১.
হালকা বাতাস বইছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভেজা মাটি থেকে ঠান্ডা বাতাস উঠে আসছিল। পরিবেশটা বেশ মোহনীয়। কাগজি লেবু গাছ থেকে ভেসে আসছে হালকা সুবাস। কিন্তু লেবু গাছের পাশে বসে থাকা তামান্নার জন্য এটা মোটেই ভালো দিন নয়। সে বসে আছে সদ্য খোঁড়া একটি কবরের পাশে। যার জন্য কবরটি খোঁড়া হয়েছে তিনি তামান্নার বাবা। না, তার বাবা এখনো মৃত্যুবরণ করেন নি। তবে করবেন। তাই আগেই এতো আয়োজন।
কবরের এক পাশে তামান্না তার মেজ বোন রোকেয়ার হাত ধরে বসে আছে। অন্যপাশে আছে তার মা ও বড় বোন ফাতিমা। তারা অপেক্ষা করছে একটি লাশের। কিন্তু যার লাশ তিনি এখনো জীবিত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে। ঠিক ৬ টা বাজলেই মৃত্যুবরণ করবে তার বাবা। কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তামান্নার খুব অভিমান হচ্ছে, রাগ হচ্ছে বাবার প্রতি। তার মনে হচ্ছে তার বাবা তাদের কথা ভাবেন নি। ভাবেন নি ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা। তিনি কেবল ভেবেছেন তার আদর্শের কথা। তিনি কেবল ভেবেছেন তার রাজনীতির কথা।
কী দরকার ছিল দেশে ফেরার! যদি বিদেশে থাকতেন তবে তো আজ এই দিনের দুঃসহ অপেক্ষায় থাকতে হতো না। একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে তামান্না চিন্তা করলো, বাবার সাথে আমার বিশেষ স্মৃতি কী? বাবা কি আমাকে বিশেষভাবে ভাবতেন? পাঁচ ভাইবোনের মাঝে আমি সবার ছোট, আমার জন্য কি বাবার বিশেষ স্নেহ ছিল?
তামান্না তেমন কিছু খুঁজে পায় না। সে খুব হতাশ হয়। হঠাৎ তার পঞ্চম শ্রেণির একটা কথা মনে পড়ে। খুব দুষ্টামি করার কারণে প্রায়ই তামান্নার বিরুদ্ধে বাবার কাছে অভিযোগ করতো তার মা। ৫ম শ্রেণির ফার্স্ট টার্ম শেষে তার রেজাল্ট হলো। রেজাল্টে তামান্না দুইটি বিষয়ে খুবই খারাপ করে। মোটের ওপর রেজাল্ট ভালো না। মা অনেক বকাঝকা করে। রাতে বাবা বাসায় ফিরলে মা এই বিষয়ে অভিযোগ করে এবং তামান্নার বাবাকেও বকাঝকা করে। তামান্নার বাবা’র প্রশ্রয়েই নাকি তামান্নার এই অধঃপতন।
তামান্নার মায়ের বকাঝকা শুনে বাবা খুবই রাগান্বিত হয়ে যান। তিনি হঠাৎ করে তামান্নাকে কষে একটি চড় লাগিয়ে দেন। শুধু তামান্না নয়, ঘরের সবাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। সবচেয়ে বেশি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন মীর আফজাল নিজেই।
তামান্না কী কান্না করবে, তামান্নার আগেই কেঁদে ফেলেন বাবা মীর আফজাল। রাগের মাথায় ছোট মেয়েকে চড় বসিয়ে দিয়েছে এই অনুশোচনায় তিনি পাগল হয়ে যান। তামান্নাকে কোলে তুলে আদর করতে থাকেন। পাগলের মতো মেয়ের গালে চুমু দিতে থাকেন। তামান্নার ফর্সা গালে চড়ের দাগ বসে যায়। সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারেননি আফজাল সাহেব।
তামান্নার আজ হঠাৎ করে এক যুগ আগের ঘটনাটি মনে পড়লো। গালে হাত দিয়ে সে যেন অনুভব করতে লাগলো সেই চড়ের দাগ। মেঝ বোনের কানের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
- আপু, তোকে কি কোনোদিন আব্বু মেরেছে?
- না তো, কোনোদিন মারে নাই।
আস্তে করে বোনের পাশ থেকে উঠে গিয়ে বড় বোনের পাশে গিয়ে বসলো
- বড় আপু, তোকে কি আব্বু কোনোদিন মেরেছে?
- (বড় বোন অবাক হয়ে) না, কোনোদিন মারে নি।
এবার তামান্না মায়ের পাশে গিয়ে বসে।
- মা, বাবা কি কখনো তার সন্তানদের মেরেছে?
- না, কোনোদিন তোদের বাবা তোদের মারে নি।
- আমাকে একদিন মেরেছে
- কবে? আমার তো মনে পড়ে না।
- ঐ যে একদিন, রেজাল্ট খারাপ করেছি। তুমি বকাঝকা করেছো। আব্বু রাতে এসে আমাকে একটি চড় মারলো। পরে আমিও কেঁদেছি, সেও কেঁদেছে।
- (মায়ের মনে পড়ে) হ্যাঁ, ঐ একদিনই।
- জানো মা, আমি ছাড়া কোনো সন্তানের কাছেই বাবার স্মৃতি নেই। আমার গালে এখনো আমি বাবার হাতের স্পর্শ পাচ্ছি।
- তুই তোর বাবার প্রতি অভিমান করিস না।
- না মা… এটা আমার সৌভাগ্য। বাবার এই স্পর্শ আমার বাকী জীবনের সম্বল
(এই বলে গাল স্পর্শ করে কাঁদতে থাকে তামান্না)
২.
কাতারের এয়ারপোর্টে মীর আফজাল।
কাতারে এসেছেন আল জাজিরা পরিদর্শনে। তাদের নিউজরুম সেটআপ, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি দেখতে এসেছেন। দেশে এরকম একটি আধুনিক নিউজ চ্যানেল চালু করার প্রক্রিয়ায় আছেন তিনি। এখান থেকে যাবেন আমেরিকায় ছোট ভাইয়ের কাছে। তাছাড়া আমেরিকায় একটি কনফারেন্সেও অংশ নেবেন।
বিমানে উঠতে যাবেন এমন সময় তার সহকারী বাংলাদেশ থেকে ফোন দিয়ে বললেন, স্যার আপনার নামে একটি রিপোর্ট হয়েছে পত্রিকায়। আফজাল সাহেব গুরুত্ব দেন নি। তিনি বললেন, ঠিক আছে, পরে কথা বলবো। আমি এখন বিমানে উঠবো। এই বলে তিনি কল কেটে দেন।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসন চলছে। ইসলামপন্থী নেতা আফজাল সাহেব শুরু থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার চোখের বালি। তাই সরকারি স্পন্সরে প্রায়ই তার বিরুদ্ধে পত্রিকাগুলো রিপোর্ট করে। এটা নতুন কিছু নয়।
আমেরিকায় তাকে স্বাগত জানালেন আফজাল সাহেবের ছোট ভাই। বললেন, ভাই বাংলাদেশে তোমার বিরুদ্ধে তো আজ বেশ তোলপাড় হয়ে গেল। একগাল হেসে আফজাল সাহেব বললেন, এ আর নতুন কী?
ছোট ভাই বললেন, না, এটা নতুন। বাংলাদেশে পত্রিকাগুলো রিপোর্ট করেছে তুমি নাকি দেশ থেকে পালিয়ে কাতার চলে গেছো? এটা নিয়ে দেশে খুব তোলপাড় হচ্ছে। সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে ধরেছে তোমার বিষয়ে। সাহারা খাতুন বলেছে, তোমাকে যেভাবেই হোক দেশে ফেরত নেবে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেবে।
তাই নাকি? ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে আফজাল সাহেব বললেন, সাহারার এতো কষ্ট করতে হবে না। আমি নিজেই দেশে যাবো।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত নিবে এই কথা মীর আফজাল সাহেবকে বেশ অপমানিত করেছে। দাগী আসামীদের মতো ইন্টারপোলের কথা বলায় তার জেদ চেপে গেছে। আফজাল সাহেব আমেরিকার কাজকর্ম শেষে গেলেন মিশরে। সেখানে কিছু ব্যবসায়িক মিটিং শেষে বাংলাদেশে ফিরে এলেন। বিমানবন্দরে তিনি অজস্র সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেন।
- স্যার আপনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হচ্ছে জেনেও কেন ফিরে এলেন?
- আমি তো কোনো অপরাধ করি নাই। মামলা নিয়ে চিন্তিত নই। মামলা হলে আদালতে লড়বো।
- আপনি পালিয়ে গেলেন কেন?
- আপনার কি দেখে মনে হয়েছে, আমি পালিয়ে গেছি? আর যদি পালাতাম তাহলে ফিরলাম কেন?
- আপনি কি যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত?
- আমার স্পষ্ট কথা, আমি কোনো যুদ্ধাপরাধ তো দূরের কথা। আমি কোনো অন্যায়ের সাথেই জড়িত নই।
- আপনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে খুন ও ধর্ষনের অভিযোগ আছে। এই ব্যাপারে কী বলবেন?
- অভিযোগ কে করেছে? আপনি? আমি তো এমন কোনো অভিযোগ বা মামলার কথা এখনো জানি না। আপনার ফ্যসিস্ট হাসিনার ভাষায় আমাকে অহেতুক প্রশ্ন করছেন। আজ এই পর্যন্তই…
সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে মীর আফজাল সাহেব গাড়িতে চেপে বসলেন। কপালে চিন্তার ভাঁজ। গাড়ি চলছে সাঁই সাঁই।
বাসায় ফেরার পর সবাই খুবই তটস্থ। কী হবে সামনে এই নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত। আত্মীয়রা সবাই টিভিতে খবর দেখেছে। দেখেছে সাংবাদিকদের সাথে আফজাল সাহেবের সাক্ষাৎকার। বিচলিত হয়ে সবাই ফোন করছে। মীর আফজাল সাহেব স্বভাবসুলভ শান্তভাবে সবাইকে বললেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সপ্তাহখানেক পর আফজাল সাহেবের সব ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে দিলো সরকার। আফজাল সাহেব বুঝতে পারলেন তিনি সহসাই গ্রেপ্তার হতে চলেছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসলেন। পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যেতে অনুরোধ করলেন। তিনি শান্তভাবে বললেন আমি পালিয়ে গেলে আমারই অপমান। সবাই ভাববে আমি সত্যিকারের অপরাধী। আমি সমাজের সামনে তোমাদের, আত্মীয়দের ও আমার রাজনৈতিক দলের লোকদের ছোট হতে দিবো না। আমি মামলা লড়বো।
৩.
আজকে বেশ কর্মব্যস্ত দিন গিয়েছে মীর আশরাফের। মীর আশরাফ তরুণ ব্যারিস্টার। আফজাল সাহেবের ছেলে। আজকে দুপুরের ডিবি পু্লিশের একটি দল আফজাল সাহেবকে তুলে নিয়ে গেছে।
আফজাল সাহেবকে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে হাসিনা সরকার। সবগুলো মামলাই বহু আগের, যখন তিনি ছাত্র ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন।
আশরাফ তার বাবার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কপি নিয়েছে। বাবার সাথে কথা বলেছে। কীভাবে অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণ করবে তা নিয়ে তার টিম মেম্বারদের সাথে কথা বলেছে। তারা বেশ কনফিডেন্ট। মামলাগুলো একেবারেই ঠুনকো। সবগুলো অভিযোগই উড়িয়ে দেওয়া যাবে।
পরিবারের সদস্যরা প্রতি শনিবার দেখা করতে যায় কারাগারে। সেখানে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন মীর আফজাল। দেখতে দেখতে তিন বছর পার হয়ে গেলো। ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন এলো।
মীর আফজালের পরিবার ধরে নিয়ে নিয়েছে তিনি খালাস পাবেন সব মামলা থেকে। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের গৃহপালিত বিচারকরা মীর আফজালকে ফাঁসীর আদেশ দিলো। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো পরিবারের সদস্যরা। মীর আফজাল স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, ধৈর্য ধরো, আমার শাহদাতের মধ্য দিয়ে এদেশে ইসলামের বিপ্লব সূচিত হবে ইনশাআল্লাহ।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়ে ছোট ছেলে আশরাফ। কারণ লড়াইটা তার ছিলো। সে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলে। অনেকের কাছ থেকে সে পরামর্শ পায়, এই মামলাটিকে আন্তর্জাতিক কম্যুনিটির কাছে নিয়ে গেলে ন্যয়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্যরিস্টার আশারাফ সেই চেষ্টা করে।
আপীল বিভাগে শুনানীর আগে সরকার ভাবলো, যদি আশরাফ বাইরে থাকে তবে মীর আফজালকে হয়তো ফাঁসী দেওয়া যাবে না। মীর আশরাফ বাবাকে বাঁচাতে হেন চেষ্টা নেই, যা সে করছে না।
এদিকে মীর আফজালের পরিবার নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। আত্মীয় ও বন্ধুরা একে একে তাদের ছেড়ে যেতে শুরু করে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় সবই হাতছাড়া হয়ে যায়। মীর আফজালের বড় ছেলে থাকে কানাডায়। তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো আপিলের রায়ের দিন।
একদিন মীর আশরাফের বাসা ঘিরে ফেলে শত শত পুলিশ। টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায় তাকে। কোথাও পাওয়া যায় না তাকে। এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেলো। মীর আফজালের স্ত্রী চূড়ান্ত অসহায় হয়ে পড়েন। একদিকে ছেলে নিখোঁজ অন্যদিকে স্বামী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায়।
৪.
রাত দশটা! হঠাত সাইরেনের শব্দ শুনতে পায় তামান্না। আব্বু আসতেছে আব্বু আসতেছে বলে চিৎকার করে ওঠে সে। চার বছর পরে তিন মেয়ে তাদের বাবাকে আজ কারাগারের বাইরে দেখতে পাবে। আজ তাদের বাবার মুক্তি মিলেছে।
একে একে দশটি পুলিশের গাড়ি এসেছে। তামান্নাদের গ্রামের বাড়ি পুরোটাই ঘিরে ফেলেছে তারা। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হলো মীর আফজাল সাহেবের ভারী শরীর। কেমন যেন নির্ভার, সৌম্য, শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন এক মুখচ্ছবি। চারদিকে যেন মিষ্টি ঘ্রাণ।
তামান্না তার মৃত বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। কী সুন্দর ঘুমাচ্ছে মানুষটা। একটা হাত টেনে নিয়ে গালে লাগিয়ে তামান্না বলে ওঠে, আহ যদি চড় দিয়ে শাসন করার জন্যও তুমি থেকে যেতে!! তিন মেয়ে ভাগাভাগি করে বাবার হাত ধরে বসে থাকে।
এদিকে পুলিশ তাড়া দিতে থাকে দ্রুত দাফন করার জন্য। ততক্ষণেও মীর আফজালের ছেলে ব্যারিস্টার আশরাফকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেলে ও স্বামীর শোকে নির্বাক মীর আফজালের স্ত্রী।
হঠাৎ তামান্না খেয়াল করে তার বাবার বাম হাত মুঠি করা। হাতের মধ্যে যেন কিছু একটা। মুঠি খুলে দেখতে পায় একটি চিরকুট। খুব ছোট ছোট করে লেখা।
//আমার তিন আম্মু!!
নিজেকে বড় স্বার্থপর মনে হচ্ছে আজ।
তোমাদের একটি জাহান্নামে রেখে আমি রওনা হলাম জান্নাতের দিকে। তোমাদের আল্লাহর জিম্মায় রেখে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দেখা হবে।//
দাফন হয়ে গেলো। চাঁদটা বেশ আলো ছড়াচ্ছে। লেবু গাছ থেকে ছড়িয়ে পড়া সুবাস আরো তীব্রতর হলো। সবাই ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক অসহায় মা ও তার তিন মেয়ে। কেন যেন তাদের এখন আর দুঃখ হচ্ছে না। সবাই যেন কোথা থেকে প্রশান্তি পাচ্ছেন।
তামান্না বলে উঠলো, দেখো মা! বাবা সবসময় ছিল আমাদের প্রোটেক্টর। সে আগে আগে পরকালে গিয়ে আমাদের জন্য সব ব্যবস্থা করে রাখবে। দেখবে আমাদের পরকাল নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। আমরা যখনই মৃত্যুবরণ করবো, দেখবো বাবা একগাল হেসে বলবে, আয় মা, বুকে আয়।
শেষ রাত! চারটা মানুষ! একটু দূরে একটা কবর! লেবুর সতেজ মোহনীয় ঘ্রাণ। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। চাঁদের আলো। যেন বেহেশত নেমে এসেছে মীর আফজালের কবর ঘিরে।
গল্প:
২ মে ২০২৫
হালকা বাতাস বইছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভেজা মাটি থেকে ঠান্ডা বাতাস উঠে আসছিল। পরিবেশটা বেশ মোহনীয়। কাগজি লেবু গাছ থেকে ভেসে আসছে হালকা সুবাস। কিন্তু লেবু গাছের পাশে বসে থাকা তামান্নার জন্য এটা মোটেই ভালো দিন নয়। সে বসে আছে সদ্য খোঁড়া একটি কবরের পাশে। যার জন্য কবরটি খোঁড়া হয়েছে তিনি তামান্নার বাবা। না, তার বাবা এখনো মৃত্যুবরণ করেন নি। তবে করবেন। তাই আগেই এতো আয়োজন।
কবরের এক পাশে তামান্না তার মেজ বোন রোকেয়ার হাত ধরে বসে আছে। অন্যপাশে আছে তার মা ও বড় বোন ফাতিমা। তারা অপেক্ষা করছে একটি লাশের। কিন্তু যার লাশ তিনি এখনো জীবিত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে। ঠিক ৬ টা বাজলেই মৃত্যুবরণ করবে তার বাবা। কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তামান্নার খুব অভিমান হচ্ছে, রাগ হচ্ছে বাবার প্রতি। তার মনে হচ্ছে তার বাবা তাদের কথা ভাবেন নি। ভাবেন নি ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা। তিনি কেবল ভেবেছেন তার আদর্শের কথা। তিনি কেবল ভেবেছেন তার রাজনীতির কথা।
কী দরকার ছিল দেশে ফেরার! যদি বিদেশে থাকতেন তবে তো আজ এই দিনের দুঃসহ অপেক্ষায় থাকতে হতো না। একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে তামান্না চিন্তা করলো, বাবার সাথে আমার বিশেষ স্মৃতি কী? বাবা কি আমাকে বিশেষভাবে ভাবতেন? পাঁচ ভাইবোনের মাঝে আমি সবার ছোট, আমার জন্য কি বাবার বিশেষ স্নেহ ছিল?
তামান্না তেমন কিছু খুঁজে পায় না। সে খুব হতাশ হয়। হঠাৎ তার পঞ্চম শ্রেণির একটা কথা মনে পড়ে। খুব দুষ্টামি করার কারণে প্রায়ই তামান্নার বিরুদ্ধে বাবার কাছে অভিযোগ করতো তার মা। ৫ম শ্রেণির ফার্স্ট টার্ম শেষে তার রেজাল্ট হলো। রেজাল্টে তামান্না দুইটি বিষয়ে খুবই খারাপ করে। মোটের ওপর রেজাল্ট ভালো না। মা অনেক বকাঝকা করে। রাতে বাবা বাসায় ফিরলে মা এই বিষয়ে অভিযোগ করে এবং তামান্নার বাবাকেও বকাঝকা করে। তামান্নার বাবা’র প্রশ্রয়েই নাকি তামান্নার এই অধঃপতন।
তামান্নার মায়ের বকাঝকা শুনে বাবা খুবই রাগান্বিত হয়ে যান। তিনি হঠাৎ করে তামান্নাকে কষে একটি চড় লাগিয়ে দেন। শুধু তামান্না নয়, ঘরের সবাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। সবচেয়ে বেশি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন মীর আফজাল নিজেই।
তামান্না কী কান্না করবে, তামান্নার আগেই কেঁদে ফেলেন বাবা মীর আফজাল। রাগের মাথায় ছোট মেয়েকে চড় বসিয়ে দিয়েছে এই অনুশোচনায় তিনি পাগল হয়ে যান। তামান্নাকে কোলে তুলে আদর করতে থাকেন। পাগলের মতো মেয়ের গালে চুমু দিতে থাকেন। তামান্নার ফর্সা গালে চড়ের দাগ বসে যায়। সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারেননি আফজাল সাহেব।
তামান্নার আজ হঠাৎ করে এক যুগ আগের ঘটনাটি মনে পড়লো। গালে হাত দিয়ে সে যেন অনুভব করতে লাগলো সেই চড়ের দাগ। মেঝ বোনের কানের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
- আপু, তোকে কি কোনোদিন আব্বু মেরেছে?
- না তো, কোনোদিন মারে নাই।
আস্তে করে বোনের পাশ থেকে উঠে গিয়ে বড় বোনের পাশে গিয়ে বসলো
- বড় আপু, তোকে কি আব্বু কোনোদিন মেরেছে?
- (বড় বোন অবাক হয়ে) না, কোনোদিন মারে নি।
এবার তামান্না মায়ের পাশে গিয়ে বসে।
- মা, বাবা কি কখনো তার সন্তানদের মেরেছে?
- না, কোনোদিন তোদের বাবা তোদের মারে নি।
- আমাকে একদিন মেরেছে
- কবে? আমার তো মনে পড়ে না।
- ঐ যে একদিন, রেজাল্ট খারাপ করেছি। তুমি বকাঝকা করেছো। আব্বু রাতে এসে আমাকে একটি চড় মারলো। পরে আমিও কেঁদেছি, সেও কেঁদেছে।
- (মায়ের মনে পড়ে) হ্যাঁ, ঐ একদিনই।
- জানো মা, আমি ছাড়া কোনো সন্তানের কাছেই বাবার স্মৃতি নেই। আমার গালে এখনো আমি বাবার হাতের স্পর্শ পাচ্ছি।
- তুই তোর বাবার প্রতি অভিমান করিস না।
- না মা… এটা আমার সৌভাগ্য। বাবার এই স্পর্শ আমার বাকী জীবনের সম্বল
(এই বলে গাল স্পর্শ করে কাঁদতে থাকে তামান্না)
২.
কাতারের এয়ারপোর্টে মীর আফজাল।
কাতারে এসেছেন আল জাজিরা পরিদর্শনে। তাদের নিউজরুম সেটআপ, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি দেখতে এসেছেন। দেশে এরকম একটি আধুনিক নিউজ চ্যানেল চালু করার প্রক্রিয়ায় আছেন তিনি। এখান থেকে যাবেন আমেরিকায় ছোট ভাইয়ের কাছে। তাছাড়া আমেরিকায় একটি কনফারেন্সেও অংশ নেবেন।
বিমানে উঠতে যাবেন এমন সময় তার সহকারী বাংলাদেশ থেকে ফোন দিয়ে বললেন, স্যার আপনার নামে একটি রিপোর্ট হয়েছে পত্রিকায়। আফজাল সাহেব গুরুত্ব দেন নি। তিনি বললেন, ঠিক আছে, পরে কথা বলবো। আমি এখন বিমানে উঠবো। এই বলে তিনি কল কেটে দেন।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসন চলছে। ইসলামপন্থী নেতা আফজাল সাহেব শুরু থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার চোখের বালি। তাই সরকারি স্পন্সরে প্রায়ই তার বিরুদ্ধে পত্রিকাগুলো রিপোর্ট করে। এটা নতুন কিছু নয়।
আমেরিকায় তাকে স্বাগত জানালেন আফজাল সাহেবের ছোট ভাই। বললেন, ভাই বাংলাদেশে তোমার বিরুদ্ধে তো আজ বেশ তোলপাড় হয়ে গেল। একগাল হেসে আফজাল সাহেব বললেন, এ আর নতুন কী?
ছোট ভাই বললেন, না, এটা নতুন। বাংলাদেশে পত্রিকাগুলো রিপোর্ট করেছে তুমি নাকি দেশ থেকে পালিয়ে কাতার চলে গেছো? এটা নিয়ে দেশে খুব তোলপাড় হচ্ছে। সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে ধরেছে তোমার বিষয়ে। সাহারা খাতুন বলেছে, তোমাকে যেভাবেই হোক দেশে ফেরত নেবে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেবে।
তাই নাকি? ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে আফজাল সাহেব বললেন, সাহারার এতো কষ্ট করতে হবে না। আমি নিজেই দেশে যাবো।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত নিবে এই কথা মীর আফজাল সাহেবকে বেশ অপমানিত করেছে। দাগী আসামীদের মতো ইন্টারপোলের কথা বলায় তার জেদ চেপে গেছে। আফজাল সাহেব আমেরিকার কাজকর্ম শেষে গেলেন মিশরে। সেখানে কিছু ব্যবসায়িক মিটিং শেষে বাংলাদেশে ফিরে এলেন। বিমানবন্দরে তিনি অজস্র সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেন।
- স্যার আপনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হচ্ছে জেনেও কেন ফিরে এলেন?
- আমি তো কোনো অপরাধ করি নাই। মামলা নিয়ে চিন্তিত নই। মামলা হলে আদালতে লড়বো।
- আপনি পালিয়ে গেলেন কেন?
- আপনার কি দেখে মনে হয়েছে, আমি পালিয়ে গেছি? আর যদি পালাতাম তাহলে ফিরলাম কেন?
- আপনি কি যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত?
- আমার স্পষ্ট কথা, আমি কোনো যুদ্ধাপরাধ তো দূরের কথা। আমি কোনো অন্যায়ের সাথেই জড়িত নই।
- আপনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে খুন ও ধর্ষনের অভিযোগ আছে। এই ব্যাপারে কী বলবেন?
- অভিযোগ কে করেছে? আপনি? আমি তো এমন কোনো অভিযোগ বা মামলার কথা এখনো জানি না। আপনার ফ্যসিস্ট হাসিনার ভাষায় আমাকে অহেতুক প্রশ্ন করছেন। আজ এই পর্যন্তই…
সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে মীর আফজাল সাহেব গাড়িতে চেপে বসলেন। কপালে চিন্তার ভাঁজ। গাড়ি চলছে সাঁই সাঁই।
বাসায় ফেরার পর সবাই খুবই তটস্থ। কী হবে সামনে এই নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত। আত্মীয়রা সবাই টিভিতে খবর দেখেছে। দেখেছে সাংবাদিকদের সাথে আফজাল সাহেবের সাক্ষাৎকার। বিচলিত হয়ে সবাই ফোন করছে। মীর আফজাল সাহেব স্বভাবসুলভ শান্তভাবে সবাইকে বললেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সপ্তাহখানেক পর আফজাল সাহেবের সব ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে দিলো সরকার। আফজাল সাহেব বুঝতে পারলেন তিনি সহসাই গ্রেপ্তার হতে চলেছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসলেন। পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যেতে অনুরোধ করলেন। তিনি শান্তভাবে বললেন আমি পালিয়ে গেলে আমারই অপমান। সবাই ভাববে আমি সত্যিকারের অপরাধী। আমি সমাজের সামনে তোমাদের, আত্মীয়দের ও আমার রাজনৈতিক দলের লোকদের ছোট হতে দিবো না। আমি মামলা লড়বো।
৩.
আজকে বেশ কর্মব্যস্ত দিন গিয়েছে মীর আশরাফের। মীর আশরাফ তরুণ ব্যারিস্টার। আফজাল সাহেবের ছেলে। আজকে দুপুরের ডিবি পু্লিশের একটি দল আফজাল সাহেবকে তুলে নিয়ে গেছে।
আফজাল সাহেবকে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে হাসিনা সরকার। সবগুলো মামলাই বহু আগের, যখন তিনি ছাত্র ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন।
আশরাফ তার বাবার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কপি নিয়েছে। বাবার সাথে কথা বলেছে। কীভাবে অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণ করবে তা নিয়ে তার টিম মেম্বারদের সাথে কথা বলেছে। তারা বেশ কনফিডেন্ট। মামলাগুলো একেবারেই ঠুনকো। সবগুলো অভিযোগই উড়িয়ে দেওয়া যাবে।
পরিবারের সদস্যরা প্রতি শনিবার দেখা করতে যায় কারাগারে। সেখানে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন মীর আফজাল। দেখতে দেখতে তিন বছর পার হয়ে গেলো। ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন এলো।
মীর আফজালের পরিবার ধরে নিয়ে নিয়েছে তিনি খালাস পাবেন সব মামলা থেকে। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের গৃহপালিত বিচারকরা মীর আফজালকে ফাঁসীর আদেশ দিলো। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো পরিবারের সদস্যরা। মীর আফজাল স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, ধৈর্য ধরো, আমার শাহদাতের মধ্য দিয়ে এদেশে ইসলামের বিপ্লব সূচিত হবে ইনশাআল্লাহ।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়ে ছোট ছেলে আশরাফ। কারণ লড়াইটা তার ছিলো। সে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলে। অনেকের কাছ থেকে সে পরামর্শ পায়, এই মামলাটিকে আন্তর্জাতিক কম্যুনিটির কাছে নিয়ে গেলে ন্যয়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্যরিস্টার আশারাফ সেই চেষ্টা করে।
আপীল বিভাগে শুনানীর আগে সরকার ভাবলো, যদি আশরাফ বাইরে থাকে তবে মীর আফজালকে হয়তো ফাঁসী দেওয়া যাবে না। মীর আশরাফ বাবাকে বাঁচাতে হেন চেষ্টা নেই, যা সে করছে না।
এদিকে মীর আফজালের পরিবার নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। আত্মীয় ও বন্ধুরা একে একে তাদের ছেড়ে যেতে শুরু করে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় সবই হাতছাড়া হয়ে যায়। মীর আফজালের বড় ছেলে থাকে কানাডায়। তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো আপিলের রায়ের দিন।
একদিন মীর আশরাফের বাসা ঘিরে ফেলে শত শত পুলিশ। টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায় তাকে। কোথাও পাওয়া যায় না তাকে। এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেলো। মীর আফজালের স্ত্রী চূড়ান্ত অসহায় হয়ে পড়েন। একদিকে ছেলে নিখোঁজ অন্যদিকে স্বামী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায়।
৪.
রাত দশটা! হঠাত সাইরেনের শব্দ শুনতে পায় তামান্না। আব্বু আসতেছে আব্বু আসতেছে বলে চিৎকার করে ওঠে সে। চার বছর পরে তিন মেয়ে তাদের বাবাকে আজ কারাগারের বাইরে দেখতে পাবে। আজ তাদের বাবার মুক্তি মিলেছে।
একে একে দশটি পুলিশের গাড়ি এসেছে। তামান্নাদের গ্রামের বাড়ি পুরোটাই ঘিরে ফেলেছে তারা। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হলো মীর আফজাল সাহেবের ভারী শরীর। কেমন যেন নির্ভার, সৌম্য, শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন এক মুখচ্ছবি। চারদিকে যেন মিষ্টি ঘ্রাণ।
তামান্না তার মৃত বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। কী সুন্দর ঘুমাচ্ছে মানুষটা। একটা হাত টেনে নিয়ে গালে লাগিয়ে তামান্না বলে ওঠে, আহ যদি চড় দিয়ে শাসন করার জন্যও তুমি থেকে যেতে!! তিন মেয়ে ভাগাভাগি করে বাবার হাত ধরে বসে থাকে।
এদিকে পুলিশ তাড়া দিতে থাকে দ্রুত দাফন করার জন্য। ততক্ষণেও মীর আফজালের ছেলে ব্যারিস্টার আশরাফকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেলে ও স্বামীর শোকে নির্বাক মীর আফজালের স্ত্রী।
হঠাৎ তামান্না খেয়াল করে তার বাবার বাম হাত মুঠি করা। হাতের মধ্যে যেন কিছু একটা। মুঠি খুলে দেখতে পায় একটি চিরকুট। খুব ছোট ছোট করে লেখা।
//আমার তিন আম্মু!!
নিজেকে বড় স্বার্থপর মনে হচ্ছে আজ।
তোমাদের একটি জাহান্নামে রেখে আমি রওনা হলাম জান্নাতের দিকে। তোমাদের আল্লাহর জিম্মায় রেখে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দেখা হবে।//
দাফন হয়ে গেলো। চাঁদটা বেশ আলো ছড়াচ্ছে। লেবু গাছ থেকে ছড়িয়ে পড়া সুবাস আরো তীব্রতর হলো। সবাই ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক অসহায় মা ও তার তিন মেয়ে। কেন যেন তাদের এখন আর দুঃখ হচ্ছে না। সবাই যেন কোথা থেকে প্রশান্তি পাচ্ছেন।
তামান্না বলে উঠলো, দেখো মা! বাবা সবসময় ছিল আমাদের প্রোটেক্টর। সে আগে আগে পরকালে গিয়ে আমাদের জন্য সব ব্যবস্থা করে রাখবে। দেখবে আমাদের পরকাল নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। আমরা যখনই মৃত্যুবরণ করবো, দেখবো বাবা একগাল হেসে বলবে, আয় মা, বুকে আয়।
শেষ রাত! চারটা মানুষ! একটু দূরে একটা কবর! লেবুর সতেজ মোহনীয় ঘ্রাণ। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। চাঁদের আলো। যেন বেহেশত নেমে এসেছে মীর আফজালের কবর ঘিরে।
গল্প:
২ মে ২০২৫
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন