হামাসের আল-মাজদ বাহিনী হলো ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের একটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখা, যা মূলত গোয়েন্দা ও পাল্টা-গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত। এই শাখাটি হামাসের সামরিক এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বলা যায় এটা হামাসের গোয়েন্দা বাহিনী।
আল-মাজদ বাহিনী ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে গঠিত হয় বলে জানা যায়, যখন হামাস নিজেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি শক্তিশালী শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছিল। হামাস প্রতিষ্ঠাতা শায়খ ইয়াসিনের নির্দেশে ইয়াহিয়া সিনওয়ার হাত ধরে এই বাহিনী যাত্রা শুরু করে। আল-মাজদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো হামাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ইসরায়েলি গুপ্তচর এবং ফিলিস্তিনি সহযোগীদের (যারা ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করে বলে সন্দেহ করা হয়) শনাক্ত ও নির্মূল করা। এছাড়া, এই বাহিনী হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমের গোপনীয়তা রক্ষা এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ট্র্যাক করার কাজে নিয়োজিত।
আল-মাজদ সন্দেহভাজন ইসরায়েলি এজেন্টদের তদন্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এই বাহিনী গাজা উপত্যকায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং সংগঠনের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। হামাসের শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গাজায় সংগঠনের অভিযানের গোপনীয়তা রক্ষা করা এই শাখার অন্যতম দায়িত্ব। তারা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পাল্টা-গোয়েন্দা অভিযান চালায়।
আল-মাজদ সন্দেহভাজন সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করে, প্রয়োজনে তারা মৃত্যুদণ্ডও দিয়ে থাকে। আল-মাজদ হামাসের সামরিক শাখা ইজ আদ-দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড থেকে আলাদা, যদিও উভয় শাখা পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। আল-মাজদের কার্যক্রম বেশি গোপনীয় এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উপর কেন্দ্রীভূত। ইয়াহিয়া সিনওয়ার এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে আল-মাজদ হামাসের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে।
আমাদের আজকের আলোচনা আল মাজদের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে নিয়ে। ১৯৮৭ সালে শায়খ আহমাদ ইয়াসিন হামাস প্রতিষ্ঠার অল্প সময় পর দলটির অন্যতম নেতা হিসেবে যোগ দেন সিনওয়ার। তিনি শুরু থেকেই আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেন। তাঁর ভাষ্য ছিল আমাদের সব অগ্রগতি নিমিষেই ব্যর্থ হবে যদি আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম শক্তিশালী না করি। আমাদেরকে আমাদের নিজের মধ্যেই গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হবে। শায়খ আহমাদ ইয়াসিন ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ওপর আস্থা রেখেই আল মাজদ বাহিনী গড়ে তুলেছেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরি করেন। এটা হামাসকে যেমন শক্তিশালী করে তেমনি দুর্বল করেছে ইসরাঈলকে। ইসরাঈল ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনীদের খবরাখবর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আল মাজদ অল্প সময়ের মধ্যে মুসলিমদের মধ্যে থাকা ইসরাঈলী গুপ্তচরদের হামাস ও ফিলিস্তিন থেকে বহিষ্কার করতে শুরু করেছিল। এই আল মাজদের ওপর ভরসা করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে হামাস। এদিকে মোসাদ ও শিন বেতের মূল শত্রু হয়ে ওঠে আল মাজদের কমান্ডিং অফিসার ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
জন্ম ও শৈশবঃ
ইয়াহিয়া সিনওয়ারে পুরো নাম ইয়াহিয়া ইবরাহিম হাসান সিনওয়ার। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের একজন গোয়েন্দা, রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা, লেখক এবং সর্বশেষ হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান। তিনি গাজা উপত্যকায় হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৬২ সালের ২৯ অক্টোবর গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মাজদাল আসকালান (বর্তমানে ইসরায়েলের অংশ) থেকে বিতাড়িত হয়ে গাজায় উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। তার বাবা-মায়ের বিষয়ে বিশদ তথ্য জানা যায় না, তবে জানা যায় তার তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড়। তার এক ভাই, মোহাম্মদ সিনওয়ার, হামাসের শীর্ষ নেতা এবং আরেক ভাই, যাকারিয়া সিনওয়ার, ফিলিস্তিনের একজন খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ও একাডেমিশিয়ান।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে কঠিন পরিবেশে বড় হন। ১৯৪৮ সালে তার পরিবারের বাস্তুচ্যুতির কারণে তাদের জীবন ছিল দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। এই পরিবেশ তাকে ফিলিস্তিনি সংগ্রামের প্রতি গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং তার রাজনৈতিক ও সামরিক জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। সিনওয়ার খান ইউনিস সেকেন্ডারি স্কুল ফর বয়েজে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে তিনি গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার শিক্ষাগত জীবন তাকে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের প্রতি আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে এবং তিনি ছাত্রজীবন থেকেই হামাসের সঙ্গে জড়িত হন। যেহেতু তিনি ও তার পরিবার ইসারাইলি আগ্রাসনে উদ্বাস্তু হয়েছেন তাই ফিলিস্তিনের ভূমি উদ্ধারে ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৮৭ সালে হামাসের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি দুজন ইসরায়েলি সেনা এবং ১২ জন ফিলিস্তিনি (যাদের ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ ছিল) হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হন। এই ঘটনায় তাকে চারটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ২০১১ সালে গিলাদ শালিত বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি পান, যেখানে ১০২৭ ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে একজন ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর তিনি দ্রুত হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসেন এবং ২০১৭ সালে গাজায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের আগস্টে ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর তিনি হামাসের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সাংগঠনিক ও কারাজীবন:
হামাস গঠিত হওয়ার আগে থেকেই ইয়াহিয়া সিনওয়ার ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। তিনি কিশোর বয়স থেকে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের সাথে যুক্ত ছিলেন। খান ইউনিসে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি বিশাল আস্তানা ছিল। শরণার্থী শিবিরের দরিদ্র যুবকদের মসজিদে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে বিশাল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এই সংগঠনটি। পরে স্থানটি হামাসের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হয়ে দাঁড়ায়। এর অন্যতম মধ্যমণি ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
১৯৮২ সালে ২০ বছর বয়সে তিনি প্রথম ইসরাঈলি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাকে চার মাসের প্রশাসনিক আটকাবস্থায় রাখা হয়। মুক্তির পর মাত্র এক সপ্তাহ পরে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিনা বিচারে ছয় মাস কারাগারে রাখা হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং আট মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই সময়েই তিনি হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের আস্থা অর্জন করেন। তেল আবিবের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক কোবি মাইকেল বলেন, তারা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতার সাথে এই সম্পর্ক পরে সিনওয়ারকে আন্দোলনের মধ্যে একটি "বিশেষ মর্যাদা" দেয়। হামাস ও আল মাজদের নেতা হিসেবে তিনি ১৯৮৮ সালে পুনরায় গ্রেপ্তার হন। এবার আর সাধারণ বিক্ষোভকারী হিসেবে নয়, গোয়েন্দা হিসেবে গ্রেপ্তার হন।
দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যার পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করার সন্দেহে ১২ ফিলিস্তিনিকে (ইসরাঈলিদের গোয়েন্দা) হত্যার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তার বিচার করা হয়। এ মামলায় তাকে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাবাসের সময় সিনওয়ার ইসরাঈলি কারাগারে হামাস বন্দীদের সুপ্রিম লিডারশিপ কমিটির নেতৃত্ব দেন। কারাগারকে ইয়াহিয়া সিনওয়ার বানিয়ে ফেলেন হামাস যোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট ও টেনিং-এর মোক্ষম স্থান। মাঝে কারাগারে বিভিন্ন দাবী দাওয়ায় অনশন ও কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেন তিনি। সিনওয়ার দুইবার কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু উভয় প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার তার কারাজীবনের সময় বেশ কিছু সাহিত্য রচনা করেছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো উপন্যাস ‘আশ-শাওক ওয়াল কারানফুল’ (কাঁটা ও ফুল), যা ২০০৪ সালে বিরশেবা কারাগারে লেখা। এই উপন্যাসে তিনি ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেন, উপন্যাসটি তার নিজের গল্প নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত কাহিনী। বইটি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়া তিনি দুটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন।
সিনওয়ার তার কারাজীবনকে পড়া-লেখাসহ হিব্রু শেখার কাজেও ব্যবহার করেন। ইসরাঈলী গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের দুই প্রধানের লেখা তিনটি বই তিনি হিব্রু থেকে আরবিতে অনুবাদ করেন। এ সময় ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি।
২০১১ সালে একটি চুক্তির অংশ হিসেবে সিনওয়ারকে মুক্তি দেওয়া হয়, যেখানে একজন ইসরায়েলি জিম্মি, আইডিএফ সৈন্য গিলাদ শালিতের বিনিময়ে ১,০২৭ জন ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি আরব বন্দীকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। শালিতকে পাঁচ বছর ধরে অপহরণ করে রাখা হয়েছিল এবং অপহরণকারীদের মধ্যে সিনওয়ারের ভাইও ছিলেন, যিনি হামাসের একজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার।
ফিলিস্তিনের নেতা সিনওয়ারঃ
ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজায় ফিরে আসার পর গাজার মুসলিমরা তাকে নিয়ে উৎসব করতে থাকে। এর মূল কারণ ছিল হামাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তার বিশেষ মর্যাদা এবং ইসরায়েলি কারাগারে তার জীবনের অনেকগুলো বছর উৎসর্গ করা।
২০১২ সালে হামাসের রাজনৈতিক শাখায় যোগ দেন সিনওয়ার। এ সময় কাসসাম ব্রিগেডের সঙ্গে সমন্বয় অব্যাহত রাখেন তিনি। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের সাত সপ্তাহের আগ্রাসনের সময় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা পালন করেন সিনওয়ার। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে 'আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী' হিসেবে অপবাদ দেয়। ২০১৭ সালে ইসমাঈল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলে সিনওয়ারকে গাজায় হামাস প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০১২ সাল থেকেই আল মাজদকে আরো ফাংশনাল করেন। তিনি গাজার অভ্যন্তরে টানেল নেটওয়ার্ক একটি অন্য মাত্রায় নিয়ে যান। এই টানেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হামাস যোদ্ধারা ইসরাঈলে ও মিশরে যাতায়াত করতে পারতো। ইয়াহিয়া সিনওয়ারের আরেকটি বড় সাফল্য ছিলো তিনি ইরানের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করেন। ইরানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আল কাসসাম ব্রিগেডকে শক্তিশালী করেন। টানেলে অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলেন। মিশর থেকে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সহায়তায় খাবার, পোশাক, চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তার দ্বার উন্মূক্ত করেন। গাজার মেধাবী ছাত্রদের তিনি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। কয়েক বছরের মধ্যে গাজার চেহারাই তিনি পালটে দেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার কখনোই আপোষকামী মনোভাবের মানসিকতা লালন করতেন না। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তিনি কোনোভাবেই ভয় পেতেন না। কবি কাজী নজরুল যেমন বিদ্রোহী কবিতায় বলেছেন "আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি" এই কথাটির সাথে আমি কেবল ইয়াহিয়া সিনওয়ারকেই সম্পর্কিত করতে পারি। তিনি তার কিশোর বয়স থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছেন।
শাহদাতঃ
১৬ অক্টোবর ২০২৪। আনুমানিক ১০টায় ইসরাঈলি সন্ত্রাসী আইডিএফ সৈন্যরা একজন ব্যক্তিকে একটি ভবনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখে। বিকাল ৩টায়, একটি আইডিএফ ড্রোন তিনজন ব্যক্তিকে ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে, দু'জন কম্বলে ঢাকা এবং তৃতীয় জনের জন্য পথ পরিষ্কার করছিল। সৈন্যরা গুলি চালায় এবং দলটি আলাদা হয়ে যায়, দু'জন একটি ভবনে প্রবেশ করে এবং তৃতীয়জন (সিনওয়ার) আরেকটি ভবনে প্রবেশ করেন এবং দ্বিতীয় তলায় উঠে যান।
গোলাগুলির এক পর্যায়ে একজন আইডিএফ সৈন্য গুরুতর আহত হয়। একটি ট্যাঙ্ক সিনওয়ারের অবস্থানে একটি শেল নিক্ষেপ করে এবং অন্য সৈন্যরা ভবনের পাশে অবস্থান নেয়। সিনওয়ার তাদের লক্ষ্য করে দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে; একটি বিস্ফোরিত হয়। সন্ত্রাসী ইহুদী সৈন্যরা পিছু হটে এবং একটি ড্রোন পাঠিয়ে দেয় যা একটি আহত ব্যক্তিকে সনাক্ত করে যার মুখ ঢাকা তিনি একটি লাঠি দিয়ে ড্রোনটিকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। মুখোশধারী ব্যক্তিটি সিনওয়ার কিনা তা সে সময় জানা যায়নি।
ঘটনার পরের দিন সৈন্যরা একটি মৃতদেহ দেখতে পায় যা সিনওয়ারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, সামরিক ভেস্ট পরিহিত, একটি গ্রেনেড এবং একটি বন্দুক, ৪০,০০০ শেকেল (ইসরাঈলি মুদ্রা), একটি লাইটার, একটি ইসরাঈলি পাসপোর্ট। সেখান থেকে আরো দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয় নগদ টাকা, অস্ত্র ও ভুয়া পরিচয়পত্রসহ। ডিএনএ পরীক্ষা, দাঁতের রেকর্ড এবং আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ইসরাঈলিরা নিশ্চিত হয় তিনি ছিলেন আমাদের বীর যোদ্ধা, আমাদের নেতা শহীদ ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
ইয়াহইয়া সিনওয়ার আমাদের জীবদ্দশায় ঐতিহাসিক হক ও বাতিলের লড়াইয়ের সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা। অমর মহানায়ক। মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কেউ কেউ (শাহাদাত বরণ করে) তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে। আবার কেউ কেউ (শাহাদাত বরণের) প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (তাদের সংকল্পে) কোনো পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব, আয়াত-২৩)
ধারাবাহিকভাবে হামাস নেতাদের শাহাদাতের ঘটনায় কবি আল মাহমুদ এর লেখা আমাদের মিছিল কবিতার কথা বাববার মনে করিয়ে দেয়,
‘‘আমরা তো শাহাদাতের জন্যই
মায়ের
উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি।
কেউ
পাথরে, কেউ তাঁবুর ছায়ায়
কেউ
মরুভূমির উষ্মবালু কিংবা সবুজ কোনো ঘাসের দেশে
আমরা
আজন্ম মিছিলেই আছি, এর আদি বা অন্ত নেই।’’
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন