এ অনুরোধের পুরস্কার এভাবে দেওয়া হলো যে গান্ধী ও নেহরু ভাইসরয়কে অপসারণের জন্যে বৃটিশ সরকারের নিকটে তারবার্তা ও পত্র প্রেরণ করেন। উপায়ান্তর না দেখে ভাইসরয় কেবিনেট মিশন পরিকল্পনার অধীন সংবিধান সভায় যোগদানের জন্য ২০ শে নভেম্বর মুসলিম লীগকে আমন্ত্রণ জানান। সংগে সংগেই জিন্নাহ এটাকে মারাত্মক ধরনের ভুল পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ভাইসরয় ভয়ংকর পরিস্থিতি ও তার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন এবং কংগ্রেসকে খুশী করার চেষ্টা করছেন। ৯ই ডিসেম্বর সংবিধান সভার অধিবেশনে কোন লীগ প্রতিনিধি যোগদান করেন নি।
এরূপ পরিস্থিতিতে শেষ চেষ্টা করার উদ্দেশ্যে বৃটিশ সরকার দুজন কংগ্রেস এবং দুজন লীগ নেতাকে লন্ডন আমন্ত্রণ জানান। ভাইসরয়ের পরামর্শক্রমে একজন শিখ প্রতিনিধিকেও আমন্ত্রণ জানান হয়। লর্ড ওয়াভেল নেহরু, জিন্নাহ, লিয়াকত আলী, এবং বলদেব সিংসহ লন্ডন যাত্রা করেন। চারদিন যাবত আলাপ আলোচনা চলে। তবে সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। চরম রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
কোনো আপোস মীমাংসা না হওয়ায় বৃটিশ সরকার এক বিবৃতি প্রকাশ করেন। বিবৃতির শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়, সর্বসম্মত কার্যধারার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত ব্যতীত সংবিধান সভার সাফল্য আশা করা যায় না। সংবিধান সভা যদি এমন কোন সংবিধান রচনা করে যার রচনাকালে ভারতবাসীর বিরাট সংখ্যক লোকের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই, তাহলে বৃটিশ সরকার এ ধরনের কোন সংবিধান অনিচ্ছুক জনগোষ্ঠীর উপর বলপূর্বক চাপিয়ে দিতে পারেনা।
নেহরু ও বলদেব সিং সংবিধান সভার অধিবেশনে অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী আরও কিছুদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। লন্ডনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জিন্নাহ বলেন, //পাকিস্তানের জনসংখ্যা পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রের জনসংখ্যা অপেক্ষা অধিক। আমরা ভারতের তিন চুতর্থাংশের উপর কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিচ্ছি। পাকিস্তান মেনে নিতে কংগ্রেসের আপত্তি এ জন্যে যে তারা সমগ্র ভারত চায়। তাহলে আমরা আর থাকি কোথায়? এখন সমস্যা এই যে, বৃটিশ সরকার কি তাদের বেয়নেটের বলে হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান? তা যদি হয় তাহলে বলবো, তোমরা তোমাদের মানসম্ভ্রম, ন্যায়পরায়নতা ও সুবিচার ও সভ্য আচরনের সর্বশেষ কণাটুকুও হারিয়ে ফেলেছ।//
এদিকে ভারতে কংগ্রেস তীব্র কণ্ঠে ঘোষণা করে, মুসলিম লীগ সংবিধান সভায় যোগদান না করলে তাদেরকে অন্তবর্তী সরকার থেকে বহিষ্কার করা হোক, অপরদিকে বৃটিশ সরকারের ৬ ডিসেম্বরের ঘোষণা অদূর ভবিষ্যতে এক নতুন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ইংগিত বহন করে। এসময় সারা ভারতে কংগ্রেসী মুশরিকদের দাঙ্গায় জর্জরিত হচ্ছে ভারত। পরের বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি নেহরু ভাইসরয়কে লিখিত পত্র দ্বারা মুসলিম লীগকে বহিস্কারের দাবি জানান। ১৫ই ফেব্রুয়ারী প্যাটেল ব্রিটিশ সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, মুসলিম লীগকে সরকার থেকে বহিষ্কার না করলে কংগ্রেস অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করবে।
রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ প্রধানমন্ত্রী এটলী একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতি আর দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যায় না। বৃটিশ সরকার পরিষ্কার বলে দিতে চান যে, জুন মাসের ভেতরেই দায়িত্বশীল ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করবে। পূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল সংবিধান সভা কর্তৃক সর্বসম্মত শাসনতন্ত্র এ সময়ের মধ্যে প্রণীত না হলে, সরকার বিবেচনা করবে বৃটিশ ভারতে ক্ষমতা কার কাছে যথাসময়ে হস্তান্তর করা হবে। বিবৃতির শেষে এ কথাও ঘোষণা করা হয় যে ওয়াভেলের স্থলে মাউন্টব্যাটেনকে ভাইসরয় করা হচ্ছে।
চারদিন পর ভারত সচিব হাউস অব লর্ডস –এ ঘোষণা করেন যে, এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ভারতের দায়িত্বশীল মহলের পরামর্শে। আর উদ্দেশ্য ছিল একটি চাপ সৃষ্টি করা যাতে ভারতীয় দলগুলো একটা সমঝোতায় পৌঁছে। এখানে ভারতের দায়িত্বশীল মহল বলতে যে গান্ধী আর নেহরুকে বুঝানো হয়েছে এবং সমঝোতা বলতে কংগ্রেসের দাবী মুসলিম লীগকে মেনে নেয়া বুঝানো হয়েছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
মাউন্টব্যাটেন ইংল্যান্ড থেকে সযত্নে ও সাবধানতা সহকারে তার সহযোগী বেছে নিয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লর্ড ইসমে যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চার্চিলের ব্যক্তিগত সাধারণ উপদেষ্টা ছিলেন। আরও ছিলেন এরিক সিভিল, লর্ড উইনিংডনের প্রাক্তন প্রাইভেট সেক্রেটারী এবং ৬ষ্ঠ জর্জের এসিস্ট্যান্ট প্রাইভেট সেক্রেটারি, এ দুজন ছিলেন ভাইসরয়ের সাধারণ ও বেসামরিক দিকের প্রধান উপদেষ্টা এবং লর্ড ইসমে ছিলেন চীফ অব স্টাফ।
ভপ্পালা পাঙ্গুনি মেনন ছিলেন সাংবিধানিক পরামর্শদাতা। প্রায়ই স্টাফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। প্রথমত মাঝে মাঝে মেননকে বৈঠকে ডাকা হতো। পরে প্রত্যেক বৈঠকে তাকে ডাকা হতো। ভাইসরয় এবং অন্যান্য সকলের জানা ছিল যে মেনন ছিলেন কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের অত্যন্ত বিশ্বস্ত লোক। এর ফলে ভাইসরয়ের কাউন্সিলের আভ্যন্তরীণ সকল গোপন তথ্যই শুধু প্যাটেল জানতেন না, বরঞ্চ তার এ মুখপাত্রকে দিয়ে তিনি ভাইসরয়ের পলিসি প্রভাবিত করতেন। মেননের স্থলে যদি কোন মুসলমান হতেন এবং তিনি জিন্নাহর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন, তাহলে কি কংগ্রেস তাকে বরদাশত করতে পারতো?
কেবিটেন মিশন পরিকল্পনার ভিত্তিতে অখন্ড ভারতের জন্য সর্বসম্মত সমাধান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে মাউন্টব্যাটেনকে ভারতে ভাইসরয় নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতে পৌঁছার পর ঘটনা প্রবাহ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিপরীতমুখী দৃষ্টিভংগী লক্ষ্য করার পর সর্বসম্মত সমাধান এবং অখন্ড ভারতের কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না। অতএব প্রধানমন্ত্রীর ২০ ফেব্রুয়ারীর ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পনা তৈরীর প্রতি ভাইসরয় মনোনিবেশ করেন।
তিনি তার পরামর্শদাতাগণের সাথে পরামর্শের পর ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। ১ এপ্রিল ইসমে পরিকল্পনার খসড়া মেননকে দেন তার সংশোধনীসহ সময়সূচী তৈরীর জন্য। মেনন আদেশ পালন করেন এবং সেই সাথে তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, এ একটি মন্দ পরিকল্পনা এবং এ কার্যকর হবে না। গভর্নরদের সম্মেলনে চূড়ান্ত পরিকল্পনা পেশ করা হয় এবং তা অনুমোদিত হয়। ২ মে লর্ড ইসমে এবং জর্জ এবেল হোয়াইট হলের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনাটি নিয়ে লন্ডনে যান। ভাইসরয় আশা করছিলেন ১০ মে'র ভেতরে অনুমোদন পেয়ে যাবেন এবং ১৭ মে দলীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য একত্রে মিলিত হওয়ার আবেদন জানাবেন।
অতঃপর মাউন্টব্যাটেন এরিক সিভিল ও মেননসহ শিমলা গমন করেন। এখানে মেনন ভাইসরয়ের সাথে নিরিবিল কথা বলার সুযোগ পান এবং লন্ডনে প্রেরিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করে বলেন, এ পরিকল্পনা কার্যকর হবেনা। মেননের সকল যুক্তি শুনার পূর্বে হঠাৎ নেহরু এবং ভি.কে. কৃষ্ণ মেনন ভাইসরয়ের সাথে আলোচনা করার জন্য ৮ই মে শিমলা পৌঁছেন। ঐদিনই লন্ডন থেকে কিছু সংশোধনীসহ অনুমোদিত পরিকল্পনা ভাইসরের হাতে আসে। ডিনারের পর ভাইসরয় নেহরুকে ডেকে পরিকল্পনাটি দেখান যা অনুমোদিত হয়ে এসেছে। পরিকল্পনাটি পড়ার পর নেহেরু ভয়ানক রেগে গিয়ে বলেন, আমি, কংগ্রেস এবং ভারত কারো কছেই এ পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য নয়।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন উভয়পক্ষকে খুশি রাখতে চেয়েছিলেন এবং উভয়পক্ষকে বুঝিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের সৃষ্টি না হয়ে উপায় নেই। মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের মনে পাকিস্তান সৃষ্টির বীজ বপন করার চেষ্টা করেছিলেন। আর ভারতীয় নেতাদের মধ্যে সরদার প্যাটেল মাউন্টব্যাটেনের এ ধারণা সবার আগে গ্রহণ করেছিলেন। ভারতবর্ষ ভাগ করার জন্য প্যাটেল আগে থেকেই মানসিকভাবে অর্ধেক তৈরি ছিলেন। প্যাটেল ধরে নিয়েছিলেন, মুসলিম লীগের সাথে একত্রে কাজ করা যাবে না।
কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরদার প্যাটেল এক পর্যায়ে জনসম্মুখে বলেই ফেললেন, মুসলিম লীগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি ভারতবর্ষ ভাগ করতেও রাজী আছেন। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে সরদার প্যাটেলই ছিলেন ভারতবর্ষ ভাগের স্থপতি।
ভারতবর্ষ বিভক্ত করার ফর্মুলা বিষয়ে সরদার প্যাটেল মনস্থির করার পর লর্ড মাউন্টব্যাটেন মনোযোগ দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরুর দিকে। এ ধরনের ফর্মুলার কথা শুনে প্রথমে নেহেরু খুবই রাগান্বিত হন।কিন্তু লর্ড মাউন্টব্যাটেন জওহরলাল নেহেরুকে ভারতবর্ষ ভাগ করার বিষয়ে ক্রমাগত বোঝাতে থাকেন। এ বিষয়ে মি: নেহেরুর রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত মাউন্টব্যাটেন তাঁর তৎপরতা চালিয়ে গেছেন।
কিন্তু ভারত ভাগ করার বিষয়ে জওহরলাল নেহেরু শেষ পর্যন্ত কীভাবে রাজী হলেন?
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ মনে করেন, এর দুটি কারণ আছে।
প্রথমত; জওহরলাল নেহেরুকে রাজী করানোর বিষয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রীর একটি বড় প্রভাব ছিল। লেডি মাউন্টব্যাটেন ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতী। এছাড়া তার মধ্যে আকর্ষণীয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় ছিল যার মাধ্যমে সে অন্যদের আকৃষ্ট করতে পারতো। লেডি মাউন্টব্যাটেন তার স্বামীকে খুব শ্রদ্ধা করতেন এবং অনেক সময় যারা প্রথমে তার স্বামীর কাজের সাথে একমত হতে পারতেন না, তাদের কাছে স্বামীর চিন্তা-ভাবনা পৌঁছে দিয়ে তাদের সম্মতি আদায় করতেন।
দ্বিতীয়ত ভারত ভাগ করার পেছনে নেহেরুর রাজী হবার আরেকটি কারণ ছিলেন কৃষ্ণ মেনন। এ ভারতীয় ব্যক্তি ১৯২০'র দশক থেকে লন্ডনে বসবাস করতেন। কৃষ্ণ মেনন ছিলেন জওহরলাল নেহেরুর একজন বড় ভক্ত এবং নেহেরুও কৃষ্ণ মেননকে খুবই পছন্দ করতেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেন বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারত ভাগ করার বিষয়ে কৃষ্ণ মেননের মাধ্যমে নেহেরুকে রাজী করানো যাবে এবং সেটাই হয়েছে।
সরদার প্যাটেলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে মৌলানা আজাদ তাঁর বইতে লিখেছেন, " আমরা পছন্দ করি কিংবা না করি, ভারতবর্ষে দুটো জাতি আছে। হিন্দু এবং মুসলমানরা একজাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না। যখন দুই ভাই একসাথে থাকতে পারে না, তখন তারা আলাদা হয়ে যায়। তাদের পাওনা নিয়ে আলাদা হয়ে যাবার পরে তারা আবার বন্ধু হয়ে যায়। কিন্তু তাদের যদি একসাথে থাকতে বাধ্য করা হয় তাহলে তারা প্রতিদিন ঝগড়া করবে।প্রতিদিন মারামারি করার চেয়ে একবার বড় ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যাওয়াটাই ভালো।"
ভারত ভাগ করার বিষয়ে সরদার প্যাটেল যেভাবে প্রকাশ্যে কথা বলতেন, জওহরলাল নেহেরু সেভাবে বলতেন না। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী পরিষদে মুসলিম লীগের সাথে একত্রে কাজ করতে গিয়ে নেহেরুর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রতিদিনই ঝগড়া হতো। সেজন্য জওহরলাল নেহেরু মৌলানা আজাদকে বলেছিলেন ভারতবর্ষ ভাগ না করে কোন উপায় নেই। একপর্যায়ে নেহেরু মাওলানা আজাদকে অনুরোধ করলেন, তিনি যাতে ভারত ভাগের বিরোধিতা না করেন এবং বাস্তবতা মেনে নেন।
এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলোচনার জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেন লন্ডন চলে যান। ১৯৪৭ সালের ৩০ মে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। ২ জুন তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নেহেরু, প্যাটেল, কৃপালনী, জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, আবদুর রব নিশতার এবং বলদেব সিং। সেখানে তার পরের দিন ৩ জুন মাউন্টব্যাটেন ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা সম্বলিত 'হোয়াইট পেপার' বা 'শ্বেতপত্র' প্রকাশ করেন। সেখানে ভারতবর্ষ বিভক্তির রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
পাকিস্তান ঘোষণা :
৩ জুনের পরিকল্পনাটি মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামেও পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকার ৩রা জুন, ১৯৪৭ সালে ঘোষণা করা একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিল, যার মধ্যে এই নীতিগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল:
৩ জুনের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা :
১- ব্রিটিশ ভারতের দুটি নতুন অধিরাজ্য ভারত এবং পাকিস্তানের বিভাগ ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
২- দুটি নতুন দেশের মধ্যে বেঙ্গল এবং পাঞ্জাব প্রদেশ দুটির বিভক্তকরণ হবে।
৩- দুটি নতুন দেশের প্রত্যেকটিতে গভর্নর-জেনারেলের অফিস স্থাপন করা হবে রাণীর প্রতিনিধি হিসাবে।
৪- নতুন দুটি দেশের সম্পর্কিত সংবিধান সভার উপর সম্পূর্ণ আইনসভার কর্তৃত্ব প্রদান।
৫- ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে কার্যকরভাবে দেশীয় রাজ্য গুলোর ওপর থেকে ব্রিটিশ আধিরাজ্যের অবসান, এবং স্বতন্ত্র থাকার বা উভয় অধিরাজ্যকে স্বীকার করার রাষ্ট্রের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান।
৬- দুটি নতুন দেশের মধ্যে বিশেষত সশস্ত্র বাহিনীর বিভাজন সহ যৌথ সম্পত্তি ইত্যাদির বিভাজন হবে।
পাকিস্তানে যে অঞ্চলগুলো থাকবে :
পূর্ববঙ্গ, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু এবং বালুচিস্তান প্রদেশ। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (এখন পাখতুনখোয়া)র ভাগ্য গণভোটের ফলাফল সাপেক্ষে।
বাংলা ও আসাম :
ভারত সরকার আইন ১৯৩৫ এর অধীন গঠিত বাংলা প্রদেশটির অস্তিত্ব আর থাকবেনা। এর পরিবর্তে দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হবে, যথাক্রমে পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ। আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার ভাগ্য নির্ধারণ করা হবে গণভোটে।