইবনে আযেব এর কন্যা উম্মে রুবাই আর তিনি হচ্ছেন হারেসা ইবনে সূরাকার মতো। নবি করিম  #    এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর নবি আমাকে হারেসা সম্পর্কে কিছু বলুন। হারেসা বদরের যুদ্ধে অদৃশ্য তীরের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে, সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তবেই ধৈর্য ধারণ করব অন্যথায় আমি তার জন্য আমার অঝোর নয়নে কাঁদব। তিনি বললেন, হে হারেসার মা জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে আর তোমার পুত্র সেখানে সর্বোচ্চ ফেরদাউদ লাভ করেছে। (বুখারি : বাবু মান আতাহু সাহমুন গারবুন ফাক্বাতালাহু : ২৫৯৮) 

عَنْ عَمْرٍو سَمِعَ جَابِرَ ابْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِىِّ ﷺ يَوْمَ اُحُدٍ اَرَاَيْتَ اِنْ قُتِلْتُ فَاَيْنَ اَنَا قَالَ فِيْ الْجَنَّةِ فَاَلْقى تَمَرَاتٍ فِيْ يَدِهِ ثُمَّ قَاتَلَ حَتّٰى قُتِلَ- (بُخَارِيْ : بَابُ غَزْوَةِ اُحُدٍ)

৪. হজরত আমর ইবনে দীনার "   থেকে বর্ণিত। তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "   কে বলতে শুনেছেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নবি করিম  #   কে বলল, আমি যদি নিহত হই তাহলে, আমার অবস্থা কী হবে? নবিজি বললেন, জান্নাতে থাকবে। তখন সে তার হাতের খেজুরগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করল এবং শহীদ হলো। (বুখারি : বাবু গযওয়াতে উহুদ, ৩৭৪০)

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَ النَّبِيُّ ﷺ فَقَالَ اَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدٌ فَاُصِيْبَ ثُمَّ اَخَذَهَا جَعْفَرٌ فَاُصِبَ ثُمَّ اَخَذَهَا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ فَاُصِيْبَ ثُمَّ اَخَذَهَا خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ عَنْ غَيْرِ اِمْرَةٍ فَفُتِحَ لَهُ وَ قَالَ مَا يَسَّرْنَا اَنَّهُمْ عِنْدَنَا قَالَ اَيُّوْبُ اَوْ قَالَ مَا يَسُرُّهُمْ اَنَّهُمْ عِنْدَنَا وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ- (بُخَارِيْ : بَابُ تَمَنَّى الشَّهَادَةِ)

৫. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন (মুতার যুদ্ধে সেনাদল পাঠানোর পর একদিন) রাসূলুল্লাহ  #    খুতবা দিতে গিয়ে বললেন, যায়েদ পতাকা ধারণ করল অতপর শাহাদাত বরণ করল। তারপর জাফর পতাকা ধারণ করল সেও শহীদ হলো। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা ধারণ করল কিন্তু সেও শাহাদাত বরণ কর। তারপর খালিদ বিন ওয়ালিদকে কেউ নেতা মনোনীত করা ছাড়াই সে পতাকা ধারণ করল। এতে বিজয় লাভ করল। নবি  #   আরো বললেন, তারা শাহাদাতের মর্যাদা লাভ না করে আমাদের মাঝে থাকলে তা আমাদের জন্য এখনকার চেয়ে আনন্দদায়ক হত না। বর্ণনাকারী আইয়ুব বলেন, নবি করিম #     বলেছিলেন, তারা শহীদ না হয়ে আমাদের মাঝে থাকলে (এখনকার চেয়ে) বেশি আনন্দিত হত না। এ কথাগুলো বলার সময় নবিজির দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। (বুখারি : বাবু তামান্নাশ শাহাদাতি, ২৫৮৯)



























১৬. বাইয়াত : اَلْبَيْعَةُ

اَلْبَيْعَةُ অর্থ লেনদেন, চুক্তি, আনুগত্য, শপথ, অঙ্গীকার।


আল-কুরআন

إِنَّ الَّذِیْنَ یُبَایِعُوْنَكَ إِنَّمَا یُبَایِعُوْنَ اللّٰهَ  یَدُ اللّٰهِ فَوْقَ اَیْدِیْهِمْ  فَمَنْ نَّكَثَ فَإِنَّمَا یَنْكُثُ عَلٰی نَفْسِه وَ مَنْ اَوْفٰی بِمَا عٰهَدَ عَلَیْهُ اللّٰهَ فَسَیُؤْتِیْهِ اَجْرًا عَظِیْمًا.

১. (হে রাসূল!) যারা আপনার হাতে বাইয়াত করছিল তারা (আসলে) আল্লাহর কাছে বাইয়াত করছিল, তাদের হাতের ওপর আল্লাহর হাত ছিল। এখন যে এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে এর কুফল তার ওপরই পড়বে। আর আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে যে তা পূরণ করবে, আল্লাহ শিগগিরই তাকে বড় পুরস্কার দেবেন। (সূরা ফাত্হ-৪৮ : ১০)  

لَقَدْ رَضِیَ اللّٰهُ عَنِ الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ یُبَایِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِیْ قُلُوْبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِیْنَةَ عَلَیْهِمْ وَ اَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِیْبًا.

২. (হে রাসূল!) আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, যখন তাঁরা গাছের তলায় আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করছিল। তাদের মনের অবস্থা তাঁর জানা ছিল। তাই তিনি তাদের ওপর সান্ত্বনা নাজিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন।(সূরা ফাত্হ-৪৮:১৮)

إِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ أَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ  یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىةِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ وَ مَنْ اَوْفٰی بِعَهْدِه مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِكُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِه وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.

৩. (আসলে ব্যাপার হলো) আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল বেহেশতের বদলে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, (দুশমনকে) মারে এবং (নিজেরাও) নিহত হয়। তাদেরকে (বেহেশত দেয়ার ওয়াদা) আল্লাহর দায়িত্ব একটি মজবুত ওয়াদা-যা তাওরাত, ইনজিল ও কুরআনে (করা হয়েছে)। ওয়াদা পালনে আল্লাহর চেয়ে বেশি যোগ্য আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে যে বেচাকেনার কারবার করেছ, সে বিষয়ে খুশি হয়ে যাও। এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। (সূরা তাওবা-০৯: ১১১)

یٰاَیُّهَا النَّبِیُّ إِذَا جَآءَكَ الْمُؤْمِنٰتُ یُبَایِعْنَكَ عَلٰی أَنْ لَّا یُشْرِكْنَ بِاللّٰهِ شَیْـًٔا وَّ لَا یَسْرِقْنَ وَ لَا یَزْنِیْنَ وَ لَا یَقْتُلْنَ اَوْلَادَهُنَّ وَ لَا یَاْتِیْنَ بِبُهْتَانٍ یَّفْتَرِیْنَهٗ بَیْنَ اَیْدِیْهِنَّ وَ اَرْجُلِهِنَّ وَ لَا یَعْصِیْنَكَ فِیْ مَعْرُوْفٍ فَبَایِعْهُنَّ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللّٰهَ ؕ إِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

৪. হে নবি! যখন মুমিনা নারীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বাইয়াত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তারা জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না। তখন তুমি তাদের বাইয়াত গ্রহণ কর এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা মুমতাহিনা-৬০ : ১২)


আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ  قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ   يَقُوْلُ مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ الله يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَه وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ـ (مُسْلِمْ : بَابُ وُجُوْبِ مُلَازَمَةِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِيْنَ)

১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর "     বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ #    কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে তার হাতকে খুলে ফেলল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমনভাবে যে, তার বলার কিছু থাকবে না, আর যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম: বাবু উজুবি মুলাযামাতি জামায়াতিল মুসলিমিন: ৩৪৪১)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ كُنَّا إِذَا بَايَعَنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  عَلٰى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقُوْلُ لَنَا فِيْمَا اسْتَطَعْتُمْ ـ (بُخَارِيْ : بَابُ كَيْفَ يُبَايِـعُ الْاِمَامُ النَّاسَ)

২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ  #    এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতাম শ্রবণ ও আনুগত্যের ওপর। আর তিনি আমাদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী উক্ত আমল করতে বলতেন। (বুখারি: বাবু কাইফা ইউবায়িউল ইমামুন নাসা, ৬৬৬২)

عَنْ عُبَادَةَ ابْنِ الصَّامِتِ قَالَ بَايَعْنَا النَّبِىَّ صَلَّى الله ﷺ  عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِيْ الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَعَلَى اَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَعَلٰى أَنْ لَّا نُنَازِعَ الْاَمْرَ اَهْلَهُ وَ عَلٰى أَنْ نَّقُوْلَ بِالْحَقِّ اَيْنَمَا كُنَّا لَا نَخَافُ فِيْ اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ- (مُسْلِمْ : بَابُ وَجُوْبِ طَاعَةِ الْاُمَرَاءِ)

৩. হজরত উবাদা ইবনে সামেত "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ  #    এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছি শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে এবং এটা সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, আগ্রহ-অনাগ্রহ এবং নিজের তুলনায় অন্যকে প্রাধান্য দেয়া সর্বাবস্থায়-ই প্রযোজ্য। আমরা আরো বাইয়াত গ্রহণ করেছি এ মর্মে যে, আমরা কোন ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হব না এবং সর্বাবস্থায় সত্যের ওপর অটল থাকব। এ ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করব না। (মুসলিম, বাবু উজুবি তায়াতিল উমারা : ৩৪২৬)

عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فَلَقَّنَنِىْ فِيْمَا اسْتَطَعْتُ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ كَيْفَ يُبَايِعُ الْاِمَامُ النَّاسَ، بَابُ بَيَانِ اَنَّ الدِّيْنَ النَّصِيْحَةُ)

৪. হজরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি করিম  #    এর নিকট শ্রবণ ও আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ করেছি। অতপর তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে আমি যেন সাধ্যমত এ কাজ করি এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করি। (বুখারি, বাবু কাইফা ইউবায়িউল ইমামুন নাসা : ৬৬৬৪, মুসলিম, বাবু বায়ানি আন্নাদ দীনা আননাসিহাতু-৮৫)

عَنْ سَلَمَةَ قَالَ بَايَعَنَا النَّبِىَّ صَلَّى الله ﷺ  تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَقَالَ لِىْ يَا سَلَمَةُ اَلَا تُبَايِعُ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ بَايَعْتُ فِي الْاَوَّلِ قَالَ وَفِي الثَّانِىْ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ بَايَعَ مَرَّتَيْنِ)

৫. হজরত সালামা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা গাছের নিচে রাসূল  #    এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করলাম। অতপর তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! তুমি কি বাইয়াত গ্রহণ করবে না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল #     আমি তো প্রথমবার বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তিনি বললেন, দ্বিতীয়বার (বাইয়াত গ্রহণ) করবে না? (বুখারি : বাবু মান বাইয়া মাররাতাইন, ৬৬৬৮)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ  اَنَّ اَعْرَابِيًّا بَايَعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  عَلىَ الْاِسْلَامِ فَاَصَابَهُ وَعْكٌ فَقَالَ اَقِلْنِىْ بَيْعَتِىْ فَاَبَى ثُمَّ جَائَهُ فَقَالَ اَقِلْنِىْ بَيْعَتِىْ فَاَبَى فَخَرَجَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلِّى اللهُ ﷺ  الْمَدِيْنَةُ كَالْكِيْرِ تَنْفِيْ خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طِيْبُهَا- (بُخَارِيْ : بَابُ بَيْعَةِ الْاَعْرَابِ)

৬. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "    থেকে বর্ণিত। একজন বেদুইন রাসূল  #    এর নিকট ইসলামের ওপর বাইয়াত গ্রহণ করল অতপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। এতে সে রাসূল  #    এর নিকট এসে বলল, আমার বাইয়াত ফিরিয়ে নিন। রাসূলুল্লাহ  #    তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। লোকটি আবার রাসূল  #    এর নিকট এসে বলল, আমার বাইয়াত ফিরিয়ে নিন। রাসূল  # আবার অস্বীকৃতি জানালে সে বেরিয়ে গেল। অতপর রাসূল  #    বললেন, মদীনা হলো কামারের হাপরের ন্যায় যা তার মরিচা বিদুরিত করে আর তার ভালো রূপটি বিকশিত করে। (বুখারি : বাবু বাইয়াতিল আ‘রাবি, ৬৬৬৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  ثَلَاثَةٌ لَّا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ رَجُلٌ عَلَى فَضْلِ مَاءٍ بِالطَّرِيقِ يَمْنَعُ مِنْهُ ابْنَ السَّبِيْلِ وَرَجُلٌ بَايَعَ اِمَامًا لَا يُبَايِعُهُ إِلَّا لِدُنْيَاهُ اِنْ اَعْطَاهُ مَا يُرِيْدُ وَفَى لَهُ وَإِلَّا لَمْ يَفِ لَهُ وَرَجُلٌ يُبَايِعُ رَجُلًا بِسِلْعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ فَحَلَفَ بِاللهِ لَقَدْ اُعْطِىَ بِهَا كَذَا وَكَذَا فَصَدَّقَهُ فَاَخَذَهَا وَلَمْ يُعْطَ بِهَا- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ بَايَعَ رَجُلًا لَا يُبَايِعُهُ إِلَّا لِلدُّنْيَا)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ধরনের ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। ১. এমন ব্যক্তি যার নিকট সফরে অতিরিক্ত পানি আছে অথচ তা থেকে কোন মুসাফিরকে দেয় না। ২. আর যে ব্যক্তি কেবল দুনিয়াবি স্বার্থে নেতার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে। তার কাক্সিক্ষত জিনিস তাকে দেয়া হলে সে বাইয়াত পূর্ণ করে অন্যথায় পূর্ণ করে না। ৩. আর যে ব্যক্তি আছরের পরে কারো নিকট কোন পণ্য বিক্রি করে আর আল্লাহর নামে শপথ করে বলে, আমি এত, এত কম দামে তা ক্রয় করেছি। ফলে ক্রেতা তাকে বিশ্বাস করে ক্রয় করে অথচ সে ঐ দামে ক্রয় করেনি। (বুখারি : মান বাইআয়া রাজুলান লাইবায়িহু ইল্লা লিদদুনিয়া, ৬৬৭২)
















১৭. আল্লাহর পথে ব্যয় : اَلْاِنْفَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

আল-কুরআন

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰی تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَیْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِه عَلِیْمٌক্স

১. তোমাদের ঐসব জিনিস, যা তোমরা ভালোবাস তা (আল্লাহর পথে) খরচ না করা পর্যন্ত তোমরা নেকি হাসিল করতে পার না। আর তোমরা যা কিছু খরচ করবে তা আল্লাহর অজানা থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান-০৩: ৯২)

لَیْسَ عَلَیْكَ هُدٰىهُمْ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْنَ إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ یُّوَفَّ اِلَیْكُمْ وَ أَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ.

২. তাদেরকে হিদায়াত করার দায়িত্ব তোমার নয়, কিন্তু আল্ল¬াহ যাকে চান হিদায়াত করেন এবং তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদের জন্যই। আর তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় কর এবং তোমরা কোন উত্তম ব্যয় করলে তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা-০২ : ২৭২)

اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ثُمَّ لَا یُتْبِعُوْنَ مَا أَنْفَقُوْا مَنًّا وَّ لَا اَذًی  لَّهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ.

৩. যারা তাদের মাল আল্লাহর পথে খরচ করে এবং এরপর তা বলে বেড়ায় না ও কষ্ট দেয় না, তাদের পুরস্কার তাদের রবের কাছে রয়েছে। তাদের কোন চিন্তা ও ভয়ের কারণ নেই। (সূরা বাকারা-০২: ২৬২)

مَثَلُ الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِیْ كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ وَاللّٰهُ یُضٰعِفُ لِمَنْ یَّشَآءُ وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.

৪. যারা আল্ল¬াহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্ল¬াহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্ল¬াহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা-০২ : ২৬১)

وَ أَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ أَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْ لَا اَخَّرْتَنِیْ اِلٰی اَجَلٍ قَرِیْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَক্স وَ لَنْ یُّؤَخِّرَ اللّٰهُ نَفْسًا إِذَا جَآءَ اَجَلُهَا وَ اللّٰهُ خَبِیْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ.

৫. আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগেই তা থেকে তোমরা খরচ কর। মৃত্যুর সময় সে বলে, হে আমার রব! আমাকে কেন আরেকটু সময় দিলে না, তাহলে আমি দান করতাম ও নেক লোকদের মধ্যে শামিল হতাম। অথচ যখন কারো (কাজ করার) সময় পূর্ণ হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তা কখনও বিলম্ব করেন না। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ এর খবর রাখেন। (সূরা মুনাফিকুন: ৬৩: ১০-১১) 

الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ.

৬. যারা সব অবস্থায়ই নিজেদের মাল খরচ করে খারাপ অবস্থাই থাকুক আর ভালো অবস্থাই থাকুক; যারা রাগকে দমন করে এবং অপরের দোষ মাফ করে দেয়; এমন নেক লোক আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। (সূরা আলে ইমরান-০৩: ১৩৪)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا أَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ أَنْ یَّاْتِیَ یَوْمٌ لَّا بَیْعٌ فِیْهِ وَ لَا خُلَّةٌ وَّ لَا شَفَاعَةٌ وَ الْكٰفِرُوْنَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.

৭. হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ কর, ঐ দিনটি আসার আগে, যেদিন কোনো কেনাবেচা হবে না, কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে না এবং কোনো সুপারিশ চলবে না। আসলে তারাই জালিম, যারা কুফরির নীতি গ্রহণ করে। (সূরা বাকারা-০২:২৫৪)

وَ لَا یُنْفِقُوْنَ نَفَقَةً صَغِیْرَةً وَّ لَا كَبِیْرَةً وَّ لَا یَقْطَعُوْنَ وَادِیًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِیَجْزِیَهُمُ اللّٰهُ اَحْسَنَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ.

৮. আর তারা স্বল্প কিংবা অধিক যা-ই ব্যয় করে এবং অতিক্রম করে যে প্রান্তরই, তা তাদের জন্য লিখে দেয়া হয়, যাতে তারা যা আমল করত, আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেন। (সূরা তাওবা-৯ : ১২১)


আল হাদিস

عَنْ خُرَيْمِ بْنِ فَاتِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كُتِبَتْ لَه بِسَبْعِ مِأَةِ ضِعْفٍ ـ (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَاجَاءَ فِيْ فَضْلِ النَّفَقَةِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ) 

১. হজরত খুরাইম ইবনে ফাতেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, যে আল্লাহ তাআলার পথে একটি জিনিস দান করল, তার জন্য সাতশত গুণ সওয়াব লেখা হবে। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ ফি ফাদলিন নাফাকাতি ফি সাবিলিল্লাহি, ১৫৫০)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  قَالَ جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَىُّ الصَّدَقَةِ اَعْظَمُ اَجْرًا؟ قَالَ أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيْحٌ شَحِيْحٌ تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَاْمُلُ الْغِنَى وَلَا تُمْهِلُ حَتّٰى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ قُلْتَ لِفُلَانٍ كَذَا ولِفُلَانٍ كَذَا وَقَدْ كَانَ لِفُلَانٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ صَدَقَةِ الشَّحِيْحِ) 

২. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবি করিম  #   এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল #   ! কোন অবস্থার দান ফলাফলের দিক থেকে সর্বোত্তম? রাসূল #    বললেন তোমার সুস্থ ও উপার্জনক্ষম অবস্থার দান যখন তোমার দরিদ্র হওয়ার ভয় থাকে এবং ধনী হওয়ারও আশা থাকে। তুমি সে পর্যন্ত অপেক্ষা করো না যে তোমার প্রাণ কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছবে তখন তুমি বলবে, অমুকের জন্য এটা, তমুকের জন্য এটা, (অথচ ইতিমধ্যে) তা কারো কারো জন্য তা নির্ধারিত হয়ে গেছে। (বুখারি : বাবু ফাদলি সাদাকাতিশ সাহিহ, ১৩৩০)

عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  اَفْضَلُ دِيْنَارٍ يُنْفَقُهُ الرَّجُلُ دِيْنَارٌ يُنْفَقُهُ عَلَى عِيَالِهِ وَدِيْنَارٌ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ عَلَى دَابَّتِهِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَ دِيْنَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى اَصْحَابِهِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ النَّفَقَةِ عَلَى الْعِيَالِ وَالْمَمْلُوْكِ) 

৩. হজরত সাওবান "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #   বলেছেন, সর্বোত্তম অর্থ হলো তা, যা কোন ব্যক্তি নিজের সন্তান সন্তুতি ও পরিবারের জন্য ব্যয় করে। সে অর্থও উত্তম, যা কোন ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে রক্ষিত পশুর জন্য ব্যয় করে। আর সে অর্থও উত্তম যা সে জিহাদে অংশগ্রহণকারী স্বীয় সঙ্গী-সাথীদের জন্য ব্যয় করে। (মুসলিম : বাবু ফাদলিন নাফাকাতি আলাল ইয়ালি ওয়াল মামলুকি, ১৬৬০)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ قَالَ اللهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ اٰدَمَ اُنْفِقْ عَلَيْكَ ـ (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ النَّفَقَةِ عَلَى الْأَهْلِ) 

৪. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব। (বুখারি : বাবু ফাদলিন নাফাকাতি আলাল আহলি ৪৯৩৩)














১৮. মুমিনের গুণাবলী : صِفَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ

আল-কুরআন

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ إِذَا ذُكِرَ اللّٰهُ وَ جِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَ إِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُه زَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَক্স  الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَক্স اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجٰتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَ مَغْفِرَةٌ وَّ رِزْقٌ كَرِیْمٌ.

১. ঈমানদার তো ঐসব লোক, যাদের দিল আল্লাহর কথা শুনলে কেঁপে ওঠে, যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে, যারা নামাজ কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে (আমার পথে) খরচ করে। তারাই সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্য তাদের রবের কাছে বড় মর্যাদা, গুনাহের ক্ষমা ও উত্তম রিজিক আছে। (সূরা আনফাল, ০৮: ২-৪)

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ. الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ. وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ. وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِلزَّكٰوةِ فٰعِلُوْنَ. وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حٰفِظُوْنَ. إِلَّا عَلٰی اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَیْرُ مَلُوْمِیْنَ. فَمَنِ ابْتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعٰدُوْنَ. وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ. وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَلٰی صَلَوٰتِهِمْ یُحَافِظُوْنَ. اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوٰرِثُوْنَ. الَّذِیْنَ یَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

২. অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়। আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের মালিকানাধীন দাসী যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান। আর যারা নিজেদের সালাতসমূহ হিফাযত করে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী। তারা ফিরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা মুমিনুন, ২৩ : ১-১১)

اَلَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا إِنَّنَا اٰمَنَّا فَاغْفِرْلَنَا ذُنُوْبَنَا وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِক্স  اَلصّٰبِرِیْنَ وَ الصّٰدِقِیْنَ وَ الْقٰنِتِیْنَ وَ الْمُنْفِقِیْنَ وَ الْمُسْتَغْفِرِیْنَ بِالْاَسْحَارِ.

৩. তারা ঐসব লোক, যারা বলে : হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গুনাহ্ মাফ কর এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে বাঁচাও। এসব লোক ধৈর্যশীল, সত্যপন্থী, অনুগত, দানশীল ও শেষরাতে আল্লাহর কাছে গুণাহ মাফ চায়। (সূরা আলে ইমরান-০৩ : ১৬-১৭)  

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَ اَخَوَیْكُمْ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

৪. মু’মিনরা তো একে অপরের ভাই। তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক বহাল করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায়, তোমাদের ওপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত : ৪৯: ১০)

إِنَّ الْمُسْلِمِیْنَ وَ الْمُسْلِمٰتِ وَ الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ الْقٰنِتِیْنَ وَ الْقٰنِتٰتِ وَ الصّٰدِقِیْنَ وَ الصّٰدِقٰتِ وَ الصّٰبِرِیْنَ وَ الصّٰبِرٰتِ وَ الْخٰشِعِیْنَ وَ الْخٰشِعٰتِ وَ الْمُتَصَدِّقِیْنَ وَ الْمُتَصَدِّقٰتِ وَ الصَّآىِٕمِیْنَ وَ الصّٰٓىِٕمٰتِ وَ الْحٰفِظِیْنَ فُرُوْجَهُمْ وَ الْحٰفِظٰتِ وَ الذّٰكِرِیْنَ اللّٰهَ كَثِیْرًا وَّ الذّٰكِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّ اَجْرًا عَظِیْمًا.

৫. নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ  ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্ল¬াহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা আহযাব-৩৩ : ৩৫)

وَ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِیْنَ یَمْشُوْنَ عَلَی الْاَرْضِ هَوْنًا وَّ إِذَا خَاطَبَهُمُ الْجٰهِلُوْنَ قَالُوْا سَلٰمًا- وَ الَّذِیْنَ یَبِیْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا- وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامً- إِنَّهَا سَآءَتْ مُسْتَقَرًّا وَّ مُقَامًا- وَ الَّذِیْنَ إِذَاۤ أَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا- وَ الَّذِیْنَ لَا یَدْعُوْنَ مَعَ اللّٰهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَ لَا یَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَ لَا یَزْنُوْنَ ۚ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ یَلْقَ اَثَامًاۙ- یُّضٰعَفْ لَهُ الْعَذَابُ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وَ یَخْلُدْ فِیْهٖ مُهَانًا- إِلَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓىِٕكَ یُبَدِّلُ اللّٰهُ سَیِّاٰتِهِمْ حَسَنٰتٍ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا- وَ مَنْ تَابَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهٗ یَتُوْبُ اِلَی اللّٰهِ مَتَابًا- وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ ۙ وَ إِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا- وَ الَّذِیْنَ إِذَا ذُكِّرُوْا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمْ لَمْ یَخِرُّوْا عَلَیْهَا صُمًّا وَّ عُمْیَانًا- وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِیْنَ اِمَامًا.

৬. আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’। আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে। আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আজাব ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এর আজাব হল অবিচ্ছিন্ন’। ‘নিশ্চয় তা অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট’। আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আজাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আজাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়। আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিলে অন্ধ ও বধিরদের মত পড়ে থাকে না। আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। (সূরা ফুরকান, ২৫ : ৬৩-৭৪)

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ ثُمَّ لَمْ یَرْتَابُوْا وَ جٰهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ أَنْفُسِهِمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الصّٰدِقُوْنَ.

৭. মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ১৫)

اِنْ یَّنْصُرْكُمُ اللّٰهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ وَ اِنْ یَّخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِیْ یَنْصُرُكُمْ مِّنْ بَعْدِه وَ عَلٰی اللّٰهِ فَلْیَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ.

৮. আল্লাহ যদি তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোন শক্তি তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদেরকে ত্যাগ করেন, তাহলে তাঁর পরে আর কে আছে, যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। কাজেই যারা সাচ্চা মুমিন তাদেরকে আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত। (সূরা আলে ইমরান: ০৩:১৬০)

وَ مَا كَانَ الْمُؤْمِنُوْنَ لِیَنْفِرُوْا كَآفَّةً فَلَوْ لَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآىِٕفَةٌ لِّیَتَفَقَّهُوْا فِی الدِّیْنِ وَ لِیُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوْۤا اِلَیْهِمْ لَعَلَّهُمْ یَحْذَرُوْنَ.

৯. আর মুমিনদের জন্য সংগত নয় যে, তারা সকলে একসঙ্গে অভিযানে বের হবে। অতপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে। (সূরা তাওবা-৯ : ১২২)

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ إِذَا كَانُوْا مَعَهٗ عَلٰی اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ یَذْهَبُوْا حَتّٰی یَسْتَاْذِنُوْهُ إِنَّ الَّذِیْنَ یَسْتَاْذِنُوْنَكَ اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ فَإِذَا اسْتَاْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَاْنِهِمْ فَاْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

১০. মুমিন শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে এবং তাঁর সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে থাকলে অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না। নিশ্চয় তোমার কাছে যারা অনুমতি চায় তারাই কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে; সুতরাং কোন প্রয়োজনে তারা তোমার কাছে বাইরে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দেবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর-২৪ : ৬২)

إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِیْنَ إِذَا دُعُوْۤا اِلَی اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ لِیَحْكُمَ بَیْنَهُمْ أَنْ یَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا ؕ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

১১. মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম। (সূরা নূর-২৪ : ৫১)


আল হাদিস

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ ﷺ  تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ فِيْ تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَىَ لَه سَائِرُ جَسَدِه بِالسَّهْرِ وَالْحُمَّى- (بُخَارِيْ : بَابُ رَحْمَةِ النَّاسِ وَالْبَهَائِمِ)

১. হজরত নু’মান ইবনে বাশির "    হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ #  বলেছেন, তোমরা মুমিনদের পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা এবং হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে, দেহের কোন অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তাহলে অপর অংগগুলোও জ্বর ও নিদ্রাহীনতাসহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে। (বুখারি : বাবু রাহমাতিন নাছি ওয়াল বাহায়িমি, ৫৫৫২)

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَلْمُسْلِمُوْنَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ اِنِ اشْتَكٰى عَيْنُه اِشْتَكٰى كُـلُّه وَاِنِ اشْتَكٰى رَأْسُه اِشْتَكٰى كُـلُّه ـ (مُسْلِمْ : بَابُ تَرَاحُمِ الْمُؤْمِنِيْنَ  وَتَعَاطُفِهِمْ)

২. হজরত নু’মান ইবনে বাশির "    হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ #  বলেছেন, সকল মুসলমান একই ব্যক্তি সত্তার মত। যখন তার চোখে যন্ত্রণা হয়, তখন তার গোটা শরীরই তা অনুভব করে। যদি তার মাথা ব্যথা হয়, তখনও গোটা শরীরই তা অনুভব করে। (মুসলিম: বাবু তারাহুমিল মুমিনীনা ওয়া তায়াতুফি হিম, ৪৬৮৭)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ اَلْمُؤْمِنُ مَألَفٌ وَلَا خَيْرَ فِيْمَنْ لَا يَأْلَفُ، وَلَا يُؤَلَفُ ـ (مِشْكَـاةُ الْمَصَابِيْحِ ـ بَابُ السَّلَامِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ #   বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি ভালোবাসা ও দয়ার প্রতীক। ঐ ব্যক্তির মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, যে কাউকে ভালোবাসে না এবং কারো ভালোবাসা পায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ: বাবুস সালাম, ৪৯৯৫)











১৯. তাকওয়া : اَلتَّقْوى

اَلتَّقْوى অর্থ ভয় করা, বিরত থাকা, আত্মশুদ্ধি, সাবধান হওয়া।

আল-কুরআন

یٰاَیُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنٰكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّ اُنْثٰی وَ جَعَلْنٰكُمْ شُعُوْبًا وَّ قَبَآىِٕلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللّٰهِ اَتْقٰىكُمْ إِنَّ اللّٰهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ.

১. হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ১৩)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِه وَ لَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَ أَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ.

২. হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে তেমনি ভয় কর, যেমন ভয় করা উচিত। আর মুসলিম অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়। (সূরা আলে ইমরান- ০৩: ১০২) 

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ لْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ خَبِیْرٌ مبِمَا تَعْمَلُوْنَ.

৩. হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চল! প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত যে, সে আগামী দিনের জন্য কী ব্যবস্থা করেছে। আল্লাহকে আরো ভয় করে চল। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের সব আমলের খবর রাখেন। (সূরা হাশর-৫৯: ১৮) 

إِنَّ اللّٰهَ مَعَ الَّذِیْنَ اتَّقَوْا وَّ الَّذِیْنَ هُمْ مُّحْسِنُوْنَ.

৪. নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে আছেন, যারা তাকওয়ার জীবনযাপন করে এবং যারা ইহসানের সাথে আমল করে। (সূরা নাহ্ল-১৬: ১২৮)

فَاتَّقُوا اللّٰهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَ اسْمَعُوْا وَ اَطِیْعُوْا وَ أَنْفِقُوْا خَیْرًا لِّأَنْفُسِكُمْ وَ مَنْ یُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৫. অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজেদের কল্যাণে ব্যয় কর, আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম। (সূরা তাগাবুন-৬৪ : ১৬)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحِلُّوْا شَعَآئِرَ اللّٰهِ وَ لَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَ لَا الْهَدْیَ وَ لَا الْقَلَآىِٕدَ وَ لَاۤ آٰمِّیْنَ الْبَیْتَ الْحَرَامَ یَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رِضْوَانًا ؕ وَ إِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْا وَلَا یَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ أَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَنْ تَعْتَدُوْا وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ.

৬. হে মুমিনগণ, তোমরা অসম্মান করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহের, হারাম মাসের, হারামে প্রেরিত কুরবানীর পশুর, গলায় চি‎হ্ন দেয়া পশুর এবং আপন রবের অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অনুসন্ধানে পবিত্র গৃহের অভিমুখীদের। যখন তোমরা হালাল হও, তখন শিকার কর। কোন কওমের শত্রুতা যে, তারা তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বাধা প্রদান করেছে, তোমাদেরকে যেন কখনো প্ররোচিত না করে যে, তোমরা সীমালঙ্ঘন করবে। সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আজাব প্রদানে কঠোর। (সূরা মায়েদা-৫ : ২)

فَإِذَا بَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ اَوْ فَارِقُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ وَّ اَشْهِدُوْا ذَوَیْ عَدْلٍ مِّنْكُمْ وَ اَقِیْمُوا الشَّهَادَةَ لِلّٰهِ ذٰلِكُمْ یُوْعَظُ بِهٖ مَنْ كَانَ یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ مَنْ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا- وَّ یَرْزُقْهُ مِنْ حَیْثُ لَا یَحْتَسِبُ وَ مَنْ یَّتَوَكَّلْ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسْبُهٗ إِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمْرِهٖ قَدْ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَیْءٍ قَدْرًا.

৭. অতপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ প‎ন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ প‎ন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সূরা তালাক-৬৫ : ২-৩)

وَ الّٰٓـِٔیْ یَئِسْنَ مِنَ الْمَحِیْضِ مِنْ نِّسَآئِكُمْ اِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلٰثَةُ اَشْهُرٍ وَّ الّٰٓـِٔیْ لَمْ یَحِضْنَ وَ اُولَاتُ الْاَحْمَالِ اَجَلُهُنَّ أَنْ یَّضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَ مَنْ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ یُسْرًا.

৮. তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুবর্তী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস। আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। (সূরা তালাক-৬৫ : ৪)

ذٰلِكَ اَمْرُ اللّٰهِ أَنْزَلَهٗ اِلَیْكُمْ وَ مَنْ یَّتَّقِ اللّٰهَ یُكَفِّرْ عَنْهُ سَیِّاٰتِهٖ وَ یُعْظِمْ لَهٗ اَجْرًا.

৯. এটি আল্লাহর নির্দেশ, তিনি তা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং তাকে মহা পুরস্কার দেন। (সূরা তালাক-৬৫ : ৫)

وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ یَخْشَ اللّٰهَ وَ یَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ.

১০. আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য। (সূরা নূর-২৪ : ৫২)

اَلَمْ تَرَ اِلَی الَّذِیْنَ قِیْلَ لَهُمْ كُفُّوْۤا اَیْدِیَكُمْ وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَیْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِیْقٌ مِّنْهُمْ یَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْیَةِ اللّٰهِ اَوْ اَشَدَّ خَشْیَةً وَ قَالُوْا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَیْنَا الْقِتَالَ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنَاۤ اِلٰی اَجَلٍ قَرِیْبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْیَا قَلِیْلٌ وَ الْاٰخِرَةُ خَیْرٌ لِّمَنِ اتَّقٰی وَ لَا تُظْلَمُوْنَ فَتِیْلًا.

১১. তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও এবং সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর? অতপর তাদের ওপর যখন লড়াই ফরয করা হল, তখন তাদের একদল মানুষকে ভয় করতে লাগল আল্লাহকে ভয় করার অনুরূপ অথবা তার চেয়ে কঠিন ভয়। আর বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ওপর লড়াই ফরয করলেন কেন? আমাদেরকে কেন আরো কিছুকালের অবকাশ দিলেন না’? বল, ‘দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য আখিরাত উত্তম। আর তোমাদের প্রতি সূতা পরিমাণ যুল্মও করা হবে না’। (সূরা নিসা-৪ : ৭৭)


আল হাদিস

عَنْ عَطِيَّةَ السَّعْدِىْ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَال قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَبْلُغُ الْعَبْدُ اَن يَّكُوْنَ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ حَتّٰى يَدَعَ مَا لَا بَاْسَ بِه حَذَرًا لِمَا بِهِ الْبَاْسُ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اَوَانِىْ الْحَوْضِ)

১. হজরত আতিয়া আসসা‘দী "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, কোন বান্দাহ ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকী হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে গুনাহর আশঙ্কায় গুনাহ নেই এমন কাজও ছেড়ে দেবে। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ ফি সিফাতি আওয়ানিল হাউদ, ২৩৭৫)

عَنْ عَائِشَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ يَا عَائِشَةُ اِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوْبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِبًا ـ (اَلسِّلْسِلَةُ الصَّحِيْحَةُ لِلْاَلْبَانِىْ)

২. হজরত আয়েশা "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #   তাকে বলেছেন, হে আয়েশা ছোটখাট গুনাহর ব্যাপারেও সতর্ক হও, কেননা এর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। (সিলসিলাতুস সহীহা লিল আলবানী, ২৭৩১)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تَحَاسَدُوْا وَلَا تَنَاجَشُوْا وَلَا تَبَاغَضُوْ وَلَا تَدَابَرُوْا وَلَا يَبِعُ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ اِخْوَانًا اَلْمُسْلِمُ اَخُ الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُه وَلَا يَخْذُلُه وَلَا يَحْقِرُهُ اَلتَّقْوى هَاهُنَا وَيُشِيْرُ إِلٰى صَدْرِه ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ اَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُه وَ مَالُه وَعِرْضُه- (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ ظُلْمِ الْمُسْلِمِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  # বলেছেন, তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা পোষণ করো না, দালালি করো না, ঘৃণা বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। কেউ কারও ওপর ক্রয়-বিক্রয় করো না। আল্লাহর বান্দাগণ ভাই ভাই হয়ে থাকো। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না, অপমান অপদস্ত করতে পারে না এবং তুচ্ছ জ্ঞান করতে পারে না। তাকওয়া এখানে এ কথাটি তিনি তিনবার বলে নিজের বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করলেন। কোন ব্যক্তি খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। প্রত্যেক মুসলিমের জীবন, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য সব মুসলিমের জন্য হারাম। (মুসলিম : বাবু তাহরিমি যুলমিল মুসলিম, ৪৬৫০)

عَنْ حَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  دَعْ مَا يَرِيْبُكَ اِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَاِنْ الصِّدْقَ طَمَانِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكِذْبَ رِيْبَةً- (تِرْمِذىْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اَوَانِىْ الْحَوْضِ)

৪. হজরত হাসান ইবনে আলী "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল #   থেকে এ কথা মুখস্ত করে নিয়েছি যে, সন্দেহযুক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে সন্দেহমুক্ত বিষয় গ্রহণ কর। কেননা, সত্যতাই প্রশান্তির বাহন এবং মিথ্যাচার সন্দেহ সংশয়ের উৎস। (তিরমিজি : বাবু মাজাআ ফি সিফাতি আওয়ানিল হাওদ, ২৪৪২)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىْ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيْهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْلَمُوْنَ فَاتَّقُوْا الدُّنْيَا وَاتَّقُوْا النِّسَاءَ فَإِنَّ اَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِىْ اِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ- (مُسْلِمْ : بَابُ اَكْثَرِ اَهْلِ الْجَنَّةِ الْفُقَرَاءُ وَاَكْثَرِ اَهْلِ النَّارِ النِّسَاءُ وَبَيَانِ الْفِتْنَةِ بِالنَّسَاءِ)

৫. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "   থেকে বর্ণিত। নবি করিম  #    বলেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া মিষ্ট ও আকর্ষণীয়। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়ায় তার প্রতিনিধি করেছেন, যাতে তিনি দেখে নেন তোমরা কেমন কাজ কর। কাজেই তোমরা দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের থেকে ও সতর্ক থাক। কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল। (মুসলিম : বাবু আকছারি আহলিল জান্নাতি আল ফুকারা-৪৯২৫)

عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  اَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى -(مُسْلِمْ : بَابُ التَّعَوُّذِ مِنْ شَرِّ مَا عُمِلَ وَمِنْ شَرِّ مَالَمْ يُعْمَلْ)

৬. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "   থেকে বর্ণিত। নবি করিম  #    বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা চাই। (মুসলিম : বাবুত তায়াউযি মিন শাররি মা উমিলা ওয়া মিন শাররি মা লাম ইউমাল : ৪৮৯৫)












২০. পর্দা : اَلْحِجَابُ

আল কুরআন

قُلْ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ یَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَ یَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ اَزْكٰی لَهُمْ إِنَّ اللّٰهَ خَبِیْرٌ بِمَا یَصْنَعُوْنَ.

১. (হে নবি!) মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চোখ নিচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র নিয়ম। তারা যা কিছু করে আল্লাহ এর খবর রাখেন। (সূরা নূর-২৪: ৩০) 

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتًا غَیْرَ بُیُوْتِكُمْ حَتّٰی تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰی اَهْلِهَا  ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

২. হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের ঘর ছাড়া অন্যদের ঘরে তাদের অনুমতি ছাড়া এবং তাদেরকে সালাম পাঠানো ছাড়া কখনও ঢুকবে না। এ নিয়ম তোমাদের জন্যই ভালো। আশা করা যায় যে, তোমরা এ বিষয়ে খেয়াল রাখবে। (সূরা নূর-২৪: ২৭)

وَ إِذَا بَلَغَ الْاَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْیَسْتَاْذِنُوْا كَمَا اسْتَاْذَنَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمْ اٰیٰتِه وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ.

৩. যখন তোমাদের সন্তানরা সাবালক হয়ে যায় তখন তারা অবশ্যই যেন তেমনিভাবে অনুমতি নিয়ে আসে, যেমনিভাবে তাদের বড়রা অনুমতি নিয়ে এসে থাকে। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো তোমাদের সামনে স্পষ্ট করে দেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহাকুশলী। (সূরা নূর-২৪: ৫৯)

یٰاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنٰتِكَ وَ نِسَآءِ الْمُؤْمِنِیْنَ یُدْنِیْنَ عَلَیْهِنَّ مِنْ جَلَابِیْبِهِنَّ ؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤی أَنْ یُّعْرَفْنَ فَلَا یُؤْذَیْنَ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا.

৪. হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৩৩ : ৫৯)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتَ النَّبِیِّ إِلَّاۤ أَنْ یُّؤْذَنَ لَكُمْ اِلٰی طَعَامٍ غَیْرَ نٰظِرِیْنَ اِنٰىهُ ۙ وَ لٰكِنْ إِذَا دُعِیْتُمْ فَادْخُلُوْا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوْا وَ لَا مُسْتَاْنِسِیْنَ لِحَدِیْثٍ إِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ یُؤْذِی النَّبِیَّ فَیَسْتَحْیٖ مِنْكُمْ ؗ وَ اللّٰهُ لَا یَسْتَحْیٖ مِنَ الْحَقِّ وَ إِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَسْـَٔلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ ؕ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَ قُلُوْبِهِنَّ ؕ وَ مَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَ لَاۤ أَنْ تَنْكِحُوْۤا اَزْوَاجَهٗ مِنْۢ بَعْدِهٖۤ اَبَدًا إِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللّٰهِ عَظِیْمًا.

৫. হে মুমিনগণ, তোমরা নবির ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবিকে কষ্ট দেয়, সে তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করে; কিন্তু আল্ল¬াহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবিপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল  থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্ল-াহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল¬াহর কাছে গুরুতর পাপ। (সূরা আহযাব-৩৩ : ৫৩)

یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَیْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَیَطْمَعَ الَّذِیْ فِیْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّ قُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا -وَ قَرْنَ فِیْ بُیُوْتِكُنَّ وَ لَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِیَّةِ الْاُوْلٰی وَ اَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتِیْنَ الزَّكٰوةَ وَ اَطِعْنَ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ إِنَّمَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَیْتِ وَ یُطَهِّرَكُمْ تَطْهِیْرًا.

৬. হে নবিÑপত্নিগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবি পরিবার, আল্ল¬াহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব, ৩৩ : ৩২-৩৩)

وَٱلَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ.

৭. আর যারা (সফল মু’মিনদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা) নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা মুমিনূন-২৩: ৫) 

یٰبَنِیْ اٰدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَیْكُمْ لِبَاسًا یُّوَارِیْ سَوْاٰتِكُمْ وَ رِیْشًا وَ لِبَاسُ التَّقْوٰی ذٰلِكَ خَیْرٌ ذٰلِكَ مِنْ اٰیٰتِ اللّٰهِ لَعَلَّهُمْ یَذَّكَّرُوْنَ.

৮. হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের প্রতি পোশাক নাজিল করেছি, যাতে তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থান ঢাকা যায় এবং শরীরের হেফাজত ও সাজ-সজ্জা হয়। আর তাকওয়ার পোশাকই সবচেয়ে ভালো। এটা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। হয়তো লোকেরা এ থেকে উপদেশ নেবে। (সূরা আ’রাফ-০৭: ২৬)


আল হাদিস

عَنْ جَرِيْرٍ قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنْ نَظْرَةِ الْفُجَأَةِ فَقَالَ اِصْرِفْ بَصَرَكَ ـ (اَبُوْ دَاودَ: بَابُ مَا يَؤُمَرُ بِه مِنْ غَضِّ الْبَصَرِ) 

১. হজরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #   কে জিজ্ঞাসা করলাম, হঠাৎ যদি কোন মহিলার ওপর দৃষ্টি পড়ে তাহলে কী করতে হবে? তিনি আমাকে বললেন (কাল বিলম্ব না করেই) তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে। (আবু দাউদ: বাবু মা ইউমার বিহি মিন গাচ্ছিল বাছার, ১৮৩৬)

عَنْ عَلِـىٍّ قَالَ قَالَ لِـىْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تُتْبِـعِ النَّظْرَ النَّظْرَ فَإِنَّ الْاُوْلٰى لَكَ وَلَيْسَتْ لَكَ الْاٰخِرَةُ ـ (اَحْمَدْ: مُسْنَدِ عَلِـىٍّ رَضِيَ الله عَنْهُ)

২. হজরত আলী "    হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ #   আমাকে বললেন, (অপরিচিত নারীর প্রতি) একবার দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি নিক্ষেপ  করো না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার, পরবর্তী দৃষ্টি তোমার নয়। (মুসনাদে আহমাদ: মুসনাদে আলী (রা), ১২৯৮)

عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ـ (تِرْمِذِيْ: بَابُ مَا جَاءَ فِيْ كَرَاهِيَةِ الدُّخُوْلِ عَلَى الْمُغِيْبَاتِ) 

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। যখন সে (পর্দা উপেক্ষা করে) বাহিরে আসে তখন শয়তান তাকে সুসজ্জিত করে দেখায়। (তিরমিজি: বাবু মা জা’আফি কারাহিয়াতিদ দুখুলি আলাল মুগিবাতি, ১০৯৩)

عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ اَنَّهَا كَانَتْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  وَ مَيْمُوْنَةَ قَالَتْ فَبَيْنَا نَحْنُ عِنْجَهُ اَقْبَلَ ابْنُ اُمِّ مَكْتُوْمٍ فَدَخَلَ ﷺ  اِحْتَجِبَا مِنْهُ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَلَيْسَ هُوَ اَعْمَى لَا يُبْصِرُنَا وَلَا يَعْرِفُنَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَفَعَمْيَا وَاِنْ أَنْتُمَا اَلَسْتُمَا تُبْصِرَانِهَ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ اِحْتِجَابِ النِّسَاءِ مِنَ الرِّجَالِ) 

৩. হজরত উম্মে সালামা "   থেকে বর্ণিত। একদা তিনি এবং হজরত মায়মুনা  "    রাসূলুল্লাহ  #    এর নিকটে ছিলেন। হজরত উম্মে সালামা "    বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ  #   এর নিকট থাকাবস্থায় হঠাৎ সেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম "   এসে প্রবেশ করলেন। (এটি পর্দার বিধান নাজিল পরবর্তী ঘটনা) তখন রাসূল #   আমাদেরকে বললেন, তোমরা উভয়ে লোকটি থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল #    ! লোকটি তো অন্ধ, সে আমাদেরকে দেখেও না, চিনেও না। তখন রাসূলুল্লাহ  #    বললেন, তোমরা দুজনও কি অন্ধ যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (তিরমিজি : বাবু মা জা‘আ ফী ইহতিজাবিন নিসায়ি মিনার রিজাল, ২৭০২)

عَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَاِذَ خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ-

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "  থেকে বর্ণিত নবি করিম #    বলেছেন, মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং তারা যখন বাহিরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে সুসজ্জিত করে দেখায়। (তিরমিজি : ১১৭৩)
























২১. আনুগত্য : اَلْاِطَاعَةُ

اَلْاِطَاعَةُ অর্থ আদেশ নিষেধ পালন করা।


আল-কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ وَ اُولِی الْاَمْرِ مِنْكُمْ  فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِیْ شَیْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ذٰلِكَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا.

১. হে ঈমানদারেরা! (যদি তোমরা সত্যি আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান এনে থাক তাহলে) আল্লাহকে মেনে চল এবং রাসূলকে মেনে চল। আর তোমাদের মধ্যে যাদের হুকুম দেয়ার অধিকার আছে তাদেরকেও (মানো)। তারপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। এটাই সঠিক কর্মনীতি এবং শেষ ফলের দিক দিয়েও এটাই ভাল। (সূরা নিসা-০৪: ৫৯)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ وَ لَا تُبْطِلُوْا اَعْمَالَكُمْক্স

২. হে ঈমানদারেরা! আল্লাহ ও রাসূলের কথামতো চল। আর নিজেদের আমল নষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মদ-৪৭: ৩৩)

وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِیْنَ أَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیِّيْنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِیْقًا.

৩. আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন নবি, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম। (সূরা নিসা-৪ : ৬৯)

مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللّٰهَ وَ مَنْ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَیْهِمْ حَفِیْظًا.

৪. যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা-৪ : ৮০)

قُلْ اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَیْهِ مَا حُمِّلَ وَ عَلَیْكُمْ مَّا حُمِّلْتُمْ وَ اِنْ تُطِیْعُوْهُ تَهْتَدُوْا وَ مَا عَلَی الرَّسُوْلِ إِلَّا الْبَلٰغُ الْمُبِیْنُ.

৫. বল, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। (সূরা নূর-২৪ : ৫৪)

وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَه وَ یَخْشَ اللّٰهَ وَ یَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآىِٕزُوْنَ.

৬. যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পালন করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা নূর-২৪: ৫২)

وَ اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

৭. আর আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো, আশা করা যায় তোমাদের ওপর রহমত করা হবে! (সূরা আলে ইমরান-০৩: ১৩২)

تِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَه یُدْخِلْهُ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا وَ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.

৮. এসব আল্লাহর সীমা। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মেনে চলবে তাকে আল্লাহ এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে ঝরনা বইতে থাকবে। তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আর এটাই বড় সফলতা। (সূরা নিসা-০৪: ১৩)

إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِیْنَ إِذَا دُعُوْۤا اِلَی اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ لِیَحْكُمَ بَیْنَهُمْ أَنْ یَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا ؕ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৯. মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম। (সূরা নূর-২৪ : ৫১)

قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّا قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَ لٰكِنْ قُوْلُوْۤا اَسْلَمْنَا وَ لَمَّا یَدْخُلِ الْاِیْمَانُ فِیْ قُلُوْبِكُمْ وَ اِنْ تُطِیْعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ لَا یَلِتْكُمْ مِّنْ اَعْمَالِكُمْ شَیْئًا إِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

১০. বেদুঈনরা বলল, ‘আমরা ঈমান আনলাম’। বল, ‘তোমরা ঈমান আননি’। বরং তোমরা বল, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করলাম’। আর এখন পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তাহলে তিনি তোমাদের আমলসমূহের কোন কিছুই হ্রাস করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ১৪)


আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيْمَا اَحَبَّ وَكَرِهَ مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ فَإِذَا اُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ- (بُخَارِيْ : بَابُ السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ لِلْاِمَامِ مَا لَمْ تَكُنْ مَعْصِيَةً، مُسْلِمْ : بَابُ وَجُوْبِ طَاعَةِ الْاُمَرَاءِ فِيْ غَيْرِ مَعْصِيَةٍ وَتَحْرِيْمِهَا فِيْ الْمَعْصِيَةِ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    থেকে বর্ণিত। নবি  #    বলেছেন, দায়িত্বশীল যে পর্যন্ত কোন পাপ কাজের আদেশ না করবে সে পর্যন্ত তার আদেশ শুনা ও মেনে নেয়া প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য, তা তার পছন্দ হোক বা নাই হোক। তবে সে যদি কোন পাপ কাজের আদেশ করে, তখন তার কথা শুনা বা আনুগত্য করার কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারি : বাবু সাময়ি ওয়াত তায়াতি লিল ইমামি, ৬৬১১, মুসলিম : বাবু উজুবি তায়াতিল উমারা, ৩৪২৩)

عَنْ عَلِىٍّ اَنَّ النَّبِىَّ ﷺ بَعَثَ جَيْشًا وَاَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلًا فَاَوْقَدَ نَارًا وَقَالَ ادْخُلُوْهَا فَاَرَادُوْا أَنْ يَّدْخُلُوْهَا وَقَالَ آخَرُوْنَ إِنَّمَا فَرَرْنَا مِنْهَا فَذَكَرُوْا لِلنَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ لِلَّذِيْنَ اَرَادُوْا اَن يَّدُخُلُوْهَا لَوْ دَخَلُوْهَا لَمْ يَزَالُوْا فِيْهَا اِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَقَالَ لِلْآخَرِيْنَ لَا طَاعَةَ فِيْ مَعْصِيَةٍ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِيْ الْمَعْرُوْفِ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ اِجَازَةِ خَبْرِ الْوَاحِدِ)

২. হজরত আলি "    থেকে বর্ণিত। নবি  #    একটি সেনাদল পাঠালেন এবং তাদের ওপর একজন দায়িত্বশীল নিযুক্ত করলেন। অতপর (দায়িত্বশীল) আগুন জ্বালিয়ে তাতে ঝাঁপ দেয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিল। তারা কয়েকজন তাতে ঝাঁপ দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করল, অপর কয়েকজন বলল, আমরা তো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই পালিয়ে এসেছি (ইসলাম গ্রহণ করেছি)। অতপর তারা বিষয়টি রাসূল #    এর নিকট উল্লেখ করলেন। যারা আগুনে প্রবেশ করতে চেয়েছিল, রাসূলুল্লাহ #    তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যদি তারা আগুনে প্রবেশ করত, তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তারা সে আগুনেই থাকত। অবশিষ্টদেরকে রাসূল #    বললেন, অন্যায় কাজের কোন আনুগত্য নেই। কেবল ভালো কাজেই আনুগত্য করা যাবে। (বুখারি : বাবু মাজাআ ফী ইজাযাতি খবরিল ওয়াহিদি, ৬৭১৬)

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ  اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ مَنْ اَطَاعَنِىْ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ يُّطِعِ الْاَمِيْرَ فَقَدْ اَطَاعَنِىْ وَمَنْ يَعْصِ الْاَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِىْ وَإِنَّمَا الْاِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتِلُ مِنْ وَرَائِه وَيُتَّقَى بِه فَاِنْ اَمَرَ بِتَقْوَى اللهِ وَعَدَلَ فَإِنَّ لَه بِذلِكَ اَجْرًا وَاِنْ قَالَ بَغَيْرِه فَإِنَّ عَلَيْهِ مِنْهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَاءِ الْاِمَامِ وَيُتَّقَى بِهِ)

৩. আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, যে আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। যে আমার অবাধ্য হলো, সে আল্লাহরই অবাধ্য হলো। যে আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে আমীরের আদেশ অমান্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে আমারই আদেশ অমান্য করল। আর নেতা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করা হয় এবং তার মাধ্যমেই (শত্রু বাহিনী থেকে) রক্ষা পাওয়া যায়। যদি সে আল্লাহভীতি তথা তাকওয়ার আদেশ দেয় এবং ইনসাফ কায়েম করে, তবে নিশ্চয়ই সে তার প্রতিদান পাবে। আর যদি সে এর বিপরীত করে তাহলে এর দায়ভার তার উপরেই বর্তাবে। (বুখারি : বাবু ইউক্বাতালু মিন ওয়ারায়িল ইমামি, ২৭৩৭)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ   يَقُوْلُ مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِه بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً. (مُسْلِمْ : بَابُ وُجُوْبِ مُلَازَمَةِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِيْنَ) 

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ #   কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে তার হাতকে খুলে ফেলল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমনভাবে যে তার বলার কিছুই থাকবে না। আর যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম : বাবু উযুবি মুলাযামাতি জামায়াতিল মুসলিমীন, ৩৪৪১)

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ بَايَعْنَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  عَلٰى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِيْ الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَةِ وَعَلٰى اَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَعَلٰى أَنْ لَا نُنَازِعَ الْاَمْرَ اَهْلَه وَعَلٰى أَنْ نَّقُوْلَ بِالْحَقِّ اَيْنَمَا كُنَّا لَا نَخَافُ فِي اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ- (مُسْلِمْ : بَابُ وَجُوْبِ طَاعَةِ الْاُمَرَاءِ) 

৫. হজরত উবাদা ইবনে সামেত "   হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল #    এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছি শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে এবং এটা সচ্ছলতা অসচ্ছলতা, আগ্রহ, অনাগ্রহ এবং নিজের তুলনায় অন্যকে প্রাধান্য দেয়া সর্বাবস্থায়ই প্রযোজ্য। আমরা আরো বাইয়াত গ্রহণ করেছি এ মর্মে যে, আমরা কোন ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হব না এবং সর্বাবস্থায় সত্যের ওপর অটল থাকব। এ ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করব না। (মুসলিম : বাবু উযুবি তায়াতিল উমারা, ৩৪২৬)

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ   قَالَ مَنْ رَاَى مِنْ اَمِيْرِه شَيْئًا يَكْرَهُه فَلْيَصْبِرُ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَامَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ إِلَّا مَاتَ مِيْتَتًا جَاهِلِيَّةً- (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ سَتَرَوْنَ بَعْدِىْ اُمُوْرًا تُنْكِرُوْنَهَا)

৬. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "   হতে বর্ণিত, নবি করিম  #    বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দায়িত্বশীল থেকে এমন বিষয় দেখে, যা সে অপছন্দ করে তখন সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি সংগঠন থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, সে যেন জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (বুখারি : বাবু কাওলিন নাবিয়্যি ছা-তারাওনা বাদি উমুরান তুনকিরুনাহা, ৬৫৩১)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ كُنَّا إِذَا بَايَعْنَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَلٰى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقُوْلُ لَنَا فِيْمَا اسْتَطَعْتُمْ- (بُخَارِيْ : بَابُ كَيْفَ يُبَايَعُ الْاِمَامُ النَّاسَ)

৭. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ  #   এর নিকট শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার ওপর বাইয়াত গ্রহণ করতাম, তখন তিনি আমাদের বলতেন, তোমরা সাধ্যমত আনুগত্য করবে। (বুখারি : বাবু কাইফা ইউবায়িয়ুল ইমামুন নাসা, ৬৬৬২)

عَنْ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ وَعَظَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ   مَوْعِظَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ هذِه لَمَوْعِظَةُ مُوَدَّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ اِلَيْنَا قَالَ قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا لَا يَزِيْغُ عَنْهَا بَعْدِىْ إِلَّا هَالِكٌ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اِخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِمَا عَرَفْتُمْ مِنْ سُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ عَضُّوْ عَلَيْهَا بِالنَّواجِذِ وَ عَلَيْكُمْ بِالطَّاعَةِ وَ اِنْ عَبْدًا حَبْشِيًّا فَإِنَّمَا الْمُؤْمِنُ كَالْجَمَلِ الْأَنِفِ حَيْثُمَا قِيْدَ اِنْقَادَ- (اِبْنُ مَاجَة : بَابُ اِتَّبَاعِ سُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ)

৮. হজরত ইরবায ইবনে সারিয়া "  বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ #    আমাদের সামনে এক (হৃদয়গ্রাহী) বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে চক্ষুগুলো অশ্রু প্রবাহিত করেছে আর অন্তরগুলো কেঁপে উঠেছে। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমাদের মনে হচ্ছে) এটা বিদায়ী নসীহত! আমাদের থেকে আপনি কী প্রতিশ্রুতি কামনা করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের এমন শুভ্রতার ওপর রেখে যাচ্ছি যার রাত্রি দিনের মতই স্বচ্ছ। আমার পর ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ থেকে বিচ্যুত হবে না। তোমাদের মধ্য থেকে যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের দায়িত্ব হবে আমার এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শকে আঁকড়ে ধরা, তোমরা দাঁত দিয়ে তা কামড়িয়ে ধরবে। (এ আদর্শের ওপর অটল থাকবে।) আর তোমাদের উচিৎ নেতার আনুগত্য করা, যদিও সে হাবশী গোলাম হয়। কেননা মুমিন হচ্ছে লাগাম লাগানো উটের মত, যেখানেই তাকে বাঁধা হয়, সেখানেই বশীভূত হয়। (ইবনে মাজাহ : বাবু ইত্তিবায়ি সুন্নাতিল খুলাফায়ির রাশিদীনাল মাহদিয়্যীন, ৪৩)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَال رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله ﷺ   عَلَيْكَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيْ عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ وَأَثَرَةٍ عَلَيْكَ- (مُسْلِمْ : بَابُ وُجُوْبِ طَاعَةِ الْاُمَرَاءِ فِيْ غَيْرِ مَعْصِيَةٍ وَتَحْرِيْمِهَا فِيْ الْمَعْصِيَةِ)

৮. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, সুদিনে ও দুর্দিনে, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে এবং তোমার অধিকার খর্ব হওয়ার ক্ষেত্রেও শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা তোমার জন্য অপরিহার্য। (মুসলিম : বাবু উযুবি তায়াতিল উমারা ফী গাইরি মা‘সিয়াতিন, ৩৪১৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ اَطَاعَنِىْ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ اَبىٰ-

৯. হজরত আবু হুরায়রা "     থেকে বর্ণিত, রাসূল  #    বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল। আর যে ব্যক্তি আমার বিরোধীতা করল সে যেন আমাকে অস্বীকার করল। (বুখারি শরীফ)








২২. পরামর্শ : اَلشُّوْرٰى


আল-কুরআন

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ  وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَکَّلْ عَلٰی اللهِ إِنَّ اللهَ یُحِبُّ الْمُتَوَکِّلِیْنَ 

১. হে রাসূল! এটা আল্লাহর বড়ই রহমত যে, আপনি এসব লোকের জন্য খুব নরম মনের হয়েছেন। তা না হয়ে যদি আপনি কড়া ও পাষাণ মনের অধিকারী হতেন তাহলে তারা সবাই আপনার চারপাশ থেকে সরে যেত। তাদের দোষ মাফ করে দিন, তাদের পক্ষে মাগফিরাতের দোয়া করুন এবং দীনের কাজে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। তারপর যখন আপনি কোনো মতের ওপর মজবুত সিদ্ধান্তে পৌঁছেন তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। আল্লাহ ঐসব লোককে ভালোবাসেন, যারা তাঁরই ভরসায় কাজ করে। (সূরা আলে ইমরান-০৩: ১৫৯)

وَ الَّذِیْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اَمْرُهُمْ شُوْرٰی بَیْنَهُمْ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ 

২. আর যারা তাদের রবের হুকুম মেনে চলে ও নামাজ কায়েম করে নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায় এবং তাদেরকে যে রিজিক দেয়া হয়েছে তা থেকে খরচ করে। (সূরা শুরা-৪২: ৩৮)

لَا خَیْرَ فِیْ کَثِیْرٍ مِّنْ نَّجْوٰىهُمْ  إِلَّا مَنْ اَمَرَ بِصَدَقَةٍ اَوْ مَعْرُوْفٍ اَوْ اِصْلَاحٍ  بَیْنَ النَّاسِ وَمَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ فَسَوْفَ نُؤْتِیْـهِ اَجْرًا عَظِیْمًا 

৩. তাদের বেশির ভাগ গোপন শলা-পরামর্শেই কোন মঙ্গল থাকে না অবশ্য যদি কেউ গোপনে কাউকে দান-খয়রাত করার জন্য আদেশ করে অথবা কোন কাজ অথবা জনগণের মধ্যে সংশোধনমূলক কাজের তাগিদ দেয় (তাহলে তা ভাল) আর যদি কেউ এসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে তাহলে তাকে আমি বিরাট প্রতিদান দেবো। (সূরা নিসা-৪:১১৪) 

وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ أَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ وَ عَلَی الْمَوْلُوْدِ لَهٗ رِزْقُهُنَّ وَ كِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا لَا تُضَآرَّ وَالِدَةٌۢ بِوَلَدِهَا وَ لَا مَوْلُوْدٌ لَّهٗ بِوَلَدِهٖ وَ عَلَی الْوَارِثِ مِثْلُ ذٰلِكَ ۚ فَاِنْ اَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَ تَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَیْهِمَا وَ اِنْ اَرَدْتُّمْ أَنْ تَسْتَرْضِعُوْۤا اَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَیْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُمْ مَّاۤ اٰتَیْتُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ.

৪. আর মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে, (এটা) তার জন্য যে দুধ পান করাবার সময় পূর্ণ করতে চায়। আর পিতার ওপর কর্তব্য, বিধি মোতাবেক মায়েদেরকে খাবার ও পোশাক প্রদান করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় না। কষ্ট দেয়া যাবে না কোন মাকে তার সন্তানের জন্য, কিংবা কোন বাবাকে তার সন্তানের জন্য। আর ওয়ারিশের ওপর রয়েছে অনুরূপ দায়িত্ব। অতপর তারা যদি পরস্পর সম্মতি ও পরামর্শের মাধ্যমে দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে তাদের কোন পাপ হবে না। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে অন্য কারো থেকে দুধ পান করাতে চাও, তাহলেও তোমাদের ওপর কোন পাপ নেই, যদি তোমরা বিধি মোতাবেক তাদেরকে যা দেবার তা দিয়ে দাও। আর তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্ল¬াহ তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা বাকারা-২ : ৩৩)









আল হাদিস

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺإِذَا كَانَ أُمَرَا ئُكُمْ خِيَارَكُمْ وَ اَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَائَـكُمْ وَ أُمُوْرُكُمْ شُوْرٰى بَيْنَكُمْ فَظَهْرُ الْاَرْضَ خَيْرٌ لَّكُمْ مِنْ بَطْنِهَا وَ إِذَا كَانَ اُمَرَائُكُمْ شِرَارَكُمْ وَاَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلَائَـكُمْ وَ اُمُوْرُكُمْ إِلٰى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الْارْضِ خَيْرٌ لَّكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا ـ (تِرْمِذِيْ : بَابَ مَا جَاءَ فِي النَّهْىِ عَنْ سَبِّ الرِّيَاحِ ، ضَعَّفَهُ الْاَلْبَانِىْ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, যখন তোমাদের নেতারা হবেন ভালো মানুষ, ধনীরা হবেন দানশীল এবং তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে তখন মাটির উপরিভাগ নিচের ভাগ হতে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নেতারা হবে খারাপ লোক, ধনীরা হবে কৃপণ এবং নেতৃত্ব যাবে নারীদের হাতে, তখন পৃথিবীর উপরের অংশের চেয়ে নিচের অংশ হবে উত্তম। (তিরমিজি : বাবু মা জা’আ ফিন নাহি আন সাব্বির রিয়াহি, ২১৯২, আলবানী একে দুর্বল বলেছেন)

عَنْ عَائِشَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ الله وَ اَثْنٰى عَلَيْهِ وَ قَالَ مَا تُشِيْرُوْنَ عَلَىَّ فِيْ قَوْمٍ يَسُبُّوْنَ أَهْلِىْ مَا عَلِمْتُ عَلَيْهِمْ مِنْ سُوْءٍ قَطْ ـ (بُخَارِيْ : بَابَ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰى (وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ)

২. হজরত আয়েশা "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #   লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পরে তিনি বললেন, যারা আমার পরিবারের কুৎসা করে বেড়াচ্ছে, তাদের সম্পর্কে আমার প্রতি তোমাদের কী পরামর্শ আছে? আমি কখনও তাদের মধ্যে কোনরূপ মন্দ কিছু দেখি নাই। (বুখারি: বাবু ক্বাওলিল্লাহি তাআলা ‘ওয়া আমরুহুম শুরা বাইনাহুম’ ৬৮২২)


২৩. ইহতেসাব : اَلْاِحْتِسَابُ

আল-কুরআন

اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِیْ غَفْلَةٍ  مُّعْرِضُوْنَ  

১. লোকদের হিসাব-নিকাশের সময় খুব কাছে এসে গেছে। অথচ তারা গাফলতির মধ্যে পড়ে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। (সূরা আম্বিয়া-২১: ১)

وَ لَوْ شَآءَ اللّٰهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ لٰكِنْ یُّضِلُّ مَنْ یَّشَآءُ وَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ لَتُسْئَلُنَّ عَمَّا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ.

২. আল্লাহর যদি এটাই ইচ্ছা হতো (যে, তোমাদের মধ্যে কোনো রকম মতভেদ না হোক) তাহলে তোমাদেরকে তিনি একই উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু যাকে ইচ্ছা তিনি গোমরাহ করেন, আর যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দেন। আর অবশ্যই তোমাদের সব আমল সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা নাহল-১৬ : ৯৩)

وَ إِنَّه  لَذِكْرٌ لَّكَ وَ لِقَوْمِكَ وَ سَوْفَ تُسْئُلُوْنَ .

৩. আসলে সত্য হলো, এ কিতাব আপনার ও আপনার কওমের জন্য বিরাট মর্যাদার বিষয় এবং এ জন্য তোমাদেরকে শিগগিরই জবাবদিহি করতে হবে। (সূরা যুখরুফ-৪৩: ৪৪)

إِنَّ  اِلَیْنَا  اِیَابَهُمْ ক্স ثُمَّ  إِنَّ  عَلَیْنَا حِسَابَهُمْ .

৪. এদেরকে আমারই দিকে ফিরে আসতে হবে। এরপর তাদের হিসাব নেয়া আমারই দায়িত্ব। (সূরা গাশিয়াহ, ৮৮: ২৫-২৬)

ثُمَّ لَتُسْـئَلُنَّ یَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِیْمِ.

৫. তারপর সেদিন (দুনিয়ার সব) নিয়ামত সম্বন্ধে অবশ্যই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সূরা তাকাসুর-১০২: ৮)

فَلَنَسْـَٔلَنَّ الَّذِیْنَ اُرْسِلَ اِلَیْهِمْ وَ لَنَسْئَلَنَّ الْمُرْسَلِیْنَ.

৬. সুতরাং আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব যাদের নিকট রাসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই আমি প্রেরিতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। (সূরা আরাফ-৭ : ৬)


আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ اَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْاِمَامُ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالرَّجُلُ فِيْ اَهْلِه رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْئَةُ فِيْ بَيْتِ زَوْجِهَا رَاعِيَةٌ وَهِىَ مَسْئُوْلٌ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ فِيْ مَالِ سَيِّدِه رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ رَعِيَّتِهِ قَالَ فَسَمِعْتُ هٰؤُلَاءِ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَاَحْسِبُ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ وَالرَّجُلُ فِيْ مَالِ اَبِيْهِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه- (بُخَارِيْ : بَابُ الْعَبْجِ رَاعٍ فِيْ مَالِ سَيِّدِهِ وَلَا يَعْمَلُ إِلَّا بِاِذْنِه)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ #   কে বলতে শুনেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। শাসক একজন দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী স্বামীর সংসারের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আর চাকর তার মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। সেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইবনে ওমর "    বলেন, আমি এ কথাগুলো রাসূলুল্লাহ #    থেকে শুনেছি। আমার ধারণা হচ্ছে তিনি এ কথাও বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার পিতার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। সেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। (বুখারি : বাবুল আবদে রায়িন ফী মালি সায়্যিদিহি, ২২৩২)






২৪. সবর : اَلصَّبْرُ

আল-কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِ إِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ.

১. হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্ল¬াহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা-২ : ১৫৩)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَ صَابِرُوْا وَ رَابِطُوْا وَ اتَّقُوْا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

২. হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্ল¬াহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা নাহল-১৬ : ৯৩)

فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِیْلًا

৩. অতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ কর।  (সূরা মা’আরিজ-৭০ : ৫)

وَ اصْبِرْ وَ مَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللّٰهِ وَ لَا تَحْزَنْ عَلَیْهِمْ وَ لَا تَكُ فِیْ ضَیْقٍ مِّمَّا یَمْكُرُوْنَ

৪. ধৈর্যের সাথে কাজ করতে থাক। তোমার এ সবর আল্লাহরই তাওফিকের ফল। তাদের কার্যকলাপে দুঃখবোধ করো না এবং তারা যত চালবাজি করছে তাতে মন ছোট করো না। (সূরা নাহল, ১৬ : ১২৭)

فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُوا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَ لَا تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ كَاَنَّهُمْ یَوْمَ یَرَوْنَ مَا یُوْعَدُوْنَ لَمْ یَلْبَثُوْۤا إِلَّا سَاعَةً مِّنْ نَّهَارٍ بَلٰغٌ فَهَلْ یُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفٰسِقُوْنَ.

৫. অতএব তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল সুদৃঢ় সংকল্পের অধিকারী রাসূলগণ। আর তাদের জন্য তাড়াহুড়া করো না। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল, যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, মনে হবে তারা পৃথিবীতে এক দিনের কিছু সময় অবস্থান করেছে। সুতরাং এটা এক ঘোষণা, তাই পাপাচারী কওমকেই ধ্বংস করা হবে।  (সূরা আহকাফ-৪৬ : ৩৫)

وَ لَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰی مَا كُذِّبُوْا وَ اُوْذُوْا حَتّٰی اَتٰىهُمْ نَصْرُنَا وَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِ اللّٰهِ وَ لَقَدْ جَآءَكَ مِنْ نَّبَاِی الْمُرْسَلِیْنَ.

৬. আর অবশ্যই তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে অস্বীকার করা হয়েছে, অতপর তারা তাদেরকে অস্বীকার করা ও কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেছে, যতক্ষণ না আমার সাহায্য তাদের কাছে এসেছে। আর আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং অবশ্যই রাসূলগণের কিছু সংবাদ তোমার কাছে এসেছে। (সূরা আনআম-৬ : ৩৪)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِیْنَ عَلَی الْقِتَالِ اِنْ یَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صٰبِرُوْنَ یَغْلِبُوْا مِائَتَیْنِ وَ اِنْ یَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ یَّغْلِبُوْۤا اَلْفًا مِّنَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا یَفْقَهُوْنَ.

৭. হে নবি, তুমি মুমিনদেরকে লড়াইয়ে উৎসাহ দাও, যদি তোমাদের মধ্য থেকে বিশজন ধৈর্যশীল থাকে, তারা দু’শ জনকে পরাস্ত করবে, আর যদি তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকে, তারা কাফিরদের এক হাজার জনকে পরাস্ত করবে। কারণ, তারা (কাফিররা) এমন কওম যারা বুঝে না। (সূরা আনফাল-৮ : ৬৫)

فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَ لَا تَكُنْ كَصَاحِبِ الْحُوْتِ اِذْ نَادٰی وَ هُوَ مَكْظُوْمٌ.

৮. অতএব তুমি তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্যধারণ কর। আর তুমি মাছওয়ালার মত হয়ো না, যখন সে দুঃখে কাতর হয়ে ডেকেছিল। (সূরা কালাম-৬৮ : ৪৮)

وَ ذَرْنِیْ وَ الْمُكَذِّبِیْنَ اُولِی النَّعْمَةِ وَ مَهِّلْهُمْ قَلِیْلًا.

৯. আর ছেড়ে দাও আমাকে এবং বিলাস সামগ্রীর অধিকারী মিথ্যারোপকারীদেরকে। আর তাদেরকে কিছুকাল অবকাশ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল-৭৩ : ১১)




আল হাদিস

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لَيْسَ الشَّدِيْدُ بِالصُّرْعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيْدُ الَّذِيْ يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْحَذَرِ مِنَ الْغَضَبِ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, যে  ব্যক্তি লোককে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় সে বাহাদুর নয়, বরং প্রকৃত বাহাদুর তো সেই যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (বুখারি : বাবুল হাযারি মিনাল গাদাবি, ৫৬৪৯, মুসলিম : বাবু ফাদলি মান ইয়ামলিকু নাফসাহু ইনদাল গাদাবি, ৪৭২৩)

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَاْتِىْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ اَلصَّابِرُ فِيْهِمْ عَلَى دِيْنِه كَالْقَابِضِ عَلٰى الْجَمْرِ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ النَّهْىِ عَنْ سَبِّ الرِّيَاحِ)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন দীনের ওপর অবিচল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হবে হাতে জ্বলন্ত কয়লা ধারণকারী ব্যক্তির মত। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ ফিন নাহয়ি আন সাব্বির রিয়াহ, ২১৮৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِىِّ اللهِ ﷺ اَوْصِنِىْ قَالَ لَا تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لَا تَغْضَبْ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْحَذَرِ مِنَ الْغَضَبِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবি  #   কে বলল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি (রাসূল) বললেন, রাগ করো না। সে ব্যক্তি বারবার একই কথা বলতে থাকল আর নবি #    ও প্রতিবার বলেন, রাগ করো না। (বুখারি  : বাবুল হাযারে মিনাল গাদবি, ৫৬৫১)

عَنْ صُهَيْبٍ قَال قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَجَبًا لِاَمْرِ الْمُؤْمِنِ اَنَّ اَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِاَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ اِنْ اَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّه وَاِنْ اَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَه- (مُسْلِمْ : بَابُ الْمُؤْمِنِ اَمْرُهُ كُلُّهُ خَيْرٌ)

৪. হজরত সুহাইব "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, মুমিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্যের ব্যাপার এরূপ নয়। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে সে আল্লাহর শোকর করে। তাতে তার মঙ্গল হয়। আবার ক্ষতিকর কিছু হলে সে ধৈর্য ধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম : বাবুল মুমিনি আমরুহু কুল্লুহ খাইর, ৫৩১৮)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَال قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا تَجَرَّعَ عَبْدٌ جَرْعَةً اَفْضَلَ عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ جَرْعَةِ غَيْظٍ يَكْظِمُهَا اِبْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ تَعَالٰى- (اَحْمَدْ : مُسْنَدُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, মানুষ যেসব বস্তুর ঢোক গ্রহণ করে তন্মধ্যে সেই ঢোকটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম যেটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে মানুষ গ্রহণ করে থাকে। (আহমাদ : মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, ৫৮৪০)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىْ اَنَّ نَاسًا مِنَ الْأَنْصَارِ سَاَلُوْا  رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَاَعْطَاهُمْ ثُمَّ سَاَلُوْهُ فَاعْطَاهُمْ حَتّٰى إِذَا نَفِدَ مَا عِنْدَهُ قَالَ مَا يَكُنْ عِنْدِىْ مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ اَدَّخِرُه عَنْكُمْ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ وَمَنْ يَصْبِرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ وَمَا اُعْطِىَ اَحَدٌ مِنْ عَطَاءٍ خَيْرٌ وَاَوْسَعُ مِنَ الصَّبْرِ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ التَّعَفُّفِ وَالصَّبْرِ)

৬. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "   থেকে বর্ণিত। আনসারদের মধ্যে কিছু লোক রাসূলুল্লাহ  #    এর নিকট (কিছু সম্পদ) চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। অতপর তারা আবারো চাইল তখন তিনি তাদেরকে দিলেন। এমনকি তাঁর নিকট যা ছিল, যখন তা শেষ হয়ে গেল তখন তিনি বললেন, আমার নিকট যখনি কোন সম্পদ থাকে তোমাদেরকে না দিয়ে তা আমি জমিয়ে রাখি না। আর যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে মুক্ত রাখেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্য্য ধারণের চেষ্টা করে আল্লাহ তাকে ধৈর্যের শক্তি দান করেন। কোন ব্যক্তিকে কল্যাণকর যা দেয়া হয়, তন্মধ্যে ধৈর্যই সবচেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত। (মুসলিম : বাবু ফাদলিত তায়াফ্ফুফি ওয়াস সাবরি, ১৭৪৫)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىْ وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ ﷺ قَالَ مَا يُصِيْبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلَا وَصَبٍ وَلَا هَمٍّ وَلَا حُزْنٍ وَلَا اَذًى وَلَا غَمٍّ حَتّٰى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلَّا كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ كَفَّارَةِ الْمَرَضِ)

৭. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "   ও আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, কোনো মুসলিম ব্যক্তি মানষিক বা শারীরিক কষ্ট পেলে, কোন শোক বা দুঃখ পেলে, অথবা চিন্তাগ্রস্থ হলে (সে যদি ধৈর্যধারণ করে তাহলে) প্রতিদানে আল্লাহ তাআলা তার সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। এমনকি যদি সামান্য একটি কাঁটাও পায়ে বিঁধে তাও তার গুনাহ মাফের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (বুখারি : বাবু মা জা আ ফি কাফফারাতিল মারাদি, ৫২১০)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِيْ نَفْسِه وَوَلَدِه وَمَالِه حَتّٰى يَلْقٰى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيْئَةٌ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الصَّبْرِ عَلٰى الْبَلَاءِ)

৮. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, মুমিন নর নারীর জান, মাল ও সন্তানের ওপর বিপদ আপদ আসতেই থাকে, অবশেষে আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার আর কোন গুনাহ থাকে না। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ ফিস সাবরি আলাল বালায়ি, ২৩২৩)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالٰى مَا لِعَبْدِىْ الْمُؤْمِنِ عِنْدِىْ جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّه مِنْ اَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلَّا الْجَنَّةُ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْعَمَلِ الَّذِيْ يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ فِيْهِ سَعْدٌ)

৯. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার মুমিন বান্দাহর জন্য আমার নিকট জান্নাত ছাড়া আর কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয়জন নিয়ে নেই আর সে সাওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করে। (বুখারি : বাবুল আমালিল লাজি ইউবতাগা বিহি ওয়াজহুল্লাহ, ৫৯৪৪)

عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ قَالَ إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِىْ بِحَبِيْبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الْجَنَّةَ يُرِيدُ عَيْنَيْهِ- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ ذَهَبَ بَصَرُهُ)

১০. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি যখন আমার বান্দাহকে তার দুটি প্রিয় বস্তুর মাধ্যমে পরীক্ষা করি অর্থাৎ তার দুটি চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করে দেই, আর তাতে সে সবর করে, তখন আমি তাকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করি। (বুখারি : বাবু ফাদলি মান যাহাবা বাসারুহু, ৫২২১)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ يُّرِيْدُ اللهُ بِه خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ كَفَّارَةِ الْمَرَضِ)

১১. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন। (বাবু মা জা আ ফি কাফফারাতিল মারাদি, ৫২১৩)

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ الْمَوْتَ لِضُرِّ نَزَلَ بِهِ فَاِنْ كَانَ لَا بُدَّ مُتَمَنِّيًا لِلْمَوْتِ فَلْيَقُلْ اَللّٰهُمَّ اَحْيِنِىْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِّىْ وَتَوَفَّنِىْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِّىْ- (بُخَارِيْ : بَابُ الدُّعَاءِ بِالْمَوْتِ وَالْحَيَاةِ)

১২. হজরত আনাস "    থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, তোমাদের কারও কোন বিপদ বা কষ্ট হলে সে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কেউ এরূপ করতেই চায়, সে যেন বলে হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর। যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর তখন আমাকে মৃত্যু দাও। (বুখারি ; বাবুদ দুয়ায়ি বিল মাওতি ওয়াল হায়াতি, ৫৮৭৪)






















২৫. আত-তাওয়াক্কুল বিল্লাহ :  اَلتَّوَكُّلْ بِاللهِ

আল-কুরআন

وَّ یَرْزُقْهُ مِنْ حَیْثُ لَا یَحْتَسِبُ وَ مَنْ یَّتَوَكَّلْ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسْبُهٗ إِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمْرِهٖ ؕ قَدْ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَیْءٍ قَدْرًا.

১. এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সূরা তালাক-৬৫ : ৩)

فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ وَ اُفَوِّضُ اَمْرِیْۤ اِلَی اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ.

২. আমি তোমাদেরকে যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে। আর আমার বিষয়টি আমি আল্ল¬াহর নিকট সমর্পণ করছি; নিশ্চয় আল্ল¬াহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সর্বদ্রষ্টা। (সূরা মুমিন-৪০ : ৪৪)

اَلَّذِیْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِیْمَانًا وَّ قَالُوْا حَسْبُنَا اللّٰهُ وَ نِعْمَ الْوَكِیْلُ.

৩. যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’!  (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৭৩)

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنْكُمْ وَ مِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَ بَدَا بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَ الْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰی تُؤْمِنُوْا بِاللّٰهِ وَحْدَهٗۤ إِلَّا قَوْلَ اِبْرٰهِیْمَ لِاَبِیْهِ لَاَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَ مَاۤ اَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللّٰهِ مِنْ شَیْءٍ رَبَّنَا عَلَیْكَ تَوَكَّلْنَا وَ اِلَیْكَ اَنَبْنَا وَ اِلَیْكَ الْمَصِیْرُ.

৪. ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পর্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের-তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: ‘আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না।’ হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্র্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে। (সূরা মুমতাহিনা, ৬০ : ৪)

وَّ تَوَكَّلْ عَلَی اللّٰهِ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ وَكِیْلًا.

৫. আর তুমি আল্ল¬াহর ওপর তাওয়াক্কুল কর এবং কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব-৩৩ : ৩)

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ ۚ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ ۪ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَی اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ.

৬. অতপর আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর। অতপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্ল¬াহর ওপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্ল¬াহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৫৯)

وَ لَىِٕنْ سَاَلْتَهُمْ مَّنْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ لَیَقُوْلُنَّ اللّٰهُ قُلْ اَفَرَءَیْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ اِنْ اَرَادَنِیَ اللّٰهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كٰشِفٰتُ ضُرِّهٖۤ اَوْ اَرَادَنِیْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكٰتُ رَحْمَتِهٖ قُلْ حَسْبِیَ اللّٰهُ عَلَیْهِ یَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُوْنَ.

৭. আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে ‘আল্ল¬াহ’। বল, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছÑ আল্ল¬াহ আমার কোন ক্ষতি চাইলে তোমরা আল্ল¬াহর পরিবর্তে যাদের ডাক তারা কি সেই ক্ষতি দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমাকে রহমত করতে চাইলে তারা সেই রহমত প্রতিরোধ করতে পারবে’? বল, ‘আমার জন্য আল্ল¬াহই যথেষ্ট’। তাওয়াক্কুলকারীগণ তাঁর ওপরই তাওয়াক্কুল করে। (সূরা যুমার-৩৯ : ৩৮)

قُلْ یٰعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰی أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا إِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.

৮. বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্ল-াহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্ল¬াহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা যুমার-৩৯ : ৫৩)


আল হাদিস

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ اَنَّهُ سَمِعَ نَبِىَّ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ عَلٰى اللهِ حَقَّ تَوَكَّلِه لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُوْ خِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا- (اَحْمَدُ : اَوَّلُ مُسْنَدِ عُمَرَ)

১. হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব "   থেকে বর্ণিত। তিনি নবি কারীম #    কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যদি সত্যিকারভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা কর তবে তিনি পাখিদের মতই তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। প্রত্যুষে পাখিরা খালি পেটে বেরিয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (আহমদ : আওয়ালু মুসনাদে ওমর, ২০০)

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ اَعْقِلُهَا وَاَتَوَكَّلُ اَوْ اُطَلِّقُهَا وَاَتَوَكَّلُ قَالَ اِعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اَوَانِىْ الْحَوْضِ)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল #   ! আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব, না বন্ধনমুক্ত করে? তিনি বললেন, উট বেঁধে নাও, অতপর আল্লাহর ওপর ভরসা কর। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ ফি সিফাতি আওয়ানিল হাওদি, ২৪৪১)

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ (حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ) قَالَهَا اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ اُلْقِىَ فِيْ النَّارِ وَقَالَهَا مُحَمَّدٌ ﷺ حِيْنَ قَالُوْا (إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانً وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ نِعْمَ الْوَكِيْلُ)- (بُخَارِيْ : بَابُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "   থেকে বর্ণিত। ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকিল’ এই দুআটি ইবরাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন। আর মুহাম্মদ  #   এটি বলেছিলেন তাকে যখন বলা হয়েছিল, ‘মানুষ সকল তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে অতএব তোমরা তাদের ভয় কর।’ (এ কথা শুনে) তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেল এবং তারা বলল, ‘আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ এবং তিনিই আমাদের উত্তম অভিভাবক।’ (বুখারি : বাবু ইন্নান নাসা ক্বাদ জামাউ লাকুম ফাখশাউহুম, ৪১৯৭)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَ جَلَّ إِذَا تَقَرَّبَ عَبْدِىْ مِنِّىْ شِبْرًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ ذِرَاعًا وَإِذَا تَقَرَّبَ مِنِّىْ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا اَوْ بُوْعًا وَإِذَا اَتَانِىْ يَمْشِىْ اَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ الذِّكْرِ وَالدُّعَاءِ وَالتَّقَرُّبِ اِلَى اللهِ تَعَالٰى)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "   রাসূল  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যখন আমার বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তাঁর দিকে এক হাত অগ্রসর হই, যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, তখন আমি এক গজ অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে, তখন আমি তার দিকে দৌঁড়িয়ে যাই। (মুসলিম : বাবু ফাদলিয যিকরি ওয়াদ দুআ-ই ওয়াত তার্কারুবি ইলাল্লাহি, ৪৮৫০)

عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ اَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ إِذَا خَرَجَ الرَّجُلُ مِنْ بَيْتِه فَقَالَ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلٰى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ قَالَ يُقَالُ حِيْنَئِذٍ هُدِيَتَ وَكُفِيْتَ وَوُقِيْتَ فَتَتَنَحّٰى لَه الشَّيْاطِيْنُ فَيَقُوْلُ لَه شَيْطَانٌ آخَرُ كَيْفَ لَكَ بِرَجٌلٍ قَدْ هُدِىَ وَكُفِي وَوُقِىَ- (اَبُوْ دَاودَ  : بَابُ مَا يَقُوْلُ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِه)

৫. হজরত আনাস ইবনে মালিক "    বর্ণনা করেন, নবি করিম  #    বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি তাঁর বাড়ি থেকে বের হয়ে বলে ‘আমি মহান আল্লাহর নামে (বের হলাম), তার ওপর ভরসা করলাম এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো শক্তি সামর্থ নেই তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়াত পেয়েছ, তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং তোমাকে রক্ষা করা হয়েছে। অতপর শয়তান তার থেকে সরে যায় এবং এক শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, ‘এমন ব্যক্তির ব্যাপারে তুমি কীভাবে সফল হবে যাকে বলা হয়েছে, ‘তুমি হেদায়াত পেয়েছ, তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং তোমাকে রক্ষা করা হয়েছে। (আবু দাউদ : বাবু মা ইয়াকুলু ইযা খারাজা মিন বাইতিহি, ৪৪৩১)














২৬. ওয়াদা পালন : اِيْفَاءُ الْوَعْدِ

আল-কুরআন

وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ.

১. আর যারা নিজেদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান। (সূরা মুমিনুন-২৩ : ৮)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ اُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِیْمَةُ الْأَنْعَامِ إِلَّا مَا یُتْلٰی عَلَیْكُمْ غَیْرَ مُحِلِّی الصَّیْدِ وَ أَنْتُمْ حُرُمٌ إِنَّ اللّٰهَ یَحْكُمُ مَا یُرِیْدُ.

২. হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, তোমাদের নিকট যা বর্ণনা করা হচ্ছে তা ছাড়া। তবে ইহরাম অবস্থায় শিকারকে হালাল করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা বিধান দেন। (সূরা মায়িদা-৫ : ১)

وَ لَقَدْ كَانُوْا عَاهَدُوا اللّٰهَ مِنْ قَبْلُ لَا یُوَلُّوْنَ الْاَدْبَارَ ؕ وَ كَانَ عَهْدُ اللّٰهِ مَسْئُوْلًا.

৩. আর এরা পূর্বেই আল্ল¬াহর সাথে অংগীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আর আল্ল¬াহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সূরা আহযাব-৩৩ : ১৫)

وَ اَوْفُوْا بِعَهْدِ اللّٰهِ إِذَا عٰهَدْتُّمْ وَ لَا تَنْقُضُوا الْاَیْمَانَ بَعْدَ تَوْكِیْدِهَا وَ قَدْ جَعَلْتُمُ اللّٰهَ عَلَیْكُمْ كَفِیْلًا إِنَّ اللّٰهَ یَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ.

৪. আল্লাহর সাথে যখন কোনো মযবুত ওয়াদা কর তখন তা পালন কর। আর পাকা কসম খাওয়ার পর তা ভেঙ্গে ফেল না। অথচ তোমরা আল্লাহকে তোমাদের ওপর সাক্ষী বানিয়েছ। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সবই জানেন। (সূরা নাহল, ১৬ : ৯১)

قُلْ اَرَءَیْتُمْ شُرَكَآءَكُمُ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ اَرُوْنِیْ مَا ذَا خَلَقُوْا مِنَ الْاَرْضِ اَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِی السَّمٰوٰتِ اَمْ اٰتَیْنٰهُمْ كِتٰبًا فَهُمْ عَلٰی بَیِّنَتٍ مِّنْهُ بَلْ اِنْ یَّعِدُ الظّٰلِمُوْنَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا إِلَّا غُرُوْرًا.

৫. বল, ‘তোমরা আল্ল¬াহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, সেই শরীকদের কথা ভেবে দেখেছ কি? আমাকে দেখাও তারা যমীনের কী সৃষ্টি করেছে? অথবা আসমানসমূহের মধ্যে কি তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে? অথবা আমি কি তাদেরকে কোন কিতাব দিয়েছি, যার কোন সুস্পষ্ট প্রমাণের ওপর তারা আছে’? বরং যালিমরা একে অপরকে কেবল প্রতারণামূলক ওয়াদাই দিয়ে থাকে।  (সূরা ফাতির-৩৫ : ৪০)

وَ لَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ إِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ وَ اَوْفُوْا بِالْعَهْدِ ۚ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا.

৬. আর তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের কাছে যেয়ো না সুন্দরতম পন্থা ছাড়া, যতক্ষণ না সে বয়সের পূর্ণতায় উপনীত হয়। আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৩৪)




















আল হাদিস

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ، وَإِذَا اُؤْتُمِنَ خَانَ- (بُخَارِيْ : بَابُ عَلَامَةِ الْمُنَافِقِ، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ خِصَالِ الْمُنَافِقِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি কারীম #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি। ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা কথা বলে। ২. যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় বিশ্বাসঘাতকতা করে। (বুখারি : বাবু আলামাতিল মুনাফিকি, ৩২, মুসলিম বাবু বায়ানি খিসালিল মুনাফিকে, ৮৯)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو اَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ اَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ الْمُنَافِقِ حَتّٰى يَدَعَهَ إِذَا اُؤْتُمِنَ خَانَ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَاِذَ عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ- (بُخَارِيْ : بَابُ عَلَامَةِ الْمُنَافِقِ، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ خِصَالِ الْمُنَافِقِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    বর্ণনা করেন, নবি করিম #    বলেন, চারটি গুণ যার মাঝে আছে সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মাঝে চারটির যে কোন একটি রয়েছে, তার মাঝে নিফাকের একটি চিহ্ন রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তা না ছাড়ে। ১. যখন আমানত রাখা হয় খেয়ানত করে। ২. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। ৩. যখন চুক্তি করে তা লংঘন করে। ৪. এবং যখন ঝগড়া করে গালাগালি করে। (বুখারি : বাবু আলামাতিল মুনাফিকে, ৩৩, মুসলিম : বাবু বায়ানি খিসালিল মুনাফিকি, ৮৮)

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  ﷺ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لَه بِقَدْرِه اَلَا وَلَا غَادِرَ اَعْظَمُ غَدْرًا مِنْ اَمِيْرِ عَامَّةٍ- (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الْغَدْرِ)

৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরী "    বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রত্যেকটি প্রতারকের জন্যে (প্রতারণার নিদর্শনস্বরূপ) একটি করে পতাকা থাকবে। তার প্রতারণার পরিমাণ অনুযায়ী তাদের পতাকাসমূহ উচু-নিচু করা হবে। জেনে রাখ! জননেতার চেয়ে বড় কোন প্রতারক হতে পারে না। (মুসলিম: বাবু তাহরিমিল গাদরি, ৩২৭২)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ قَالَ اللهُ تَعَالَى ثَلَاثَةٌ اَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ اَعْطَى بِىْ ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَاَكَلَ ثَمَنَهُ وَرَجُلٌ اِسْتَأْجَرَ اَجِيْرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ اَجْرَهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ اِثْمِ مَنْ بَاعَ حُرًّا)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন আমি স্বয়ং অবস্থান করব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করেছে। ২. যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তাঁর মূল্য ভোগ করেছে। ৩. যে ব্যক্তি কোন শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করে পূর্ণ কাজ আদায় করে নেয়, অথচ তার বিনিময় দেয় না। (বুখারি : বাবু ইসমে মান বাআ হুররান, ২০৭৫)












২৭. আমানতদারি : اَلْاَمَانَةُ

আল-কুরআন

وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ.

১. আর যারা নিজেদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান। (সূরা মুমিনুন-২৩ : ৮)

إِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰی اَهْلِهَا وَ إِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِیْعاً ۢ بَصِیْرًا.

২. নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফায়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফায়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা-৪ : ৫৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ وَ تَخُوْنُوْۤا اَمٰنٰتِكُمْ وَ أَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

৩. হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের খিয়ানত করো না। আর খিয়ানত করো না নিজেদের আমানতসমূহের, অথচ তোমরা জান। (সূরা আনফাল-৮ : ২৭)

إِنَّا عَرَضْنَا الْاَمَانَةَ عَلَی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ الْجِبَالِ فَاَبَیْنَ أَنْ یَّحْمِلْنَهَا وَ اَشْفَقْنَ مِنْهَا وَ حَمَلَهَا الْاِنْسَانُ إِنَّهٗ كَانَ ظَلُوْمًا جَهُوْلًا.

৪. নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এ (কুরআন) আমানত পেশ করেছি, অতপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছে এবং এতে ভীত হয়েছে। আর মানুষ তা বহন করেছে। নিশ্চয় সে ছিল অতিশয় যালিম, একান্তই অজ্ঞ। (সূরা আহযাব, ৩৩ : ৭২)

وَ اِنْ كُنْتُمْ عَلٰی سَفَرٍ وَّ لَمْ تَجِدُوْا كَاتِبًا فَرِهٰنٌ مَّقْبُوْضَةٌ فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْیُؤَدِّ الَّذِی اؤْتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَ لْیَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ وَ لَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَ مَنْ یَّكْتُمْهَا فَإِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِیْمٌ.

৫. আর যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বস্ত মনে কর, তবে যাকে বিশ্বস্ত মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং নিজ রব আল্ল¬াহর তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না এবং যে কেউ তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী। আর তোমরা যা আমল কর, আল্ল¬াহ সে ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত। (সূরা বাকারা-২ : ২৮৩)


আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اَرْبَعٌ إِذَا كَانَ فِيْكَ لَا يَضُرُّكَ مَا فَاتَكَ مِنْ الدُّنْيَا حِفْظُ اَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيْثٍ وَحُسْنُ خَلِيْقَةٍ وَعِفَّةُ طُعْمَةٍ- (حَاكِمٌ : بَابُ اَرْبَعٌ إِذَا كَانَ فِيْكَ لَا يَضُرُّكَ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    নবি কারীম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমার সাথে চারটি জিনিস থাকলে পৃথিবীর সব হারিয়ে ফেললেও তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ১. আমানতের সংরক্ষণ। ২. সত্যবাদিতা। ৩. উত্তম চরিত্র। ৪. পবিত্র রিজিক। (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম : বাবুন আরবাউন ইয়া কানা ফিকা লা ইয়াদুরুকা, ৭৯৮৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَدِّ الْاَمَانَةَ اِلَى مَنِ ائْتَمَنَكَ وَلَا تَخُنْ مَنْ خَانَكَ- (اَبُوْ دَاودَ  : بَابُ فِيْ الرَّجُلِ يَاْخُذُ حَقَّه)

২. হজরত আবু হুরায়রা "  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, যে তোমার নিকট আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না। (আবু দাউদ : বাবুন ফির রাজুলি ইয়াখুজু হাক্কাহু, ৩০৬৮)

عَنْ سُلَيْمِ بْنِ عَامِرٍ قَالَ كَانَ بَيْنَ مُعَاوِيَةَ وَبَيْنَ اَهْلِ الرُّوْمِ عَهْدٌ وَكَانَ يَسِيْرُ فِيْ بِلَادِهِمْ حَتّٰى إِذَا انْقَضٰى الْعَهْدُ اَغَارَ عَلَيْهِمْ فَإِذَا رَجُلٌ عَلٰى دَابَّةٍ اَوْ عَلَى فَرَسٍ وَهُوَ يَقُوْلُ اللهُ اَكْبَرُ وَفَاءٌ لَا غَدْرٌ وَإِذَا هُوَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ فَسَاَلَهُ مُعَاوِيَةُ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  ﷺ يَقُوْلُ مَنْ كَانَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَوْمٍ عَهْدٌ فَلَا يَحُلَّنَّ عَهْدًا وَلَا يَشُدَّنَّهُ حَتّٰى يَمْضِىَ اَمَدُهُ اَوْ يَنْبِذَ اِلَيْهِمْ عَلَى سَوَاءٍ قَالَ فَرجَعَ مُعَاويَةُ بِالنَّاسِ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الْغَدْرِ)

৩. হজরত সুলায়েম ইবনে আমের "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত মুয়াবিয়া ও রোমবাসীর মাঝে একটি চুক্তি লিপিবদ্ধ ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ না হতেই মুয়াবিয়া "   তার বাহিনী নিয়ে রোম সীমান্তের দিকে রওয়ানা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, চুক্তি মেয়াদ শেষ হতেই তিনি তাদের ধাওয়া করবেন। পথিমধ্যে তার নিকট উপস্থিত হলো এক ঘোড় সাওয়ার। তিনি বলেছেন, আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার চুক্তি রক্ষা করো, চুক্তি ভঙ্গ করো না। তার দিকে তাকাতেই মুয়াবিয়া "   দেখলেন, তিনি আমর বিন আবাসা "  । মুয়াবিয়া "    বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #   কে বলতে শুনেছি, যার সাথে কোন সম্প্রদায়ের চুক্তি তার পক্ষে চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে তাতে কোন পরিবর্তন সাধন করা বৈধ নয়। তার পরে এটাও বৈধ নয় যে, সে চুক্তি শত্রুর পক্ষে নিক্ষেপ করবে। হাদিস শুনে মুয়াবিয়া "   তার সৈন্য নিয়ে ফিরে আসলেন। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ ফিল গাদরি, ১৫০৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا ضُيِّعَتِ الْاَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ قَالَ كَيْفَ اِضَاعَتُهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا اُسْنِدَ الْاَمْرُ اِلَى غَيْرِ اَهْلِه فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ- (بُخَارِيْ : بَابُ رَفْعِ الْاَمَانَةِ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "    বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, যখন আমানত নষ্ট হয়ে যাবে, তখন তুমি কেয়ামতের অপেক্ষা কর। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল #   কীভাবে আমনত নষ্ট হয়? রাসূল #    বললেন, যখন অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তুমি কেয়ামতের অপেক্ষা কর।  (বুখারি : বাবু রফয়িল আমানাতি, ৬০১৫)


























২৮. অহঙ্কারের পরিণাম : عَاقِبَةُ الْكِبْرِ

আল-কুরআন

وَاعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَالْمَسٰكِیْنِ وَالْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِیْلِ وَمَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ إِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا.

১. তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়Ñ প্রতিবেশী, অনাত্মীয়Ñ প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক অহঙ্কারী। (সূরা নিসা-৪ : ৩৬)

وَ لَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمْشِ فِی الْاَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ.

২. ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না’। (সূরা লুকমান-৩১ : ১৮)

 لِّكَیْلَا تَاْسَوْا عَلٰی مَا فَاتَكُمْ وَ لَا تَفْرَحُوْا بِمَاۤ اٰتٰىكُمْ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرِ.

৩. যাতে তোমরা আফসোস না কর তার ওপর, যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। আর আল্লাহ কোন উদ্ধত অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাদীদ-৫৭ : ২৩)

 إِنَّهُمْ كَانُوْۤا إِذَا قِیْلَ لَهُمْ لَاۤ اِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ یَسْتَكْبِرُوْنَথ وَ یَقُوْلُوْنَ اَئِنَّا لَتَارِكُوْۤا اٰلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُوْنٍ.

৪. তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’, তখন নিশ্চয় তারা অহঙ্কার করত। আর বলত, ‘আমরা কি এক পাগল কবির জন্য আমাদের উপাস্যদের ছেড়ে দেব?’ (সূরা সাফ্ফাত, ৩৭ : ৩৫-৩৬)

فَادْخُلُوْۤا اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا فَلَبِئْسَ مَثْوَی الْمُتَكَبِّرِیْنَ .

৫. এখন যা, দোযখের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়। সেখানেই তোমাদেরকে চিরকাল থাকতে হবে। অহঙ্কারীদের জন্য তা বড়ই মন্দ ঠিকানা। (সূরা নাহল-১৬ : ২৯)

وَ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَرْیَةٍ بَطِرَتْ مَعِیْشَتَهَا فَتِلْكَ مَسٰكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَنْ مِّنْۢ بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِیْلًا وَ كُنَّا نَحْنُ الْوٰرِثِیْنَ.

৬. আর আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা তাদের জীবন উপকরণ নিয়ে দম্ভ করত! এগুলো তো তাদের বাসস্থান। তাদের পরে (এখানে) সামান্যই বসবাস করা হয়েছে। আর আমিই চূড়ান্ত মালিকানার ওয়ারিস। (সূরা কাসাস-২৮ : ৫৮)

اِعْلَمُوْۤا اَنَّمَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَا لَعِبٌ وَّ لَهْوٌ وَّ زِیْنَةٌ وَّ تَفَاخُرٌۢ بَیْنَكُمْ وَ تَكَاثُرٌ فِی الْاَمْوَالِ وَ الْاَوْلَادِ كَمَثَلِ غَیْثٍ اَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهٗ ثُمَّ یَهِیْجُ فَتَرٰىهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ یَكُوْنُ حُطَامًا وَ فِی الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ شَدِیْدٌ وَّ مَغْفِرَةٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضْوَانٌ وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ.

৭. তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভাÑসৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্বÑঅহঙ্কার এবং ধনÑসম্পদ ও সন্তানÑসন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়Ñকুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা হাদীদ-৫৭ : ২০)

اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَالَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ قُلُوْبُهُمْ مُّنْكِرَةٌ وَّ هُمْ مُّسْتَكْبِرُوْنَ.

৮. তোমাদের মাবুদ একজনই। কিন্তু যারা আখিরাতকে বিশ্বাস করে না, তাদের দিলে অস্বীকার কায়েম হয়ে আছে এবং তারা অহংকারী। (সূরা নাহল-১৬ : ২২)

وَ لَا تَمْشِ فِی الْاَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْاَرْضَ وَ لَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا.

৯. আর যমীনে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনো যমীনকে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনো পাহাড় সমান পৌঁছতে পারবে না। (সুর বনী ইসরাইল-১৭ : ৩৭)

تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِیْنَ لَا یُرِیْدُوْنَ عُلُوًّا فِی الْاَرْضِ وَ لَا فَسَادًا وَ الْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِیْنَ.

১০. এই হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারিত করি, যারা যমীনে ঔদ্ধত্য দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা কাসাস-২৮ :  ৮৩)


আল হাদিস

عَنْ حَارِثَةَ ابْنِ وَهْبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِىُّ- (اَبُوْ دَاودَ : بَابٌ فِيْ حُسْنِ الْخُلُقِ)

১. হজরত হারেসা ইবনে ওয়াহাব "    বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, অহঙ্কারী ও অহঙ্কারের মিথ্যা ভানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (আবু দাউদ : বাবুন ফি হুসনিল খুলুক্বি, ৪১৬৮)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِيْ قَلْبِه مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَّكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً قَالَ إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ- (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الْكِبْرِ وَبَيَانِهِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি বললেন, কোন ব্যক্তি পছন্দ করে তার কাপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক (তাও কি অহংকার?) রাসূলুল্লাহ #   বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। প্রকৃত পক্ষে অহঙ্কার হলো, আল্লাহর গোলামী থেকে বেপরোয়া হওয়া এবং মানুষকে অবজ্ঞা করা। (মুসলিম : বাবু তারিহমিল কিবরি ওয়া বায়ানিহি, ১৩১)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ  قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ  ﷺ مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَالَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ اِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ اَبُوْ بَكْرٍ إِنَّ اَحَدَ شِقِّىْ ثَوْبِىْ يَسْتَرْخِىْ إِلَّا أَنْ اَتَعَاهَدَ ذَلِكَ مِنْهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّكَ لَسْتَ تَصْنَعُ ذَلِكَ خُيَلَاءَ- (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيْلًا)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র (লুঙ্গি, প্যান্ট, পায়জামা) মাটির ওপর দিয়ে টেনে চলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে তাকাবেন না। তখন হজরত আবু বকর "    বলেন, আমার লুঙ্গি অসতর্ক অবস্থায় ঢিলা হয়ে পায়ের গিরার নিচে চলে যায়, যদি না আমি তা ভালোভাবে বেঁধে রাখি। অতপর রাসূলুল্লাহ #  বলেছেন, তুমি তো তা অহঙ্কারবশত কর না। (বুখারি : বাবু ক্বাওলিন নাবী কুনতু মুত্তাখিযান খালীলান, ৩৩৯২)

عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَمَّا عُرِجَ بِىْ مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ اَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَصُدُوْرَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هٰؤُلَاءِ يَاجِبْرِيْلُ قَالَ هٰؤُلَاءِ الَّذِيْنَ يَاْكُلُوْنَ لُحُوْمََ النَّاسِ وَيَقَعُوْنَ فِيْ اَعْرَاضِهِمْ- (اَبُوْ دَاودَ  : بَابٌ فِيْ الْغِيْبَةِ)

৪. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, যখন আমার প্রভু আমাকে মিরাজে নিয়েছিলেন, তখন আমি এক শ্রেণির লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদের নখগুলো ছিলো পিতলের মত। যা দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা ও বুকে খামছাচ্ছিল। আমি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এরা সেইসব ব্যক্তি যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত খেত (অর্থাৎ গীবত করত) এবং তাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলত। (আবু দাউদ : বাবুন ফিল গীবতি, ৪২৩৫)

عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ اَوْحٰى اِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتّٰى لَا يَبْغِىَ اَحَدٌ عَلٰى اَحَدٍ وَلَا يَفْخَرَ اَحَدٌ عَلَى اَحَدٍ- (اَبُوْ دَاودَ  : بَابٌ فِيْ التَّوَاضُعِ)

৫. হজরত ইয়াদ ইবনে হিমার "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এই মর্মে আমার নিকট অহি প্রেরণ করেছেন, তোমরা সকলে বিনয়ী হও। যাতে কেউ কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করতে না পারে এবং কেউ কারো কাছে গর্ব করতে না পারে। (আবু দাউদ : বাবুন ফিত তাওয়াযুয়ি, ৪২৫০)

عَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٍ اَلْخُزَاعِىْ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اَلَا اُخْبِرُكُمْ بِاَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَاعِفٍ لَوْ اُقْسَمَ عَلَى اللهِ لَاَبَرَّهُ اَلَا اُخْبِرُكُمْ بِاَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْكِبْرِ)

৬. হজরত হারিসা ইবনে ওহাব খুযায়ী "    থেকে বর্ণিত। তিনি নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল #   বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব, জান্নাতের অধিকারী কারা? প্রত্যেক দুর্বল ও যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। তারা হল এমন যে, যদি তারা আল্লাহর নামে কসম করে, অবশ্যই আল্লাহ তা পূর্ণ করেন। আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব, জাহান্নামের অধিবাসী কারা? প্রত্যেক অহঙ্কারী, সীমালঙ্ঘনকারী, উদ্ধত লোক। (বুখারি: বাবুল কিবরি, ৫৬১০)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ قَالَ اَبُوْ مُعَاوِيَةَ وَلَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ، شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ- (مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ غِلَظِ تَحْرِيْمِ اِسْبَالِ الْاِزَارِ)

৭. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল #   বলেছেন, তিন ধরনের লোক রয়েছে যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না। বর্ণনাকারী আবু মুয়াবিয়া বলেন, তাদের দিকে তাকাবেনও না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ১. বিবাহিত ব্যভিচারী। ২. মিথ্যাবাদী শাসক। ৩. অহঙ্কারী দরিদ্র। (মুসলিম : বাবু বায়ানি গিলাযে তাহরিমি ইসবালিল ইযারে, ১৫৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اَلْكِبْرِيَاءُ رِدَائِىْ وَالْعَظْمَةُ اِزَارِىْ فَمَنْ نَازَعَنِىْ وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُه فِي النَّارِ- (اَبُوْ دَاودَ  : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْكِبْرِ)

৭. হজরত আবু হুরায়রা "    বলেন, রাসূল #   বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, অহঙ্কার হলো আমার চাদর। আর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো আমার পোশাক। যে ব্যক্তি এ দুটির কোন একটি নিয়ে আমার সহিত টানাটানি করে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (আবু দাউদ : বাবু মা জা আ ফিল কিবরি, ৩৫৬৭)






২৯. বিনয় ও নম্রতা : اَلتَّوَاضُعُ

আল-কুরআন

وَ اقْصِدْ فِیْ مَشْیِكَ وَ اغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْاَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِیْرِ.

১. ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ’। (সূরা লুকমান-৩১ : ১৯)

وَ اخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ.

২. আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত কর। (সূরা শুআরা-২৬ : ২১৫)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَنْ یَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِیْنِهٖ فَسَوْفَ یَاْتِی اللّٰهُ بِقَوْمٍ یُّحِبُّهُمْ وَ یُحِبُّوْنَهٗ اَذِلَّةٍ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اَعِزَّةٍ عَلَی الْكٰفِرِیْنَ یُجَاهِدُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ لَا یَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍ ذٰلِكَ فَضْلُ اللّٰهِ یُؤْتِیْهِ مَنْ یَّشَآءُ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.

৩. হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের ওপর বিনম্র এবং কাফিরদের ওপর কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।  (সূরা মায়িদা-৫ : ৫৪)

 فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلٰی اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ.

৪. অতপর আল¬াহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর। অতপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্ল¬াহর ওপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্ল¬াহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান, ৩ : ১৫৯)

وَ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِیْنَ یَمْشُوْنَ عَلَی الْاَرْضِ هَوْنًا وَّ إِذَا خَاطَبَهُمُ الْجٰهِلُوْنَ قَالُوْا سَلٰمًا.

৫. আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’। (সূরা ফুরকান-২৫ : ৬৩)

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗ اَشِدَّآءُ عَلَی الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیْنَهُمْ تَرٰىهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا یَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضْوَانًا سِیْمَاهُمْ فِیْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ ذٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِی التَّوْرٰىةِ وَ مَثَلُهُمْ فِی الْاِنْجِیْلِ كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْئَهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰی عَلٰی سُوْقِهٖ یُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنْهُمْ مَّغْفِرَةً وَّ اَجْرًا عَظِیْمًا.

৬. মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাঠের ওপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। (সূরা ফাত্হ-৪৮ : ২৯)


আল হাদিস

عَنْ عِيَاضٍ بْنِ حِمَارٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ اَوْحٰى اِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتّٰى لَا يَبْغِىْ اَحَدٌ عَلٰى اَحَدٍ وَلَا يَفْخَرَ اَحَدٌ عَلٰى اَحَدٍ- (اَبُوْ دَاوْدَ : بَابٌ فِيْ التَّوْاضُعِ)

১. হজরত ইয়াজ ইবনে হিমার "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমার কাছে এই মর্মে অহি প্রেরণ করেছেন, তোমরা সকলে বিনয়ী হও। যাতে কেউ কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করতে না পারে এবং কেউ কারো কাছে গর্ব করতে না পারে। (আবু দাউদ : বাবুন ফিত তাওয়াজুয়ি, ৪২৫০)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزَّا وَمَا تَوَاضَعَ اَحَدٌ لِلّٰهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللهُ- (مُسْلِمْ : بَابُ اسْتِحْبَابِ الْعَفْوِ وَالتَّوَاضُعِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "    রাসূল  #    থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, দানের দ্বারা সম্পদ কমে না। ক্ষমা দ্বারা আল্লাহ বান্দার ইজ্জত ও সম্মান বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কিছু করেন না। আর যে (একমাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে) বিনয় ও নম্রতার নীতি অবলম্বন করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (মুসলিম : বাবু ইসতিহবাবিল আফউয়ি ওয়াত তাওয়াযুয়ি, ৪৬৮৯)










৩০. ইনসাফ : الْاِنْصَافُ

আল-কুরআন

إِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُ بِالْعَدْلِ وَ الْاِحْسَانِ وَ اِیْتَآئِ ذِی الْقُرْبٰی وَ یَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ وَ الْبَغْیِ یَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

১. আল্লাহ সুবিচার, বদান্যতা ও নিকটাত্মীয়ের হক আদায় করার আদেশ দিচ্ছেন এবং বেহায়াপনা, নিষিদ্ধ কাজ ও সীমালঙ্ঘন করা থেকে নিষেধ করছেন। তিনি তোমাদের নসীহত করছেন, যাতে তোমরা উপদেশ নিতে পার। (সূরা নাহ্ল-১৬ : ৯০)

إِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰی اَهْلِهَا وَ إِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِیْعًا ۢبَصِیْرًا.

২. নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা-৪ : ৫৮)

لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَیِّنٰتِ وَ أَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْمِیْزَانَ لِیَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَ أَنْزَلْنَا الْحَدِیْدَ فِیْهِ بَاْسٌ شَدِیْدٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ یَّنْصُرُهٗ وَ رُسُلَهٗ بِالْغَیْبِ إِنَّ اللّٰهَ قَوِیٌّ عَزِیْزٌ.

৩. নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড নাজিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরো নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।  (সূরা হাদীদ-৫৭ : ২৫)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِیْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَ لَوْ عَلٰی أَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ اِنْ یَّكُنْ غَنِیًّا اَوْ فَقِیْرًا فَاللّٰهُ اَوْلٰی بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰی أَنْ تَعْدِلُوْا وَ اِنْ تَلْوٗا اَوْ تُعْرِضُوْا فَإِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرًا.

৪. হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা নিসা, ৪ : ১৩৫)

فَلِذٰلِكَ فَادْعُ وَ اسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَ وَ لَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَ قُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ مِنْ كِتٰبٍ وَ اُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَیْنَكُمْ اَللّٰهُ رَبُّنَا وَ رَبُّكُمْ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَ لَكُمْ اَعْمَالُكُمْ لَا حُجَّةَ بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمْ اَللّٰهُ یَجْمَعُ بَیْنَنَا وَ اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ.

৫. এ কারণে তুমি আহবান কর এবং দৃঢ় থাক যেমন তুমি আদিষ্ট হয়েছ। আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না এবং বল, ‘আল্লাহ যে কিতাব নাজিল করেছেন আমি তাতে ঈমান এনেছি এবং তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের রব এবং তোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে’। (সূরা শুরা-৪২ : ১৫)

وَ لَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ إِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ وَ اَوْفُوا الْكَیْلَ وَ الْمِیْزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا وَ إِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَ لَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰی وَ بِعَهْدِ اللّٰهِ اَوْفُوْا ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

৬. আর তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হয়ো না, সুন্দর পন্থা ছাড়া। যতক্ষণ না সে পরিণত বয়সে উপনীত হয়, আর পরিমাপ ও ওযন ইনসাফের সাথে পরিপূর্ণ দেবে। আমি কাউকে তার সাধ্য ছাড়া দায়িত্ব অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ইনসাফ কর, যদিও সে আত্মীয় হয় এবং আল্লাহর ওয়াদা পূর্ণ কর। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আনআম-৬ : ১৫২)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا إِذَا تَدَایَنْتُمْ بِدَیْنٍ اِلٰی اَجَلٍ مُّسَمًّی فَاكْتُبُوْهُ وَ لْیَكْتُبْ بَّیْنَكُمْ كَاتِبٌۢ بِالْعَدْلِ وَ لَا یَاْبَ كَاتِبٌ أَنْ یَّكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللّٰهُ فَلْیَكْتُبْ وَ لْیُمْلِلِ الَّذِیْ عَلَیْهِ الْحَقُّ وَ لْیَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ وَ لَا یَبْخَسْ مِنْهُ شَیْئًا فَاِنْ كَانَ الَّذِیْ عَلَیْهِ الْحَقُّ سَفِیْهًا اَوْ ضَعِیْفًا اَوْ لَا یَسْتَطِیْعُ أَنْ یُّمِلَّ هُوَ فَلْیُمْلِلْ وَلِیُّهٗ بِالْعَدْلِ وَ اسْتَشْهِدُوْا شَهِیْدَیْنِ مِنْ رِّجَالِكُمْ فَاِنْ لَّمْ یَكُوْنَا رَجُلَیْنِ فَرَجُلٌ وَّ امْرَاَتٰنِ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَآءِ أَنْ تَضِلَّ اِحْدٰىهُمَا فَتُذَكِّرَ اِحْدٰىهُمَا الْاُخْرٰی وَ لَا یَاْبَ الشُّهَدَآءُ إِذَا مَا دُعُوْا وَ لَا تَسْئَمُوْۤا أَنْ تَكْتُبُوْهُ صَغِیْرًا اَوْ كَبِیْرًا اِلٰی اَجَلِهٖ ذٰلِكُمْ اَقْسَطُ عِنْدَ اللّٰهِ وَ اَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَ اَدْنٰی اَلَّا تَرْتَابُوْۤا إِلَّاۤ أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِیْرُوْنَهَا بَیْنَكُمْ فَلَیْسَ عَلَیْكُمْ جُنَاحٌ اَلَّا تَكْتُبُوْهَا وَ اَشْهِدُوْۤا إِذَا تَبَایَعْتُمْ وَ لَا یُضَآرَّ كَاتِبٌ وَّ لَا شَهِیْدٌ وَ اِنْ تَفْعَلُوْا فَإِنَّهٗ فُسُوْقٌۢ بِكُمْ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ یُعَلِّمُكُمُ اللّٰهُ وَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ.

৮. হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরস্পর ঋণের লেন-দেন করবে, তখন তা লিখে রাখবে। আর তোমাদের মধ্যে একজন লেখক যেন ইনসাফের সাথে লিখে রাখে এবং কোন লেখক আল্ল¬াহ তাকে যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন, তা লিখতে অস্বীকার করবে না। সুতরাং সে যেন লিখে রাখে এবং যার ওপর পাওনা সে (ঋণ গ্রহীতা) যেন তা লিখিয়ে রাখে। আর সে যেন তার রব আল্ল¬াহর তাকওয়া অবলম্বন করে এবং পাওনা থেকে যেন সামান্যও কম না দেয়। অতপর যার ওপর পাওনা রয়েছে সে (ঋণ গ্রহীতা) যদি নির্বোধ বা দুর্বল হয়, অথবা সে লেখার বিষয়বস্তু বলতে না পারে, তাহলে যেন তার অভিভাবক ন্যায়ের সাথে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয়। আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী রাখ । অতপর যদি তারা উভয়ে পুরুষ না হয়, তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন নারীÑ যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর। যাতে তাদের (নারীদের) একজন ভুল করলে অপরজন স্মরণ করিয়ে দেয়। সাক্ষীরা যেন অস্বীকার না করে, যখন তাদেরকে ডাকা হয়। আর তা ছোট হোক কিংবা বড় তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করতে তোমরা বিরক্ত হয়ো না। এটি আল্লাহর নিকট অধিক ইনসাফপূর্ণ এবং সাক্ষ্য দানের জন্য যথাযথ। আর তোমরা সন্দিহান না হওয়ার অধিক নিকটবর্তী। তবে যদি নগদ ব্যবসা হয় যা তোমরা হাতে হাতে লেনদেন কর, তাহলে তা না লিখলে তোমাদের কোন দোষ নেই। আর তোমরা সাক্ষী রাখ, যখন তোমরা বেচা-কেনা করবে এবং কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। আর যদি তোমরা কর, তাহলে নিশ্চয় তা হবে তোমাদের সাথে অনাচার। আর তোমরা আল্ল-াহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আল্ল¬াহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী। (সূরা বাকারা-২ : ২৮২)

وَ اَقِیْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَ لَا تُخْسِرُوا الْمِیْزَانَ.

৯. আর তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে ওযন প্রতিষ্ঠা কর এবং ওযনকৃত বস্তু কম দিও না। (সূরা আর রহমান-৫৫ : ৯)


আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ  الْمُقْسِطِيْنَ عِنْدَ اللهَ  عَلٰى مَنَابِرَ مِنْ نُوْرٍ عَنْ يَمِيْنِ الرَّحْمٰنِ عَزَّ وَجَلَّ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِيْنٌ اَلَّذِيْنَ يَعْدِلُوْنَ فِي حُكْمِهِمْ وَاَهْلِيْهِمْ وَ مَا وَلُوْا- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضِيْلَةِ الْاِمَامِ الْعَادِلِ وَعُقُوْبَةِ الْجَائِرِ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, নিশ্চয়ই ন্যায়বিচারকগণ আল্লাহর ডানপাশে নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবে। আল্লাহর দুইপাশই ডান। তারা (ন্যায়বিচারকগণ) হলেন এমন, যারা তাদের বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে পরিবার পরিজনের ব্যাপারে এবং যেসব দায় দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পন করা হয়, সেসব বিষয়ে সুবিচার করে। (মুসলিম : বাবু ফাদিলাতিল ইমামিল আদিলি ওয়া উকুবাতিল যাইরি, ৩৪০৬)

عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارِ الْمُجَاشِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ اَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُوْ سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مَوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيْمٌ رَقِيْقٌ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِىْ قُرْبٰى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيْفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُوْ عِيَالٍ- (مُسْلِمْ : بَابُ الصِّفَاتِ الَّتِىْ يُعْرَفُ بِهَا فِي الدُّنْيَا اَهْلُ الْجَنَّةِ وَاَهْلُ النَّارِ)

২. হজরত ইয়াদ ইবনে মুযাশিয়্যি "    বর্ণনা করেন, রাসূল  #    বলেন, জান্নাতের অধিবাসীরা তিন ধরনের। ১. ন্যায় পরায়ণ ও দানশীল শাসক যাকে (দান-খয়রাত ও জনগণের কল্যাণ করার) তাওফিক দেয়া হয়। ২. দয়াদ্র হৃদয় ও রহমদিল ব্যক্তি, যার অন্তর প্রত্যেক আত্মীয় স্বজন ও মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অতিশয় কোমল ও নরম। ৩. যে ব্যক্তি শরীর ও মনের দিক থেকে পবিত্র নিষ্কলুস চরিত্রের অধিকারী, পরিবার বেষ্টিত। (মুসলিম : বাবুস সিফাতিল লাতি ইউরাফু বিহা ফিদ দুনইয়া আহলুল জান্নাতি ওয়া আহলুন নার, ৫১০৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّه اِمَامٌ عَدْلٌ وَ شَابٌّ نَشَاَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ وَرَجُلٌ قَلْبُه مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّيْ اَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ وَ رَجُلٌ ذَكَرَ اللهُ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ الصَّدَقَةِ بِالْيَمِيْنِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা (কিয়ামতের দিন) তার আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। ২. ঐ যুবক যে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠে। ৩. ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহে ঝুলন্ত থাকে। ৪. ঐ দুই ব্যক্তি, যারা একে অপরকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসে, তারা পরস্পর একত্রিত হয় আল্লাহরই উদ্দেশ্যে এবং বিচ্ছিন্নও হয় তারই খাতিরে। ৫. ঐ ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী যুবতী (মন্দ কাজের জন্য) আহ্বান করে, অথচ সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬. ঐ ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী দান করেছে। ৭. ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার চক্ষুদ্বয় অশ্রু প্রবাহিত করে। (বুখারি : বাবুস সাদাকাতি বিল ইয়ামিন, ১৩৩৪)
























৩১. ক্ষমা : اَلْعَفْوُ

আল-কুরআন

الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ.

১. যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৩৪)

خُذِ الْعَفْوَ وَ اْمُرْ بِالْعُرْفِ وَ اَعْرِضْ عَنِ الْجٰهِلِیْنَ.

২. তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক। (সূরা আ‘রাফ-৭ : ১৯৯)

 اِنْ تُبْدُوْا خَیْرًا اَوْ تُخْفُوْهُ اَوْ تَعْفُوْا عَنْ سُوْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِیْرًا.

৩. যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ কর, কিংবা গোপন কর অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান। (সূরা নিসা-৪ : ১৪৯)

وَ لَمَنْ صَبَرَ وَ غَفَرَ إِنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ.

৪. আর যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে, তা নিশ্চয় দৃঢ়সংকল্পেরই কাজ। (সূরা শুরা, ৪২ : ৪৩)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الْقِصَاصُ فِی الْقَتْلٰی اَلْحُرُّ بِالْحُرِّ وَ الْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَ الْاُنْثٰی بِالْاُنْثٰی فَمَنْ عُفِیَ لَهٗ مِنْ اَخِیْهِ شَیْءٌ فَاتِّبَاعٌ ۢ بِالْمَعْرُوْفِ وَ اَدَآءٌ اِلَیْهِ بِاِحْسَانٍ ذٰلِكَ تَخْفِیْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ رَحْمَةٌ فَمَنِ اعْتَدٰی بَعْدَ ذٰلِكَ فَلَهٗ عَذَابٌ اَلِیْمٌ.

৫. হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের ওপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে হালকাকরণ ও রহমত। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। (সূরা বাকারা-২ : ১৭৮)

وَ اِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَ قَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِیْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّاۤ أَنْ یَّعْفُوْنَ اَوْ یَعْفُوَا الَّذِیْ بِیَدِهٖ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَ أَنْ تَعْفُوْۤا اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰی وَ لَا تَنْسَوُا الْفَضْلَ بَیْنَكُمْ إِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ .

৬. আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করে থাক, তাহলে যা নির্ধারণ করেছ, তার অর্ধেক (দিয়ে দাও)। তবে স্ত্রীরা যদি মাফ করে দেয়, কিংবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে যদি মাফ করে দেয়। আর তোমাদের মাফ করে দেয়া তাকওয়ার অধিক নিকটতর। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্ল¬াহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা বাকারা-২ : ২৩৭)

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَی اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ.

৮. অতপর আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর। অতপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্ল¬াহর ওপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্ল¬াহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৫৯)

وَ لَا یَاْتَلِ اُولُوا الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَ السَّعَةِ أَنْ یُّؤْتُوْۤا اُولِی الْقُرْبٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ الْمُهٰجِرِیْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ لْیَعْفُوْا وَ لْیَصْفَحُوْا اَلَا تُحِبُّوْنَ أَنْ یَّغْفِرَ اللّٰهُ لَكُمْ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْم. 

৯. আর তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এমন কসম না করে যে, তারা নিকটাত্মীয়দের, মিসকীনদের ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কিছুই দেবে না। আর তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন? আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নূর-২৪ : ২২)


আল হাদিস

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ شَيْئًا قَطٌّ بِيَدِهِ وَلَا اِمْرَةً وَلَا خَادِمًا إِلَّا أَنْ يُّجَاهِدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا نِيْلَ مِنْهُ شَيْئٌ قَطٌّ فَيَنْتَقِمَ مِنْ صَاحِبِه إِلَّا أَنْ يُّنْتَهَكَ شَيْئٌ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ فَيَنْتَقِمَ لِلّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ- (مُسْلِمْ : بَابُ مُبَاعَدَتِه ﷺ لِلْاَثَامِ)

১. হজরত আয়েশা "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত কখনো কাউকে মারেননি। না কোন স্ত্রী লোককে না কোন খাদেমকে। তাকে কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। অবশ্যই কোন নির্ধারিত হারামকে লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম : বাবু মুবায়াদাতিহি সা. লিল আসামি, ৪২৯৬)

عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنْتُ اَمْشِىْ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ وعَلَيْهِ بُرْدٌ نَجْرَانِىٌّ غَلِيْظُ الْحَاشِيَةِ فَاَدْرَكَه اَعْرَابِىٌّ فَجَذَبَهُ جَذْبَةً شَدِيْدَةً حَتّٰى نَظَرَتْ اِلَى صَفْحَةِ عَاتِقِ النَّبِيِّ ﷺ قَدْ اَثَّرَتْ بِه حَاشِيَةُ الرِّدَاءِ مِنْ شِدَّةِ جَذْبَتِه ثُمَّ قَالَ مُرْ لِىْ مِنْ مَالِ اللهِ الَّذِيْ عِنْدَكَ فَالْتَفَتَ اِلَيْهِ فَضَحِكَ ثُمَّ اَمَرَ لَه بِعَطَاءٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَا كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُعْطِىْ الْمُؤَّلَّفَةَ قُلُوْبَهُمْ)

২. হজরত আনাস "    থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #    এর সাথে হাঁটছিলাম। তার গায়ে ছিল, মোটা বা চ্যাপ্টা পাড় বিশিষ্ট একটি নাজরাণী চাদর। এক বেদুইন তার নিকট এসে তার চাদরটি ধরে ভীষণ সজোরে টান দিলো। আমি লক্ষ্য করলাম, নবি  #   এর ঘাড়ের পার্শ্বদেশে সজোরে চাদর টানার দরুন চাদরের দাগ পড়ে গেছে। বেদুইন বলল, হে মুহাম্মদ! আপনার নিকট আল্লাহর দেওয়া সম্পদ রয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তিনি তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। তারপর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। (বুখারি : বাবু মা কানান নাবিয়্যু সা. ইয়ুতিল মুয়াল্লাফাতা কুলুবাহুম, ২৯১৬)

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَأَنِّيْ أَنْظُرُ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ يَحْكِيْ نَبِيًّا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ ضَرَبَه قَوْمُه فَأَدْمَوْه وَ هُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِه وَيَقُوْلُ: اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِقَوْمِىْ فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ- (بُخَارِيْ : بَابُ حَدِيْثِ الْغَارِ، مُسْلِمْ : بَابُ غَزْوَةِ اُحُدٍ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ #  এর দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণের মধ্য থেকে একজন সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তাকে তার সম্প্রদায় আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। আর তিনি নিজের চেহারা থেকে রক্ত মুছতে মুছতে বলছিলেন, হে আল্লাহ আমার সম্প্রদায়কে মাফ করুন। কারণ এরা তো অবুঝ। (বুখারি : বাবু হাদিসিল গারি, ইফা :  ৩২৩১, মুসলিম : ইফা :  ৪৪৯৫)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : لَيْسَ الشَّدِيْدُ بِالصُّرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيْدُ الَّذِيْ يَمْلِكُ نَفْسَه عِنْدَ الْغَضَبِ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْحَذَرِ مِنَ الْغَضَبِ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ يَّمْلِكُ نَفْسَه عِنْدَ الْغَضَبِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, কুস্তিতে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জয়লাভ করাতে বীরত্ব নেই; বরং রাগের মুহূর্তে নিজকে সংবরণ করতে পারাই প্রকৃত বীরত্বের পরিচায়ক। (বুখারি : বাবুল হাজারি মিনাল গাদাবি, ইফা :  ৬৪০৫, মুসলিম : বাবু ফাদলি মান ইয়ামলিকু নাফসাহু ইনদাল গাদাবি, ইফা :  ৫৬৮৪)







৩২. যিকির : اَلذِّكْرُ

আল কুরআন

فَاذْكُرُوْنِیْۤ اَذْكُرْكُمْ وَ اشْكُرُوْا لِیْ وَ لَا تَكْفُرُوْنِ.

১. ‘অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় করো, আমার সাথে কুফরি করো না।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৫২)

اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ تَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللّٰهِ اَلَا بِذِكْرِ اللّٰهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ.

২. যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। (সূরা রা‘দ-১৩ : ২৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللّٰهَ ذِكْرًا كَثِیْرًا -وَّ سَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّ اَصِیْلً. 

৩. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্ল¬াহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সূরা আহযাব-৩৩ : ৪১-৪২)

وَ مَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِیْ فَإِنَّ لَهٗ مَعِیْشَةً ضَنْكًا وَّ نَحْشُرُهٗ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ اَعْمٰی.

৪. আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশ্চয়ই তার জন্য হবে এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাব অন্ধ অবস্থায়। (সূরা ত্বহা, ২০ : ১২৪)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَ لَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللّٰهِ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخٰسِرُوْنَ.

৫. ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধনÑসম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকুন-৬৩ : ৯)

وَ مَنْ یَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَیِّضْ لَهٗ شَیْطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِیْنٌ.

৬. ‘আর যে পরম করুণাময়ের যিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী।’ (সূরা যুখরুফ-৪৩ : ৩৬)

وَ اذْكُرْ رَّبَّكَ فِیْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّ خِیْفَةً وَّ دُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَ الْاٰصَالِ وَ لَا تَكُنْ مِّنَ الْغٰفِلِیْنَ.

৭. ‘আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ করো সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়Ñবিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (সূরা আরাফ-৭ : ২০৫)

وَ اذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَ تَبَتَّلْ اِلَیْهِ تَبْتِیْلًا.

৮. ‘আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও।’ (সূরা মুয্যাম্মিল-৭৩ : ৮)

وَ اذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَّ اَصِیْلًا.

৯. ‘আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের নাম স্মরণ করো।’ (সূরা দাহর-৭৬ : ২৫)

اُتْلُ مَاۤ اُوْحِیَ اِلَیْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ إِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ وَ لَذِكْرُ اللّٰهِ اَكْبَرُ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ.

১০. ‘তোমার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত করো এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা করো।’ (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৪৫)

فَإِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِی الْاَرْضِ وَ ابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللّٰهِ وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِیْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

১১. ‘অতপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সূরা জুমআ-৬২ : ১০)


আল হাদিস

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّه إِمَامٌ عَادِلٌ وَ شَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُه مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اِجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَ رَجُلٌ ذَكَرَ اللهُ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ الصَّدَقَةِ بِالْيَمِيْنِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা (কিয়ামতের দিন) তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক ২. ওই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠে ৩. ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহে ঝুলন্ত থাকে ৪. ওই দুই ব্যক্তি, যারা একে অপরকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসে, তারা পরস্পর একত্রিত হয় আল্লাহরই উদ্দেশ্যে এবং বিচ্ছিন্নও হয় তাঁরই খাতিরে ৫. ওই ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী যুবতী (মন্দ কাজের জন্য) আহ্বান করে, অথচ সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি ৬. ওই ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী দান করেছে ৭. ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার চক্ষুদ্বয় অশ্রু প্রবাহিত করে। (বুখারি : বাবুস সাদাকাতি বিল ইয়ামিন, ইফা :  ১৩৪০)

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالٰى، فَاِنْ نَسِيَ أَنْ يَّذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالٰى فِي أَ وَّلِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللهِ أَ وَّلَهُ وَاٰخِرَهُ- (أَبُوْ دَاودَ  : بَابُ التَّسْمِيَةِ عَلَى الطَّعَامِ)

২. হজরত আয়েশা রাজি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন খানা খায়, তখন শুরুতে যেন আল্লাহ তাআলার নাম নেয়। সে শুরুতে আল্লাহ তাআলার নাম নিতে ভুলে গেলে যেন বলে, বিসমিল্লিাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু (প্রথমে ও শেষে আল্লাহর নামে)। (আবু দাউদ : বাবুত তাসমিয়াতি আলাত তয়ামি, ইফা :  ৩৭২৫)

عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَكَلَ طَعَامًا فَقَالَ: اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا يَقُوْلُ إِذَا فَرَغَ مِنَ الطَّعَامِ)

৩. হজরত সাহল ইবনে মুয়াজ ইবনে আনাস "    তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, কোনো ব্যক্তি আহার শেষে বলল, আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আতআমানি হাযা ওয়া রাজাক্বানিহি মিন গাইরি হাওলিন মিন্নি ওয়ালা কুওয়াতিন, (সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন, আমাকে রিজিক দিলেন আমার কোনোরূপ চেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই)। তার পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (তিরমিজি : বাবু মা ইয়াকুলু ইযা ফারাগা মিনাত তয়ামি, ইফা :  ৩৪৫৮)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ الله رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : اَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ اَ لْحَمْدُ لِلّٰـهِ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ أَنَّ دَعْوَةَ الْمُسْلِمِ مُسْتَجَابَةٌ)

৪. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #   কে বলতে শুনেছি, সবচেয়ে উত্তম জিকির হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আর সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো, আলহামদুলিল্লাহ। (তিরমিজি : বাবু মা জা আ আন্না দাওয়াতাল মুসলিমি মুস্তাজাবাতুন, ইফা :  ৩৩৮৩)

عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى اَلْأَشْعَرِيُّ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: مَثَلُ الَّذِيْ يَقْرَأْ الْقُرْاٰنَ كَالْاُتْرُجَّةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَرِيْحُهَا طَيِّبٌ وَالَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُراٰنَ كَالتَّمَرَةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلَا رِيْحَ لَهَا وَمَثَلُ الْفَاجِرِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ كَمَثَلِ الرَّيْحَانَةِ رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَ طَعْمُهَا مُرٌّ وَمَثَلُ الْفَاجِرِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ كَمَثَلِ الْحَنْظَلَةِ طَعْمُهَا مُرٌّ وَلَا رِيْحَ لَهَا- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ الْقُرْاٰنِ عَلٰى سَائِرِ الْكَلَامِ)

৫. হজরত আবু মুসা আশআরি "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন কমলালেবু যার স্বাদ চমৎকার এবং খুশবু মনোরম। আর যে কুরআন পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন খেজুরের মতো যার স্বাদ চমৎকার কিন্তু তার কোনো সুগন্ধ নেই। আর যে পাপাচারী ব্যক্তি কুরআন পড়ে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন রাইহান ফুলের মতো, যার খুশবু মনোরম কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে পাপাচারী কুরআন পড়ে না তার দৃষ্টান্ত হলো এমন মাকাল ফলের মতো যার স্বাদ তিক্ত এবং তার কোনো সুগন্ধও নেই। (বুখারি : বাবু ফাদলিল কুরআনি আলা সায়িরিল কালামি, ইফা :  ৪৬৫০)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : كَلِمَتَانِ حَبِيْبَتَانِ اِلَى الرَحْمٰنِ خَفِيْفَتَانِ عَلٰى اللِّسَانِ ثَقِيْلَتَانِ فِيْ الْمِيْزَانِ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ- (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰى : وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ التَّهْلِيْلِ وَالتَّسْبِيْحِ وَالدُّعَاءِ)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম  #    বলেছেন, এমন দুটি বাক্য আছে, যা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়, মুখে উচ্চারণে হালকা, কিন্তু পাল্লায় (ওজনে) ভারী, তা হলো সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম। (বুখারি : বাবু ক্বাওলিল্লাহি তাআলা ‘ওয়া নাদাউল মাওয়াজিনাল ক্বিসতা লি ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি, ইফা :  ৭০৫৩, মুসলিম : বাবু ফাদলিত তাহলিলি ওয়াত তাসবিহি ওয়াদ দুয়ায়ি, ইফা :  ৬৬০১)














৩৩. নিফাক : اَلنِّفَاقُ

আল কুরআন

إِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ فِی الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَ لَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِیْرًا.

১. ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৪৫)

یٰاَیُّهَا النَّبِیُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ اغْلُظْ عَلَیْهِمْ وَ مَاْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ.

২. ‘হে নবি! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ওপর কঠোর হও, আর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম; আর তা কতই-না নিকৃষ্ট স্থান।’ (সূরা তাওবা-৯ : ৭৩)

وَعَدَ اللّٰهُ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ الْمُنٰفِقٰتِ وَ الْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا ؕ هِیَ حَسْبُهُمْ وَ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ وَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّقِیْمٌ.

৩. ‘আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটি তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের লানত করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আজাব।’ (সূরা তাওবা-৯ : ৬৮)

إِذَا جَآءَكَ الْمُنٰفِقُوْنَ قَالُوْا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُوْلُ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُوْلُهٗ وَ اللّٰهُ یَشْهَدُ إِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ لَكٰذِبُوْنَ.

৪. ‘যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছিÑ নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেনÑ অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।’ (সূরা মুনাফিকুন, ৬৩ : ১)

إِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللّٰهَ وَ هُوَ خَادِعُهُمْ وَ إِذَا قَامُوْۤا اِلٰی الصَّلٰوةِ قَامُوْا كُسَالٰی یُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَ لَا یَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ إِلَّا قَلِیْلًا .

৫. ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। অথচ তিনি তাদের ধোঁকা (এর জবাব) দানকারী। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদের দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৪২)

وَ إِذَا لَقُوا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا قَالُوْا اٰمَنَّا وَ إِذَا خَلَوْا اِلٰی شَیٰطِیْنِهِمْ قَالُوْا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِءُوْنَ .

৬. ‘আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলেÑ আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলেÑ নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৪)

 وَ قَدْ نَزَّلَ عَلَیْكُمْ فِی الْكِتٰبِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ اٰیٰتِ اللّٰهِ یُكْفَرُ بِهَا وَ یُسْتَهْزَاُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰی یَخُوْضُوْا فِیْ حَدِیْثٍ غَیْرِهٖۤ إِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ إِنَّ اللّٰهَ جَامِعُ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ الْكٰفِرِیْنَ فِیْ جَهَنَّمَ جَمِیْعَا.

৭. ‘আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাজিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়। তা না হলে তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৪০)

بَشِّرِ الْمُنٰفِقِیْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِیْمَا.

৮. ‘মুনাফিকদের সুসংবাদ দাও যে, নিশ্চয় তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৩৮)

یَّسْتَخْفُوْنَ مِنَ النَّاسِ وَ لَا یَسْتَخْفُوْنَ مِنَ اللّٰهِ وَ هُوَ مَعَهُمْ اِذْ یُبَیِّتُوْنَ مَا لَا یَرْضٰی مِنَ الْقَوْلِ وَ كَانَ اللّٰهُ بِمَا یَعْمَلُوْنَ مُحِیْطًا.

৯. ‘তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, আর আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায় না। অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে এমন কথার পরিকল্পনা করে, যা তিনি পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টন করে আছেন।’ (সূরা নিসা-৪ : ১০৮)


আল হাদিস

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: اٰيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ- (بُخَارِيْ : بَابُ عَلَامَةِ الْمُنَافِقِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি, ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় বিশ্বাসঘাতকতা করে।’ (বুখারি : বাবু আলামাতিল মুনাফিকি, ইফা :  ৩২)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو اَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتّٰى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ- (بُخَارِيْ : بَابُ خِصَالِ الْمُنَافِقِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "  বর্ণনা করেন, নবি করিম #    বলেছেন, ‘চারটি বিষয় যার মধ্যে রয়েছে, সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মাঝে চারটির কোনো একটি রয়েছে, তার মাঝে নিফাকির একটি চিহ্ন রয়েছে যতক্ষণ সে তা না ছাড়ে। ১. যখন আমানত রাখা হয়, বিশ্বাসঘাতকতা করে ২. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ৩. যখন চুক্তিবদ্ধ হয় তা লংঘণ করে ৪. আর যখন ঝগড়া করে গালাগালি করে।’ (বুখারি : বাবু খিছালিল মুনাফিকি, ইফা :  ৩৩)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَصْلَتَانِ لَا تَجْتَمِعَانِ فِيْ مُنَافِقٍ حُسْنُ سَمْتٍ وَلَا فِقْهٌ فِيْ الدِّيْنِ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ فَضْلِ الْفِقْهِ عَلى الْعِبَادَةِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘দুটি গুণ কোনো মুনাফিকের মধ্যে সম্মিলিত হয় না। ১. সু-স্বভাব ২. দীনের যথার্থ জ্ঞান।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফি ফাদলিল ফিকহি আলাল ইবাদাতি, ইফা :  ২৬৮৪)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ: تَجِدُوْنَ النَّاسَ مَعَادِنَ خِيَارُهُمْ فِيْ الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْاِسْلَامِ إِذَا فَقِهُوْا وَتَجِدُوْنَ خَيْرَ النَّاسِ فِيْ هٰذَا الشَّأنِ اَشَدَّهُمْ لَه كَرَاهِيَةً وَتَجِدُوْنَ شَرَّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِيْ يَأْتِيْ هٰوُلَاءِ بِوَجْهٍ وَيَأْتِيْ هٰؤُلَاءِ بِوَجْهٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالَى يَا اَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَ اُنْثىٰ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘তোমরা দেখবে মানুষ খনিজ সম্পদের মতো। তাদের মধ্যে যারা জাহেলি যুগে উত্তম ছিল ইসলামী সমাজেও তারাই উত্তম হবে যখন তারা (দীন ইসলামের) পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করবে। তোমরা প্রশাসনে ঐ লোকদের ভালো পাবে যারা সরকারি দায়িত্ব গ্রহণ করতে খুবই অপছন্দ করে। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে খারাপ, যে একবার এই দলের নিকট একরূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এবং আরেকবার অন্য এক রূপ নিয়ে অন্য দলের নিকট আত্মপ্রকাশ করে।’ (বুখারি : বাবু কাওলিল্লাহি তাআলা ইয়া আইয়ুহান্নাসু ইন্না খালাক্বনাকুম মিন জাকারিন ওয়া উনসা, ইফা : ৩২৪৬)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الشَّاةِ الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغَنَمَيْنِ تَعِيْرُ إِلٰى هٰذِهِ مَرَّةً وَإِلٰى هٰذِهِ مَرَّةً- (مُسْلِمْ : كِتَابُ صِفَاتِ الْمُنَافِقِيْنَ وَأَحْكَامِهِمْ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো দুটি ছাগলের মাঝে একটি বানডাকা বকরির মতো, যে একবার এদিকে অন্যবার সেদিকে ছোটাছুটি করে।’ (মুসলিম : কিতাবু ছিফাতিল মুনাফিকিন ওয়া আহকামিহিম, ইফা : ৬৭৮৬)





৩৪. তাওবা : اَلتَّوْبَةُ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْۤا اِلَی اللّٰهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا عَسٰی رَبُّكُمْ أَنْ یُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یُدْخِلَكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ یَوْمَ لَا یُخْزِی اللّٰهُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ نُوْرُهُمْ یَسْعٰی بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَ بِاَیْمَانِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَ اغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ.

১. ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্ল¬াহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নবি ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদের সেদিন আল্ল¬াহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবেÑ হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’ (সূরা তাহরিম-৬৬ : ৮)

وَ قُلْ لِّلْمُؤْمِنٰتِ یَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَ یَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَ لَا یُبْدِیْنَ زِیْنَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ لْیَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوْبِهِنَّ وَ لَا یُبْدِیْنَ زِیْنَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اٰبَآئِهِنَّ اَوْ اٰبَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَآئِهِنَّ اَوْ اَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِیْۤ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِیْۤ اَخَوٰتِهِنَّ اَوْ نِسَآئِهِنَّ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُنَّ اَوِ التّٰبِعِیْنَ غَیْرِ اُولِی الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفْلِ الَّذِیْنَ لَمْ یَظْهَرُوْا عَلٰی عَوْرٰتِ النِّسَآءِ وَ لَا یَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِیُعْلَمَ مَا یُخْفِیْنَ مِنْ زِیْنَتِهِنَّ وَ تُوْبُوْۤا اِلَی اللّٰهِ جَمِیْعًا اَیُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

২. ‘আর মুমিন নারীদের বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশ আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজেদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারও কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।’ (সূরা নূর-২৪ : ৩১)

اَفَلَا یَتُوْبُوْنَ اِلَی اللّٰهِ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَهٗ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

৩. ‘সুতরাং তারা কি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাইবে না? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা মায়েদা-৫ : ৭৪)

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَی اللّٰهِ لِلَّذِیْنَ یَعْمَلُوْنَ السُّوْءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ یَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِیْبٍ فَاُولٰٓئِكَ یَتُوْبُ اللّٰهُ عَلَیْهِمْ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلِیْمًا حَكِیْمًا.

৪. ‘নিশ্চয় তাওবা কবুল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অতপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা নিসা- ৪ : ১৭)

وَ لَیْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِیْنَ یَعْمَلُوْنَ السَّیِّاٰتِ حَتّٰی إِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّیْ تُبْتُ الْـٰٔنَ وَ لَا الَّذِیْنَ یَمُوْتُوْنَ وَ هُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓىِٕكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا.

৫. ‘আর তাওবা নেই তাদের, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলেÑ আমি এখন তাওবা করলাম। আর তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়; আমি এদের  জন্যই তৈরি করেছি যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৮)

وَ الَّذِیْنَ إِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللّٰهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوْبِهِمْ وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا اللّٰهُ وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ.

৬. ‘আর যারা কোনো অশ্ল¬ীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্ল¬াহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে-শুনে তা তারা বারবার করে না।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৩৫) 

وَ الَّذِیْنَ عَمِلُوا السَّیِّاٰتِ ثُمَّ تَابُوْا مِنْۢ بَعْدِهَا وَ اٰمَنُوْۤا إِنَّ رَبَّكَ مِنْۢ بَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

৭. ‘আর যারা খারাপ কাজ করল, তারপর তাওবা করল এবং ঈমান আনল, নিশ্চয় তোমার রব এরপরও ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আ’রাফ-৭ : ১৫৩)

وَ هُوَ الَّذِیْ یَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَ یَعْفُوْا عَنِ السَّیِّاٰتِ وَ یَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ.

৮. ‘আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা করো, তা তিনি জানেন।’ (সূরা শুরা-৪২ : ২৫)

فَمَنْ تَابَ مِنْۢ بَعْدِ ظُلْمِهٖ وَ اَصْلَحَ فَإِنَّ اللّٰهَ یَتُوْبُ عَلَیْهِ إِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ .

৯. ‘অতপর যে তার জুলুমের পর তাওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৩৯)


আল হাদিস

عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ قَالَ سَمِعْتُ الْاَغَرَّ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ يُحَدِّثُ ابْنَ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوْبُوْا إِلَى اللهِ فَإِنِّيْ أَتُوْبُ فِيْ الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ- (مُسْلِمْ : بَابٌ فِي التَّوْبَةِ)

১. হজরত আবু বুরদা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল  #    এর সাহাবি আগার "    কে বলতে শুনেছি, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    এর নিকট বর্ণনা করেন,  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘হে মানবমণ্ডলী তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো, নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন একশতবার তাওবা করে থাকি।’ (মুসলিম : বাবুন ফিত-তাওবাতি, ইফা : ৬৬১৩)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِنَّ اللهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرغِرْ- (تِرْمِذِيْ : بَابٌ فِيْ فَضْلِ التَّوْبَةِ وَالْاِسْتِغْفَارِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করেন।’ (তিরমিজি : বাবুন ফি ফাদলিত তাওবাতি ওয়াল ইস্তেগফারি, ইফা :  ৩৫৩৭)

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ ﷺ اَللهُ اَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلٰى بَعِيْرِه وَقَدْ أَضَلَّه فِيْ أَرْضِ فَلَاةٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ التَّوْبَةِ)

৩. হজরত আনাস "    বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় তোমাদের ওই ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যার উট মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর সে তা ফিরে পেল।’ (বুখারি : বাবুত তাওবাতি, ইফা : ৫৮৭০)

عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَه بِاللَّيْلِ لِيَتُوْبَ مُسِيْءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَه بِالنَّهَارِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئُ اللَّيْلِ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا- (مُسْلِمْ : بَابُ قَبُوْلِ التَّوْبَةِ مِنَ الذُّنُوْبِ)

৪. হজরত আবু মুসা "   নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘পশ্চিমদিক থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতে তার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে দিনের গুনাহগার তাওবা করে। আর তিনি প্রতিদিন তার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে রাতের গুনাহগার তাওবা করে।’ (মুসলিম : বাবু কুবুলিত তাওবাতি মিনাজ জুনুবি, ইফা : ৬৭৩৪)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ  يَقُوْلُ : لَوْ كَانَ لِابْنِ اۤدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لَابْتَغٰى ثَالِثًا وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ اۤدَمَ إِلَّا التُّرَابُ وَيَتُوْبُ اللهُ عَلٰى مَنْ تَابَ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَ يُتَّقٰى مِنْ فِتْنَةِ الْمَالِ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি করিম  #   -কে বলতে শুনেছি, ‘যদি আদম সন্তানের জন্য সম্পদের দুটি উপত্যাকাও থাকে সে তৃতীয় আরেকটি কামনা করে। আর বনি আদমের মুখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবে না। আর যে ব্যক্তি তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।’ (বুখারি : বাবু মা ইউত্তাকা মিন ফিতনাতিল মালি, ইফা : ৫৯৯৩)
























৩৫. গিবত : اَلْغِيْبَةُ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِیْرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوْا وَ لَا یَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًا اَیُحِبُّ اَحَدُكُمْ أَنْ یَّاْكُلَ لَحْمَ اَخِیْهِ مَیْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیْمٌ.

১. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।’  (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ১২)

لَا یُحِبُّ اللّٰهُ الْجَهْرَ بِالسُّوْءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ وَ كَانَ اللّٰهُ سَمِیْعًا عَلِیْمًا.

২. ‘মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারও ওপর জুলুম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৪৮)

وَیْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةِ.

৩. ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে সামনে নিন্দাকারী ও পেছনে গিবতকারী।’  (সূরা হুমাযাহ-১০৪ : ১)


আল হাদিস

۱. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  : مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلْيَقُلْ خَيْرًا اَوْ لِيَصْمُتْ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنْ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلَا يُؤْذِ جَارَه وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَه- (بُخَارِيْ : بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ، مُسْلِمْ : بَابُ الْحَثِّ عَلى اِكْرَامِ الضَّيْفِ...)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশিকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।’ (বুখারি : বাবু হিফজিল লিসানি, ইফা : ৬০৩১, মুসলিম : ইফা : ৭৯)

۲. عَنْ عُقْبَةَ ابْنِ عَامِرٍ قَالَ قُلْتُ يَارَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ : أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيْئَتِكَ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ حِفْظِ اللِّسَانِ)

২. হজরত উকবা ইবনে আমের "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল  #   ! কীসে মুক্তি নিহিত রয়েছে? রাসূল  #   বললেন,  তোমার জিহ্বাকে সংযত রাখো, তোমার ঘরকে প্রশস্ত রাখো এবং তোমার কৃত অপরাধের জন্য (আল্লাহর দরবারে) কান্নাকাটি করো।’  (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফি হিফজিল লিসানি, ইফা : ২৪০৯)

۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ ﷺ : لَا تَحَاسَدُوْا وَلَا تَنَاجَشُوْا وَلَا تَبَاغَضُوْا وَلَا تَدَابَرُوْ وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا، اَلْمُسْلِمُ اَخُوْ الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُه وَلَا يَخْذُلُه وَلَا يَحْقِرُه اَلتَّقْوٰى هَاهُنَا وَيُشِيْرُ إِلٰى صَدْرِه ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، بِحَسْبِ امْرِىٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ  حَرَامٌ دَمُه وَمَالُه وَعِرْضُه- (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ ظُلْمِ الْمُسْلِمِ وَخَذْلِه وَاحْتِقَارِه وَدَمِه وَعِرْضِه وَمَالِه)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা পোষণ করো না, ঘৃণা বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, কেউ অপর কারও ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ক্রয়-বিক্রয় করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে থাকো। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না, অপমান অপদস্থ করতে পারে না এবং হীন জ্ঞানও করতে পারবে না। তাকওয়া এখানে। এ কথাটা তিনি তিনবার বলেন এবং নিজের বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করেন। কোনো ব্যক্তির খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা করে, হীন মনে করে। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত (জীবন) ধন-সম্পদ ও মান সম্মান অন্য সব মুসলিমের জন্য হারাম।’ (মুসলিম : বাবু তাহরিমি জুলমিল মুসলিমি ওয়া খাজলহি ওয়া ইহতি কারিহি ওয়া দামিহি ওয়া ইরদিহি ওয়া মালিহি, ইফা : ৬৩০৯)

۴. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَاالْغِيْبَةُ؟ قَالُوْا : اللهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ : ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ، قِيْلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِيْ أَخِىْ مَا أَقُوْلُ؟ قَالَ : إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ اِغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ- (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الْغِيْبَةِ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো গিবত কী? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার ভাইকে তার অনুপস্থিতিতে এমনভাবে উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলো, বলুন তো আমি যা বলছি তা যদি সত্যিই ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে কী হবে? তিনি বলেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে তুমি তার গিবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। (মুসলিম : বাবু তাহরিমিল গিবাতি, ইফা : ৬৩৫৭)













৩৬. হাদিস বর্ণনায় সতর্কতা : اَلْحَذَرُ فِيْ رِوَايَةِ الْحَدِيْثِ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوْۤا أَنْ تُصِیْبُوْا قَوْمًۢا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰی مَا فَعَلْتُمْ نٰدِمِیْن.

১. ‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’  (সূরা হুজরাত-৪৯ : ৬)

وَ لَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلٰلٌ وَّ هٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَی اللّٰهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلَی اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَ.

২. ‘এই যে তোমাদের মুখ মিথ্যা হুকুম জারি করে যে, এ জিনিস হালাল ও ওই জিনিস হারাম, এভাবে তোমরা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করো না। যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা বানিয়ে বলে তারা কখনো সফল হতে পারে না।’ (সূরা নাহল-১৬ : ১১৬)

مَا یَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَیْهِ رَقِیْبٌ عَتِیْدٌ.

৩. ‘তার মুখ থেকে যে শব্দই বের হয়, তা (রেকর্ড করার জন্য) পাহারাদার হাজির রয়েছে।’  (সূরা ক্বাফ-৫০ : ১৮)


আল হাদিস

১۱. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ : بَلِّغُوْاعَنِّيْ وَلَوْ اٰيَةً وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ وَلَا حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ - (بُخَارِيْ: بَابُ مَا ذُكِرَ عَنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ)


১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    বর্ণনা করেন, নবি করিম  #    বলেন,  ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তা প্রচার করো। আর বনি ইসরাইল সম্পর্কে আলোচনা করো তাতে কোনো দোষ নেই। আর যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তালাশ করে।’ (বুখারি : বাবু মা জুকিরা আন বনি ইসরাইল, ইফা : ৩২১৫)

২۲. عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلَ : نَضَّرَ اللهُ اِمْرَأً سَمِعَ  مِنَّا شَيْئًا فَبَلَّغَه فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعٰى مِنْ سَامِعٍ . (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْحَثِّ عَلٰى تَبْلِيْغِ السِّمَاعِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি করিম  #    কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোনো হাদিস শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে সেভাবেই তা অপরের নিকট পৌঁছিয়েছে। কেননা, অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয়, সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেক্ষণকারী বা জ্ঞানী হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফিল হাসসি আলা তাবলিগিস সিমাই, ইফা : ২৬৫৮)

৩۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ لاَ يُلْقِيْ لَهَا باَلًا يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لَايُلْقِيْ لَهَا بَالًا يَهْوِيْ بِهَا فِيْ جَهَنَّمَ۔ (بُخَارِيْ : بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিমূলক কথা বলে কিন্তু এ পরিণামের পরোয়া করে না, তখন এর পরিবর্তে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে কিন্তু এর পরিণাম সম্পর্কে সে মোটেই চিন্তা করে না, তখন কথা দ্বারা সে নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।’ (বুখারি : বাবু হিফজিল লিসানি, ইফা : ৬০৩৪)

৪۴.عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ :كَفٰى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ - (مُسْلِمْ : بَابُ مُقَدِّمَةُ الصَّحِيْحِ)

৪. হজরত হাফস ইবনে আসেম "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়। (মুসলিম : মুকাদ্দিমাতুস সহিহ, ০৫)


























৩৭. সহিহ নিয়ত : النِّيَّةُ الصَّحِيْحَةُ

আল কুরআন

وَ مَاۤ  اُمِرُوْا  إِلَّا لِیَعْبُدُوا الله مُخْلِصِیْنَ لَهُ  الدِّیْنَ حُنَفَآءَ وَ یُقِیْمُوا الصَّلٰوۃَ  وَ یُؤْتُوا الزَّکٰوةَ وَ ذٰلِكَ دِیْنُ الْقَیِّمَةِ.

১. ‘তাদের এছাড়া অন্য হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা যেন দ্বীনকে আল্লাহর জন্য খালিস করে একমুখী হয়ে আল্লাহর দাসত্ব করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত আদায় করেÑ এটাই সঠিক মজবুত দ¦ীন।’ (সূরা বায়্যিনাহ-৯৮ : ৫)

مَنْ کَانَ یُرِیْدُ حَرْثَ الْاٰخِرَۃِ  نَزِدْ لَهٗ فِیْ حَرْثِهٖ وَ مَنْ کَانَ یُرِیْدُ حَرْثَ الدُّنْیَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا وَمَا لَهٗ  فِی الْاٰخِرَۃِ مِنْ نَّصِیْبٍ .

২. ‘যারা আখিরাতের চাষের জমি চায়, আমি তার কৃষিভূমি বাড়িয়ে দিই। আর যারা দুনিয়ার ক্ষেত-ফসল চায় তাকে দুনিয়া থেকেই কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখিরাতে তার কোনো হিস্যা নেই।’ (সূরা শুরা-৪২ : ২০)

إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللّٰهِ لَا نُرِیْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّ لَا شُكُوْرًا.

৩. (তারা বলে,) ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না।’ (সূরা দাহর-৭৬ : ৯)

وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّشْرِیْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَالله رَءُوْفٌۢ بِالْعِبَادِ .

৪. ‘অপরদিকে মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেয় এবং এমন বান্দাদের ওপর আল্লাহ বড়োই মেহেরবান।’ (সূরা বাকারা-০২ : ২০৭)

مَنْ كَانَ یُرِیْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهٗ فِیْهَا مَا نَشَآءُ لِمَنْ نُّرِیْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهٗ جَهَنَّمَ یَصْلٰىهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا-وَ مَنْ اَرَادَ الْاٰخِرَةَ وَ سَعٰی لَهَا سَعْیَهَا وَ هُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓىِٕكَ كَانَ سَعْیُهُمْ مَّشْكُوْرًا<

৫. ‘যে দুনিয়া চায় আমি সেখানে তাকে দ্রুত দিয়ে দিই, যা আমি চাই, যার জন্য চাই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, বিতাড়িত অবস্থায়। আর যে আখিরাত চায় এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে মুমিন অবস্থায়, তাদের চেষ্টা হবে পুরস্কারযোগ্য।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ১৮-১৯)

قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِیْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ یَعْلَمْهُ اللّٰهُ وَ یَعْلَمُ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ وَ اللّٰهُ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ.

৬. ‘বলো, তোমরা যদি তোমাদের অন্তরসমূহে যা আছে তা গোপন করো অথবা প্রকাশ করো, আল্লাহ তা জানেন। আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও জমিনে যা আছে, তাও তিনি জানেন। আল¬াহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ২৯)

لَنْ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ ؕ وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.

৭. ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেসবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পারো, এ জন্য  যে, তিনি তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা হাজ্জ-২২ : ৩৭)


আল হাদিস

১.عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  : إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرَ إِلٰى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلٰكِنْ يَّنْظُرَ إِلٰى قُلُوْبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ-(مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ ظُلْمِ الْمُسْلِمِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা  "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে লক্ষ করেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কার্যপ্রণালীর দিকে লক্ষ রাখেন।’ (মুসলিম : বাবু তাহরিমি জুলমিল মুসলিমি, ইফা : ৬৩১১)

২. عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ  : إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَّا نَوَىٰ فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلٰى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ إِلٰى اِمْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلٰى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ . (بُخَارِيْ : بَابُ كَيْفَ كَانَ بَدْءُ الْوَحْيِ)

২. হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #    কে বলতে শুনেছি, ‘যাবতীয় কাজের ফলাফল নিয়তের উপরেই নির্ভর করে। আর প্রতিটি লোক (পরকালে) তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি হিজরত করে দুনিয়ার দিকে তাকে অর্জন করার জন্য অথবা কোনো মহিলার দিকে তাকে বিয়ে করার জন্য তাহলে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে।’ (বুখারি : বাবু কাইফা কানা বাদউল অহি : ০১)

৩. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ :  إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضٰى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ أُسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِه فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ قَاتَلْتُ فِيْكَ حَتّٰى أُسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُّقَالَ جَرِيْءٌ فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أَمَرَ بِه فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِه حَتّٰى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْاٰنَ فَأُتِيَ بِه فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ الْقُرْاٰنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أَمَرَ بِه فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِه حَتّٰى أُلْقِيَ فيِ النَّارِ، وَرَجَلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِه فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيْلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيْهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيْهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَّادٌ فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَبِه ثُمَّ أُلْقِىَ فِي النَّارِ۔ (مُسْلِمْ : بَابُ مَنْ قَاتَلَ لِلرِّيَاءِ وَالسُّمْعَةِ اِسْتَحَقَّ النَّارَ(

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল  #      কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে, যিনি শহিদ হয়েছেন, তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করে তার প্রতি আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। সেই সব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভাগের কথা স্বীকার করবে। অতপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি এসব নিয়ামত পেয়ে কী করেছ? সে উত্তরে বলবে আমি আপনার পথে লড়াই করতে করতে শেষ পর্যন্ত শহিদ হয়ে গিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি বীর খ্যাতি অর্জনের জন্য লড়াই করেছ এবং সে খ্যাতি তুমি দুনিয়াতেই পেয়ে গেছ। অতপর তাকে উপুড় করে পা ধরে টেনে-হিচঁড়ে দোজখে নিক্ষেপ করার হুকুম দেওয়া হবে এবং এভাবেই সে দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে। এরপর আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেছে, দ্বীনের শিক্ষা দিয়েছে এবং আল কুরআন পড়েছে। তাকে তার প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। সে ব্যক্তি এসব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এসব নিয়ামত পেয়ে তুমি কী করেছ? সে বলবে আমি দ্বীনের ইলম অর্জন করেছি, ইলম শিক্ষা দিয়েছি আর আপনার সন্তুষ্টির জন্য আল কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি আলেম হিসেবে খ্যাতি লাভের জন্য জ্ঞান অর্জন করেছে। তুমি ক্বারি হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার জন্য আল কুরআন পড়েছ। সে খ্যাতি তুমি অর্জনও করেছ। তারপর ফায়সালা দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে, যাকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা ও নানা রকম ধন সম্পদ দান করেছেন। তাকে তার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। সে এসব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে এসব পেয়ে তমি কী করেছ? সে বলবে আমি আপনার পছন্দনীয় সব খাতেই আমার সম্পদ ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি দাতারূপে খ্যাত হওয়ার জন্যই দান করেছ। সে খ্যাতি তুমি অর্জনও করেছে। তারপর ফায়সালা দেওয়া হবে এবং উপুড় করে পা ধরে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম : বাবু মান কাতালা লিররিয়াই ওয়াস সুমআতি ইসতাহাক্কান্নারা, ইফা : ৪৭৭০)

৪. عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى رَضِيَ الله عَنْهُ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلٰى النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  فَقَالَ : اَلرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ وَالرَّجَلُ يُقَاتِلُ لِيُرٰى مَكاَنُهُ فَمَنْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُوْنَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ - (بُخَارِيْ : باَبُ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُوْنَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا)

৪. হজরত আবু মুসা আশয়ারি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবি করিম   #   এর নিকট আসল। অতপর সে বলল (হে আল্লাহর রাসূল) কোনো ব্যক্তি লড়াই করে গনিমতের জন্য, কেউ লড়াই করে খ্যাতির জন্য, আবার কোনো ব্যক্তি লড়াই করে তার অবস্থান দেখানোর জন্য, তাহলে কার লড়াই আল্লাহর পথে গণ্য হবে? রাসূল #   বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে, সেই শুধু আল্লাহর পথের (সৈনিক) হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি : বাবু মান কাতাল লিতাকুনা কালিমাতুল্লাহি হিয়াল উলইয়া, ইফা : ২৬১৫)
















৩৮. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা : نِظَامُ الدَّوْلَةِ الْاِسْلَامِيَّةِ

আল কুরআন

اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.

১. ‘তারা এমন যাদের আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।’ (সূরা হাজ্জ-২২ : ৪১)

إِنَّاۤ أَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىكَ اللّٰهُ وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا.

২. ‘নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাজিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করো সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।’ (সূরা নিসা-৪ : ১০৫)

وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِی الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَ لَیُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِیْنَهُمُ الَّذِی ارْتَضٰی لَهُمْ وَ لَیُبَدِّلَنَّهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ اَمْنًا یَعْبُدُوْنَنِیْ لَا یُشْرِكُوْنَ بِیْ شَیْـئًا وَ مَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

৩. ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর এরপর যারা কুফরি করবে তারাই ফাসিক।’ (সূরা আন নুর-২৪ : ৫৫)

وَ قُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِیْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّ اَخْرِجْنِیْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّ اجْعَلْ لِّیْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطٰنًا نَّصِیْرًا.

৪. ‘আর বলো, হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের করো উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করো।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৮০)

إِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ فِیْ سِتَّةِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰی عَلَی الْعَرْشِ یُغْشِی الَّیْلَ النَّهَارَ یَطْلُبُهٗ حَثِیْثًا وَّ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ وَ النُّجُوْمَ مُسَخَّرٰتٍ بِاَمْرِهٖ اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَمْرُ تَبٰرَكَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَ.

৫. ‘নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রেখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।’ (সূরা আরাফ-৭ : ৫৪)

اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِیَّةِ یَبْغُوْنَ وَ مَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللّٰهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ یُّوْقِنُوْنَ.

৬. ‘তারা কি তবে জাহিলিয়াতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৫০)

مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ إِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ أَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلّٰهِ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا إِلَّاۤ اِیَّاهُ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ.

৭. ‘তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাজিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না। এটিই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।’ (সূরা ইউসুফ-১২ : ৪০)

یٰدَاوٗدُ إِنَّا جَعَلْنٰكَ خَلِیْفَةً فِی الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَیْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعِ الْهَوٰی فَیُضِلَّكَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ إِنَّ الَّذِیْنَ یَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِیْدٌۢ بِمَا نَسُوْا یَوْمَ الْحِسَابِ.

৮. ‘(হে দাঊদ), নিশ্চয় আমি তোমাকে জমিনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা, তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আজাব রয়েছে। কারণ, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।’ (সূরা স্বোয়াদ-৩৮ : ২৬)


আল হাদিস

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ : مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ فَإِنَّه مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ـ (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ سَتَرَوْنَ بَعْدِيْ أُمُوْرًا تُنْكِرُوْنَه) 

১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার নেতার মাঝে এমন কিছু দেখে যা অপছন্দনীয় সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য থেকে সামান্যতমও দূরে গেল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।’ (বুখারি : বাবু ক্বাওলিন নাবিয়্য সাতারাওনা বা’দি উমুরান তুনকিরুনাহু, ইফা : ৬৫৭৬ )

عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى الْأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ اللهِ إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْاٰنِ غَيْرَ الْغَالِيْ فِيْهِ وَالْجَافِيْ عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ ـ (اَبُوْ دَاؤدَ: بَابٌ فِي الرَّجُلِ يَجْلِسُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ بَغَيْرِ إذْنِهِمَا)

২. হজরত আবু মুসা আশয়ারী "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ # বলেছেন, ‘বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, আল-কুরআনের বাহক যদি তাতে অতিরঞ্জিত কিছু না করে তাকে সম্মান করা এবং ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ : বাবুন ফির রজুলি ইয়াজলিসু বাইনার রজুলাইনি বিগাইরি ইযনিহিমা, ইফা : ৪৭৬৮)

عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  يَقُوْلُ : ثَلَاثٌ أَخَافُ عَلٰى أُمَّتِيْ اَلْاِسْتِسْقَاءُ بِالْأَنْوَاءِ وَحَيْفُ السُّلْطَانِ وَتَـكْذِيْبٌ بِالْقَدْرِ ـ (اَلْأَلْبَانِيْ : صَحِيْحُ الْجَامِعِ)  

৩. হজরত জাবের ইবনে সামুরা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ #   কে বলতে শুনেছি, ‘আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে তিনটি বিষয়ের আশঙ্কা করি ১. তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা ২. শাসকদের পক্ষ থেকে অত্যাচার ৩. তাকদিরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।’ (আলবানি : সহিহুল জামি : ৩০২২)

















৩৯. ইসলামী অর্থব্যবস্থা : نِظَامُ الإِقْتِصَدِ الْإِسْلَامِيِّ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّاۤ أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَ لَا تَقْتُلُوْۤا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِكُمْ رَحِیْمًا.

১. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা-০৪ : ২৯)

وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَ تُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَی الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَ أَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

২. ‘আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদেও (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোনো অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে-বুঝে খেয়ে ফেলতে পারো।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৮৮)

وَ فِیْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآىِٕلِ وَ الْمَحْرُوْمِ.

৩. ‘আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক।’ (সূরা জারিয়াত-৫১ : ১৯)

إِنَّ الَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللّٰهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ أَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِیَةً یَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ -لِیُوَفِّیَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَ یَزِیْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ إِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ.

৪. ‘নিশ্চয় যারা আল্ল¬াহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদের তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী।’ (সূরা ফাতির-৩৫ : ২৯-৩০)

وَ مَا كَانَ لِنَبِیٍّ أَنْ یَّغُلَّ وَ مَنْ یَّغْلُلْ یَاْتِ بِمَا غَلَّ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ثُمَّ تُوَفّٰی كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَ هُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ.

৫. ‘আর কোনো নবির জন্য উচিত নয়, সে খিয়ানত করবে। আর যে খিয়ানত করবে, কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে তা নিয়ে যা সে খিয়ানত করেছে। অতপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে পুরোপুরি দেওয়া হবে যা সে উপার্জন করেছে এবং তাদেরকে জুলুম করা হবে না।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৬১)

اَلَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوْمُوْنَ إِلَّا كَمَا یَقُوْمُ الَّذِیْ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْۤا إِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَ اَمْرُهٗ اِلَی اللّٰهِ وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

৬. ‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্যÑ তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতোই। অথচ আল্ল¬াহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্ল¬াহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৭৫)

وَ ابْتَغِ فِیْمَاۤ اٰتٰىكَ اللّٰهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَ لَا تَنْسَ نَصِیْبَكَ مِنَ الدُّنْیَا وَ اَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللّٰهُ اِلَیْكَ وَ لَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِی الْاَرْضِ إِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الْمُفْسِدِیْنَ.

৭. ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান করো। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ করো। আর জমিনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা কাসাস-২৮ : ৭৭)


আল হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيْضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ ـ (اَلْبَيْهَقِيْ : شُعَبِ الْاِيْمَانِ، ضَعَّفَهُ الْاَلْبَانِيْ)

১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘ফরজ ইবাদাতের পরে হালাল রুজির সন্ধান করাও ফরজ।’ (বায়হাক, শায়াবুল ঈমাম ৮৪৮২, আলবানি একে দয়িফ’ বলেছেন)

۲. عَنْ أَبِيْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ اِسْتَعْمَلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : رَجُلًا عَلٰى صَدَقَاتِ بَنِيْ سُلَیْمٍ يُدْعٰی اِبْنُ اللُّتْبِيَّةِ فَلَمَّا جَاءَ حَاسَبَهُ قَالَ هٰذَا مَالُكُمْ وَهٰذَا هَدِيَّةٌ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : فَهَلَّا جَلَسْتَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْكَ وَأُمِّكَ حَتّٰى تَأْتِيْكَ هَدِيَّتُكَ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا، ثُمَّ خَطَبَنَا فَحَمِدَ الله وَأَثْنٰى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّيْ أَسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلٰى الْعَمَلِ مِمَّا وَلَّانِيَ الله فَيَأْتِيْ فَيَقُوْلُ هٰذَا مَالُكُمْ وَهٰذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِيْ أَفَلَا جَلَسَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْهِ وَأُمِّهِ حَتّٰى تَأْتِيَهُ هَدِيَّةٌ وَاللهِ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌمِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ إِلَّا لَقِيَ الله يَحْمِلُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَلَأَعْرِفَنَّ أَحَدًا مِنْكُمْ لَقِيَ الله يَحْمِلُ بَعِيْرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ أَوْ شَاةً تَيْعَرُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَهُ حَتّٰى رُئِيیَ بَيَاضُ إِبْطِهِ يَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ بَصْرَ عَيْنِيْ وَسَمْعَ أُذُنِيْ ۔ (اَلْبُخَارِيْ : بَابُ اِحْتِيَالِ الْعَامِلِ لِیُهْدٰی لَهُ)

২. হজরত আবু হুমাইদি আস সায়েদি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল #   একদা বনি সুলাইম গোত্রের ইবনুল লুতিবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে জাকাত উত্তোলনের কাজে নিযুক্ত করলেন। অতপর যখন (জাকাত) সে হিসেব দিতে আসল সে বলল, এটা তোমাদের সম্পদ আর এটা আমার জন্য হাদিয়া (হিসেব দেওয়া হয়েছে)। অতপর রাসূল  #   বললেন, তুমি কি তোমার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকতে পারলে না। অতপর দেখতে তোমার জন্য হাদিয়া নিয়ে আসা হয় কি না? যদি তুমি তোমার দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো! অতপর রাসূলুল্লাহ #     আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ করলেন। আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর গুণ-কীর্তন করলেন, অতপর বললেন, আম্মাবা’দু, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে কোনো কাজে নিযুক্ত করি যে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অতপর সে (কর্মকর্তা) এসে বলে, এটা তোমাদের সম্পদ আর এটা আমাকে হাদিয়াস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। তাহলে সে কি তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকতে পারে না, দেখুক কেউ তার জন্য হাদিয়া নিয়ে আসে কি না? আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ যখন অন্যায়ভাবে কোনো কিছু গ্রহণ করে, অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে এগুলো (কাঁধে) বহন করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। আমি তোমাদের কাউকে। জানি, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমনভাবে, সে উট বহন করবে আর তা ছি ছি করবে অথবা গাভী বহন করবে যা হাম্বা হাম্বা করবে অথবা বকরি বহণ করবে যা ভ্যা ভ্যা করে চিৎকার করবে। অতপর রাসূল  #    তার হাত এমনভাবে উত্তোলন করলেন যে তার বগলের শুভ্রতা দেখা গেল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছিয়ে  দিয়েছি? (রাসূল  #     এর এই অবস্থা আমার চোখ দেখেছে এবং আমার কান শ্রবণ করেছে।’ (বুখারি : বাবু ইহতিয়ালিল আমেলে লিইউহদা লাহু, ইফা : ৬৫০৮)

৩৩. عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : أَنَا أَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَمَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِأَهْلِه وَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيَاعًا فَعَلَـىَّ وَإِلَـيَّ فَأَنَا أَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ- (صَحِيْحُ اِبْنِ حِبَّانٍ: فَصْلٌ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الْجَنَازَةِ)  

২. হজরত জাবের "   থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘মুমিনদের জন্য আমার ভালোবাসা তার নিজ সত্তার চাইতেও বেশি। যে ব্যক্তি (মৃত্যুবরণের সময়) সম্পদ রেখে গেল, তা তার পরিবার পরিজনের জন্য। আর যে ব্যক্তি ঋণ বা অসহায় সন্তান রেখে গেল তার দায় দায়িত্ব আমার ওপর। কেননা মুমিনদের প্রতি আমার ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি।’ (সহিহ ইবনু হিব্বান : ফাসলুন ফিস সালাতি আলাল জানাজাতি, বা, হা : ৩০৬২)


৪০. ত্যাগ-কুরবানি : التَّضْحِيَةُ وَالْقُرْبَانُ

আল কুরআন

وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ یَّشْرِیْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ رَءُوْفٌۢ بِالْعِبَادِ.

১. ‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যে আল্ল¬াহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজকে বিকিয়ে দেয়। আর আল্ল¬াহ (তার) বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল।’ (সূরা বাকারা-০২ : ২০৭)

اَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْكُمْ وَ یَعْلَمَ الصّٰبِرِیْنَ.

২. ‘তোমরা কি মনে করো তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্ল¬াহ এখনও জানেননি তাদেরকে যারা তোমাদের মধ্য থেকে জিহাদ করেছে এবং জানেননি ধৈর্যশীলদের।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৪২)

وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْأَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ.

৩. ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৫৫)

اَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ یُّتْرَكُوْا أَنْ یَّقُوْلُوْا اٰمَنَّا وَ هُمْ لَا یُفْتَنُوْنَ- وَ لَقَدْ فَتَنَّا الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَیَعْلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا وَ لَیَعْلَمَنَّ الْكٰذِبِیْنَ.

৪. ‘মানুষ কি মনে করে যে আমরা ঈমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।’ (সূরা আনকাবুত-২৯ : ২-৩)

ِالَّذِیْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَیٰوةَ لِیَبْلُوَكُمْ اَیُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْغَفُوْرُ.

৫. ‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সূরা মুলক-৬৭ : ২)

اَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَ لَمَّا یَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِیْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلْزِلُوْا حَتّٰی یَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰی نَصْرُ اللّٰهِ اَلَاۤ إِنَّ نَصْرَ اللّٰهِ قَرِیْبٌ.

৬. ‘নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মতো কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদের স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকী রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, কখন আল¬াহর সাহায্য (আসবে)? জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্ল-াহর সাহায্য নিকটবর্তী।’ (সূরা বাকারা-২ : ২১৪)

مَاۤ اَصَابَ مِنْ مُّصِیْبَةٍ إِلَّا بِاِذْنِ اللّٰهِ وَ مَنْ یُّؤْمِنْۢ بِاللّٰهِ یَهْدِ قَلْبَهٗ وَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ.

৭. ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সূরা তাগাবুন -৬৪ : ১১)

اَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تُتْرَكُوْا وَ لَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْكُمْ وَ لَمْ یَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَ لَا رَسُوْلِهٖ وَ لَا الْمُؤْمِنِیْنَ وَلِیْجَةً وَاللّٰهُ خَبِیْرٌ ۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ.

৮. ‘তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ এখনও আল্লাহ যাচাই করেননি যে, তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ ছাড়া কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেনি। আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা তাওবা-৯ : ১৬)

وَ اَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَ نَهَی النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰی- فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِیَ الْمَاْوٰی.

৯. ‘আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সূরা নাজিয়াত-৭৯ : ৪০-৪১)


আল হাদিস

১. عَنِ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ قَالَ أَیْمُ اللهِ لَقَدْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  يَقُوْلُ : إِنَّ السَّعِيْدَ لِمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ إِنَّ السَّعِيْدَ لِمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ إِنَّ السَّعِيْدَ لِمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنِ وَلِمَنْ ابْتُلِيَ فَصَبَرَ فَوَاهًا۔ (اَبُوْ دَاوُدَ : بَابٌ فِي النَّهْيِ عَنِ السَّعْيِ فِي الْفِتْنَةِ(

১. হজরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূল #  কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই সে সৌভাগ্যবান, যাকে পরীক্ষার ফিতনা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, নিশ্চয়ই সে সৌভাগ্যবান, যাকে পরীক্ষার ফিতনা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, নিশ্চয়ই সে সৌভাগ্যবান, যাকে পরীক্ষার ফিতনা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, আর যাকে পরীক্ষা করা হয়েছে অতপর সে ধৈর্য ধারণ করেছে তার জন্য তো রয়েছে অশেষ সু-সংবাদ।’ (আবু দাউদ : বাবু ফিন্নাহি আনিস সাইয়ি ফিল ফিতনাতি, ইফা : ৪২১৪)

۲. عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  : إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ الله إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا اِبْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ ۔ (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الصَّبْرِ عَلَى الْبَلَاءِ(

২. হজরত আনাস "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘বিপদ ও পরীক্ষা যত কঠিন হবে, তার প্রতিদানও তত বড়ো হবে। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি (পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে) খুশি থাকে, আল্লাহও তার ওপর খুশি হন। আর যে, অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহও তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়।’ (তিরমিজি : বাবু মা জা, আ ফিস সাবরি আলাল বালাই, ইফা : ২৩৯৯)

৩. عَنْ أَنَسِ ابْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ اَلصَّابِرُ فِيْهِمْ عَلٰى دِيْنِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ ۔ (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ النَّهْيِ عَنْ سَبِّ الرِّيَاحِ(

৩. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘মানুষের ওপর এমন এক যুগ আসবে, যখন দ্বীনদারের জন্য দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার মতো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি : বাবু মা জা, আ আন সাব্বির রিয়াহি, ইফা : ২২৬৩)

৪. عَنْ خَبَّابِ بْنِ الْأَرَتِّ قَالَ شَكَوْنَا إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ  وَهُوَ مُتَوَسَّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِيْ ظِلِّ الْكَعْبَةِ قُلْنَا لَهُ أَلَا تَسْتَنْصِرُلَنَا أَلَا تَدْعُوْ الله لَنَا؟ قَالَ كَانَ الرَّجُلُ فِيْمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الْاَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيْهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوْضَعُ عَلٰى رَأْسِهِ فَیُشَقُّ بِاِثْنَتَيْنِ وَمَا يَصُدُّهُ ذٰلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيْدِ مَا دُوْنَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمِ أَوْ عَصَبٍ وَمَايَصُدُّهُ ذٰلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَاللهِ لَيَتِمَنَّ هٰذَا الْأَمْرُ حَتّٰى يَسِيْرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلٰى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا اللهَ أَوِ الذِّئْبَ عَلٰى غَنَمِهِ وَلٰكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُوْنَ (بُخَارِيْ : بَابُ عَلَامَاتِ النُّبُوَّةِ فِيْ الْاِسْلَامِ)

৪. হজরত খাব্বাব ইবনুল আরত "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা আমরা নবি-করিম  #    এর নিকট (আমাদের ওপর নির্যাতন সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম এমন অবস্থায় যে, তিনি তখন তাঁর চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে কাবার ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দুআ করবেন না? তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্বেকার ঈমানদার লোকদের অবস্থা ছিলÑ তাদের কারও জন্য গর্ত খোড়া হতো, অতপর গর্তে নিক্ষেপ করা হতো, অতপর করাত নিয়ে এসে মাথার ওপর স্থাপন করা হতো এবং তাকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এত কিছুর পরও তাকে দ্বীন থেকে সরানো যেত না। কারো শরীর লোহার চিরুনি দিয়ে আচড়িয়ে হাড় থেকে মাংস ও স্নায়ু তুলে ফেলা হতো কিন্তু এতে ও তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! অবশ্যই এই দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে এমনকী তখন যে কোনো আরোহী সানআ থেকে হাজারামাউত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ (নিরাপদে) পাড়ি দেবে। এ দীর্ঘ সফরে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ও ভয় করবে না এবং মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া আর কারও (চোর, ডাকাত) ভয় থাকবে না। কিন্তু তোমরা বড়োই তাড়াহুড়া করছ। (বুখারি : বাবু আলামাতিন নবুয়্যাতি ফিল ইসলামি, ইফা : ৩৩৫৪)









৪১. কবিরা গুনাহ : اَلْكَبَائِرُ

আল কুরআন

اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ نُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِیْمًا.

১. ‘তোমরা যদি সেসব কবিরা গুনাহ পরিহার করো, যা থেকে তোমাদের বারণ করা হয়েছে, তাহলে আমি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদের প্রবেশ করাব সম্মানজনক প্রবেশস্থলে।’ (সূরা নিসা-০৪ : ৩১)

وَ الَّذِیْنَ یَجْتَنِبُوْنَ كَبٰٓئِرَ الْاِثْمِ وَ الْفَوَاحِشَ وَ إِذَا مَا غَضِبُوْا هُمْ یَغْفِرُوْنَ.

২. ‘(এরা হচ্ছে সে সব মানুষ) যারা বড়ো বড়ো গুনাহ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেচে থাকে, (বিশেষ করে) যখন রাগান্বিত হয় তখন তার (অন্যদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়)।’ (সূরা শূরা-৪২ : ৩৭)

اَلَّذِیْنَ یَجْتَنِبُوْنَ كَبٰٓئِرَ الْاِثْمِ وَ الْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ هُوَ اَعْلَمُ بِكُمْ اِذْ أَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَ اِذْ أَنْتُمْ اَجِنَّةٌ فِیْ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ فَلَا تُزَكُّوْا أَنْفُسَكُمْ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰی.

৩. ‘যারা ছোটোখাটো দোষ-ত্রুটি ছাড়া বড়ো বড়ো পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে, নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমার ব্যাপারে উদার, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত। যখন তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যখন তোমরা তোমাদের মাতৃগর্ভে ভ্রƒণরূপে ছিলে। কাজেই তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, সে সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত।’ (সূরা নাজম-৫৩ : ৩২)

وَ وُضِعَ الْكِتٰبُ فَتَرَی الْمُجْرِمِیْنَ مُشْفِقِیْنَ مِمَّا فِیْهِ وَ یَقُوْلُوْنَ یٰوَیْلَتَنَا مَالِ هٰذَا الْكِتٰبِ لَا یُغَادِرُ صَغِیْرَةً وَّ لَا كَبِیْرَةً إِلَّاۤ اَحْصٰىهَا وَ وَجَدُوْا مَا عَمِلُوْا حَاضِرًا ؕ وَ لَا یَظْلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا.

৪. ‘আমলনামা তোমাদের সামনে রেখে দেওয়া হবে। তোমরা তখন দেখতে পাবে, অপরাধীরা তাদের আমলনামায় লেখা সব বিষয় সম্পর্কে ভয় পাচ্ছে এবং বলছে হায়রে আমাদের মন্দ কপাল! এটা কেমন কিতাব যে আমাদের ছোটো-বড়ো এমন কোন কাজ নেই, যা এ কিতাবে লেখা হয়নি। যা কিছু তারা করেছে সবই তাদের সামনে হাজির পাবে এবং আপনার রব কারও ওপর সামান্য জুলুমও করবেন না।’ (সূরা কাহ্ফ-১৮ : ৪৯)

وَ لَا تَقْتُلُوْا اَوْلَادَكُمْ خَشْیَةَ اِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَ اِیَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْاً كَبِیْرًا.

৫. ‘অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তাদের রিজিক দিই এবং তোমাদেরও। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৩১)

وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللّٰهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.

৬. ‘আর স্মরণ করো, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হলো বড়ো জুলুম।’ (সূরা লুকমান-৩১ : ১৩)

وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰی إِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِیْلًا.

৭. ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সূরা বনি ইসারাইল-১৭ : ৩২)

وَ لَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَ مَنْ قُتِلَ مَظْلُوْمًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِیِّهٖ سُلْطٰنًا فَلَا یُسْرِفْ فِّی الْقَتْلِ إِنَّهٗ كَانَ مَنْصُوْرًا.

৮. ‘আর তোমরা সেই নাফসকে হত্যা করো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না; নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৩৩)


আল হাদিস

১. عَنِ الْمُغِيْرَةَ بْنِ شُعْبَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوْقَ الْأُمَّهَاتِ وَمَنْعَ وَهَاتِ وَوَأْدَ الْبَنَاتِ وَكَرِهَ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّوَالِ وَاِضَاعَةَ الْمَالِ - (بُخَارِيْ : بَابُ عُقُوْقِ الْوَالِدَيْنِ مِنَ الْكَبَائِرِ(

১. হজরত মুগিরা ইবনে শো’বা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া তোমাদের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। আর অযথা তর্ক-বিতর্ক অধিক (অবান্তর) প্রশ্ন করা এবং সম্পদ নষ্ট করাকে তোমাদের জন্য অপছন্দনীয় করেছেন।’ (বুখারি : বাবু উকুকিল ওয়ালেদাইনে মিনাল কাবায়ের, ইফা : ৫৫৫০)

২. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ ذَكَرَ رَسُوْلُ الله ﷺ : اَلْكَبَائِرَ أَوْ سُئِلَ عَنِ الْكَبَائِرِ فَقَالَ اَلشِّرْكُ بِاللهِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ فَقَالَ : أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ قَالَ قَوْلُ الزُّوْرِ أَوْ قَالَ شَهَادَةُ الزُّوْرِ قَالَ شُعْبَةُ وَأَكْثَرُ ظَنِّىْ أَنَّهُ قَالَ شَهَادَةُ الزُّوْرِ۔ (بُخَارِيْ : بَابُ عُقُوْقِ الْوَالِدَيْنِ مِنَ الْكَبَائِرِ)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল #    কবিরা গুনাহসমূহের উল্লেখ করলেন অথবা তাঁর কাছে তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। অতপর তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক, প্রাণ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। অতপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক কোনটি? তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। বর্ণনাকারী শোবা বলেন, আমার বেশি ধারণা হয়, সম্ভবত মিথ্যা সাক্ষ্যের কথাই বলেছেন।’ (বুখারি : বাবু উকিকুল ওয়ালেদাইনে মিনাল কাবায়েরে, ইফা : ৫৫৫২)

৩. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ خَرَجَ النَّبِيُّ ﷺ مِنْ بَعْضِ حِيْطَانِ الْمَدِيْنَةِ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِيْ قُبُوْرِهِمَا فَقَالَ يُعَذِّبَانِ وَمَايُعَذِّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ وَإِنَّهُ لَكَبِيْرٌ كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ وَكَانَ الْاٰخَرُ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ ثُمَّ دَعَا بِجَرِيْدَةٍ فَكَسَرَهَا بِكِسْرَتَيْنِ أَوْ ثِنْتَيْنِ فَجَعَلَ كِسْرَةً فِيْ قَبْرِهٰذَا وَكِسْرَةً فِيْ قَبْرِهٰذَا فَقَالَ لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا۔ (بُخَارِيْ : بَابُ النَّمِيْمَةِ مِنَ الْكَبَائِرِ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা নবি করিম  #    মদিনার একটি বাগানে বের হলেন, অতপর তিনি দুজন ব্যক্তিকে তাদের কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এমর্মে আওয়াজ শুনলেন। অতপর তিনি বললেন, তাদের দুজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কোনো বড়ো  বিষয়ের কারণে তাদের শাস্তি হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ! বিষয়টা বড়োই। তাদের একজন পেশাব  করার সময় পর্দা করত না। অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতপর তিনি একটি খেজুরের ডাল কেটে আনালেন। অতপর ডালটিকে দুই ভাগ করলেন, একটি ডালকে একটি কবরে পুঁতে দিলেন এবং অপর ডালটিকে দ্বিতীয় কবরে পুঁতলেন। অতপর বললেন, সম্ভবত ডাল দুটি শুকানোর পূর্ব পর্যন্ত তাদের শাস্তি হালকা করা হতে পারে।’ (বুখারি : বাবুন নামিমাতি মিনাল কাবায়িরে, ইফা ; ৫৬২৯)

۴৪. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ، قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَهَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ اُمَّهُ ۔ (مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ الْكَبَائِرِ وَأَكْبَرِهَا)

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস "    থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া কবিরা গুনাহর অন্তুর্ভুক্ত। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল  #    কোনো ব্যক্তি কি তার পিতা মাতাকে গালি দেয়? রাসূল  #    বলেছেন, হ্যাঁ, সে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন ওই ব্যক্তিও তার পিতাকে গালি দেয়। সে অন্যের মাকে গালি দেয় অতপর সে ব্যক্তিও তার মাকে গালি দেয়।’ (মুসলিম : বাবু বায়ানিল কাবায়িরি ওয়া আকবারিহা, ইফা : ১৬৫)

৫. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَاهُنَّ؟ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الْزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ ۔ (بُخَارِيْ : بَابُ رَمْيِ الْمُحْصَنَاتِ، مُسْلِمْ : بَابُ بَیَانِ الْكَبَائِرِ وَاَكْبَرِهَا)

৫. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকো। সাহাবায়ে কেরাম "    বললেন, হে আল্লাহর রাসূল  #    সেগুলো কী কী? তিনি  #    বললেন, ১. আল্লাহর সাথে শিরক করা ২. জাদু টোনা করা ৩. আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা হারাম করেছেন অন্যায়ভাবে তা হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ৭. সতী-সাধ্বি, সরল মুমিন নারীর ব্যাপারে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি : বাবু রামইল মুহসানাতি, ইফা : ৬৩৯৩; মুসলিম : বাবু বায়ানিল কাবায়িরে ওয়া আকবারিহা, ইফা : ১৬৪)

۵৬. قَالَ عَبْدُ اللهِ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَىُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ أَنْ تَدْعُوَ لِلّٰهِ نِدًا وَهُوَ خَلَقَكَ قَالَ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ مَخَافَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قَالَ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ أَنْ تُزَانِيَ حَلِيْلَةَ جَارِكَ، فَأَنْزَلَ الله عَزَّ وَ جَلَّ تَصْدِيْقَهَا [وَ الَّذِیْنَ لَا یَدْعُوْنَ مَعَ اللّٰهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَ لَا یَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللّٰهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَ لَا یَزْنُوْنَ ۚ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ یَلْقَ اَثَامًا] (مُسْلِمْ : بَابُ كَوْنِ الشِّرْكِ أَقْبَحُ الذُّنُوْبِ وَبَيَانِ أَعْظَمِهَا بَعْدَهُ)

৬. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "     বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল  #   ! আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড়ো অপরাধ কোনটি? রাসূল #   বললেন, আল্লাহর জন্য সমকক্ষ তৈরি করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। ওই লোক বলল, অতপর কোনটি? রাসূল #    বললেন, তোমার সন্তান তোমার খাবারের অংশীদার হবে এই ভয়ে তাকে হত্যা করা। ওই লোকটি বলল, অতপর কোনটি? রাসূল #   বললেন, তোমার প্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা। অতপর আল্লাহ তাআলা এগুলোর সত্যায়নে আয়াত নাজিল করলেন। “(রহমানের প্রকৃত বান্দাহ তারাই) যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ তাআলা যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা অন্যায়ভাবে বধ করে না এবং তারা জিনা করে না।” আর যে এগুলোতে লিপ্ত হয়, সে অপরাধী সাব্যস্ত হবে।’ [ফুরকান ২৫ : ৬৮] (মুসলিম : বাবু কাওনিশ শিরকি আকবাহুয যুনুবি ওয়া বায়ানি আজমিহা বাদাহু, ইফা : ১৬০)

৭. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ، قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً، قَالَ إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ اَلْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ۔ (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الْكِبْرِ وَ بَيَانِهِ)

৭. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকারও রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল (হে আল্লাহর রাসূল  #   ! নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তি কামনা করে তার কাপড় সুন্দর হউক, তার জুতা সুন্দর হউক! রাসূল #   বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। (জেনে রাখো) অহঙ্কার হচ্ছে সত্যকে গর্ব সহকারে অস্বীকার আর মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।’ (মুসলিম : বাবু তাহরিমিল কিবরি ওয়া বায়ানিহি, ইফা : ১৬৭)



















৪২. জান্নাত : اَلْجَنَّةُ

আল কুরআন

إِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنّٰتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا-خٰلِدِیْنَ فِیْهَا لَا یَبْغُوْنَ عَنْهَا حِوَلًا.

১. ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের মেহমানদারির জন্য ফিরদাউস নামক বেহেশত রয়েছে, যেখানে তারা চিরদিন থাকবে এবং সেখান থেকে অন্য কোথাও তারা যেতে চাইবে না।’ (সূরা কাহফ-১৮ : ১০৭-১০৮)

وَ سَارِعُوْا اِلٰی مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ.

২. ‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’  (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৩৩)

مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِیْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَ فِیْهَاۤ أَنْهٰرٌ مِّنْ مَّآءٍ غَیْرِ اٰسِنٍ وَ أَنْهٰرٌ مِّنْ لَّبَنٍ لَّمْ یَتَغَیَّرْ طَعْمُهٗ وَ أَنْهٰرٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشّٰرِبِیْنَ وَ أَنْهٰرٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّی وَ لَهُمْ فِیْهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ وَ مَغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِی النَّارِ وَ سُقُوْا مَآءً حَمِیْمًا فَقَطَّعَ اَمْعَآءَهُمْ.

৩. ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝরনাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সূরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝরনাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ  থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদের ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নÑবিচ্ছিন্ন করে দেবে?’ (সূরা মুহাম্মদ-৪৭ : ১৫)

إِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْهِمُ الْمَلٰٓئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ.

৪. ‘নিশ্চয় যারা বলে আল্লাহই আমাদের রব অতপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাজিল হয় (এবং বলে,) তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল।’ (সূরা হা-মিম আস সাজদাহ-৪১ : ৩০)

لَا یَسْتَوِیْۤ اَصْحٰبُ النَّارِ وَ اَصْحٰبُ الْجَنَّةِ اَصْحٰبُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ.

৫. ‘জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসীরা সমান নয়; জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর-৫৯ : ২০)

وَ بَشِّرِ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ كُـلَّمَا رُزِقُوْا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوْا هٰذَا الَّذِیْ رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَ اُتُوْا بِهٖ مُتَشَابِهًا وَ لَهُمْ فِیْهَاۤ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

৬. ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। যখনই তাদের জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেওয়া হবে, তারা বলবেÑএটা তো পূর্বে আমাদের খেতে দেওয়া হয়েছিল। আর তাদের তা দেওয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৫)

وَعَدَ اللّٰهُ الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا وَ مَسٰكِنَ طَیِّبَةً فِیْ جَنّٰتِ عَدْنٍ وَ رِضْوَانٌ مِّنَ اللّٰهِ اَكْبَرُ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.

৭. ‘আল্লাহ  মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়ো। এটাই মহাসফলতা।’ (সূরা তাওবা-৯ : ৭২)

إِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَهُمْ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِیْرُ.

৮. ‘নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।’ (সূরা বুরুজ-৮৫ : ১১)

إِنَّ الْمُتَّقِیْنَ فِیْ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوْنٍ.

৯. ‘নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝরনাধারায়।’ (সূরা যারিয়াত-৫১ : ১৫)

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَ إِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ.

১০. ‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৮৫)

وُجُوْهٌ یَّوْمَىِٕذٍ نَّاعِمَةٌ- لِّسَعْیِهَا رَاضِیَةٌ-فِیْ جَنَّةٍ عَالِیَةٍ- لَّا تَسْمَعُ فِیْهَا لَاغِیَةً- فِیْهَا عَیْنٌ جَارِیَةٌ- فِیْهَا سُرُرٌ مَّرْفُوْعَةٌ-وَّ اَكْوَابٌ مَّوْضُوْعَةٌ- وَّ نَمَارِقُ مَصْفُوْفَةٌ-وَّ زَرَابِیُّ مَبْثُوْثَةٌ.

১১. ‘সেদিন অনেক চেহারা হবে লাবণ্যময়। নিজদের চেষ্টা সাধনায় সন্তুষ্ট। সুউচ্চ জান্নাতে সেখানে তারা শুনবে না কোনো অসার বাক্য। সেখানে থাকবে প্রবাহমান ঝরনাধারা, সেখানে থাকবে সুউচ্চ আসনসমূহ। আর প্রস্তুত পানপাত্রসমূহ। আর সারি সারি বালিশসমূহ। আর বিস্তৃত বিছানো কার্পেটরাজি।’ (সূরা গাশিয়াহ-৮৮ : ৮-১৬)

وَ سِیْقَ الَّذِیْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ اِلٰی الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتّٰی إِذَا جَآءُوْهَا وَ فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَ قَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلٰمٌ عَلَیْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوْهَا خٰلِدِیْنَ.

১২. ‘আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদের দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌঁছবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা ভালো ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ করো।’ (সূরা জুমার-৩৯ : ৭৩)


আল হাদিস

۱১. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : قَالَ الله تَعَالٰی أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِيْنَ مَالَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَاخَطَرَ عَلٰى قَلْبِ بَشَرٍ فَاقْرَأُوْا إِنْ شِئْتُمْ (فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ - (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ الْجَنَّةِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাহদের জন্য এ (জান্নাত) তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কোনো দিন দেখেনি, কোনো কান কোনো দিন শুনেনি এবং কোনো মানব হৃদয় তা কল্পনাও করতে পারেনি। যদি তোমরা ইচ্ছে করো (এর সমর্থনে) পড়তে পারো, কোনো প্রাণ জানে না তাদের জন্য চক্ষুশীতলকারী যা গোপন রাখা হয়েছে।’ (বুখারি : বাবু মা জা’আ ফি সিফাতিল জান্নাতি, ইফা : ৩০১০)

۲২. عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ  يَقُوْلُ : إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُوْنَ فِيْهَا وَيَشْرَبُوْنَ وَلَا يَتْفُلُوْنَ وَلَا يَبُوْلُوْنَ وَلَا يَتَغَوَّطُوْنَ وَلَا يَمْتَخِطُوْنَ قَالُوْا فَمَا بَالُ الطَّعَامِ؟ قَالَ جُشَاءٌ وَ رَشْحٌ کَرَشْحِ الْمِسْكِ يُلْهَمُوَْنَ التَّسْبِيْحَ وَالتَّحْمِيْدَ كَمَا يُلْهَمُوْنَ النَّفَسَ- (مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ صِفَاتِ الْجَنَّةِ وَأَهْلِهَا)

২. হজরত জাবের "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি করিম #     -কে বলতে শুনেছি, ‘জান্নাতের অধিবাসীরা তথায় খাবে, পান করবে অথচ তাদের থুথু ফেলতে হবে না। পেশাব পায়খানাও করতে হবে না, নাকের শ্লেষাও ফেলতে হবে না। সাহাবায়েকেরাম "     বললেন, তাহলে ভবিষ্যৎ খাদ্যের কী হবে? রাসূল #   বললেন, ঢেকুর ও ঘামের মধ্য দিয়ে বের হবে কিন্তু তাতে থাকবে মিশকের ঘ্রাণ। আর তোমরা যেমন শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে থাকো, এমন শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো তারা আল্লাহর তাসবিহ ও প্রশংসা বাণী উচ্চারণ করতে থাকবে।’ (মুসলিম : বাবু ফি সিফাতিল জান্নাতি ওয়া আহলিহা, ইফা : ৬৮৮৯)

۳৩. عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اِطَّلَعْتُ فِيْ الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِيْ النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ ـ (بُخَارِيْ : بَابُ صِفَةِ الْجَنَّةِ وَ النَّارِ، مُسْلِمْ : بَابُ اَكْثَرِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اَلْفُقَرَاءُ )

৩. হজরত ইমরান ইবনে হোসাইন "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখেছি, তার অধিকাংশ অধিবাসীই দরিদ্র। আর জাহান্নামে উঁকি দিয়ে দেখেছি তার অধিকাংশ মহিলা।’ (বুখারি : ইফা :  ৬১০৩, মুসলিম : ইফা : ৬৬৮৭)  

۴.عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ اَلسَّاعِدِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَوْضِعُ سَوْطٍ فِيْ الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَاـ (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ الْجَنَّةِ)

৪. হজরত সাহল ইবনে সাদ সায়েদি "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘একটি চাবুক রাখার পরিমাণ সম জান্নাতের মর্যাদা গোটা পৃথিবী এবং তার মাঝে যা রয়েছে, তার চাইতেও উত্তম।’ (বুখারি : ইফা :  ৩০২৩)

۵৫. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ الله عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَشَجَرَةً يَسِيْرُ الرَّاكِبُ فِيْ ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقْطَعُهَا (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ الْجَنَّةِ، مُسْلِمْ : بَابُ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةً)

৫. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, নবি  #    বলেন, ‘জান্নাতে এমন একটি গাছ রয়েছে, যার ছায়াতলে কোনো আরোহী একশো বছর দৌড়ালেও গাছের ছায়া শেষ হবে না।’ (বুখারি : বাবু মা জা’আ ফি সিফাতিল জান্নাতি, ইফা :  ৩০২৪, মুসলিম : ইফা : ৬৮৭৭)

۶৬. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ لَا يَبْأَسُ لَا تَبْلٰى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنٰى شَبَابُهُ-(مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ دَوَامِ نَعِيْمِ أَهْلِ الْجَنَّةِ(

৬. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি কারীম  #    থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল #   বলেন, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে আশাহত হবে না এবং তার পোশাক কখনো পুরাতন-জীর্ণ হবে না আর যৌবনও কখনো শেষ হবে না।’ (মুসলিম : বাবুন ফি দাওয়ামি নায়িমি আহলিল জান্নাতি, ইফা : ৬৮৯৩)

৭. عَنْ أَبِيْ سَعِيْدِ الْخُدْرِيْ وَأَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : يُنَادِىْ مُنَادٍ إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوْا فَلَا تَسْقَمُوْا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوْتُوْا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوْا فَلَا تَهْرَمُوْا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوْا فَلَا تَبْأَسُوْا أَبَدًا فَذٰلِكَ قَوْلُهُ عَزَّ وَ جَلَّ [وَنُوْدُوْا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أَوْرَثْتُمُوْهَا بِمَاكُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَهُ]- (مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ دَوَامِ نَعِيْمِ أَهْلِ الْجَنَّةِ)

৭. হজরত আবু সাইদ খুদরি "   ও আবু হুরায়রা "   নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, নবি  #   বলেন, ‘(জান্নাতের মধ্যে) একজন ঘোষক ঘোষণা দিয়ে  বলবেন, নিশ্চয়ই তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা চিরজীবন লাভ করবে কখনো আর মরবে না, তোমরা চির যৌবন থাকবে কখনো তোমরা বৃদ্ধ হবে না, তোমরা নিয়ামতে ধন্য হবে, আর কখনো তোমরা আশাহত হবে না। আর তাই মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আওয়াজ আসবে এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী। এটা হলো তোমাদের কর্মের প্রতিদান।’ (মুসলিম : বাবুন ফি দাওয়ামি নায়িমি আহলিল জান্নাতি, ইফা : ৬৮৯৪)

۸৮. عَنْ جَرِيْرٍ قَالَ كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ إِذْ نَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ قَالَ : إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبُّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هٰذَا الْقَمَرَ لَاتُضَامُّوْنَ فِيْ رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَّا تُغْلَبُوْا عَلٰى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَصَلَاةٍ قَبْلَ غُرُوْبِ الشَّمْسِ فَافْعَلُوْا-(بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰی : وَ وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ أَنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْمَغْرِبِ عِنْدَ غُرُوْبِ الشَّمْسِ)

৮. হজরত জারির "     থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ  #   এর নিকট বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় রাসূল  #    পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবকে এমনভাবে (সুস্পষ্ট) দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা এ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ এবং তাঁকে দেখতে তোমাদের হুমড়ি খেয়ে পড়তে হবে না। কাজেই যদি তোমরা সূর্য উদিত হওয়া ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের (ফজর ও আসর) নামাজের ওপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য না দিতে পারো, তাহলে তাই করো।’ (অর্থাৎ এ নামাজ দুটি যথাসময় আদায় করো)। (বুখারি : বাবু কাওলিল্লাহি তাআলা ওয়া ওজুহুন ইয়াওমায়িজিন নাদেরা, ইলা রাব্বিহা নাজেরা, ইফা :  ৬৯২৮, মুসলিম : ইফা : ১৩০৯)









৪৩. জাহান্নাম : اَلنَّارُ

আল কুরআন

إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا-لِّلطَّاغِیْنَ مَاٰبًا- لّٰبِثِیْنَ فِیْهَاۤ اَحْقَابًا-لَا یَذُوْقُوْنَ فِیْهَا بَرْدًا وَّ لَا شَرَابًا- إِلَّا حَمِیْمًا وَّ غَسَّاقًا-جَزَآءً وِّفَاقًا.

১. ‘নিশ্চয় জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তনস্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোনো শীতলতা আস্বাদন করবে না এবং না কোনো পানীয়। ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া। উপযুক্ত প্রতিফলস্বরূপ।’ (সূরা নাবা-৭৮ : ২১-২৬)

إِنَّ الْمُجْرِمِیْنَ فِیْ عَذَابِ جَهَنَّمَ خٰلِدُوْنَ-لَا یُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَ هُمْ فِیْهِ مُبْلِسُوْنَ- وَ مَا ظَلَمْنٰهُمْ وَ لٰكِنْ كَانُوْا هُمُ الظّٰلِمِیْنَ.

২. ‘নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আজাবে স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আজাব কমানো হবে না এবং তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়বে। আর আমি তাদের ওপর জুলম করিনি; কিন্তু তারাই ছিল জালিম।’   (সূরা যুখরুফ-৪৩ : ৭৪-৭৬)

وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا یُقْضٰی عَلَیْهِمْ فَیَمُوْتُوْا وَ لَا یُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَا كَذٰلِكَ نَجْزِیْ كُلَّ كَفُوْرٍ.

৩. ‘আর যারা কুফরি করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোনো ফয়সালা দেওয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আজাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সূরা ফাতির-৩৫ : ৩৬)

وُجُوْهٌ یَّوْمَىِٕذٍ خَاشِعَةٌ-عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ-تَصْلٰی نَارًا حَامِیَةً-تُسْقٰی مِنْ عَیْنٍ اٰنِیَةٍ-لَیْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِیْعٍ-لَّا یُسْمِنُ وَ لَا یُغْنِیْ مِنْ جُوْعٍ.

৪. ‘সেদিন অনেক চেহারা হবে অবনত। কর্মক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে। তাদের পান করানো হবে ফুটন্ত ঝরনা থেকে। তাদের জন্য কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম ছাড়া কোনো খাদ্য থাকবে না। তা মোটা-তাজাও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করবে না।’ (সূরা গাশিয়াহ-৮৮ : ২-৭)

فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا وَ لَنْ تَفْعَلُوْا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیْ وَ قُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ  اُعِدَّتْ لِلْكٰفِرِیْنَ.

৫. ‘অতএব যদি তোমরা তা না করোÑ আর কখনো তোমরা তা করতে না অতএব আগুনকে ভয় করো যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৪)

وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ كَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

৬. ‘আর যারা কুফরি করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সূরা বাকারা-২ : ৩৯)

فَالْیَوْمَ لَا یَمْلِكُ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ نَّفْعًا وَّ لَا ضَرًّا وَ نَقُوْلُ لِلَّذِیْنَ ظَلَمُوْا ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّتِیْ كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ.

৭. ‘ফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোনো উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি জালিমদের উদ্দেশ্যে বলবÑ তোমরা আগুনের আজাব আস্বাদন করো যা তোমরা অস্বীকার করতে।’ (সূরা সাবা-৩৪ : ৪২)

وَ قَالَ الَّذِیْنَ فِی النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوْا رَبَّكُمْ یُخَفِّفْ عَنَّا یَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ.

৮. ‘আর যারা আগুনে থাকবে তারা আগুনের দারোয়ানদের বলবে, তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আজাব লাঘব করে দেন।’ (সূরা মুমিন-৪০ : ৪৯)

وَ مَنْ یَّعْصِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ یَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ یُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِیْهَا وَ لَهٗ عَذَابٌ مُّهِیْنٌ.

৯. ‘আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আজাব।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৪)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَ اَهْلِیْكُمْ نَارًا وَّ قُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ عَلَیْهَا مَلٰٓئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعْصُوْنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَ یَفْعَلُوْنَ مَا یُؤْمَرُوْنَ.

১০. ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, যারা আল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদের আদেশ করা হয়।’ (সূরা তাহরিম-৬৬ : ৬)

وَ سِیْقَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اِلٰی جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتّٰی إِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَ قَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ یَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ یَتْلُوْنَ عَلَیْكُمْ اٰیٰتِ رَبِّكُمْ وَ یُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ یَوْمِكُمْ هٰذَا قَالُوْا بَلٰی وَ لٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلٰی الْكٰفِرِیْنَ.

১১. ‘আর কাফিরদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদের বলবেÑ তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করত? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিল; কিন্তু কাফিরদের ওপর আজাবের বাণী সত্যে পরিণত হলো।’ (সূরা জুমার-৩৯ : ৭১)











আল হাদিস

۱১. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  قَالَ : نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَ سِتِّيْنَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا- (بُخَارِيْ : بَابُ صِفَةِ النَّارِ وَ أَنَّهَا مَخْلُوْقَةٌ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, তোমাদের এই (দুনিয়ার) আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ উত্তাপ মাত্র। বলা হলো হে আল্লাহর রাসূল  #   ! কেন, এই আগুনই কি যথেষ্ট ছিল না? রাসূল #   বললেন, ‘দুনিয়ার আগুন থেকে জাহান্নামের আগুনকে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর প্রতিটি অংশই আলাদাভাবে দুনিয়ার আগুনের সমতুল্য।’ (বুখারি : বাবু সিফাতিন নারি, ইফা : ৩০৩৭)

۲২. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اِشْتَكَتِ النَّارُ إِلٰى رَبِّهَا فَقَالَتْ رَبِّ أَكَلَ بَعْضِيْ بَعْضًا فَاَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَأَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الزَّمْهَرِيْرِ - (بُخَارِيْ : بَابُ صِفَةِ النَّارِ وَأَنَّهَا مَخْلُوْقَةٌ، مُسْلِمْ : بَابُ إِسْتِحْبَابِ الْإِبْرَادِ بِالظُّهْرِ فِيْ شِدَّةِ الْحَرِّ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "   বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলল, হে আমার রব! (আমার উত্তাপ এত বেশি যে,) আমার একাংশ অপরাংশকে খেয়ে ফেলছে। অতপর আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিয়েছেন একটি শীতকালে, অপরটি গ্রীষ্মকালে। একারণেই তোমরা গ্রীষ্মকালে গরম ও শীতকালে শীতের তীব্রতা অনুভব করে থাক।’ (বুখারি : বাবু সিফাতিন নারি, ইফা : ৩০৩২, মুসলিম : ইফা : ১২৭৭)

۳٣. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ إِذْ سَمِعَ وَجْبَةً فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ  تَدْرُوْنَ مَاهٰذَا؟ قَالَ قُلْنَا الله وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ هٰذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا فَهُوَ يَهْوِيْ فِي النَّارِ الْاٰنَ حَتّٰى اِنْتَهٰى إِلٰى قَعْرِهَا- (مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ شِدَّةِ حَرِّ نَارِ جَهَنَّمَ وَبُعْدِ قَعْرِهَا)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা আমরা রাসূলুল্লাহ  #    Ñএর নিকট ছিলাম। হঠাৎ করে এক বিকট শব্দ শোনা গেল। অতপর নবি কারিম  #   বললেন, তোমরা কি জানো, এটা কী? আবু হুরায়রা "    বলেন, আমরা বললাম আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক ভালো জানেন। রাসূল  #    বললেন, এটা হলো সে পাথর যা সত্তর বছর যাবৎ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে, এই মাত্র পাথরটি গর্তের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে।’ (মুসলিম : বাবু ফি শিদ্দাতি হাররি নারি জাহান্নামা ওয়া বু’দি কারিহা, ইফা : ৬৯০৪)

۴৪. عَنْ سَمُرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  يَقُوْلُ : إِنَّ مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلٰى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلٰى حُجْزَتِه وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلٰى عُنُقِه - (مُسْلِمْ : بَابٌ فِي شِدَّةِ حَرِّ نَارِ جَهَنَّمَ وَبُعْدِ قَعْرِهَ)

৪. হজরত সামুরা "    থেকে বর্ণিত। তিনি নবি  #    কে বলতে শুনেছেন, ‘জাহান্নামের আগুনে জাহান্নামিদের কারও গোড়ালি পর্যন্ত, কারও কোমর পর্যন্ত, কারও ঘাড় পর্যন্ত পুড়তে থাকবে।’ (মুসলিম : বাবুন ফি শিদ্দাতি হাররি নারি জাহান্নামা ওয়া বু’দি কারিহা, ইফা : ৬৯০৬)

۵৫. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ نَبِيَّ اللهِ ﷺ  قَالَ : لَا تَزَالُ جَهَنَّمُ تَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتّٰى يَضَعَ فِيْهَا رَبُّ الْعِزَّةِ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى قَدَمَهُ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ وَعِزَّتِكَ وَيُزْوٰی بَعْضُهَا إِلٰى بَعْضٍ - (اَلْبُخَارِيْ: بَابُ الْحَلَفِ بِعِزَّةِ اللهِ وَصِفَتِهِ وَكَلِمَاتِهِ، مُسْلِمْ : بَابٌ فِيْ شِدَّةِ حَرِّ نَارِ جَهَنَّمَ وَبُعْدُ قَعْرِهَا)

৫. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। নবি করিম  #    বলেছেন, ‘জাহান্নাম অনবরত বলতেই থাকবে আরও (অপরাধী) আছে কি? এমনকী শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তাআলা তার পা দ্বারা তাকে চেপে ধরবেন। জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট, যথেষ্ট। তোমার ইজ্জতের কসম! একাংশ অপরাংশকে নিবিষ্ট করে দিচ্ছে।’ (মুসলিম : বাবুন ফি শিদ্দাতি হাররি নারি জাহান্নামা ওয়া বু’দি করিয়া, ইফা :  ৬৯১৪, বুখারি : ইফা : ৬২০৬)

۶৬. عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  قَالَ : يُدْخِلُ الله أَهْلَ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ وَ يُدْخِلُ أَهْلَ النَّارِ النَّارَ ثُمَّ يَقُوْمُ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ فَيَقُوْلُ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فِيْهِ خَالِدٌ فِيْمَا هُوَ فِيْهِ - (اَلْبُخَارِيْ: بَابُ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ سَبْعُوْنَ أَ لْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ، مُسْلِمْ : بَابُ فِيْ شِدَّةِ حَرِّ نَارِ جَهَنَّمَ وَبُعْدِ قَعْرِهَا)

৬. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর জাহান্নামিদের জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। অতপর একজন ঘোষক দাড়িয়ে  ঘোষণা দেবেন, হে জান্নাতের অধিবাসিগণ! আর তোমাদের মৃত্যু নেই। ওহে জাহান্নামি! আর তোমাদের মৃত্যু নেই। প্রত্যেকেই স্ব স্ব অবস্থানে চিরকাল থাকবে।’ (মুসলিম : বাবুন ফি শিদ্দাতি হাররি নারি জাহান্নামা ওয় বু’দি কারিহা, ইফা : ৬৯২০, বুখারি : ইফা : ৬১০১)

٧৭. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : حُفَّتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ وَ حُفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ ـ (مُسْلِمْ : بَابُ الْجَنَّةِ وَصِفَتُ نَعِيْمِهَا وَأَهْلِهَا)

৭. হজরত আনাস "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘জান্নাতকে আবৃত রাখা হয়েছে কষ্টকর কার্য দ্বারা আর জাহান্নামকে লোভনীয় বস্তু দ্বারা আবৃত করে রাখা হয়েছে।’ (মুসলিম : ইফা : ৬৮৬৯)

۸৮. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  قَرَأَ هٰذِهِ الْآيَةَ [اِتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ] قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَوْ أَنَّ قَطْرَةً مِنَ الزَّقُّوْمِ قُطِرَتْ فِيْ دَارِ الدُّنْيَا لَأَفْسَدَتْ عَلٰى أَهْلِ الدُّنْيَا مَعَايِشَهُمْ فَكَيْفَ بِمَنْ يَكُوْنُ طَعَامَهُ -(تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ شَرَابِ أَهْلِ النَّارِ)

৮. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ  #    উক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেনÑ ইত্তাকুল্লাহ হাক্কা তুকাতিহি...(তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো, আর পূর্ণাঙ্গ মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।) অতপর রাসূল  #    বলেন, ‘যদি জাক্কুম বৃক্ষের এক ফোটা রস দুনিয়ার জমিনে ঢেলে দেওয়া হয়, তাহলে তা গোটা দুনিয়াবাসী ধ্বংস করে দেবে। (কারণ তার বিষক্রিয়া, দুর্গন্ধ এত বেশি)। সুতরাং জাক্কুম যার খাদ্য হবে, তাদের (জাহান্নামিদের) অবস্থা কেমন হবে?’ (তিরমিজি : বাবু মা জা’আ ফি সিফাতি সারাবি আহলিন নারি, ইফা : ২৫৮৬)

























৪৪. সুদ ও ঘুষ : اَلرِّبٰى وَالرِّشْوَةُ

আল কুরআন

یَمْحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَ یُرْبِی الصَّدَقٰتِ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیْمٍ.

১. ‘আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।’  (সূরা বাকারা-২ : ২৭৬)

 اَلَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوْمُوْنَ إِلَّا كَمَا یَقُوْمُ الَّذِیْ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا إِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَ اَمْرُهٗ اِلَی اللّٰهِ وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.

২. ‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতোই। অথচ আল্ল¬াহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই। আর তার ব্যাপারটি আল্ল¬াহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৭৫)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ-فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ.

৩. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলম করবে না এবং তোমাদের জুলম করা হবে না।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৭৮-২৭৯)

وَ لَا تَاْكُلُوْا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَ تُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَی الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَ أَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.

৪. ‘তোমরা একে অপরের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না। আবার জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে অন্যদের সম্পদের কোনো অংশ ভোগ করার জন্য বিচারকদের (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৮৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوا الرِّبٰوا اَضْعَافًا مُّضٰعَفَةً وَّ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

৫. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে। আর তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৩০)

وَ مَاۤ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَاۡ فِیْۤ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اٰتَیْتُمْ مِّنْ زَكٰوةٍ تُرِیْدُوْنَ وَجْهَ اللّٰهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ.

৬. ‘আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাকো, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলত আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাকো আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত।’ (সূরা রুম-৩০ : ৩৯)


আল হাদিস

۱১. عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اۤكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَه وَكَاتِبَه وَشَاهِدَيْه وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ (مُسْلِمْ : بَابُ لَعْنِ آكِلِ الرِّبَا وَمُؤْكِلِه)

১. হজরত জাবের "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ  #        সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, সুদ চুক্তি লেখক এবং সুদি কারবারের সাক্ষী সবাইকে অভিসম্পাত দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী।’ (মুসলিম : বাবু লায়ানি আকিলির রিবা ওয়া মুকিলিহি, ইফা : ৩৯৪৮)

۲২. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : الرِّبَا سَبْعُوْنَ حُوْبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَّنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ (اِبْنُ مَاجَةْ : بَابُ الْتَغْلِيْظِ فِيْ الرِّبَا(

২. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল #    বলেছেন, ‘সুদের রয়েছে সত্তর প্রকার গুনাহ। তার মধ্যে সবচেয়ে নিম্নতম হলো আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা।’ (ইবনে মাজাহ : বাবুত তাগলিজি ফির রিবা, বা.হা : ২২৭৪)

۳৩. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : لَعَنَ اللهُ اۤكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ وَقَالَ مَا ظَهَرَ فِيْ قَوْمٍ اَلرِّبَا وَالزِّنَا إِلَّا أَحَلُّوْا بِأَنْفُسِهِمْ عِقَابَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ- (أَحْمَدْ : مُسْنَدُ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ(

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, নবি করিম  #     বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, সুদি কারবারের সাক্ষী এবং তার চুক্তি লেখককে অভিসম্পাত দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল  #    আরও বলেছেন, কোন সম্প্রদায়ে যখন সুদ ও যিনা প্রকাশ্যে ঘটতে থাকে তখন তারা নিজেদের আল্লাহ তাআলার আজাবের উপযুক্ত করে নেয়।’ (আহমদ : মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, বা.হা : ৩৮০৯)

۴৪. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  اَلرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ - (أَبُوْ دَاوُدَ  : بَابٌ فِيْ كَرَاهِيَّةِ الرِّشْوَةِ(

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ #    ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষদানকারী উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন।’ (আবু দাউদ : বাবুন ফি কারাহিয়াতির রিশওয়াতি, ইফা : ৩৫৪২)

۵৫. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتٍّ وَّ ثَلَاثِيْنَ زَنْيَةً - (أَحْمَدْ: حَدِيْثُ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ(

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালাহ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল #    বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে এক দিরহাম সুদ গ্রহণ করল, সে ছত্রিশবার যিনা করার চাইতেও বড়ো অপরাধ করল।’ (আহমদ : হাদিসু আব্দুল্লাহিবনে হানজালা, বা.হা : ২২০০৭)

৪৫. কৃপণতা : اَلْبُخْلُ

আল কুরআন

الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ وَ یَاْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَ مَنْ یَّتَوَلَّ فَإِنَّ اللّٰهَ هُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ.

১. ‘যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ নিশ্চয় অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।’ (সূরা হাদিদ-৫৭ : ২৪)

وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وَ لِلّٰهِ مِیْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ.

২. ‘আর আল্ল¬াহ যাদের তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্ল¬াহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল করো সে ব্যাপারে আল্ল¬াহ সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৮০)

هٰأَنْتُمْ هٰؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَمِنْكُمْ مَّنْ یَّبْخَلُ وَ مَنْ یَّبْخَلْ فَإِنَّمَا یَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖ وَ اللّٰهُ الْغَنِیُّ وَ أَنْتُمُ الْفُقَرَآءُ وَ اِنْ تَتَوَلَّوْا یَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَیْرَكُمْ ثُمَّ لَا یَكُوْنُوْۤا اَمْثَالَكُمْ.

৩. ‘তোমরাই তো তারা, তোমাদের আহ্বান করা হচ্ছে যে,  তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কার্পণ্য করছে। তবে যে কার্পণ্য করছে সে তো নিজের প্রতিই কার্পণ্য করছে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের ছাড়া অন্য কোনো কওমকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর তারা তোমাদের অনুরূপ হবে না।’ (সূরা মুহাম্মাদ-৪৭ : ৩৮)

وَ اَمَّا مَنْۢ بَخِلَ وَ اسْتَغْنٰی-وَ كَذَّبَ بِالْحُسْنٰی.

৪. ‘আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর কল্যাণের পথকে মিথ্যা বলে মনে করেছে। আমি তার জন্য সহজ করে দেবো কঠিন (অকল্যাণের) পথকে।’ (সূরা লাইল-৯২ : ৮-১০)

وَ الَّذِیْنَ تَبَوَّؤُ الدَّارَ وَ الْاِیْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ یُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَیْهِمْ وَ لَا یَجِدُوْنَ فِیْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّاۤ اُوْتُوْا وَ یُؤْثِرُوْنَ عَلٰی أَنْفُسِهِمْ وَ لَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَ مَنْ یُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৫. ‘আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর-৫৯ : ৯)

فَاتَّقُوا اللّٰهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَ اسْمَعُوْا وَ اَطِیْعُوْا وَ أَنْفِقُوْا خَیْرًا لِّأَنْفُسِكُمْ وَ مَنْ یُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৬. ‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, শ্রবণ করো, আনুগত্য করো এবং তোমাদের নিজেদের কল্যাণে ব্যয় করো, আর যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম।’ (সূরা তাগাবুন-৬৪ : ১৬)

وَ اِنِ امْرَاَةٌ خَافَتْ مِنْۢ بَعْلِهَا نُشُوْزًا اَوْ اِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَیْهِمَاۤ أَنْ یُّصْلِحَا بَیْنَهُمَا صُلْحًا وَ الصُّلْحُ خَیْرٌ وَ اُحْضِرَتِ الْأَنْفُسُ الشُّحَّ وَ اِنْ تُحْسِنُوْا وَ تَتَّقُوْا فَإِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرًا.

৭. ‘যদি কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো তবে আল্লাহ তোমরা যা করো সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সূরা নিসা-৪ : ১২৮)

আল হাদিস

۱১. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَثَلُ الْبَخِيْلِ وَالْمُتَصَدِّقِ مَثَلُ رَجُلَيْنِ عَلَيْهِمَا جُبَّتَانِ مِنْ حَدِيْدٍ قَدْ اِضْطَرَّتْ أَيْدِيْهِمَا إِلٰى تَرَاقِيْهِمَا وَكُلَّمَا هَمَّ الْمُتَصَدِّقُ بِصَدَقَتِهِ اِتَّسَعَتْ عَلَيْهِ حَتّٰى تُعَفِيَ أَثَرَهُ وَكُلَّمَا هَمَّ الْبَخِيْلُ بِالصَّدَقَةِ اِنْقَبَضَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ إِلٰى صَاحِبَتِهَا وَتَقَلَّصَتْ عَلَيْهِ وَانْضَمَّتْ يَدَاهُ إِلٰى تَرَاقِيْهِ فَسَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ فَيَجْتَهِدُ أَنْ يُوَسِّعَهَا فَلَا تَتَّسِعُ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَا قِيْلَ فِيْ دِرْعِ النَّبِيِّ ﷺ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি কারিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, নবি করিম  #   বলেন, ‘কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির উদাহরণ হলো এমন দুই ব্যক্তির মতো, যাদের দুজনের গায়ে দুটি লোহার জুব্বা রয়েছে। জুব্বা দুটি এত আঁটসাঁট যে, তা উভয়ের হাত ঘাড়ের দিকে টেনে ধরেছে। (কিন্তু) দানশীল ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে তখন জুব্বাটি তার শরীরের ওপর প্রসারিত হয়, এমনকী শরীরের নিচে ঝুলতে থাকে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে তখন জামাটির প্রতিটি আংটা পরস্পর আটকে গিয়ে তার শরীরকে চেপে ধরে এবং তার হাত ঘাড়ের সাথে লেগে যায়। অতপর আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    -কে বলতে শুনেছেন, সে হাত দুটিকে প্রসারিত করতে চেষ্টা করে কিন্তু তা প্রসারিত হয় না।’ (বুখারি : বাবু মা কিলা ফি দিরইন নাবিয়্যি  #   , ইফা : ২৭১৬)

۲২. عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ نَهَي النَّبِيُّ ﷺ عَنِ النَّذْرِ وَقَالَ إِنَّهُ لَا يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِه مِنَ الْبَخِيْلِ- (بُخَارِيْ : بَابُ إِلْقَاءِ النَّذْرِ الْعَبْدَ إِلَى الْقَدَرِ، مُسْلِمْ : بَابُ النَّهْيِ عَنِ النَّذْرِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি করিম #  মানত করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘মানত কোনো (বিপদকে) তাড়াতে পারে না। এটা দ্বারা শুধুমাত্র কৃপণদের থেকে কিছু বের করে নেওয়া হয়।’ (বুখারি : বাবু ইলকায়িন নাজরিল আবদা ইলাল কাদরি, ইফা : ৬১৫৫, মুসলিম : ইফা : ৪০৯৬)

۳৩. عَنْ عَلِيٍّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلْبَخِيْلُ الَّذِيْ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ - (تِرْمِذِيْ : بَابُ قَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ(

৩. হজরত আলি ইবনে আবু তালিব "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘যার সামনে আমার নাম স্মরণ করা হলো অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়েনি সে কৃপণ।’ (তিরমিজি : বাবু কাওলি রাসূলুল্লাহি  #     রাগিমা আনফু রাজুলিন, ইফা :  ৩৫৪৬  )

۴৪. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلْمُؤْمِنُ غِرٌّ کَرِیْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ - (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْبُخْلِ) 

৪.হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল #     বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন, দানশীল, আর পাপী ব্যক্তি প্রতারক ও নিন্দনীয়।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফিল বাখিল, ইফা : ১৯৭০)

۵৫. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ نَبِيُّ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبُنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ- (بُخَارِيْ : بَابُ التَّعَوُّذِ مِنْ فِتْنَةِ الْمحْيَا وَالْمَمَاتِ)

৫. হজরত আনাস  #   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লহ  #    এই দুআ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসলি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।’ (হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে অক্ষমতা ও আলস্য থেকে; কাপুরুষতা, কার্পণ্যতা ও বার্ধক্য থেকে; আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে এবং আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। (বুখারি : বাবুত তায়াব্বুজে মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, বা.হা- ৬৩৬৭, মুসলিম : বা.হা : ২৭০৬)

۶৬. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ وَيَنْقُصُ الْعَمَلُ وَيُلْقَى الشُّحُّ  وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ، قَالُوْا وَمَا الْهَرَجُ؟ قَالَ الْقَتْلُ الْقَتْلُ- (بُخَارِيْ : بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَالسَّخَاءِ وَمَا يُكْرَهُ مِنَ الْبُخْلِ(

৬. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘(কিয়ামতের আলামত হলো) যুগ নিকটবর্তী হয়ে যাবে, কাজ সংকুচিত হয়ে যাবে, কৃপণতা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরামগণ বললেন, হারজ কী? রাসূল  #   বললেন, হত্যা, হত্যা।’ (বুখারি : বাবু হুসনিল খুলুকি ওয়াস সাখায়ি ওয়া মা ইউকরাহু মিনাল বুখলি, ইফা : ৫৬১১)

৭. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهَ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعاً أَقْرَعَ لَهُ زَبِيْبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِيْ بِشِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَامَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ثُمَّ تَلَا [وَ لَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ]- (بُخَارِيْ : بَابُ إِثْمِ مَانِعِ الزَّكاَةِ)

৭. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে উহার জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত করা হবে, যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ, এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। অতপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সম্পদ। অতপর রাসূল #   তেলাওয়াত করলেন, (ওলা ইয়াহসাবান্নাল্লাজিনা ইয়াবখালুনা”।’ (বুখারি : বাবু ইছমি মানয়িজ জাকাতি, ইফা : ১৩২১)

۸. عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  قَالَ : اِتَّقُوْا الظُّلْمَ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوْا الشُّحَّ، فَإِنَّ الشُّحَّ، أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلٰى أَنْ سَفَكُوْا دِمَائَهُمْ وَاسْتَحَلُّوْا مَحَارِمَهُمْ- (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الظُّلْمِ)

৮. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "  থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘তোমরা জুলুম করা থেকে বিরত থাকো। কেননা জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকারাচ্ছন্ন ধোঁয়ায় পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতার কলুষতা থেকে দূরে থাকো। কেননা কৃপণতাই তোমাদের পূর্বের অনেক লোককে ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদের রক্তপাত ও মারামারি করতে প্ররোচিত করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উসকানি দিয়েছে। (মুসলিম : বাবু তাহরিমিয জুলুমি, ইফা : ৬৩৪০)

۹. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلسَّخِيُّ قَرِيْبٌ مِّنَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ النَّاسِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْجَنَّةِ بَعِيْدٌ مِّنَ النّارِ، وَالْبَخِيْلُ بَعِيْدٌ مِّنَ اللهِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّاسِ بَعِيْدٌ مِّنَ الْجَنَّةِ قَرِيْبٌ مِّنَ النّارِ، وَالْجَاهِلُ السَّخِيُّ أَحَبُّ إِلَي اللهِ مِنْ عَابِدٍ بَخِيْلٍ (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي السَّخَاءِ، اَلسُّيُوْطِيْ : اَلْجَامِعُ الصَّغِيْرُ)

৯. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, মানুষের নিকটবর্তী জান্নাতেরও নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে। আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, জান্নাত থেকেও দূরে এবং জাহান্নামের নিকটে। দানশীল মূর্খ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কৃপণ আবেদ অপেক্ষা অধিক প্রিয়।’ (তিরমিজি : ইফা :  ১৯৬৭, সুয়ুুতি : আল-জামিউস সগির, বা.হা : ৪৭৮৮)













৪৬. অপচয় ও অপব্যয় : اَلْاِسْرَافُ وَالتَّبْذِيْرُ

আল  কুরআন

یٰبَنِیْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِیْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّ كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا وَ لَا تُسْرِفُوْا إِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الْمُسْرِفِیْنَ.

১. ‘হে বনি আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ-৭ : ৩১)

وَ اٰتِ ذَا الْقُرْبٰی حَقَّهٗ وَ الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ لَا تُبَذِّرْ تَبْذِیْرًا- إِنَّ الْمُبَذِّرِیْنَ كَانُوْا اِخْوَانَ الشَّیٰطِیْنِ وَ كَانَ الشَّیْطٰنُ لِرَبِّهٖ كَفُوْرًا.

২. ‘আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও । আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ২৬-২৭)

وَ الَّذِیْنَ إِذَاۤ أَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا.

৩. ‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’ (সূরা ফুরকান-২৫ : ৬৭)

وَ هُوَ الَّذِیْۤ أَنْشَاَ جَنّٰتٍ مَّعْرُوْشٰتٍ وَّ غَیْرَ مَعْرُوْشٰتٍ وَّ النَّخْلَ وَ الزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَ الزَّیْتُوْنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّ غَیْرَ مُتَشَابِهٍ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ إِذَاۤ اَثْمَرَ وَ اٰتُوْا حَقَّهٗ یَوْمَ حَصَادِهٖ وَ لَا تُسْرِفُوْا إِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الْمُسْرِفِیْنَ<

৪. ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুর গাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জায়তুন ও আনার যার কিছু দেখতে একরকম, আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফলদান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও। আর অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আনআম-৬ : ১৪১)

وَ ابْتَلُوا الْیَتٰمٰی حَتّٰی إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَاِنْ اٰنَسْتُمْ مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوْۤا اِلَیْهِمْ اَمْوَالَهُمْ وَ لَا تَاْكُلُوْهَاۤ اِسْرَافًا وَّ بِدَارًا أَنْ یَّكْبَرُوْا وَ مَنْ كَانَ غَنِیًّا فَلْیَسْتَعْفِفْ وَ مَنْ كَانَ فَقِیْرًا فَلْیَاْكُلْ بِالْمَعْرُوْفِ فَإِذَا دَفَعْتُمْ اِلَیْهِمْ اَمْوَالَهُمْ فَاَشْهِدُوْا عَلَیْهِمْ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ حَسِیْبًا.

৫. ‘আর তোমরা ইয়াতিমদের পরীক্ষা করো যতক্ষণ না তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছে। সুতরাং যদি তোমরা তাদের মধ্যে বিবেকের পরিপক্কতা দেখতে পাও, তবে তাদের ধন-সম্পদ তাদের দিয়ে দাও। আর তোমরা তাদের সম্পদ খেয়ো না অপচয় করে এবং তারা বড়ো হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে। আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়। অতপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের ওপর তোমরা সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।’ (সূরা নিসা-৪ : ৬)


আল হাদিস

۱১. عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لَهُ : فِرَاشٌ لِلرَّجُلْ وَفِرَاشٌ لِاِمْرَأَتِهِ وَالثَّالِثُ لِلضَّيْفِ وَالرَّابِعُ لِلشَّيْطَانِ- (مُسْلِمْ : بَابُ كَرَاهِيَّةِ مَا زَادَ عَلَى الْحَاجَةِ مِنَ الْفِرَاشِ وَ اللِّبَاسِ(

১. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "   থেকে বর্ণিত। রাসুুলুল্লাহ  #    বলেন, ‘কারও ঘরে একটি বিছানা তার জন্যে। অপরটি তার স্ত্রীর জন্যে। তৃতীয়টি মেহমানের জন্যে আর চতুর্থটি শয়তানের জন্যে।’ (মুসলিম : বাবু কারাহিয়াতি মা যাদা আলাল হাজাতি মিনাল ফিরাশি ওয়াল লিবাসি, ইফা : ৫২৭৭)

۲২. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  إِنِّيْ ذُوْ مَالٍ كَثِيْرِ وَ أَهْلٍ وَ وَلَدٍ فَكَيْفَ يَجِبُ لِيْ أَنْ أَصْنَعَ أَوْ أُنْفِقُ؟ قَالَ أَدِّ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوْضَةَ طُهْرَةٌ تُطَهِّرُكَ وَاٰتِ صِلَةَ الرَّحِمِ وَ اعْرِفْ حَقَّ السَّائِلِ وَالْجَارِ وَالْمِسْكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَقْلِلْ لِيْ قَالَ فَاۤتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهُ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِذَا أَدَّيْتُ الزَّكَاةَ إِلٰى رَسُوْلِكَ فَقَدْ أَدَّيْتُهَا إِلَى اللهِ وَإِلٰی رَسُوُلِهِ؟ قَالَ : نَعَمْ إِذَا أَدَّيْتَهَا إِلٰى رَسُوْلِيْ فَقَدْ أَدَّيْتَهَا مِنْهَا وَلَكَ أَجْرُهَا وَعَلٰى مَنْ بَدَّلَهَا اِثْمُهَا-(مُسْتَدْرَكْ لِلْحَاكِمِ : وَمِنْ تَفْسِيْرِ سُوْرَةِ بَنِيْ إِسْرَائِیْلِ)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত। ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল  #    ; আমি অঢেল সম্পদের অধিকারী, পরিবার পরিজন ও সন্তানের অধিকারী। অতএব কীভাবে আমার ওপর খরচ করা দায়িত্ব হবে? রাসূল #   বললেন, ফরজ জাকাত আদায় করো। এটা তোমাকে পবিত্র করে দেবে। নিকট আত্মীয়দেরকে দাও, প্রতিবেশী, মিসকিন, মুসফির, সকলের হক আদায় করো। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল  #   ! আমার জন্য কমিয়ে দেন। রাসূল  #     বললেন, নিকট আত্মীয়দের, মিসকিনদের এবং মুসাফিরদের তাদের হক দাও। আর অপচয় করো না। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল #   যদি আপনার প্রেরিত কোনো দূতের নিকট জাকাত আদায় করি, তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আদায় হিসেবেই গণ্য হবে? রাসূল  #   বললেন, হ্যাঁ যখন তুমি আমার দূতের নিকট আদায় করলে, তখন তোমার জাকাত আদায় হয়ে গেল। আর তোমার জন্য থাকবে প্রেরিত জাকাতের পুরষ্কার, আর সে যদি পরিবর্তন করে ফেলে, তাহলে অপরাধ তার ওপরেই বর্তাবে। (মুস্তাদরাক লিল হাকেম : ওয়া মিন তাফসিরে সূরাতে বনি ইসরাইল, মা.শা : ৩৩৩১)

۳৩. عَنْ عَمْرٍو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  كُلُوْا وتَصَدَّقُوْا والْبَسُوْا فِيْ غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيْلَةٍ- (نَسَائِـيْ : اَلْاِخْتِيَالُ فِيْ الصَّدَقَةِ)

৩. হজরত আমর ইবনে শোয়াইব "   তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘তোমরা খাও, দান করো এবং পরিধান করো, অপব্যয় এবং অহংকার ব্যতীত।’ (নাসাই : আল ইখতিয়াল ফিস সাদাকাতি, ইফা : ২৫৬১)

৪৭. পবিত্রতা : اَلطَّهَارَةُ

আল কুরআন

وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِیْضِ قُلْ هُوَ اَذًی فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الْمَحِیْضِ وَ لَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰی یَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَاْتُوْهُنَّ مِنْ حَیْثُ اَمَرَكُمُ اللّٰهُ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیْنَ وَ یُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِیْنَ.

১. ‘আর তারা তোমাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকো এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্ল¬াহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সূরা বাকারা-২ : ২২২)

إِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِیْمٌ-فِیْ كِتٰبٍ مَّكْنُوْنٍ-لَّا یَمَسُّهٗ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ.

২. ‘নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া।’ (সূরা ওয়াকিয়া-৫৬ : ৭৭-৭৯)

یٰاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ-قُمْ فَأَنْذِرْ-وَ رَبَّكَ فَكَبِّرْ-وَ ثِیَابَكَ فَطَهِّرْ-وَ الرُّجْزَ فَاهْجُرْ.

৩. ‘হে বস্ত্রাবৃত! উঠ, অতপর সতর্ক করো। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। আর তোমার পোশাকÑপরিচ্ছদ পবিত্র করো। আর অপবিত্রতা বর্জন করো।’ (সূরা মুদ্দাসসির-৭৪ : ১-৫)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا إِذَا قُمْتُمْ اِلَی الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَ اَیْدِیَكُمْ اِلَی الْمَرَافِقِ وَ امْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَ اَرْجُلَكُمْ اِلَی الْكَعْبَیْنِ وَ اِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا وَ اِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤی اَوْ عَلٰی سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآىِٕطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ اَیْدِیْكُمْ مِّنْهُ مَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیَجْعَلَ عَلَیْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّ لٰكِنْ یُّرِیْدُ لِیُطَهِّرَكُمْ وَ لِیُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَیْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

৪. ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, মাথা মাসেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত করো)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস করো অতপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না; বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সূরা মায়েদা-৫ : ৬)

خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ إِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ.

৫. ‘তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদের তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দুআ করো, নিশ্চয় তোমার দুআ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা তাওবা-৯ : ১০৩)

اِذْ یُغَشِّیْكُمُ النُّعَاسَ اَمَنَةً مِّنْهُ وَ یُنَزِّلُ عَلَیْكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً لِّیُطَهِّرَكُمْ بِهٖ وَ یُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّیْطٰنِ وَ لِیَرْبِطَ عَلٰی قُلُوْبِكُمْ وَ یُثَبِّتَ بِهِ الْاَقْدَامَ.

৬. ‘স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন তাঁর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাস্বরূপ এবং আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদের পবিত্র করেন, আর তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তোমাদের অন্তরসমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তোমাদের পাসমূহ স্থির রাখেন।’ (সূরা আনফাল-৮ : ১১)

وَ هُوَ الَّذِیْۤ اَرْسَلَ الرِّیٰحَ بُشْرًۢا بَیْنَ یَدَیْ رَحْمَتِهٖ وَ أَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا.

৭. ‘আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি।’ (সূরা ফুরকান-২৫ : ৪৮)

لَا تَقُمْ فِیْهِ اَبَدًا لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَی التَّقْوٰی مِنْ اَوَّلِ یَوْمٍ اَحَقُّ أَنْ تَقُوْمَ فِیْهِ فِیْهِ رِجَالٌ یُّحِبُّوْنَ أَنْ یَّتَطَهَّرُوْا وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُطَّهِّرِیْنَ.

৮. ‘তুমি সেখানে কখনো (সালাত কায়েম করতে) দাঁড়িও না। অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তাওবা-৯ : ১০৮)


আল হাদিস

۱১. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ إِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طَهُوْرِ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ - (مُسْلِمْ : بَابُ وُجُوْبِ الطَّهَارَةِ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #    কে বলতে শুনেছি, ‘পবিত্রতা ছাড়া সালাত গ্রহণযোগ্য হয় না। আর খিয়ানতের  সম্পদ থেকে দান সদকা গ্রহণযোগ্য হয় না।’ (মুসলিম : বাবু উজুবিত তাহারাতি লিসসালাতি, ইফা : ৪২৮)

۲. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : أَكْثَرُ عَذَابِ الْقَبْرِ فِي الْبَوْلِ - (إِبْنُ مَاجَةْ )

২. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, নবি  #     বলেছেন, ‘অধিকাংশ কবরের আজাবই হবে পেশাব সম্পর্কে (অর্থাৎ ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করার কারণে)।’ (ইবনে মাজাহ : মুসনাদে আবু হুরায়রা, বা.হা : ৩৪৮)

۳. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ ﷺ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ ثُمَّ أَخَذَ جَرِيْدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا نِصْفَيْنِ فَغَرَزَ فِيْ كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً قَالُوْا یَا رَسُوْلَ اللهِ لِمَ فَعَلْتَ هٰذَا؟ قَالَ لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَالَمْ يَيْبِسَا ۔ (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ غَسْلِ الْبَوْلِ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবি করিম  #     দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতপর তিনি দুজন ব্যক্তিকে তাদের কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এ মর্মে আওয়াজ শুনলেন। অতপর তিনি বললেন, তাদের দুজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কোনো বড়ো বিষয়ের কারণে তাদের শাস্তি হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব করার সময় পর্দা করত না। অপরজন চোগলখুরি করে বেড়াত। অতপর একটি তাজা খেজুরের ডাল নিলেন। অতপর ডালটিকে দুই ভাগ করলেন, একটি ডাল এক কবরে এবং অপর ডালটি দ্বিতীয় কবরে পুতলেন। সাহাবিগণ বললেন, হে, আল্লাহর রাসূল  #   ! এমনটি কেন করলেন? তিনি বললেন, সম্ভবত ডাল দুটি শুকানোর পূর্ব পর্যন্ত তাদের শাস্তি হালকা করা হতে পারে।’ (বুখারি : বাবু মা জাআ ফি গাসলিল বাওলি, ইফা : ২১৮, মুসলিম : ইফা : ৫৭০)

۴৪. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ رَأَی أَعْرَابِيًّا يَبُوْلُ فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ دَعُوْهُ حَتّٰى إِذَا فَرَغَ دَعَا بِمَاءٍ فَصَبَّ عَلَيْهِ - (بُخَارِيْ : بَابُ تَرْكِ النَّبِيِّ وَالنَّاسِ الْأَعْرَبِيَّ حَتّٰي فَرَغَ مِنْ بَوْلِهِ فِي الْمَسْجِدِ)

৪. হজরত আনাস ইবনে মালেক  #    থেকে বর্ণিত। নবি করিম  #    এক বেদুইনকে মসজিদে পেশাব করতে দেখলেন। অতপর বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও (বাধা দিও না)। এমনকী সে পেশাব শেষ করল, তখন রাসূল  #    পানি আনালেন এবং পেশাবের ওপর পানি ঢেলে দিলেন।’ (বুখারি : ইফা : ২১৯)

۵৫. عَنْ أُمِّ قَيْسٍ بِنْتِ مِحْصَنٍ أَنَّهَا أَتَتْ بِاِبْنٍ لَهَا صَغِيْرٍ لَمْ يَاْكُلِ الطَّعَامَ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ  فَأَجْلَسَهُ رَسُوْلُ اللهُ ﷺ فِيْ حِجْرِهِ فَبَالَ عَلٰى ثَوْبِهِ فَدَعَا بِمَاءٍ فَنَضَحَهُ وَلَمْ يَغْسِلْهُ - (بُخَارِيْ : بَابُ بَوْلِ الصِّبْيَانِ)

৫. উম্মে কাইস বিনতে মিহসান "    থেকে বর্ণিত। তিনি তার শিশুপুত্রসহ যে তখনও ভাত খাওয়া ধরেনি, রাসুলুল্লাহ  #    এর নিকট এলেন। রাসুলুল্লাহ   #   তাকে নিজের কোলে বসালেন। সে তার কাপড়ে পেশাব করে দিলো, তিনি পানি আনিয়ে  কাপড়ে  ছিটিয়ে  দিলেন। কিন্তু তা ধুইলেন না।’ (বুখারি : বাবু মা জা-আ ফি গাছলিল বাওলি, ইফা : ২২৩)

۶৭. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلَا يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ حَتّٰى يَغْسِلَهَا ثَلَاثًا فَإِنَّهُ لَايَدْرِيْ أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ - (مُسْلِمْ : بَابُ كَرَاهَةِ غَمْسِ الْمُتَوَضِّئِ وَ غَيْرِهِ....)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, সে যেন তার হাতকে তিনবার ধৌত করা ব্যতীত পাত্রে প্রবেশ না করায়। কেননা সে জানে না, তার হাত কোথায় রাত অতিবাহিত করেছে।’ (মুসলিম : ইফা : ৫৩৬)

٧৭. عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ : اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلّٰـهِ تَمْلَأُ الْمِيْزَانَ وَسُبْحَانَ اللهُ وَالْحَمْدُ لِلّٰـهِ تَمْلَاۤنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُوْرٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْاٰنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُوْا فَبَايِعٌ نَفْسُهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْبِقُهَا - (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ الْوُضُوْءِ)

৭. হজরত আবু মালেক আল আশয়ারি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #  বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। আলহামদুলিল্লাহ বাক্যটি মিজান (দাড়িপাল্লা) ভরে দেয় এবং “সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ” এই বাক্যদ্বয় ভরে দেয় বা এদের প্রতিটি ভরে দেয় আসমান ও পৃথিবীর মাঝখানের সবটুকু। আর সালাত হলো আলোকবর্তিকা, সদকা হলো বুরহান (দলিল), আর ধৈর্য হলো উজ্জ্বলতা। আর কুরআন হলো প্রমাণ গ্রন্থ, হয়তো তোমার পক্ষে নয়তো বিপক্ষে। প্রত্যেক মানুষ এমনভাবে সকালে উপনীত হয় যে, সে তার নিজেকে বিক্রি করে দেয়, অতপর এটি হয় তাকে রক্ষা করে অথবা ধ্বংস করে দেয়।’ (মুসলিম ; বাবু ফাদলিল উদুই, ইফা : ৪২৭)




৪৮. তায়াম্মুম : اَلتَّيَمُّمُ

আল কুরআন

 یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلٰوةَ وَ أَنْتُمْ سُكٰرٰی حَتّٰی تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ وَ لَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِیْ سَبِیْلٍ حَتّٰی تَغْتَسِلُوْا وَ اِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤی اَوْ عَلٰی سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ اَیْدِیْكُمْ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُوْرًا .

১. ‘হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পারো যা তোমরা বলো এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল করো, তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী হও। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাবÑপায়খানা থেকে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ করো, তবে যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করো। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।’ (সূরা নিসা-৪ : ৪৩)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ اِلَی الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَ اَیْدِیَكُمْ اِلٰی الْمَرَافِقِ وَ امْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَ اَرْجُلَكُمْ اِلٰی الْكَعْبَیْنِ وَ اِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا وَ اِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰی اَوْ عَلٰی سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآىِٕطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ اَیْدِیْكُمْ مِّنْهُ مَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیَجْعَلَ عَلَیْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّ لٰكِنْ یُّرِیْدُ لِیُطَهِّرَكُمْ وَ لِیُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَیْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

২. ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, মাথা মাসেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত করো)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস করো অতপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না; বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৬)


আল হাদিস

۱১. عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلَاثٍ : جُعِلَتْ صُفُوْفُنَا كَصُفُوْفِ الْمَلَائِكَةِ- وَجُعِلَتْ لَنَا الْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَ جُعِلَ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ (مُسْلِمْ(

১. হজরত হুজাফা ইবনুল ইয়ামান "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘তিনটি বিষয়ে সমগ্র মানবজাতির উপরে আমাদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১. (নামাজে) আমাদের সারিকে ফেরশতাগণের সারির ন্যায়  করা হয়েছে। ২. সমগ্র পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদতুল্য করা হয়েছে। ৩. আর যখন পানি না পাওয়া যাবে তখন মাটিই আমাদের জন্য পবিত্রতাকারী হবে।’ (মুসলিম : ইফা : ১০৪৮)

۲২. عَنْ اَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ طَهُوْرُ الْمُسْلِمِ، وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ فَإِذَ وَجَدَهُ الْمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ فَإِنَّ ذٰلِكَ خَيْرٌ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي التَّيَمُّمِ لِلْجُنُبِ إِذَا لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ(

২. হজরত আবু জর "  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম। যদি দশ বছরও পানি না পাওয়া যায় (তবুও তা প্রযোজ্য)। আর যখন পানি পাওয়া যাবে তখন যেন ব্যক্তি স্বীয় শরীর পবিত্র করে নেয়। কেননা সেটাই কল্যাণকর।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফিত তায়াম্মুমি লিল জুনুবি ইযা লাম ইয়াজিদিল মাআ, ইফা : ১২৪,)

৩۳. عَنْ جَابِرٍ قَالَ خَرَجْنَا فِيْ سَفَرٍ فَأَصَابَ رَجُلًا مِنَّا حَجَرٌ فَشَجَّه فِيْ رَأْسِهِ ثُمَّ احْتَلَمَ فَسَأَلَ أَصْحَابَهُ فَقَالَ هَلْ تَجِدُوْنَ لِيْ رُخْصَةً فِي التَّيَمُّمِ فَقَالُوْا مَانَجِدُ لَكَ رُخْصَةً وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْمَاءِ فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ ﷺ  أُخْبِرَ بِذٰلِكَ فَقَالَ قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ أَلَا سَأَلُوْا إِذَا لَمْ يَعْلَمُوْا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعَيِّ السُّؤَالُ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ أَوْ يَعْصِبَ شَكَّ مُوْسٰى عَلٰى جُرْحِهِ خِرْقَةً ثُمَّ يَمْسَحَ عَلَيْهَا وَيْغْسِلَ سَائِرَ جَسَدِهِ (أَبُوْ دَاوُدْ : بَابٌ فِي الْمَجْرُوْحِ يَتَيَمَّمُ(

৩. হজরত জাবের "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একবার আমরা এক সফরে বের হলাম। অতপর আমাদের এক ব্যক্তি পাথর দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হলো এবং এতে সে প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা পেল। অতপর তার স্বপ্নদোষ হলে সে তার সাথীদের জিজ্ঞাসা করল, আমার জন্য তায়াম্মুম করার কোনো অবকাশ আছে কি? তারা বলল, আমরা তোমার জন্য কোনো অবকাশ দেখছি না, কেননা তুমি পানি ব্যবহারে সক্ষম। অতপর সে গোসল করল। ফলে মৃত্যুবরণ করল। তারপর আমরা যখন নবি  #    এর নিকট আসলাম তাকে এ সংবাদ দেওয়া হলে তিনি বললেন, তারা তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। যেহেতু তারা জানে না কেন তারা জিজ্ঞাসা করল না? কেননা প্রশ্নই হলো অজ্ঞতার আরোগ্য। আর তার জন্য যথেষ্ট ছিল যে, তায়াম্মুম করা এবং এক টুকরা কাপড় চিবিয়ে ক্ষত স্থান মুছে দেবে এবং সারা শরীর ভিজিয়ে  দেবে।’ (আবু দাউদ : বাবুন ফিল মাজরুহি ইয়াতাইয়াম্মামু, ইফা : ৩৩৬)

৪۴. عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ خَرَجَ رَجُلَانِ فِيْ سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِي الْوَقْتِ فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلَاةَ وَالْوُضُوْءَ وَلَمْ يُعِدِ الْاٰخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  فَذَكَرَا ذٰلِكَ لَهُ فَقَالَ لِلَّذِيْ لَمْ يُعِدْ أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلَاتُكَ وَقَالَ لِلَّذِيْ تَوَضَّأَ وَأَعَادَ لَكَ الْأَجْرُ مَرَّتَیْنِ - (أَبُوْ دَاودْ : بَابٌ فِي الْمُتَيَمِّمِ يَجِدُ الْمَاءَ بَعْدَ مَا يُصَلِّيْ فِي الْوَقْتِ)

৪. হজরত আবু সাঈদ খুদরি  "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘দুই ব্যক্তি এক সফরে বের হলো। অতপর নামাজের সময়  উপস্থিত হলো, অথচ তাদের সাথে পানি ছিল না, ফলে তারা পবিত্র মাটি দিয়ে  তায়াম্মুম করল আর নামাজ আদায় করল। অতপর তারা নামাজের সময়  বাকি থাকতেই পানি পেয়ে গেল। তাদের দুজনের একজন পুনরায় অজু করে সালাত আদায় করল। অপরজন পুনর্বার (সালাত, অজু) কোনোটাই করেনি। দুজনেই রাসূল  #   -এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করল, অতপর যে লোকটি দ্বিতীয়বার নামাজ আদায় করেনি, রাসূল  #    তাকে বললেন, তুমি সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছ এবং তোমার নামাজ যথেষ্ট হয়েছে। আর যে লোক পুনরায়  অজু করে নামাজ আদায় করল, রাসূল  #    তাকে বললেন, তোমার জন্য দ্বিগুণ পুরষ্কার নির্ধারিত রয়েছে।’ (আবু দাউদ : বাবুন ফিল মুতাইয়িাম্মিমি ইয়াজিদুল মাআ বাদা মা ইউসাল্লি ফিল ওয়াকতি, ইফা : ৩৩৮)

۵৫. عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اَلتَّيَمُّمُ ضَرْبَتَانِ ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ وَضَرْبَةٌ لِلْيَدَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ- (اَلْمْسْتَدْرَكُ لِلْحَاکِمِ : وَأَمَّا حَدِيْثُ عَائِشَةَ(

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তায়াম্মুমরে জন্য রয়েছে (মাটিতে) দুটি আঘাত। একটি মুখমণ্ডলের জন্য অপরটি কনুই পর্যন্ত দুই হাতের জন্য।’ (আল মুস্তাদরাক লিল হাকেম : ওয়া আম্মা হাদিসু আয়িশা, বা.হা : ৬৩৬)













৪৯. পিতা-মাতার অধিকার : حَقُّ الْوَالِدَيْنِ

আল কুরআন

وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ ؕ إِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا.

১. ‘তোমরা ইবাদাত করো আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীকে করো না। আর সদ্ব্যবহার করো পিতা-মাতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতিম, মিসকিন, নিকট আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী।’ (সূরা নিসা-৪ : ৩৬)

وَ قَضٰی رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا إِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا ؕ اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا-وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًا.

২. ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের “উফ” বলো না এবং তাদের ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো । আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বলো, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ২৩-২৪)


وَ وَصَّیْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰی وَهْنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیْ عَامَیْنِ اَنِ اشْكُرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیْكَ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ.

৩. ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুবছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করো। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই।’ (সূরা লুকমান-৩১ : ১৪)

وَ وَصَّیْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ اِحْسٰنًا حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ كُرْهًا وَّ وَضَعَتْهُ كُرْهًا وَ حَمْلُهٗ وَ فِصٰلُهٗ ثَلٰثُوْنَ شَهْرًا حَتّٰی إِذَا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَ بَلَغَ اَرْبَعِیْنَ سَنَةً قَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِیْۤ أَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِیْۤ أَنْعَمْتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ أَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضٰىهُ وَ اَصْلِحْ لِیْ فِیْ ذُرِّیَّتِیْ اِنِّیْ تُبْتُ اِلَیْكَ وَ اِنِّیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ.

৪. ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলেÑ হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার ওপর ও আমার পিতা-মাতার ওপর যে নিয়ামত দান করেছ, তোমার সে নিয়ামতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ করো। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আহকাফ-৪৬ : ১৫)

وَ وَصَّیْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ حُسْنًا وَ اِنْ جَاهَدٰكَ لِتُشْرِكَ بِیْ مَا لَیْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا اِلَیَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ.

৫. ‘আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করতে। তবে যদি তারা তোমার ওপর প্রচেষ্টা চালায় আমার সাথে এমন কিছুকে শরিক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। আমার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতপর তোমরা যা করতে আমি তা তোমাদের জানিয়ে দেবো।’ (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৮)

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنْ دَخَلَ بَیْتِیَ مُؤْمِنًا وَّ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیْنَ إِلَّا تَبَارًا.

৬. ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’  (সূরা নুহ-৭১ : ২৮)


আল হাদিস

۱১. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ قِيْلَ مَنْ یَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ - (مُسْلِمْ : بَابٌ رَغِمَ أَنْفُ مَنْ أَدْرَكَ أَبْوَيْهِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত্ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, ‘তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক! সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল  #  ! কে সে হতভাগা? রাসূল  #    বললেন, সে হলো ওই ব্যক্তি যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও বেহেশতে যেতে পারল না।’ (মুসলিম : বাবু রাগিমা আনফু মান আদরাকা আবাওয়াইহি, ইফা : ৬২৮০)

۲. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِىْ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوْكَ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ الْصُحْبَةِ، مُسْلِمْ : بَابُ بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَأَنَّهُمَا أَحَقُّ بِهِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল  #    এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল  #  ! আমার সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার কে? রাসূল  #    বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার বলল, অতপর কে? রাসূল  #    বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার বলল, অতপর কে? রাসূল  #    বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার বলল, তারপর কে? রাসূল  #    বললেন, অতপর তোমার পিতা।’ (বুখারি : বাবু মান আহাক্কুন্নাসি বি হুসনিস সুহবাতি, ইফা : ৫৫৪৬, মুসলিম : বাবু বিররিল ওয়ালিদাইনে ওয়া আন্নাহুমা আহাক্কু বিহি, ইফা : ৬২৬৯)

۳৩. عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : إِنَّ الله حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوْقُ الْأُمَّهَاتِ وَوَأْدَ الْبَنَاتِ وَمَنَعَ وَهَاتِ وَكَرِهَ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّوَالِ وَاِضَاعَةَ الْمَالِ - (بُخَارِيْ : بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْ إِضَاعَةِ الْمَالِ، مُسْلِمْ : بَابُ النَّهْيِ عَنْ كَثْرَةِ الْمَسَائِلِ)

৩. হজরত মুগিরা ইবনে শোবা "   থেকে বর্ণিত। নবি  #   বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর মায়ের অবাধ্যতা, কন্যাদের জীবন্ত কবর দেওয়া, কারও প্রাপ্য না দেওয়া হারাম করেছেন। আর অর্থহীন কথা বলা, খুব বেশি প্রশ্ন করা এবং সম্পদ ধ্বংস করা তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন।’ (বুখারি : বাবু মা ইউনহা আন ইদাআতিল মালি, ইফা : ২২৪৮, মুসলিম : বাবুন নাহি আন কাসরাতিল মাসায়িলি, ইফা :  ৫৫১৮)

۴৪. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ ﷺ أُجَاهِدُ قَالَ لَكَ أَبْوَانِ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَفِيْهِمَا فَجَاهِدْ- (بُخَارِيْ : بَابٌ لَا يُجَاهِدُ إِلَّا بِاِذْنِ الْأَبَوَيْنِ(

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ   #    কে বলল, আমি কি জিহাদ করব? তিনি বললেন, তোমার পিতা-মাতা আছে কি? লোকটি জবাব দিলো, হ্যাঁ আছে। রাসূল #    বললেন, তাহলে তাদের দুজনের মধ্যে জিহাদ করো।’ (বুখারি : বাবু লা ইউজাহিদু ইল্লা বি-ইজনিল ওয়ালেদাইনে, ইফা : ৫৫৪৭, মুসলিম : ইফা : ৬২৭৩)

۵৫. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قِيْلَ یَا رَسُوْلُ اللهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ- (بُخَارِيْ : بَابٌ لَا يَسُبُّ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘কবিরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো  গুনাহ হলো কোনো  লোক তার পিতা-মাতাকে লানত করা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল  #   ! কীভাবে একজন ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে লানত করতে পারে? রাসূল  #    বললেন, একজন অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেয়। তখন সেও ওই লোকের পিতা-মাতাকে গালি দেয়।’ (বুখারি : বাবু লা ইয়াসুব্বুর রাজুলু ওয়ালিদাইহি, ইফা : ৫৫৪৮)

۶৬. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ الْأَنْصَارِيَّ اِسْتَفْتٰى النَّبِيَّ ﷺ فِيْ نَذْرٍ كَانَ عَلٰى أُمِّهِ فَتُوُفِّيَتْ قَبْلَ أَنْ تَقْضِيَهُ فَأَفْتَاهُ أَنْ يَقْضِيَهُ عَنْهَا فَكَانَتْ سُنَّةً بَعْدُ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ نَذْرٌ، مُسْلِمْ : بَابُ الْأَمْرِ بِقَضَاءِ النَّذْرِ)

৬. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস  #   থেকে বর্ণিত, ‘সাআদ ইবনে উবাদাহ নবি করিম  #    -এর নিকট তার মায়ের মান্নত সম্পর্কে ফতোয়া চাইলেন, যে মান্নত পূর্ণ করার পূর্বেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নবি করিম # ফতোয়া দিলেন, তার পক্ষ থেকে মান্নত পুরা করে দাও। এরপর থেকে তা সুন্নাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।’ (বুখারি : বাবু মান মাতা ওয়া আলাইহি নাজরুন, ইফা : ৬২৪১, মুসলিম : বাবুল আমরি বিকদায়িন নাজরি, ইফা :  ৪০৮৯)

٧৭. عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ : مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلٰى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ- (اِبْنُ مَاجَةْ : بَابُ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ)

৭. হজরত আবু উমামা "    থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল  #    ! সন্তানের ওপর পিতার-মাতার প্রাপ্য কী? তিনি বললেন, তারা তোমার বেহেশত ও দোজখ।’ (ইবনে মাজাহ : বাবু বিররিল ওয়ালেদাইনে, মা.শা- ৩৬৫২) [সনদ দুর্বল]








৫০. আত্মীয়স্বজনের অধিকার : حَقُّ الْاَقْرَبِيْنَ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّ خَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ بَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِیْرًا وَّ نِسَآءً وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَ الْاَرْحَامَ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلَیْكُمْ رَقِیْبًا.

১. ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় করো রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক।’  (সূরা নিসা-৪ : ১)

وَ  أَنْذِرْ عَشِیْرَتَكَ الْاَقْرَبِیْنَ-وَ اخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ.

২. ‘আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করো। আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত করো।’ (সূরা শুআরা-২৬ : ২১৪-২১৫)

فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَ الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ ذٰلِكَ خَیْرٌ لِّلَّذِیْنَ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَ اللّٰهِ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৩. ‘অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম।’ (সূরা রুম-৩০ : ৩৮)

كُتِبَ عَلَیْكُمْ إِذَا حَضَرَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ اِنْ تَرَكَ خَیْرًا  ِ۟الْوَصِیَّةُ لِلْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ بِالْمَعْرُوْفِ حَقًّا عَلَی الْمُتَّقِیْنَ.

৪. ‘তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোনো সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকিদের দায়িত্ব।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৮০)

وَ اٰتِ ذَا الْقُرْبٰی حَقَّهٗ وَ الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ لَا تُبَذِّرْ تَبْذِیْرًا.

৫. ‘আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ২৬)

اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَ اَزْوَاجُهٗ اُمَّهٰتُهُمْ وَ اُولُوا الْاَرْحَامِ بَعْضُهُمْ اَوْلٰی بِبَعْضٍ فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُهٰجِرِیْنَ إِلَّاۤ أَنْ تَفْعَلُوْۤا اِلٰی اَوْلِیٰٓىِٕكُمْ مَّعْرُوْفًا كَانَ ذٰلِكَ فِی الْكِتٰبِ مَسْطُوْرًا.

৬. ‘নবি মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ। আর আল¬øাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরদের তুলনায় আত্নীয়স্বজনরা একে অপরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভালো কিছু করতে চাও (তা করতে পারো)। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।’ (সূরা আহজাব-৩৩ : ৬)


আল হাদিস

۱১. عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : اَلرَّحِمُ شِجْنَةٌ فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَهَا قَطَعْتُهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ وَصَلَ وَصَلَهُ اللهُ)

১. হজরত আয়েশা "    নবি কারিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আর রাহেম শব্দটি (আর রহমান থেকে) উৎপন্ন। যে ব্যক্তি এর সাথে সম্পর্ক অটুট রাখে আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখি। আর যে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি।’ (বুখারি : বাবু মান ওয়াসালা ওয়াসালাহুল্লাহু, ইফা :  ৫৫৬৩)

২. عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ : لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ - (بُخَارِيْ : بَابُ اِثْمِ الْقَاطِعِ، مُسْلِمْ : بَابُ صِلَةِ الرَّحِمِ وَتَحْرِيْمِ قَطِيْعَتِهَا(

২. হজরত জুবাইর ইবনে মুতয়িম "    থেকে বর্ণিত। তিনি নবি করিম  #   কে বলতে শুনেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি : বাবু ইছমিল কাতিয়ুন, ইফা : ৫৫৫৮ মুসলিম : বাবু সিলাতির  রাহিমি ওয়া তাহরিমি কতিয়াতিহা, ইফা : ৬২৮৯)

۳৩. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِيْ رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِيْ أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَنْ بُسِطَ لَهُ فِي الرِّزْقِ بِصِلَةِ الرَّحِمِ، مُسْلِمْ : بَابُ صِلَةِ الرَّحِمِ وَتَحْرِيْمِ قَطِيْعَتِهَا)

৩. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   বর্ণনা করেন, রাসূলাল্লাহ "    বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং তার হায়াত দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।’ (বুখারি : বাবু মান বুসিতা লাহু ফির রিজকি বিসিলাতির রাহিমি, ইফা : ৫৫৬০, মুসলিম : বাবু সিলাতির রাহিমি ওয়া তাহরিমি কতিয়াতিহা, ইফা : ৬২৯৩ )

۴৪. عَنْ أَبِيْ بَكْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوْبَةَ فِي الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْبَغْيِ وَقَطِيْعَةِ الرَّحْمِ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ أَوَانِي الْحَوْضِ)

৪. হজরত আবু বাকরা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘এমন অপরাধ যেই অপরাধীকে আল্লাহ পাক আখিরাতে উহার শান্তি জমা রাখা সত্ত্বেও দুনিয়াতে তাকে তাড়াতাাড়ি শাস্তি দিয়ে থাকেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধ সেই শাস্তির উপযুক্ত নহে।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফি সিফাতি আওয়ানিল হাওজি, ইফা : ২৫১৩)

۵৫. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَقُوْلُ مَنْ وَصَلَنِيْ وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَنِيْ قَطَعَهُ الله (مُسْلِمْ : بَابُ صِلَةِ الرَّحِمِ وَتَحْرِيْمِ قَطِيْعَتُهَا)

৫. হজরত আয়েশা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘রাহিম আরশের সাথে ঝুলন্ত আছে। সে বলে, যে আমাকে মিলিয়ে  রাখবে, আল্লাহ তাকে মিলিয়ে রাখুন এবং যে আমাকে কেটে দেবে আল্লাহ তাকে কেটে দিন।’ (মুসলিম : বাবু সিলাতির রাহিমি ওয়া তাহরিমি কাতিয়াতিহা, ইফা : ৬২৮৮)

۶৬. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوْنِيْ وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيْؤُوْنَ إِلَىَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُوْنَ عَلَيَّ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيْرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلٰى ذٰلِكَ- (مُسْلِمْ : بَابُ صِلَةِ الرَّحِمِ وَتَحْرِيْمُ قَطِيْعَتُهَا)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল  #   ! আমার এমন কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি, অথচ তারা আমার সেই বন্ধন কেটে দেয়। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের প্রতি সহিষ্ণু, তারা আমার প্রতি মূর্খের মতো আচরণ করে। অতপর রাসূল #    বললেন, তুমি যা বলেছ, যদি ঘটনা তা-ই হয়, তাহলে মনে হয় যেন তুমি তাদের প্রতি গরম ছাই নিক্ষেপ করলে। অর্থাৎ তোমার ধৈর্যের অনল তাদের শেষ করে দেবে। আর যতক্ষণ তুমি এই অবস্থার ওপর অটল থাকবে, ততক্ষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের মোকাবিলায় তোমার জন্য একজন সাহায্যকারী বরাদ্দ থাকবে।’ (মুসলিম : বাবু সিলাতির রাহিম ওয়া তাহরিমি কাতিয়াতিহা, ইফা : ৬২৯৪)















৫১. প্রতিবেশীর অধিকার : حَقُّ الْجَارِ

আল কুরআন

وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ إِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا.

১. ‘তোমরা ইবাদাত করো আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো পিতা-মাতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতিম, মিসকিন, নিকট আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী।’  (সূরা নিসা-৪ : ৩৬)


আল হাদিস

۱১. عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَا زَالَ جِبْرِيْلُ يُوْصِيْنِيْ بِالْجَارِ حَتّٰى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ - (بُخَارِيْ : بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالْجَارِ، مُسْلِمْ : بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالْجَارِ وَالْاِحْسَانِ إِلَيْهِ(

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "     থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) নিয়মিতই আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন, এমনকী আমি ধারণা করলাম, হয়তো প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি : বাবুল ওসিয়্যাতি বিল জারি, ইফা : ৫৫৯০, মুসলিম : বাবুল ওসিয়্যাতি বিল জারি ওয়াল ইহসানি ইলাইহি, ইফা : ৬৪৪৮)

۲. عَنْ أَبِيْ شُرَيْحٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللهِ لَايُؤْمِنُ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ قِيْلَ وَمَنْ یَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ اَلَّذِيْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ إِثْمِ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ)

২. হজরত আবু শুরাইহ "   থেকে বর্ণিত। নবি করিম #   বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সেই ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো? হে আল্লাহর রাসূল  #   ! কে সে? রাসূল  #   বললেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি : বাবু ইছমি মান লা ইয়ামানু জারুহু বাওয়ায়িকাহু, ইফা : ৫৫৯১)

۳৩. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : لَيْسَ الْمُؤْمِنُ اَلَّذِيْ يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلٰى جَنْبِهِ- (اَلْأَلْبَانِيْ : اَلسِّلْسِلَةُ الصَّحِيْحَةُ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ #   -কে বলতে শুনেছি, সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অভুক্ত।’ আলবানী : সিলসিলাতুস সহিহাতু, বা.হা- ১৪৯)

۴৪. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قُلْتُ یَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ جَارَيْنِ فَإِلٰي أَيِّهِمَا أُهْدِيْ؟ قَالَ إِلٰى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا - (بُخَارِيْ : بَابُ أَيِّ الْجِوَارِ أَقْرَبُ)

৪. হজরত আয়েশা "    বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল  # ! আমার দুজন প্রতিবেশী আছে, তাহলে আমি কাকে হাদিয়া দেবো? রাসূল #   বলেছেন, দরজার দিক থেকে যে তোমার বেশি নিকটবর্তী।’ (বুখারি : বাবু আইয়িল জিওয়ারি আকরাবু, ইফা : ২১১৬)

۵৫. عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَائَهَا وَتَعَاهَدْ جِيْرَانَكَ- (مُسْلِمْ : بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالْجَارِ وَالْإِحْسَانِ إِلَيْهِ)

৫. হজরত আবু জর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘হে আবু জর! যখন তুমি তরকারি পাকাবে, তখন ঝোল হিসেবে পানি একটু বেশি দেবে, যাতে তোমার প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নিতে পারো।’ (মুসলিম : বাবুল অসিয়্যাতি বিল জারি ওয়াল ইহসানি ইলাইহি, ইফা : ৬৪৪৯)

۶৬. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَقُوْلُ : يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لَاتَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا، مُسْلِمْ : بَابُ الْحَثِّ عَلَى الصَّدْقَةِ وَلَوْ بِالْقَلِيْلِ)

৬.  হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলতেন, ‘হে মুসলিম রমণীগণ! তোমরা প্রতিবেশীর বাড়িতে সামান্য বস্তু পাঠানোকেও তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকী যদি তা বকরির পায়ের সামান্য অংশও হয়।’ (বুখারি : বাবু লা তাহকিরান্না জারাতুন লি-জারাতিহা, ইফা : ৫৫৯২, মুসলিম : বাবুল হাসসি আলাস সদাকাতি ওয়া লাও বিল কালিলি, ইফা : ২২৫১)
























৫২. নারী অধিকার : حَقُّ النِّسَاءِ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا یَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَآءَ كَرْهًا وَ لَا تَعْضُلُوْهُنَّ لِتَذْهَبُوْا بِبَعْضِ مَاۤ اٰتَیْتُمُوْهُنَّ إِلَّاۤ أَنْ یَّاْتِیْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَیِّنَةٍ وَ عَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ فَاِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسٰی أَنْ تَكْرَهُوْا شَیْـًٔا وَّ یَجْعَلَ اللّٰهُ فِیْهِ خَیْرًا كَثِیْرًا .

১. ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ  হবে। আর তোমরা তাদের আবদ্ধ করে রেখ না, তাদের যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেওয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করো। আর যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো,  তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৯)

اُحِلَّ لَكُمْ لَیْلَةَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَ أَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَیْكُمْ وَ عَفَا عَنْكُمْ فَالْـٰٔنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَ ابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمْ وَ كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَكُمُ الْخَیْطُ الْاَبْیَضُ مِنَ الْخَیْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیْلِ وَ لَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَ أَنْتُمْ عٰكِفُوْنَ فِی الْمَسٰجِدِ تِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَا كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ اٰیٰتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ یَتَّقُوْنَ.

২. ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্ল¬াহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান করো। আর আহার করো ও পান করো যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্ল¬াহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৮৭)

وَ مَنْ یَّعْمَلْ مِنَ الصّٰلِحٰتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰی وَ هُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓىِٕكَ یَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَ لَا یُظْلَمُوْنَ نَقِیْرًا.

৩. ‘আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ জুলুমও করা হবে না।’ (সূরা নিসা-৪ : ১২৪)

وَ الْمُطَلَّقٰتُ یَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلٰثَةَ قُرُوْءٍ وَ لَا یَحِلُّ لَهُنَّ أَنْ یَّكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ فِیْۤ اَرْحَامِهِنَّ اِنْ كُنَّ یُؤْمِنَّ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ بُعُوْلَتُهُنَّ اَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِیْ ذٰلِكَ اِنْ اَرَادُوْۤا اِصْلَاحًا وَ لَهُنَّ مِثْلُ الَّذِیْ عَلَیْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَ لِلرِّجَالِ عَلَیْهِنَّ دَرَجَةٌ وَ اللّٰهُ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ.

৪. ‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে এবং তাদের জন্য হালাল হবে না যে, আল¬াহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন, তা তারা গোপন করবে, যদি তারা আল¬াহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আর এর মধ্যে তাদের স্বামীরা তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অধিক হকদার, যদি তারা সংশোধন চায়। আর নারীদের রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার। আর পুরুষদের রয়েছে তাদের ওপর মর্যাদা এবং আল¬াহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা-২ : ২২৮)

وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحْلَةً فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَیْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِیْٓـئًا مَّرِیْئًا.

৫. ‘আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।’ (সূরা নিসা-৪ : ৪)

لِلرِّجَالِ نَصِیْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدٰنِ وَ الْاَقْرَبُوْنَ وَ لِلنِّسَآءِ نَصِیْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدٰنِ وَ الْاَقْرَبُوْنَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا.

৬. ‘পুরুষদের জন্য পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা  থেকে একটি অংশ তা থেকে কম হোক বা বেশি হোকÑ নির্ধারিত হারে।’ (সূরা নিসা-৪ : ৭)

فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّیْ لَاۤ اُضِیْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰی بَعْضُكُمْ مِّنْۢ بَعْضٍ فَالَّذِیْنَ هَاجَرُوْا وَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ وَ اُوْذُوْا فِیْ سَبِیْلِیْ وَ قٰتَلُوْا وَ قُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَیِّاٰتِهِمْ وَ لَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ.

৭. ‘অতপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিলেন যে, নিশ্চয় আমি তোমাদের কোনো পুরুষ অথবা মহিলা আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে এবং যাদের তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং যাদের আমার রাস্তায় কষ্ট দেওয়া হয়েছে, আর যারা যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ বিলুপ্ত করে দেবো এবং তাদের প্রবেশ করাবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ; আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্ল¬াহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৯৫)

وَ الَّذِیْنَ یُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَ یَذَرُوْنَ اَزْوَاجًا یَّتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّ عَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیْكُمْ فِیْمَا فَعَلْنَ فِیْۤ أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ.

৮. ‘আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদের রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। অতপর যখন তারা ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন তারা নিজদের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক যা করবে, সে ব্যাপারে তোমাদের কোনো পাপ নেই। আর তোমরা যা করো, সে ব্যাপারে আল্ল¬াহ সম্যক অবগত।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৩৪)

یُوْصِیْكُمُ اللّٰهُ فِیْۤ اَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَیَیْنِ فَاِنْ كُنَّ نِسَآءً فَوْقَ اثْنَتَیْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَ اِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَ لِاَبَوَیْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ اِنْ كَانَ لَهٗ وَلَدٌ فَاِنْ لَّمْ یَكُنْ لَّهٗ وَلَدٌ وَّ وَرِثَهٗۤ اَبَوٰهُ فَلِاُمِّهِ الثُّلُثُ فَاِنْ كَانَ لَهٗۤ اِخْوَةٌ فَلِاُمِّهِ السُّدُسُ مِنْۢ بَعْدِ وَصِیَّةٍ یُّوْصِیْ بِهَاۤ اَوْ دَیْنٍ اٰبَآؤُكُمْ وَ اَبْنَآؤُكُمْ لَا تَدْرُوْنَ اَیُّهُمْ اَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ؕ فَرِیْضَةً مِّنَ اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِیْمًا حَكِیْمًا.

৯. ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার পিতা-মাতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার পিতা-মাতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা-মাতা ও  তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তোমরা তা জানো না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা নিসা-৪ : ১১)


আল হাদিস

۱১. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ جَائَتْنِيْ اِمْرَأَةٌ مَعَهَا اِبْنَتَانِ تَسْأَلُنِيْ فَلَمْ تَجِدُ عِنْدِيْ غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ اِبْنَتَيْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ فَدَخَلَ النَّبِيُّ ﷺ فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ مَنْ يَلِىْ مِنْ هٰذِهِ الْبَنَاتِ شَيْئًا فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِّنَ النَّارِ- (بُخَارِيْ : بَابُ رَحْمَةِ الْوَلَدِ وَتَقْبِيْلِهِ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ الْإِحْسَانِ إِلَى الْبَنَاتِ)

১. হজরত আয়েশা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা আমার কাছে এক মহিলা তার দুটি কন্যা সন্তানসহ এসে কিছুু চাইল। কিন্তু আমার নিকট দেওয়ার মতো একটি খেজুর ছাড়া কিছুই ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। অতপর সে খেজুর তার দুই কন্যার মাঝে ভাগ করে দিলো এবং (সে নিজে না খেয়ে) চলে গেল। অতপর রাসূল  #   ঘরে প্রবেশ করলে আমি তাঁকে ঘটনাটি খুলে বললাম। তখন তিনি বললেন, যাকে আল্লাহ এ ধরনের কন্যা সন্তান দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেছেন, অতপর সে কন্যাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে (কিয়ামতের দিন) এ কন্যাই তার জন্য দোজখের ঢালস্বরূপ হবে।’ (বুখারি : বাবু রাহমাতিল ওলাদি ওয়া তাকবিলিহি, ইফা : ৫৫৬৯, মুসলিম : বাবু ফাদলিল ইহসানি ইলাল বানাতি, ইফা : ৬৪৫৪)

۲. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِيْ وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوْهُ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ فَضْلِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ)

২. হজরত আয়েশা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম, যে তার পরিবার পরিজনের নিকট উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সকলের চেয়ে উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন তাকে তোমরা ছেড়ে দেবে (অর্থাৎ কোনো দাবি রাখবে না)।’ (তিরমিজি : বাবু ফাদলি আযওয়াজিন নাবিয়্যি, বা.হা- ৩৮৯৫)

۳٣. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتّٰى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعهُ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ الْإِحْسَانِ إِلَى الْبَنَاتِ)

৩. হজরত আনাস ইবনে মালেক "   থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি মেয়েকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করল, সে কিয়ামতের দিন এরূপ অবস্থায় আসবে যে, আমি ও সে এরকম একত্রিত থাকব। তিনি তার আঙুলগুলো মিলিয়ে দেখালেন।’ (মুসলিম : বাবু ফাদলিল ইহসানি ইলাল বানাতি, ইফা : ৬৪৫৬)

۴৪. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُحَرِّجُ حَقَّ الضِّعْفَيْنِ الْيَتِيْمِ وَالْمَرْأَةِ - (اِبْنُ مَاجَةْ : بَابُ حَقِّ الْيَتِيْمِ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "     থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! দুই দুর্বল অর্থাৎ ইয়াতিম ও নারীদের প্রাপ্য ও অধিকার নষ্ট করাকে আমি অন্যায় ও গুনাহ হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিলাম।’ (ইবনে মাজাহ : বাবু হাক্কিল ইয়াতিম,ইফা : ৩৬৭৮)

۵৫. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اِسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلْعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلْعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيْمَهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ-(بُخَارِيْ : بَابُ خَلْقِ آدَمَ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِ وَذُرِّيَّتِهِ، مُسْلِمْ : بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالنِّسَاءِ)

৫. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ করো। কেননা নারী জাতিকে পাজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে ভেঙে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে এবং যদি ফেলে রাখো তা বাঁকাই থাকবে। অতএব তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো।’ (বুখারি : বাবু খালকি আদামা সালাওয়াতুল্লহি আলাইহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি, ইফা : ৩০৯৬, মুসলিম : বাবুল ওয়াসিয়্যাতি বিননিসায়ি, ইফা :  ৩৫১৫)

۶৬. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَمْعَةَ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَخْطُبُ وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِيْ عَقَرَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ [اِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا] اِنْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزِيْزٌ عَارِمٌ مَنِيْعٌ فِيْ رَهْطِهِ مِثْلُ أَبِيْ زَمْعَةَ وَذَكَرَ النِّسَاءَ فَقَالَ يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ فَيَجْلِدُ اِمْرَأَتَهُ جَلْدَ الْعَبْدِ فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِيْ ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ وَقَالَ لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ- (بُخَارِيْ : سُوْرَةُ وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، مُسْلِمْ : بَابُ النَّارِ يَدْخُلُهَا الجَبَّارُوْنَ)

৬. আব্দুল্লাহ ইবনে জামাআ "    থেকে বর্ণিত। তিনি নবি  #   -কে খুতবা দিতে শুনলেন। তিনি সেই উষ্ট্রী এবং তার হত্যাকারীর কথা উল্লেখ করলে রাসূলুল্লাহ  #   বললেন, ‘যখন তারা তাদের হতভাগা দুষ্ট লোকটাকে পাঠাল অর্থাৎ (সামুদ জাতির) এক বড়ো সরদার, নিকৃষ্ট দুষ্ট ও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি স্ফূর্তি ও উন্মত্ততার সাথে (উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য) দাঁড়িয়ে গেল! নবি  #  তার বক্তৃতায় মেয়েদের কথা উল্লেখ করলেন, তাদের সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, তোমাদের কেউ তার স্ত্রীকে মারতে উদ্যত হয় এবং তাতে গোলাম বাঁদির ন্যায় মারে, দিনের শেষে সে আবার তার সাথে শোয় (সংগম করে, কত অকৃতজ্ঞ)। অতপর তিনি বাতকর্মের কারণে তাদের হাসি সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে বলেন, যে কাজ তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি করে, সে কাজের জন্য সে নিজেই কেন হাসবে?’ (বুখারি : সূরাতু ওয়াশ শামছি ওয়া দুহাহা, ইফা : ৪৫৭৮, মুসলিম : বাবুন নারি ইয়াদখুলুহাল হাব্বারুনা, ইফা : ৬৯২৭)

٧৭. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ- (مُسْلِمْ : بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالنِّسَاءِ)

৭. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম পুরুষ যেন কোনো মুসলিম মহিলার প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ না করে। কেননা তার কোনো একটি দিক তার কাছে খারাপ লাগলেও অন্য একটি দিক তার পছন্দ হবে।’ (মুসলিম : বাবুল অসিয়্যাতি বিন নিসায়ি, ইফা :  ৩৫১৬)

۸৮. عَنْ حَكِيْمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ یَا رسُوْلَ اللهِ مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟ قَالَ أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اِكْتَسَيْتَ أَوْ اِكْتَسَبْتَ وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحْ وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِيْ الْبَيْتِ (أَبُوْ دَاودْ : بَابٌ فِيْ حَقِّ الْمَرْاَةِ عَلٰى زَوْجِهَا)

৮. হাকিম ইবনে মুয়াবিয়া আল কুশাইরি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,  বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল  #  ! আমাদের কোনো ব্যক্তির ওপর তার স্ত্রীর কী অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন, তুমি যখন আহার করো তাকেও আহার করাও, তুমি যখন পরিধান করো, তাকেও পরিধান করাও, কখনও মুখমণ্ডলে প্রহার করো না, কখনও অশ্লীল ভাষায় গালি দিও না এবং ঘরের মধ্যে ছাড়া তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (আবু দাউদ : বাবুন ফি হাক্কিল মারআতি আলা জাওজিহা, ইফা : ২১৩৯)

۹৯. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ اَلدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا اَلْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ- (مُسْلِمْ : بَابُ خَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا اَلْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ)

৯. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, ‘সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদ। আর পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ হলো সৎকর্মপরায়ণ স্ত্রী।’ (মুসলিম : বাবুল ওয়াসিয়্যাতি বিন নিসায়ি, ইফা : ৩৫১২)




















৫৩. শ্রমিকের অধিকার : حَقُّ الْأَجِيْرِ

আল কুরআন

قَالَ اِنِّیْۤ اُرِیْدُ أَنْ اُنْكِحَكَ اِحْدَی ابْنَتَیَّ هٰتَیْنِ عَلٰی أَنْ تَاْجُرَنِیْ ثَمٰنِیَ حِجَجٍ فَاِنْ اَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِنْدِكَ وَ مَاۤ اُرِیْدُ أَنْ اَشُقَّ عَلَیْكَ سَتَجِدُنِیْۤ اِنْ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰلِحِیْنَ.

১. ‘সে বলল, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার মজুরি করবে। আর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ করো, তবে সেটা তোমার পক্ষ থেকে (অতিরিক্ত)। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তুমি ইনশাআল্লাহ আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত পাবে।’ (সূরা কাসাস-২৮ : ২৭)

قَالَتْ اِحْدٰىهُمَا یٰاَبَتِ اسْتَاْجِرْهُ إِنَّ خَیْرَ مَنِ اسْتَاْجَرْتَ الْقَوِیُّ الْاَمِیْنُ.

২. ‘নারীদ্বয়ের একজন বলল, হে আমার পিতা, আপনি তাকে মজুর নিযুক্ত করুন। নিশ্চয় আপনি যাদের মজুর নিযুক্ত করবেন তাদের মধ্যে সে উত্তম, যে শক্তিশালী বিশ্বস্ত।’ (সূরা কাসাস-২৮ : ২৬)


আল হাদিস

۱১. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : أَعْطُوْا الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرَقُهُ-(اِبْنُ مَاجَةْ : بَابُ أَجْرِ الْأُجَرَاءِ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তাদের মজুরি দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ : বাবু আজারিল উজারা-ই, মা.শা- ২৪২৪, বা.হা- ২৪৪৩)

۲. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ قَالَ الله : ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطٰى بِيْ ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ مِنْهُ رَجُلٌ اِسْتَأْجَرَ أَجِيْرًا فَاسْتَوْفٰی مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ اَجْرَهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ اِثْمِ مَنْ بَاعَ حُرًّا)

২. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন আমি স্বয়ং অবস্থান করব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করেছে, ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করেছে, ৩. যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করে পূর্ণ কাজ আদায় করে নেয়, অথচ তার বিনিময় দেয়  না।’ (বুখারি : বাবু ইসমে মান বাআ হুররান , ইফা : ২০৮৬)

۳٣. عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اِخْوَانُكُمْ خَوَلُكُمْ جَعَلَهُمُ اللهُ  تَحْتَ اَيْدِيْكُمْ، فَمَنْ كَانَتْ اَخُوْهُ  تَحْتَ يَدِه فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلَا يُكَلِّفْهُمْ مِنَ الْعَمَلِ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَاِنْ كَلَّفْتُمُوْهُمْ فَأَعِيْنُوْهُمْ- (بُخَارِيْ : بَابُ الْمَاعَصِيْ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ، مُسْلِمْ : بَابُ إطْعَامِ الْمَمْلُوْكِ مِمَّا يَأْكُلُ)

৩. হজরত আবু জর গিফারি "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘তোমাদের চাকর-চাকরানি ও দাস-দাসীরা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ভাই, তাদের আল্লাহ তাআলা তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছে সে যেন তাকে তাই খাওয়ায়, যা সে নিজে খায়। তাকে যেন তা পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। আর সাধ্যের বাহিরে কোনো কাজ চাপিয়ে দিও না। একান্ত যদি চাপানো হয়, তবে তা সমাধান করার ব্যাপারে তাদের সাহায্য করো।’ (বুখারি : বাবুল মায়াসি মিন আমরিল জাহিলিয়াতি, ইফা : ৩০, মুসলিম : বাবু ইতয়ামি মামলুকি মিম্মা ইয়াকুলু, ইফা : ৪১৬৯)

۴৪. عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَقُوْلُ فِيْ مَرَضِهِ الَّذِيْ تُوُفِيَ فِيْهِ: اَلصَّلَاةَ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ فَمَا زَالَ يَقُوْلُهَا حَتّٰى مَا يَفِيْضَ بِهَا لِسَانُهُ- (اِبْنُ مَاجَةْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ ذِكْرِ مَرَضِ رَسوُلْ اللهِ ﷺ)

৪. হজরত উম্মে সালামা "    থেকে বর্ণিত, যে অসুস্থতার মধ্য দিয়ে রাসূল #     মৃত্যুবরণ করেছেন, তখন তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘সালাত ও দাস-দাসীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। এ কথা তিনি অনবরত বলতেই থাকলেন এমনকী এক পর্যায়ে তার জিহ্বার স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল।’ (ইবনে মাজাহ : বাবু মা জাআ ফি জিকরি মারাদি রাসূলুল্লাহি  #   , মা.শা- ১৬১৪)

۵৫. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ  بَحْتَجِمُ وَلَمْ يَكُنْ يَظْلِمُ أَحَدًا أَجْرَهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ خَرَاجِ الْحَجَّامِ)

৫. হজরত আনাস "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা গ্রহণ করতেন, কিন্তু কখনও তিনি বিনিময় দিতে কারও ওপর জুলুম করেননি।’ (বুখারি : বাবু খারাজিল হাজ্জাম, ২১১৯)

۶৬. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِذَا كَفٰى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ طَعَامَهُ حَرَّهُ وَدُخَانَهُ فَلْيَأْخُذْ بِيَدِهِ فَلْيُقْعِدْهُ مَعَهُ فَاِنْ أَبٰی فَلْيَأْخُذْ لُقْمَةً فَلْيُطْعِمْهَا إِيَّاهُ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْأَكْلِ مَعَ الْمَمْلُوْكِ وَالْعِيَالِ)

৬, হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তোমাদের ভৃত্য যদি তোমাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে, তখন তাকে হাতে ধরে নিজের সঙ্গে খেতে বসাও। সে যদি বসতে অস্বীকার করে তবুও দুই-এক মুঠি খাদ্য অন্তত তাকে অবশ্যই খেতে দিতে হবে। কারণ, সে আগুনের উত্তাপ ও ধূম্র এবং খাদ্য প্রস্তুত করার কষ্ট সহ্য করেছে।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফিল আকলি মায়াল মামলুকি ওয়াল ইয়ালি, ইফা : ১৮৫৯)












৫৪. খিলাফাহ : اَلْخِلَافَةُ

আল কুরআন

وَ اِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓئِكَةِ اِنِّیْ جَاعِلٌ فِی الْاَرْضِ خَلِیْفَةً قَالُوْۤا اَتَجْعَلُ فِیْهَا مَنْ یُّفْسِدُ فِیْهَا وَ یَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَ نَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَ نُقَدِّسُ لَكَ قَالَ اِنِّیْۤ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ .

০১. ‘আর স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলিফা সৃষ্টি করছি। তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জানো না।’ (সূরা বাকারা-২ : ৩০)

وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَكُمْ خَلٰٓئِفَ الْاَرْضِ وَ رَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَبْلُوَكُمْ فِیْ مَاۤ اٰتٰىكُمْ إِنَّ رَبَّكَ سَرِیْعُ الْعِقَابِ وَ إِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

২. ‘আর তিনি সে সত্তা, যিনি তোমাদের জমিনের খলিফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদের যা প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আনআম-৬ : ১৬৫)

ثُمَّ جَعَلْنٰكُمْ خَلٰٓئِفَ فِی الْاَرْضِ مِنْۢ بَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَیْفَ تَعْمَلُوْنَ.

৩. ‘তারপর আমি তোমাদের জমিনে তাদের পরে স্থলাভিষিক্ত করেছি, যাতে আমি দেখি তোমরা কেমন আমল করো।’ (সূরা ইউনুস-১০ : ১৪)

اَوَ عَجِبْتُمْ أَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَلٰی رَجُلٍ مِّنْكُمْ لِیُنْذِرَكُمْ وَ اذْكُرُوْۤا اِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنْۢ بَعْدِ قَوْمِ نُوْحٍ وَّ زَادَكُمْ فِی الْخَلْقِ بَصْطَةً ۚ فَاذْكُرُوْۤا اٰلَآءَ اللّٰهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

৪. ‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছ যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদের সতর্ক করে? আর তোমরা স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের নুহের কওমের পর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন এবং সৃষ্টিতে তোমাদের দৈহিক গঠন ও শক্তিতে সমৃদ্ধ করেছেন। সুতরাং তোমরা স্মরণ করো আল্লাহর নিয়ামতসমূহ, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা আরাফ-৭ : ৬৯)

قَالُوْا اُوْذِیْنَا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَاْتِیَنَا وَ مِنْۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا قَالَ عَسٰی رَبُّكُمْ أَنْ یُّهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَ یَسْتَخْلِفَكُمْ فِی الْاَرْضِ فَیَنْظُرَ كَیْفَ تَعْمَلُوْنَ.

৫. ‘তারা বলল, তুমি আমাদের কাছে আসার পূর্বে আমাদের কষ্ট দেওয়া হয়েছে এবং তুমি আমাদের কাছে আসার পরেও। সে বলল, আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করবেন এবং জমিনে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, অতপর তিনি দেখবেন তোমরা কীভাবে আমল করো।’ (সূরা আরাফ-৭ : ১২৯)

وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِی الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَ لَیُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِیْنَهُمُ الَّذِی ارْتَضٰی لَهُمْ وَ لَیُبَدِّلَنَّهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ اَمْنًا یَعْبُدُوْنَنِیْ لَا یُشْرِكُوْنَ بِیْ شَیْئًا وَ مَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

৬. ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর এরপর যারা কুফরি করবে তারাই ফাসিক।’ (সূরা নুর-২৪ : ৫৫)

یٰدَاوٗدُ إِنَّا جَعَلْنٰكَ خَلِیْفَةً فِی الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَیْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعِ الْهَوٰی فَیُضِلَّكَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ إِنَّ الَّذِیْنَ یَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِیْدٌۢ بِمَا نَسُوْا یَوْمَ الْحِسَابِ.

৭. (হে দাউদ), ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো। আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা, তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আজাব রয়েছে। কারণ, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।’ (সূরা সাদ-৩৮ : ২৬)


আল হাদিস

۱১. عَنْ عَرْفَجَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيْعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيْدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوْهُ- (مُسْلِمْ : بَابُ حُكْمِ مَنْ فَرَّقَ أَمْرَ الْمُسْلِمِيْنَ وَهُوَ مُجْتَمِعٌ)

১. হজরত আরফাজা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #    -কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা যখন একটি লোকের অধীনে সংঘবদ্ধ, এমন সময় কেউ এসে যদি তোমাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে চেষ্টা করে, তোমরা তাকে হত্যা করো।’ (মুসলিম : বাবু হুকমি মান ফাররাকা আমরাল মুসলিমীনা ওয়া হুয়া মুজতামিউন, ইফা :  ৪৬৪৫)

۲. عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ كُنَّا قُعُوْدًا فِي الْمَسْجِدِ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ  وَكَانَ بَشِیْرٌ رَجُلًا يَكُفُّ حَدِيْثَهُ فَجَاءَ أَبُوْ ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيُّ فَقَالَ يَا بَشِيْرَ بْنِ سَعْدٍ أَ تَحْفَظُ حَدِيْثَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ  فِي الْأُمَرَاءِ؟ فَقَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا أَحْفَظُ خُطْبَتَهُ فَجَلَسَ أَبُوْ ثَعْلَبَةَ فَقَالَ حُذَيْفَةُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : تَكُوْنُ النُّبُوَّةُ فِيْكُمْ مَاشَاءَ اللهُ أَنْ تَكُوْنَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُوْنُ خِلَافَةٌ عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ فَتَكُوْنُ مَاشَاءَ اللهُ أَنْ تَكُوْنَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ الله أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُوْنُ مُلْكًا عَاضًّا فَيَكُوْنُ مَاشَاءَ اللهُ أَنْ يَكُوْنَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُوْنُ مُلْكًا جَبْرِيَّةً فَتَكُوْنُ مَاشَاءَ اللهُ أَنْ تَكُوْنَ  ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُوْنُ خِلَافَةٌ عَلٰى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ  ثُمَّ سَكَتَ- (مُسْنَدُ أَحْمَدٍ : حَدِيْثُ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ)

২. হজরত নুমান ইবনে বাশির "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূল  #     -এর সাথে একদা মসজিদে বসা ছিলাম। আর বাশির ছিল এমন ব্যক্তি যে হাদিস বর্ণনা থেকে বিরত থাকত। অতপর আবু সালাবা আল খুশানি আসল, অতপর বলল, হে বাশির ইবনে সাদ! শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত রাসূল  #   -এর হাদিসটা কি তোমার মুখস্থ আছে? অতপর হুজাইফা বলল, আমি রাসূল  #    এর বক্তব্য মুখস্থ করেছি। অতপর আবু সালাবা বসে পড়লে হুজাইফা "    বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, তোমাদের মাঝে ততদিন নবুওয়ত থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করেন। অতপর আল্লাহ তাআলা যখন নবুওয়ত উঠিয়ে নিতে চাইবেন, তখন উঠিয়ে নেবেন। অতপর নবুওয়তের পদ্ধতির আলোকে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। অতপর যতদিন খিলাফত রাখার ইচ্ছা আল্লাহ তাআলা করবেন, ততদিন রাখবেন। আবার যখন উঠিয়ে নিতে চাইবেন তখন উঠিয়ে নেবেন। অতপর রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা করবেন ততদিন তাকে রাখবেন, আবার যখন তা উঠিয়ে নিতে ইচ্ছা করবেন তখন তা উঠিয়ে নেবেন। অতপর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা করবেন ততদিন তাকে টিকিয়ে রাখবেন। আবার যখন তা উঠিয়ে নিতে ইচ্ছা করবেন, তখন তা উঠিয়ে নেবেন। অতপর পুনরায় পৃথিবীতে নবুওয়তের ভিত্তিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এ কথা বলে রাসূল #    চুপ থাকলেন।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদিসু নুমান ইবনে বাশির, মা.শা-  ১৭৬৮০, বা.হা- ১৮৪০৬) [ হাদিসের মান : হাসান]।







৫৫. অমুসলিমের অধিকার : حَقُّ غَيْرِ الْمُسْلِمِ

আল কুরআন

وَ لَا تُجَادِلُوْۤا اَهْلَ الْكِتٰبِ إِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ إِلَّا الَّذِیْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَ قُوْلُوْۤا اٰمَنَّا بِالَّذِیْۤ اُنْزِلَ اِلَیْنَا وَ اُنْزِلَ اِلَیْكُمْ وَ اِلٰهُنَا وَ اِلٰهُكُمْ وَاحِدٌ وَّ نَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ

১. ‘আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম করেছে। আর তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী।’ (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৪৬)

لَا یَنْهٰىكُمُ اللّٰهُ عَنِ الَّذِیْنَ لَمْ یُقَاتِلُوْكُمْ فِی الدِّیْنِ وَ لَمْ یُخْرِجُوْكُمْ مِّنْ دِیَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوْهُمْ وَ تُقْسِطُوْۤا اِلَیْهِمْ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُقْسِطِیْنَ.

২. ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সূরা মুমতাহিনা-৬০ : ৮)

وَ لَا تَسُبُّوا الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ فَیَسُبُّوا اللّٰهَ عَدْوًۢا بِغَیْرِ عِلْمٍ كَذٰلِكَ زَیَّنَّا لِكُلِّ اُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ اِلٰی رَبِّهِمْ مَّرْجِعُهُمْ فَیُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ.

৩. ‘আর তোমরা তাদের গালমন্দ করো না, আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা ডাকে, ফলে তারা গালমন্দ করবে আল্লাহকে, শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত। এভাবেই আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য তাদের কর্ম শোভিত করে দিয়েছি। তারপর তাদের রবের কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন। অতপর তিনি জানিয়ে দেবেন তাদের, যা তারা করত।’ (সূরা আনআম-৬ : ১০৮)

وَ اِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِیْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰی یَسْمَعَ كَلٰمَ اللّٰهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَاْمَنَهٗ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا یَعْلَمُوْنَ.

৪. ‘আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে, অতপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে। তা এই জন্য যে, তারা এমন এক কওম, যারা জানে না।’ (সূরা তাওবা-৯ : ৬)

وَ هُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖ وَ یُرْسِلُ عَلَیْكُمْ حَفَظَةً حَتّٰی إِذَا جَآءَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَ هُمْ لَا یُفَرِّطُوْنَ.

৫. ‘আর যদি তারা সন্ধির প্রতি ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তুমিও তার প্রতি ঝুঁকে পড়ো, আর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আনফাল-৮ : ৬১)


আল হাদিস

۱১. عَنْ صَفْوَانِ بْنِ سُلَيْمٍ عَنْ عِدَّةٍ مِنْ أَبْنَاءِ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ  عَنْ آبَائِهِمْ دِنْيَةً عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ : أَلَا مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوْ اِنْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيْبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيْجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- (أَبُوْ دَاودْ: بَابٌ فِيْ تَعْشِيْرِ أَهْلِ الذِّمَّةِ إِذَا اخْتَلَفُوْا بِالتِّجَارَاتِ)

১. হজরত সাফওয়ান ইবনে সুলইম "   আসহাবে রাসূল  #   -এর কয়েকজন সন্তান থেকে বর্ণনা করেন, ‘তারা তাদের পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তারা রাসূলুল্লাহ  #    থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি  #    বলেন, মনে রেখ যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কিছু তার ওপর চাপিয়ে দেয়, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করব।’ (আবু দাউদ : বাবুন ফি তাশিরি আহলিজ জিম্মাতি ইজাখতালাফু বিত্তিজারাতি, ইফা : ৩০৪১)

۲২. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ کَانَ غُلَامٌ يَهُوْدِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ ﷺ فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النِّبِىُّ ﷺ يَعُوْدُهُ فَقَعَدَعِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ أَسْلِمْ فَنَظَرَ إِلٰى أَبِيْهِ وَهُوَ عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُ أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ ﷺ فَأَسْلَمَ فَخَرَجَ النَّبِيُّ ﷺ وَهُوَ يَقُوْلُ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَنْقَذَهُ مِنَ النَّارِ- (بُخَارِيْ : بَابٌ إِذَا أَسْلَمَ الصَّبِيُّ فَمَاتَ)

২. হজরত আনাস "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ  #    -এর একজন খাদেম ছিল, সে ছিল ইয়াহুদি। একদিন সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবি  #    তাকে শুশ্রুষা করার জন্য এলেন। রাসূল  #    তার মাথার নিকট বসলেন। তারপর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। (এ কথা শুনে) ছেলেটি তার পাশে থাকা বাবার দিকে তাকাল। তারপর তার বাবা ছেলেকে বলল, আবুল কাশেম (নবি মুহাম্মদ  #    ) এর কথা মেনে নাও! অতপর নবি করিম  #   এই কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন- সেই আল্লাহ তাআলার প্রশংসা যিনি তাকে (ছেলেটিকে) জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেছেন।’ (বুখারি : বাবু ইজা আসলামাস সাবিয়্যু ফামাতা, ১২৬৮)

۳৩. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ اِشْتَرَى طَعَامًا مِنْ يَهُوْدِيٍّ إِلٰى أَجَلٍ وَرَهَنَهُ دِرْعًا مِنْ حَدِيْدٍ- (بُخَارِيْ : بَابُ شِرَاءِ النَّبِيِّ ﷺ بِالنَّسِيْئَةِ)

৩. হজরত আয়েশা "   থেকে বর্ণিত। ‘নবি করিম  #    নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, একজন ইয়াহুদি থেকে খাদ্য ক্রয় করলেন এবং তার কাছে তিনি তাঁর লোহার বর্ম বন্ধক রাখলেন।’ (বুখারি : বাবু শিরাইন নাবিয়্যি #   বিন নাসিয়াতি, ইফা : ১৯৩৮)









৫৬. ইসলামী রাজনীতি : اَلسِّيَاسَةُ الْإِسْلَامِيَّةُ

আল কুরআন

 إِنَّاۤ أَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىكَ اللّٰهُ وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا.

১. ‘নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাজিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করো সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।’ (সূরা নিসা-৪ : ১০৫)

وَ اَنِ احْكُمْ بَیْنَهُمْ بِمَاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ وَ لَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَ احْذَرْهُمْ أَنْ یَّفْتِنُوْكَ عَنْۢ بَعْضِ مَاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ اِلَیْكَ ؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ اَنَّمَا یُرِیْدُ اللّٰهُ أَنْ یُّصِیْبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوْبِهِمْ وَ إِنَّ كَثِیْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفٰسِقُوْنَ.

২. ‘আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা করো, যা আল্লাহ নাজিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাকো যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখো যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই আজাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক।’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৪৯)

إِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ فِیْ سِتَّةِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰی عَلٰی الْعَرْشِ یُغْشِی الَّیْلَ النَّهَارَ یَطْلُبُهٗ حَثِیْثًا وَّ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ وَ النُّجُوْمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمْرِهٖ اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَمْرُ تَبٰرَكَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَ.

৩. ‘নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখো, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।’ (সূরা আরাফ-৭ : ৫৪)

وَ مَا اخْتَلَفْتُمْ فِیْهِ مِنْ شَیْءٍ فَحُكْمُهٗ اِلَی اللّٰهِ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبِّیْ عَلَیْهِ تَوَكَّلْتُ وَ اِلَیْهِ اُنِیْبُ.

৪. ‘আর যেকোনো বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ করো, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই ওপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।’ (সূরা শুরা-৪২ : ১০)

اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِیَّةِ یَبْغُوْنَ وَ مَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللّٰهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ یُّوْقِنُوْنَ.

৫. ‘তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৫০)

اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّا نَاْتِی الْاَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ اَطْرَافِهَا وَ اللّٰهُ یَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهٖ وَ هُوَ سَرِیْعُ الْحِسَابِ.

৬. ‘তারা কি দেখে না, আমি জমিনকে চতুর্দিক থেকে সংকীর্ণ করে আনছি। আর আল্লাহই হুকুম করেন এবং তাঁর হুকুম প্রত্যাখ্যান করার কেউ নেই এবং তিনিই দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।’ (সূরা রাদ-১৩ : ৪১)

اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللّٰهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ مَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ مِنْ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیْرٍ.

৭. ‘তুমি কি জানো না যে, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর। আর আল্ল¬াহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।’ (সূরা বাকারা-২ : ১০৭)

مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ إِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ أَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلّٰهِ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْا إِلَّا اِیَّاهُ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ.

৮. ‘তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাজিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না। এটিই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।’ (সূরা ইউসুফ-১২ : ৪০)

إِنَّاۤ أَنْزَلْنَا التَّوْرٰىةَ فِیْهَا هُدًی وَّ نُوْرٌ یَحْكُمُ بِهَا النَّبِیُّوْنَ الَّذِیْنَ اَسْلَمُوْا لِلَّذِیْنَ هَادُوْا وَ الرَّبّٰنِیُّوْنَ وَ الْاَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتٰبِ اللّٰهِ وَ كَانُوْا عَلَیْهِ شُهَدَآءَ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَ اخْشَوْنِ وَ لَا تَشْتَرُوْا بِاٰیٰتِیْ ثَمَنًا قَلِیْلًا وَ مَنْ لَّمْ یَحْكُمْ بِمَاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكٰفِرُوْنَ.

৯. ‘নিশ্চয় আমি তাওরাত নাজিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহুদিদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নবিগণ এবং রব্বানি ও ধর্মবিদগণ। কারণ তাদের আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর ওপর সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে সামান্য মূল্য ক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৪৪)


আল হাদিস

۱১. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : كَانَتْ بَنُوْا إِسْرَائِيْلَ تَسُوْسُهُمُ الْأَنْبِيَاءَ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ وَ سَيَكُوْنُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُوْنَ قَالُوْا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوْا بِبَيْعَةِ الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ أَعْطُوْهُمْ حَقَّهُمْ فَإِنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اِسْتَرْعَاهُمْ- (بُخَارِيْ : بَابُ مَا ذُكِرَ عَنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ، مُسْلِمْ : بَابُ الْوَفَاءِ بِبَيْعَةِ الْخُلَفَاءِ الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘বনি ইসরাইলদের নেতৃত্ব দিতেন নবিগণ। যখনই একজন নবি মৃত্যুবরণ করতেন তখনই তারপরে আরেকজন নবি আসতেন। আর আমার পরে কোনো নবি নেই। আমার পরে হবে খলিফা এবং তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। সাহাবায়ে কেরামগণ বললেন, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমাদের আপনি কী নির্দেশ দেবেন। রাসূল  #    বলেন, তোমরা একজনের পর অপরজন ধারাবাহিকভাবে সকলের বাইয়াত পূর্ণ করো। তোমরা তাদেরকে তাদের অধিকার পূর্ণ করে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের অধিনস্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।’ (বুখারি :বাবু মা যুকিরা আন বনি ইসরাইল, ইফা : ৩২০৯, মুসলিম : বাবুল ওফায়ি বিবাইয়াতিল খুলাফায়ি আল আউয়ালি ফাল আউয়ালি, ইফা : ৪৬২১)

۲.عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ : سَيَكُوْنُ بَعْدِیْ خُلَفَاءُ يَعْمَلُوْنَ بِمَا يَعْلَمُوْنَ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ، وَسَيَكُوْنُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلَفَاءُ يَعْمَلُوْنَ بِمَالَايَعْلَمُوْنَ  وَيَفْعَلُوْنَ مَا لَا يُؤْمَرُوْنَ فَمَنْ أَنْكَرَعَلَيْهِمْ بَرِئَ وَ مَنْ أَمْسَكَ يَدَاهُ سَلِمَ وَ لٰكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ (صَحِيْحُ ابْنِ حِبَّانَ : ذِكْرُ الْبَيَانِ بِأَنَّ الْمُلُوْكَ يُطْلَقُ عَلَيْهِمْ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "    রাসূলুল্লাহ  #    থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল #    বলেছেন, ‘আমার পরে এমন কিছু খলিফা আসবেন যারা তাদের জ্ঞান অনুসারে আমল করবেন এবং তাদের যা আদেশ করা হবে তারা তা পালন করবেন। আর তাদের পরে এমন কিছু শাসক আসবে তারা যা জানে না তার ওপর আমল করবে এবং তারা তা করবে যা তাদের আদেশ করা হয়নি। অতপর যে তাদের অস্বীকার করবে সে দায়মুক্ত। আর যে (তাদের আনুগত্য থেকে) বিরত থাকবে সেও দায়মুক্ত। তবে যে (তাদের প্রতি) সন্তুষ্ট থাকবে ও তাদের অনুসরণ করবে (সে দায়বদ্ধ হবে)।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : জিকরুল বায়ানি বি আন্নাল মুলুকা ইউতলাকু আলাইহিম, বা.হা- ৬৬৬০)












৫৭. ইসলামে বিচারব্যবস্থা : اَلْقَضَاءُ فِيْ الْإِسْلَامِ

আল কুরআন

إِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰی اَهْلِهَا وَ إِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِیْعًا ۢ بَصِیْرًا.

১. ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কতই-না সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’  (সূরা নিসা-৪ : ৫৮)

لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَیِّنٰتِ وَ أَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْمِیْزَانَ لِیَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَ أَنْزَلْنَا الْحَدِیْدَ فِیْهِ بَاْسٌ شَدِیْدٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ یَّنْصُرُهٗ وَ رُسُلَهٗ بِالْغَیْبِ ؕ إِنَّ اللّٰهَ قَوِیٌّ عَزِیْزٌ.

২. ‘নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদের স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড নাজিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরও নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদের সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।’ (সূরা হাদিদ-৫৭ : ২৫)

فَلِذٰلِكَ فَادْعُ وَ اسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَ وَ لَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَ قُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ أَنْزَلَ اللّٰهُ مِنْ كِتٰبٍ وَ اُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَیْنَكُمْ اَللّٰهُ رَبُّنَا وَ رَبُّكُمْ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَ لَكُمْ اَعْمَالُكُمْ لَا حُجَّةَ بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمْ اَللّٰهُ یَجْمَعُ بَیْنَنَا وَ اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ.

৩. ‘এ কারণে তুমি আহ্বান করো এবং দৃঢ় থাক যেমন তুমি আদিষ্ট হয়েছ। আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না এবং বলো, আল্লাহ যে কিতাব নাজিল করেছেন আমি তাতে ঈমান এনেছি এবং তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের রব এবং তোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনো বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদের একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।’  (সূরা শুরা-৪২ : ১৫)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِیْنَ لِلّٰهِ شُهَدَآءَ بِالْقِسْطِ وَ لَا یَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰی اَلَّا تَعْدِلُوْا اِعْدِلُوْا هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰی وَ اتَّقُوا اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ.

৪. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ করো, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা যা করো, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِیْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَ لَوْ عَلٰی أَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ اِنْ یَّكُنْ غَنِیًّا اَوْ فَقِیْرًا فَاللّٰهُ اَوْلٰی بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰی أَنْ تَعْدِلُوْا وَ اِنْ تَلْوٗۤا اَوْ تُعْرِضُوْا فَإِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرًا.

৫. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা করো সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৩৫)

اِذْ دَخَلُوْا عَلٰی دَاوٗدَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوْا لَا تَخَفْ ۚ خَصْمٰنِ بَغٰی بَعْضُنَا عَلٰی بَعْضٍ فَاحْكُمْ بَیْنَنَا بِالْحَقِّ وَ لَا تُشْطِطْ وَ اهْدِنَا اِلٰی سَوَآءِ الصِّرَاطِ.

৬. ‘যখন তারা দাউদের কাছে প্রবেশ করল, তখন সে তাদের ভয় পেয়ে গেল। তারা বলল, আপনি ভয় করবেন না, আমরা বিবদমান দুপক্ষ। আমাদের একে অন্যের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে। অতএব আপনি আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করুন, অবিচার করবেন না। আর আমাদের সরল পথের নির্দেশনা দিন।’ (সূরা  ছোয়াদ-৩৮ : ২২)

وَ مَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّ لَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَی اللّٰهُ وَ رَسُوْلُهٗ اَمْرًا أَنْ یَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِیَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ وَ مَنْ یَّعْصِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیْنًا.

৭. ‘আর আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু ইখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্ল-াহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।’ (সূরা আহযাব-৩৩ : ৩৬)


আল হাদিস

۱১. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَللّٰهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِيْ شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِيْ شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضِيْلَةِ  الْإِمَامِ الْعَادِلِ)

১. হজরত আয়েশা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #     বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয় অতপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করে, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়, অতপর সে তাদের প্রতি নরম ও কোমল আচরণ করে তুমিও তার প্রতি কোমল আচরণ করো।’ (মুসলিম : বাবু ফাদিলতিল ইমামিল আদিল, ইফা : ৪৫৭১)

۲২. عَنْ مَعْقِلٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَامِنْ وَالٍ يَلِيْ رَعِيَّةً مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ فَيَمُوْتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ - (بُخَارِيْ: بَابُ مَنِ اسْتُرْعِيَ رَعِيَّةً فَلَمْ يَنْصَحْ)

২. হজরত মা-কাল "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  #    কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোনো বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক হয়েছে। অতপর সে এমতবস্থায় মারা গেছে যে, সে তাদের সাথে প্রতারণা করেছে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি : বাবু মানিস তুরইয়া রাইয়াতান ফালাম ইয়ানসাহ, ইফা : ৬৬৬৬)

۳৩. عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اَلْقُضَاةُ ثَلَاثَةٌ وَاحِدٌ فِي الْجَنَّةِ وَإِثْنَانِ فِي النَّارِ فَأَمَّا الَّذِيْ فِي الْجَنَّةِ فَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَقَضَى بِه وَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَجَارَ فِي الْحُكْمِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ قَضَى لِلنَّاسَ عَلٰى جَهْلٍ فَهُوَ فِي النَّارِ- (أَبُوْ دَاودْ: بَابٌ فِي الْقَاضِيْ يُخْطِئُ)

৩. হজরত ইবনে বরাইদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবি করিম   #    থেকে বর্ণনা করেন, নবি   #    বলেছেন, ‘তিন প্রকার বিচারক রয়েছেন তার মাঝে এক প্রকার জান্নাতে যাবে, বাকি দুই প্রকার জাহান্নামে যাবে। যে বিচারক জান্নাতে যাবে সে হলো এমন, প্রকৃত সত্য সে জানতে পেরেছে অতপর তদানুযায়ী বিচার ও ফায়সালা করেছে। যে ব্যক্তি প্রকৃত সত্যকে জানতে পেরেও ফায়সালার ক্ষেত্রে অবিচার করেছে সে জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি অজ্ঞতা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে বিচার করেছে সেও জাহান্নামে যাবে।’ (আবু দাউদ : বাবু ফিল কাদি ইয়ুখতি, ইফা : ৩৫৩৫) [ সনদের মান : সহিহ/হাসান]

۴৪. عَنْ عَلِيٍّ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِذَا تَقَاضٰى إِلَيْكَ رَجُلَانِ فَلَا تَقْضِ لِلْأَوَّلِ حَتّٰى تَسْمَعَ كَلَامَ الْاٰخَرَ فَسَوْفَ تَدْرِيْ كَيْفَ تَقْضِيْ قَالَ عَلِيٌّ فَمَا زِلْتُ قَاضِيًا بَعْدُ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْقَاضِيْ لَا يَقْضِيْ بَيْنَ الْخَصْمَيْنِ حَتّٰی يَسْمَعَ كَلَامَهُمَا)

৪. হজরত আলি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ   #    আমাকে বলেছেন, ‘যখন তোমার নিকট কোনো দুব্যক্তি বিচার লাভের আশা করে, তখন তুমি দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা শোনা ব্যতীত প্রথম ব্যক্তির ক্ষেত্রে রায় দেবে না। কেননা অচিরেই (কিয়ামতের দিন) তুমি জানতে পারবে তুমি কেমন ফায়সালা করেছ। আলি "   বলেন, এরপর থেকে আমি এভাবেই বিচার করতাম।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফিল কাদি লা ইয়াকদ্বি বাইনাল খাসমাইনি হাত্তা ইয়াসমাআ কালামাহুমা, ইফা : ১৩৩৫)

۵৫. عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ قُرَيْشًا أَهَمَّهُمْ شَأْنُ الْمَرْأَةِ الْمَخْزُوْمِيَّةِ الَّتِيْ سَرَقَتْ فَقَالُوْا وَمَنْ يُكَلِّمُ فِيْهَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ، فَقَالُوْا وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ حِبُّ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ ثُمَّ قَامَ فَاخَتَطَبَ ثُمَّ قَالَ إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِيْنَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوْا إِذَا سَرَقَ فِيْهِمُ الشَّرِيْفُ تَرَكُوْهُ وَإِذَا سَرَقَ فِيْهِمْ الضَّعِيْفُ أَقَامُوْا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَأَيْمُ اللهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا - (بُخَارِيْ : بَابُ حَدِيْثِ الْغَارِ، مُسْلِمْ : بَابُ قَطْعِ السَّارِقِ الشَّرِيْفِ)

৫. হজরত আয়েশা "    বর্ণনা করেন, ‘কুরাইশগণ একদা মাখজুমি গোত্রের এক মহিলার অবস্থার জন্য অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়ল। ওই মহিলাটি চুরি করেছিল। (তারা পরস্পর বলাবলি করছিল) এই মহিলার ব্যাপারে রাসূল  #    -এর নিকট কে কথা বলবে? অতপর তারা বলল, রাসূলুল্লাহ  #    এর প্রিয় পাত্র ওসামা বিন জায়েদ ব্যতীত আর কে এ কথা বলার সাহস করতে পারে? অতপর ওসামা "    এ ব্যাপারে রাসূল এর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ   #    বললেন, তুমি কি আল্লাহর বিধানের ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? অতপর রাসূল  #    দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। আর বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে শুধু এই কারণেই। যখন তাদের সম্ভ্রান্ত কেউ চুরি করত, তাকে তারা ছেড়ে দিত আর দুর্বল (নিচু বংশের) কেউ চুরি করলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করত। (জেনে রাখো) আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ  #    এর মেয়ে ফাতেমাও (আজ) চুরি করত, আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি : বাবু হাদিসুল গারি, ইফা : ৩২২৯, মুসলিম : বাবু ক্বতহিস সারিকিস শারিফ, ইফা : ৪২৬৩)

۶৬. عَنْ عَلِيٍّ قَالَ بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِلَى الْيَمَنِ قَاضِيًا فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ تُرْسِلُنِيْ وَأَنَا حَدِيْثُ السِّنِّ وَلَا عِلْمَ لِيْ بِالْقَضَاءِ فَقَالَ إِنَّ اللهَ سَيَهْدِىْ قَلْبَكَ وَيُثَبِّتُ لِسَانَكَ فَإِذَا جَلَسَ بَيْنَ يَدَيْكَ الْخَصْمَانِ فَلَا تَقْضِيَنَّ حَتّٰى تَسْمَعَ مِنَ الْاۤخَرِ كَمَا سَمِعْتَ مِنَ الْأَوَّلِ قَائِمَةً فَإِنَّهُ أَحْرٰى أَنْ يَتَبَيَّنَ لَكَ الْقَضَاءُ قَالَ فَمَا زِلْتُ قَاضِيًا أَوْ مَا شَكَـكْتُ فِيْ قَضَاءٍ بَعْدُ- (أَبُوْ دَاودْ: بَابُ كَيْفَ الْقَضَاءُ)

৬. হজরত আলি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ  #     আমাকে ইয়ামানে বিচারক হিসেবে পাঠালেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল  #   ! আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমার বয়স কম, বিচারকার্য পরিচালনার জ্ঞান নেই। অতপর রাসূল  #    বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন আর তোমার জিহ্বাকে দৃঢ় করবেন। আর যখন দুই পক্ষ তোমার সামনে বিচারের জন্য বসবে, তা কখনোই দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা শোনা ব্যতীত রায় দেবে না, যেমন তুমি প্রথম ব্যক্তির কথা শুনেছ। এরূপ করলে তোমার নিকট সঠিক বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। আলি "    বলেন, এরপর থেকে আমি এভাবেই ফায়সালা করেছি অথবা এরপর থেকে কোনো বিচারেই আমাকে সন্দেহের সম্মুখীন হতে হয়নি।’ (আবু দাউদ : বাবু কাইফাল কাদাউ, ইফা : ৩৫৪৪)

৭. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَدْلٌ وَ شَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اِجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهُ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهُ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ- (بُخَارِيْ : بَابُ الصَّدْقَةِ بِالْيَمِيْنِ، مُسْلِمْ : بَابُ فَضْلِ إِخْفَاءِ الصَّدَقَةِ)

৭. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়াই থাকবে নাÑ ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক ২. যে যুবক আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যেই বেড়ে ওঠে ৩. এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে ঝুলন্ত থাকে ৪. যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য তারা মিলিত হয় এবং আল্লাহর জন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় ৫. ওই ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রন্ত ও সুন্দর মহিলা (খারাপ কাজের জন্য) আহ্বান করে, কিন্তু সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি ৬. এমন ব্যক্তি যে দান করে তা গোপন করে এমনকী  তার বাম হাত জানে না, ডান হাত কী দান করে ৭. যে লোক নিভৃতে একাকী আল্লাহকে স্মরণ করে দু-চোখে অশ্রু ঝরায় ।’ (বুখারি : বাবুস সদকাতি বিল ইয়ামিন, ইফা : ১৩৪০, মুসলিম : বাবু ফাদলি ইখফায়িস সদাকাতি, ইফা : ২২৫২)

























৫৮. ইসলামে পররাষ্ট্রনীতি : اَلسِّيَاسَةُ الْخَارِجِيَّةُ فِي الْإسْلَامِ

আল কুরআন

وَ لَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ إِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ وَ اَوْفُوْا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا. 

১. ‘আর তোমরা ইয়াতিমের সম্পদের কাছে যেয়ো না সুন্দরতম পন্থা ছাড়া, যতক্ষণ না সে বয়সের পূর্ণতায় উপনীত হয়। আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৩৪)

وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ.

২. ‘আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান।’ (সূরা মু’মিনুন-২৩ : ৮)

اَفَمَنْ یَّعْلَمُ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ اَعْمٰی إِنَّمَا یَتَذَكَّرُ اُولُوا الْاَلْبَابِ- الَّذِیْنَ یُوْفُوْنَ بِعَهْدِ اللّٰهِ وَ لَا یَنْقُضُوْنَ الْمِیْثَاقَ.

৩. ‘যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাজিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মতো, যে অন্ধ? বুদ্ধিমানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। যারা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না।’ (সূরা রা‘দ-১৩ : ১৯-২০)

كَیْفَ یَكُوْنُ لِلْمُشْرِكِیْنَ عَهْدٌ عِنْدَ اللّٰهِ وَ عِنْدَ رَسُوْلِهٖۤ إِلَّا الَّذِیْنَ عٰهَدْتُّمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ فَمَا اسْتَقَامُوْا لَكُمْ فَاسْتَقِیْمُوْا لَهُمْ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَّقِیْنَ.

৪. ‘কীভাবে মুশরিকদের জন্য অঙ্গীকার থাকবে আল্লাহর কাছে ও তাঁর রাসূলের কাছে? অবশ্য যাদের সাথে মসজিদে হারামে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের কথা আলাদা। অতএব যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য ঠিক থাকে, ততক্ষণ তোমরাও তাদের জন্য ঠিক থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তাওবা-৯ : ৭)

 إِلَّا الَّذِیْنَ عٰهَدْتُّمْ مِّنَ الْمُشْرِكِیْنَ ثُمَّ لَمْ یَنْقُصُوْكُمْ شَیْئًا وَّ لَمْ یُظَاهِرُوْا عَلَیْكُمْ اَحَدًا فَاَتِمُّوْا اِلَیْهِمْ عَهْدَهُمْ اِلٰی مُدَّتِهِمْ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَّقِیْنَ.

৫. ‘তবে মুশরিকদের মধ্য থেকে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছ, অতপর তারা তোমাদের সাথে কোনো ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করেনি, তোমরা তাদের দেওয়া চুক্তি তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত পূর্ণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তাওবা-৯ : ৪)

وَ اِنْ نَّكَثُوْا اَیْمَانَهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَ طَعَنُوْا فِیْ دِیْنِكُمْ فَقَاتِلُوْا اَئِمَّةَ الْكُفْرِ إِنَّهُمْ لَا اَیْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ یَنْتَهُوْنَ.

৬. ‘আর যদি তারা তাদের অঙ্গীকারের পর তাদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে কটুক্তি করে, তাহলে তোমরা কুফরের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, নিশ্চয় তাদের কোনো কসম নেই, যেন তারা বিরত হয়।’ (সূরা তাওবা-৯ : ১২)


আল হাদিস

۱. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ- (بُخَارِیْ : بَابُ إِكْرَامِ الضَّيْفِ وَخِدْمَتِهِ اِيَّاهُ بِنَفْسِهِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন কল্যাণকর কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।’ (বুখারি : বাবু ইকরামিদ দয়ফি ওয়া খিদমাতিহু ইয়্যাহু বিনাফসিহি, ইফা : ৫৭০৬)

۲. عَنْ أَبِيْ شُرَيْحٍ الْخُزَاعِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ : مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلْيُحْسِنْ إِلٰى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ  فَلْيَقُلْ خَيْرًا اَوْ لِيَسْكُتْ- (مُسْلِمْ : بَابُ الْحَثِّ عَلٰى إِكْرَامِ الْجَارِ وَالضَّيْفِ)

২. হজরত আবু শুরাইহিল খুজায়ি "    থেকে বর্ণিত। নবি করিম  #    বলেছেন, ‘যে আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন কল্যাণকর কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।’ (মুসলিম : বাবুল হাসসি আলা ইকরামিল জারি ওয়াদ দইফি, ইফা : ৭১৮০)

٣۳. عَنْ سُلَيْمِ بْنِ عَامِرٍ قَالَ : كَانَ بَيْنَ مُعَاوِيَةَ وَبَيْنَ الرُّوْمِ عَهْدٌ وَكَانَ يَسِيْرُ نَحْوَ بِلَادِهِمْ حَتّٰى إِذَا انْقَضٰي الْعَهْدُ غَزَاهُمْ فَجَاءَ رَجُلٌ عَلٰى فَرَسٍ أَوْ بِرْذَوْنٍ وَهُوَ يَقُوْلُ اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ وَفَاءٌ لَا غَدْرٌ فَنَظَرُوْا فَإِذَا عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ مُعَاوِيَةُ فَسَأَلَهُ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَنْ كَانَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ قَوْمٍ عَهْدٌ فَلَا يَشُدُّ عُقْدَةً وَ لَا يَحُلُّهَا حَتّٰى يَنْقَضِيَ أَمَدُهَا أَوْ يَنْبِذَ إِلَيْهِمْ عَلٰى سَوَاءٍ فَرَجَعَ مُعَاوِيَةُ (أَبُوْ دَاودْ: بَابٌ فِي الْاِمَامِ يَكُوْنُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْعَدُوِّ عَهْدٌ)

৩. হজরত সুলায়েম ইবনে আমের "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হজরত মুয়াবিয়া ও রোমবাসিদের মাঝে একটি চুক্তি লিপিবদ্ধ ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ না হতেই মুয়াবিয়া "   তার বাহিনী নিয়ে রোম সীমান্তের দিকে রওয়ানা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল চুক্তি মেয়াদ শেষ হতেই তিনি তাদের ধাওয়া করবেন। পথিমধ্যে তার নিকট উপস্থিত হলো এক ঘোড়সাওয়ার। তিনি বলছেন, আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার। চুক্তি রক্ষা করো, চুক্তি ভঙ্গ করো না। তার দিকে তাকাতেই মুয়াবিয়া "   দেখলেন, তিনি আমর বিন আবাসা "  । মুয়াবিয়া "    বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ #    -কে বলতে শুনেছি, যার সাথে কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি হয়, তার পক্ষে চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে তাতে কোনো পরিবর্তন সাধন করা বৈধ নয়। তারপরে এটাও বৈধ নয় যে সে চুক্তি শত্রুর পক্ষে নিক্ষেপ করবে। হাদিস শুনে মুয়াবিয়া "    তার সৈন্য নিয়ে ফিরে আসলেন।’ (আবু দাউদ : বাবুন ফিল ইমামি ইয়াকুনু বাইনাহু ওয়া বাইনাল আদুব্বি আহদুন, ইফা :  ২৭৫০, তিরমিজি : ইফা : ১৫৮৬)

৪۴. عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا صَالَحَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَهْلَ الْحُدَيْبِيَةِ كَتَبَ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ كِتَابًا فَكَتَبَ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ فَقَالَ الْمُشْرِكُوْنَ لَا تَكْتُبْ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ لَوْ كُنْتَ رَسُوْلًا لَمْ نُقَاتِلْكَ فَقَالَ لِعَلِيِّ اُمْحُهُ فَقَالَ عَلِيٌّ مَا أَنَا بِالَّذِيْ أَمْحَاهُ فَمَحَاهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِيَدِهِ وَصَالَحَهُمْ عَلٰى أَنْ يَّدْخُلَ هُوَ وَأَصْحَابُهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَا يَدْخُلُوْهَا إِلَّا بِجُلُبَّانِ السِّلَاحِ فَسَأَلُوْهُ مَا جُلُبَّانُ السِّلَاحِ فَقَالَ اَلْقِرَابُ بِمَا فِيْهِ- (بُخَارِيْ : بَابٌ كَيْفَ يَكْتُبُ هٰذَا مَا صَالَحَ، مُسْلِمْ : بَابُ صُلْحِ الْحُدَيْبِيَةِ)

৪. হজরত বারা ইবনে আজেব "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যখন রাসূল  #     হুদাইবিয়ার সন্ধিতে সন্ধিবদ্ধ হলেন, তখন হজরত আলি ইবনে আবি তালিব "    সন্ধির বিষয়গুলো লিখলেন। আর তিনি লিখলেন, “মুহাম্মুদুর রাসূলুল্লাহ  #   ” মুশরিকরা (আপত্তি তুলে) বলল, মুহাম্মুদুর রাসূলুল্লাহ বাক্যটি লিখবে না। যদি তুমি রাসূলই হয়ে থাক, তাহলে তো আমরা তোমার সাথে লড়াই করতাম না। অতপর রাসূলুল্লাহ  #   আলি "   -কে বললেন, মুহাম্মুদুর রাসূলুল্লাহ বাক্যটি মুছে ফেলো। আলি "    বললেন, এটা মুছে ফেলার মতো এমন কাজ আমি পারব না। অতপর রাসূল  #    তাঁর নিজ হাত দ্বারা মুহাম্মুদুর রাসূলুল্লাহ অংশটি মুছে ফেললেন। আর তাদের সাথে এই মর্মে সন্ধিবদ্ধ হলেন যে, তিনি এবং তাঁর সাহাবিগণ তিন দিনের বেশির জন্য মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন না, আর সাথে কোষবদ্ধ তরবারি ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি : বাবুন কাইফা ইয়াকতবু হাযা মা সলাহা, ইফা :  ২৫১৮, মুসলিম : বাবু সুলহিল হুদাইবিয়াতি, ইফা : ৪৪৭৮)






৫৯. ইসলামী সরকারের দায়িত্ব : وَاجِبَةُ الْحُكُوْمَةِ الْاِسْلَامِيَّةِ

আল কুরআন

اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.

১. ‘তারা এমন যাদের আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।’ (সূরা হাজ্জ-২২ : ৪১)

وَ جَعَلْنٰهُمْ اَئِمَّةً یَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْهِمْ فِعْلَ الْخَیْرٰتِ وَ اِقَامَ الصَّلٰوةِ وَ اِیْتَآءَ الزَّكٰوةِ وَ كَانُوْا لَنَا عٰبِدِیْنَ.

২. আর তাদের আমি নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত। আমি তাদের প্রতি সৎকাজ করার, সলাত কায়েম করার এবং জাকাত প্রদান করার জন্য ওহি প্রেরণ করেছিলাম। আর তারা আমারই ইবাদাত করত।’ (সূরা আম্বিয়া-২১ : ৭৩)

إِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُ بِالْعَدْلِ وَ الْاِحْسَانِ وَ اِیْتَآئِ ذِی الْقُرْبٰی وَ یَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ وَ الْبَغْیِ یَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

৩. ‘আল্লাহ সুবিচার, বদান্যতা ও নিকটাত্মীয়ের হক আদায় করার আদেশ দিচ্ছেন এবং বেহায়াপনা, নিষিদ্ধ কাজ ও জুলুম করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদের নসিহত করছেন যাতে তোমরা উপদেশ নিতে পারো।’ (সূরা নাহল-১৬ : ৯০)

وَ اِنْ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اقْتَتَلُوْا فَاَصْلِحُوْا بَیْنَهُمَا فَاِنْۢ بَغَتْ اِحْدٰىهُمَا عَلٰی الْاُخْرٰی فَقَاتِلُوا الَّتِیْ تَبْغِیْ حَتّٰی تَفِیْءَ اِلٰی اَمْرِ اللّٰهِ فَاِنْ فَآءَتْ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَ اَقْسِطُوْا إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُقْسِطِیْنَ.

৪. ‘আর যদি মুমিনদের দুদল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করো এবং ন্যায়বিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ৯)


আল হাদিস

۱. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  : اَللّٰهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِيْ شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِيْ شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِه- (مُسْلِمْ : بَابُ فَضِيْلَةِ الْإِمَامِ الْعَادِلِ وَعُقُوْبَةِ الْجَائِرِ)

১. হজরত আয়েশা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়  অতপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করল, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়, অতপর সে তাদের প্রতি নরম ও কোমল আচরণ করে তুমিও তার প্রতি কোমল আচরণ করো।’ (মুসলিম : বাবু ফাদিলাতিল ইমামিল আদিল, ইফা : ৪৫৭১)।

. عَنْ مُعَاذٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ شَيْئًا فَاحْتَجَبَ عَنْ أُوْلِي الضَّعْفَةِ وَالْحَاجَةِ اِحْتَجَبَ اللهُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- (مُسْنَدُ أَحْمَدَ : حَدِيْثُ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ)

২. হজরত মুয়াজ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কোনো বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হলো, অতপর সে দুর্বল ও নিঃস্বদের থেকে (সাহায্য করা থেকে) বিমুখ থাকল, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলাও তার থেকে বিমুখ থাকবেন।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদিসু মুয়াজুবনু জাবালিন, মা . শা- ২১০৬১)

۳. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ الْمُسْلِمِيْنَ شَيْئًا فَغَشَّهُمْ فَهُوَ فِي النَّارِ- (اَلْمُعْجَمُ  الْأَوْسَطُ لِلطَّبْرَانِیْ : مِنْ اِسْمِهِ الْحُسَیْنِ)

৩. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল নিযুক্ত হলো, অতপর সে বিশ্বাসঘাতকতা করল, তাহলে সে জাহান্নামি।’ (আল মুজামুল আওসাতি লিত তাবরানি; মিন ইসমহিল হোসাইনি, মা. শা- ৩৬১৫)

۴. عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْأَمِيْرُ رَاعٍ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلٰى أَهْلِ بَيْتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلٰى بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ - (بُخَارِیٌ : بَابُ الْمَرْأَةِ رَاعِيَةٌ فِيْ بَيْتِ زَوْجِهَا، مُسْلِمْ : بَابُ فَضِيْلَةِ الْإِمَامِ الْعَادِلِ وَ عُقُبَةِ الْجَارِ)

৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। শাসক সে দায়িত্বশীল, পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, স্ত্রী তার স্বামীর ঘর ও তার সন্তানাদির দায়িত্বশীলা অতপর (জেনে রাখো) তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর সকলকেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (বুখারি : বাবু আল মারআতু রায়িয়াতুন ফি বাইতি যাওজিহা, ইফা : ৪৮২১, মুসলিম: ইফা : ৪৫৭৩)

۵. عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ الْمُزَنِيِّ قَالَ : لَوْ عَلِمْتُ أَنَّ لِيْ حَيَاةً مَا حَدَّثْتُكَ اِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَامِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيْهِ اللهُ رَعِيَّةً يَمُوْتُ يَوْمَ يَمُوْتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ- (مُسْلِمْ : بَابُ اِسْتِحْقَاقِ الْوَالِيْ الْغَاشِّ لِرَعِيَّتِهِ النَّارَ)

৫. হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার মুজান্নি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যদি আমি জানতাম আমি বেঁচে থাকব তাহলে আমি তোমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করতাম না। নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ  #   কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তার কোনো বান্দাহকে প্রজাসাধারণের তত্ত্বাবধায়ক বানানোর পর সে যদি তাদের সাথে প্রতারণা করে থাকে, তবে সে যেদিনই মৃত্যুবরণ করুক, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (মুসলিম : বাবু ইস্তিহকাকিল ওয়ালিল গাশশি লিরাইয়াতিহি আন্নারা, ইফা : ২৬১)

۶. عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ : خِيَارُ أَئِمَّتِكُمْ اَلَّذِيْنَ تُحِبُّوْنَهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُمْ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمْ اَلَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُوْنَكُمْ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ فَقَالَ لَا مَا أَقَامُوْا فِيْكُمْ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْ وُلَاتِكُمْ شَيْئًا تَكْرَهُوْنَهُ فَاكْرَهُوْا عَمَلَهُ وَلَا تَنْزِعُوْا يَدًا مِنْ طَاعَةٍ- (مُسْلِمْ : بَابُ خِيَارِ الْأَئِمَّةِ وَشِرَارِهِمْ)

৬. হজরত আওফ ইবনে মালিক "    থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ  #     থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘তোমাদের নেতাদের মধ্যে তারা সর্বোত্তম, তোমরা যাদের ভালোবাস এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে। তারা তোমাদের জন্য দোয়া করে, আর তোমরাও তাদের জন্য দুআ করে থাক। আর তোমাদের নেতাদের মধ্যে তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যাদেও তোমরা অপছন্দ করো আর তারাও তোমাদের ঘৃণা করে থাকে। তোমরা তাদের অভিসম্পাত দিয়ে থাক আর তারাও তোমাদের অভিসম্পাত দেয়। (সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে) বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল  #  ! আমরা কি ওই খারাপ লোকদেরকে তরবারি দিয়ে শায়েস্তা করব? অতপর রাসূল  #    বললেন, না। যতক্ষণ তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম করে থাকে, ততক্ষণ তা করবে না। আর যখন তোমরা তোমাদের নেতাদের মাঝে এমন কিছু দেখবে, যা তোমাদের কষ্ট দিচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের কাজকে অপছন্দ করো তবে আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিও না।’ (মুসলিম : বাবু খিয়ারিল আইম্মাতি ওয়া শিরারিহিম, ইফা : ৪৬৫১)









৬০. ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ : اَلْعَلْمَانِيَّةُ

আল কুরআন

اَلَّذِیْنَ ضَلَّ سَعْیُهُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ هُمْ یَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ یُحْسِنُوْنَ صُنْعًا- اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمْ وَ لِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِیْمُ لَهُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وَزْنًا- ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوْا وَ اتَّخَذُوْا اٰیٰتِیْ وَ رُسُلِیْ هُزُوًا.

১. ‘(তাদের) বলুন, আমি কি তোমাদের বলবো নিজেদেও কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ কারা? (তারা হলো ওইসব লোক) দুনিয়ার জীবনে যাদের সকল চেষ্টা-সাধনা ভুল পথে চলেছে এবং যারা মনে করে, তারা সবকিছু ঠিকই করছে। এরাই ওইসব লোক যারা তাদের রবের আয়তসমূহকে মানতে অস্বীকার করেছে এবং তার সাথে সাক্ষাতের কথা বিশ্বাস করে না। এর ফলে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গিয়েছে। কিয়ামতের দিন আমি তাদের কোনো গুরুত্বই দেবো না। তারা যে কুফরি করেছে এবং আমার আয়াত ও আমার রাসূলকে হাসি-ঠাট্টার পাত্র বানিয়েছে এর কারণে তাদের জন্য বদলা হিসেবে দোজখ রয়েছে।’ (সূরা কাহফ-১৮ : ১০৩-১০৬)

وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.

২. ‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো  দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ৮৫)

ثُمَّ أَنْتُمْ هٰؤُلَآءِ تَقْتُلُوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَ تُخْرِجُوْنَ فَرِیْقًا مِّنْكُمْ مِّنْ دِیَارِهِمْ تَظٰهَرُوْنَ عَلَیْهِمْ بِالْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ وَ اِنْ یَّاْتُوْكُمْ اُسٰرٰی تُفٰدُوْهُمْ وَ هُوَ مُحَرَّمٌ عَلَیْكُمْ اِخْرَاجُهُمْ اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتٰبِ وَ تَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَآءُ مَنْ یَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْیٌ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یُرَدُّوْنَ اِلٰی اَشَدِّ الْعَذَابِ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ.

৩. ‘অতপর তোমরাই তো তারা, যারা নিজদের হত্যা করছ এবং তোমাদের মধ্য থেকে একটি দলকে তাদের গৃহ থেকে বের করে দিচ্ছ; পাপ ও সমীলঙ্ঘনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সহায়তা করছ। আর তারা যদি বন্দি হয়ে তোমাদের নিকট আসে, তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের মুক্ত করো। অথচ তাদের বের করা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা করো, আল্ল¬াহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।’ (সূরা বাকারা-২ : ৮৫)

اَفَغَیْرَ دِیْنِ اللّٰهِ یَبْغُوْنَ وَ لَهٗ اَسْلَمَ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ طَوْعًا وَّ كَرْهًا وَّ اِلَیْهِ یُرْجَعُوْنَ.

৪. ‘তারা কি আল্ল¬াহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও জমিনে যা আছে তা তাঁরই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদের তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করা হবে।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ৮৩)


আল হাদিস

۱. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : ثَلَاثٌ مَنْ کُنَّ فِيْهُ فَهُوَ مُنَافِقٌ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمْ مَنْ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ - (أَحْمَدُ : مُسْنَدُ أَبِيْ هُرَيْرَةَ) 

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তিনটি বিষয় যার মাঝে থাকবে, সে মুনাফিক যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, নিজেকে মুসলমান বলে দাবিও করে। ১. সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ৩. আর যখন আমানত রাখা হয়, তখন খেয়ানত করে।’ (আহমদ : মুসনাদে আবি হুরায়রা,  মা . শা- ১০৫০৪)

۲. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ فَهُوَ مُنَافِقٌ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَحَجَّ وَاعْتَمَرَ وَقَالَ إِنِّيْ مُسْلِمْ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا أؤْتُمِنَ خَانَ - (مُسْنَدُ أَبِيْ يَعْلٰی اَلْمُوْصِلِيْ : ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ فَهُوَ مُنَافِقٌ)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   কে বলতে শুনেছি, ‘তিনটি বিষয় যার মাঝে থাকবে সে মুনাফিক। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে, হজ কওে, ওমরা করে এবং বলে অবশ্যই আমি মুসলমান এরপরও সে মুনাফিক। ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, ৩. আর যখন তার নিকট আমানত রাখা হয় খেয়ানত করে।’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা আল মুওসাল : সালাসুন মান কুন্না ফিহি ফাহুয়া মুনাফিকুন, মা . শা- ৩৯৮৮)

۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ : اٰيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ ـ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا أؤْتُمِنَ خَانَ - (بُخَارِيْ : بَابُ عَلَامَةِ الْمُنَافِقِ، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ خِصَالِ الْمُنَافِقِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ   #    বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি। ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন খেয়ানত করে। (বুখারি : ইফা : ৩২, মুসলিম : ইফা : ১১৫)












৬১. বিবাহ : اَلنِّكَاحُ

আল কুরআন

حُرِّمَتْ عَلَیْكُمْ اُمَّهٰتُكُمْ وَ بَنٰتُكُمْ وَ اَخَوٰتُكُمْ وَ عَمّٰتُكُمْ وَ خٰلٰتُكُمْ وَ بَنٰتُ الْاَخِ وَ بَنٰتُ الْاُخْتِ وَ اُمَّهٰتُكُمُ الّٰتِیْۤ اَرْضَعْنَكُمْ وَ اَخَوٰتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَ اُمَّهٰتُ نِسَآىِٕكُمْ وَ رَبَآىِٕبُكُمُ الّٰتِیْ فِیْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآىِٕكُمُ الّٰتِیْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیْكُمْ وَ حَلَآئِلُ اَبْنَآىِٕكُمُ الَّذِیْنَ مِنْ اَصْلَابِكُمْ وَ أَنْ تَجْمَعُوْا بَیْنَ الْاُخْتَیْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ؕ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا- وَّ الْمُحْصَنٰتُ مِنَ النِّسَآءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ كِتٰبَ اللّٰهِ عَلَیْكُمْ وَ اُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَآءَ ذٰلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُوْا بِاَمْوَالِكُمْ مُّحْصِنِیْنَ غَیْرَ مُسٰفِحِیْنَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهٖ مِنْهُنَّ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِیْضَةً وَ لَا جُنَاحَ عَلَیْكُمْ فِیْمَا تَرٰضَیْتُمْ بِهٖ مِنْۢ بَعْدِ الْفَرِیْضَةِ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِیْمًا حَكِیْمًا.

১. ‘তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদের, তোমাদের মেয়েদের, তোমাদের বোনদের, তোমাদের ফুফুদের, তোমাদের খালাদের, ভাতিজিদের, ভাগনি, তোমাদের সে সব মাতাকে  যারা তোমাদের দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদের,  তোমাদের শাশুড়িদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদের, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাকো তবে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)।  তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ  ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবাদের। তবে তোমাদের হাত যাদের মালিক হয়েছে তারা ছাড়া। এটি তোমাদের ওপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদের চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদের ভোগ করেছ তাদের তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের ওপর কোনো অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’  (সূরা নিসা-৪ : ২৩-২৪)

وَ أَنْكِحُوا الْاَیَامٰی مِنْكُمْ وَ الصّٰلِحِیْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَ اِمَآئِكُمْ اِنْ یَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ یُغْنِهِمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ 

২. ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সূরা নুর-২৪ : ৩২)

وَ لْیَسْتَعْفِفِ الَّذِیْنَ لَا یَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰی یُغْنِیَهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَ الَّذِیْنَ یَبْتَغُوْنَ الْكِتٰبَ مِمَّا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ فَكَاتِبُوْهُمْ اِنْ عَلِمْتُمْ فِیْهِمْ خَیْرًا وَّ اٰتُوْهُمْ مِّنْ مَّالِ اللّٰهِ الَّذِیْۤ اٰتٰىكُمْ وَ لَا تُكْرِهُوْا فَتَیٰتِكُمْ عَلَی الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ مَنْ یُّكْرِهْهُّنَّ فَإِنَّ اللّٰهَ مِنْۢ بَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

৩. ‘আর যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে। আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি করো, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদের দাও। তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের কামনায় তাদের ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদের বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদের বাধ্য করার পর আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা নুর-২৪ : ৩৩)

وَ اِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِی الْیَتٰمٰی فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ ذٰلِكَ اَدْنٰی اَلَّا تَعُوْلُوْا.

৪. ‘আর যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, ইয়াতিমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে করো নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে; দুটি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় করো যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা জুলম করবে না।’  (সূরা নিসা-৪ : ৩)

وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْۤا اِلَیْهَا وَ جَعَلَ بَیْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّ رَحْمَةً إِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَكَّرُوْنَ.

৫. ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।’ (সূরা রুম-৩০ : ২১)

وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحْلَةً فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَیْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِیْئًا مَّرِیْئًا.

৬. ‘আর তোমরা নারীদের সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।’ (সূরা নিসা-৪ : ৪)


আল হাদিস 

۱. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَائَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ- (مُسْلِمْ : بَابُ اِسْتِحْبَابِ النِّكَاحِ لِمَنْ تَاقَتْ نَفْسُهُ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখ, তোমরা বিবাহ করো। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি বিবাহের (ভরণ পোষণের) সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা কামভাব দমনে সহায়ক।’ (মুসলিম : বাবু ইস্তিহবাবিন নিকাহি লিমান তাকাত নাফসুহু, ইফা : ৩২৭০)

۲. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى الله ﷺ  قَالَ : تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وِلِدِيْنِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ- (بُخَارِیٌ : بَابُ الْأَكْفَاءِ فِي الدِّيْنِ، مُسْلِمْ : بَابُ إِسْتِحْبَابِ نِكَاحِ ذَاتِ الدِّيْنِ)

২. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘(স্বাভাবিকভাবে) মহিলাদের চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। ১. তার সম্পদ ২. বংশ মর্যাদা ৩. সৌন্দর্য ৪. তার দ্বীনদারি। তবে তোমরা দ্বীনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দাও তাহলে তোমাদের কল্যাণ হবে।’ (বুখারি : বাবু আকাফা ফিদ দ্বীন, ইফা : ৪৭১৯, মুসলিম : ইফা : ৩৫০৪)

৩۳. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اَلدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا اَلْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ- (مُسْلِمْ : بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالنِّسَاءِ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর "   বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু সম্পদস্বরূপ। আর দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো সতী স্বাধ্বী, নেককার স্ত্রী।’ (মুসলিম : ইফা : ৩৫১২)

৪۴. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللهِ عَوْنُهُمْ اَلْمُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْعَفَافَ- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِي الْمُجَاهِدِ وَالنَّاكِحِ وَالْمُكَاتَبِ وَعَوْنِ اللهِ إِيَّاهُمْ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তাআলার স্বীয় দায়িত্ব। ১. আল্লাহর পথের মুজাহিদ ২. ওই চুক্তিবদ্ধ ক্রীতদাস যে তার দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে চায় ৩. ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে চরিত্র সংরক্ষণের জন্য বিয়ে  করে।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফি মুজাহিদি ওয়ান নাকিহি ওয়াল মুকাবি ওয়া আওনিল্লাহি ইয়য়াহুম, ইফা : ১৬৬১)

৫۵. عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ ﷺ : إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلٰى مَايَدْعُوْهُ إِلَى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ- (أَبُوْ دَاودْ: بَابٌ فِي الرَّجُلِ يَنْظُرَ إِلَى الْمَرْأَةِ وَهُوَ يُرِيْدُ تَزْوِيْجَهَا)

৫. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি যখন কোনো মহিলাকে বিয়ে  করার প্রস্তাব করবে, সম্ভব হলে সে যেন এমন বিষয় দেখে নেয় যা তার বিয়ের পথকে সুগম করে।’ (আবু দাউদ : বাবু ফির রাজুলি ইয়ানজুরু ইলাল মারআতি ওয়া হুয়া ইউরিদু তাজভিজাহা, ইফা : ২০৭৮)












৬২. জিনা-ব্যভিচারের শাস্তি : حَدُّ عُقُوْبَةِ الزِّنَا

আল কুরআন

وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰی إِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِیْلًا .

১. ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’  (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৩২)

قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَیْكُمْ اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَ لَا تَقْتُلُوْا اَوْلَادَكُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَ اِیَّاهُمْ وَ لَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ مَا بَطَنَ وَ لَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ.

২. ‘বলো, এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দরিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না। আমিই তোমাদের রিজিক দিই এবং তাদেরও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সূরা আনআম-৬ : ১৫১)

اَلزَّانِیَةُ وَ الزَّانِیْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَّ لَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَةٌ فِیْ دِیْنِ اللّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ لْیَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآىِٕفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِیْنَ.

৩. ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত করো। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাকো তবে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের আজাব প্রত্যক্ষ করে।’ (সূরা নুর -২৪ : ২)

اَلزَّانِیْ لَا یَنْكِحُ إِلَّا زَانِیَةً اَوْ مُشْرِكَةً وَّ الزَّانِیَةُ لَا یَنْكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ اَوْ مُشْرِكٌ وَ حُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ.

৪. ‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের ওপর এটা হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নুর-২৪ : ৩)

وَ الَّذِیْنَ یَرْمُوْنَ الْمُحْصَنٰتِ ثُمَّ لَمْ یَاْتُوْا بِاَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمٰنِیْنَ جَلْدَةً وَّ لَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً اَبَدًا وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

৫. ‘আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদের আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।’ (সূরা নুর-২৪ : ৪)


আল হাদিস

۱. عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فِي مَجْلِسٍ فَقَالَ : بَايَعُوْنِيْ عَلٰى أَنْ لَّا تُشْرِكُوْا بِاللهِ شَيْئًا وَلَا تَسْرِقُوْا وَلَا تَزْنُوْا وَقَرَأَ هٰذِهِ الْآيَةَ كُلَّهَا، فَمَنْ وَفٰي مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذٰلِكَ شَيْئًا فَعُوْقِبَ بِه فَهُوَ كَفَّارَتُه وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذٰلِكَ شَيْئًا فَسَتَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَه وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ - (بُخَارِيْ : اَلْحُدُوْدُ كَفَّارَةٌ)

১. হজরত উবাদা ইবনে সামেত "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা নবি  #    এর নিকট এক মজলিসে বসা ছিলাম। অতপর রাসূল   #    বললেন, তোমরা আমার নিকট এই মর্মে বাইয়াত করো যে, আল্লাহর সাথে কিছুু শিরক করবে না, তোমরা চুরি করবে না, তোমরা জেনা করবে না। অতপর তিনি এই আয়াত পুরোটা পাঠ করলেন, অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেহ (এ সকল অঙ্গীকার) পূর্ণ করবে তার পুরস্কার রয়েছে আল্লাহর কাছে, আর যে ব্যক্তি এগুলোর কোনো একটিতে লিপ্ত হবে, সে এর জন্য দুনিয়াতে শাস্তি ভোগ করবে এবং এই শাস্তি হবে তার কাফফারা। আর যে ব্যক্তি এর কোনো একটিতে লিপ্ত হবে, অতপর আল্লাহ তার বিষয়টি গোপন রাখলেন, ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন।’ (বুখারি : বাবু আল হুদুদু কাফফারাতুন, ইফা : ৬৩২৭)

۲. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُؤْبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ اَلشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ الله إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالَ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ- (بُخَارِيْ : بَابُ قُوْلِ اللهِ تَعَالی إِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ أَمْوَالَ الْيَتَامٰی ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ الْكَبَائِرِ وَ أَكْبَارِهَا)

২. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি করিম #   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মকমূলক কাজ থেকে বিরত থাকো। সাহাবায়ে কেরামগণ "    বললেন, হে আল্লাহর রাসূল  #    সেগুলো কী কী? তিনি  #    বললেন, ১. আল্লাহর সাথে শিরক করা ২. জাদু টোনা করা ৩. আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা হারাম করেছেন অন্যায়ভাবে তা হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ৭. সতী সাধ্বী, সহজ সরলা মুমিন নারীর ব্যাপারে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি : বাবু কাওলিল্লাহি তাআলা “ইন্নাল্লাজিনা ইয়াকুলুনা আমওয়ালাল ইয়াতামা জুলমান.........., ইফা : ২৫৭৮)

۳. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ لَمَّا أَتٰى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ لَهُ لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ قَالَ لَا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَنِكْتَهَا لَا يَكْنِىْ قَالَ فَعِنْدَ ذٰلِكَ أَمَرَ بِرَجْمِهِ- (بُخَارِيْ : بَابُ هَلْ يَقُوْلُ الْإِمَامُ لِلْمُقِرِّ لَعَلَّكَ لَمَسْتَ اَوْ غَمَزْتَ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "    থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন মায়েজ ইবনে মালেক "   নবি করিম  #    এর নিকট (জিনার আত্মস্বীকৃতি নিয়ে) এলেন, রাসূল  #    তাকে বললেন, সম্ভবত তুমি চুম্বন করেছ, অথবা আঁচড় কেটেছ অর্থাৎ স্পর্শ করেছ, অথবা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছ। তিনি বললেন, না ইয়া রাসূলুল্লাহ  #   । রাসূল  #   বলেছেন, তাহলে তুমি কি তার সাথে সহবাস করেছ? রাসূল #   এটা কোনো ইঙ্গিত ছাড়াই জিজ্ঞেস করেছেন। অতপর তাকে পাথর মারার আদেশ দিলেন।’ (বুখারি : বাবু হাল ইয়াকুল ইমামু লিল মুকিররি লাআল্লাকা লামাছতা, আও গামাজতা, ইফা : ৬৩৬৬)

۴. عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ اِمْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ أَتَتْ نَبِيَّ اللهِ ﷺ وَهِيَ حُبْلٰى مِنَ الزِّنٰى فَقَالَتْ يَا نَبِيَّ اللهِ أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ  فَدَعَا نَبِيُّ اللهِ ﷺ وَلِيَّهَا قَالَ أَحْسِنْ اِلَيْهَا فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِيْ بِهَا فَفَعَلَ فَأَمَرَ بِهَا نَبِيُّ اللهِ ﷺ فَشُكَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَرُجِمَتْ ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا فَقَالَ لَه عُمَرُ تُصَلِّي عَلَيْهَا یَا نَبِيَّ اللهِ وَقَدْ زَنَتْ فَقَالَ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ سَبْعِيْنِ مِنْ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ لَوَسِعَتْهُمْ وَهَلْ وَجَدْتَ تَوْبَةً أَفْضَلُ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنَفْسِهَا لِلّٰهِ تَعَالٰی- (مُسْلِمْ : بَابُ مَنِ اعْتَرَفَ عَلٰى نَفْسِهِ بِالزِّنٰى)

৪. হজরত ইমরান ইবনে হোসাইন "    বর্ণনা করেন, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা নবি করিম  #     -এর নিকট এমন অবস্থায় আসল যে, সে ব্যভিচারের মাধ্যমে গর্ভধারণ করেছে। অতপর সে বলল, হে আল্লাহর নবি  #   ; আমি হদের  (জেনার শাস্তির) উপযোগী হয়েছি, সুতরাং আপনি আমার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। অতপর নবি   #    মহিলার অভিভাবককে ডেকে বললেন, তার সাথে ভালো ব্যবহার করো। আর যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করবে তখন তাকে (মহিলাকে) আমার কাছে নিয়ে আসবে। অভিভাবক এমনই করল। অতপর নবি করিম   #   আদেশ করলেন, অতপর তার ওপর তার কাপড়কে বেঁধে দেওয়া হলো, তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হলো। ( সে মারা গেলে) অতপর রাসূল  #    তার জানাযার নামাজ পড়ালেন। ওমর "    বললেন, হে আল্লাহর নবি! আপনি এমন ব্যক্তির জানাজা পড়লেন? অথচ সে জেনা করেছে! রাসূল  #    বললেন, এই মহিলা এমন তাওবা করেছে, যদি তা মদিনার সত্তরটি পরিবারের মধ্যেও বণ্টন করে দেওয়া হয়  তবুও তা তাদের তাওবার জন্য যথেষ্ট হবে। আর তুমি কি এর চাইতে উত্তম কোনো তাওবা পাবে; যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।’ (মুসলিম : বার মান ইতিরাফা আলা নাফসিহি বিজ জেনা, ইফা : ৪২৮৪)


























৬৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ : ضَبْطُ الْوِلَادَةِ

আল কুরআন

۱. وَ مَا مِنْ دَآبَّةٍ فِی الْاَرْضِ إِلَّا عَلٰی اللّٰهِ رِزْقُهَا وَ یَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَ مُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ .

১. ‘আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সবকিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে।’ (সূরা হুদ-১১ : ৬)

وَ لَا تَقْتُلُوْا اَوْلَادَكُمْ خَشْیَةَ اِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَ اِیَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْاً كَبِیْرًا .

২. ‘অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তাদের রিজিক দিই এবং তোমাদেরও। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৭ : ৩১)

وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِيْنَ وَاِنْ مِنْ شَيْئٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُه وَمَا نُنَزِّلُه إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُوْمٍ.

৩. ‘আর তাতে তোমাদের জন্য এবং তোমরা যার রিজিকদাতা নও তাদের জন্য রেখেছি জীবনোপকরণ। আর প্রতিটি বস্তুরই ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।’ (সূরা হিজর -১৫ : ২০-২১)

وَ كَاَیِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اَللّٰهُ یَرْزُقُهَا وَ اِیَّاكُمْ وَ هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ.

৪. ‘আর এমন কত জীবÑজন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিজিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিজিক দেন এবং তোমাদেরও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’ সূরা আনকাবূত-২৯ : ৬০

وَ إِذَا تَوَلّٰی سَعٰی فِی الْاَرْضِ لِیُفْسِدَ فِیْهَا وَ یُهْلِكَ الْحَرْثَ وَ النَّسْلَ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الْفَسَادَ.

৫. ‘আর যখন সে ফিরে যায়, তখন জমিনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্ল¬াহ ফাসাদ ভালোবাসেন না।’ (সূরা বাকারা-২ : ২০৫)

وَّ لَاُضِلَّنَّهُمْ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمْ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْأَنْعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلْقَ اللّٰهِ وَ مَنْ یَّتَّخِذِ الشَّیْطٰنَ وَلِیًّا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِیْنًا.

৬. ‘(শয়তান আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল) আর অবশ্যই আমি তাদের পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেবো এবং অবশ্যই তাদের আদেশ দেবো, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তাদের আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’ (সূরা নিসা-৪ : ১১৯)


আল হাদিস

১. عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ أَصَبْنَا سَبْيًا فَكُنَّا نَعْزِلُ فَسَأَلْنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  فَقَالَ  أَوَ أَنَّكُمْ لَتَفْعَلُوْنَ؟ قَالَهَا ثَلَاثًا مَامِنْ نَسَمَةٍ كَائِنَةٍ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلَّا هِيَ كَائِنَةٌ-. (بُخَارِيْ : بَابُ الْعَزْلِ)

১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কিছু সংখ্যক দাসী এলো আর আমরা আজল করতাম। আমরা এ সম্পর্কে রাসূল  #    কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, তোমরা কি এরূপ করো? এ কথা তিনি তিনবার বললেন। (জেনে রাখো) কিয়ামত পর্যন্ত যেসব শিশুর জন্ম নির্ধারিত আছে, তারা তো জন্মগ্রহণ করবেই।’ (বুখারি : বাবুল আজলি, ইফা : ৪৮৩০)

২۲. عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنِ الْعَزْلِ فَقَالَ : مَا مِنْ كُلِّ الْمَاءِ يَكُوْنُ الْوَلَدُ وَإِذَا أَرَادَ اللهَ خَلْقَ شَيْئٍ لَمْ يَمْنَعْهُ شَيْئٌ-. (مُسْلِمْ : بَابُ حُكْمِ الْعَزْلِ)

২. হজরত আবু সাইদ খুদরি"   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল  #    -কে আজল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সবটুকু পানিতে (বীর্য) সন্তান সৃষ্টি হয় না। আল্লাহ তাআলা যখন কিছু সৃষ্টি করতে চান তখন কোনো কিছুই উহা রোধ করতে পারে না।’ (মুসলিম : বাবু হুকমিল আলি, ইফা : ৩৪২৩)

























৬৪. আত্মশুদ্ধি : تَزْكِيَةُ النَّفْسِ

আল কুরআন

قَدْ  اَفْلَحَ مَنْ  تَزَکّٰی ক্স  وَ ذَکَرَ اسْمَ رَبِّه فَصَلّٰی. 

১. ‘সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে পবিত্রতা লাভ করেছে ও আপন রবের নাম স্মরণ করেছে এবং তারপর নামাজ পড়েছে।’ (সূরা আ’লা-৮৭ : ১৪-১৫)

قَالَ كَذٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَیَّ هَیِّنٌ وَّ قَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَ لَمْ تَكُ شَیْئًا-قَالَ رَبِّ اجْعَلْ لِّیْۤ اٰیَةً قَالَ اٰیَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا.

২. ‘অবশ্যই সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে তার (নাফসকে) পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে-ই বিফল হয়েছে, যে তাকে দাবিয়ে দিয়েছে।’ (সূরা শামস-৯১ : ৯-১০)

صِبْغَةَ اللهِ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ صِبْغَةً وَّنَحْنُ لَه عٰبِدُوْنَ .

৩. ‘আপনি বলুন, আল্লাহর রং ধারণ করো। তাঁর রং থেকে আর কার রং বেশি সুন্দর হতে পারে? আমরা তাঁরই দাসত্ব করে চলেছি।’ (সূরা বাকারা-০২ : ১৩৮)

خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ إِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ.

৪. ‘তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদের তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দুআ করো, নিশ্চয় তোমার দুআ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা তাওবা-৯ : ১০৩)

هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.

৫. ‘তিনিই উম্মিদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদের পবিত্র করে এবং তাদের শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে ছিল।’ (সূরা জুমুআ-৬২ : ২)

إِنَّ نَاشِئَةَ الَّیْلِ هِیَ اَشَدُّ وَطْاً وَّ اَقْوَمُ قِیْلًا- إِنَّ لَكَ فِی النَّهَارِ سَبْحًا طَوِیْلًا- وَ اذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَ تَبَتَّلْ اِلَیْهِ تَبْتِیْلًا.

৬. ‘নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী। নিশ্চয় তোমার জন্য দিনের বেলায় রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও।’ (সূরা মুজ্জাম্মিল-৭৩ : ৬-৮)


আল হাদিস

۱. عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : اَلْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقٰى الْمُشَبَّهَاتِ اِسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعٰی حَوْلَ الْحِمٰى يُوْشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمْىٰ أَلَا إِنَّ حِمَى اللهِ فِي أَرْضِه مَحَارِمُهُ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّه وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَتِ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ.- (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ اِسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهَ، مُسْلِمْ : بَابُ أَخْذِ الْحَلَالِ وَتَرْكِ الشُّبُهَاتِ)

১. হজরত নুমান ইবনে বশির "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল  #     কে বলতে শুনেছি, হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট। আর এ দুয়ের মাঝে রয়েছে অস্পষ্ট বিষয়গুলো। অনেকেই সেগুলো জানে না। কাজেই যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বিরত থাকে, সে নিজের দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে, সে এমন রাখালের মতো হয়ে যায় যে, সে তার পশু সংরক্ষিত এলাকার আশপাশে চরায়। ফলে তা সেখানে প্রবেশ করার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। শোনো, প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, আরও শোনো আল্লাহর জমিনে তার সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে, তার নিষিদ্ধ বিষয়গুলো। এ কথাও শোনো, মানবদেহে একটি মাংসখণ্ড আছে। তা ভালো থাকলে গোটা শরীর ভালো থাকে। আর তা খারাপ হয়ে গেলে গোটা শরীরটাই খারাপ হয়ে যাবে। জেনে রাখো সেটা হচ্ছে অন্তর। (বুখারি : বাবু ফাদলি মানিস তাবরায়া লি-দ্বীনিহি, ইফা : ৫০। মুসলিম : বাবু আখযিল হালালি ওয়া তারকিশ শুবহাতি, ইফা : ৩৯৪৯)

২۲. عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اِتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَ أَتْبِع السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَ خَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ-. (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَفِيْ مُعَاشَرَةِ النَّاسِ)

২. হজরত আবু জর গিফারি  "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #  আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো, আর মন্দ কাজ করলে তার পরপরই সৎ কাজ করো। তাহলে ভালো কাজ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আর মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করো।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফি মুয়াশারাতি নাসি, ইফা : ১৯৯৩)

৩۳. عَنْ أَنَسٍ قَالَ إِنَّكُمْ لَتَعْمَلُوْنَ أَعْمَالًا هِيَ أَدَقُّ فِيْ أَعْيُنِكُمْ مِنَ الْشَّعْرِ كُنَّا لَنَعُدُّهَا عَلٰى عَهْدِ النَّبِيِّ ﷺ مِنَ الْمُوْبِقَاتِ-. (بُخَارِيْ : بَابُ مَا يُتَّقٰی مِنْ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوْبِ)

৩. হজরত আনাস "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘তোমরা (বর্তমানে) এমন অনেক কাজ করে থাকো সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও বেশি হালকা। কিন্তু নবি  #   এর সময়ে  আমরা সেগুলোও ধ্বংসাত্মক মনে করতাম।’ (বুখারি : বাবু মা ইউত্তাক্বা মিন মুহাক্কিরাতিয জুনুবি, ইফা : ৬০৪৮)

৪۴. عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْهِ تَرْكُه مَا لَا يَعْنِيْهِ. (تِرْمِذِيْ : بَابُ فِيْمَنْ تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ يُضْحِكُ بِهَا النَاسَ )

৪. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, ‘অশোভনীয় (অনর্থক) কাজ মানুষের পরিহার করা ইসলামের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি : বাবু ফিমান তাকাল্লামা বিকালিমাতিন ইউদহিকু বিহান্নাসা, ইফা : ২৩২০)




৬৫. ইসলামে নির্বাচন : اَلْاِنْتِخَابُ فِي الْاِسْلَامِ

আল কুরআন

إِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰی اَهْلِهَا وَ إِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِیْعًا ۢ بَصِیْرًا.

১. ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কতই না সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’  (সূরা নিসা-৪ : ৫৮)

قَالَ اجْعَلْنِیْ عَلٰی خَزَآئِنِ الْاَرْضِ اِنِّیْ حَفِیْظٌ عَلِیْمٌ .

২. ‘সে বলল, আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্ব দিন, নিশ্চয় আমি যথাযথ হেফাজতকারী, সুবিজ্ঞ।’  (সূরা ইউসুফ-১২ : ৫৫)


আল হাদিস

১۱. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتّٰى تُقَاتِلُوْا قَوْمًا نِعَالُهُمْ الشَّعْرُ وَحَتّٰى تُقَاتِلُوْا التُّرْكَ صِغَارَ الْأَعْيُنِ حُمْرَ الْوُجُوْهِ ذُلْفَ الْأُنُوْفِ كَأَنَّ وُجُوْهَهُمْ الْمَجَانُّ الْمُطْرَقَةُ وَتَجِدُوْنَ مِنْ خَيْرِ النَّاسِ أَشَدَّهُمْ كَرَاهِيَةً لِهٰذَا الأَمْرِ حَتّٰى يَقَعَ فِيْهِ وَالنَّاسُ مَعَادِنُ خِيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْإِسْلَامِ وَلَيَأْتِيَنَّ عَلٰى أَحَدِكُمْ زَمَانٌ لَأَنْ يَرَانِيْ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَهُ مِثْلُ أَهْلِهِ وَمَالِهِ.- (بُخَارِیٌ : بَابُ عَلَامَتِ النُّبُوَّةِ فِي الْإِسْلَامِ)

১. হজরত আবু হুরায়রা "    নবি  #   থেকে বর্ণনা করেছেন। নবি  #   বলেছেন, ‘যেসব লোক চুলের জুতা পরিধান করবে সে পর্যন্ত তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে এবং যে পর্যন্ত তোমরা তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে, যাদের চোখগুলো হবে ক্ষুদ্র, মুখমণ্ডল লাল, নাকগুলো চেপ্টা আর চেহারাটা হবে পেটা ঢালের ন্যায়, সে পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তোমরা উত্তম ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও শাসনসংক্রান্ত ব্যাপারে সর্বাধিক অনীহা পোষণকারী দেখতে পাবে, যতক্ষণ না সে তাতে জড়িত হয়ে পড়ে। মানবজাতি খনিরাজির ন্যায়। জাহেলি যুগে যারা উত্তম ছিলেন, ইসলামী যুগেও তারা উত্তম। আর তোমাদের কারও কারও কাছে এমনও সময় আসবে, যখন লোকজন ও ধন-সম্পদ অপেক্ষা একটিবার আমার দর্শন লাভই তার নিকট অধিকতর প্রিয় হবে।’ (বুখারি : বাবু আলামাতিন নুবুয়্যাতি ফিল ইসলাম, ইফা :  ৩৩৩৪)

২۲. عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : يَا عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنِ سَمُرَةَ لَا تَسْأَلِ الْإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أُوْتِيْتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا وَإِنْ أُوْتِيْتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا وَإِذَا حَلَفْتَ عَلٰى يَمِيْنٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَكَفِّرْ عَنْ يَمِيْنٍ وَأْتِ الَّذِيْ هُوَ خَيْرٌ.-(بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰى- لَا يُؤَاخِذُكُمُ الله بِاللَّغْوِ فِيْ أَيْمَانِكُمْ، مُسْلِمْ : بَابُ نَدْبِ مَنْ حَلَفَ يَمِيْنًا فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا)

২. হজরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা  "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি করিম  #    বলেছেন, ‘হে আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা! নেতৃত্ব প্রার্থী হয়ো না। কারণ প্রার্থী হয়ে নেতৃত্ব লাভ করলে তোমার ওপর যাবতীয় দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে প্রার্থী না হয়ে নেতৃত্ব প্রাপ্ত হলে তুমি এ ব্যাপারে সাহায্য প্রাপ্ত হবে। আর তুমি কোনো বিষয়ে শপথ করার পর তার বিপরীতে কল্যাণ লক্ষ করলে তখন যেটা ভালো সেটা করবে, তবে শপথের কাফফারা আদায় করবে।’ (বুখারি : বাবু কাওলিল্লাহি তাআলা লা ইউআখিযুকুল্লাহু বিল লাগয়ি ফী আইমানিকুম, বা. হা- ৭১৪৬, ৬৬২২, মুসলিম : ইফা : ৪১৩৫)









৬৬. জুলুম : اَلظُّلْمُ

আল কুরআন

إِلَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ ذَكَرُوا اللّٰهَ كَثِیْرًا وَّ انْتَصَرُوْا مِنْۢ بَعْدِ مَا ظُلِمُوْا وَ سَیَعْلَمُ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْا اَیَّ مُنْقَلَبٍ یَّنْقَلِبُوْنَ.

১. ‘তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আর আল্লাহকে অনেক স্মরণ করেছে। আর তারা নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়। আর জালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কোন প্রত্যাবর্তন স্থলে তারা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সূরা শুআরা-২৬ : ২২৭)

إِنَّمَا السَّبِیْلُ عَلَی الَّذِیْنَ یَظْلِمُوْنَ النَّاسَ وَ یَبْغُوْنَ فِی الْاَرْضِ بِغَیْرِ الْحَقِّ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ .

২. ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলম করে এবং জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’  (সূরা শুরা-৪২ : ৪২)

وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ أَنْ یُّذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ وَ سَعٰی فِیْ خَرَابِهَا اُولٰٓىِٕكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ یَّدْخُلُوْهَاۤ إِلَّا خَآىِٕفِیْنَ لَهُمْ فِی الدُّنْیَا خِزْیٌ وَّ لَهُمْ فِی الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِیْمٌ.

৩. ‘আর তার চেয়ে অধিক জালিম কে, যে আল্ল¬াহর মাসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরাণ করতে চেষ্টা করে? তাদের তো উচিত ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা আজাব।’ (সূরা বাকার-২ : ১১৪)

اَمْ لَهُمْ شُرَكٰٓؤُا شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّیْنِ مَا لَمْ یَاْذَنْ بِهِ اللّٰهُ وَ لَوْ لَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِیَ بَیْنَهُمْ وَ إِنَّ الظّٰلِمِیْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ.

৪. ‘তাদের জন্য কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? আর ফয়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। আর নিশ্চয় জালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরা শুরা-৪২ : ২১)

وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰی عَلٰی اللّٰهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهٗ اَلَیْسَ فِیْ جَهَنَّمَ مَثْوًی لِّلْكٰفِرِیْنَ.

৫. ‘আর সে ব্যক্তির চেয়ে জালিম আর কে, যে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয়?’ (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৬৮)

اَمْ تَقُوْلُوْنَ إِنَّ اِبْرٰهمَ وَ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ وَ الْاَسْبَاطَ كَانُوْا هُوْدًا اَوْ نَصٰرٰی قُلْ ءَأَنْتُمْ اَعْلَمُ اَمِ اللّٰهُ وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللّٰهِ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ.

৬. ‘নাকি তোমরা বলছ, নিশ্চয় ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানেরা ছিল ইয়াহুদি কিংবা নাসারা? বলো, তোমরা অধিক জ্ঞাত নাকি আল্ল¬াহ? আর তার চেয়ে অধিক জালিম কে, যে আল¬øাহর পক্ষ থেকে তার কাছে যে সাক্ষ্য রয়েছে তা গোপন করে? আর তোমরা যা করো, আল্ল¬াহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৪০)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ- فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ.

৭. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল¬øাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলম করবে না এবং তোমাদেও জুলম করা হবে না।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৭৮-২৭৯)


আল হাদিস

১۱. عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّهُ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرَاضِيْنَ-. (بُخَارِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ سَبْعِ أَرَاضِيْنَ)

১. হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল  #   কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে জুলম করে অপরের এক বিঘৎ জমি আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক জমি বুলিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি : বাবু মাজা আ ফী সাবয়ি আরদিনা, ২৯৫৯)

২۲. عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اُنْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا فَقَالَ رَجُلٌ یَا رَسُوْلَ اللهِ أَنْصُرُهُ  إِذَا كَانَ مَظْلُوْمًا أَفَرَأَيْتَ إِذَا كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أَنْصُرُهُ قَالَ تَحْجُزُهُ أَوْ تَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ فَإِنَّ ذٰلِكَ نَصْرُهُ.- (بُخَارِيْ : بَابُ يَمِيْنِ الرَّجُلِ لِصَاحِبِهِ)

২। হজরত আনাস "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, তোমার ভাই জালিম হোক কিংবা মজলুম হোক তাকে সাহায্য করবে। অতপর এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল  #  ! যখন সে মাজলুম হবে তখন তো আমি তাকে সাহায্য করতে পারব। কিন্তু আপনি কী মনে করেন? যখন সে জালিম হবে তখন আমি তাকে কীভাবে সাহায্য করব? রাসূল #   বললেন, তুমি তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে, আর এটাই হবে তার জন্য সাহায্য।’ (বুখারি : বাবু ইয়ামিনির রাজুলি লি সাহিবিহি, ইফা :  ৬৪৮২)

৩۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَدْرِيْ الْقَاتِلُ فِيْ أَيِّ شَيْءٍ قَتَلَ وَلَا يَدْرِيْ الْمَقْتُوْلُ عَلٰى أَيِّ شَيْءٍ قُتِلَ.- (مُسْلِمْ : بَابُ لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتّٰى يَمُرَّ الرَّجُلُ(

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি  #    বলেছেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, সে সত্তার কসম করে বলছি! অবশ্যই মানুষের মাঝে এমন একটি যুগ আসবে, (জুলুমের মাত্রা এত বেশি হবে) যখন হত্যাকারী জানবে না সে কী জন্য হত্যা করল, আর নিহত ব্যক্তিও জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হলো?’ (মুসলিম : বাবু লা তাকুমুস সা-আতু হাত্তা ইয়ামুররার রাজুলু, ইফা : ৭০৩৯)

৪۴. عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : اِتَّقُوْا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوْا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى سَفَكُوْا دِمَائَهُمْ وَاسْتَحَلُّوْا مَحَارِمَهُمْ-. (مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الظُّلْمِ)

৪. হজরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন,  ‘তোমরা জুলুম করা থেকে বিরত থাকো। কেননা জুুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকারাচ্ছন্ন ধোঁয়ায় পরিণত হবে। তোমরা কৃপুণতার কলষতা থেকেও দূরে থাকো। কেননা কৃপণতাই তোমাদের পূর্বের অনেক লোককে ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদের রক্তপাত ও মারামারি করতে প্ররোচিত করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উসকানি দিয়েছে।’ (মুসলিম : বাবু তাহরিমিজ জুলমি, ইফা : ৬৩৪০)

৫۵. عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِنَّ اللهَ لَيُمْلِيْ لِلظَّالِمِ حَتّٰى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ قَالَ ثُمَّ قَرَأَ [وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ إِذَا اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيْمٌ شَدِيْدٌ]. (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِهِ : وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ إِذَا اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌ)

৫. হজরত আবু মুসা "  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন তিনি তাকে গ্রেফতার করেন, তখন আর ছাড়েন না। অতপর নবি  #     এ আয়াত পাঠ করলেন, আর তোমার রব যখন কোনো জালিম জনবসতিকে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এমনই হয়ে থাকে। তার পাকড়াও বড়োই কঠিন, নির্মম ও পীড়াদায়ক।’ (বুখারি : বাবু কাওলিহি ওয়া কাযালিকা আয় রাব্বিকা .... , ইফা : ৪৩২৯)




৬৭. মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক : اَلْعَلَاقَةُ بَيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ

আল কুরআন

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَ اَخَوَیْكُمْ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

১. ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ১০)

وَ اِنْ یُّرِیْدُوْا أَنْ یَّخْدَعُوْكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللّٰهُ هُوَ الَّذِیْ اَیَّدَكَ بِنَصْرِهٖ وَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ- وَ اَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِی الْاَرْضِ جَمِیْعًا مَّاۤ اَلَّفْتَ بَیْنَ قُلُوْبِهِمْ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ اَلَّفَ بَیْنَهُمْ إِنَّهٗ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ.

২. ‘আর যদি তারা তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা। আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি জমিনে যা আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।’  (সূরা আনফাল-৮ : ৬২-৬৩)

وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللّٰهِ جَمِیْعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوْا وَ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ عَلَیْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا وَ كُنْتُمْ عَلٰی شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِّنْهَا كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمْ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ.

৩. ‘আর তোমরা সকলে আল¬াহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল¬øাহর নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতপর তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল¬øাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১০৩)

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَی اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ.

৪. ‘অতপর আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ করো। অতপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্ল¬াহর ওপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্ল¬াহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৫৯)

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗ اَشِدَّآءُ عَلَی الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیْنَهُمْ تَرٰىهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا یَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضْوَانًا سِیْمَاهُمْ فِیْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ ذٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِی التَّوْرٰىةِ وَ مَثَلُهُمْ فِی الْاِنْجِیْلِ كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْئَهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰی عَلٰی سُوْقِهٖ یُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنْهُمْ مَّغْفِرَةً وَّ اَجْرًا عَظِیْمًا.

৫. ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদের রুকুকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মতো, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের ওপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদের ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।’ (সূরা ফাতহ-৪৮ : ২৯)

اَلْاَخِلَّآءُ یَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِیْنَ -یٰعِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَیْكُمُ الْیَوْمَ وَ لَاۤ أَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ.

৬. ‘সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকিরা ছাড়া। হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’  (সূরা যুখরুফ-৪৩ : ৬৭-৬৮)

وَ الَّذِیْنَ تَبَوَّؤُ الدَّارَ وَ الْاِیْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ یُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَیْهِمْ وَ لَا یَجِدُوْنَ فِیْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا اُوْتُوْا وَ یُؤْثِرُوْنَ عَلٰی أَنْفُسِهِمْ وَ لَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَ مَنْ یُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

৭. ‘আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে। আর মুহাজরিদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’  (সূরা হাশর-৫৯ : ৯)


আল হাদিস

১۱. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّی اللهُ ﷺ  قَالَ : اَلْمُسْلِمُ أَخُوْ الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِيْ حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. (بُخَارِيْ : بَابُ لَا يَظْلِمُ الْمُسْلِمُ الْمُسْلِمَ وَلَا يُسْلِمُهُ، مُسْلِمْ : بَابُ تَحْرِيْمِ الظُّلْمِ)

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার ওপর জুলুম করবে আর না তাকে শক্রর হাতে সোপর্দ করবে। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো অসুবিধা বা বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কষ্ট ও বিপদের অংশবিশেষ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন। (বুখারি : বাবু লা ইয়াজলিমুল মুসলিমুল মুসলিমা ওয়ালা ইউসলিমুহু, ইফা : ২০৮০, মুসলিম : ইফা : ৬৩৪২)

২۲. عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَثَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ فِيْ تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكٰى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعٰى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهْرِ وَالْحُمّٰی.- (مُسْلِمْ : بَابُ تَرَاحُمِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَتَعَاطُفِهِمْ وَتَعَاضُدِهِمْ)

২. হজরত নুমান ইবনে বশির "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোনো অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তা অনুভব করে বিনিদ্রা ও জ্বরের মাধ্যমে।’ (মুসলিম : বাবু তারাহুমিল মুমিনিনা ওয়া তায়াতুফিহিম ওয়া তায়াদুুদিহিম, ইফা :  ৬৩৫০)

৩۳. عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَال رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ.- (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى "قُلِ ادْعُوْا اللهُ أَوْ ادْعُوْا الرَّحْمٰنِ")

৩. হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘আল্লাহ তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বুখারি : বাবু কাওলিল্লাহি তাআলা কুলিদ উল্লাহা আয়িদ উররাহমানা, ইফা :  ৬৮৭২)

৪۴. عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى يُحِبَّ لِأَخِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ-. (بُخَارِيْ : بَابُ مِنَ الْإِيْمَانِ أَنْ يُحِبَّ لِأَخِيْهِ مَا يُحِبَّ لِنَفْسِهِ، مُسْلِمْ : بَابُ الدَّلِيْلِ عَلٰى أَنَّ مِنْ خِصَالِ الْإِيْمَانِ أَنْ يُحِبَّ لِأَخِيْهُ)

৪. হজরত আনাস "   নবি করিম  #   থেকে বর্ণনা করেন। তিনি #     বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে কেহ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি : বাবু মিনাল ঈমানি আনইয়ুহিব্ব লি আখিহি মা ইউহিব্বু লি নাফসিহি, ইফা :  ১২, মুসলিম : বাবুদ দলিলি আলা আন্না খিসালিল ঈমানি আন ইউহিব্বা লি আখিহি, ইফা : ৬৪)

৫۵. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا وَ يُوَقِّرْ كَبِيْرَنَا وَيَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ.- (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا جَاءَ فِيْ رَحْمَةِ الصِّبْيَانِ)

৫. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #   বলেছেন, ‘যে ছোটোদের প্রতি দয়া দেখায়  না, বড়োদের প্রতি সম্মান করে না, সৎ কাজের আদেশ করে না এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে সে আমাদের দলভুক্ত (উম্মত) নয়।’ (তিরমিজি : বাবু মা জাআ ফি রাহমাতিস সিবইয়ানি, ইফা : ১৯২৭)
















৬৮. দায়িত্বশীলের গুণাবলি : صِفَاتُ أُوْلِي الْأَمْرِ

আল কুরআন

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِک فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَکَّلْ عَلٰی اللهِ إِنَّ الله یُحِبُّ الْمُتَوَکِّلِیْنَ  .

১. ‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র যে আপনি কোমল হৃদয়সম্পন্ন, যদি আপনি কঠোরভাষী ও তিক্ত মেজাজসম্পন্ন হতেন, তাহলে এরা আপনার চার পাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত। কাজেই এদের ত্রুটিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন, এদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করুন এবং বিভিন্ন বিষয়ে এদের সাথে পরামর্শ করুন, অতপর পরামর্শের পর যখন কোনো বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প হয়ে যান, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ (তাঁর ওপর) ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ১৫৮)

وَ قَالَ لَهُمْ نَبِیُّهُمْ إِنَّ اللّٰهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوْتَ مَلِكًا قَالُوْا اَنّٰی یَكُوْنُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَیْنَا وَ نَحْنُ اَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَ لَمْ یُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ قَالَ إِنَّ اللّٰهَ اصْطَفٰىهُ عَلَیْكُمْ وَ زَادَهٗ بَسْطَةً فِی الْعِلْمِ وَ الْجِسْمِ وَ اللّٰهُ یُؤْتِیْ مُلْكَهٗ مَنْ یَّشَآءُ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.

২. ‘আর তাদের তাদের নবি বলল, নিশ্চয় আল্ল¬াহ তোমাদের জন্য তালুতকে রাজারূপে পাঠিয়েছেন। তারা বলল, আমাদের ওপর কীভাবে তার রাজত্ব হবে, অথচ আমরা তার চেয়ে রাজত্বের অধিক হকদার? আর তাকে সম্পদের প্রাচুর্যও দেওয়া হয়নি। সে বলল, নিশ্চয় আল্ল¬াহ তাকে তোমাদের ওপর মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও দেহে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল¬াহ যাকে চান, তাকে তাঁর রাজত্ব দেন। আর আল¬øাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা-২ : ২৪৭)


وَ اَخِیْ هٰرُوْنُ هُوَ اَفْصَحُ مِنِّیْ لِسَانًا فَاَرْسِلْهُ مَعِیَ رِدْاً یُّصَدِّقُنِیْ اِنِّیْ اَخَافُ أَنْ یُّكَذِّبُوْنِ .

৩. ‘আর আমার ভাই হারুন, সে আমার চেয়ে স্পষ্টভাষী তাই তাকে আমার সাথে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশঙ্কা  করছি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’ (সূরা কাসাস-২৮ : ৩৪)







৬৯. অনাড়ম্বর জীবনযাপন : اَلْمَعِيْشَةُ الْبَسِيْطَةُ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللّٰهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَیٰوةُ الدُّنْیَا وَ لَا یَغُرَّنَّكُمْ بِاللّٰهِ الْغَرُوْرُ .

১. ‘হে মানুষ, নিশ্চয় আল¬øাহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড়ো প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদের আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে।’ (সূরা ফাতির-৩৫ : ৫)

اَلْهٰىكُمُ التَّكَاثُرُ- حَتّٰی زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ- كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ- ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ- كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْیَقِیْنِ.

২. ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের ভুলিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাৎ করবে। কখনো নয়, শীঘ্রই তোমরা জানবে, তারপর কখনো নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। কখনো নয়, তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে?’ (সূরা তাকাসুর-১০২ : ১-৫)

وَ مَا هٰذِهِ الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ إِلَّا لَهْوٌ وَّ لَعِبٌ وَ إِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِیَ الْحَیَوَانُ لَوْ كَانُوْا یَعْلَمُوْنَ .

৩. ‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখিরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত।’ (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৬৪)


আল হাদিস

১۱. عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيْهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ فَاتَّقُوْا الدُّنْيَا واتَّقُوْا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنِةِ بَنِيْ إِسْرَائِیْلَ کَانَتْ فِي النِّسَاءِ-. (مُسْلِمْ : بَابُ أَكْثَرِ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْفُقَرَاءُ)

১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি "    নবি করিম  #    থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘দুনিয়া একটা সবুজ-শ্যামল সুমিষ্ট বস্তু। আল্লাহ এখানে তোমাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং তোমরা কী করছো তা দেখছেন। সুতরাং এ দুনিয়ায় (লোভ লালসা থেকে) আত্মরক্ষা করো এবং নারীদের (ফিতনা) সম্পর্কেও সতর্ক থাকো। কেননা বনি ইসরাইলদের মাঝে প্রথম ফিতনা নারীদের থেকেই শুরু হয়েছে। (মুসলিম : বাবু আকছারি আহলিল জান্নাতি আল ফুকারা...., ইফা : ৬৬৯৭)

۲. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : يُؤْتٰى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِي النَّارِ صِبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ يَا ابْنَ اٰدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيْمٌ قَطُّ؟ فَيَقُوْلُ لَا وَاللهِ يَارَبِّ وَيُؤْتٰى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صِبْغَةً فِي الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ اٰدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ؟ فَيَقُوْلُ لَا وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَيْتُ شِدَّةً قَطُّ. (مُسْلِمْ : بَابُ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِه)

২. হজরত আনাস ইবনে মালেক "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #    বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামিদের মধ্য থেকে দুনিয়াতে সর্বাধিক প্রাচুর্য প্রাপ্ত ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। তারপর তাকে (জাহান্নামের) আগুনে একটি ডুব দিয়ে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো কোনো কল্যাণ দেখেছ, তুমি কি কখনো প্রাচুর্যে দিন যাপন করেছ? সে বলবে, না, আল্লাহর শপথ! হে আমার রব। আবার জান্নাতিদের মধ্য থেকেও এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুর্দশা ও অভাবগ্রস্ত ছিল। তারপর তাকে জান্নাতে একবার অবগাহন করিয়া জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো কোনো অভাব দেখেছ? তুমি কি কখনো দুর্দশা ও অনটনের মধ্যে দিন যাপন করেছ? সে বলবে, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো অভাব অনটন দেখিনি এবং আমার ওপর দিয়ে তেমন কোনো দুর্দশা ও অতিবাহিত হয়নি।’ (মুসলিম : ইফা : ৫০২১)

৩۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَوْ كَانَ لِيْ مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا يَسُرُّنِيْ أَنْ لَا يَمُرَّ عَلَى ثَلَاثٍ وَعِنْدِيْ مِنْهُ شَيْئٌ إِلَّا شَيْىءٌ أُرْصِدُهُ لِدَيْنٍ. (بُخَارِيْ : بَابُ أَدَاءِ الدُّيُوْنِ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #      বলেছেন, ‘আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে এবং আমার ঋণ পরিশোধের সমপরিমাণ ব্যতীত তিন দিন যেতে না যেতেই আমার কাছে এর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এতেই আমি আনন্দিত হব।’ (বুখারি : ইফা : ২২১৪)

৪۴. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : تَعِسَ عَبْدُ الدِّيْنَارِ وَالدِّرْهَمِ وَالْقَطِيْفَةِ وَالْخَمِيْصَةِ إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ-. (بُخَارِيْ : بَابُ مَا يُتَّقٰی مِنْ فِتْنَةِ الْمَالِ)

৪. হজরত আবু হুরায়রা "  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘দিনার, দিরহাম, কালো চাদর ও চওড়া পাড় পশমি চাদরের গোলামেরা ধ্বংস হোক। কেননা তাকে যদি দেয়া হয় খুশি, কিন্তু না দেওয়া হলেই বেজার।’ (বুখারি : বাবু মা ইউত্তাকা মিন ফিতনাতিল মালি, ইফা : ৫৯৯২)

৫۵. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ سَبْعِيْنَ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ مَا مِنْهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ إِمَّا إِزَارٌ وَإِمَّا كِسَاءٌ قَدْ رَبَطُوْا فِيْ أَعْنَاقِهِمْ فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْنِ وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الْكَعْبَيْنِ فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَرَاهِيَةَ أَنْ تُرٰی عَوْرَتُهُ. (بُخَارِيْ : بَابُ نَوْمِ الرِّجَالِ فِي الْمَسْجِدِ)

৫. হজরত আবু হুরায়রা "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি যাদের কারও কোনো চাদর ছিল না। কারও হয়তো একটি লুঙ্গি এবং কারও একটি কম্বল ছিল। তারা এটাকে নিজেদের গলায় বেঁধে রাখতেন। কারোরটা হয়তো তার পায়ের গোছার অধিকাংশ পর্যন্ত পৌঁছাত; কারোরটা হাঁটু পর্যন্ত। লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হওয়ার ভয়ে তারা হাত দিয়ে তা ধরে রাখতেন।’ (বুখারি : বাবু নাওমির রিজালি ফিল মাসজিদি, ইফা :  ৪২৯)

৬۶. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : اَلدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ.- (مُسْلِمْ : كِتَابُ الزُّهْدِ وَالرَّقَائِقِ)

৬. হজরত আবু হুরায়রা "   থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  #    বলেছেন, দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য কারাগার এবং কাফিরের জন্য জান্নাত।’ (মুসলিম : কিতাবুয যুহদি ওয়ার রাক্কায়িকি, ইফা : ৭১৪৯)

৭٧. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍ قَالَ أَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِمَنْكَبِيْ فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيْلٍ-. (بُخَارِیٌ : بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيْلٍ)

৭. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  #    আমার কাঁধ ধরে বললেন, ‘দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে অবস্থান করো, যেন তুমি মুসাফির কিংবা পথচারী।’ (বুখারি : বাবু কাওলিন নাবিয়্যি কুন ফিদ দুনিয়া কাআন্নাকা গারিবুন আও আবিরু সাবিলিন, ইফা :  ৫৯৩৭)

৮۸. عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ أَتَى النَّبِيُّ ﷺ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ دُلَّنِيْ عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِيَ اللهُ وَأَحَبَّنِيَ النَّاسُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اِزْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبُّكَ الله وَازْهَدْ فِيْمَا فِيْ أَيْدِي النَّاسِ يُحِبُّوْكَ.- (اِبْنُ مَاجَةَ : بَابُ الزُّهْدِ فِي الدُّنْيَا)

৮. হজরত সাহল ইবনে সাদ সায়েদি  "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবি করিম #    এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কোনো কাজ বলে দিন, যা করলে আমাকে আল্লাহও ভালোবাসবেন এবং মানুষেও ভালোবাসবে। অতপর রাসূলুল্লাহ  #   বললেন, দুনিয়ার প্রতি তুমি অনাসক্ত হও তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের হাতে যা রয়েছে, তার প্রতিও অনাসক্ত হও, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে।’ (ইবনে মাজাহ : বাবুজ জুহদি ফিদ দুনিয়া, মা.শা- ৪০৯২)



৭০. শিরক : اَلشِّرْكُ

আল কুরআন

وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللّٰهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.

১. ‘আর স্মরণ করো, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হলো বড়ো জুলুম।’  (সূরা লুকমান-৩১ : ১৩)

إِنَّ اللّٰهَ لَا یَغْفِرُ أَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدِ افْتَرٰۤی اِثْمًا عَظِیْمًا.

২. ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।’  (সূরা নিসা-৪ : ৪৮)

مَا اتَّخَذَ اللّٰهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّ مَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ بِمَا خَلَقَ وَ لَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰی بَعْضٍ سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یَصِفُوْنَ- عٰلِمِ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ فَتَعٰلٰی عَمَّا یُشْرِكُوْنَ.

৩. ‘আল্লাহ কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোনো ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র! তিনি গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী, তারা যা শরিক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।’ (সূরা মুমিনুন-২৩ : ৯১-৯২)

یٰاَهْلَ الْكِتٰبِ لَا تَغْلُوْا فِیْ دِیْنِكُمْ وَ لَا تَقُوْلُوْا عَلَی اللّٰهِ إِلَّا الْحَقَّ ؕ إِنَّمَا الْمَسِیْحُ عِیْسَی ابْنُ مَرْیَمَ رَسُوْلُ اللّٰهِ وَ كَلِمَتُهٗ اَلْقٰىهَاۤ اِلٰی مَرْیَمَ وَ رُوْحٌ مِّنْهُ فَاٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ وَ لَا تَقُوْلُوْا ثَلٰثَةٌ اِنْتَهُوْا خَیْرًا لَّكُمْ إِنَّمَا اللّٰهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ سُبْحٰنَهٗ أَنْ یَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ وَكِیْلًا.

৪. ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর ওপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসাহ ঈসা কেবল আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রুহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না তিন। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোনো সন্তান হবে। আসমানসমূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে জমিনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা নিসা-৪ : ১৭১)

وَ مَنْ یَّدْعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰهًا اٰخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهٗ بِهٖ فَإِنَّمَا حِسَابُهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ إِنَّهٗ لَا یُفْلِحُ الْكٰفِرُوْنَ.

৫. ‘আর যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, যে বিষয়ে তার কাছে প্রমাণ নেই; তার হিসাব কেবল তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না।’ (সূরা মুমিনুন-২৩ : ১১৭)

وَ جَعَلُوْا لَهٗ مِنْ عِبَادِهٖ جُزْءًا إِنَّ الْاِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ مُّبِیْنٌ.

৬. ‘আর তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে তাঁর অংশ সাব্যস্ত করেছে। নিশ্চয়ই মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা জুখরুখ-৪৩ : ১৫)

بَدِیْعُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ اَنّٰی یَكُوْنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّ لَمْ تَكُنْ لَّهٗ صَاحِبَةٌ وَ خَلَقَ كُلَّ شَیْءٍ وَ هُوَ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ.

৭. ‘তিনি আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। কীভাবে তাঁর সন্তান হবে অথচ তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই! আর তিনি প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারে সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আনআম-৬ : ১০১)

قُلْ إِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ یُوْحٰی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَمَنْ كَانَ یَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْیَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا.

৮. ‘হে নবি! আপনি বলুন আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহি এসেছে, তোমাদের মাবুদ একজনই। এখন যে কেউ তার রবের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন নেক আমল করে এবং দাসত্ব ও বন্দেগি করার ব্যাপারে যেন রবের সাথে আর কাউকে শরিক না করে।’ (সূরা কাহফ-১৮ : ১১০)

قُلْ إِنَّمَا اَدْعُوْا رَبِّیْ وَ لَا اُشْرِكُ بِهٖۤ اَحَدًا- قُلْ اِنِّیْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّ لَا رَشَدًا.

৯. ‘বলো, নিশ্চয় আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরিক করি না। বলো, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য না কোনো অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি এবং না কোনো কল্যাণ করার।’ (সূরা জিন-৭২ : ২০-২১)


আল হাদিস

১۱. عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : مَنْ لَقِيَ اللهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارَ.- (مُسْلِمْ : بَابُ مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا)

১. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ  #    কে বলতে শুনেছি, ‘যে এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করল যে সে তার সাথে কাউকে শরিক করেনি, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তার সাথে কাউকে শরিক করে সাক্ষাৎ করল, তাহলে সে জাহান্নামে যাবে।’ (মুসলিম : বার মান মাতা লা ইউশরিকু বিল্লাহি শাইয়ান, ইফা : ১৭২)

২۲. عَنْ أَنَسٍ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ ﷺ  عَنِ الْكَبَائِرِ قَالَ : اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ-. (بُخَارِيْ : بَابُ مَا قِيْلَ فِيْ شَهَادَةِ الزُّوْرِ)

২. হজরত আনাস "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি  #    কে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহর সাথে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাণ হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (বুখারি : বাবু মা কিলা ফি শাহাদাতিজ জুরি, ইফা : ২৪৭৭)

৩۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا یَارَسُوْلَ اللهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ : اَلشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ الله إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ.- (بُخَارِيْ : بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰى "إِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ أَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِي بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا"، مُسْلِمْ : بَابُ بَيَانِ الْكَبَائِرِ وَأَكْبَارِهَا)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "   নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন, ১. আল্লাহর সাথে শিরক করা ২. জাদু টোনা করা ৩. আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা হারাম করেছেন অন্যায়ভাবে তা হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ৭. সতী সাধ্বী, সহজ সরলা মুমিন নারীর ব্যাপারে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি : বাবু কাওলিল্লাহি তাআলা ইন্নাল্লাজিনা ইয়াকুলুনা আমওয়ালাল ইয়াতামা জুলমান....... ইফা : ২৫৭৮, মুসলিম : ইফা : ১৬৪)

৪۴. عَنْ مُعَاذٍ قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ ﷺ عَلٰى حِمَارٍ يُقَالُ لَهُ عُفَيْرٌ فَقَالَ یَا مُعَاذُ هَلْ تَدْرِيْ حَقَّ اللهِ عَلَى عِبَادِهِ وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ؟ قُلْتُ اَلله وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوْه وَلَا يُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَ حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يُعَذِّبَ مَنْ لَا يُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا فَقُلْتُ یَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا أُبَشِّرُبِهِ النَّاسَ قَالَ لَا تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوْا- (بُخَارِيْ : بَابُ اِسْمِ الْفَرَسِ وَالْحِمَارِ، مُسْلِمْ : بَابُ الدَّلِيْلِ عَلَى مَنْ مَاتَ عَلَى التَّوْحِيْدِ)

৪. হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা আমি উফাইর নামক গাধার উপরে রাসূল   #     -এর পেছনে বসা ছিলাম। অতপর তিনি বললেন, হে মুয়াজ তুমি কি জানো, আল্লাহর কী হক রয়েছে তার বান্দাদের ওপর আর বান্দারই বা কী হক রয়েছে আল্লাহর ওপর? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেই ভালো জানেন। রাসূল  #   বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক হলো, সে তার ইবাদত করবে আর তার সাথে কোনো কিছুকেই শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো, যে বান্দাহ তার সাথে কাউকে শরিক করেনি, তিনি (আল্লাহ) তাকে শাস্তি দেবেন না। অতপর বললাম, হে আল্লাহর রাসূল  #   আমি কি মানুষকে এই শুভ সংবাদ জানিয়ে দেবো না? রাসূল   #   বললেন, না তাদের এই সু-সংবাদ দেবে না, তাহলে তারা এর উপরেই ভরসা করে থাকবে।’ (বুখারি : বাবু ইছমুল করছি ওয়াল হিমারি, ইফা : ২৬৫৯, মুসলিম : ইফা : ৫১)






৭১. বিদআত : اَلْبِدْعَةُ

আল কুরআন

وَ إِذَاۤ اَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً مِّنْۢ بَعْدِ ضَرَّآءَ مَسَّتْهُمْ إِذَا لَهُمْ مَّكْرٌ فِیْۤ اٰیَاتِنَا قُلِ اللّٰهُ اَسْرَعُ مَكْرًا إِنَّ رُسُلَنَا یَكْتُبُوْنَ مَا تَمْكُرُوْنَ.

১. ‘আর যখন আমি মানুষকে দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করার পর রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখন তারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে কুট-কৌশলের আশ্রয় নেয়। বলো, আল্লাহ কৌশলকারী হিসেবে অধিক দ্রুত। নিশ্চয় আমার ফেরেশতারা তোমাদের কুট-কৌশল লিখে রাখে।’ (সূরা ইউনুস-১০ : ২১)

وَ قَالُوْا لَوْ لَاۤ اُنْزِلَ عَلَیْهِ مَلَكٌ وَ لَوْ أَنْزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِیَ الْاَمْرُ ثُمَّ لَا یُنْظَرُوْنَ.

২. ‘আর তারা বলে, কেন তার ওপর কোনো ফেরেশতা নাজিল করা হয়নি? যদি আমি ফেরেশতা নাজিল করতাম তাহলে বিষয়টি ফয়সালা হয়ে যেত, তারপর তাদের সুযোগ দেওয়া হতো না।’  (সূরা আনআম-৬ : ৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ وَ اُولِی الْاَمْرِ مِنْكُمْ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِیْ شَیْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ذٰلِكَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا.

৩. ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও আনুগত্য করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাওÑ যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখো। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।’ (সূরা নিসা-৪ : ৫৯)

وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیْ مُسْتَقِیْمًا فَاتَّبِعُوْهُ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِیْلِهٖ ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ .

৪. ‘আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তারো অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সূরা আনআম-৬ : ১৫৩)

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ .

৫. ‘বলো, যদি তোমরা আল্ল¬াহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্ল¬াহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্ল¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান-৩ : ৩১)


আল হাদিস

১۱. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسِ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ-. (بُخَارِيْ : بَابُ إِذَا اصْطَلَحُوْا عَلٰى صُلْحِ جَوْرٍ فَالصُّلْحُ مَرْدُوْدٌ، مُسْلِمْ : بَابُ نَقْضِ الْأَحْكَامِ الْبَاطِلَةِوَ رَدِّ مُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ)

১. হজরত আয়েশা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ   #    বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ¦ীনের মধ্যে এমন নতুন কিছু প্রবর্তন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারি : বাবু ইজাসতালাহু আলা সুলহি জাওরিন ফাস সুলহু মারদুদ, ইফা : ২৫১৭, মুসলিম : বাবু নাকজিল আহকামিল বাতিলাতি 

ওয়া রাদ্দি মুহদাসাতিল উমুরি- ৪৩৪৩)

۲. عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا خَطَبَ اِحْمَرَّتْ عَيْنَاهُ وَعَلَا صَوْتُهُ وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ حَتّٰی كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ يُقُوْلُ صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ وَيَقُوْلُ بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ وَيَقْرُنُ بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ اَلسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطٰى وَيَقُوْلُ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الْأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا أَوْلٰى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ مَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِأهْلِه وَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيَاعًا فَاِلَيَّ وَعَلَيَّ-. (مُسْلِمْ : بَابُ تَخْفِيْفِ الصَّلَاةِ وَالْخُطْبَةِ)

২. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল  #     যখন বক্তৃতা দিতেন তখন তার চোখ দুটি লাল হয়ে যেত, তার কণ্ঠস্বর বড়ো হয়ে যেত এবং তার রাগ বৃদ্ধি পেত, যেন তিনি কোন সেনাবাহিনীকে সতর্ক করছেন। তিনি বলতেন, আল্লাহ তোমাদের সকাল-সন্ধ্যায় ভালো রাখুন। তিনি আরও বলতেন, আমাকে কিয়ামতসহ এভাবে পাঠানো হয়েছে। এ কথা বলে তিনি তার মধ্যমা ও তর্জনী অঙুলি মেশালেন। তিনি আরও বলতেন, অতপর সবচেয়ে ভালো কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে মুহাম্মদ  #  এর পথ। দ্বীনের ব্যাপারে নতুন বিষয়গুলো (বিদয়াত) হলো সবচেয়ে খারাপ। সব বিদয়াতই হলো ভ্রান্তি। তারপর তিনি বলতেন, আমি প্রত্যেক মুমিনের জন্য তার নিজের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি কোনো সম্পদ রেখে মারা যায়, তা তার পরিবারবর্গের জন্য। আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ বা অসহায় সন্তান রেখে যায়, তবে তার দায়িত্ব আমারই ওপর।’ (মুসলিম : বাবু তাখফিফিস সালাতি ওয়াল খুতবাতি, ইফা : ১৮৭৮)

৩۳. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ : مَنْ دَعَا إِلٰى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذٰلِكَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئًا وَ مَنْ دَعَا إِلٰى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ اٰثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذٰلِكَ مِنْ اٰثَامِهِمْ شَيْئًا- (مُسْلِمْ : بَابُ مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً اَوْ سَيِّئَةً)

৩. হজরত আবু হুরায়রা "    বর্ণনা করেন, রাসূল  #    বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য এ পথের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময় বিন্দু মাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার উক্ত পথের অনুসারীদের সমান গুনাহ হবে। এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র কম হবে না।’ (মুসলিম : বাবু মান ছান্না সুন্নাতান হাসানাতান আও সাইয়িআতান ...., ইফা : ৬৫৬০)









৭২. ইসলামে হালাল-হারাম : اَلْحَلَالُ وَالْحَرَامُ فِي الْإِسْلَامِ

আল কুরআন

یٰاَیُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِی الْاَرْضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ إِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌ.

১. ‘হে মানুষ, জমিনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৬৮)

یٰاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقْنٰكُمْ وَ اشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِیَّاهُ تَعْبُدُوْنَ.

২. ‘হে মুমিনগণ, আহার করো আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্ল¬াহর জন্য শোকর করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো।  (সূরা বাকারা-২ : ১৭২)

فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَیْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰیٰتِهٖ مُؤْمِنِیْنَ- وَ مَا لَكُمْ اَلَّا تَاْكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَیْهِ وَ قَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَّا حَرَّمَ عَلَیْكُمْ إِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ اِلَیْهِ وَ إِنَّ كَثِیْرًا لَّیُضِلُّوْنَ بِاَهْوَآىِٕهِمْ بِغَیْرِ عِلْمٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِیْنَ .

৩. ‘সুতরাং তোমরা আহার করো তা থেকে, যার ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে, যদি তোমরা তাঁর আয়াতসমূহের ব্যাপারে বিশ্বাসী হও। আর তোমাদের কী হলো যে তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে! অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের ওপর হারাম করেছেন। তবে যার প্রতি তোমরা বাধ্য হয়েছ এবং নিশ্চয় অনেকে না জেনে তাদের খেয়াল-খুশি দ্বারা পথভ্রষ্ট করে। নিশ্চয় তোমার রব সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।’  (সূরা আনআম-৬ : ১১৮-১১৯)

یٰاَیُّهَا النَّبِیُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللّٰهُ لَكَ تَبْتَغِیْ مَرْضَاتَ اَزْوَاجِكَ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ- قَدْ فَرَضَ اللّٰهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ اَیْمَانِكُمْ وَ اللّٰهُ مَوْلٰىكُمْ وَ هُوَ الْعَلِیْمُ الْحَكِیْمُ.

৪. ‘হে নবি, আল্ল¬াহ তোমার জন্য হালাল যা করেছেন তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনায় তুমি কেন তা হারাম করছ? আর আল্ল¬াহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। নিশ্চয় তোমাদের জন্য শপথ হতে মুক্তির বিধান দিয়েছেন; আর আল্ল¬াহ তোমাদের অভিভাবক এবং তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান।’  (সূরা তাহরিম-৬৬ : ১-২)

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ مَا بَطَنَ وَ الْاِثْمَ وَ الْبَغْیَ بِغَیْرِ الْحَقِّ وَ أَنْ تُشْرِكُوْا بِاللّٰهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطٰنًا وَّ أَنْ تَقُوْلُوْا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ.

৫. ‘বলো, আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজÑ যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরিক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর ওপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জানো না।’ (সূরা আরাফ-৭ : ৩৩)

وَ لَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلٰلٌ وَّ هٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلٰی اللّٰهِ الْكَذِبَ ؕ إِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلٰی اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَ.

৬. ‘এই যে তোমাদের মুখ মিথ্যা হুকুম জারি করে যে, এ জিনিস হালাল ও ওই জিনিস হারাম এভাবে তোমরা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করো না। যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা বানিয়ে বলে তারা কখনো সফল হতে পারে না।’ (সূরা নাহল-১৬ : ১১৬)

 إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیْكُمُ الْمَیْتَةَ وَ الدَّمَ وَ لَحْمَ الْخِنْزِیْرِ وَ مَاۤ اُهِلَّ بِهٖ لِغَیْرِ اللّٰهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَیْرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَیْهِ إِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

৭. ‘নিশ্চয় তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যা গায়রুল্ল¬ার নামে জবেহ করা হয়েছে। সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয় আল্ল¬াহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা বাকারা-২ : ১৭৩)


আল হাদিস

১۱. عَنِ الْمِقْدَادِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ : مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ وَإِنَّ نَبِيَّ اللهِ دَاودَ  عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَاْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِه. (بُخَارِيْ : بَابُ کَسْبِ الرَّجُلِ وَعَمَلِهِ بِيَدِه)

১. হজরত মিকদাদ "    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন মানুষের খাদ্যের মধ্যে সে খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম, যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হাতের উপার্জিত সম্পদ দ্বারা করে। আর আল্লাহর প্রিয় নবি দাউদ (আ) আপন হাতের কামাই হতে খাদ্য গ্রহণ করতেন।’ (বুখারি : বাবু কাসবির রাজুলি ওয়া আমালিহি বিয়াদিহি, ইফা : ১৯৪২)

২۲. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : لَا يَكْتَسِبُ عَبْدٌ مَالَ حَرَامٍ فَيَتَصَدَّقُ فَيُنْفِقُ فَيُبَارَكَ لَهُ فِيْهِ، وَلَا يَتَصَدَّقُ فَيُقْبَلُ مِنْهُ وَلَا يَتْرُكُ خَلْفَ ظَهْرِهِ إِلَّا كَانَ زَادَهُ إِلٰى النَّارِ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَمْحُوْا السَّيِّئَ بِالسَّيِّئِ وَلَا يَمْحُوْا السَّيِّئَ إِلَّا بِالْحَسَنِ إِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يَمْحُوْا الْخَبِيْثَ.- (بَيْهَقِيْ : شُعَبُ الْإِيْمَانِ)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ #   বলেছেন, ‘হারাম পথে উপার্জন করে বান্দা যদি প্রয়োজন পূরণের জন্য তা ব্যয় করে, তাতে কোনো বরকত দেওয়া হয় না। আর তা থেকে দান করলে তাও গ্রহণ করা হয় না। আর যদি এ সম্পদ রেখে মারাও যায় সে সম্পদ জাহান্নামের সফরে তার পাথেয় হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অন্যায় দ্বারা অন্যায়কে মিটান না। আর তিনি অন্যায়কে ভালো দ্বারাই মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই মন্দ মন্দকে দূর করতে পারে না।’ (বায়হাকি : শুয়াবুল ইমান, মা.শা- ৫২৮৩, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে দয়ীফ বলেছেন)

৩۳. عَنْ كَثِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ عَوْفٍ الْمُزَنِيُّ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ اَلصُّلْحُ جَائِزٌ بَيْنَ الْمُسْلِمِيْنَ إِلَّاصُلْحًاحَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا وَالْمُسْلِمُوْنَ عَلَى شُرُوْطِهِمْ إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا. (تِرْمِذِيْ : بَابُ مَا ذُكِرَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله ﷺ  فِي الْصُّلْحِ بَيْنَ النَّاسِ)

৩. হজরত কাসির ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আওফ আল মুজানি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ #     বলেছেন, ‘মুসলমানগণের মাঝে পরস্পর সন্ধি চুক্তি বৈধ। তবে যে সন্ধি হালালকে হারাম করে দেয়  অথবা হারামকে হালাল করে দেয়  তা বৈধ নয়। মুসলমানগণ তাদের শর্ত পালন করবে, তবে এমন কোনো শর্ত মানা যাবে না যা হালালকে হারাম করে দেয় অথবা হারামকে করে দেয় হালাল।’ (তিরমিজি : বার মা জুকিরা আন রাসূলিল্লাহি  #    ফিস সুলহি বাইনান্নাসি, ইফা : ১৩৫৬)

৪۴. عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ : اَلْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقٰى الْمُشَبَّهَاتِ اِسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعٰی حَوْلَ الْحِمٰى يُوْشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا إِنَّ حِمَى اللهِ فِي أَرْضِهِ مَحَارِمُهُ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ-. (بُخَارِيْ : بَابُ فَضْلِ مَنْ اِسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهَ، مُسْلِمْ : بَابُ أَخْذِ الْحَلَالِ وَتَرْكِ الشُّبُهَاتِ)

৪. হজরত নুমান ইবনে বশির "    থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল  #   কে বলতে শুনেছি, হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট। আর এ দুয়ের মাঝে রয়েছে অস্পষ্ট বিষয়গুলো। অনেকেই সেগুলো জানে না। কাজেই যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বিরত থাকে, সে নিজের দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে, সে এমন রাখালের মতো হয়ে যায় যে, সে তার পশু সংরক্ষিত এলাকার আশেপাশে চরায়। ফলে তা সেখানে প্রবেশ করার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। শোনো, প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, আরও শোনো আল্লাহর জমিনে তার সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে, তার নিষিদ্ধ বিষয়গুলো। এ কথাও শোনো, মানবদেহে একটি মাংসখণ্ড আছে। তা ভালো থাকলে গোটা শরীর ভালো থাকে। আর তা খারাপ হয়ে গেলে গোটা শরীরটাই খারাপ হয়ে যাবে। জেনে রাখো সেটা হচ্ছে অন্তর।’ (বুখারি : বাবু ফাদলি মানিস তাবরায়া লি-দ্বীনিহি, ইফা : ৫০। মুসলিম : বাবু আখজিল হালালি ওয়া তারকিশ শুবহাতি, ইফা : ৩৯৪৯)

৫۵. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ لِأَبِيْ بَكْرٍ غُلَامٌ يُخْرِجُ لَهُ الْخَرَاجَ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيْئٍ فَأَكَلَ مِنْهُ أَبُوْ بَكْرٍ فَقَالَ لَهُ الْغُلَامُ أَتَدْرِيْ مَا هٰذَا؟ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَمَا هُوَ؟ قَالَ كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الْكَهَانَةَ إِلَّا إِنِّيْ خَدَعْتُهُ فَلَقِيَنِيْ فَأَعْطَانِيْ بِذٰلِكَ فَهٰذَا الَّذِيْ أَكَلْتَ مِنْهُ فَأَدْخَلَ أَبُوْ بَكْرٍ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْئٍ فَيْ بَطْنِهِ. - (بُخَارِيْ : بَابُ أَيَّامِ الْجَاهِلِيَّةِ)

৫. হজরত আয়েশা "   থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবু বকর সিদ্দিক "     এর এক গোলাম ছিল, সে আয়  করে এক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তাঁকে প্রদান করত এবং আবু বকর "    তা কাজে লাগাতেন। একদিন সে কোনো এক জিনিস এনে তাঁকে দেয় এবং তিনি তা খান। গোলামটি জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি জানেন, এটা কি (যা আপনি খেলেন)? আবু বকর "     বললেন কোত্থেকে এনেছ? সে বলে, ইসলাম কবুল করার পূর্বে আমি এক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছিলাম। আমি ওই বিদ্যা জানতাম না। আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। এখন তার সাথে দেখা হয়েছে এবং সে আমাকে এর পারিশ্রমিক দান করেছে যা আপনি খেয়েছেন। এ কথা শুনে আবু বকর "     তার পেটে যা গিয়েছিল তা গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে ফেলে দেন।’ (বুখারি : বাবু আইয়ামিল জাহিলিয়্যাতি, ইফা : ৩৫৬৪)







হাদিসের নামে প্রচলিত কতিপয় বানোয়াট কথা

১. যে নিজেকে জানল, সে তার প্রভুকে জানল। (পৃ : ২২৩)

مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ.

২. মুমিনের হৃদয়  আল্লাহর আরশ । (পৃ : ২২৩) 

قَلْبُ الْمُؤْمِنِ عَرْشُ اللهِ.

৩. আমি শেষ নবি, আমার পরে নবি নেই, তবে আল্লাহ যদি চান । (পৃ : ২৪৬)।

أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لَا نَبِيَّ بَعْدِىْ إِلَّا أَنْ يَّشَاءَ اللهُ.

৪. আপনি না হলে আমি আসমান জমিন সৃষ্টি করতাম না । (পৃ : ২৪৭)

لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ.

৫. আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নুহ সৃষ্টি করেছেন। (পৃ : ২৫৮)

اَوَّلُ مَا خَلَقَ الله نُوْرِيْ.

৬. আদম যখন পানি ও মাটির মধ্যে ছিলেন তখন আমি নবি ছিলাম। (পৃ : ২৬৮)

كُنْتُ نَبِيًّا وَاٰدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ وَالطِّيْنِ.

৭. রাসূল (সা) জন্মলগ্ন থেকেই পুরো কুরআন জানতেন এবং পাঠ করতেন।

(পৃ : ২৭৯)

كَانَ عَالِمًا بِالْقُرْاٰنِ بِتَمَامِهِ وَتَالِيًا لَهُ مِنْ حِيْنِ وِلَادَتِهِ.

৮. আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা। (পৃ : ৩০৬)

أَنَا مَدِيْنَةُ الْعِلْمِ وَعَليٌّ بَابُهَا.

৯. আমার সাহাবিগণ নক্ষত্রতুল্য, তাদের যে কাউকে অনুসরণ করলেই তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। (পৃ : ৩০৯)

أَصْحَابِيْ كَالنُّجُوْمِ بِأَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهتَدَيْتُمْ.

১০. আমার উম্মতের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) রহমতস্বরপ। (পৃ : ৩১০)

اِخْتِلَافُ أُمَّتِيْ رَحْمَةٌ.

১১. ওলিগণের কেরামত সত্য। (পৃ : ৩১৭)

كَرَامَةُ الْأَوْلِيَاءِ حَقٌّ.

১২. শরিয়ত একটি বৃক্ষ, তরিকত তার শাখা-প্রশাখা, মারিফাত তার পাতা, এবং হাকিকত তার ফল। (পৃ : ৩২৫)

اَلشَّرِيْعَةُ شَجَرَةٌ وَالطَّرِيْقَةُ أَغْصَانُهَا وَالْمَعْرِفَةُ أَوْرَاقُهَا وَالْحَقِيْقَةُ ثَمَرُهَا.

১৩. শরিয়ত আমার কথাবার্তা, তরিকত আমার কাজকর্ম, হাকিকত আমার অবস্থা এবং মারিফাত আমার মূলধন। (পৃ : ৩২৫)

اَلشَّرِيْعَةُ أَقْوَالِيْ وَالطَّرِيْقَةُ أَفْعَالِيْ وَالْحَقِيْقَةُ حَالِيْ وَالْمَعْرِفَةُ رَاْسُ مَالِيْ.

১৪. সবচেয়ে  কঠিন জিহাদ প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ। (পৃ :  ৩২৬)

أَشَدُّ الْجِهَادِ جِهَادُ الْهَوٰى.

১৫. তোমরা আল্লাহর স্বভাব গ্রহণ করো বা আল্লাহর গুনাবলিতে গুনান্বিত হও। (পৃ : ৩২৭)

تَخَلَّقُوْ بِأَخْلَاقِ اللهِ.

১৬. জ্ঞানীর (কলমের) কালি শহিদের রক্তের চেয়ে  উত্তম। (পৃ : ৩৩৭)

مِدَادُ الْعُلَمَاءِ أَفْضَلُ مِنْ دِمَاءِ الشُهَدَاءِ.

১৭. আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরাইলের নবিগণের মতো। (পৃ : ৩৩৭) 

عُلَمَاءُ أُمَّتِىْ كَأَنْبِيَاءِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ.

 ১৮. মূর্খের ইবাদাতের চেয়ে  আলেমের ঘুম উত্তম। (পৃ : ৩৩৯)

نَوْمُ الْعَالِمِ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ الْجَاهِلِ.

১৯. চীন দেশে হলেও জ্ঞান সন্ধান করো। (পৃ : ৩৪০)

اُطْلُبُوْا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّيْنِ.

২০. সকল মানুষ মৃত/ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত, শুধু আলিমগণ ছাড়া। আলিমগণ সকলেই ধ্বংসপ্রাপ্ত শুধু আমলকারীগণ ছাড়া। আমলকারীগণ সকলেই ধ্বংসপ্রাপ্ত/ডুবন্ত, শুধু মুখলিসগণ ছাড়া। মুখলিসগণ কঠিন ভয়ের মধ্যে। (পৃ :  ৩৪১)

اَلنَّاسُ كُلُّهُمْ مَوْتٰى/هَلْكٰى إِلَّا الْعَالِمُوْنَ وَالْعَالِمُوْنَ كُلُّهُمْ هَلْكٰى إِلَّا الْعَامِلُوْنَ وَالْعَامِلُوْنَ كُلُّهُمْ غَرْقٰى إِلَّا الْمُخْلِصُوْنَ وَالْمُخْلِصُوْنَ عَلٰى خَطَرٍ عَظِيْمٍ.

২১. যদি কোনো ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করে, তবে তা তার পূর্ববর্তী পাপের জন্য ক্ষতিপূরণ হবে। (পৃ : ৩৪১)

مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضٰى.

২২. দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। (পৃ : ৩৫৪)

حُبُّ الْوَطَنِ مِنَ الْإِيْمَانِ.

২৩. যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে দুনিযাবি কথা বলবে আল্লাহ তার চল্লিশ বছরের আমল বাতিল বা বরবাদ করে দেবেন । (পৃ : ৩৬৫)

مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِي الْمَسْجِدِ أَحْبَطَ الله أَعْمَالَهُ أَرْبَعِيْنَ سَنَةً.

২৪. যে ব্যক্তি আজানের সময়  কথা বলবে, তার ঈমান বিনষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে। (পৃ : ৩৭০)

مَنْ تَكَلَّمَ عِنْدَ الْأَذَانِ خِيْفَ عَلَيْهِ زَوَالُ الْإِيْمَانِ.

২৫. নামাজ মুমিনদের মিরাজস্বরূপ। (পৃ : ৩৭১)

اَلصَّلَاةُ مِعْرَاجُ الْمُؤْمِنِيْنَ.

২৬. মহা সুসংবাদ তার জন্য যে শাবান মাসের মধ্যম রজনীতে নেক আমল। (পৃ : ৪২৬)

طُوْبٰى لِمَنْ يَعْمَلُ فِيْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ خَيْرًا.

২৭. আমি রাসূল (সা)- এর মাথায় একটি লম্বা (উঁচু) পাঁচ ভাগে বিভক্ত টুপি দেখেছি। (পৃ : ৪৯৪)

رَأيْتُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ قَلَنْسُوَةً خُمَاسِيَّةَ طَوِيْلَةً.

২৮. তোমরা পাগড়ী পরবে, কারণ এটি ফিরিশতাদের চিহ্ন। আর পেছনের দিকে পাগড়ীর প্রান্ত নামিয়ে  দেবে। (পৃ : ৪৯৯)

عَلَيْكُمْ بِالْعَمَائِمِ فَإِنَّهَا سِيْمَا الْمَلَائِكَةِ وَارْخُوْهَا خَلْفَ ظُهُوْرِكُمْ.

২৯. খাদ্য গ্রহণকারীকে সালাম দেওয়া হবে না । (পৃ: ৫০৫)

لَا سَلَامَ عَلٰى آكِلٍ .

৩০. তিনটি কারণে আরবদের ভালোবাসবে, আমি আরবি, কুরআনের ভাষা আরবি এবং জান্নাতিদের ভাষা আরবি। (পৃ : ৫১৩) 

أَحِبُّوْا الْعَرَبَ لِثَلَاثٍ لِأَنِّىْ عَرَبِيٌّ  وَالْقُرْاٰنُ عَرَبِيٌّ  وَلِسَانُ أَهْلِ الْجَنَّةِ عَرَبِيٌّ.

৩১. দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্য ক্ষেত্র । (পৃ : ৫১৪) 

 اَلدُّنْيَا مَزْرَعَةُ الْاٰخِرَةِ.

৩২. নেককার লোকদের নেক আমলসমূহ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকারীদের জন্য পাপ বলে গণ্য । (পৃ : ৫১৪)

حَسَنَاتُ الْأَبْرَارِ سَيِّئَاتُ الْمُقَرَّبِيْنَ.

৩৩.  তোমরা মৃত্যুর আগেই মৃত্যুবরণ করো। (পৃ : ৫১৫)

مُوْتُوْا قَبْلَ أَنْ تَمُوْتُوْا.

৩৪. যে ব্যক্তি তার চক্ষুদ্বয়কে ভালোবাসে সে যেন আসরের পরে না লেখে। (পৃ : ৩৪০)

مَنْ أَحَبَّ كَرِيْمَتَيْهِ فَلَا يَكْتُبَنَّ بَعْدَ الْعَصْرِ .


তথ্যসূত্র : ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি, ঝিনাইদহ : আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, ২০০৬, পৃ: ২২৩-৫১৫।











কুরআনে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ

উহুদ যুদ্ধ : জয়-পরাজয়ের সন্ধিক্ষণ :

ইসলামের ইতিহাসে মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের দ্বিতীয় যুদ্ধ, যা উহুদ যুদ্ধ নামে পরিচিত। দ্বিতীয় হিজরিতে মক্কার মুশরিকরা বদর প্রান্তরে মুসলমানদের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ায় এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে মদীনায় আক্রমণের জন্য রওয়ানা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিগণের সাথে পরামর্শক্রমে মুশরিকদের হামলা প্রতিহত করার জন্য মদীনার অনতিদূরে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করেন। ১০০০ সৈন্য নিয়ে তিনি বের হলেও পথিমধ্যে মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের নেতৃত্বে ৩০০ সৈন্য পালিয়ে যায়। উহুদের গিরিপথে আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)এর নেতৃত্বে ৫০ জন তিরন্দাজকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। জয়-পরাজয় সর্বাবস্থায় তাদের সেখানে অবস্থানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দেন। যুদ্ধে মুশরিক বাহিনী চরমভাবে পরাস্থ হয়ে ময়দান থেকে পালিয়ে যায়। সাহাবিগণ অস্ত্র রেখে গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে লাগলেন। যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছে মনে করে গিরিপথের দায়িত্ব প্রাপ্তদের অনেকে গনিমতের মাল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করেন। এদিকে মুশরিক বাহিনীর প্রধান আবু সুফিয়ান (পরবর্তী সময়ে তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন) গিরিপথ ফাঁকা দেখে পেছন থেকে মুসলিমদের ওপর হামলা করলে সাহাবিগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথায় আঘাত লাগলে তিনি রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। প্রায় ৭০জন সাহাবি এতে শাহাদাতবরণ করেন। অবশেষে সাহাবিগণ সম্মিলিতভাবে মুশরিকদের মোকাবিলা করে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মহানবির নির্দেশ যথাযথভাবে পালন না করার কারণে নিশ্চিত বিজয়ের পরও অনেক মাশুল দিতে হয় মুসলিম সেনাদের। অতএব এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় নেতৃত্বের যথাযথ অনুগত্যের মাধ্যমেই বিকশিত হতে পারে ইসলামী আন্দোলনের সফলতার মনজিল। (আলে ইমরান : ১২১, ১৫২,-১৫৪)





ইবরাহিম (আ.) কে আগুনে নিক্ষেপ :

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ.। অনেক সাধনার মাধ্যমে তিনি মহান আল্লাহর পরিচয় লাভ করেন। সত্য দ্বীনের প্রচার করতে গিয়ে তিনি অনেকগুলে কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। তিনি সকল পরীক্ষায় সম্মানজনকভাবে উত্তীর্ণ হন। তাঁর পিতা ছিলেন মুশরিক যার নিকট সবসময় আজর নামক একটি মূর্তি থাকত বিধায় তাকে আজর নামেই ডাকা হতো। তৎকালীন মুশরিকদের সরদার ক্ষমতাধর নমরুদের আধিপত্যকে উপেক্ষা করে ইবরাহিম (আ.) তাওহিদের দাওয়াত দিতে থাকেন। একদিন মুশরিকরা সকলে মেলায় সমবেত হয়। কিন্তু ইবরাহিম (আ.) তাতে অংশগ্রহণ করেননি। ইতোমধ্যে নমরুদের রাজপ্রাসাদ ফাঁকা পেয়ে ইবরাহিম (আ.) সেখানে গিয়ে একটি কুঠার দিয়ে সবগুলো মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন এবং বড়ো মূর্তিটির নাক কান কেটে তার গলায় কুঠারটি ঝুলিয়ে দিলেন। প্রাসাদে ফিরে এলে তারা এ অবস্থা দেখার পর ইবরাহিম (আ.) কে এর জন্য দায়ী করে। তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিলেন কুঠার নিয়ে দাঁড়ানো তোমাদের বড়ো প্রভুকে জিজ্ঞেস করো কেনো সে অন্যদেরকে ভেঙ্গে ফেলল। তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, মূর্তি কি কথা বলতে পারে? জবাবে তিনি বললেন, যারা কথা বলতে পারে না, নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, তারা কীভাবে তোমাদের প্রভু হতে পারে? ইবরাহিম (আ.) এর অপ্রতিরোধ্য দাওয়াতী তৎপরতা চিরতরে নির্মূলের লক্ষ্যে নমরুদ তার সভাসদকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিল যে, হজরত ইবরাহিম (আ.) এই কাজ হতে নিবৃত না হলে তাকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। অনঢ়, অটল, সিংহসার্দুল ইবরাহিম (আ.) বাতিলের কাছে মাথানত না করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকেই বেছে নিলেন। পিতা আজরও ইবরাহিম (আ.)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নমরুদকে সহযোগিতা করে। তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হলে মহান আল্লাহর নির্দেশে আগুন শীতল ও সহনীয় হয়ে গেল। আর অগ্নিকুণ্ড পরিণত হলো ফুলবাগানে। এভাবে মুশরিকদের চোখে তাক লাগিয়ে মহান আল্লাহ তার নবিকে রক্ষা করেন। যারা পরকালীন জীবনের বিনময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিকিয়ে দেয় আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় তছার রাহে নিজেদের উৎসর্গ করে তাদেরকে মহান আল্লাহ সহযোগিতা করেন যেমনটি করেছিলেন ইবরাহিম (আ.)-কে। (সূরা সাফফাত : ৯১-৯৩, সূরা আনআম : ৭৪-৮৩, সূরা মুমতাহিন-৫, সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা আনকাবুত : ২৪)



ঈসা (আঃ) কে আকাশে উত্তোলন ও

মহনবি হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সবচেয়ে নিকটতম নবি হলেন হজরত ঈসা (আঃ)। তিনি বনী ইসরাইলের সর্বশেষ নবি। বনী ইসরাইলের লোকেরা যখন মূসা (আঃ) প্রদত্ত শিক্ষা-দীক্ষা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ল, তাওহিদের পথ ছেড়ে শিরকের দিকে ধাবিত হতে লাগল তখন আল্লাহ তাআলার হুকুমে হজরত মারইয়াম (আঃ)-এর গর্ভে তার জন্ম হয়। এজন্য হজরত মারইয়ামের সতীত্ব নিয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করলে মহান আল্লাহ শিশুপুত্র ঈসা (আঃ)-এর জবান খুলে দেন। মাতৃক্রোডে  থেকেই ঈসা (আঃ) তাঁর মায়ের সতীত্বের স্বীকৃতি দেন। মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন পিতামাতা ছাড়াই, অনুরুপভাবে ঈসা (আঃ)-কে পিতা ছাড়াই তিনি সৃষ্টি করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন নিশ্চয়ই ঈসা এর উপমা আল্লাহর নিকট আদম (আঃ)-এর ন্যায় যাকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন অতপর বলেছেন, হয়ে যাও। তখন তা পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হয়। ঈসা (আঃ)-এর নিকট ওহি আসার পর যখন তিনি তাওহিদের প্রচার কাজে আত্ননিয়ােগ করেন তখন বনী ইসরাইলের কিছু সংখ্যক লোক তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাওহিদের পতাকাতলে শামিল হয়। ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দন্দ্ব চিরন্তন, যার অনিবার্য বাস্তবতা হলো সত্যবিমুখ ও শিরকপন্থী বনী ইসরাইলের লোকেরা হজরত ঈসা (আঃ)। এর বিরুদ্ধাচরন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সশস্ত্র অবস্থায়  ষড়যন্ত্রকারীদের কয়েকজন ঈসা (আঃ)-এর কক্ষে প্রবেশ করে ইতোমধ্যে মহান আল্লাহ কুদরতীভাবে ঈসা (আঃ)-কে আকাশে তুলে নেন এবং হামলাকারীদের একজনের চেহারাকে ঈসা (আঃ)-এর চেহারার অনুরূপ করে দেন। তারা ঈসা (আঃ) মনে করে তাকে আটক করে নিয়ে যায় এবং জনবসম্মুখে শুলিতে চড়ায়। ষড়যন্ত্রকারীরা পরবর্তী সময়ে নিজেদেরই এই নেতাকে খুঁজে না পেয়ে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়। ফলে তারা কাকে হত্যা করেছে এ নিয়ে সংশয়ের মধ্যেই মরে গেল। (সুরা নিসা : ১৫৭-১৫৮, আল ইমরান : ৫৯)।





হাবিল-কাবিল ঘটনা ঃ

হাবিল কাবিল দুজনই আদি পিতা হজরত আদম (আঃ)- এর পুত্র। তৎকালীন নিয়ম ছিল সন্তান জন্মগ্রহণ করত জোড়ায় জোড়ায়। তন্মধ্যে একজন পুত্রসন্তান  অন্যজন কন্যাসন্তান। তখন আল্লাহর বিধান ছিল এক জমযের বোানকে অপর জমযের ভাইয়ের সাথে বিবাহ দেওয়া । হাবিল কাবিল অপেক্ষায় বয়সে বড়ো। উভয়ে বিয়ের বয়সে উপনীত হলে নিয়ম অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত সুন্দরী মেয়ের সাথে হাবিলের বিয়ে নির্ধারিত হয়। কিন্তু কাবিল এ নিয়মটি মানতে রাজি না হওয়ায় হজরত আদম (আঃ) উভয়কে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি করার আদেশ দেন। সেসময় নিয়ম ছিল যে কোন কিছু কুরবানি করে মাঠে রেখে আসা। আল্লাহ তা কবুল করলে আকাশ হতে একখন্ড আগুন এসে তা পুড়িয়ে দিত, অন্যথা মাঠে থেকে যেত। সিদ্ধান্ত অনুসারে হাবিল একটি উৎকৃষ্ট পশু কুরবাণির জন্য পেশ করল আর কাবিল নিম্নমানের কিছু শষ্যভান্ডার পেশ করল। আকাশ হতে একখন্ড আগুন এসে। হাবিলের কুরবাণিকৃত পশু পুড়িয়ে দিল কিন্তু কাবিলের কুরবাণিকৃত শষ্য মাঠে রয়ে গেল। ফলে প্রমাণিত হল হাবিলের কুরবানি মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।

কুরবানির পরীক্ষায় পরাজিত হওয়ার পরও কাবিল সুন্দরী মেয়েটিকে বিয়ে করার লক্ষ্যে আপন ভাই হাবিল হত্যা করে। যা মানব ইতিহাসে প্রথম হত্যাকান্ডের। সূচনা করেছে তাই পৃথিবীতে যতগুলো মানুষ নিহত হবে, তার পাপের অংশ কাবিলের ওপর বর্তাবে। (সূরা মায়েদাঃ ২৭-৩১।।


কওমে লুতের ঘটনা :

হজরত লুত (আঃ) ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আঃ) এর ভাতিজা। প্রথমে তিনি কাওমে লুতের ঘটনা ইবরাহিম (আঃ) কর্তৃক আনীত বিধানের প্রতি ঈমান আনয়ন করেন। পরবর্তী কালে মহান আল্লাহ তাকে নবি হিসেবে মনোনীত করেন এবং তার নিকট ওহি প্রেরণ করেন হজরত লুত (আঃ) এর কাওমের লোকেরা ছিল অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্বভাব ও খারাপ চরিত্রের। তারা নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে পুরুষে পুরুষে যৌন প্রয়োজন মেটাতো এবং তাদের নারী পুরুষেরা অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হতো। হজরত লুত (আঃ) তাদের অসংখ্যবার এ ধরণের অপকর্ম থেকে বিরত থেকতে বলে, নারী পুরুষের স্বাভাবিক বৈবাহিক পন্থা অবলম্বন করার আহবান জানান এবং তাদের অপকর্ম সম্পর্কে বারবার সর্তক করেন ও ভীতি প্রদর্শন করেন। কিন্তু তারা নবির কথাকে উপেক্ষা করে নিজেদের এহেন অপকর্ম চালিয়ে যায়। তারা নবির সতর্কবার্তাকে কটাক্ষ করে বলতে থাকে তুমি এসব কথা বলা বন্ধ না করলে তোমাকে এ এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হবে। হজরত লুত (আঃ) তাদের এসব অপকর্ম থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা কয়েকজন ফেরেশতাকে পাঠালেন। তারা প্রথমে হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে জানালেন আমরা লুত (আঃ)-এর কাওমকে ধ্বংস করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছি। এরপর ফেরেশতাগণ সুশ্রী ছেলেদের আকৃতিতে হজরত লুতের নিকট আসেন। সুশ্রী ছেলেদের দেখে এ সম্প্রদায়ের অসভ্য লোকগুলো নিজেদের অপকর্ম চরিতার্থ করতে হজরত লুতকে চাপ দিতে থাকে। নবি পেরেশান হয়ে বলতে থাকেন এরা আমার মেহমান, তোমরা তাদের অপমানিত করোনা। তখন ফেরেশতাগণ নবির কাছে নিজেদের পরিচয় পেশ করে বলেন এদের বিষয়টি আমরা দেখছি। আপনি সকাল হওয়ার আগেই আপনার পরিবারের লোকদের নিয়ে এ এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন। তবে আপনার স্ত্রীকে সাথে নিবেন না। কারণ সেও এসব অপকর্মের পক্ষে। চলে যাবার সময়  পরামর্শ দেওয়া হলো কেউ যেন পিছনে না তাকায়। সকাল হতে না হতেই মহান আল্লাহর নির্দেশে সে এলাকাকে উল্টিয়ে দেয়া হল এবং আকাশ থেকে প্রবল ভাবে পাথর বৃষ্টি বর্ষণ করে পাপাচারী এ সম্প্রদায়কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো। বর্তমানে যে এলাকাটিকে ট্রান্স জর্ডান বলা হয়। সেখানেই ছিল এ জাতিটির বসবাস। হেজাজ থেকে সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মিশর যাওয়ার পথে এ ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটি পড়ে। এটি মৃত সাগর তথা লুত সাগরের পূর্ব ও দক্ষিণে। বিস্তারিত জানতে সূরা হজ্জ ঃ ৪৩, আরাফ: ৮০-৮৪, হুদ:৭০-৭৪, হিজর: ৫৮-৭৬, আম্বিয়া:৭১-৭৪, শুয়ারা ১৬০-১৭৫, নামল : ৫৪-৫৮, আনকাবুত : ২৬-৩৫, সাফফাত : ১৩৩-১৩৮।


আসহাবুল উখদুদ ঃ তথা গর্তওয়ালাদের ইতিহাস

গর্তে আগুন জালিয়ে ঈমানদাদের তার মধ্যে নিক্ষেপ করার একাধিক ঘটনার। বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকে জানা যায় এ ধরণের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। হযরত সুহাইব রুমি (রা:) রাসূল (সা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, এক বাদশার নিকট একজন যাদুকর ছিল। বৃদ্ধবয়সে সে বাদশাহকে বলল একজন যুবককে আমার কাছে নিয়োগ করো। সে আমার কাছ থেকে যাদু শিখে নেবে। কথামত বাদশাহ এক যুবককে নিয়োগ করল । যুবকটি যাদুকরের নিকট আসা যাওয়ার পথে একজন পাদ্রীর (সম্ভবত হজরত ঈসা (আঃ) এর অনুসারী ) সাথে পরিচিত হল। পাদ্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে সে ঈমান আনল। এমনকি তাঁর শিক্ষায় সে অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে এবং কুষ্ঠরোগ নিরাময় করতে লাগলো। যুবকটি তাওহিদের প্রতি ঈমান এনেছে শুনে বাদশাহ প্রথমে পাদ্রীকে হত্যা করল। তারপর যুবকটিকে হত্যার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেও তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হল। শেষে যুবকটি বলল তুমি আমাকে হত্যা করতে হলে জনসমাবেশে বিইসমি রাব্বিল গোলামী (যুবকটির রবের নামে) বাক্য উচ্চারণ করে আমাকে তীর মারো তাতেই আমি মারা যাবো। বাদশাহ তাই করলো। ফলে যুবকটি মারা গেল। ঘটনা দেখে উপস্থিত লোকেরা। চিৎকার করে বলে উঠলো আমরা এ ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম ।

বাদশাহ এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে রাস্তার পাশে গর্ত করে তাতে আগুন জালালো। তারা ঈমান ত্যাগ করতে রাজী হয়নি তাদের সকলকে এই গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলো। (মুসনাদে আহমদ, মুসলিম, নাসাঈ ও তিরমিজি)। হজরত আলি (রাঃ) থেকে অন্য একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ইরানের এক বাদশাহ শরাব পান করে নিজের বোনের সাথে ব্যভিচার করে এবং উভয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। কথাটি প্রকাশ হয়ে গেলে বাদশাহ জনসমকে ঘোষণা করে দেয় যে, আল্লাহ বোনের সাথে বিবাহ হালাল করে দিয়েছেন। লোকেরা তার একথা মানতে রাজি হয়নি। ফলে সে নানান ধরণের শাস্তি দিয়ে লোকদের একথা মানতে বাধ্য করতে থাকে। এমনকি সে অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে যে ব্যক্তি একথা মানতে প্রস্তুত হয়নি তাকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করতে থাকে। হজরত আলি (রাঃ) বলেন, তখন থেকেই অগ্নি উপাসকদের মধ্যে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়কে বিয়ে করার পদ্ধতি প্রচলিত হয়। (ইবনে জাবীর)

নজরানের ঘটনাটি সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইবনে হিশাম তাবারী, ইবনে খালদুন, মুজামুল বুলদান গ্রন্থ প্রণেতা ইত্যাদি মুসলিম ঐতিহাসিকগণ এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। এর সারকথা হচ্ছে হিময়ারের বাদশাহ তুবান আসয়াদ আবু কারি একবার ইয়াসরিবে যায়। সেখানে ইহুদীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে এবং বনু কোরায়ার দুজন ইহুদী আলেমকে সঙ্গে করে ইয়েমেনে নিয়ে যায়। সেখানে সে ব্যাপকভাবে ধর্মের প্রচার চালায়। তারপর তার ছেলে যুনাওয়াস তার উত্তরাধিকারী হয়। সে দক্ষিণ আরবে ঈসায়ীদের কেন্দ্রস্থল নজরান আক্রমণ করে। সেখান থেকে ঈসায়ী ধর্মকে উৎখাত করা এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে জোরপূর্বক ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত করাই ছিল তার লক্ষ্য। ইবনে হিশাম বলেন, নজরানবাসীরা তখন ঈসা (আঃ)-এর আসল ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। নজরান পৌছে সে লোকদেরকে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করার আহবান জানায়। লোকেরা এতে অস্বীকৃতি জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে অগ্নিকুন্ড তৈরি করে জ্বলন্ত আগুনে  লোকদের নিক্ষেপ করতে থাকে। এভাবে প্রায়  বিশহাজার লোক নিহত হয়। মাউস যু-সালাবান নামক এক ব্যক্তি কোনোক্রমে প্রাণরক্ষা করে পালিয়ে যায়। এক বর্ণনামতে সে রোমের বাদশাহর নিকট অন্য বর্ণনামতে হাবশার (ইথিওপিয়া)। বাদশাহ নাজ্জাসীর নিকট এসে এ জুলুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। অবশেষে হাবশার সত্তর হাজার সৈন্য আরইয়াত নামক একজন সেনাপতির অধীনে ইয়েমেন আক্রমন করে। এতে যু-নাওয়াস নিহত হয় এবং ইহুদী রাষ্ট্রের পতন ঘটে। এরপর ইয়ামেন হাবশার ঈসায়ী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। (সূরা বুরুজ :১৯)।


ইয়াজুজ মাজুজ এর পরিচয় :

ইয়াজুজ মাজুজ এরা তুরস্কের বংশোদ্ভুত দুটি জাতি। কুরআন মাজিদে এ জাতির বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া হয়নি। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে তাদের নাক চ্যাপটা, ছোট ছোট চোখ বিশিষ্ট। এশিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চাল অবস্থিত এ জাতির লোকেরা প্রাচীন কাল হতেই সভ্য দেশসমূহের ওপর হামলা করে লুটতরাজ চালাত। মাঝে মাঝে এরা ইউরোপ ও এশিয়া উভয় দিকে সয়লাবের আকারে ধ্বংসের থাবা বিস্তার করতো। বাইবেলের আদি পুস্তকে (১০ম অধ্যায়ে ) তাদেরকে হজরত নূহ (আঃ) এর পুত্র হয়কেলের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকগণ ও একথাই মনে করেন রাশিয়া ও উত্তর চীনে এদের অবস্থান বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে অনুরূপ চরিত্রের কিছু উপজাতি রয়েছে যারা তাতারী, মঙ্গল, হুন ও সেথিন নামে পরিচিত। তাছাড়া একথাও জানা যায় তাদের আক্রমণ থেকে আত্নরক্ষার জন্য ককেসের দক্ষিণাঞ্চলে দরবন্দ ও দারিয়ালের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। ইসরাইলী ঐতিহাসিক ইউসীফুল তাদেরকে সেথীন জাতি মনে করেন এবং তার ধারণা তাদের এলাকা কৃষ্ণসাগরের উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। জিরোম এর বর্ণনামতে মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে। ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীসে জানা যায়, রাসূল (সাঃ) এর স্ত্রী যয়নব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূল (সাঃ) ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং তার চেহারা রক্তিম দেখাচ্ছিল। তিনি বললেন আরবদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এক মহাবিপদ তাদের জন্য ঘনিয়ে এসেছে। আজ বাঁধের বন্ধন থেকে ইয়াজুজ মাজুজ এভাবে মুক্ত হয়েছে তিনি তার তর্জনী ও বৃদ্ধাাঙ্গলী দ্বারা কড়ার ন্যায় বানিয়ে দেখালেন। আমি বললাম সৎ লোকগুলো আমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা স্বত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? তিনি উত্তরে বললেন হ্যাঁ যদি অনাচার বেড়ে যায়। রাসূল (সাঃ) এর স্বপ্নটি সংঘটিত হয়। তার ওফাতের কয়েক যুগ পর। তাতার গোষ্ঠি আরবে ব্যাপকভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। হালাকু খানের হিংস্র সেনাদলের আক্রমনে আব্বাসীয় বংসের সর্বশেষ খলীফা আল মুতাসিম এর শাসনাধীন গোটা আরব সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে  যায়। সম্ভবত এটাই রাসূল (সাঃ) এর স্বপ্নের প্রতিফলন। সঠিক তথ্য একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।

বিস্তারিত জানতে ঃ (সূরা কাহফ: ৯৩-৯৪, সূরা আম্বিয়া ৯৬-৯৭)।


আসহাবুল জান্নাত :

ইয়েমেনের দাওরান দুর্গের অধিবাসীদেরকে পবিত্র কুরআনে আসহাবুল জান্নাত তথা বাগানের মালিক বলা হয়েছে। এখানে বনী হারেস গোত্র বলাপ" মূলত দাওরান একটি উচু পাহাড়ের নাম। এর নামানুসারে বনী হারেস গোত্রের দূর্গের নাম রাখা হয়। গোত্রের কয়েকজনের একত্রে ফসলের বাগান ছিল। সেখানে প্রচুর শস্যরাজি উৎপাদিত হত। ফসল কাটার সময়ে গরীব মিসকীন লোকেরা উপস্থিত হলে তাদেরকে ফসল থেকে মালিকেরা দান করতেন। একদিন তারা একত্রে শলা পরামর্শ করল সকাল হওয়ার আগেই অন্ধকারে ফসল। কেটে ঘরে নিয়ে আসবে যাতে কোন গরীব মিসকীন টের না পায়। তাদের মধ্যে একজন বললো তোমরা আল্লাহর অকৃতজ্ঞ হয়োনা। কিন্তু তার কথায় কেউ কর্ণপাত না করে সকলে সিদ্ধান্ত নিল যে তারা খুব সকালে ফসল কেটে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাদের এ সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলেন এবং রাতেই তাদের ফসল ধ্বংস করে বিরান ভূমি বানিয়ে দিলেন। অতি প্রত্যুষে বাগানের মালিকরা গোপনে গোপনে বাগানের নিকট এসে বাগান না দেখে বলাবলি করতে লাগলো আমরা হয়ত পথ ভুল করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নিশ্চিত হয়ে গেল তাদের ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের বুঝতে বাকী ছিলনা যে, তাদের এ হীণ চিন্তা ও অকৃজ্ঞতার ফলশ্রুতিতে এরূপ হয়েছে। অবশেষে তারা সকলে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন। ফলে মহান আল্লাহ তাদের ফসলে বরকত দান করেন। (বিস্তারিত জানতে ও সূরা কলম ও ১৭-৩৩)।


আসহাবুল ফীল ঃ

আসহাবুল ফীল হলো ইয়েমেনের শাসনকর্তা আবরাহা ইবনে আশরাম হাবশীর বাহিনী। খৃষ্ট ধর্মের অনুসারী আবরাহা ইয়েমেনের প্রান্তরে একটি বিশাল গীর্জা নির্মাণ করেন। আরব ঐতিহাসিকগণ একে ‘আল কালীস’ বা ‘আল কুলীস’ অথবা “আল কুলাইস” নামে উল্লেখ করেন। এটি গ্রীক ইকলেসিয়া শব্দের আরবিকরণ। তার উদ্দেশ্য ছিল সারা দুনিয়ার লোক মক্কায় অবস্থিত কাবার পরিবর্তে তার নির্মিত এ গীর্জায় এসে উপসনা করবে। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা মতে, জনৈক আরব কোন প্রকারে তার গীর্জার মধ্যে প্রবেশ করে সেখানে মল ত্যাগ করে। ইবনে কাসীর বলেন এ কাজটি করেছিল একজন কুরাইশী। অন্যদিকে মুকাতিল ইবনে সুলাইমানের বর্ণনামতে কয়েকজন কুরাইশ যুবক গিয়ে সেই গীর্জায় আগুন লাগিয়ে দেয়। কারো কারো ধারণা মক্কা আক্রমণের বাহানা হিসাবে আবরাহা গোপনে নিজের কোন লোক লাগিয়ে এ কাজ করিয়েছিল যাই হোক ক্ষুদ্ধ আবরাহ ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১ খৃষ্টাব্দে ৬০ হাজার পদাতিক ও ১৩ টি হাতী সহকারে কাবা শরীফ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মজার কাছাকাছি এসে আবরাহা ও তার সেনাবাহিনী আরবদের উট, ছাগল, ভেড়াসহ অনেক সম্পদ লুট করে নেয়। এর মধ্যে রাসূল (সা:) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ও দুটো উট ছিল। আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার সাথে সাক্ষাত করে তার উট দাবী করলে আবরাহা আশ্চর্য হয়ে বলল তুমি তোমার উট নিতে এসেছ? অথচ আমি তোমার ও তোমার বাপ দাদার পবিত্র ঘর কাবা ভাঙতে এসেছি এ ব্যাপারে কিছু বলছনা। তখন আব্দুল মুত্তালিব বললেন আমি তো কেবল উটের মালিক তাই উটের দাবি করছি। আর যিনি কাবার মালিক তিনি একে হেফাজত করবেন। আবরাহার ৬০ হাজার সৈন্যের এ বিশাল বাহিনীর মুকাবিলার সামর্থ না থাকায় আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশদের পরিবার পরিজন নিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। তারপর তিনি ও কুরাইশদের কয়েকজন সরদার কাবার নিকট গিয়ে কা'বার দরজার কড়া ধরে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে থাকেন যে তিনি যেন তার ঘর ও তার খাদেমদের হেফাজত করেন। বাস্তবিক মহান আল্লাহ বাইতুল্লাহকে হেফাজত করেন এবং আবরাহার হস্তীবাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা ঠোটে পাথরকনা নিয়ে উড়ে এসে হস্তীবাহিনীর ওপর বর্ষণ করতে থাকে। ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মতে, যার ওপরই পাথরকনা পড়তো তার সারা গায়ে ভীষণ চুলকানী শুরু হতো এবং চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ছিড়ে গোশত ঝরে পড়তো। দিগবদিক ছুটাছুটি করতে করতে আগে পরে সকলেই মারা যায়। আবরাহার বাহিনী বাইতুল্লাহ ধ্বংস করতে এসে নিজেরাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

বিস্তারিত জানতে ও সুরা ফীল: (১-৫) তাফহীমুল কুরআন: সূরা ফীল: ঐতিহাসিক পটভূমি, মূল বক্তব্য (১-৫)।


ইফকের ঘটনা :

৮ হিজরির শাবান মাসে বর্ণিল মুস্তালিক যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূল (সা) হজরত আয়েশা (রা) কে সঙ্গে নিয়ে যান। তার নিয়ম ছিল তিনি প্রত্যেক সফরে একেক জন স্ত্রীকে লটারীর মাধ্যমে বাছাই করে সঙ্গে নিতেন। এ সফরে হজরত আয়েশা। (বা) লটারীর মাধ্যমে সফর সঙ্গিনী হিসেবে মনোনীত হন। যুদ্ধ শেষে ফিরে আসার সময় কাফেলা পথিমধ্যে যুদ্ধ বিরতি করে। বিরতির সময় আয়েশা (রা) এতক প্রয়ােজন পূরণ করতে গেলে হঠাৎ তার গলার হার পড়ে যায়। তা খুজতে খুজতে দেরি হয়ে গেলে কাফেলা হজরত আয়েশা (রা)কে রেখেই সামনে অগ্রসর হতে থাকে। আয়েশা (রা) কে রেখে যাওয়ার কারণ ছিল এই যে, উটের ওপর বসানো পর্দা ঘেরা এক বিশেষ বহনের নাম ছিল ‘হাওদা’ তিনি। হাওদার ভেতরে অবস্থান করলে কয়েকজন মিলে হাওদাটি উটের ওপর তুলে দিতেন। মজার ব্যাপার হলো হজরত আয়েশা ওজনে এত হালকা ছিলেন যে, যারা হাওদাটি উটের ওপর তুলে দিলেন, তারা বুঝতেই পারেননি হজরত আয়েশা ভেতরে ছিলেন না। ইতোমধ্যে তিনি হার খুঁজে পেয়ে ফিরে এসে দেখেন, কাফেলার সবাই তাঁকে রেখেই চলে গেছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে জমীনে চাদর বিছিয়ে তিনি শুয়ে পড়লেন, আশায় থাকলেন এই ভেবে যে, কাফেলার লোকেরা তাকে না পেয়ে খুঁজতে আসলে পেয়ে যাবে। যাত্রা বিরতিতে। কাফেলার কোনো মালামাল রয়ে গেল কিনা তা কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব ছিল। প্রখ্যাত বদরী সাহাবি হজরত সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল (রা) এর ওপর। তিনি এসে হজরত আয়েশাকে দেখেই চিনতে পেরে বলে উঠলেন ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। উল্লেখ্য পর্দার বিধান ফরয হওয়ার পূর্বে তিনি আয়েশা (রা) কে দেখেছিলেন, তাই দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথেই আয়েশা (রা) কে চিনে ফেললেন। তিনি উট বসিয়ে দিয়ে একটু দূরে অবস্থান করে হজরত আয়েশাকে উটের ওপর উঠতে বললেন। হজরত আয়েশা (রা) উটের ওপর অবস্থান করলে সফওয়ান (রা) পায়ে হেটে লাগাম ধরে চললেন। ইতোমধ্যে মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার অনুসারীরা প্রচার করতে লাগলো হজরত আয়েশা (রা) তাঁর সতীত্ব রক্ষা করতে পারেননি। তাদের অপপ্রচারের ফাঁদে পড়ে কয়েকজন দুর্বল মসলিমও অপপ্রচার অংশগ্রহন করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন হাসসান বিন সাবিত, মিসতাহ ইবনে উসাসা, হামনা বিনতে জাহাশ। কোনরূপ তথ্য প্রমান ছাড়াই কেবল আন্দাজ ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নবি পরিবারকে বিতর্কিত করার জন্য এ অপবাদ দেয়া হয়। অপবাদের এ ঘটনাকেই ‘ইফকের ঘটনা’ বলা হয়। অবশেষে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ এক মাস পর ‘সূরা নূর’ নাজিল করার মাধ্যমে হজরত আয়েশার সতীত্বের ঘােষণা দেন। ফলে যারা সংশয়ের দোলাচলে দোল খাচ্ছিলেন তাদের সংশয়ের নিরসন হল, সাথে সাথে। মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়ল। (বিস্তারিত জানতে : তাফহীমুল কুরআন, সূরা নূর: ঐতিহাসিক পটভূমি)।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন