পৃথিবীর এক আজব দেশ বাংলাদেশ। এখানের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী স্বাধীনতা না চাইলেও তারা স্বাধীন হয়ে যায়। বিষয়টা জটিল মনে হলেও অতটা জটিল নয়।
পাকিস্তান আমল এবং জামায়াত এই পোস্টটা পড়লে জটিলতা কিছুটা কেটে যাবে বলে আমার ধারণা।রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের একটা অংশ, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, জামায়াতে ইসলামী, ওলামায়ে ইসলাম, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাতীয় দল, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, পূর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি ইত্যাদি দল স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এ ছাড়াও ইসলামপন্থী মানুষ, মুসলিম জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন মানুষ এবং চীনপন্থী সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী মানুষেরা স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন। রাজা ত্রিদিব রায়ের সকল চাকমা প্রজাসহ অন্যান্য প্রায় সকল উপজাতি পাকিস্তান রক্ষার ভূমিকা রাখেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকল মানুষ পাকিস্তানের ভাঙ্গন ঠেকাতে তৎপর ছিলেন।
ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব:
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে শুধু ইসলামপন্থী ও মুসলিম জাতীয়তাবাদী দলসমূহ ছিল তা নয়, প্রায় সকল ধরণের ইসলামী ব্যাক্তিত্ব স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন। যারা কোন রাজনীতি করেননি এমনকি ইসলামে রাজনীতি হারাম বলে মনে করতেন সে ধরণের আলেম, পীর মাশায়েখ পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে ছিলেন। চরমোনাই এর পীর, শর্ষীনার পীর থেকে শুরু করে ফুলতলীর পীর মাওলানা আবদুল লতিফ ফুলতলী, মাওলানা সৈয়দ মোস্তফা আলী মাদানী, মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা মুফতি দ্বীন মোহাম্মদ খান, মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা আশ্রাফ আলী, মাওলানা আমিনুল হক, মাওলানা মাসুম, মাওলানা নূর আহমদ, মাওলানা আব্দুল মান্নান (জমিয়াতুল মোদারেছীন), মাওলানা সিদ্দীক আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস, মাওলানা আজিজুল হক সহ শত শত আলিম পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ করার বিপক্ষে ছিলেন[৩৪]।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী:
ইসলামপন্থীদের মতই এদেশে বৌদ্ধ ধর্মের অনুরাগীরা পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী ছিলেন। এই ধর্মের ধর্মীয় গুরু ও বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের নেতা বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো বলেন, পাঁচ লাখ বৌদ্ধের প্রিয় মাতৃভূমি পাকিস্তান চিরদিন পাকিস্তান বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান হয়েই থাকবে। বৌদ্ধরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশকে দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করবে[৩৫]।
বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো, প্রফেসর ননী গোপাল বড়ুয়া এবং অন্যান্য নেতারা যখন কোন সফরে যেতেন তাদের নিরাপত্তার জন্য সবসময় পুলিশ ও কমান্ডো বাহিনী থাকতো। সে সময় চট্টগ্রাম জেলার অনেক বৌদ্ধ গ্রামে ‘চীনা বৌদ্ধ’ বলে বড় বড় ব্যানার রাখা রাখা হতো। ডিসেম্বরে পাকিস্তান ভারত যুদ্ধ শুরু হলে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে থাকা আওয়ামী বুদ্ধিজীবী পিজি হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক প্রফেসর নূরুল ইসলামের কৃপায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরিস্থিতি একেবারে শান্ত না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালেই ছিলেন[৩৬]।
বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য পেশাজীবী:
যুদ্ধের সময় প্রায় সকল বুদ্ধিজীবী সুবিধাভোগীর ভূমিকায় অবস্থান নেন। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে নিয়িমিত ক্লাস হয়। প্রায় সকল শিক্ষক পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ক্লাস চালু রাখেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বেশ কিছু শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের আবাসিক ভবন থেকে অপহৃত হওয়াই প্রমাণ করে তারা মূলত পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন। আবার বাংলাদেশ হওয়ার সাথে সাথেই দল বদল করে বিপরীত শিবিরে তাদের জোরালো অবস্থান মোটামুটি বেশ চমকপ্রদ এবং বিরল।
শিবনারায়ন দাস যিনি নিউক্লিয়াস সদস্য ছিলেন, তিনি বলেছেন, “কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কম ছিল না, কিন্তু তারা ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানের সংহতি এবং তমুদ্দুনকে বাঁচিয়ে রেখে আদমজী, ইস্পাহানীর পুরষ্কার নেবার প্রতিযোগীতায়”[৩৭]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডঃ এম এন হুদা, ডঃ এ বি এম হাবিবুল্লাহ, ডঃ এম ইন্নাস আলী, ডঃ এ কে এম নাজমুল করিম, ডঃ মফিজুল্লাহ কবীর, অধ্যাপক আতিকুজ্জামান খান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডঃ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডঃ মুহাম্মদ এনামুল হক, ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম, ডঃ এস এম আজিজুল হক, ডঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ডঃ এ কে রফিকুল্লাহ সহ সকল শিক্ষক কাজে যোগদান করেছেন।[৩৮,৩৯]
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীসহ রাবির প্রায় সকল শিক্ষক কাজে যোগদান করেছেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আমাদের প্রিয়ভূমি পাকিস্তানকে খন্ড করার অভিসন্ধির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। রাজনৈতিক চরমপন্থীদের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষনায় আমরা দুঃখ পেয়েছি ও হতাশ হয়েছি।”[৩৯]
বিচারপতি কে এম সোবহান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও কবি শামসুর রাহমান যারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন বজায় রেখে যুদ্ধের পর বড় বড় মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তাদের সম্পর্কে ডঃ মাহবুবুল্লাহ বলেন, “কে এই কে এম সোবহান? যিনি ৭১ সালে সেনা শাসকের অধীনে পূর্ব-পাকিস্তানের বিচারক হিসেবে শপথ নিয়েছেন, সেই কে এম সোবহানের মুখে স্বাধীনিতার স্বপক্ষ উচ্চারণ শোভা পায় না
কে এই কবীর চৌধুরী? তার কাজ হচ্ছে প্রত্যেকটি সরকারের সেবা করা। আইয়ুব খাঁ থেকে শুরু করে ইয়াহিয়া খাঁ, মোনেম খাঁ পর্যন্ত প্রত্যেককে তিনি সেবাদান করেছেন। তিনি আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে কথা বলেন তখন প্রশ্ন করতে হয় কেন তখন তিনি বাংলা একাডেমীর দায়িত্ব পালন করেছেন?
আজকে যখন শামসুর রাহমান তালেবানী হামলার শিকার হন বলে দাবী করেন, মিথ্যাচার করেন, তখন প্রশ্ন করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সময় শামসুর রাহমানকে যখন আমি বলেছিলাম সীমান্তের ওপারে যেতে এবং আমি তাকে সাহায্য করব, কেন তিনি ঢাকার মাটিকে আঁকড়ে ধরে ‘দৈনিক পাকিস্তানে’ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় রচনা করেছেন?”।[৪০]
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ওয়েবসাইট অনুসারে “হাইকোর্টের ৩৮ জন আইনজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানের ঘরোয়া বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে নগ্ন ও নির্লজ্জ অভিহিত করে এর প্রতিবাদ জানায় এবং সম্ভাব্য সকল উপায়ে দুষ্কৃতিকারীদের বাধাদানের জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান”।[৩৯]
সেসময়ের কিছু বিখ্যাত ও পন্ডিত ব্যাক্তি যারা নিজেদের অবস্থান পাকিস্তানের পক্ষে রেখেছেন।
Ø বিচারপতি কে এম সোবহান। ১৯৭১ সালে সেনা শাসনের অধীনে পুর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।[৪০]
Ø কবীর চৌধুরী। বাংলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে ৭১ এ দায়িত্ব পালন করেন।[৪০,৪১]
Ø শামসুর রাহমান। ১৯৭১ এ দৈনিক পাকিস্তানের উপ-সম্পাদক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিদিনকার সম্পাদকীয় রচনা করতেন।[৪০]
Ø বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে জেনারেল টিক্কা খানকে এবং গভর্ণর ডাঃ এ এম মালিককে শপথ বাক্য পাঠ করান।[৪২]
Ø বিচারপতি নাঈম উদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালে হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে শপথ নেন।[৪৩]
Ø আহমেদুল কবীর। দৈনিক সংবাদের সম্পাদক। মোজাফফর ন্যাপের নেতা।[৪৪]
Ø আনোয়ার জাহিদ। সাংবাদিক। ভাসানী ন্যাপের নেতা।[৪৪]
Ø ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা বিচারপতিদের মধ্যে আরো ছিলেন আব্দুল মতিন, মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, খন্দকার মুসা খালেদ, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।[৪৫]
Ø মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৭ মে পাকিস্তানের পক্ষে ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে বিবৃতি দেন ৫৫ জন প্রথিতযশা শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।[৪৬,৪৭]
Ø ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, উপাচার্য, রাবি। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, লেখক এবং নাট্যকার। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø এম কবীর, বিভাগীয় প্রধান, ঢাবি। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ডঃ মীর ফখরুজ্জামান, বিভাগীয় প্রধান, মনস্তত্ব, ঢাবি। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ডঃ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, রিডার, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø নূরুল মোমেন, নাট্যকার, সিনিয়র লেকচারার, আইন বিভাগ, ঢাবি। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø জুলফিকার আলী, বাংলা একাডেমী। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø আহসান হাবিব, বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক।৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø খান আতাউর রহমান, চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ও সঙ্গীত পরিচালক। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø শাহনাজ রহমতুল্লাহ, বিখ্যাত গায়িকা। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø আশাকার ইবনে শাইখ, নাট্যকার, সিনিয়র লেকচারার, ঢাবি। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ফরিদা ইয়াসমিন, বিখ্যাত গায়িকা। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø আব্দুল আলীম। বহু পল্লী গানের রচয়িতা, বিখ্যাত গায়ক। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম, চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, লেখক। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø এ এইচ চৌধুরী, চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, লেখক। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ডঃ মোহর আলী, রিডার, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী, বাংলা উন্নয়ন বোর্ড, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø খন্দকার ফারুখ আহমাদ, গায়ক, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]]
Ø সৈয়দ আব্দুল হাদী, গায়ক, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø নীনা হামিদ, গায়িকা, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø এম এ হামিদ, গায়ক, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø লায়লা আর্জুমান্দ বানু, গায়িকা, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø শামুসুল হুদা চৌধুরী, চীফ ইনফরমেশন অফিসার। পরে জাতীয় সংসদের স্পীকার। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø বেদারউদ্দিন আহমাদ, শিল্পী। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø সাবিনা ইয়াসমিন, বিখ্যাত গায়িকা, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ফেরদৌসী রহমান, বিখ্যাত গায়িকা, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø মোস্তাফা জামান আব্বাসী, বিখ্যাত গায়ক, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø সরদার জয়েন উদ্দিন, গল্পকার, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø সৈয়দ মুর্তজা আলী, লেখক, সাহিত্য সমালোচক। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø তালিম হোসেন, কবি, পরিচালক, নজরুল একাডেমী। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø শাহেদ আলী, ছোট গল্পকার, পরিচালক, ইসলামী একাডেমী (যা পরে ইসলামী ফাউন্ডেশন হয়)। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø কবি আব্দুস সাত্তার। সম্পাদক, মাহে নও। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ফররুখ শীয়র, নাট্যকার, সুপার ভাইজার, রেডিও পাকিস্তান।[৪৬,৪৭]
Ø কবি ফররুখ আহমেদ, ইসলামী রেনেসাঁর কবি, অনুষ্ঠান পরিচালক, রেডিও পাকিস্তান। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø আব্দুস সালাম, সম্পাদক, পাকিস্তান অবজারভার, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø এ জি বদরুদ্দিন, সম্পাদক, মর্ণিং নিউজ, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø আবুল কালাম শামসুদ্দিন, সম্পাদক, দৈনিক পাকিস্তান। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø ফতেহ লোহানী, চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক প্রাপ্ত। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø হেমায়েত হোসেন, লেখক, সম্পাদক, এলান। রেডিও পাকিস্তান। ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø বি এম রহমান, লেখক, ৫৫ জন বিবৃতি প্রদানকারীদের একজন।[৪৬,৪৭]
Ø এছাড়াও বিবৃতি প্রদানকারীদের মধ্যে ছিলেন মবজুলুল হোসেন, আকবর উদ্দিন, আকবর হোসেন, এ এফ এম আব্দুল হক, অধ্যক্ষ এ কিউ এম আদম উদ্দিন, আলী মনসুর, কাজী আফসার উদ্দিন আহমাদ, সানাউল্লাহ নূরী, শামসুল হক, সরদার ফজলুল করীম, বদিউজ্জামান, শফিক কবির, ফওজিয়া খান, লতিফা চৌধুরী।[৪৬,৪৭]
Ø ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনার স্বামী। আনবিক শক্তি কমিশনের চাকরীতে নিয়োজিত ছিলেন।[৪৮]
Ø প্রফেসর ডাঃ নুরুল ইসলাম, পাকিস্তান সরকারের অনুগত থেকে পিজির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আহত সেনাবাহিনীর অফিসারদের চিকিৎসক ছিলেন। পরবর্তিতে শেখ মুজিব তাকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেন।[৪৯]
Ø ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মানিক মিয়ার দুই ছেলে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দুইজনই পাকিস্তানপন্থী ছিলেন।[৫০] আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বর্তমানে বাংলাদেশের মন্ত্রী।
Ø সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমীতে কর্মরত ছিলেন।[৫১]
Ø এডভোকেট আব্দুস সালাম, শেখ মুজিবের মামা, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পিপিপি তে যোগ দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেন।[৫২,৪৪]
সংবাদপত্র
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলায় প্রকাশিত সকল পত্রিকা পাকিস্তানের পক্ষে ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে ছিল দৈনিক আযাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক পূর্বদেশ উল্লেখযোগ্য। দৈনিক আযাদ এবং দৈনিক পূর্বদেশ ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদী, দৈনিক সংগ্রাম ছিল জামায়াতের মুখপত্র, দৈনিক পাকিস্তান ছিল সরকারি আর দৈনিক ইত্তেফাক ছিল আওয়ামীলীগের মুখপত্র। সবচেয়ে বেশী অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে এবং ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ বিরুদ্ধে জাতীয় শত্রু হিসেবে গণ্য করে প্রচারণা চালায় দৈনিক পূর্বদেশ। ইত্তেফাক পত্রিকার ভূমিকা, স্বাধীনতার বিরোধীতা, তাজউদ্দিনের বিমাতাসুলভ আচরণ, শেখ মুজিবের ক্ষমা ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী।[৫০]
যাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীতার বড় অভিযোগ তারা হলেন পূর্বদেশ ও Pakistan observer এর মালিক হামিদুল হক চৌধুরী, Pakistan observer এর সম্পাদক মাহবুবুল হক, পূর্বদেশ সম্পাদক এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, দৈনিক পাকিস্তান সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন, দৈনিক আযাদ সম্পাদক সৈয়দ শাহদাত হোসেন এবং দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আখতার ফারুক।
সরকারী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাঃ
১৯৭১ সালে প্রায় দু’শ জন সি এস পি ছিলেন যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ডঃ আকবর আলী খানের মতে তাদের মধ্যে মাত্র তের জন স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন।[৫৩] এছাড়া ই পি সি এস ৬২ জন এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মাত্র ৫১ জন স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।[৫৪] যারা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং স্বাধীনতার বিপক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে তিন শতাধিক কর্মকর্তার তালিকা পাওয়া যায় এম আর আখতার মুকুলের চরমপত্র বইতে।[৫৫] মজার বিষয় হলো এদের মধ্যে কেউ পরবর্তী জীবনে এই কারণে কোন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় নি। এই তালিকার প্রায় সবাইকে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের সচিব বানিয়েছে। এর মধ্যে নুরুল ইসলাম অনু যিনি টিক্কা খানের পি এস ছিলেন শেখ মুজিব তাকে নিজের পি এস বানিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যাংক এশিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান।[৫৬,৫৭]
পার্বত্য উপজাতিঃ
সকল উপজাতি জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সরাসরি বিরোধীতা করে। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যই শুধু দেখাননি, তিনি পাক সামরিক বাহিনীকে পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে যান। তিনি বাংলাদেশ হওয়ার পর পাকিস্তানে চলে যায় পাকিস্তানের মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫৮] আওয়ামীলীগের উপজাতি এমপি আউং শু প্রু চৌধুরী পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। পার্বত্য জেলা সমূহের সকল উপজাতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এতটাই বিরোধী ছিল যে, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ও সহায়তাকারী বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলেও তারা এই ঘটনায় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। তারা যে সকল শর্তে আত্মসমর্পন করে তা হল,
১- স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতার জন্য উপজাতিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবেনা
২- বাঙ্গালীরা যাতে তাদের আক্রমন করতে না পারে সেজন্য ভারতীয় বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
৩- তাদের রাজ পরিবার সমূহের উপর কোন আক্রমন করা যাবেনা বা তাদের মর্যাদা বিনষ্ট করা যাবে না।
৪- নাগা ও মিজো দমনের নামে ভারতীয় বাহিনী কোন উপজাতি সদস্যকে হয়রানী করতে পারবে না।[৫৮]
তথ্য উৎস:
৩৪- বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলিম সমাজের ভূমিকা ও প্রভাব(১৯৭২-২০০১)/ ড. তারেক মোহাম্মদ তাওফীকুর রহমান/ পৃঃ-২৪
৩৫- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষন/ এম আই হোসেন/ পৃঃ- ১২৩-১২৪
৩৬- স্বাধীনতা সংগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম/ এস এস চাকমা/ আমাদের একাত্তর (সংকলন)/ সম্পাদনা: মহিউদ্দিন আহমদ/ পৃঃ- ৩১৭-৩১৯
৩৭- মনের মত যুদ্ধ করতে পারিনি/ শিবনারায়ন দাস/ আমাদের একাত্তর (সংকলন)/ সম্পাদনা: মহিউদ্দিন আহমদ/ পৃঃ- ১৭
৩৮- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষন/ এম আই হোসেন/ পৃঃ- ১২৫
৩৯- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ওয়েবসাইট
৪০- দুঃসময়ের কথাচিত্র সরাসরি/ ড. মাহবুবুল্লাহ ও আফতাব আহমেদ/ পৃঃ- ১৯৭,১৯৮
৪১- চরমপত্র/ এম আর আখতার মুকুল/ পৃঃ- ৩৪৮
৪২- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ওয়েবসাইট/ পয়লা জুন
৪৩- স্বাধীনতা সংগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম/ এস এস চাকমা/ আমাদের একাত্তর (সংকলন)/ সম্পাদনা: মহিউদ্দিন আহমদ
৪৪- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ওয়েবসাইট/ ১২ অক্টোবর
৪৫- সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট
৪৬- একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়?/ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র/ পঞ্চম মুদ্রণ/ পৃঃ- ১৪২-১৪৬
৪৭- চরমপত্র/ এম আর আখতার মুকুল/ পৃঃ- ৫১
৪৮- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ/ ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া
৪৯- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ/ ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া/ পৃঃ- ১০৯
৫০- ইতিহাসের রক্ত পলাশ ১৫ আগস্ট পঁচাত্তর/ আব্দুল গাফফার চৌধুরী/ পৃঃ- ৩১-৩২
৫১- আমাদের একাত্তর (সংকলন)/ সম্পাদনা: মহিউদ্দিন আহমদ
৫২- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ/ ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া/ পৃঃ- ১০৪
৫৩- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষন/ এম আই হোসেন/ পৃঃ- ১৩১- ১৩২
৫৪- বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১/ এইচ টি ইমাম/ পৃঃ-১৩৯
৫৫- চরমপত্র/ এম আর আখতার মুকুল/ পৃঃ- ৩৩৩-৩৪৭
৫৬- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষন/ এম আই হোসেন/ পৃঃ- ১৪১
৫৮- স্বাধীনতা সংগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম/ এস এস চাকমা/ আমাদের একাত্তর (সংকলন)/ সম্পাদনা: মহিউদ্দিন আহমদ/ পৃঃ- ৩২১