জাতীয়তাবাদ কী?
জাতীয়তাবাদ হলো একটি মতাদর্শ বা আন্দোলন, যা কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ঐতিহাসিক বা ভৌগোলিক পরিচিতির প্রতি আনুগত্য ও গর্ব প্রকাশ করে। এটি জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা, এবং স্ব-শাসনের ওপর জোর দেয়। জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়, যেমন:
সাংস্কৃতিক
জাতীয়তাবাদ: জাতির ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার।
রাজনৈতিক
জাতীয়তাবাদ: স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন বা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা।
অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ: জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা।
মুসলিম জাতীয়তাবাদ কী?
মুসলিম জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি ধারণা, যেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় পরিচিতি (ইসলাম) এবং সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় পরিচয় গঠন করা হয়। এটি প্রায়শই ধর্মীয় ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে শক্তিশালী করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদের উদাহরণ হলো দ্বি-জাতি তত্ত্ব, যা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রচার করেছিল। এই তত্ত্বে বলা হয়েছিল যে হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি, যাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনধারা ভিন্ন। এর ফলে পাকিস্তানের সৃষ্টি (১৯৪৭) হয়, যা মুসলিম জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক প্রকাশ ছিল।
ইসলাম কি মুসলিম জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে?
না। ইসলাম কোনো জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে না। ইসলাম শুধু ইসলামকেই সাপোর্ট করে। এক ইহুদী ও সাহাবীর ঘটনা। রাসূল সা. এর বিচার মানেনি সাহাবী। উমার রা.-এর কাছে গেলে উমার রা. সাহাবীকে হত্যা করেন।
ইসলাম কেন জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করে?
১. মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্যঃ
জাতীয়তাবাদ উম্মাহর ঐক্যকে খণ্ডিত করতে পারে এবং জাতিগত বা ভৌগোলিক বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে ইসলাম সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের কথা বলে। কুরআনের সূরা হুজুরাত (৪৯:১৩) বলে: “হে মানবজাতি, আমি তোমাদেরকে পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলো সবচেয়ে ধার্মিক।” এই আয়াত জাতীয় বা গোত্রভিত্তিক বিভেদের পরিবর্তে ঐক্যের ওপর জোর দেয়।
জাতীয়তাবাদ জাতিগত বা জাতীয় পরিচয়কে ধর্মীয় ঐক্যের উপরে স্থান দিয়ে উম্মাহর ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যেমন জামালুদ্দিন আফগানি জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করেছেন, কারণ এটি মুসলিম বিশ্বকে বিভক্ত করে। তবে, কিছু প্রেক্ষাপটে, যেমন পাকিস্তানের সৃষ্টি, মুসলিম জাতীয়তাবাদ ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে।
২. জাতীয়তাবাদ একটি জাহেলিয়্যাত
ইসলামী শিক্ষা জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করে, বিশেষ করে যখন এটি গোত্রবাদ বা শ্রেষ্ঠত্ববাদের রূপ নেয়। কুরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে, সকল মানুষ সমান, এবং শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র ধার্মিকতার ভিত্তিতে। সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস (৪৫৬১) বলে, গোত্রের পতাকার অধীনে যুদ্ধ করা জাহিলিয়াতে মৃত্যুর সমান। সুনান আবি দাউদের হাদিস (৫১০২) বলে, “যে ব্যক্তি গোত্রবাদের ডাক দেয়, গোত্রবাদের জন্য লড়াই করে বা গোত্রবাদের জন্য মরে, সে আমাদের মধ্যে নয়।” নবী মুহাম্মদ (সা.) জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে বলেছেন, “এটি ছেড়ে দাও, এটি পচা।” মুসনাদ আহমদের হাদিস (৩৭৮৪) বলে, গুরাবা (অপরিচিত) হলো তারা যারা গোত্রীয় আনুগত্য থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে। এই শিক্ষাগুলো জাতীয়তাবাদকে প্রাক-ইসলামী অজ্ঞতা (জাহিলিয়া) হিসেবে দেখে, যা ইসলাম নিষিদ্ধ করে।
৩. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বনাম জাতীয় সার্বভৌমত্ব
ইসলাম:
সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ্র জন্য সংরক্ষিত। আইন ও মূল্যবোধের উৎস হলো আল্লাহ্র বিধান
(শরীয়া)। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: "আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেয়ার অধিকার নেই"
(সূরা ইউসুফ, ১২:৪০)।
জাতীয়তাবাদ: সার্বভৌমত্ব "জাতির" হাতে ন্যস্ত করে এবং মানবরচিত সংবিধান/আইনকে সর্বোচ্চ মনে করে।
৪. ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি: ঈমান বনাম জাতীয়তা
ইসলাম:
মুসলিমদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার ভিত্তি হলো ঈমান (বিশ্বাস)। কুরআন নির্দেশ দেয়:
"মুমিনগণ
যেন অপর মুমিনকে ছেড়ে কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে" (সূরা আল-ইমরান, ৩:২৮)।
জাতীয়তাবাদ: সম্প্রীতি বা শত্রুতার ভিত্তি হলো জাতীয় স্বার্থ, যা অনেক সময় ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
৫. ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত: উম্মাহর ধারণা
প্রাথমিক ইসলামে, নবী মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় একটি বহুজাতিক, বহুধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ("মদিনা সনদ")। সেখানে পরিচয়ের ভিত্তি ছিল বিশ্বাস, জাতীয়তা নয়।ইসলামী খিলাফত মডেল (যেমন উসমানীয় সাম্রাজ্য) জাতীয়তাবাদকে দমন করেছিল, কেননা তা উম্মাহর ঐক্যকে বিপন্ন করত।
৬. জাতীয়তাবাদের বিপদ: বিভাজন ও সংঘাত
ইসলামী
স্কলারগণ (যেমন সাইয়েদ কুতুব, মাওলানা মওদুদী) যুক্তি দেন যে জাতীয়তাবাদ: মুসলিম বিশ্বকে
দুর্বল করে (যেমন: উসমানীয় খিলাফতের পতনের পর জাতি-রাষ্ট্রগুলোর সংঘাত)। গোত্রপ্রীতি
(আসাবিয়্যাহ) তৈরি করে, যা নবী (সা.) নিষিদ্ধ করেছিলেন: "যে ব্যক্তি আসাবিয়্যাহের
ডাক দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়" (সুনান আবু দাউদ)।
ইসলামী দৃষ্টিকোণে সমালোচনা:
১.
বিভ্রান্তিকর আনুগত্য: জাতীয়তাবাদ আল্লাহ্র পরিবর্তে জাতির প্রতি আনুগত্য চায়।
২.
উম্মাহর বিভক্তি: মুসলিম বিশ্বকে ৫০টিরও বেশি জাতি-রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছে।
৩. সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার: ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো জাতীয়তাবাদ ব্যবহার করে মুসলিম ভূখণ্ড বিভক্ত করেছে।
৭. ব্যতিক্রম: "দেশপ্রেম" বনাম "জাতীয়তাবাদ"
ইসলাম
দেশপ্রেম (ওয়াতানিয়্যাহ) বা স্বদেশের কল্যাণ কামনাকে সমর্থন করে, তবে তা শর্তসাপেক্ষ:
তা
যেন ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী না হয়। তা যেন উম্মাহর ঐক্যকে ক্ষুণ্ন না করে। উদাহরণ:
ফিলিস্তিন, কাশ্মীরের মুসলিমদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে "ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ"
হিসেবে দেখা হয়, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিসেবে নয়।
জাতীয়তাবাদ / জাতিবাদ / গোত্রবাদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ সা.-এর বক্তব্য
এক.
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য হতে বের হয়ে যায়
এবং মুসলিমদের দল ত্যাগ করে, আর এই অবস্থায় মারা যায়, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের
মৃত্যু। যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়ে ভাল-মন্দ নির্বিচারে
হত্যা করে এবং মুসলিমকেও ছাড়ে না; আর যার সাথে যে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তার অঙ্গীকার রক্ষা
করে না, তার সাথে আমার কোন সম্বন্ধ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা এবং অজ্ঞতার
পতাকাতলে যুদ্ধ করে, আর লোকদেরকে জাতিয়তাবাদের দিকে আহ্বান করে এবং তার ক্রোধ জাতিয়তাবাদের
জন্যই হয়, পরে সে নিহত হয়; তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪১১৪
দুই.
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকেদেরকে
গোত্রবাদের দিকে আহবান করে অথবা গোত্রবাদে উন্মত্ত হয়ে ভ্রষ্টতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে
নিহত হলে সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৪৮
ফাসীলাহ্ বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! কোন ব্যক্তির নিজের গোত্রকে ভালোবাসা কি ’আসাবিয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না; বরং ’আসাবিয়্যাত হলো কোন ব্যক্তির নিজের গোত্রকে যুলমে সাহায্য করা। (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ)
ইসলাম একে জাহেলিয়াত বলে ঘোষণা করেছে। ইসলামে আরব অনারব, সাদা কালো, দেশি বিদেশি সকল মুসলিমকেই সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি মুসলিম হয় তাহলে সে ভারতীয়, পাকিস্থানি অথবা অন্য যে কোন দেশের নাগরিক হোক না কেন, সে আমাদের দ্বীনি ভাই। মুসলিমদের মধ্যে মর্যাদা ও সম্মানের পার্থক্য হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে, জাতীয়তা কিংবা দেশীয় নাগরিকত্বের ভিত্তিতে নয়। কেউ যদি ইসলামের বিরোধীতা করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করে তাহলে সে স্বদেশী হলেও সে আর আমি এক জাতি নই।
তিন.
জাতীয়তাবাদ, গোত্র প্রীতি, বংশীয় আভিজাত্য ও অহংকারবোধকে আরবী পরিভাষায় আসাবিয়্যাহ বলা হয়। এই আসাবিয়্যাহ এর কুফল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাহর কারণে মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাহর দিকে আহ্বান করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাহর কারণে যুদ্ধ করে। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১২১]
চার.
জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেনঃ হে লোক সকল শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল তাকওয়ার কারণেই। [ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ, হাদিস নং ২৩৪৮৯]
কেন জাতীয়তাবাদ ক্ষতিকর?
এক.
ইসলামের একটি মূলনীতি হলো “আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ”। জাতীয়তাবাদের ফলে এই মূলনীতি সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়। 'আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ এর মর্মার্থ হলো আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা। একজন মুসলিমের প্রতি আরেকজন মুসলিমের ভালোবাসা থাকতে হবে আল্লাহর জন্যই। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী কাফির মুনাফিকদের প্রতি অন্তরে ঘৃণা থাকতে হবে আল্লাহর জন্যই। কোন পার্থিব স্বার্থের জন্য নয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের এই সম্পর্কের মধ্যে দেয়াল তৈরি করে দেয়। ভিনদেশের মুসলিমকে তখন আর আপন ভাবা যায় না। অন্যদিকে নিজ দেশের আল্লাহদ্রোহীর প্রতিও সহানুভূতি চলে আসে।
দুই.
জাতীয়তাবাদ মুসলিম উম্মাহর পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস করে দেয়। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে একজন মুসলিমের কষ্টে সমস্ত পৃথিবীর মুসলিমের অন্তরে কষ্ট অনুভূত হবে, এটিই ইসলামের শিক্ষা। অথচ জাতীয়তাবাদ আমাদের সেই অনুভূতি নষ্ট করে দিয়েছে। নিজ দেশের কিংবা নিজ জাতির মানুষ সুখে থাকলেই আমরা খুশি। আর এরূপ স্বার্থপরতাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদের মূল শিক্ষা। বিংশ শতকের শুরুতে জাতীরাষ্ট্র ধারণা থেকেই আমাদের উম্মাহ চেতনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমরা আরব-তুর্কি, আরব-আফ্রিকান, তুর্কি-হিন্দুস্তানী এসব ভাবে ভাগ যুদ্ধ শুরু করেছি। সেই উম্মাহ ভেঙ্গে এখন বাঙালি, সিন্ধি, বেলুচ, পাঞ্জাবি ইত্যাদি জাতিতে ভাগ হয়ে গিয়েছি।
তিন.
জাতীয়তাবাদ নিজের জাতিকে অন্যান্য জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শেখায়। ইসলামে নিজ জাতিকে নিয়ে অহংকার কিংবা বংশ মর্যাদার গৌরব চরম নিন্দনীয়। ইসলাম এরূপ কর্মকে জাহেলি যুগের কর্ম বলে উল্লেখ করেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড হলো তাকওয়া। এক্ষেত্রে গায়ের রঙ, বংশ, জাতি, ভাষা, ভূখণ্ড ইত্যাদি মূল্যহীন। আল্লাহর রাসূল বিদায় হজ্বের ভাষণেও এই ধরণের জাতিভিত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
চার.
জাতীয়তাবাদ ন্যায় অন্যায় বোধকে নষ্ট করে দেয়। জাতীয়তাবাদের দাবিই হলো নিজের স্বজাতিকে সাহায্য করা হবে যদিও সে অন্যায় করে এবং অন্য জাতিকে সাহায্য করা হবে না যদিও তারা নিরপরাধ হয়। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা হবে, যদিও সে নিজ সম্প্রদায় কিংবা নিজ দেশের নাগরিক হয়।
বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে এক মুহাজির ও এক আনসার সাহাবীর মধ্যে বিতর্ক শুরু হলে উভয়ই তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়কে ডেকে মারামারি করার জন্য উদ্ধত হলো। মুহাম্মদ সা. এই ধরণের কাজের কঠোর নিন্দা করেছেন এবং এই কাজকে জাহেলি দুর্গন্ধময় কাজ বলেছেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন